• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

জ্যোৎস্নার একাকী ট্রাপিজ

মাসকাওয়াথ আহসান এর ছবি
লিখেছেন মাসকাওয়াথ আহসান (তারিখ: মঙ্গল, ১১/০৯/২০০৭ - ১০:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিড়িং বিড়িং করে তিন-চারটা ডিগবাজি দেয় শঙ্কর। অমনি হাততালি পড়ে। সবাই হেসে ওঠে। সে হাসি আর থামে না। শঙ্কর দৌড়ে গিয়ে রিং মাস্টারের ঘাড়ে ওঠে সেখান থেকে লাফ দিয়ে একটা ঝুলন্ত বার ধরে। বারের ওপর দিয়ে গুলটি পাকিয়ে কসরত দেখায়। তারপর ইচ্ছে করেই নিচে পড়ে যায়। জাল পেতে ধরে নেওয়া হয় শঙ্করকে। সবাই হো হো করে হেসে ওঠে। শঙ্কর উঠে দাঁড়িয়ে লজ্জা পাওয়ার ভঙ্গি করে উইংস-এর আড়ালে চলে যায়। জিমন্যাস্ট রজনীর শরীর চর্চা শুরু হয়। বোনলেস বিউটি। উৎসুক দর্শকদের কেউ কেউ বলে- মাইয়াডার শইলে হাড্ডি গুড্ডি নাই। প্লাস্টিকের পুতলার লাহান। দুপায়ের মাঝ দিয়ে মাথা গলিয়ে দেয়। শঙ্কর উইংস এর আড়াল থেকে রজনীর কসরত দেখে। মুগ্ধ হয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে ডিগবাজি দিতে দিতে মঞ্চে আসে। সবাই হাসে। গালের ওপর লাল রং। চোখের দুপাশে সাদা। ঠোঁটে লিপস্টিক। পরনে স্কিন টাইট ট্র্যাকস্যুট। দুই ফুট লম্বা এক বামন মানুষ। তার হাসি হাসি মুখের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এক বুক কান্নার থমথমে দুঃখ। এক চাকার সাইকেল নিয়ে শঙ্কর প্যাডেল মেরে ঘুরতে থাকে। রজনীও এক চাকার সাইকেল নিয়ে শঙ্করকে তাড়া করে। বন বন করে ঘুরতে থাকে। এক সময় ইচ্ছে করে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায় দর্শকের মাঝে। সবাই আনন্দে চিৎকার করে। শঙ্করকে নিয়ে লোফালুফি করে। শঙ্করকে কোলে নিয়ে কুৎসিতভাবে কোমর নাচিয়ে ঘুরতে থাকে একজন দর্শক। রিং মাস্টার এসে শঙ্করকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ভয়ে শঙ্করের মুখ শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে যায়। এক চাকার সাইকেলের ওপর এক হাত রেখে পা উপর দিকে তুলে রজনী পাখির মতো ঘুরতে থাকে। উইংসের আড়াল থেকে শঙ্কর দুচোখ ভরে দেখে রজনীর খেলা।

রজনী যখন প্রথম এই বেঙ্গল সার্কাস পার্টিতে এলো তখন ওর বয়স মাত্র সাত-আট বছর। শঙ্করের বয়স তখন ষোল। হাতে পায়ে মাথায় রজনী তখনি শঙ্করের সমান। দুজন এক সঙ্গে খেলতো। শঙ্কর রজনীর জন্য কিনে আনতো গুড়ের কদমা, লাল হাওয়া মিঠে- তুলোর মতো শনপাপড়ি। বাপ-মা মরা মেয়েটার জন্য দারুণ মায়া শঙ্করের। জিমন্যাস্টিকস শেখাতে গিয়ে রিং মাস্টার যখন চড় কষে দিতো- রজনী তখন হাউমাউ করে কাঁদতো। গগনবিদারী কান্না। কাঁদতে কাঁদতে রজনীর বুকের কাছে খস খস শব্দ হতো। দম আটকে আসতো। রজনীর এতো কষ্ট দেখে দাঁত দিয়ে নখ কাটতো শঙ্কর। বুক শুকিয়ে যেতো। দৌড়ে গিয়ে রিং মাস্টারের পা জাপটে ধরতো- মাইরেন না ওস্তাদ। আপনে শিইখা যাইবো। রিং মাস্টার পা তুলে কিক করতো বামন মানুষটাকে। ছুটে গিয়ে পড়ে যেতো মঞ্চের চকির নিচে। হাঁচর পাঁচর করে উঠে এসে গুলটি পাকিয়ে এক পাশে বসে থাকে। রজনী কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেলে ওর বালিশের পাশে রেখে আসতো একটা ছোট্ট লাল রঙের পুতুল। ছোট ছোট আঙুল দিয়ে মুছে দিতো রজনীর চোখের নিচে শুকিয়ে যাওয়া পানি।

