এখন যৌবন যার ছাত্ররাজনীতির শ্রেষ্ঠ সময়

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: শনি, ২৪/০৭/২০১০ - ৫:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছোটবেলা থেকেই অভিভাবকেরা ছাত্র রাজনীতিতে নিরুতসাহিত করলেন।এর কারণ আজো বোধগম্য হয়নি আমার কাছে।অথচ এই ছাত্র রাজনীতি না থাকলে আজ উর্দুতে ব্লগিং করতে হত,ইপিসিএস পাশ করে সিএসপির ধমকে বারান্দার রোদে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবী হাফরেড কলোনিয়াল বড়ে মিয়ার কাছে পোস্টিং-এর তদবির করতে হতো,নিজের ভাঙ্গা গাড়ীটা নিয়ে সিএসপির জন্য গোমাংস কিনতে ছাগলনাইয়া যেতে হতো।অথবা পাকিস্তান টাইমসে লেটার সেকশনে সাব এডিটর হয়ে বাঙ্গালীদের লেখা চিঠিগুলো বাস্কেটে ফেলে দিয়ে করাচী ইউনিভার্সিটির ইংরেজীতে থার্ড ক্লাস পাওয়া সম্পাদককে খুশী করতে হতো।

 

পূর্ব বাংলার ছাত্র রাজনীতি বাঙ্গালীর মুক্তিসনদটি রক্ত দিয়ে এনে দেবার পর মুক্ত দেশের সুফলভোগকারী সুশীল সমাজ বা আমার মত সুবিধাভোগীরা ছাত্র রাজনীতি বন্ধের জন্য স্কিজোফ্রেনিক হয়ে পড়েছে।কারণ পরিষ্কার ছাত্রলীগ-দল-শিবিরের ক্যাডারদের হাতে মেধাবী ছাত্রদের মৃত্যু ছাত্ররাজনীতিকে সপাপবিদ্ধ করেছে।

 

কিন্তু ছাত্র ইউনিয়ন-মৈত্রী-ফেডারেশন-ফ্রন্ট-জাসদ আজ অবধি ছাত্ররাজনীতির গর্বের চিহ্নগুলো লালন করে চলেছে।আমার সহপাঠীদের মধ্যে এইসব ছাত্র রাজনীতির অমল যোদ্ধারা আজ ঢাকার সবচেয়ে ভাল কাজগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত।ছাত্র রাজনীতির সাংগঠনিক অনুশীলন চাকরী ক্ষেত্রে বা ক্ষুদ্র উদ্যোগে কাজে আসছে।বেশ কিছু ভালো বই-পুস্তক পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে অসাম্প্রদায়িক আধুনিক জীবন যাপন করতে শিখেছে রাজনীতির চারুপাঠের মাঝ দিয়ে। নব্বুইএর গণ আন্দোলনে আরেক মুক্তিযুদ্ধ লড়েছিল তারা ছাত্রলীগ-দলের পাশাপাশি।

 

ছাত্রলীগ বা দল প্রধান ছাত্রসংগঠন হয়েও ক্ষমতার হালুয়া রুটি ভাগে অংশ নিতে গিয়ে সমাজে ছাত্ররাজনীতিকে খারাপ ছেলেদের কাজ এরকম একটা ব্র্যান্ডিং এ রসদ যুগিয়ে চলেছে। এই দুটো দলেও ভালো ছেলে-মেয়ে আছে কিন্তু তারা লোভের গ্রহণকালে সংখ্যাগরিষ্ঠের রক্তপাত,টেন্ডার বা চাঁদা সন্ত্রাসের বিপরীতে কিছুই করতে পারেনি। তাই লীগ বা দলের সমালোচনায় ঐসব দলের ভালো ছেলেমেয়েরা অফেন্ডেড বোধ করলেও লিখতেই হচ্ছে প্রধান দুই ছাত্র সংগঠনের অছাত্রসুলভ কাজগুলোই আজ ছাত্ররাজনীতি্র এবং বড় দলদুটোর বিষফোঁড়া হয়েছে।

 

ছাত্রশিবির নব্যনাতসীদের মত রগকাটা ধর্ম ব্যবসায়ীদের তরুণ উইং।দেলোয়ার হোসেন সাইদীর আদি রসাত্মক ইন্টেলেকচুয়াল হাইট আর নিজামীর বুজুর্গ ময়ূরপুচ্ছ দিয়ে তারা যতই একে নিয়ম তান্ত্রিক বা আদব লেহাজের সংগঠন হিসেবে রাঙ্গানোর চেষ্টা করুক, রগকাটার হিংস্রতা বা ঠান্ডা মাথার পাশবিকতার জন্য তারা ঘৃণাসঞ্জাত অমরতার আয়োজন করেছে।

 

এই তিনটি দলের ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার অভিভাবকদের ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে ভীত করেছে।এর অর্থ কী এই আমরা গ্রন্থকীট তৈরী করব,বিসিএস বা এমবিএ বা জি আর ই গাইড মুখস্ত করবে আমাদের ছেলে বা ছেলে বউ।আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষা দেবার পর ছেলে যখন বউকে নিয়ে টাসকানি আইল্যান্ডসে ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ মাকে ফোন করার সময় পাবেনা,তখন বাবা ধূসর চোখে বসে থাকবেন হাসপাতালের বারান্দায়, তখন ছেলেটাকে জানু জানু বলে অস্থির করে তোলা ইংলিশ মিডিয়ামের বৌমা বা বোমাটিকে দোষ দেবেন।

 

কোন রকম রাজনীতি বা সামাজিক সংগঠন না করে যে ছেলেটিকে সাফল্যের বই মুখস্ত করা মানদন্ডটি হাতে তুলে দিচ্ছেন তখন এই আত্মকেন্দ্রিকতার পান্ডুলিপি করে আয়োজন নিজের শেকড় ভুলে আমি আমি এবং আমি আর প্রগলভ প্লাস্টিক জানু।

 

মধ্যবিত্তের ধারণা গরীবের ছেলেরা রাজপথে গুলি খাবে, আর তার নন্দলাল টোফেল কোর্স করবে,ইংরেজী ককনিতে অস্থির করে তুলবে অশিক্ষিত জনপদ।

 

সোরোয়ার্দী,শেরে বাংলা,বঙ্গবন্ধু,তাজউদ্দীনের বাবারা যদি এতোটা আত্মকেন্দ্রিক হতেন তাহলে আজ কোন হিন্দী বা উর্দুভাষী বসের গোলাম হতে হতো আপনার ইংরেজীর জাহাজটিকে।মুক্ত বাংলাদেশ পেয়েছেন ঐ ছাত্র বা শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের কারণে।বাচ্চাকে কমরেড মনি সিং, ইলা মিত্র,বিনোদ বিহারী দাসদের মতো বোকা বানাতে চাচ্ছেন না আর কেউ। ট্রাফিক জ্যামে ভিক্ষুকের অত্যাচারে সরকারকে গালাগাল করছেন,মনে হচ্ছে এই দেশে সাংসদ পদে নির্বাচন করা মানে নন্দঘোষের টাইটেল জেতার রেসে যোগ দেওয়া।ইংলিশ মিডিয়ামের অবিস থলথলে বাচ্চার কিট ক্যাট খাওয়া দেখছে গাড়ীর জানালার দলিত শিশুটি, পারলে টিন্টেড গ্লাস তুলে দিচ্ছেন, পাছে আপনার ছোট হাতিটি প্রিন্সটনে না গিয়ে ময়মনসিং হের জেলে বিদ্রোহে চলে যায়।বাস্তবতাকে আড়াল করে বিজ্ঞাপনের ঝকঝকে গজদন্তের জীবন দেখিয়ে যখন বলছেন বেছে নাও, ও বেছে নিচ্ছে মাচুপিচু ভ্রমণ আর ধবল জানু।সুতরাং যে রকম ক্যাকটাস বনসাই তৈরী করছেন, বৃদ্ধনিবাসে বসে তার হাওয়া খাবেন বলাই বাহুল্য।

