স্মৃতির প্রতি আমার পক্ষপাতিত্ত্ব আছে, বেদনা আছে, বিষন্নতা আছে, আছে গোপন ভালোলাগা আর অকৃত্রিম ভালোবাসা। তাই বলে যাপিত জীবনের সঞ্চিত সকল স্মৃতি অম্লান থাকেনি মনের ঘরে, কত স্মৃতি ধূসর হয়ে হারিয়ে গেছে নাম না জানা কোন সে অদেখা অতলে। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির মিছিলে যে স্মৃতি আজও এতটুকু অম্লান হয়নি, সেটি আজাদের ”ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না’ পাঠের স্মৃতি। যে বই আমার ছেলেবেলা কে বিষন্নতায় ডেকে দিয়েছিলো, অন্ধকারে ডুবিয়ে দিয়েছিলো প্রথম যৌবন। সেই বই আজ এই পড়ন্ত বেলাও আমাকে এখনো আগের মতো বিষন্ন করে, বুকের মধ্যে হাহাকারের কাল বোশেখী ঝড় তুলে, চোখে নোনা জল নিয়ে আসে...এখনো যতবার পড়ি ততবার স্তব্ধ হয়ে যাই, ডুবে যাই কোমল বিষন্নতায়...নাগরিক জীবনে যত জড়িয়েছি নিজেকে ততবেশি প্রিয় হয়ে উঠেছে বইটি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রকৃতি আর ছেলেবেলায় ফিরে যাওয়ার বাসনা তীব্র করেছে আজাদের ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না। প্রথম লেখাতেই কি অদ্ভুদ ভালোলাগার বিষন্নতা ছড়িয়ে দিয়েছেন আজাদ। যেখানে তিনি মেয়েকে বলছেন...
ফুলের গন্ধ
মৌলি, তেমাাকে বলি, তোমার মতোই আমি এক সময় ছিলাম-ছোটো। ছিলাম গ্রামে, গাঁয়ে, যেখানে মেঘ নামে সবুজ হয়ে নীল হয়ে লম্বা হয়ে বাঁকা হয়ে। শাপলা ফোটে; আর রাতে চাঁদ ওঠে শাদা বেলুনের মতো। ওঠে খেজুর ডালের অনেক ওপরে। যেখানে এপাশে পুকুর ওপাশে ঘরবাড়ি। একটু দূরে মাঠে ধান সবুজ ঘাস কুমড়োর হলদে ফুল। একটা খাল পুকুর থেকে বের হয়ে পুঁটিমাছের লাফ আর খলশের ঝাঁক দিয়ে চ’লে গেছে বিলের দিকে। তার ওপর একটা কাঠের সাঁকো-নড়োবড়ো। নিচে সাঁকোর টলোমলো ছায়া। তার নাম গ্রাম। ওই গ্রামে, আমি ছিলাম কুড়ি বছর আগে। ছিলাম বোশেখের রোদে, শাঙনের মেঘে। একদিন আমি কুমড়োর ফুল ভুলে লাউয়ের ডগার হাতছানি অবহেলা করে চাঁদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে চ’লে আসি শহরে-ঢাকায়-যেখানে তুমি আছো তোমার প্রথম চিৎকার থেকে। তুমি দেখোনি আকাশে কী করে মেঘ জমে, আহ্লাদে কতোটা রঙিন হতে পারে ডালিম ফুল। কেমনে পুকুরের আকাশে ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছরাঙা।
