অসততার স্বর্গভূমে সাধুটা আসলে কে?

মাসুদ সজীব এর ছবি
লিখেছেন মাসুদ সজীব (তারিখ: বুধ, ১১/০৩/২০১৫ - ৯:৫৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সবাই বলে চোর, চোর। কিন্তু চুরিটা করে কে? ওই পল্টন ময়দানে বক্তৃতা করে যে বলে বেড়াচ্ছে দুর্নীতি ধরতে হবে, বাসায় এসে সে বলে, তাজউদ্দীন ভাই, আমার খালু ধরা পড়েছে, ওরে ছেড়ে দেন। যদি বলি, তুমি না বক্তৃতা করে এলে? তখন উত্তর দেয়, বক্তৃতা করেছি তো পার্টির জন্যে, এখন আমার খালুকে বাঁচান। --সাক্ষী ছিলো শিরস্ত্রান--সুহান রিজওয়ান।

৪২ কি ৪৩ বছর আগে মুখোশধারী সাধু বাঙালিদের নিয়ে করা তাজউদ্দীনের এই উক্তি আজ এই ২০১৫-তে কি এতটুকু বদলেছে?

এই দেশে যে লোকটি প্রতিদিন অক্সিজেনের মত ঘুষ খাওয়াকে জীবনধারণের অত্যাবশকীয় উপাদান করে নিয়েছে, যে লোকটি খাদ্যের সাথে ভেজাল মিশিয়ে লাভ আর লোভকে প্রতিনিয়ত প্রসারিত করে চলেছে, সরকারী টাকা-পয়সা লুটপাট করে যে মানুষটি গুলশান-বাড়িধারায় ফ্ল্যাট বুকিং দিচ্ছে কিংবা সরকারী কর ফাঁকি দিয়ে যে মানুষটি দেশকে প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে যাচ্ছে, তাদের কি কোন সাজা হচ্ছে? না, হচ্ছে না বরং এরাই পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে টেলিভিশনের টকশো তে আদর্শ আর নীতির বুলি উড়ায় আর দেশ নিয়ে হাই-হুতাশ করে। সব গেল গেল বলে হাউকাউ করে এবং নিজেরা আদি, অকৃত্রিম থেকে বদলে যাও বদলে দাও এর ডাক তুলে। বাংলাদেশের প্রতিটি অফিসের বড়কর্তারা নিজে কমবেশী একজন স্বৈরাচার জেনারেল হয়েও দেশে গনতন্ত্র নেই বলে মায়া কান্না করেন, ঠিক মতো কর পরিশোধ না করে, নানান পন্থায় সেই কর ফাঁকি দিয়ে এরাই কথায় কথায় উন্নত রাষ্ট্রগুলোর সাথে বাংলাদেশের তুলনা করেন আর দেশের জন্যে মায়া কান্না করেন।

খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে প্রকৃতপক্ষে বেশিভাগ বাঙালি অসৎ। উচ্চশিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত যার অঢেল সম্পত্তি আছে, টাকা পয়সা আছে তারা প্রত্যেকে একেকটা অসততার কারখানা। কিভাবে আরও টাকার মালিক হওয়া যায়, কিভাবে অন্যকে ঠকিয়ে বড়লোক হওয়ায় যায় দিনরাত সেটাই জপে এরা মনে মনে। কিন্তু আমি জানি এভাবে বাঙালিকে অসৎ বললে চারিদিকে ক্ষেপে উঠবে, অনেকেই বলে বসবে আপনি দু-চারজন দিয়ে পুরো বাঙালিকে বিচার করতে পারেন না। তাদের জ্ঞতার্থে বলি আমি শত শত দেখেছি, দেখেছি হাজারে হাজারে, দেখেছি আমার রক্তে, দেখেছি আমার চারপাশে। সুযোগ পেলে এখানে সবাই অসততায় মেতে উঠে। এখানে সবখানেই অসৎ এ সয়লাভ। হয় নিজে অসৎ না হয় হয়ে উঠেন অসৎ এর পূজারী। আমি যাদের কাছে পড়ালেখা করেছি, আমি যেখানে চাকরি করে বেঁচে আছি সবখানেই হর্তাকর্তা আর শক্তিমানরা অসৎ। শুধু শহরে নয়, গ্রামেও এখন অসৎদের শত শত কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিটি গ্রামে, প্রতিটি বাড়িতে এই অসৎদের কারখানা আছে। শহরের চেয়ে বরং গ্রামের মানুষের নোংরামি, অসততা অনেক বেশি। এরা চিন্তায় অসৎ, কর্মে অসৎ, ভাবনায় অসৎ, ঘুমে অসৎ, সঙ্গমে অসৎ, নীতিতে অসৎ, আদর্শে অসৎ, ভালোবাসায় অসৎ, দায়িত্বে অসৎ, কর্তব্যে অসৎ, সম্পর্কে অসৎ, বিশ্বাসে অসৎ, এমন কি হাসি আর কান্না তে ও এরা অসৎ।

ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে ভাইয়ের হক মেরে দিয়ে এরা মসজিদে পাঁচবেলা নামাজ পড়ে, বোনের হক মেরে দিয়ে নিজে হজ্ব করে হাজ্বি সাজে। জোর করে অন্যের সম্পত্তি দখল করে সমাজপতি সাজে, ন্যায় অন্যায়ের বিচার করে। অকৃতজ্ঞ হতে এদের এক সেকেন্ড সময় লাগে না, বিশ্বাসঘাতকতার বীজ এরা বয়ে বেড়ায় এদের শিরায়-উপশিরায় আর বংশ পরম্পরায়। যে লোকটি গ্রামে মসজিদ-হাসপাতাল করে নিজেকে হাজী মহুাম্মদ মুহসীন প্রমাণ করে, শহরে সে অন্যের শতকোটি টাকা অসৎ পথে নিজের পকেটে পুরে। আমি তাই সব শক্তিমানের মুখে অজস্র অসততার দাগ দেখতে পাই। শুধু সম্পত্তি আর অবৈধ আয় অসততার একমাত্র লক্ষন নয়। পরনিন্দা, তোষামদি, পরশ্রীকাতরতা, কূটলতা সবগুলো অসততার বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশে অসৎরা বেশিভাগ ধার্মিক। ধর্ম-কর্ম যদি সত্যি মানুষকে ভালো মানুষ বানাতো তাহলে বাংলাদেশ হতো সৎ মানুষদের পূর্ণ্যভূমি। কিন্তু বাংলাদেশ তার উল্টো। এখানকার মানুষ যতবেশি ধার্মিক ততবেশি অসৎ। দোষটা ঠিক ধর্মের নয়। ধর্ম এদের কাছে লেবাস, একটা চাদর রূপে এটি ব্যবহার করে, আর সময় সুযোগ মতোই সেই চাদর থেকে বেরিয়ে হায়না সাজে।

কিভাবে বাংলাদেশে শক্তিমান-রা দেশকে প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে দানবীর হাতেমতাই সাজে নিজ অভিজ্ঞতা থেকে দুটো বিষয় শেয়ার করি।

(১)

প্রথমে চাকরি করেছিলাম ঢাকার একটি প্রখ্যাত হাসপাতালে (ডাক্তার নই)। মালিক-পরিচালক সবাই হাজ্বী, পাঁচবেলা নামাজ পড়া পাবলিক। সেই হাজ্বীরা একেক জন ছিলেন চুরি তে দক্ষ কারিগর। রাষ্ট্রের প্রধান চোর হলে সে দেশের জনগন ও যেমন চোর হয় তেমনি হাসপাতাল গুলোতে ও ঠিক তাই। যেখানে এমডি-ডাইরেক্টররা চুরি করে প্রকাশ্যে সেখানে বিভিন্ন বিভাগের প্রধানদের চুরি করতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। তাই অবাধে চলে চুরি আর অবৈধ আয়ের পাঁয়তারা।