 

আমাদের শিক্ষকেরা নানাভাবে অছাত্র ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ায় ছাত্রদের রাজনীতিতে নিরুতসাহিত করেন। আর রঙ্গিন প্যানেলের দলীয় অশিক্ষকেরা তার দলে টানেন বলিবর্দ ছেলেদের।

ফলে ছাত্র রাজনীতিতে সহসা ছাত্রসুলভ বাতাবরণ তৈরী হবে বলে মনে হয়না।যদিনা ছাত্ররাই উদ্যোগী হয়।

 

তাহলে কী হবে, আমরা রাজনীতিমুক্ত প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি করে সেখানে বাংলায় কথা বলতে বারণ করব। বৃটিশ আমলে দিল্লী-কলকাতায় এরকম একটি ইংরেজীর বাতাস লেগেছিলো। বৃটিশের নেটিভ ঠিকাদারেরা ছেলেদের কনভেন্টে পাঠিয়ে ডালহৌসি সাহেবদের হৃদয় হরণ করেছিলেন।আমরাও মরিয়ার্টি সাহেবদের ইমপ্রেস করতে এনভায়রনমেন্ট ক্লাব করে ইংরেজীর মত শব্দ করে কী যেন বলে সেরা ইউনির তকমা লাগাচ্ছি কানাছেলেদের পদ্মলোচন ব্লুজ পরিয়ে।দুর্নীতি না করে সৎ উপার্জনে ঐ সেমিস্টার ফি দেয় যে সব ইঙ্গ-মার্কিন-আরব নেটিভ ঠিকাদার তাদের ছেলেমেয়ের এডমিশন ফর্মের ঠিকানা ধরেই তাদের সততার অম্ল না হলেও ক্ষার পরীক্ষাটি আমরা করতে পারি।

 

ঢাকা শহরের অস্ট্রিচ প্রজন্মটি নব্য এলিট বলে ভাবে নিজেদের,টরান্টো বা ন্যুইয়র্কে ক্যাবলা হয়ে বসে থাকে,ভাব দেখাতে হলে আবার তাদের ঢাকার অন্ধকার গ্রামেই আসতে হয়। এই হচ্ছে আই হেট পলিটিক্স-আই লাভ ম্যাকডোনাল্ডস অপদার্থদের অর্জন।এফ এম চ্যানেলে বা বিবিসি জানালায় পশুপাখির ভাষায় কথা বলে শোবিজে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে নদী মানুষদের। মানে না বুঝলেও বোঝা যায় ইংরেজির মতো কিছু একটা। ওরাং ওটাংদের বাহিরী চটক দেখে সৎ মানুষেরা দিশেহারা হয়ে বাচ্চাদের মাস্টার মাইন্ডে ভর্তি করে আমার ভাষায় পশ্চাদদেশ বা হিমুর ভাষায় পাছা বা আমাদের বাচ্চাদের ভাষায় বাটস বা বটোম অরক্ষিত করছেন।এই মাস্টার মাইন্ড যে রাজনীতিবিমুখ প্রজন্ম তৈরী করে ছায়ানর্তকদের মনপছন্দ সরকার বসিয়ে বিনা বাক্যব্যয়ে নৌবহর,কালো-পানি ঠিকাদারির বন্দোবস্ত, তা আমরা আর না বুঝলেও চলে।চলুন আমরা পুঁজিবাদ-সমকামিতাকে বা ধর্ম ব্যবসা গেলমান সংস্কৃতিকে আরো জনপ্রিয় করে তুলি।

 

এখন একটা কুবুদ্ধি দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই। কড়াবাবা-মা বা অভিভাবকদের কথা শিরোধার্য, তাদের কথা শুনলে নিশ্চিত সফল বর্ণহীন জীবন, আর মাত্র দুই শতাংশ কথা না শুনে ছাত্র বা সমাজ সংগঠন লুকিয়ে করতে পারলেও সত্যিকার সফল এবং বোধের রঙ্গিন জীবন। আমাদের প্রজন্মে যারা অভিভাবকদের শতভাগ কথা শুনে ক্যারিয়ারের ইঁদুর দৌড়ে গিয়েছিলো, তাদের শৈশব চুরি হয়ে গ্যাছে,ফেসবুকে তাদের জীবনের অন্তসারশূণ্যতার দীর্ঘশাস দেখে আমি নিশ্চিত আমার ছেলেটিকে আমি সক্রিয় ছাত্ররাজনীতি বা সমাজসংগঠনে ঠেলে দেবো যাতে সে ফেসবুকে এসে স্ট্যাটাস দেয় উই ডোন্ট নিড নো এডুকেশন।

 

 

 


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মাস্টার মাইন্ড এখন যে রাজনীতিবিমূখ প্রজন্ম তৈরী করছে তা কিন্তু আমাদের লেজুর ছাত্রদল আর ছাত্রলীগের রাজনীতির ধারারই ফলশ্রুতি। নব্বইয়ের দশকেই সম্ভবত ছাত্র-রাজনীতির কবর রচিত হয়েছে। যে কারণে নব্বইয়ে মাঝামাঝি থেকে আজ অবদি প্রধান দুই ছাত্র-দল ছাত্রদের ফেভারে কোন আন্দোলন করেছে বলে মনে করতে পারছিনা। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি কিভাবে করতে হয়, তার জন্য কত গবেষণা (সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য আহরণ অর্থে) আর সময় দিতে হয় তা প্রবাসের এসে (ছাত্র সংগঠনের সাথে এক বছর যুক্ত থেকে) বুঝেছি। সবকিছুতেই প্রবাসের উদাহরণ টেনে আনছি মনে হতে পারে বলে সেদিকে আর যাচ্ছিনা। শুধু একটু বলি (আমাদের সময় থেকেই দেখেছি) ছাত্ররা "ছাত্র" ভাবনাটা আর student অর্থে করেনা, সেটাকে তারা ব্যবহার করে দাবী আদায়ের অন্যায় পথে। একটা উদাহরণ দেই-- স্পীড ব্রেকার না থাকার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস চাপা পড়ে অনেক ছাত্র/ছাত্রী প্রাণ হারিয়েছে। আমার জানা মতে ছাত্ররা আজ পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর কোন সমাধান বের করে আনতে পারেনি। তার চেষ্টা করেছে বলেও মনে করতে পারছি না। অথচ ছাত্রত্ব প্রকাশ পাচ্ছে কেউ দুর্ঘটনায় মারা গেলেই রাস্তা অবরোধ বা ভাংচুর টাইপের কর্মকান্ডের মধ্যে।

সর্বশেষ আমরা কী দেখলাম? যে লোকটাকে আমি আওয়ামী লীগের মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ করি, সেই সৈয়দ আশরাফ যখন বললেন ছাত্রলীগের দায় তার দল নেবে না তখন আমার আর যাওয়ার যায়গা থাকেনা। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আশার আলো আমার কাছে ক্ষীণ মনে হয়।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সহমত। কিন্তু ছাত্রদের ধীরে ধীরে অনলাইনে পাওয়া যাবে,এখান থেকে উদ্দীপনা নিয়ে এই সেলফ লার্নার প্রজন্ম নিজেদের প্রয়োজনেই ছাত্র রাজনীতির চারুপাঠে আগ্রহী হতে পারে এই আশায় আছি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

