প্রসঙ্গ,নির্বাচন কমিশন বনাম মাসকাওয়াথ আহসান (নির্বাচনী হিসাব একদিন দেরীতে পৌঁছানো) মামলা
প্রিয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয়,
বাংলাদেশ এবং এর গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রাখতে ২০০৮ ডিসেম্বরের অপেক্ষাকৃত গ্রহণযোগ্য সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করায় আপনাকে অভিনন্দন।গত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনার প্রশাসনিক ঋজুতা প্রশংসনীয়।
আপনি যেহেতু বড় বড় কাজে ব্যস্ত থাকেন, আপনার কমিশন আপনার নির্দেশের আক্ষরিক অর্থ ধরে বেশ কিছু সময় এবং টাকা পয়সা অপচয় করে বলে অনুভূত হচ্ছে, তাই একটি ঘটনা আপনাকে জানানো জরুরী হয়ে পড়েছে।
গত ২০০৮ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আমি বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী-৬ আসনে অংশ নিয়েছিলাম।নির্বাচনে লাখ তিনেক টাকা খরচ হয়েছিল, রাজশাহীতে আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনে আমার প্রতিনিধি যথাসময়ে হিসাব দাখিল করতে গিয়েছিল, পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশেই নির্বাচন কমিশনের শাখা অফিসগুলো এই হিসাব জমা নেয়, আপনি তা আমার চেয়ে পরিস্কারভাবে জানেন পেশাদারি প্রশাসক আপনি। আপনার রাজশাহী অফিস জানালো এটা ঢাকায় জমা দিতে হবে।তখন রাজশাহী থেকে আমার প্রতিনিধি রেজিস্টার্ড ডাকে ঢাকা নির্বাচন কমিশন অভিমুখে হিসাব পাঠায়। ডাক বিভাগ তাদের সর্বোচ্চ দক্ষতা দেখিয়ে নির্ধারিত দিনের পরদিন হিসাব পৌঁছে দেয় আপনার কেন্দ্রীয় দপ্তরে।
যেহেতু একদিন পরে পৌছেছে তাই সরাসরি হিসাব জমা না দেয়ার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন মামলা করায় আমাকে গ্রেফতারের ওয়ারেন্ট নিয়ে আমার আব্বা আম্মার ঈশ্বরদীর বাড়ীতে পুলিশ হাজির হয়েছে মঙ্গলবার সকালে ১৩ জুলাই।
আপনার আদেশে করা নির্বাচন কমিশনের মামলাটি আদালতে, সেটা আইনী পথেই সুরাহা হবে।আপনি হয়ত আইনীপথে আমাকে শাস্তি দিতে চাইছেন পনের-বিশ ঘন্টা দেরীতে বা অফিশিয়ালী একদিন দেরিতে নির্বাচন- খরচের হিসাব দাখিলের অপরাধে।
ক হিসাব রাজশাহীর আঞ্চলিক অফিসে জমা দেয়া গেলে এই বিপত্তি এড়ানো যেত, ডাক বিভাগ আরেকটু চেষ্টা করলে আপনার লোকবল,মামলার খরচ ও কর্ম ঘন্টা বেচে যেত।
খ যেহেতু একদিন দেরীতে পৌছেছে, বোঝা যায় হিসাবটি দেয়া হয়েছে, সেব্যাপারে আমার আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না, তবুও আপনার কড়াকড়ি ভালো লেগেছে, নিয়মের প্রতি আমাদের আরো আস্থাশীল হবার শিক্ষা এটা, কিন্তু মামলা-গ্রেফতারী পরোয়ানা এসবে রাষ্ট্রের যে টাকাপয়সা খরচ হল তা আপনার দপ্তরের একজন সহকারী সচিবের চিঠি বা ই-মেইলে সুরাহা হতে পারতো বলে মনে হয়, আপনি এটা আমার চেয়ে বেশী অনুভব করতে পারবেন হয়ত।শুধু ই-মেইলে প্রার্থীদের সঙ্গে একজন-দুজন সিনিয়র সহকারী সচিব বা আঞ্চলিক দপ্তরের নির্বাচন কর্মকর্তারা যোগাযোগ রেখে নির্বাচনী আচরণবিধি ও হিসাব দাখিলের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, তাতে নির্বাচন কমিশন বনাম মাসকাওয়াথ আহসান মামলার রাষ্ট্রীয় অপচয় এড়ানো যাবে ভবিষ্যতে, এটা একটা বিনীত অনুরোধ আপনার কাছে।কারণ সীমিত সম্পদের দেশের জনগণের ট্যাক্সের পয়সার অপচয় যত কম হয় ততই ভালো।