তুমি জানো না, কোনদিন জানবে না, কেমন লাগে একটি নড়োবড়ো বাঁশের পুলের ওপর দাঁড়িয়ে কালো জলের দিকে তাকিয়ে থাকতে। তুমি শিশির দেখোনি, কুয়াশা দেখোনি, কচুরি ফুল দেখোনি। তুমি ধানের শিষ দেখেছো টেলিভিশনে, চিল দেখেছো ছবির বইতে। নালি বেয়ে ফোঁটাফোঁটা খেজুরের রস ঝরতে দেখোনি, পুকুরে দেখো নি মাছের লাফের দৃশ্য। তুমি জানো না কেমন লাগ উথালপাথাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে, আর কেমন লাগে একটি পাখির পেছনে ছুটে ছুটে সকালকে দুপুরের দিকে গড়িয়ে দিতে।আমি জানি;- না, আমি জানতাম। এখন তো আমি জড়িয়ে আছি শহরে, আমার পায়ের নিচে শক্ত কংক্রিট, চোখে নিঅন আলো, চারদিকে গোঁগোঁ করা ট্রাকের উল্লাস। কতো দিন আমি তোমার মতোই চাঁদ দেখেনি। শহরে কি চাঁদ ওঠে? কুয়াশা নামতে দেখেনি দুধের সরের মতো, পদ্মার পারে দেখি নি ধবধবে কাশফুলের মেঘ। কতো দিন দেখিনি ধানের গুচ্ছ, তারার গুচ্ছের মতো। কিন্তু যখন আমি হাঁটি, বিকেলে বেড়াই, বই পড়ি, ঘুমাতে যাই, পড়াই স্বপ্নের কথা ভেবে ভেবে, তখন আমি একটি ফুলের গন্ধ পাই। সে ফুল আমার গ্রাম, সে ফুল আমার গাঁ। আমার ছোটোবেলার গ্রাম। রাড়িখাল। তার গন্ধ ঢুকতে থাকে আমার রক্তে, আমার মাংসে, স্বপ্নে এবং সবকিছু এলোমেলো-আউলা-হয়ে যায়। তার গন্ধই আমার কাছে পৃথিবী।
এমন মোহনীয় লেখা কাকে নষ্টালজিক করবে না? কাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে না নিজের শৈশবে, নিজের গ্রামে আর ছড়িয়ে দিবে না বুকে নীরব একটা দীর্ঘশ্বাস? আমি তাই আজাদের ফুলের গন্ধের মাঝ দিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে যাই, নিজের শিকড়ের কাছে ফিরে যাই। আমারো চোখে ভেসে উঠে নিজের ফেলে আসা শৈশবের কথা। রস চুরি করছি, ধান ক্ষেতে পানি সেঁচে মাছ ধরছি, শামুক খুঁজছি, সারাদিন পুকুরে ডুবে আছি, মাঘের শীতে খড়কুটো দিয়ে আগুন পোহাচ্ছি, রসের পায়েসে ভরে উঠছি, এইতো খালের পথ ধরে স্কুলে যাচ্ছি, হঠাৎ আমের গাছে নাম না জানি পাখির ডাকে থমকে দাঁড়িয়েছি। কোনদিন পাখির বাসা থেকে ছানা নামিয়ে আনছি, বাবার পকেট কেটে কিংবা চুরি করে ধান বিক্রি করে বাজারে দৌড় লাগাচ্ছি। সব স্মৃতি এসে জড়ো হয় মনের ক্যানভাসে, সবকিছুকে একাকার করে দেয় ফুলের গন্ধ। সেই ফুল আমার গ্রাম, সেই গন্ধ আমার শৈশব।
সুখ ও শোকের কবিতা
কবিতার সাথে বসবাস বোধহয় আমাদের প্রথম দিন থেকেই। ছোটবেলায় মায়ের কোলে শুনা নানান ছড়া আর কবিতায় রঙিন হয়ে থাকতো শৈশব। তারপর বিদ্যালয়ে গিয়েও কবিতায় ডুবে থাকতাম সারাবেলা। আমাদের ছোটনদী চলে বাঁকে বাঁকে, কাঠবিড়ালি, ওই দেখা যায় তালগাছ, ভোর হল দোর খুলোর মতো অসংখ্য কবিতা আমাদের প্রথম জীবনকে আলোকিত করেছিলো, নিয়ে গিয়েছিলো কত কল্পলোকে। কবিতা মানেই ছিলো অপার্থিব সুখ। কিন্তু কবিতার সুখের রেশ না কাটতেই কাটতেই আমাদের পরিচিত হতে হয় অচেনা-অজনা শোকের সাথে। সেই সুখ আর শোক নিয়ে হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন সুখ ও শোকের কবিতা। তিনি বলছেন...