হিমু এর ছবি

অপ্রাসঙ্গিক নোট: যে ছবিগুলো পোস্টের সাথে আপ করেন, সেগুলো কি আপনার নিজের তোলা? যদি অন্যের তোলা হয়, তাহলে সচলায়তনে আপলোড না করে অন্য কোনো ইমেইজ হোস্টিং সার্ভিসে আপ করে এমবেড করুন, আর সূত্র উল্লেখ করে দিন। কপিরাইটের একটা ঝামেলা তা না হলে থেকে যায়।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

খুব ভালো পরামর্শ, সাবধান হওয়া উচিত, মুস্তাফিজ ভাইয়ের মতো উদার সব ছবি তুলিয়ে নাও হতে পারেন। একে তো সিইসির ওয়ারেন্ট তার ওপর কপি রাইট কর্তার চিঠি এসে গেলে সোনায় সো-- হয়ে যাবে। সাবধান হয়ে গেলাম, ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সিরাত এর ছবি

ইন্টারেস্টিং। এ ব্যাপারে আমার ব্যক্তিগত মত দেয়ার ইচ্ছা আছে, কিন্তু দিতে গেলেই পরিবার-বন্ধু চলে আসে। এগুলো ছাড়া বুঝানোও তো কঠিন। খালি ইমিডিয়েট কারণ ছাড়াও পারিপার্শ্বিক, সামাজিক চাপ, এগুলোও কিন্তু বিশাল ফ্যাক্টর।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

বুদ্ধিজীবীরা বউ শ্যালিকার ভয়ে সত্যপ্রকাশে ভয় পায়। আমাদের সিরাত অবশ্য ঋজু মানুষ বলেই জানতাম। ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সিরাত এর ছবি

কড়াবাবা-মা বা অভিভাবকদের কথা শিরোধার্য, তাদের কথা শুনলে নিশ্চিত সফল বর্ণহীন জীবন, আর মাত্র দুই শতাংশ কথা না শুনে ছাত্র বা সমাজ সংগঠন লুকিয়ে করতে পারলেও সত্যিকার সফল এবং বোধের রঙ্গিন জীবন।

এই উদ্ধৃতিটা ভাল লাগলো। হাসি এটি আরো বৃহদার্থেও প্রযোজ্য।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ , বৃহদার্থের মধ্যে ভক্তিদের সঙ্গে কফি খাওয়া পড়ছে না।কোন জনপ্রিয় তরুণ ব্লগার এই উদ্ধৃতির সম্প্রসারণ ঘটালে তা নিজ দায়িত্বে করবেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

আসিফ  [অতিথি] এর ছবি

আমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে আপনার বাচ্চাটি/দেরকে আপনি কোথায় শিক্ষাগ্রহণের জন্য পাঠাচ্ছেন। বাংলা না ইংরেজী মিডিয়ামে?

অফ টপিক মনে হলে ক্ষমাপ্রার্থী।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আমার বাচ্চা বাংলায় পড়ছে, ইংরেজীও শিখছে অল্প, বাংলাতেই বেশী জোর। কারণ যে মাতৃভাষায় ভালো অন্যভাষায় তার দখল আসতে বাধ্য।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

ছাত্ররাজনীতির জন্য দীর্ঘশ্বাস! ভালো লেগেছে লেখাটি।

সুমিমা ইয়াসমিন

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

অন্ততঃ এখনো একজন ছাত্র হিসেবে আমার বিবেচনায়- 'ছাত্ররাজনীতি' শব্দটাই এখন অছাত্রসুলভ। সক্রিয় রাজনীতিতে থাকলে আমার রগ কর্তন করে আমায় ম্যানহোলে ছুঁড়ে দেয়া হবে; না থাকলেও জীবনের নিরাপত্তা নাই...

ষাটের দশকের চরিত্র নিয়ে এখনো কি কোন ছাত্রনেতা আছেন ?? ফরাসী পাতিসেরি আর ঢাকাইয়া বিউটি বোর্ডিং-এর আদলে মুক্তচিন্তার সাথে সমষ্টিগত ভাবে পরিচিত করানোর দায়িত্ব নেবে কে ?? ফারোয়ার সারুকীর এফএনেফ আর ডিজুস প্রজন্ম আমরা; আহমদ ছফা কী বিনয়-বাদল-দীনেশ চিনি না...

মানুষ হিসেবে আজন্ম সুবিধাবাদী আমরা, আমরা তাই রাজনীতিমুখো হব না...

_________________________________________

সেরিওজা

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

রাজনীতি বা সমাজ সংগঠন হচ্ছে প্রেমের মতো। মারা পড়ার ভয় আছে তবুও রোমিও হোমিওপ্যাথের দোকান বন্ধ করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধনে যায়। ঢাকা ইউনিভার্সিটির অস্ত্রের রাজনীতির আয়ু শেষের দিকে, খোঁজ নিয়ে দেখেন। ভালো থাকবেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অগত্যা এর ছবি

ঢাকা ইউনিভার্সিটির অস্ত্রের রাজনীতির আয়ু শেষের দিকে, খোঁজ নিয়ে দেখেন

আহ যদি সত্যই এমন হত? এই একটা পরিবর্তন হলে বাংলাদেশে কেবল ছাত্রারাজনীতি নয় রাজনীতিত খল নলচে পালটে যেত। আপনার এই আশাবাদ কিসের উপর দাঁড়িয়ে আছে আপনিই ভাল জানেন। তবে আরেকটু ঝেরে কাশুন তাহলে আপনার মত করে যদি আশাবাদি হতে পারি!! নাকি বলতে চাচ্ছিলেন মহান ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের আদর্শিক প্রভাবে ছাত্ররাজনীতি রাহুমুক্ত হতে চলেছে। অবাক হবনা অবশ্য! অনেকে আদর্শের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে অনেক কিছুই ভাবেন তো। তবে আপনার আশাবাদ সত্যি হোক এমন কামনাই করি।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

মহাজোটের মহাবিজয়ে ছাত্রলীগের উদ্ধৃত করার মত কোন অবদান নেই,শেখ হাসিনা যখন লালইটের কারাগারে ছিলেন, তাঁর মুক্তিতে ছাত্রলীগ লাগেনি। খালেদা জিয়ার মুক্তিতেও ছাত্রদল লাগেনি। একএগারোর সামরিকজান্তার বিরুদ্ধে ঢাবির বামপন্থী মানবেরাই একটু চেতনার ব্যারিকেড গড়েছিল। ক্ষমতার মাখন খেতে গিয়ে কতিপয় অছাত্রলীগ যা করেছে তাতে হাসিনা বা আশরাফ এই বখাটেদের ত্যাজ্য করতে বাধ্য হয়েছেন। খালেদা ক্ষমতায় নেই বলেই কতিপয় অছাত্রদলের টেন্ডার সন্ত্রাস থেকে নিরাপদে আছেন। হরতাল করে সুবিধা হবে না। তাই এলিফ্যান্ট রোড থেকে ২০০৬এ খাবলা দিয়ে তুলে আনা কেডস-জীর্ণ জিনস পরা বুকের বল লাগছেনা তাঁর। ভোটের রাজনীতিতে এদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে। কোন দলীয় প্রণোদনা ছাড়াই একটু আশা করা যায় এখন, হয়ত, বোধহয়।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অগত্যা এর ছবি

