• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

ট্রেন সমাচার

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: শনি, ১৫/১১/২০১৪ - ৪:৫৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত বছর দুয়েক চাকরির সুবাধে নিয়মিত সাপ্তাহ শেষে বাড়ি ফিরতে হয় ট্রেনে। যদিও বাংলাদেশে ট্রেনের সাথে এই নিবিড় সম্পর্ক বহুকালের। তাই মোটামুটি যাত্রাপথের সকল সুযোগ-সুবিধা, হয়রানি, অনিয়ম, এমনকি প্রতিটি স্টেশানের মানুষের আচরণের সাথে বেশ পরিচিত। আর গত নির্বাচনের আগে বুঝেছিলাম বাংলাদেশের গনতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভের একটি হল ট্রেন। তাই সেখানে আক্রমন করে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে ব্যস্ত ছিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গনতান্ত্রিক দলটি। যাইহোক তারপর পদ্মা-মেঘনায় অনেক জল গড়িয়ে ট্রেন বাসে আগুন দেওয়ার মহান দায়িত্ব শেষ করে দেশে জলপাই রঙের গনতন্ত্র ফেরাতে ব্যর্থ হয়েছে জলপাই রঙের সেই গনতান্ত্রিক দল ও তাদের জোট। তাই কিছু বিরতি দিয়ে আবারো প্রিয় ট্রেনে নিয়মিত যাওয়া আসা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে যারা ট্রেনে নিয়মিত যাত্রা করেন তাদের সবার অভিজ্ঞতা মোটামুটি একি রকম। আপনি নিদিষ্ট সময়ে স্টেশানে যাবেন আর শুনবেন না ট্রেন দুই-তিন ঘন্টা লেট এমনটা সাধারণত হবে না। সেই দেরি হিসেব করে যদি কোনদিন আপনি নিদিষ্ট সময়ের একটু পরে যান তবে শুনবেন গাড়ি আজ সঠিক সময়ে ছেড়ে গেছে। এই বিড়ম্বনা থেকে বাঁচার জন্যে সঠিক সময়ের আগে প্লাটফর্মে উপস্থিত হয়ে অনেকের জীবনের অনেক সময় অপচয় হয়েছে। কিন্তু বাকশালী সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে চিরকালের এই হয়রানি থেকে মুক্তি দিয়েছে। এখন শুধু ট্রেন নাম্বার লিখে একটা নিদিষ্ট নাম্বারে বার্তা পাঠালেই সাথে সাথে জানা যায় আপনার কাঙ্খিত ট্রেনটি এখন কোথায়, পরের স্টেশান কোনটি আর এটি নিদিষ্ট সময়ের চেয়ে কতক্ষন দেরি করে চলতে শুরু করেছে। ফলে আর ঘন্টার পর ঘন্টা স্টেশানে এখন বসে থাকতে হয় না। এসএমএসে ভর্তির ফরম-পরীক্ষার ফলাফল থেকে শুরু স্বাস্থ্য সেবা, ট্রেনের টিকেট, তার অবস্থান সহ সর্বক্ষেত্রে তথ্য প্রযু্িক্তির এমন অবাধ ব্যবহার নিশ্চয় ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাওয়াই নির্দেশ করে।