আপনি ক্যারিয়ার ব্যুরোক্রাট এটা আপনি আমার চেয়ে ভালো জানেন, কারণ আমি মাত্র সাড়ে ছয়বছর ছিলাম সিভিল সার্ভিসে ৯৫-০২।
সেই দিক থেকে আপনি আমার শিক্ষক।তারপর থেকে আমি সাংবাদিকতার পেশায়।প্রথমে পাঁচ বছর রেডিও জার্মানীতে, দেশে ফিরে বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকম এবং দ্য এডিটর ডটনেটে কাজ করেছি, এখনো বেশ কয়েকটি অনলাইন মিডিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়েছিলাম পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরীর অভিপ্রায়ে,ভারতের সাংবাদিক এমজে আকবর নির্বাচনে অংশ নিয়ে ও হেরে তারপর যে সব কলাম লিখেছেন তা ভারতের নির্বাচন কমিশনের কাজে লেগেছে, আপনি নিশ্চই ব্যাপারটা জানেন। সেই অনুপ্রেরণায় আমার নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে লেখা বইটি প্রকাশিত হলে আপনাকে উপহার দেবো, অনলাইন মাধ্যমে তা নিয়মিত প্রকাশিত হবে। নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্বেও কীভাবে কালো টাকা ও ধূসর শক্তি গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রকে বোকা বানাতে চেষ্টা করে তার নির্মোহ রিপোর্টিং করার চেষ্টা থাকবে।
কারণ আগেই বলেছি এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিলো, ফিল্ড রিসার্চের জন্য একটি পেশাদারী প্রচেষ্টা।আমার সহকর্মী নবীন-প্রবীণ সাংবাদিকেরা বাঘা-চারঘাটের প্রতিটি ইউনিয়নে শ্যেন দৃষ্টি রেখেছেন নির্বাচন সত্যের খোঁজে আমার এই গবেষণায় নির্ভূল ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত যোগান দিতে, এটা সামনে সংসদ নির্বাচনের আগে ওইসময়ের সিইসি মহোদয়কে তার পরিবেশিত এক কাপ স্নেহের কফির ক্যাজুয়াল আড্ডায় দিতে চেয়েছিলাম, এখন ভাবছি আরো আগে দেবো, আপনাকেই দিতে চাই স্যার।এই প্রকাশনা আপনার গ্রেফতারী পরোয়ানার কারণে প্রভাবিত হবে না, কারণ আমার ব্যক্তিগত হ্যারাসমেন্টের ধূসর উদাহরণের চেয়ে দেশ এবং গণতন্ত্র অনেক বড়।
বর্তমানে আমি দেশের বাইরে দুটি ইউনিভার্সিটিতে মিডিয়া বিজ্ঞান-আইন ও ব্যবস্থাপনা পড়াই আর অনলাইন সাংবাদিকতা করি। আমার ব্যক্তিগত উপার্জন এবং জীবন যাপনের সঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতির যোগাযোগ নেই। একটি ভালোবাসার সবুজ পাসপোর্ট ছাড়া আর কোন দাপ্তরিক সম্পর্ক নেই রাষ্ট্রের সঙ্গে আপাতত।আমার বাবা দর্শন পড়িয়েছেন সরকারী কলেজগুলোতে, মা এখন সাহিত্য পড়ান কলেজে। তাদের ঈশ্বরদির বাড়ী দ্যুতি-অরণীতে পুলিশ গিয়ে আপনার মামলায় আমার ওয়ারেন্ট দেখিয়ে তাদের মালামাল ক্রোক করতে চেয়েছে। আমার নির্বাচনী হিসাব একদিন দেরীতে পৌছায় আমার বাবা-মার সামনে নির্বাচন কমিশনের এই আইনী শো ডাউন আমাকে স্তম্ভিত করেছে।তবে তারা দুজন সততার শক্তিতে ঋজু আপনারি মতো। কাজেই আমাকে উনারা ভুল বুঝবেন না আশা করি।