আপনার আশাবাদের উৎস্য বুঝলাম। তবে

হাসিনা বা আশরাফ এই বখাটেদের ত্যাজ্য করতে বাধ্য হয়েছেন

অফিসিয়ালি আরকি!! সত্যিই যদি ত্যাজ্য করা হত ছাত্রদল আর ছাত্রলীগকে! যাই হোক আপনার এই সরল বিশ্বাসের উৎস্য হয়ত একটা কিছুর মধ্যে আশাবাদের অক্সিজেন সিঞ্চন বলব কপটতা বলবনা। আপনার বিশ্বাস সত্যি হোক।

ভোটের রাজনীতিতে এদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে

কেমন করে একটা আশাবাদের উপর আরেকটা আশাবাদ উঠে দাঁড়ায়। আশা করি এটাও সত্যি হোক।

কোন দলীয় প্রণোদনা ছাড়াই একটু আশা করা যায় এখন, হয়ত, বোধহয়

ভাবছিলাম কাছা দিয়ে আপনার সাথে ঝগড়া করতে নামব। কিন্তু এই খানে আইসা আটকাইয়া গেলাম। আশাই সই। আশা দিয়া প্রাসাদ বানাই, বিশ্বাস দিয়া খুটি। ঝরের ধাক্কায় প্রাসাদ যদি উড়ে না যায়, বিশ্বাসে যদি পচন না ধরে, তাহলে মুক্তি আসতেও পারে।
"হয়ত, বোধ হয়"।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

"হয়ত, বোধ হয়"

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

বইখাতা এর ছবি

বুঝলাম, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন ছাত্ররাজনীতির যে রূপ দেখেছি তাতে তো ভরসা পাই না। প্রধান দুই দলের ছাত্রী হলের দু'একজন নেত্রীকে চিনতাম। বিভিন্ন কাজে, পরিস্থিতিতে তাদের এবং তাদের সঙ্গী সাথীদের যে অন্যায় চোটপাট, হুমকি, ভাংচুর ইত্যাদি ইত্যাদি দেখেছি তাতে ওদের সাথে ভাল সম্পর্ক তো দূরের কথা, স্বাভাবিক সম্পর্কই ছিল না। এড়িয়ে চলতাম। এখনকার 'ছাত্রনেতা'দের হিসাবনিকাশ আলাদা রকমের। এই 'ছাত্রনেতা'দের রাজনীতিতে আকৃষ্ট হওয়ার মতো কিছু দেখিনি।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আদুভাইভগ্নীদের দিয়ে আর চলছে না। আপনি যাদের দেখেছেন, আমি যাদের দেখেছি তারা ঐসময় বাঘের মতো দেখালেও সময়ের শাসনে শুকিয়ে বেড়াল হয়ে গেছে,নেতাদের বারান্দায় তদবির নিয়ে বসে থাকার এই ভাগ্যহত জীবন কত কষ্টের,মনের শেষ বাতাস দিয়ে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে গিয়ে পুহ হয়ে যাচ্ছে। বছর খানেক পরে আপনি এদের ট্যাক্সিতে চড়বেন, প্লিজ তখন একটু হেসে বলবেন, বন্ধু কি খবর বল,আমরা তখন এদের আবার পছন্দ করতে পারবো। এরকম একজন পুরনো ক্যাডার বন্ধুর সিএনজিতে চড়েছি গতমাসে। সত্যিই ভালো লাগলো তাকে প্রথমবারের মত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

অভিভাবকেরা ছাত্র রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাটাকে নিরুৎসাহিত করে আসছেন সবসময়। পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশের পুরো সময়টাতে তো অবশ্যই। এই নিরুৎসাহিত করার কারন কিন্তু সময়ভেদে বিভিন্ন। তবে অন্যান্য অনেক কারনের ভেতর একটা কারন কিন্তু অভিন্ন আর সেটা হলো ভবিষ্যত নিয়ে শংকা।

সরাসরি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম বলে এখন আমার কষ্ট লাগে দল আর লীগকে শিবিরের সাথে মিলিয়ে দিতে।

অফটপিকঃ পাকিস্তান টাইমসের সম্পাদক হামিদ রাও পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং ডিস্টিংশন নিয়ে পাশ করেছেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

শিবির প্রথমেই পৃথক, জার্মানীতে যেমন নিও নাতসীদের কড়কে দেয়া হয়, বাংলাদেশেও সেটা দরকার। আর ছাত্রদল ছাত্রলীগের কতিপয় অছাত্রের কর্মসংস্থান করে হলেও ওদের এই উঞ্ছবৃত্তি থেকে জীবনেফেরানো দরকার। কারো সঙ্গেই কাউকে মেলাইনি, যারা ছাত্র রাজনীতির ক্ষতি করেছে তাদের অপরাধটা অবশ্য একই।তবুও আপনার স্পর্শকাতরতায় কোন অনভিপ্রেত আঘাত এসে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী।
আর পাকিস্তান টাইমসের কাল্পনিক ঢাকা রেসিডেন্ট এডিটর ঐ রকমি হতেন মনে হয়। কারণ পাকিস্তানের ডন পত্রিকার মাধ্যমে ইংরেজী সাংবাদিকতার শুভ সূচনা করেছিলেন ঢাকা ইউনিভার্সিটির ইংরেজীর ছাত্ররা। পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি ঢাকা ইউনিভার্সিটির ধারে কাছেও ছিলো না, এগুলো ওদের বয়ানে পাওয়া তথ্য।
তবে হামিদ রাও মাস্ট বি আ টপ নচ। আমার ঐ লাইনটা কাল্পনিক, হতে পারতো ধরনের। ভালো থাকবেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

সাবিহ ওমর এর ছবি

লেখাটা পড়লাম, ফেসবুকে শেয়ার দিলাম, এখন কমেন্ট লিখছি, আশা করি ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ভুলে যাব।

আমরা অনেক স্মার্ট ছেলে। ছোটবেলা থেকে জানি যে এঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বাইরে আসব। সেজন্য হ্যারি পটার পড়ে পড়ে ইংরেজি শিখি আর উইম্পির বার্গার খেতে খেতে দেশে ম্যাকডোনাল্ডস নাই বলে দুঃখ করি। দেশের চিন্তা একেবারে করি না তা-না। একুশে ফেব্রুয়ারি কি স্বাধীনতা দিবসে গলা ফাটিয়ে গণসঙ্গীত করি তো! মাঝখানে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল নামের এক ভদ্রলোকের 'চটিবই' পড়ে পড়ে এই বন্যা-ভূমিকম্প-সাইক্লোন-জলোচ্ছ্বাস-সন্ত্রাসপীড়িত দেশটাকে একটু একটু ভাল বেসেও ফেলেছিলাম। যখন এইম-ইন-লাইফ স্থির করার সময় আসলো, জিগ্যেস করলাম, দেশের জন্য সামান্য কন্ট্রিবিউট করা যায় কেমনে। আমাদের জানানো হল, সবার আগুনে ঝাঁপ দেবার দরকার নাই, 'যার যার জায়গা থেকে সাধ্যমত করলে'ই হবে। আমরা স্মার্ট ছেলে, বুঝে নিলাম।

/*আসলে লাইফ একটা হয়েই ঝামেলাটা পাকলো... খাইছে
(জিহবাটা কারে দেখালাম বুঝতে পারছিনা, ক্ষ্যাতই রয়ে গেলাম)*/

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আপনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন, সরদার ফজলুল করিমকে দেখে আমরা আর আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইনা। আপনি ঢাকার চাকরি বাজারের ভীড় অলা কাঠবডি বাসে আরেকজনকে বসতে দিয়ে নেমে গেছেন। দেশে একশো ডলার পাঠালেও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসার্ভ বাড়িয়েছে। আর একটা কাজ করতে পারেন, এবার ছুটিতে দেশে গিয়ে নিজের গ্রামের স্কুলে ল্যাপটপ নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের মনে গোলকের নেশাটা ধরিয়ে দিতে পারেন গল্পের ছলে। শিক্ষকরাও খুশী হবেন। আপনার একঘন্টা গল্প শুনে দুটো বাচ্চার জীবন বদলে গেলে সেটাইতো রাজনীতি।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা অত্যন্ত অফটপিকঃ
হুমায়ূন আহমেদের মাতাল হাওয়ায় ঊনসত্তরের কাছাকাছি সময়ে ছাত্র রাজনীতির ২/১ টা
অপপ্রয়োগের ঘটনা আছে। আমরা কি ইতিহাসের এক সময়ের ভাল কাজ খারাপ কাজের শতকরা ভাগে যেটার বেশি সেইভাবে সময়টাকে ভালো বা খারাপ মার্ক করি?

