• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

মিসফিট

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: বুধ, ০৫/০৯/২০০৭ - ৩:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সন্ধ্যে থেকেই মতিন সাহেবের শরীরটা খুব খারাপ লাগছে। কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগছে। হঠাৎ হঠাৎ দম আটকে আসা মন খারাপ। ভীষণ অসহায় লাগছে নিজেকে। ভীষণ একা। মাথার মধ্যে কতোসব দুশ্চিন্তা ঘোট পাকাচ্ছে। হীনমন্যতার দমকা বাতাস এসে কুঁকড়ে দিচ্ছে। নিজেকে আজ সাংঘাতিক ব্যর্থ মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সারা জীবনে কোনো অর্জন নেই। কোনো সঞ্চয় নেই। হয়তো একটা ভুল জীবন যাপন করা হলো। এর কোনো দরকার ছিল না। একটা ইনসিগনিফিকেন্ট এক্সিসটেন্স। বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডের কোথাও তার এতোটুকু পায়ের চিহ্ন রইলো না।

মাগরিবের নামাজের সময় হয়ে গেছে। জোহরা এসে বললো- কি ব্যাপার, নামাজ পড়বে না?
- ইচ্ছে করছে না।
-এ আবার কেমন কথা!

জোহরা চলে যায় একটু পরেই এক গ্লাস বেলের শরবত নিয়ে আসে। পাশে বসে। মেয়েটা খুব ভালো বোঝে। প্রায় ৩০ বছরের সংসার। সব সময় ছায়ার মতো সে পাশে পাশে থেকেছে। কোন কিছুই চায়নি কখনো। কতো কিছুরই তো অভাব ছিল। আজ পর্যন্ত ঢাকা শহরে একটা বাড়ি হলো না। অথচ সঙ্গে যারা চাকরিতে ঢুকেছিল সবাই কিছু না কিছু এ্যাসেট করেছে।

তা নিয়ে জোহরার অভিমান আছে, তাই বলে অভিযোগ নেই। সারাটা জীবন সে সৎ জীবনের একটা খুব কঠিন লড়াইয়ে সঙ্গ দিয়েছে। টেনে কষে সংসার চালিয়েছে। বাচ্চাদের মানুষ করেছে। শুধু একটা কথাই ও বারবার বলতো, 'আমাদের মফস্বলের জীবনটাই ভালো ছিল'।

ছাত্র অবস্থায় জোহরার সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। মাস্টার্স পাস করতেই মফস্বল কলেজে প্রিন্সিপালের চাকরি হয়ে গেল। রামদিয়া কলেজ। সে তো পানির দেশ। লঞ্চে ছাড়া যাওয়াই যেতো না। জয়েন করে ফিরে এসে জোহরাকে নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড় উঠেছিল। লঞ্চ দুলতে শুরু করলো। নদী থেকে ঝাপটে ঝাপটে পানি এসে পড়ছিল লঞ্চের মধ্যে। লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে জোহরা হাউমাউ করে জাপটে ধরেছিল। ভালোই লাগছিল ঐ মুহূর্তগুলো। রামদিয়ার জীবনটা ছিলো দারুণ সুন্দর। এলাকার মানুষ মাথায় তুলে রেখেছিল। মাখন ঘোষ সবচেয়ে ভালো দুধ দিয়ে যেত, রবি ময়রা রসগোল্লা আর ছানার জিলেপি পাঠাতো। রামদিয়ার যা কিছুর সেরা, দিয়ে আসতে হবে প্রিন্সিপ্যালের বাসায়। ছাত্রীরা বাসায় গিয়ে জোহরার সঙ্গে গল্প করতো। রান্নায় সাহায্য করে দিয়ে আসতো। কলেজের বার্ষিক নাটক দেখতে যাওয়ার জন্য জোহরা যখন মিষ্টি মেহেদী রঙের শাড়ি পরে ঘোমটা টানতো- সেকি রোমাঞ্চ তার। নাটক দেখে ফেরার পথে তরুণ প্রিন্সিপ্যালের পাঞ্জাবির খুঁটে টান দিয়ে বলতো দেখেছো কেমন চাঁদ উঠেছে আকাশে! বাঁশবাগানের মধ্যে জোনাকি পোকা দেখে বলতো- হাতের মুঠোয় একটা জোনাক ধরে দেবে? জোহরার তখন কতোইবা বয়েস, বালিকাই বলা চলে।

কলেজের ফাইল দেখতে দেখতে হঠাৎ জোহরার দিকে চোখ পড়লে দেখা যেতো সে এক মনে বসে কড়ি খেলছে।
- কি করছো জোহরা?
অমনি গাল ফুললো।

কলেজের ব্যস্ততায় ওকে সম দেওয়া হতোনা। তবুও ওখানে চারপাশে অনেক বান্ধবী জুটে গিয়েছিল। তাদের নিয়ে গোল হয়ে বসে জোহরা আকাশবাণীর শম্ভুমিত্রের নাটক শুনতো।