কবিতা কোথায় পাওয়া যায়? বাঙলা পাঠ্যবইয়ে। ওই পাঠ্যবই ছিলো আমার ছোটবেলার কবিতার বই। এতোকাল যতো কবিতা পড়েছি সবই সুখের কবিতা। পড়লে মন ঝলমল করে ওঠে। কিন্তু দুটো কবিতা বুকের ভেতর জাগিয়ে দেয় আর পুষে রাখে শোক। সারা পৃথিবী হয়ে ওঠে একফোঁটা চোখের জল। টলমল করতে থাকে। চোখের পাতা ভিজে ওঠে। ঠোঁট কাপতে থাকে। বই বন্ধ করে মুখ ঢেকে রাখি, যাতে কেউ দেখতে না পায়। আবার পড়ার সময় দেখি কবিতাটির পাতা ভিজে গেছে।
আমার প্রথম শোকের কবিতার নাম “কাজলা দিদি”। কবির নাম যতীন্দ্রমোহন বাগচী। তখনও আমার শোকের অভিজ্ঞতা হয়নি। কিন্তু কবিতাট পড়ার পর শোকে ছেয়ে গেলো সবকিছু। এতো সুন্দর ছবি, আর তার ভেতরে এমন শোক আর কোথায় পাওয়া যাবে বাঙলা ভাষায়?
বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই, মাগো আমার শোলোকবলা কাজলা দিদি কই’?
--প্রশ্ন শুনে ধক করে ওঠে বুকটি। কোথায় সে, কোথায় সে? তারপরের ছবি অবিকল নানার বাড়ীর--
পুকুর ধারে নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে--ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই।
ভেসে আসে নানাবাড়ির গোরলেবুর ঝোপের ছবি, উড়ছে জোনাকি, জ্বলছে নিভছে, আসছে লেবুর ঘ্রান, ঘুম আসছে না।
সেদিন হতে দিদিরে আর কেনই বা না ডাকো, দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো ?
কেনো ডাকে না, কেনো ডাকে না? কেনো আঁচল দিয়ে ঢাকে মুখ? দিদি কি নেই? শোলোকবালা দিদি নেই? মরে গেছে? হ্যাঁ, বুঝতে পারি, মরে গেছে দিদি? তােই তো খাবার সময় ও আসেনা দিদি অনেক ডাকলেও আসেনা। আসবে না। আসবে না কোনদিন। এটা বোঝার পর কী করে চেপে রাখি চোখের জল? কী করে আর পড়ি পরের লাইনগুলো? ওই ছোট্ট মেয়েটি , যে প্রশ্ন করছে মাকে, সে কি বুঝতে পেরেছে যে দিদি নেই? কোনোদিন থাকবে না, কোনোদিন পাওয়া যাবে না তাকে বাঁশবাগানে, পুকুরধারে, নেবুর তলে! কোনোদিন দিদি আর বলবে না শোলোক?
দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে
--আর পড়তে পারি না ওই কবিতা। চোখের পানিতে ভিজে যায় বইয়ের পাতা, বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ, জোনাকির পাখা। ভুইচাপা আর শিউলি গাছের তল ভিজে যায় চোখের জলে। বুলবুলিটার চোখ টলমল করে অশ্রুর মতো। ডুকরে ওঠে বুক। অনেক রাত জেগে থাকি শুধু দিদির মুখের রূপ দেখবো ভেবে।
দিদির কি সন্দুর নাম! কাজলা-দিদি! চোখ তার কালো কাজল। দেখতে পাই তাকে। গায়ের রঙ ও তার কাজলের মতো কোমল। দিদি! আমি তোমার শোলোক শুনবো। চিরকালের শোক হয়ে বুকের ভেতর ঢুকে গেলো কবিতাটি। কি সুন্দর কবিতাটির ছবিগুলো। এতো সুন্দরের ভেতর এতো কান্না!