সেই রজনী এখন কতো বড় হয়েছে। কতো নামডাক হয়েছে। সার্কাস শোর মাইকিঙে বলা হয় বেঙ্গল সার্কাসের প্রধান আকর্ষণ বোনলেস বিউটি রজনী। রজনীর মুখখানা ভারি সুন্দর। সুঠাম চোয়াল, তিনকোণা চিবুক- চিবুকের কাছে এক রত্তি তিল, লম্বাটে নাক- ফালি ফালি ঠোঁট, ছোট ছোট চোখ। হাসলে চোখ মুদে আসে। ওর হাসিটাই সবচেয়ে ভালো লাগে শঙ্করের।

রজনীর রূপের ভারি দেমাক। রিং মাস্টার- ম্যানেজার বাবু- বাঘ বাহাদুর আমজাদ সবাই রজনীর প্রেমে দিওয়ানা। শো শেষে গভীর রাতে মদ খেয়ে রজনীর পায়ে লুটিয়ে পড়ে আমজাদ। যে আমজাদ বাঘের খেলা দেখায়- যার আঙুলি হেলনে একটা রিঙের মধ্য দিয়ে লাফ দেয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার- যার শাসানিতে লেজ নেড়ে কুন্ডলি পাকায়, সেই বাঘ বাহাদুর আমজাদ কতো অসহায় রজনীর কাছে। হ্যাজাকের আলোয় রজনীর চোখ জ্বলে ওঠে। প্রত্যাখ্যানের তীব্র চিৎকারে ভয় পেয়ে যায় বাঘ বাহাদুর। টলতে টলতে নিজের তাঁবুতে ফিরে যায়। তারপর রজনী চকির ওপরে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। ট্র্যাংকের মধ্যে থেকে বাপ-মার ছবি বের করে। ভালোবাসার আঙুল বুলায় আর কাঁদে। একটা ছোট্ট ছায়া এসে তার সামনে দাঁড়ায়। রজনী ঘোলা চোখে তাকায়-
কিছু বলবা?

কি বলবে শঙ্কর। কী-ইবা বলার আছে। তাঁবুর ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ে। সে আলোয় মায়াবী রাত রজনীর পা জড়িয়ে ধরে।

শঙ্কর তামাশা করে।

- দেখছো চান্দের আলো তোমার পা ধরছে। রজনী ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। দারুণ ব্যক্তিত্বের হাসি। কবে এতোটুকু মেয়ে এতো বড় হলো! এখন ওর সঙ্গে কথা বলতে ভয় লাগে। রজনীর রূপের অহঙ্কার। যৌবনকালে মেয়েদের অমন অহঙ্কার হয়, মনে হয় তার চোখের ইশারায় সারাট পৃথিবী নাচবে। তার দারুণ দাপট। রজনী কি জগতের রাণী! শঙ্কর আমতা আমতা করে। একটা লাল কাগজের মধ্যে নাকছাবি। ছোট্ট হাতের মুঠো খুলে বের করে।

- রজনী তোমারে দিবার চাই।

- না, শঙ্কর দা, তা হয় না।

কেন হয় না! শঙ্করের শরীরটা যতোটুকুই হোক ভালোবাসাটা অনেক বড়ো। এক পৃথিবী। ভালোবাসার বাতাসে তার বুক ফেটে যায়। ফাঁপর লাগে। পকেটের খুচরো পয়সা দিয়ে রজনীর জন্য কিনে আনতে ইচ্ছে করে সপ্তর্ষির তারাগুলো। অপেক্ষা করে বলে-