হাসপাতালে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজগুলো হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন অপারেশান আর হাবিজাবি টেষ্ট। সেই সময়ে (২০০৯-১০) একটি সিজার করতে ওই হাসপাতালে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ পড়তো। ডাক্তারের ১০-১২ হাজার টাকা বাদ দিয়ে দুই দিনের জন্যে বাকী টাকার পরিমান বাংলাদেশের মতো দেশের মানুষের জন্যে শুধু অস্বাভাবিক নয় ডাকাতিও বটে। বেড ভাড়া ৩০০০-৫০০০ হাজার হলে দু রাতে খরচ পড়ে সর্বোচ্চ দশ হাজার। সবকিছু মিলিয়ে খরচ পড়ার কথা ৩০-৩৫ হাজার টাকা কিন্তু সেটি ৬০ হাজারে গিয়ে ঠেকে। একাউন্ট ম্যানেজার আমার বন্ধু মানুষ ছিলেন, তার কাছ থেকেই দেখলাম কিভাবে মানুষের গলায় চুরি বসিয়ে টাকা আদায় করা হয়। অপারেশানের প্রতিটি জিনিসপত্রের যেমন সিজার, চিমটা, ফরসেপ, কাটার, তুলা, স্যালাইন, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে খুঁটিনাটি প্রত্যেকটি জিনিসের নতুন দাম ধরা হয়, সেটিও প্রায় দ্বিগুন-তিনগুন। অথচ এদের অনেকগুলো স্টেরেলাইজেশান করে পুনরায় ব্যবহার করা হয়। এমন খুঁটিনাটি বিলগুলো না ধরলে খরচ ১০-১৫ হাজার টাকা কমে আসে। একটু আন্তরিক হলে এই চার্জ-সেই চার্জ না ধরলে সেই বিল কোনভাবেই ত্রিশের ঘর পেরোয় না। কিন্তু আন্তরিকতা কে চুরিতে কেটে কুচিকুচি করেই তবে হাসপাতালে মানবতার ব্যবসা করতে বসেছে এরা শুরু থেকে।

হাসপাতালে প্রতিটি বিলের কাগজ হয় দুটো, ক্ষেত্র বিশেষে তিনটে। একটাতে কম করে বিল দেখানো হয় আরেকটাতে বেশি। কমটা থাকে মালিক পক্ষের জন্যে, আর বেশিটা আমজনতার জন্যে। এই কম দেওয়া বিলটার কথা হর্তাকর্তার ও জানে। মাস শেষে শুধু তাদের জন্যে নিদিষ্ট একটা এমাউন্ট ব্যাংকে পাঠিয়ে দিলে যে যার মতো চলতে থাক আপত্তি নেই তাতে। আর এভাবেই যখন অবৈধতা বৈধ হয়ে যায়, তখন কমবেশি সবার’ই অসৎ হতে বাধা কোথায় থাকে? ফলে পাঁচ-সাত হাজার টাকার স্টাফরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে ২০-২৫ টাকার ফ্ল্যাটে। এগুলো কোনটাই কারো কাছে বিস্ময়কর কোন ঘটনা নয়।

হাসপাতালগুলোতে সাধারণত অনেকের শেয়ার থাকে, যারা সরাসরি এর ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত নয় (প্রবাসী বাঙালিরা বিশেষ করে) তারা জানতে ও পারে না কি পরিমান জোচ্চুরি এখানে চলে। যে হাসপাতালে ছিলাম সেখানকার এমডি আর ডাইরেক্টর দুজনের সাথেই সম্পর্ক বেশ ভালো ছিলো, জানতাম তারা তাদের গ্রামের বাড়ীতে দাতব্য চিকিৎসালয় দিয়েছে, বছর বছর গরু জবাই করে হাজার হাজার মানুষ খাওয়াচ্ছে আর দিনে দিনে মহান সমাজ সেবক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে চলেছে। আমি জানি প্রতিটি গ্রামে দু-একজন করে এমন সমাজ সেবক আছে বাংলাদেশে। যারা তার প্রতিষ্ঠানের ঝাড়ুদার, নার্স, বুয়া-আয়া, ডাক্তার আর বিভন্ন বিভাগে চাকরি করা ছা-পোষা মানুষগুলো কে বছরের পর বছর একই বেতনে আটকে রেখে কিংবা নগন্য পরিমান টাকা বাড়িয়ে গ্রামে গিয়ে হাজী মুহাম্মদ মহসীন সাজে।