কিন্তু এর উল্টো দিকও আছে, বিশেষ করে টিকেটের কালোবাজারি এবং ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে বৈধতার ঘোষনা পাওয়ার বহুকাল আগে থেকেই ট্রেনের টিকেটের কালোবাজারি এই দেশে বৈধতা পেয়েছে। এই কালোবাজারিরা কারা? যেকোন স্টেশানে অবস্থিত কম বেশী সব ব্যবসায়ী (ফোন-ফ্যাক্স কিংবা চায়ের দোকানদার) নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী টিকেটের এই কালোবাজারির সাথে আন্তরিকভাবে জড়িত আর এই জড়িতদের গুরু হলো কাউন্টার মাষ্টার। আপনি কাউন্টারে গিয়ে টিকেট খুঁজলে নেই অথচ ৫০-১০০টাকা বেশি দিলেই সেই তিনি-ই আপনাকে আলাউদ্দিনের যাদুর চেরাগ ঘষে আপনার কাঙ্খিত টিকেট খানি এনে দিবেন চোখের পলকে। তিনি না পারলেও সমস্যা নেই, আরেকটু বেশি টাকা দিলেই সেবক কালোবাজারিদের কাছেই পাবেন সোনার মত দামী টিকেট খানি। এভাবেই চলছে ট্রেনের টিকেট নিয়ে এই সংঘবদ্ধ চক্রের জমজমাট ব্যবসা। মাঝে কিছুদিন সরকার নিয়ম করে ছিলো প্রতিটি টিকেট কেনার আগে বয়স, মোবাইল নাম্বার সহ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা। ফলে কালোবাজারির মাত্রা অনেকটা কমে ছিলো কিন্তু অল্প কিছুদিনের মাঝেই অজানা কারও নির্দেশে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আবারও চলছে প্রকাশ্যে টিকেট নিয়ে এই বৈধ কালোবাজারি ব্যবসা।

কালোবাজারির পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ট্রেনের অবস্থানরত যাত্রীর জীবনের নিরাপত্তা। ট্রেনে নিরাপত্তাহীনতার মাঝে সবচেয়ে বড় হলো ছিনতাই। জানালার পাশে বসছেন, দাঁড়ানো ট্রেন চলতে শুরু করলো আর আপনি উদাস মনে মোবাইলে কথা বলছেন এমন সময় আপনার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যাবে না, এমনটা খুব কম ঘটে থাকে বরং এটি খুব সাধারণ নিত্য দিনকার ঘটনা। প্রায় প্রতিটি ট্রেনে প্রতিটি দিন-ই এমন ঘটনা ঘটে অথচ রেলওয়ে প্রশাসনের সেদিকে কোন দৃষ্টি নেই। মোবাইল ছাড়াও মেয়েদের হাতের ব্যাগ, গলার চেইন সহ ছোট থেকে মাঝারি সব কিছুই নিশ্চিয়তার সহিত ছিনতাই হয়। অথচ ট্রেনে নিরাপত্তা পুলিশ আছে, আবার স্টেশানে ও প্রহরারত পুলিশও আছে। কিন্তু এগুলো শুধু নামেই আছে কোন কাজে এদের কোন অবদান আজ পর্যন্ত আমি দেখিনি। যে ঘটনা প্রায় প্রতিদিন-ই ঘটে, সেই ঘটনা রোধে রেলওয়ে কর্তপক্ষের কোন মাথাব্যাথা নেই। অথচ যেভাবে প্রতিটি নিদিষ্ট স্টেশানে আসার আগে যাত্রীদেরকে সেই স্থান সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হয় ঠিক তেমন করে প্রতিটি স্টেশান থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার সময় ছিনতাই বিষয়ে সাবধনাতার ঘোষনা দেওয়া যায়। ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় জানালার পাশে অবস্থিত কেউ মোবাইলে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন এমন একটি ঘোষনাই অনেক মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু মোবাইল সহ গুরুত্বপূর্ণ বস্তু সমূহ রক্ষা করতে পারে। নিজেও একবার মোবাইল খুঁইয়েছি ট্রেনে, সেটা যতটা না বেদনাদায়ক ছিলো তারচেয়ে বেশি বেদনাদায়ক একটি স্মৃতি আছে ট্রেনে মোবাইল ছিনতাই নিয়ে। সেটার কথাই আজ বলি।