অনেকটা আত্মীয়-স্বজনের জোরাজুরিতে সিভিল সার্ভিসে ঢুকতে হলো। সিএসপি বলে কথা। পাকিস্তানে ট্রেনিং করে এসে পোস্টিং হলো ঢাকায়। সরকারি চাকরিতে প্রথম থেকেই দম বন্ধ হয়ে আসতো। লোকজন দেখলে ভয় পায়, হিসাব করে কথা বলে। সঙ্গের বন্ধু-বন্ধবরাও চাকরির পর কেমন বদলে গেলো। একটা ব্রাক্ষ্মণ ভাব। সরকারি গাড়িতে চড়ে দাপিয়ে বেড়ানোর মধ্যে - শো অফ করার মধ্যে যেন তাদের সব আনন্দ, সব সাফল্য।

ফেলে আসা চাকরির পিছুটান রামদিয়ার জীবন- আটচালা টিনের প্রিন্সিপ্যাল কোয়ার্টার, সামনে এক চিলতে বাগান- সেখানে বসে মার্কসের দর্শন কিংবা তলস্তয়ের উপন্যাস নিয়ে ইংরেজির লেকচারার মি. রায় এর সঙ্গে সেকি গল্পের তুবড়ি। আর সেই সঙ্গে দফায় দফায় চা-মুড়ি-নারিকেলের নাড়ু। রায় বৌদি আবার ভীষণ রবীন্দ্রভক্ত ছিল। তার সঙ্গে শেষের কবিতা নিয়ে সেকি তর্ক! বৌদিতো লাবণ্যের পক্ষে এককাট্টা। জোহরা রাতের খাবারের জন্য সবাইকে ডাক দিয়ে সে তর্ক ভেঙে দিতো।

সিভিল সার্ভিসের কলিগেরা পোস্টিং, ফরেন স্কলারশীপ, প্রমোশন, ডেপুটেশান, পাওয়ার প্লে করে কীভাবে জোষ্ঠ্যতা তালিকায় সুপারসিড করা যায়, কাকে কোথায় কীভাবে ল্যাঙ মারতে হবে, কাকে এসিআরএ দেখিয়ে দিতে হবে, কাকে এস্টাবলিশমেন্ট বলে পানিশমেন্ট পোস্ট করাতে হবে, কোথায় কিছু খাস জমি আছে, ধানমন্ডির কোন বাড়িটা অ্যাবানডেন্ট প্রপার্টি, সেটা কীভাবে গিলে খাওয়া যাবে। অফিসার্স ক্লাবে দুএকদিন গিয়ে মনে হতো এরা কি শিক্ষিত লোক! এদের কি দেশের প্রতি কোন কমিটমেন্ট আছে! লয়ালিটির নামে এরা কি সাংঘাতিক ভাঁড়ামিতে ব্যস্ত। মন্ত্রীকে খুশি করার জন্য এরা কি না করতে পারে। মনগড়া উন্নয়ন রিপোর্ট আর অবাস্তব পরিকল্পনা তৈরীতে তাদের জুড়ি নেই। কীভাবে ঘুষ বিষয়টকে এরা ডাল-ভাত করে ফেলেছে। প্রতি মুহূর্তে মনের ভিতরে একটা ধিক্কার কাজ করতো। যাদের রাজস্বের পয়সা থেকে বেতন হয় তাদের ভাগ্য নিয়ে কি ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। সিভিল সার্ভিসের ওথ টেকিং এর সময়ে এরা কি এই শপথই করেছিল যে, ধানমন্ডি, গুলশানে বাড়ি করবে, ব্যাংক ব্যালেন্স করবে!

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের সব সম্ভাবনাকেই যে ঢেকে দেয় অশুভ আমলাতন্ত্রের কালো মেঘ। অনেকেই মতিন সাহেবকে দেখে টিপ্পনি কাটতো- হিয়ার কামস দ্য গ্রেট রামকৃষ্ণ পরমহংস! লোলুপ-লোলচর্ম-দুর্নীতির হিজিবিজি রেখায় মুখমন্ডলগুলোতে যেন বসানো চাপ চাপ অনেকগুলো চরিত্র- ওরা দাঁত বের করে হাসতো।

পরিকল্পনা সভায় সবাই যখন হুজুর হুজুর করছে, যে কোন সিদ্ধান্তে সায় দিয়ে ফেলে দেতো হাসি হেসে- ভাঁড়ামি করে আর নিজেদের মধ্যে চোখ টেপাটেপি করে- মতিন সাহেব তখন শান্ত স্থিতধী সৌম্য, এক এক করে দেখাতে থাকেন পরিকল্পনার অন্তঃসার শূন্যতা। সবাই যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য পরিতোষণের ইঁদুর দৌড়ে মেতেছে, মতিন সাহেব তখন ভাবতে থাকেন অসংখ্য নিরন্ন মানুষের মুখ।