(২)

দ্বিতীয় অভিজ্ঞতা আরো ভয়াবহ। ফার্মাসিউটিক্যালস তথা ঔষুধ শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভবনাময় শিল্পের একটি। পত্রিকায় সবাই পড়ি হাজার হাজার কোটি টাকার ঔষুধ বাহিরে যাচ্ছে, বিদেশী আয় হচ্ছে। আপনি ভাবতেই পারেন দেশ বুঝি এগিয়ে যাচ্ছে তরতর করে। হ্যাঁ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু অসৎ মানুষেদের কারখানায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার ফলে যে হারে আগানোর কথা সে হারে হচ্ছে না শুধু এই যা। অথচ মানুষগুলো সৎ আর সর্বক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলে সত্যি কয়েক বছরের মাঝেই বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর-মালেশিয়া হয়ে যেত পারতো। একটা দেশ আসলে কতটা উন্নতি করবে তার অনেকটাই নির্ভর করে তার দেশীয় আয়ের উপর। সংসারে যেমন আয় বেশি হলে উন্নতি বেশি হয় রাষ্ট্রে ও তার ব্যাতিক্রম নয়। আর রাষ্ট্রের আয়ের মূল ক্ষেত্রটি হলো ’কর’। কিন্তু বাংলাদেশে আমরা সবাই কর ফাঁকি দিতে পারলেই বিশ্বজয়ের হাসি দিয়ে থাকি আর কর ফাঁকি দিয়েই বলি এই রাষ্ট্র আমাকে কি দিচ্ছে? উঁচু তলা থেকে নিচু তলা সর্বত্রই এই কর ফাঁকির উৎসব চলে।

ঔষুধের মান এবং ভবিষ্যত নিয়ে সচলে দুটো লেখা অনেকদিন আগে লিখেছিলাম। আজ ঔষুধের ’কর’ ফাঁকি নিয়ে কিঞ্চিৎ আলোচনা করি। কিভাবে ঔষুধ কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দেয়? যে কোন একটি ঔষুধ উৎপাদনের বিস্তারিত তথ্যের জন্যে দুটো মূল দলিল থাকে। তবে কোটেট ট্যাবলেটের (মূল ট্যাবলেটের উপর প্রলেপ দেওয়া হলে তাকে কোটেট ট্যাবলেট বলে) ক্ষেত্রে তিনটি দলিল হয়ে থাকে। এই দলিলগুলো তে শরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত কার্যক্রমের ধারাবাহিক বিবরণ এবং কাঁচামালের হিসেব দেওয়া থাকে। এগুলোর নাম হলো BMR-BCR-BPR (Batch Manufacturing record, Batch Coating record, Batch Packaging record)। এছাড়া ঔষুধ প্রতিষ্ঠান থেকে ঔষুধ বাজারে যাওয়ার আগে রিলিজ নোট নামক আরেকটি দলিল থাকে, যেখানে নিদিষ্ট ব্যাচে বাজারে কি পরিমান ঔষুধ ছাড়া হচ্ছে তার পরিমান উল্লেখ থাকে। এমন না যে এগুলোর একটিতে ভুল তথ্য দেওয়া যায়, কারণ ভুল তথ্য দিলে ঔষুধ মান নিয়ন্ত্রন পরীক্ষায় সবগুলো আটকে যাবে। এছাড়া প্রতিটি ঔষুধের BMR-BCR-BPR এর সাথে আরো অসংখ্য দলিল যুক্ত হয়। কাঁচামালের সার্টিফিকেট, ব্যবহারের পরিমান, মান নিয়ন্ত্রনকারী বিভাগের (QC) মান নিয়ন্ত্রন পরীক্ষার দলিল সহ সবগুলো সহায়ক বিভাগের দলিল পত্র। এই দলিল ছাড়াও প্রতিটি যন্ত্রপাতির লগবুক থাকে, কোনদিন কি ঔষুধের জন্যে সেটি ব্যবহার করা হলো, কি কি পরীক্ষা করা হলো সবগুলোই সেখানে লিপিবদ্ধ থাকে। ফলে সেখানে চুরি করা সম্ভব নয়।