মাস খানিক আগে মহানগর গোধূলীতে উঠেছি চট্রগ্রাম থেকে ভৈরব যাবো বলে। আমার পাশের সিটে উঠেছে এক দম্পত্তি, সাথে রয়েছে ৮-৯ বছরের একটি সন্তান।পুরুষটি খুব সম্ভব বিদেশ থেকে ফিরেছে কিছুদিন হলো, চট্রগ্রামে শশুর বাড়ি থেকে নিজের বাড়ী ভৈরব ফিরছে। কুমিল্লায় ট্রেনটি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ভদ্র মহিলাটি কার সাথে যেন কথা বলছিলো। কিছুক্ষন পর ট্রেনটি ধীরে ধীরে চলতে শুরু করলো, এর কয়েক সেকেন্ডের মাঝে বাহির থেকে ছোবল দিয়ে মোবাইলটি নিয়ে গেল উৎপেতে থাকা ছিনতাইকারী। মহিলাটি একটা চিৎকার দিলো এবং কিছু বুঝে উঠার আগেই ছিনতাইকারী দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে গেল আর ট্রেন তখন পূর্ণ গতিতে চলতে শুরু করলো। স্ত্রীকে বকা দেওয়ার কিছুক্ষনের মাঝেই কামরা ভর্তি মানুষের সামনে সাহসী সু-পুরুষটি নিজেদের পুরুষত্বের একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্বরূপ স্ত্রীর গালে চড় বসিয়ে দিলো। এ বিভৎস দৃশ্যে লজ্জায়, ক্ষোভে আর ঘৃনায় আমি বেদনার অতলে ডুবে যেতে থাকলাম। আমি জানি এক সাথে থাকার শর্তে স্ত্রী টি হয়তো ক্ষমা করে দেওয়ার অভিনয় করে যাবে, কিন্তু মন থেকে কি কখনো ক্ষমা করতে পারবে স্বামীকে? এতগুলো মানুষের সামনে এর চেয়ে বড় অপমান আর কিছু কি হতে পারে? যে সন্তান দেখেছে তার মায়ের এমন চূড়ান্ত অপমান সে কি ভুলে যাবে? আজও আমার সেই দৃশ্য আর সেই গভীর বেদনার কথা মনে পড়ে। বাস-ট্রেনে কত মানুষ দেখি, সবার চেহারা দিনশেষে ভুলে যাই কিন্তু সেই পরাজিত মানুষটির চেহেরা আজও আমি স্পষ্ট দেখতে পাই।

দ্বিতীয় নিরাপত্তাহীনতা হলো বাহির থেকে ছুঁড়ে দেওয়া পাথরের আঘাত। প্রায় বছর খানিক আগেই এমন ছুঁড়ে দেওয়া পাথরে জীবন গেছে নব বিবাহিত চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর। একটা জাতির কিছু মানুষ কতটা অজ্ঞ আর বিবেকহীন পাষান্ড হলে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে দিতে পারে। নিজের খেয়ালী কোন আচরণ যে অন্য মানুষের মৃত্যু ডেকে নিয়ে আসতে পারে সেটি সম্পর্কে এদের বোধহয় কোন ধারণা নেই। আমি নিজেও দুবার এমন আঘাত পেয়েছি, ভাগ্যবোধ হয় ভালো ছিলো তাই বেঁচে গেছি। আমার চোখের সামনে কতজনকে দেখলাম পাথর কিংবা ছুঁড়ে দেওয়া বোতলের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হতে। আগের ঘটনার মতো এই বিষয়ে ও না নেয়ো হয়েছে সচেতনামূলক কোন পদক্ষেপ, না নেওয়া হয়েছে নিষ্ঠুর অমানুষগুলো কে ধরতে কোন ব্যবস্থা। ফলে ভাগ্যকে অনিশ্চিত ঝুঁকির মাঝে ফেলেই ট্রেনের যাত্রীদের পথ চলতে হচ্ছে দিনের পরে দিন।