- কতো যে তোমারে ভালোবাসি কি করে বোঝাই।
রজনী মাথা নাড়ে।

- এ অসম্ভব।

কোন পাপে শঙ্কর বামন হলো। আর বামন হলে বুঝি ভালোবাসা যায় না! যার ভালোবাসা আকাশের সমান লম্বা।

রজনী আমি তো তোমার শরীর ভালোবাসি না। মনডারে চাই। শঙ্করের মনটা তো রজনীরই সমান। মন তো বামন হয় না।

- বাচুম না আমি। মইরা যামু।

- পাগল হইও না শঙ্কর দা।

রজনীও শঙ্করকে ভালোবাসে। সে জানে শঙ্করের মতো মানুষই হয় না। কিন্তু এ যে অসম্ভব। একটা বামনকে বিয়ে করলে সবাই কি বলবে। এমনিতেই শঙ্করদার সঙ্গে মেলামেশা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে।

- চলো কোথাও চইলা যাই।

- কোনখানে যাইবো। সেইখানে কি মানুষ নাই? লম্বা লম্বা মানুষ যারা বামন দেইখা হাসে। ছোট ছোট পা টেনে টেনে শঙ্কর বেরিয়ে যায়। খোলা মাঠে শুয়ে পড়ে ডুকরে ডুকরে কাঁদে। বুকভাঙা কান্নায় মাতম ওঠে। আকাশের দিকে চিৎ হয়ে জ্যোৎস্না দেখে। কখন ঘুমিয়ে যায়। ঘুমের মধ্যে শঙ্কর একটা স্বপ্ন দেখে। একটা শক্ত পেশীর লম্বা মানুষ। কাঁধের মাসল ফোলা ফোলা- হাতের ওপরে ফুলে থাকা পেশীতে রগের টান। শরীরটা দড়ির মতো। চিকন কোমর। কালো ট্র্যাকস্যুট পড়ে পাহাড়ের মতো একটা লম্বা মানুষ। জিমন্যাস্টিকস করছে। বাঘকে খেলাচ্ছে। হাতির পিঠে চড়ে দর্শকদের অভিবাদন জানাচ্ছে। দর্শকেরা চিৎকার করছে। মুগ্ধ হচ্ছে, হাততালি দিচ্ছে। তার কাঁধের ওপরে- হাতে, হাঁটুতে ইতস্তত ভর দিয়ে কসরত দেখাচ্ছে রজনী। রজনী নতজানু হচ্ছে এই রাজসিক পৌরুষের কাছে। দর্শক পাগল হয়ে চিৎকার করছে- শঙ্কর শঙ্কর শঙ্কর।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বেশ ভাল লাগলো।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ভাল্লাগছে ...

কমল হাসানের একটা ফিল্ম ছিল না? ডাবল রোল ... এক ভাই সাধারণ, আরেক ভাই বামন, সার্কাসে খেলা দেখায় (মুভিটার নাম মনে হয় আপ্পু-রাজা, শিওর না পুরাপুরি)... সেই ফিল্মটার কথা মনে পড়ল ... বামনদের লাইফের এই দিকটা ফোকাস করা হইছিল ঐখানেও ...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

দারুন!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কতো রকম সংশয় নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকা ।
ভালো লাগলো খুব :)
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

খুব ভাল লেগেছে!
কত রকমের কষ্ট নিয়ে বাঁচে মানুষ তাই ভাবি!

অপ্রাসঙ্গিকঃ এ গল্পটি কি পূর্বপ্রকাশিত? কেন জানি মনে হচ্ছে আগেও কোথাও পড়েছি!


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

অন্য ট্রলার এর ছবি

'বিষণ্নতার শহর'এ আগে পড়েছি।
পুরোনো লেখা তুলে দিয়ে এভাবে পাঠকদে নতুন লেখা থেকে বঞ্চিত করা কি ঠিক হচ্ছে?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

পুরোনো মাসকাওয়াত আহসান।
ভালো লেগেছে পুরোনোভাবেই।

সৌরভ এর ছবি

রজনী নতজানু হচ্ছে এই রাজসিক পৌরুষের কাছে। দর্শক পাগল হয়ে চিৎকার করছে- শঙ্কর শঙ্কর শঙ্কর।

হুমমমম।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।