ছাত্র রাজনীতি বলতে যদি শুধু ছাত্র লীগ, ছাত্র দল (শিবির কে আমি কোন দলের মর্যাদা দেই না) ধরলে আমাদের সময় থেকে ভাল কিছু পাওয়া যাবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সচেতন ভাবে গঠনমূলক কাজে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এমন নজির আছে কিন্তু। আইলা/শীতের সময় অনেকেই দল বেঁধে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করে।পথশিশু দের লেখাপড়া শেখায়।

রিক্তা
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

দারুণ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌আমরা বোধহয় ছাত্ররাজনীতির কথা বলতে গিয়ে অপরাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলি ব্যাপারটা। ছাত্ররাজনীতি কিভাবে অপরাজনীতিতে রূপান্তরিত হলো সেটা নিজের চোখে কিছুটা দেখেছি। সেখান থেকে বলি।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার সত্তরের শেষ বা আশির শুরুর কথা। আমরা স্কুলের শেষভাগে তখন। আমাদের কলোনীতে বড় ভাইদের রাজনীতি সচেতন যে দলটা ছিল তারা বরাবর যে কোন অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার। মিছিল, মিটিং, গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলন থেকে শুরু করে সবরকম রাজনৈতিক আচারে সক্রিয় ছিল। রাজনীতির জন্য তাদের তিরস্কার করতে দেখিনি অভিভাবকদের। আমার বাবা মা কখনো বলতো না ওদের মতো হয়ো না, ওরা খারাপ লোক। বরং ওদের প্রশংসার মুগ্ধ গল্প শুনে বড় হয়েছি।

নব্বইয়ের এরশাদ পতনের আগে আগে দেখতাম ওনাদের পাশাপাশি কিছু বখাটে ছোকরাও রাজনৈতিক মিছিল করতে শুরু করেছে। আলাদা ভাবে। ভাবতাম এটারও দরকার আছে হয়তো। এরশাদের মতো অসৎ লোককে সরাতে হলে এই বখাটেদেরও আন্দোলনে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় চোর ডাকাত সবাই তো যুদ্ধ করেছে। সব তো ভদ্রলোক হতে হবে এমন কথা নেই। কেউ ওটা নিয়ে গা করেনি।

তবে একটা জিনিস খেয়াল করতাম, বখাটের ওই দলটা হরতালের দিন সকালে একটা কাজ করে। ভোরে উঠে আগ্রাবাদের প্রধান সড়কে চলে যায়। ওদিক দিয়ে এয়ারপোর্টগামী গাড়ীগুলি থামিয়ে গাড়ী প্রতি একশো দুশো টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। হরতাল ট্যাক্স। প্রতি হরতালে এটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছিল। পরবর্তীতে তা দোকানপাট মার্কেট ইত্যাদিতে ছড়িয়ে পড়ে।

এরশাদ পতনের প্রাক্কালে রাজনীতির গডফাদারেরা এদের হাতে বাড়তি সরঞ্জাম হিসেবে বোমা বানাবার উপকরন তুলে দেয় আর সাথে সাথে পিস্তল এলজির মতো হালকা অস্ত্র। তখনকার সময় এমন কোন রাত যেত না আমরা গোলাগুলির শব্দ শুনতাম না। সেই বোমা গুলি কিন্তু কাউকে খুন করার জন্য না। প্রশিক্ষণের শব্দ। অস্ত্রের রক্ষনাবেক্ষণের শব্দ। পুলিশের সাথে মারামারিতে ওদের ব্যবহার করতো রাজনীতির গড ফাদারগন। আগ্রাবাদের যে কেউ তাদের চিনবেন 'বল্লা গ্রুপ' নামে।

এই বল্লা গ্রুপ ছিল ছিচকে সন্ত্রাসী গ্রুপ। কিন্তু গডফাদারদের বদান্যতায় এরা রাজনীতির মাঠ থেকে সেই মূলধারার শিক্ষিত রাজনীতিসচেতন বড় ভাইদের সরিয়ে নিজেরা মাঠের দখল নিল। গডফাদারগন মনে করলেন এদের কার্যকারিতাই বেশী। এদেরকে ছাত্র রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করলেন। জাহাঙ্গীর ও আলমগীর ছিল দুই পরস্পর বিরোধী সেনাপতি।

এরশাদ পতনের পর দেখা গেল ওই দুই দল এবার নিজেদের মধ্যে গোলাগুলি শুরু করলো। রাজনীতির গডফাদারেরাও এলাকা ভাগ করে দিলেন।

সেই শুরু হলো অপরাজনীতির সূচনা। যে বড় ভায়েরা এত বছর সুস্থ ছাত্র রাজনীতির মূল ধারায় ছিলেন, রাজনীতির গডফাদারেরা তাদের আর ডাকে না। বরং যাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে তাদেরকেই সকল কাজে ডাকে। ফলে রাস্তার সেই চাঁদাবাজেরা হয়ে গেল ছাত্রনেতা। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের মতো মেধাবী ছাত্রদের প্রতিষ্ঠানও দখল নিয়ে নিল এই সন্ত্রাসীদের একাংশ। নিজেদের পরিচিত করলো ছাত্র নেতা বলে। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরী আর আখতারুজ্জামান বাবুর দলে বিভক্ত হয়ে নিরক্ষর ছিনতাইকারীও বিশাল ছাত্রনেতা বনে গেল।

সারা দেশেই ছাত্র রাজনীতি প্রায় একই কায়দায় অপরাজনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। আর এই "অপরাজনীতি"কে আমরা "ছাত্ররাজনীতি" বলছি বলেই এত বিতর্কের সূত্রপাত। রাজনীতিতে অপশক্তি বিরাজ করছে বলেই ছাত্ররাজনীতি গালি খাচ্ছে। ছাত্ররাজনীতির অতীত গৌরব ভুলুন্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক সিষ্টেমটা আগাগোড়াই অপশক্তি মুড়িত। মূলরাজনীতি যেমন কলুষিত, ছাত্ররাজনীতিও তেমনি। ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি প্রমোট করতে গিয়ে দেখা যায় অপশক্তিদের পোয়াবারো হয়, খেসারত দেয় সাধারন ছাত্রছাত্রী।

আমি বলি, ছাত্ররাজনীতি নামে আলাদা কোন রাজনীতির সংজ্ঞার প্রয়োজন আদৌ আছে কি? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোন রকম রাজনীতির প্রয়োজনই দেখি না, ছাত্র হোক শিক্ষক হোক কর্মচারী হোক। জাতীয় প্রয়োজনে সবাই রাজনীতি করবে, কিন্তু আলাদা করে ক্যাম্পাসের জন্য কোন রকম রাজনৈতিক কমিটি থাকার তীব্র বিরোধীতা করি আমি!!