এই প্রথম শোকের পরই পেলাম আমার দ্বিতীয় শোক। দ্বিতীয় দু:খ। ছোট বুকটি এবার দুমড়ে-মুচড়ে গেলো। কবিতার নাম ছিন্নমূল। কবির নাম সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত । পরে শুনেছিলাম তার উপাধি নাকি ছিলো ছন্দের যাদুকর। আমার কাছে হয়ে রইলেন দু:খের যাদুকর।
এ কবিতাটি কাজলা-দিদির মতো অতো সুন্দর সুন্দর ছবিভরা নয়। কাজলা-দিদিতে কথাগুলো বলেছিলো একটি ছোট্ট মেয়ে। এ-কবিতাটিতে কথা বলেছে বোধহয় বাবা। কথাগুলো কেমন ভাবে ভরা। রূপ হয়ে তা চোখেল সামনে ভাসে না, ভাব হয়ে বুকের ভেতর ঢোকে। যে হারিয়ে গেছে তার কথা সোজাসুজি বলছে না বাবা, বলছে একটু ঘুরিয়ে। তার কথা না বলে বলছে তার জিনিশপত্তেরের কথা।
সবচেয়ে যে ছোট্ট পীঁড়িখানি, সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে
--শুরুতেই ছলাৎ করে ওঠে বুক। কেনো আর কেউ পাতে না সবচেয়ে ছোটো পীঁড়িটি? ‘
ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া
--বুক চিৎকার করে--কেনো? তাহলে কি সে নেই? যে ছিলো সবচেয়ে ছোট?
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিলো তারি খাওয়া ঘুচেছে সব আগে
-- এবার আর বোকা মনের বুঝতে বাকি থাকে না যে মরে গেছে সেই ছোটমণি। ফুল ফোটার আগেই ছিঁড়ে নিয়ে গেছে কোমল মুকুল। বুক ভরে হু হু শব্দ শুনতে পাই, বান ডাকে নোনা জলের।
এ কবিতা দটি বুকের ভেতর চোখের জলের মতো এখনো টলমল করে। কলকল করে কান্না। আমার বুকের এককোণে শোক বসে আছে। ছোটবেলার এ কবিতা দুটেই দিয়েছিলো আমাকের শোকের প্রথম পাঠ। সে পড়া আজো ভুলিনি আমি।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার ছেলেবেলার সবচেয়ে শোকের কবিতা ”কাজলা দিদি আর জসিম উদ্দিনের ”কবর” কবিতাটি। বড় হয়ে আরো অসংখ্য শোকের কবিতা প্রিয় হয়ে ওঠেছে। সুনীলের “ কেউ কথা রাখেনি, আজাদের ”মা”, রুদ্র’র “বাতাসে লাশের গন্ধ” সহ আরো অসংখ্য কবিতা আছে তালিকায়। কিন্তু কবিতা নিয়ে কোন লেখা এর চেয়ে বেশি শোক আর কষ্ট দিতে পারেনি আমায়।
সবচেয় ছোট যে পিঁড়িখানি
এটি আসলে হুমায়ুন আজাদের আত্নজীবনী মূলক স্মৃতিচারন। হুমায়ুন আজাদের ছেলেবেলার সময়টাতে কলেরা ছিলো মহামারী। সময়টা যুদ্ধের বেশ আগে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সেবা তখনও বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে পৌছায় নি। তখন এক গ্রামে কলেরা হলে পুরো গ্রাম ফাঁকা হয়ে যেত, এবং সেটা গ্রাম থেকে গ্রামে বাতাসের মতো পৌছে যেত আর মৃত্যুর মিছিলে যোগ হতো অসংখ্য নাম। কান্না, শোকে চারিদিকে নিথর হয়ে যেত সব। তেমনি এক সময়ে যখন হুমায়ুন আজাদ ক্লাস এইটে তখন কলেরা দেখা দেয় তাদের গ্রামে, যেই গ্রামে এর আগে কোনদিন কলেরা হয়নি। সেই বয়সে মৃত্যুকে কাছ থেকে দেখার শৈল্পিক ভয়ংকর বর্ণনা, কুসংস্কার আর অসহায়ত্বের বিয়োগ গাঁথা ফুটে তুলেছেন তিনি তাঁর মতো অসামান্য করে।
একদিন রাতে দেখা গেল তার ছোট ভাই কালামের বমি হয়ে গেল, সবকিছুকে স্তব্ধ করে দিয়ে তিন বছর বয়সী কালাম সকালেই মারা গেল..! সেই মৃত্যু কতটা গভীর ভাবে ছুঁয়ে গেছে তার সমস্ত সত্তাকে, কতটা ব্যাথিত করেছে তার মর্মস্পর্শী বর্ণনা লেখক দিয়েছেন। যা পাঠককে গভীর আবেগে ছুঁয়ে যাবে, চোখে হয়ত জল টলমল করবে। আমার যেমন করেছিলো..! তাই যার পড়েননি গল্পটি পড়ে নিতে পারেন, আশা করি ভালোলাগবে। গল্পের কিছু অংশ তুলে দিলাম।
.