তৃতীয় নিরাপত্তাহীনতা হচ্ছে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠি আর স্থানীয়দের শক্তির দাপট। ভিড়ের মাঝে সামন্য একটু ধাক্কা কিংবা বসার আসন নিয়ে ছোটখাট তর্ক-বিতর্ক ও অনেক সময় ভয়ংকর শারীরিক সংঘর্ষে পরিণত হয়। বিশেষ করে যারা সংখ্যায় বেশি থাকে এবং যাদের এলাকার উপর দিয়ে ট্রেন যায় অর্থাৎ তাদের স্থানীয় স্টেশান যাত্রীরা। অসংখ্যবার তুচ্ছ বিষয় নিয়ে রক্তারক্তিও দেখেছি। তেমন আরেকটি ঘটনার কথা জানান দিয়েই এই লেখার ইতি টানবো।

সময়টা বিশ্ব ইজতেমার। ফলে ট্রেনে প্রচুর ভিড়, ট্রেন আখাউড়া স্টেশানে এসে পৌছেছে। এমনিতে ট্রেনে তিল ধরার ঠাঁই নেই। তার উপর আরও শত শত যাত্রী বাইরে অপেক্ষমান। ট্রেন দাঁড়ানোর সাথেই কিছু যাত্রী জানালা দিয়ে ব্যাগ দিতে চাইছিলো। তেমন একটি জানালার পাশে বসা মানুষটি সেটি নিতে অস্বীকৃতি জানালো, ফলে সামান্য একটু তর্ক-বিতর্ক হলো। সেটি সেখানেই শেষ। তারপর ট্রেন হুইসাল দিয়ে চলতে শুরু করার সাথে সাথে একজন মধ্য বয়স্ক লোক এসে সেই জানালার পাশে বসা লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো “তুই তো সেই লোক না, যে আমার শ্যালকের সাথে বেয়াদবি করেছিস? তোর আজ খবর আছে বলে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। কামরা ভর্তি শত শত মানুষেরর সবাই নীরব দর্শক হয়ে যেন নাটক দেখতে বসলো। কাউকে এগিয়ে আসতে না দেখে আমি গেলাম সেই লোকটির সাথে কথা বলতে। তাকে বললাম ”আপনি এমন করছেন কেন, অন্যায়তো আপনার শ্যালক-ই করেছে”। সে উত্তর দিলো কে অন্যায় করেছে সেটা সামনের স্টেশানেই ফয়সালা হবে। এরি মাঝে সে কাকে যেন ফোন করে ট্রেনে উঠতে বললো, বললো সামনের স্টেশানে এক বেয়াদবকে নামাতে হবে। তারপর আমাকে হুমকি দিয়ে বললো আপনি কে? আপনিও থাকেন, আপনাকেও ন্যায়-অন্যায় শিখিয়ে দেওয়া হবে। তারপর সে নিজের পরিচয় দিতে থাকলো, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সাবেক নেতা, নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে পেটে একটা গুলির ক্ষতও দেখালো। তারপর সবাই ভয় পেয়ে গেলো, দুই-একজন মুরুব্বি এসে লোকটির কাছে ক্ষমা চাইলো সেই জানালার পাশে বসা লোকটির পক্ষ থেকে। অনেকক্ষন বোঝানের পর সেই লোকটি বোধহয় কিছুটা নমনীয় হলো ভাবলো সবাই, কিন্তু এর মাঝে তার ফোন পেয়ে ট্রেনে ছুটে আসলো ২০-২২ বছরের ৪-৫জন যুবক। বুঝতে খুব বেশি অসুবিধা হলো না যে তাদের একজনের কাছে অস্ত্র রয়েছে। তারা এসেই খুঁজতে শুরু করলো তাদের কাঙ্খিত সেই বেয়াদব কে। যে বড় ভাইয়ের ফোন পেয়ে হিংস্র নেকড়ের মতো তারা ছুটে এসেছে তার কাছে জিজ্ঞেস করলো কোন সেইজন? লোকটি কিছু বলছিলো না, কিন্তু তাতে তারা ক্ষান্ত হলো না। তারা খুঁজতে থাকলো, ইতিমধ্যে সেই বড় ভাই কৌশলে সেই স্থান ত্যাগ করলো। সেই সশস্ত্র যুবকদের বুঝতে দেরি হয়নি কে সেই অভাগাটি। তারপর দুজন মিলে তাকে মারতে শুরু করলো। যখন নিজেকে একা আবিষ্কার করলাম এবং আমাকেও নামিয়ে ফেলবে বলেছে সত্যি বলতে আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম। এত ভয় জীবনে আর কোনদিন পেয়েছি কিনা জানি না। কারণ সামনের স্টেশানটির নাম বি