আপনার পক্ষ থেকে আমার লঘু অপরাধএ আমার বাবা মার মালামাল ক্রোকের পুলিশী ধমকটি পাকিস্তান কিংবা বৃটিশ শাসনের কথা মনে করিয়ে দেয়, কিন্তু এখানে আপনি বৃটিশ শাসক নন, আমার বাবা মাও অসহায় নেটিভ নন।আমাকে আপনি আইনি পথে শিক্ষা দিতে পারেন, কিন্তু আমার শিক্ষক বাবা মা আপনার শিক্ষার টার্গেট হলে বা পুলিশ তাদের হ্যারাস করলে তা সুস্পষ্ট মানবাধিকার লংঘন। চল্লিশ বছর বয়েসী ছেলের লঘুপাপে তারা সম্পৃক্ত কেন হবেন।আমি দোলনাতেও নেই, কবরেও নেই, মাঝখানের এই সময়টাতে আপনি আমাকে শিক্ষা অবশ্যই দিতে পারেন, আমার বাবা-মাকে নয়।বিনয়ের সঙ্গে কথা গুলো লিখলাম, কারণ এগুলো আপনার গোচরে থাকতে পারে যত তুচ্ছ বিষয়ি হোকনা কেন।আশা করছি জেনারেশন গ্যাপ আমাদের সৎ যোগাযোগে বাধা হয়নি।
গত চট্টগ্রাম নির্বাচনে আপনার কমিশনের নিরংকুশ দক্ষতা প্রমাণিত, ভারতের নির্বাচন কমিশনের ঋজুতার মিথ সারা পৃথিবীতে নন্দিত।আপনিও হয়তো ভারতের কিংবদন্তীতূল্য নির্বাচন কমিশনার টি.এন. সেশনের মতো অমরতার আয়োজন করতে পারেন সে প্রত্যাশা আমাদের সবার।
আপনার দীর্ঘায়ু প্রত্যাশায়
শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদসহ
মাসকাওয়াথ আহসান
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ; লেখাটি আমার গ্রেফতারী পরোয়ানা এবং আমার বাবা-মার ওপর পুলিশী হয়রানি এবং নির্বাচন কমিশনের রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় সংক্রান্ত। অনলাইনে এই বার্তাটি বন্ধু-পাঠকদের জানাতে একাধিক ব্লগে পোস্ট করেছি।এর উদ্দেশ্য নেহাত একাধিক জায়গায় লেখা প্রকাশ নয়। আশা করছি মডারেটর ও আরো একবার পড়তে গিয়ে বিরক্ত পাঠকেরা আমার এই অনভিপ্রেত কপি পেস্টকে ক্ষমা করবেন। মডারেটররা মুছে দিলে তা শিরোধার্য।
মন্তব্য
আমি সচলায়তনের কনটেন্ট ব্যবস্থাপনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এক্ষেত্রে তাদের কঠোরতা আজকের ও আগামীর অনলাইন লেখালেখির মান বজায় রাখতে খুবই জরুরী। তাই এই ডেসপারেট কপি পেস্টের জন্য আবার অনুকম্পা চাইছি মডারেটর ও লেখক-পাঠকদের কাছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
মাসকাওয়াথ ভাই,
আপনি কি এই চিঠি প্রধান কমিশনার কাছে সত্যি সত্যিই পাঠাতে পেরেছেন কোনভাবে?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মনে হচ্ছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
আশা করছি চিঠি তাঁর কাছে পৌঁছেছে। ভরসা করতে পারছিনা যদিও, উত্তর দেবেন তিনি।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কেন নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব শাখা অফিসে জমা দেয়া যাবে না, এর কোনো সুস্পষ্ট আইনী ব্যাখ্যা কি আছে?