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
এ ভ্রমণ, কেবলই একটা ভ্রমণ- এ ভ্রমণের কোন গন্তব্য নেই,
এ ভ্রমণ মানে কোথাও যাওয়া নয়।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

অসম্ভব ভালো সংযুক্তি। ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

এই তিনটি দলের ছাত্র রাজনীতির অপব্যবহার অভিভাবকদের ছাত্ররাজনীতি সম্পর্কে ভীত করেছে।এর অর্থ কী এই আমরা গ্রন্থকীট তৈরী করব,বিসিএস বা এমবিএ বা জি আর ই গাইড মুখস্ত করবে আমাদের ছেলে বা ছেলে বউ।আত্মকেন্দ্রিকতার শিক্ষা দেবার পর ছেলে যখন বউকে নিয়ে টাসকানি আইল্যান্ডসে ঘুরতে গিয়ে অসুস্থ মাকে ফোন করার সময় পাবেনা,তখন বাবা ধূসর চোখে বসে থাকবেন হাসপাতালের বারান্দায়, তখন ছেলেটাকে জানু জানু বলে অস্থির করে তোলা ইংলিশ মিডিয়ামের বৌমা বা বোমাটিকে দোষ দেবেন।

কোন রকম রাজনীতি বা সামাজিক সংগঠন না করে যে ছেলেটিকে সাফল্যের বই মুখস্ত করা মানদন্ডটি হাতে তুলে দিচ্ছেন তখন এই আত্মকেন্দ্রিকতার পান্ডুলিপি করে আয়োজন নিজের শেকড় ভুলে আমি আমি এবং আমি আর প্রগলভ প্লাস্টিক জানু।

যে উদাহরণ দিলেন, ছাত্ররাজনীতির সাথে তার সম্পর্ক বুঝতে আমি অপারগ। আপনি কি বলতে চাচ্ছেন রাজনীতি না করলেই একজন মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাবে? বা ছাত্ররাজনীতি করলেই সবাই পিতামাতার প্রতি দায়িত্ববান হয়ে যাবে?

যেই নীতি দুইদিন পর পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার / ভাংচুরের কাজে ব্যবহার হয়, সেই নীতি দরকার নাই। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখলে দেখবেন ছাত্র রাজনীতির সুফল খুঁজতে আপনাকে কত পেছনে যেতে হচ্ছে। এখনতো বরং ছাত্ররাজনীতি স্বার্থপরতা শেখায় বলেই আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পরিচিতজনদের কাছে শুনছি। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির ধারাই বদলে গেছে।

৬৯ বা ৭১ এর মতন প্রয়োজন পড়লে ছাত্ররা নিজেরাই আবার জেগে উঠবে। কিন্তু এখন বেহুদা ইস্যু বের করে দুই দিন পর পর "গণ"আন্দোলনের ডাক দিয়ে হকিস্টিক নিয়ে রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাংচুরের কোনো প্রয়োজন আমি দেখি না। আদর্শ আর পরোপকারিতার কথা বলছেন ? ছাত্ররাজনীতি করে কাদের আদর্শ শিখবে এক ছাত্র ? তার বর্তমান নেতাদেরই তো ? সেই আদর্শ শিখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া লাগে না, সংগঠনও করা লাগে না.. হাতের কব্জিতে ইট আর পাটকেল ছোঁড়ার জোর থাকলেই হয়।

বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র/ছাত্রীদের রাজনৈতিক সংগঠন থাকে। তাছাড়া স্টুডেন্ট গর্ভনমেন্ট অর্গানাইজেশন নামে একটা বস্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি নির্ধারণে বিশাল ভূমিকা রাখে। কিন্তু তাই বলে দা নিয়ে কেউ অন্য দলের কারো পিছনে দৌড়াচ্ছে এমন ছবি পত্রিকায় আসে না।

তাই সচেতন বাবা মা তাঁদের সন্তানদের রাজনীতি করে "নেতৃত্ব" প্রদানের গুণাবলি শিখতে না বলে বরং সাংস্কৃতিক সংগঠন বা একাডেমিক কোনো সংগঠনে জড়িত হতে বলেন।

মাস্টারমাইন্ড স্কলাস্টিকা লাগে না... বাংলা মাধ্যমে পড়েও আমি এবং আমার সহপাঠিরা ( আমার ক্ষেত্রে সেন্ট যোসেফ ->নটরডেম , এরপর আমার সহপাঠিদের ক্ষেত্রে বুয়েট বা ঢাকা ভার্সিটি) যত্নের সাথেই এই সব রাজনীতি এড়িয়ে চলেছি। বিশ্ববিদ্যালে ছাত্ররা পড়াশোনা করতে যাক... হল দখল আর মারামারি করতে নয়।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ঠিক আছে ছাত্ররা ভয় করে করে বেঁচে বিশেষজ্ঞ হবে আর অজ্ঞ লোকেরা দেশের ম্যানেজমেন্ট চালাতে গিয়ে লেজে গোবরে করবে। আর আমরা টকশো বা ব্লগের কতিপয় অলস মানুষ ক্ষুব্ধ হবো, হাসবো। তারপর ভাববো, এই বেশ ভালো আছি। পশ্চিমের উদাহরণেও খুব আপ্লুত হতে পারিনা, পাব আর ট্রাম বা ডিসকো বাদ দিলে এলিয়েনেশনের ওয়েস্টল্যান্ড, গোডোর নিশ্চল মঞ্চ, বাসস্টপে একাকী বৃদ্ধাকে ক্রিসমাসে পাতাঝরা দুপুরে একটু কথা বলার জন্য আকুল হতে দেখে, আশার ছলনে ভুলে আমার মাকেও কী আমি ওই বেঞ্চিতে বসার আয়োজন করছি, এই ভাবনায়। এই কথিত ভাবালুতাগ্রস্ততাকে কারো আউটডেটেড মনে হলেও আর অসুবিধা নেই, নির্লিপ্ততার শিল্পচর্চা করতে করতে আবার লিখবো,দেশ চালানোর জন্য ভালো ম্যানেজার দরকার। সংগঠন করা রাজনীতি সচেতন ছাত্রদের মাঝ থেকেই আসতে হবে তাদের। যাকে আপনি নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকরীর জন্য সুপারিশ করবেন না তাকে আপনি ভোট দিয়ে দেশ চালানোর এসাইনমেন্ট দিচ্ছেন। রাজনীতিবিমুখতার কারণেই আমরা সস্তা রাজনীতি যাত্রার দর্শক বা অস্ট্রিচ ক্রিটিক হয়ে ক্যাপাচুনোতে চুমুক দেবো। তথাস্ত।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

অবাঞ্ছিত এর ছবি

দেশের বর্তমান রাজনীতিতে ছাত্রদের "নেতৃত্ব" শেখানো হয় না... সন্ত্রাস শেখানো হয়। আর "ছাত্ররাজনীতি" করা অনেক নেতাই বর্তমানে দেশ চালাচ্ছেন... তাই তাদের উদাহরণ দেখে আমি ছাত্ররাজনীতির বিষযে আপনার মতন আশাবাদি হতে পারছি না। আমার মতে হকিস্টিক বাহিনি দিয়ে দেশ চালানোর চাইতে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে চালালে (যেমন ধরেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার দিযে আই.টি না চালিয়ে.. অথবা ফাইবার অপটিককে রাক্ষস ভেবে ভয় পাবে না এমন কাউকে দিলে) দেশ পেছনের দিকে না গিয়ে বরং বিংশ শতাব্দির দিকে অগ্রসর হবে।