বাড়িয়া আর এরা একটি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র। ভয়ে তাই নিজের আসনে গিয়ে বসেছিলাম, কিন্তু যখন দেখলাম সেই কান্ডারী বড় ভাই সরে গিয়েছে তখন আর থাকতে পারলাম না। উঠে সেই ২০-২২ বছরের যুবকটির কাছে গেলাম, বললাম “তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত হও, লোকটিকে ক্ষমা করে দাও”। আমি তার পক্ষ থেকে তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। এই বাক্যটি আমার জীবনে কাউকে বলা সবচেয়ে লজ্জাজনক বাক্য। বিনা অন্যায়ে অপারধকারীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কষ্ট বলে বোঝানে সম্ভব নয়। কিন্তু সেই মহুর্তে সেই লোকটিকে বাঁচাতে অন্য কোন উপায় দেখছিলাম না। তারপরও কামরা ভর্তি সবাই যখন চুপ তখন এ ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা ছিলো না। সেই সন্ত্রাসী আমাকে বললো “ভাইয়া আপনি আমাকে ক্ষমা করেন, আপনি এখান থেকে চলে যান”। তারপরও তার হাত ধরে তাকে বোঝানের শত চেষ্টা করেছি কিন্তু সে কিছুতেই এই শিকার কে আজ ছেড়ে দিবে না। অথচ পুরো কামরায় যদি এক-দেড়শ লোক ছিলো, তারা যদি একটু এগিয়ে আসতো তাহলে মাত্র ৪-৫ জনের কাছে এভাবে জিম্মি হতে হতো না। আখাউড়া থেকে বি.বাড়িয়া ২০-২৫ মিনিটের পথ, ফলে খুব শীঘ্রই ট্রেন চলে এলো স্থানীয়দের স্টেশানে। আর যতই কাছে আসতে থাকলো তারা ততই ভয়ংকর হতে থাকলো। লোকটিকে এই ভীড়ের মাঝে টেনে নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে থাকলো। আমি জানি একবার নামিয়ে ফেলতে পারলে তাকে যে মেরে ফেলবে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এত ভীড়ের মাঝে টেনে কাউকে নামানো সম্ভব ছিলো না। ফলে ট্রেন যখন থামলো ওরা জানালা দিয়ে তকে নামানোর চেষ্টা করতে থাকলো। ওদের তিনজন ছিলো ট্রেনের বাইরে আর একজন ভিতর থেকে লোকটিকে বাইরে বের করার চেষ্টা করছিলো। এভাবে অনেকক্ষন ধস্তাধস্তি চলতে থাকলো, আর ভাগ্য সহায় ছিলো বলে ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুর করলো। ফলে ট্রেনে থাকা সন্ত্রাসী টি নেমে যাওয়ার জন্যে সরে গেল। নামাতে যখন পারেনি তখন বাইরের সন্ত্রাসীগুলো তখন লোকটি পকেটে হাত দিলো আর কিল ঘুষি দিতে থাকলো। ট্রেনের গতি বাড়ার সাথে সাথে ওদের আক্রমনের ধারও বাড়তে থাকলো। আমি ভয় পাচ্ছিলাম আবার না গুলি করে দেয়। একসময় ট্রেনের গতির কাছে তারা হার মানলো আর সেই মানুষটি মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এলো। তারপর কামরা ভর্তি সবগুলো মানুষের সাহস ফিরে এলো এবং দু-একজন জিজ্ঞেস করতে আসলো ঘটনা কি? যারা এতক্ষন এই ক্লাইমেক্সে পূর্ণ জীবন্ত নাটক উপভোগ করছিলো তাদের প্রত্যককে তখন আমার খুন করতে ইচ্ছে হয়েছিলো। সত্যি খুন করতে ইচ্ছে করেছিলো। খুন করতে না পারলেও চূড়ান্ত অপমান করে নিজের মনের জ্বালা কিছুটা মিটিয়ে ছিলাম সেইক্ষনে। অনেকেই আমায় মেকি ধন্যবাদ দিতে আসলো, সেই লোকটির জন্যে দরদের বাঁধ খুলে দিয়ে সমবেদনা জানতে আসলো। সবাইকে তাদের প্রাপ্য চূড়ান্ত অপমানটুকু করেই তারপরের স্টেশানে আমি নেমে গিয়েছিলাম। আর পেছনে ফেলে আসলাম দু:সহ এক ভয়ংকর লজ্জার স্মৃতি।