উত্তর-পশ্চিম কোলায় খোঁড়া হল ছোট্ট কবর, একমুঠো কবর। নামিয়ে দেয়া হলো, মনে হলো ঝাপিয়ে পড়ি, ওর সাথে বাস করি ওই কবরে। ও যে বড় ভয় পাবে। এ কোলায় সন্ধ্যায় আসতে কারো সাহস হয় না। কালাম কি করে থাকবে এখানে? কিন্তু আস্তে আস্তে মাটি জমতে থাকলো কালামের লাশের উপর। কালাম কালাম কালাম... সব কিছু শূণ্য হয়ে গেল। চোখ ছাপিয়ে বেরোয় শিশুর মতো সরল জল, মনে মনে বলি কালাম কালাম। তুমি এত ভরে রেখেছিলে কেন সবকিছু? কেন সবকিছু শূণ্য করে দিলে?যদি তুমি বেঁচে থাকতে তবে তোমার বয়স হতো এখন সাতাশ। তুমি নেই তাই তোমার বয়স এখনো তিন বছর দু-মাস। আমার চোখ অন্ধ আসছে চব্বিশ বছর আগের বোবা জলে। গলা ফুলে উঠছে ঠিক সে দিনের মতো, ৬ই আঘ্রানের মতো, যে-দিন তুমি চলে গেলে। তুমি আজো আছো, আমার চোখের তারায়, বুকের বাঁ-পাশে।
মন্তব্য
সচলায়তনে কোনো বই নিয়ে আলোচনা করলে গুডরিডসে বইটির ভুক্তির লিঙ্ক জুড়ে দিতে পারেন। গুডরিডসে এ সংক্রান্ত কোড পাবেন বইয়ের পেইজটির এই অংশে:
"Share on your website" এ ক্লিক করে মিডিয়াম ইমেজের কোডটি কপি করে পোস্টের কোথাও পেস্ট করে দিলেই কাজ হবে।
দিলাম জুড়ে
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
চলুক তবে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গনতন্ত্রের আগুনে পুড়ে যাওয়ার আগে চলবেই
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
শোকার্ত অক্ষরের ঘায়ে ঘায়েল হলেম বেশ!
একটা কথা বলি ভায়া, প্রথম প্যারায় শুধু আজাদ না লিখে ওঁর পুরো নামটাই লিখুন।
কিছু বানান বিভ্রাট হয়েছে ঠিক করে নিন প্লিজ। বিশেষ করে স্তব্ধ আর ব্যথিত চোখে লাগছে।
পরের পর্ব আসুক জলদি করে
শোকর করেন শুধু শোকার্ত অক্ষরে ঘায়েল হলেন, মানুষ এহন পেট্রোল বোমায় ঘায়েল হচ্ছে দিনে রাতে।
আপনার কথাই রাখা হলো, শিরোনামেই লেখকের পুরো নামটা দিয়ে দিলাম।
বানান নিয়ে দুর্বলতা রয়েছে, চেষ্টা চলছে কাটিয়ে উঠার, আশা করি হয়ে যাবে একদিন।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নিজের রোমান্টিক জগতে স্বার্থপরের মত বাস করি বলেই হয়ত দেশে পেট্রোল বোমায়
আহত অথবা নিহতদের কথাটা খেয়ালে আসেনি!