এতটুকু জেনে আপনি যদি আশাবাদী হন তাহলে বলি বাঙালির দুই নাম্বারি বুদ্ধি নিয়ে আপনার ধারণা এখনো নিচের দিকে। দুই নাম্বারি বুদ্ধি বাঙালির কোন কালে অভাব ছিলো না, আজও নেই। সেই দুই নাম্বারি বুদ্ধির সর্বোচ্চ প্রয়োগ টা এখানে হয়ে থাকে। ধরা যাক একটি ঔষুধ প্রকৃতপক্ষে উৎপদান হয়েছে ১০ লাখ পরিমান অর্থাৎ ব্যাচ সাইজ ১০ লাখ। সেই দশ লাখের দাম হিসেবে ১৫% ’কর’ নির্ধারণ হওয়ার কথা। কিন্তু এখন শুধু মাত্র কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যে ঔষুধের সংখ্যা কে কাগজে কলমে নামিয়ে আনা হয় একলাখে! আর এই কাগজে কলমে নামিয়ে আনতে প্রতিটি BMR-BCR-BPR র সহ প্রতিটি দলিল নতুন করে তৈরি করা হয়। এ বিশাল কর্মযজ্ঞ, কিন্তু কোটি টাকা যেখানে বাঁচানো সম্ভব সেখানে এমন কর্মে সময় ব্যায় করতে সমস্যা কোথায়? নুতন করে তৈরি করা মিথ্যে দলিলে সব কিছুর পরিমান কম করে দেওয়া হয়, প্রতিটি লগবুকের আরেকটা কপির উদ্ভব হয়। অর্থাৎ সেই হাসপাতারের মতো এখানেও সর্বক্ষেত্রে দুটো ডকুমেন্ট তৈরি হয়।

আপনি যখন জানবেন ঔষুধের সর্বোচ্চ মান রক্ষার্থে বেশিভাগ কাঁচামাল এলসি করে নিয়ে আসতে হয় বিদেশ থেকে আর এলসি যেহেতু করা হয় ব্যাংকের মাধ্যমে ফলে সেখানে কর ফাঁকি দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। তখন প্রশ্ন আসবে কিভাবে তাহলে কর ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়? উত্তর হচ্ছে আসলে ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কম উৎপাদন দেখিয়ে বিদেশ থেকে নিয়ে আসা কাঁচামাল কে অব্যবহৃত দেখায় আর সেই জায়গায় দেশীর বাজার (মিটফোর্ড) থেকে ক্রয় করা কাঁচামাল দিয়ে নিয়ে ঔষুধ উৎপাদন করে দেশীয় বাজারে ছেড়ে দেয়। ফলে একবার এলসি করা কাঁচামাল দিয়ে তিনগুন-চারগুন বেশি উৎপাদন দেখানো সম্ভব। আর এভাবেই নানান ফাঁক ফোঁকর দিয়ে তৈরি করা হয় অসততার মহা ইন্দ্রজাল, ফাঁকি দেওয়া হয় কোটি কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় কর।

আপনি ভাবছেন কর কর্মকর্তারা (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) এই জোচ্চুরির খবর জানে না, বুঝে না? তারা ঠিকি জানে, ঠিকি বুঝে। শুধু মাত্র তাদের চাওয়া মাফিক পাওনা চুক্তিটা পূরণ করলে এগুলো কিছুই আটকায় না। তারপরও কেন এই দুই নাম্বারি কাজের দলিল করা হয়? উত্তর: সাবধানের মাইর নাই।