ছাত্ররাজনীতি না করলেই কেউ নির্লিপ্ত/উদাসীন হয়ে আছে এই ধারণাটাই ভুল। যোগ্য নেতা হতে হলে ছাত্ররাজনীতি করা লাগে না.. লাগে বিচক্ষণতা, সততা আর নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা। এগুলো ছাত্ররাজনীতি না করেও শেখার অনেক ভালো পন্থা আছে। যেগুলো আগেও উল্লেখ করেছি। মিছিল আর হরতাল করাই দাবি আদায়ের একমাত্র পন্থা এই মধ্যযুগীয় মনোভাব থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।


পশ্চিমের উদাহরণেও খুব আপ্লুত হতে পারিনা, পাব আর ট্রাম বা ডিসকো বাদ দিলে এলিয়েনেশনের ওয়েস্টল্যান্ড, গোডোর নিশ্চল মঞ্চ, বাসস্টপে একাকী বৃদ্ধাকে ক্রিসমাসে পাতাঝরা দুপুরে একটু কথা বলার জন্য আকুল হতে দেখে, আশার ছলনে ভুলে আমার মাকেও কী আমি ওই বেঞ্চিতে বসার আয়োজন করছি, এই ভাবনায়।

বার বার এই একই অপ্রাসঙ্গিক জিনিস টানছেন কেন বুঝতে পারছিনা। আগেও প্রশ্নটি করেছি, আপনি এড়িয়ে গেলেন। লজিকাল ফ্যালাসিতে এটি "আপিল টু পিটি" আর "মিসলিডিং ভিভিডনেস" এর আওতায় পড়ে। ছাত্ররাজনীতি করলেই পিতামাতাকে সমাদর করবে - এই কনসেপ্ট আমার মোটা মাথায় ঢুকবে না।

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

আমি পিতামাতার প্রতীকে আমি আমার বউ বাচ্চা বা শুধু আমির বাইরের বাংলাদেশকে বুঝাচ্ছি। এই আমার এপার্টমেন্টের বাইরের তাপানুকূল জীবনের বাইরের মানুষগুলোর মুখ টিভিতে না দেখে পথে একটু মনযোগ দিয়ে দেখার অনুশীলনের জন্য সাংগঠনিক ততপরতার কথা বলছি যেটা জাফর আঙ্কেলের স্পনসরশীপ নিয়ে ফারনাজদের এনভাইরনমেন্টাল সেমিনারের চেয়ে চাঁদা দিয়ে সমাজ রাজনৈতিক সংগঠন একটু রাজনৈতিক আলোচনা, একটু বই পড়া, একটু দুস্থ পুণর্বাসনের উদ্যোগ, বাদ দেন, চলুন ভিন্নমত পোষণে একমত হই। আপনার ভাবনাগুলো আমার ভাবনার রেললাইনের সমান্তরাল হেঁটে যাওয়ার মতো। দুজনেরি শক্তিক্ষয়। আমি হার মানলাম। ভালো থাকবেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

ফারুক হাসান এর ছবি

মাসকওয়াথ ভাইয়ের সাম্প্রতিক লেখা পড়ে মনে হচ্ছে যে আপনি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের উপর বেশ আশাবাদী, বিশেষ করে কোথায়ো বলেওছিলেন যে ত্রিশের নিচে যারা তারাই পারবে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরতে, উন্নত করতে। এদের সবাই বলা যায় ছাত্র। বোধকরি সে প্রেক্ষাপটেই এই পোস্টটি লিখেছেন।

অনেক ব্যাপারেই আমি নীড় সন্ধানীর বক্তব্যের সাথে একমত। বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতির মধ্যে অপরাজনীতির প্রভাব প্রসঙ্গে, তার বক্তব্য অনেকটাই আমারো। কিন্তু চোর, বদমাশ, ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসীরা ছাত্রদের হটিয়ে নিজেরা ছাত্রনেতা বনতে পারছে কারণ সেরকম সচেতন, সাহসী এবং দৃঢ়প্রত্যয়ী ছাত্ররা এগিয়ে আসছে না।

অভিভাবকের যে বাধার কথা এসেছে, সেটাও সর্বাংশে বোধহয় ঠিক নয়। ছাত্ররা যতনা তাদের অভিভাবকের কথা শুনে রাজনীতিতে আসছে না তার চেয়ে বেশি আসছে না কারণ প্রথমতঃ তাদের অতিরিক্ত রকমের ক্যারিয়ার ভাবনা এবং দ্বিতীয়তঃ ছাত্ররাজনীতির প্রতি তাদের নিজস্ব খারাপ ধারণা।

বর্তমানের ছাত্ররাজনীতির প্রধান যে সমস্যা তা হচ্ছে এটি আর নতুন কোনো ক্যারিশমাটিক, সৎ, বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য ছাত্রনেতা তৈরি করছে না। যা হচ্ছে তা ঐ টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী কিংবা দলীয় গডফাদারের আজ্ঞাবাহী এক একটা বিষফোঁড়া। সুতরাং নতুনদের সামনে কোনো মডেল নেই। এত কিছুর মধ্যে থেকেও যারা বেরিয়ে এসে মূলধারার রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে তারাও কোনো ধোয়া তুলসিপাতা নয়। আর সমসাময়িক লীগ-বিএনপির রাজনীতিকে ছাত্ররা কতটুকু ভরসা/বিশ্বাস করে তার কথা না বলাই ভাল।

যে সব ভালো ভালো দিকের কথা ভেবে ছাত্রনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা পোস্টে বললেন, বর্তমান ছাত্ররাজনীতির যে বেহাল অবস্থা তার প্রেক্ষাপটে সেগুলো কেবল স্বপ্নবিলাস। তবু আশা যে নেই তা না। সাধারণ ছাত্ররাই তো প্রয়োজনের সময়ে জাতির পাশে এসে দাঁড়ায়, অন্যায়ের প্রতিবাদ করে, রাজপথে নেমে আসে। এর উদাহরণ দেখি জাহাঙ্গীরনগরে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে, বুয়েটে সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে উঠা অসংখ্য আন্দোলনে।

আমাদের ছাত্ররাজনীতির কান্ড থেকে দলীয় প্রভাবের বিষগুল্ম দূর করতে হবে, এটা করতে পারলেই ধীরে ধীরে সে ফিরে পাবে তা অতীত ঐতিহ্য।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

সহমত ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

এনায়েৎ ইউ এস ইসলাম এর ছবি

.
.
..ঢাকা ইউনিভার্সিটির অস্ত্রের রাজনীতির আয়ু শেষের দিকে, খোঁজ নিয়ে দেখেন। ...দারুণ একটা খবর দিলেন। এমুহুর্ত্তে মনটা অনেক আশাবাদি হয়ে উঠলো। প্রার্থনা করি খবরটা যেন বাস্তবে পরিনত হয়।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

দূরের তেপান্তর [অতিথি] এর ছবি

বর্তমানের অভিভাবকেরা ছাত্র রাজনীতির বিরোধিতা করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে এটাই হবার কথা। অনিশ্চিতের পথে কেইবা যাবে। ভরা মজলিশে এসব কথার বিপরীতে যাওয়াটা বিপদজনকও বটে।

তবে যারা বিষয়টার কাছাকাছি থেকেছেন বা ছাত্র রাজনীতির ক্ষেত্রটা নিয়ে কাজ করেছেন তাদের মত আলাদা হবারই কথা। রাজনীতির চেলা-চামুন্ডারা যে এ থেকে সুবিধা লুটে নিয়েছে তা না বললেও চলে। কিন্তু বড় স্কেলে দেখলে তা যে বড় ক্ষতির কারণ হয়নি তাও ভাববার বিষয়।