মন্তব্যের উত্তর পড়ে তাই লজ্জাবোধ করছি। আমার জন্য যা রোমান্টিকতা, অন্যের জন্য তা জীবন মরণের ব্যাপার! কবে যে অমানুষগুলোর একটু শুভবোধের উদয় ঘটবে জানিনা। খোদা তাদের হেদায়েত করুন।
সত্যিই শোকর করছি এতদূরে শান্তি সুখে আছি বলে
যারা মারছে সেইসব অমানুষদের জন্যে যত ঘৃনা প্রতিদিন জমে তার চেয়ে বেশি জমছে যারা (বেশির ভাগ নিরপেক্ষ/সুশীল/চুপা বিম্পি পন্থি) এই জঙ্গিবাদকে সাপোর্ট করছে প্রকাশ্যে কিংবা নানান কথার আড়ালে। আমি যে অফিসে কামলা দেই, সেখানে আমার সহকর্মী যারা আছেন (ফার্মাসি-কেমিষ্ট্রি-বুয়েট) তারা সবাই মোটামুটি এমন অবস্থার জন্যে দুদলকে এবং ক্ষেত্রবিশেষে আওয়ামিলিগ কে বেশী দায়ী করে। এই যদি অবস্থা হয় দেশের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের তাহলে অন্যদের ভাবনা আর কি হতে পারে। এই দেশের মানুষের রাজনৈতিক অজ্ঞতা শুধু দেশকে অন্ধকারের দিকে নয় তাদেরকে দিন দিন অমানবিক পশুতে পরিণত করছে।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
বুক রিভিউ লেখা আমার কাছে বরাবর জটিল কাজ মনে হয়। কিন্তু অনেকেই কাজটি খুব স্বচ্ছন্দে করে থাকেন। হুমায়ুন আজাদের রাজনৈতিক লেখা আমার পড়া হয়নি তবে সেসব বাদে যে কিছু বই পড়েছি সেগুলো পড়লে মনে হয় এ যেন নিজের কথা, নিজের ভাবনা,যেন নিজেই বলতে চেয়েছিলাম। চমৎকার শব্দের কারিগর।
আপনার প্রকাশটাও ভালো লাগলো। শুভকামনা রইলো।
অপর্ণা মিতু
এটি আসলে ওই অর্থে রিভিউ নয়, অনেকটা স্মৃতিচারণ। এই বইটি আমাকে সবচেয়ে বেশি বিষন্ন করেছে, মুগ্ধ করেছে বর্ণনাশৈলী আর স্মৃতিকথনে। একটা মানুষ প্রকৃতি কে কতটা ভালোবাসতে পারেন, সেটাকে কতটা লেখায় তুলে আনতে পারেন তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এই বইটি। সেই বিষন্ন মুগ্ধতাই প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। পড়ার জন্যে ধন্যবাদ, নিরাপদে থাকুন
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আহা,
এইটুকুর মাঝেই জীবনর কত স্মৃতি, কত কথা!
লেখাটার স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলেম।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
বইটা এখনো পড়তে শুরু করিনি, বুক শেলফ থেকে চোখ পাকায় মাঝে মাঝে। আপনার লেখার মাঝে তার এক ঝলক দেখে মনে হলো বইটা হাতে নিতে হবে শীগগিরই
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বুক শেলফে এমন বই জমিয়ে রাখা অন্যায়, এমন বিষন্নতাকে বুক শেলফে না রেখে বুকে যত্ন করে রাখতে হয়
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
এখনো পড়া হয়নি বইটি। আজকালের মধ্যেই পড়ে ফেলব। পড়ার আগেই অবশ্য বুঝতে পারছি কতটা স্মৃতিকাতর হতে হবে পড়ে। কারণ সেই গ্রামের ছেলেবেলা। গ্রামের কথা আমার ছবির মতো মনে হয় না--আজাদের যেমনটা হতো মনে হচ্ছে--, মনে হয় এক রকমের স্বপ্নের মতো করে। আমার স্মৃতিশক্তি ভালো নয়, আর গ্রাম ছেড়েছিলাম ৯ বছর বয়সে। তারপরও কিছু ঘটনা এখনো এত স্পষ্টভাবে ভাসে যে আমি নিশ্চিত মরার ঠিক আগমুহূর্তে কেবল সেগুলোই আমার চোখের সামনে থাকবে।