এ লেখাটির আসল উদ্দেশ্য যদি কিছু থেকে থাকে তা হলো যারা লেখাটি পড়বেন তারা আগের চেয়ে একটু সচেতন হবেন, আর একা নয় সবাই এক হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। নিজে নিরাপদে থাকুন, অন্যকেও নিরাপত্তা বলয়ে থাকতে সাহয্য করুন।


মন্তব্য

মরুদ্যান এর ছবি

আপনার সাহসিকতার জন্য ধন্যবাদ। মানুষ প্রতিবাদ করেনা কারণ জানে প্রতিবাদ করে আক্রান্ত হলে কোন উপায় নাই। দেশের পুলিশ বা আইন তাকে রক্ষা করবে না। সরকার যদি প্রতিবাদকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে সাহায্য পাওয়ার আশা নেই।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মাসুদ সজীব এর ছবি

ট্রেনে সংঘবদ্ধ দলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা সত্যি কঠিন। কারণ সেই সংঘবদ্ধরা তাদের নিজেদের স্টেশানে ট্রেন থামিয়েও ফেলেছে এমন ঘটনাও ঘটেছে বেশ কিছু। আসলে সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার না করলে এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।
সচেতনতা মূলক লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

ভালো থাকবেন মাসুদ সজীব।
আপনার জন্য শুভকামনা।

-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা :)

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

লেখাটা ভালো লাগল।

আমারও পেশাগত জীবন আর ব্যাক্তিগত জীবনের মেলবন্ধন ট্রেন।

প্রথম দুটো অভিজ্ঞতা আমারও। তৃতীয়টির মুখোমুখি অবশ্য হইনি কখনও (ভাগ্যিস)।

আর একটা ঝামেলা আছে, অন-বোর্ড টিকেট নিয়ে। টিটিরা কখনও জরিমানা সমেত টিকেট দিতে আগ্রহ দেখান না। বরঞ্চ, ২০০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা নিয়ে (বিনা রশিদে) ছেড়ে দেন।অন্যের টিকিট নিয়ে কথা বলতে গেলে তো গণধোলাই খেতে হবে, কিন্তু নিজেরটা নিয়ে কথা বলাও দুষ্কর। ভাগ্যিস আশেপাশের লোকজন বুদ্ধি-সংশ্লিষ্ট দু-চারটে গালি দিয়েই এমন বেমক্কা যাত্রীর ওপর ক্ষোভ নিরসন করেন। ;)

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুম, আমি এমন দু-চারজন টিটিকে জানি এবং চিনি যাদের চট্রগ্রামের সবচেয়ে দামি এলাকায় যার বাড়ি আছে :-? । শুধু টিটি না রেলওয়ে পুলিশ, রুম সহকারী, খাওয়ার ‍রুমের ইজরাদার ও এই অবৈধ আয়ের উৎসবে এখন দারুন পারদর্শী।যাকে যেভাবে পারছে তাকে মকসুদ বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই :(