দুর্বল প্রশাসকেরা সব নথি বগলে নিয়ে বসতে চায়, কোন আইন নেই শাহী এলান।শেষ পর্যন্ত লেজে গোবরে, হিসাব দাখিলের ছকটা অনলাইনে মনোনয়ন ফর্ম ছিলো যে রকম, সেরকম থাকলে আর একজন সহকারী সচিবের ই-মেইল আড্রেস দেয়া থাকলেই মিটে যেতো তাইনা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
- বাহ্, নির্বাচন কমিশন তো বেশ করিৎকর্মা মনে হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য যে এর আশেপাশের (নির্ভরশীল) সরকারী মাধ্যম (যেমন ডাক বিভাগ)-এর করিৎকর্মা ভূমিকাটি (!) মাথায়ও রাখছে না!
নির্বাচনী ব্যয় হিসাব দাখিলে নির্বাচন কমিশন ইমেইল করার অপশন কেনো রাখলো না, যেটা নির্দিস্ট তারিখ রাত ২৩:৫৯ মিনিটের পর আর কার্যকর থাকবে না!
ডিজিটাল বাংলাদেশ, নিয়মানুবর্তীতার ফাঁকা বুলি আউড়ে, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে, একজনের মামলায় আরেকজনের মালামাল ক্রোকের হুমকি দিয়ে, নির্বাচন কমিশন মন্ত্রণালয় কি তাহলে নিজের ব্যর্থতাই ফুটিয়ে তুলছে না?
আর শাখা অফিসে যদি নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব জমা নেয়ার কোনো কর্তৃত্ব না থাকবে, তাহলে সেটা খুলে রেখে শুধু শুধু সরকারী কোষাগারের টাকা নষ্ট করা কেনো? সব বন্ধ করে কেবল ঢাকার মূল কেন্দ্র খোলা রাখলেই তো সরকারের অনেক টাকা বাঁচে। নাকি তাতে কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের 'টু-পাইস' কামানোতে সমস্যা হতে পারে!
"পাছায় নাই চাম, রাধাকৃষ্ণ নাম" আরকি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ডিজিটাল বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনে ডিজিটাল মাধ্যমে কোন কাজ হয় না?
কি মাঝি, ডরাইলা?
বুঝলাম না মাঝে একটাও মেইল নেই, আমি মনোনয়ন পত্র জমা দেবার সময় ই-মেইল আড্রেস লিখে বাঘার উপজেলা নির্বাহী মি। শাহরিয়ারকে দেখিয়েছিলাম আমার সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা। তিনি স্মার্ট কর্মকর্তা দাপ্তরিক যোগাযোগ রেখেছেন।কিন্তু ওই মনোনয়ন পত্রে লেখা ই-মেইল ঠিকানাটি নির্বাচন কমিশনের মামলা রুজুকারী কর্মকর্তার চোখে পড়লো না। কী সাংঘাতিক পিছিয়ে থাকা। সেই বৃটিশ-পাকিস্তান চেহারার পুলিশ আদিম আমলাতন্ত্রের গ্রেফতারী পরোয়ানা নিয়ে বলছে মাল ক্রোক করবো। করুক শুধু বই পাবে, পুলিশেরা যদি বই পড়তে চা্য আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারকে জানাবেন।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।
নতুন মন্তব্য করুন