সে সময়কার গ্রামে প্রকৃতির অনেক কাছে থাকার সুযোগ হতো, আমরাও যে প্রকৃতির একটা অংশ তা তখন সাধারণ জ্ঞানের মতো ব্যাপার হয়ে দাঁড়াত। আর সবচেয়ে বড় সুযোগ বোধহয় হতো মৃত্যু দেখার, মৃত্যুর পর কী হয় তা নিয়ে ভাবার। আমার জীবনের প্রাচীনতম যে স্মৃতিটার কথা মনে পড়ে সেটা মৃত্যুস্মৃতি। আমার চাচাত বোন--বকুল আপা বলে ডাকতাম--বাড়ির পিছনের পুকুরে ডুবে মারা গিয়েছিল। আমার বয়স তখন চার, মৃত্যু কী তখনো জানতাম না, তখন ভেবেছিলাম কবরটা বোধহয় আরেকটা ঘর যেখানে তাকে রাখা হয়েছে। গোরস্থানটা ছিল আমাদের বাড়ির ঠিক পিছনে, চৌকিতে শুলে জানালা দিয়ে দেখা যায়। বকুল আপার হরহামেশাই কবরের ঢাকনা উঠিয়ে উঠে আসার এবং কিছুক্ষণ বাদে আবার কবরে ফিরে যাওয়ার স্বপ্ন-দিবাস্বপ্ন-বাস্তবচিত্র সবই দেখতাম তখন। মৃত্যু দিয়েই জীবন শুরু করার এই অপূর্ব সুযোগ গ্রাম ছাড়া আর কোথায় মিলবে?
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
সেটাই গ্রাম ছাড়া জীবনের এত রঙ, প্রকৃতির এত রূপ দেখা সম্ভব না। পড়ে ফেলুন
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
বরাবরই হুমায়ুন আজাদ আমার কাছে এক বিস্ময়ের নাম । তার এই বইটা যে কতটা সংবেদনশীল, তা না পড়লে হয়তো অনেকেই বুঝবেই না। যারা যারা পড়েনি তাদের প্রতিও অনুরোধ রইল বইটা পড়ার।
সহমত।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না বইটি পড়া হয়েছে ছোট ও বড় দুবেলাতেই। আপনার লেখাতে আবার ফিরে গেলাম সেই বিষণ্ণ পাতা গুলোয়। কিছুটা বিষণ্ণ যেন আমিও হলাম। বিষণ্ণ হতে আমার বরাবর ভালই লাগে। বইটিও তাই ভাল লাগা বইগুলোর তালিকায়। রিভিউ ভাল লিখেছেন। রিভিউ পড়ে অনেকেরই বিষণ্ণ হতে ইচ্ছে করবে।
পড়ার জন্যে ধন্যবাদ
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
শৈশবে, জীবন যখন কেবলই আনন্দময়, তখন কষ্টের অনুভূতি নিয়ে এসেছিল কাজলা দিদি। তখনই যেন বুঝতে পেরেছিলাম, জীবনে অন্য আরেক রকম অনুভূতিও আছে, যা আনন্দের বিপরীতে বিষাদে পরিপূর্ণ।
হম
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নস্টালজিক করে দিলেন ভাই, এই বইটা পড়তে গিয়ে মনে হয়েছিল, এ তো আমার জীবন! আর শুধু পথের পাঁচালীতেই এমন মনে হয়েছিল। বইটা পড়ার পরের সপ্তাহেই চলে গিয়েছিলাম আড়িয়ল বিলে। ধন্যবাদ আমার প্রিয় একটা বইকে নিয়ে লেখার জন্য।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আপনাকে ধন্যবাদ পড়ার জন্যে
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
আপনার লেখা পড়ে বইটি আবার পড়তে মন চাইছে।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
এ বই হাজার বার পড়া যায়, মাথার পাশে বালিশের নিচে সারাজীবনের জন্যে রেখে দেওয়া যায়
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
হুম ! অন্তরঙ্গ অনুভূতির লালিত্যে রাচিত আলোচনা ভালো লাগলো
-নাজিয়া ফেরদৌস
ধন্যবাদ
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
ভালো লেগেছে
ধন্যবাদ, অতিথির নাম জানলে লেখকেরও ভালোলাগাটা আরেকটু বেশি হতো।
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
নতুন মন্তব্য করুন