আজ সকালে মতিন সাহেব একটা গেরুয়া রঙের খাম পেয়েছেন। তাকে ওএসডি করা হয়েছে। সারা জীবনের সততার পুরষ্কার তিনি পেয়েছেন। আর তারপর থেকেই তার মনে পড়ছে রামদিয়া কলেজ, আটচালা ঘর, একচিলতে বাগান, জ্যোৎস্নায় ভ্রমন, বাঁশবাগানের জোনাক পোকা আর তলস্তয়।
হঠাৎ মতিন সাহেবের ঘরে রিভলবারের আওয়াজ পাওয়া যায়। জোহরা দৌড়ে আসে। ততোক্ষণে ইজি চেয়ারে ঘুমিয়ে পড়েছেন মতিন সাহেব- একজন সিভিল সার্জেন্ট!


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বস,আপনার লেখার স্টাইলে পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম এই লেখায়।ইচ্ছাকৃত নাকি?
আপনার ইংরেজী উপন্যাসটার খবর কী?

রানা মেহের এর ছবি

আপনি অনেক ভালো লেখক।
আমি একদমই লিখতে পারিনা।
তবু খুব দুঃখীত
আপনার এই লেখাটা খুব সাধারণ
খুব বেশী গড়পড়তা হয়ে গেছে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আহ! এই ভাবে শেষ করে দিলেন??

দ্রোহী এর ছবি

ইশতিয়াক রউফ লিখেছেন:
আহ! এই ভাবে শেষ করে দিলেন??
মাসকাওয়াথ ভাইয়ের আর দোষ কি? মতিন সাহেবরা এভাবেই শেষ হয়ে যায়!

কি মাঝি? ডরাইলা?

থার্ড আই এর ছবি

অনেক দিন পর বাংলায় লেখার জন্য ধন্যবাদ।
-----------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

শামীম এর ছবি

শেষ পর্যন্ত পরাজিত করলেন!
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

মাহবুব সুমন এর ছবি

বেশ কিছুদিন আগে এ রকম একটা সংবাদ পড়েছিলাম পত্রিকায়। একজন অবসর প্রাপ্ত যুগ্ন সচিব আত্মহত্যা করেছেন, ভাড়া বাসার ছোট্ট ঘরটিতে।
এররকম আরেকটা সংবাদ পড়েছিলাম , আরেকজন অবসর প্রাপ্ত জাজ, আত্মহত্যা করেছেন, সেটাও ভাড়া বাসায়। শংকর ধানমন্ডির ছোট্ট এক ফ্লাটে।
সিভিল সার্ভেন্ট না সিভিল সার্জেন্ট হবে??
ভালো লেগেছে,
কৈশরের মোহোজাগানো , মননে নাড়া দেয়া লেখকের লেখা আবারো নাড়া দিচ্ছে বলে।

অন্য ট্রলার এর ছবি

'বিষণ্নতার শহর' বইতে পড়েছিলাম।
নতুন লেখা চাই।
নতুন!!!

সৌরভ এর ছবি

হুমম। ধরছি।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অমিত আহমেদ এর ছবি

শুরুটা চমৎকার ছিল... কিন্তু শেষটা বড় তাড়াতাড়ি চলে আসল। এটা অনেক সময় নিয়ে পড়ার মত গল্প। মতিন সাহেব আর জোহরা বেগমের সংসারটা বুঝে উঠতে না উঠতেই গল্প শেষ। লেখার ধরণটা বেশ ভাল লেগেছে।


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

বিপ্লব রহমান এর ছবি

বরাবরে মতোই ভাল লিখেছেন।

কিন্তু বাস্তবে মতিন সাহেবরা এভাবে পরাজিত হন না। ঘুষ, প্রমোশন, ফরেন টু্যর,ল্যাঙ,সুপারসিডসহ মতিন সাহেবরাই জিতে যান, জিতে যান।...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

দৃশা এর ছবি

বিপ্লবদা নেগেটিভ সাইড দেখতে দেখতে আমাদের এমন অবস্থা হয়ে গেছে যে খারাপের মাঝেও যে ভালো আছে এটা আমরা প্রায় ভুলে গেছি । এমন মতিন সাহেবও খুঁজলেই পাওয়া যাবে আশপাশেই...কিন্তু এটাও তো সত্যি তাদের খুঁজে বের করে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার আমাদের নিজেদেরও সময় নাই !!! পরাজয় মতিন সাহেবের না ...পরাজয় আমাদের যে আমরা মতিন সাহেবদের মত মানুষদের কথা কম জানি আর তাদের বাঁচাতে আমরা অক্ষম।
অনেকদিন পর অন্যরকম একটা লেখা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মাসকাওয়াথ ভাই।

দৃশা

সৌরভ এর ছবি

নিজের বাবার জীবন মনে হলো।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

এইসব কারণেই আমার মনে হয় পরকাল বা পরজন্ম বলে কিছু হয়ত আছে!!!!!!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।