ভাইরাস একবার বেড়ে ওঠলে তা মহামারীতে রূপ নেয়। তখন বুদ্ধিজীবী আর বিজ্ঞানী দিয়েও ঠেকানো যায় না। ঠেকানো যায় অনেক মানুষ মরার পরে। এখন কথা হল, কতজন মানুষের মৃত্যুকে আমরা মেনে নিতে পারবো। ছাত্র শিবির হল ভাইরাস। এই ভাইরাস কিন্তু রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে অতিবর্ধনশীল। একে ঠেকানোর কোন কৌশল জানা আছে? বুদ্ধিমান বাংগালিরা এখনো বের করতে পারেনি বলেই জানি। আর যারা মুক্তবুদ্ধি ও মুক্তচিন্তার পরিচয় দিচ্ছেন তারাও কিন্তু একটা ক্ষেত্র থেকে উঠে এসেছেন, যেখানে পরিবেশ ভাইরাসমুক্ত না হলেও তার প্রাদুর্ভাব ছিল না।

অন্যদিকে, সারা দুনিয়ার ছাত্ররাজনীতির সাথে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির তুলনাটা একটা ফ্যাশন মনে হয়। এমনও দেখেছি
যে, দুইজন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে- প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে। যে বেশী ভোট পাবে সে প্রেসিডেন্ট অন্যজন ভাইস।এই দুইজনকে, আমার ধারণা, ধরে বেঁধে দাঁড় করানো হয়েছে। তবে এটাই যে চরম তাও নয়। অন্যথাও হয়। বাংলাদেশে এসব হয় নাকি?

আমাদের মত দরিদ্র দেশে আমরা প্রায় বিনামূল্যে যে উচ্চশিক্ষা পাই, সেটা উন্নতবিশ্বে হয় নাকি? এর সাথে ছাত্ররাজনীতির সম্পর্কই বা কি? আপনি একবার বেতন বাড়িয়ে দেখেন কী হয়? তবে, এটাও ঠিক, পুতু-পুতু ধরণের ছাত্ররা এসবের সুবিধা নেবে, কিন্তু কোন দিন প্রতিবাদ করবেনা। বরং সুবিধা নেওয়ার পরে, (যদি ভাল রেজাল্ট হয়ে থাকে),ওইসব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে ছাত্রদের খরচ বাড়ানোর চেষ্টা করবে। আর বলবে, পৃথিবীর কোথাও মাগনা পড়ায়না। ভাবটা এমন যে, ওর বাপের পয়সায় ছাত্ররা পড়তে এসেছে। ভাগ্যিস ছাত্র রাজনীতি ছিল!

আর ছাত্ররাজনীতির অপ অংশটুকু নিয়ে অন্যরাই বলেছেন।
পায়ে ব্যথার জন্য মাথা কাটবো কিনা সেটাই ভাববার বিষয়।

দূরের তেপান্তর

অবাঞ্ছিত এর ছবি


অন্যদিকে, সারা দুনিয়ার ছাত্ররাজনীতির সাথে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির তুলনাটা একটা ফ্যাশন মনে হয়। এমনও দেখেছি
যে, দুইজন নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে- প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদে। যে বেশী ভোট পাবে সে প্রেসিডেন্ট অন্যজন ভাইস।এই দুইজনকে, আমার ধারণা, ধরে বেঁধে দাঁড় করানো হয়েছে। তবে এটাই যে চরম তাও নয়। অন্যথাও হয়। বাংলাদেশে এসব হয় নাকি?

জানতে আগ্রহ হচ্ছে কোন দেশের কোন বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সরকার নির্বাচনে আপনি এমনটা দেখেছেন? আর তাদের যে ধরে বেঁধে দাঁড় করানো হয়েছে এ ধারনাটাই বা আপনার কেন হল?

বিনামূল্যে পড়ার কথাটা তুললেন, আমার তো মনে হয় ছাত্ররাজনীতিবিদরা নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে ঠিক এই সুযোগটাই নিচ্ছে। "পুতুপুতু" ছাত্র চাবে চার বছরে ব্যাচেলর শেষ করে মাস্টার্স করতে... ছাত্ররাজনীতিবিদরা কারণে আকারণে ধর্মঘট ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে। অন্তত: এখনকার প্রচলন তো এটাই।

একটা উদাহরণ দেই.. খুব সাম্প্রতিক সাধারণ উদাহরণ। বিশ্বকাপ ফুটবলের ধূঁয়া তুলে একমাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখে দেশের কি উন্নতিটা হচ্ছে? মাসখানেক আগে শুনলাম এ নিয়ে বুয়েটে ছাত্রদের মধ্যে মারামারিও হয়ে গেছে একটা.. প্রায় মাগনা পড়ে তো, তাই এইটা গায়ে লাগে না যে এর কারণে অনেকের জীবন থেকে একটা বছর ঝরে যাচ্ছে। অথচ এরাই কিন্তু বিদেশে এসে যখন টাকা দিয়ে পড়বে, একটা দিন বন্ধের জন্যেও টুঁ শব্দটিও করবে না.. নিজের চোখে দেখা।

এরাই

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

অসাধারণ। ধন্যবাদ।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

লেজী ফেলো এর ছবি

এই দেশে ছাত্র রাজনীতি খুব জরুরী বিষয় ছিল প্রাক স্বাধীনতার সময়ে। আজ স্বাধীনতার ৩৯ বছরে এসে ছাত্র রাজনীতি করে মেধাবী মগজগুলো অযথা ব্যয় করার কোন যুক্তি খুজে পাই না। ছাত্রত্ব শেষ করে জীবনে অনেক সময় পাওয়া যাবে রাজনীতি করার। ছাত্র জীবনটা না হয় রাজনীতির তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জনেই ব্যয় করা হোক। লেখক কিছু জায়গায় মনে হল ছাত্ররাজনীতির সাথে দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষার ব্যাপারটা মিলিয়ে ফেলেছেন। রাজনীতিতে না জড়িয়েও খাটি দেশী মানুষ হওয়া যায়। আমি তো মনে করি এই মুহুর্তেই ছাত্র রাজনীতি এবং অবশ্যই তার আগে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করা হোক।

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

তার মানে আপনার নেতা হবে অছাত্ররা আর আমরা অলসতাজনিতকারণে তাকিয়ে তাকিয়ে সার্কাস দেখবো পপকর্ণ খেতে খেতে। তবে তাই হোক।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

আসাদ [অতিথি] এর ছবি

আমি একজন ছাএ। সচেতন ভাবে ছাএ রাজনীতি এড়িয়ে চলি। ইংরেজী এখনো কপজানো শুরু করিনি তবে জানু পেয়ে গেছি। সময় বলে দেয় তুমি ইংরেজি কপচাও। না হয় চাকরী নেই। ছাএ রাজনীতি করেল খারাপ ছেলে বলবে সবাই। সত্যি খারাপ সবাই। কাকে দেখে রাজনীতি করবো?

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি

ছাত্র রাজনীতি তো কো কারিকুলার একটিভিটিসের মতো, সিলেবাস, চাকরী আর জানুর ম্যাজিক ফ্যান্টমের পিছে দৌড়ানোর আগে কিছু সাংগঠনিক একটিভিজম (জঙ্গী মিছিল, ভাংচুর, দুর্নীতি ছাড়া বাকিসব )ভালো কাজগুলো না করলে চাকরী বা জানুতে সফল হ ওয়া কঠিন হয়ত। অবশ্য ব্যর্থ হলেও মানুষ শেখে, ভালো থাকবেন।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনি,নইলে কোন দিন নয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।