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

শেষের অভিজ্ঞতা তো ভয়াবহ!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাসুদ সজীব এর ছবি

আসলে জীবনে এতটা ভয় আর পেয়েছি বলে মনে পড়ছে না। এই অভিজ্ঞতা আসলে আমাকে নিজের মূল্যবান জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি হয়তো কিছুটা স্বার্থপরও করে তুলেছে। (ধইন্যা)

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আপনি অনেক বড় একটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন! আর, জীবন কি এতই সস্তা! সামান্য কারণে আরেকজনকে শারিরীকভাবে আঘাত করার আগে এদের হাত একটুও কাঁপে না!

একবার হানিস সংকেতের ইত্যাদিতে দেখিয়েছিল একটা প্রতিবেদন, একজন চলন্ত ট্রেনের জানালা থেকে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলছিল। বাইরে থেকে একজন ক্যামেরার লোভে ধারালো দা ছুঁড়ে মেরেছিল! হায়রে লোভ!

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুম ঝুঁকি হয়ে গিয়েছিলো কিছুটা। কিন্তু মানুষের এমন চুপ থাকা সত্যি অনেক হতাশ করে ছিলো। বিশেষ করে আমি আমার আসনটা ছেড়ে দিয়েছিলাম এক মহিলাকে দাঁড়িতে থাকতে দেখে। কামরায় যখন ছেলেগুলো হৈচৈ করছিলো তখন সেই মহিলা তার স্বামীটিকে নিয়ে কেটে পড়লো। হায়রে! উপকারের অবদান!

কোন প্রকার পূর্ব শত্রুতা ছাড়া মানুষ যে কত তুচ্ছ কারণে মানুষের গায়ে হাত তুলতে পারে এমনকি খুনও করতে উদ্যত হতে পারে তা এমন ঘটনা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। :(

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যারা বলেন পুলিশে খবর দেন নাই কেন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান নাই কেন? তারা আসলে কোন দিন এই জাতীয় ঘটনায় বাংলাদেশের পুলিশ বা কোন কর্তৃপক্ষের কাছে কোন প্রতিকারের জন্য ধর্ণা দেননি। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমি সাধারণ নালিশ করা থেকে মামলা করা পর্যন্ত সবই করে দেখেছি - কোনদিন কোন বিচার বা প্রতিকার পাইনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মরুদ্যান এর ছবি

(Y) এরকম ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই জবাব পাওয়া যায় "ঝামেলায় যান ক্যান? নিজের চরকায় তেল দিতে পারেন না? ভাই আমাদের কিছু করার নাই, যান।"

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মাসুদ সজীব এর ছবি

আমি জানি বলেই কোনদিন এদের কাছে যাইনি। হয়রানি আর মেজাজ খারাপ এভারেষ্টের চূড়ায় উঠাতে এদের আচরণের কোন জুড়ি নাই।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিনা অন্যায়ে অপারধকারীর কাছে ক্ষমা চাওয়ার কষ্ট বলে বোঝানে সম্ভব নয়।

আশাবাদ তবু থাক দিন বদলের।

শুভকামনা। অনিঃশেষ। সবসময়।

দীপংকর চন্দ

মাসুদ সজীব এর ছবি

(ধইন্যা) ও শুভেচ্ছা :)

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুদীপ  এর ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় না, মেয়েটি ছিল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এর।

সুদীপ

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

এই অভিজ্ঞতা আসলে আমাকে নিজের মূল্যবান জীবন সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি হয়তো কিছুটা স্বার্থপরও করে তুলেছে।

আমার ক্ষেত্রে তো এসব অভিজ্ঞতা আমাকে শুধু নিজের পরিবার সম্পর্কে সচেতন ও স্বার্থপর করে তুলেছে। এগিয়ে যেতেও ভয় পাই। সাধুবাদ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাসুদ সজীব এর ছবি

আসলে সর্বক্ষেত্রে অসহযোগিতা আমাদেরকে ভীষন স্বার্থপর করে তুলছে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।