যদি বাংলাদেশে একটা ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান দেখালো মাসে দুই কোটি টাকার ঔষুধ উৎপাদন করে এবং দেশীয় বাজারে তা বিক্রি করে। আসলে সেটি কখনো দুই কোটি টাকা নয়, সেটি হয় তার চেয়ে দ্বিগুন থেকে তিনগুন বেশি। বাংলাদেশের বাজারে যদি মাসে ১০০ কোটি টাকার ঔষুধ বিক্রি দেখানো হয় তাহলে সত্যিকার অর্থে সেটি হয়েছে দুশো কোটি টাকার উপরে। শুধু কি এখানে ফাঁকি চলে? কর ফাঁকি দেওয়ার জন্যে যে বড় বড় হর্তাকর্তা রা মাসে চার-পাঁচ লাখ টাকা বেতন তুলে তাদের বেতনের বেসিক ধরা হয় মূল বেতনের চারভাগের একভাগ! ফলে তার বাৎসরিক করের পরিমান হ্রাস পাচ্ছে! এভাবে মালিক আর বড় কর্মকর্তারা একে অপরের সহায়ক পরিপূরক হয়ে সরকারকে ফাঁকি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তরতর করে। আর এই চোর-রাই নানান আলোচনা অনুষ্ঠানে আলোচক হয়ে দেশটা গোল্লায় গেলো বলে লোক দেখানো হতাশা প্রকাশ করে।

কেন এত অসততা ছোট এই ভূ-খন্ডে?

মনে প্রশ্ন আসতে পারে এই ছাপান্নো হাজার বর্গমাইলের মানুষগুলো এত অসৎ হয়ে উঠেছে কেন দিনে দিনে? উত্তরটি কঠিন কিছু নয়। আইনের শাসনের অভাব আর নৈতিক শিক্ষার অবক্ষয়। তবে প্রথমট-ই মূলত দায়ী বেশি। তাজউদ্দিনের করা সেই উক্তিটার কথাই ধরুন না, সেখানে যে নেতা দুর্নীতির বিপক্ষে কথা বলে নিজেই সুপারিশ করছেন দুর্নীতির পক্ষে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্যালেন্ডারের পাতায় কেটে গেছে অনেকগুলো বছর, পদ্মা-মেঘনা-যমুনায় গড়িয়েছে অনেক জল কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবুর রহমান আর তাজউদ্দীনের সময়কার সে রীতি এখনো এতটুকু বদলায় নি। এখনো এদেশের রাজনীতি নেতাদের থেকে শুরু করে শক্তিমানদের দুটো মুখোশ, দুটো চরিত্র।

এ দেশে খুন করে আপনি বুক ফুলিয়ে চলতে পারবেন প্রকাশ্য দিবালোকে, চাঁদাবাজি করে আপনি থাকবেন কোটি টাকার ঘরে আরাম আয়েশে, সন্ত্রাসী-দখল দারিত্ব কায়েম করলে আপনার জায়গা হবে না শ্রী ঘরে, বরং আপনি বছর বছর প্রমোদ ভ্রমনে যেতে পারবেন ইউরোপ-আমেরিকাতে। বোমাবাজি, রাহজানি করে আপনি ঘৃনিত হবে না এখানকার কোন সমাজে, বরং আপনিই বেশি সম্মানিত হবেন ঘরে-বাইরে। এগুলো সবি সম্ভব হবে যদি আপনার দলীয় একটা পদ থাকে। পদ না থাকলেও সমস্যা নেই পদের মানুষটির সাথে সম্পর্ক (আত্নিক কিংবা আর্থিক) থাকলেই চলবে। এই দেশে শুধু মাত্র গরীব, নিরীহ অসহায় মানুষগুলো বাদে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর হয়ে যাবে যে, যার সাথে এমন মানুষের কোন না কোন সম্পর্ক নেই। এই পদওয়ালা মানুষগুলোই তার উপরের পদের সাথে যোগাযোগ (আর্থিক) করে সকল মুশকিল আহসান করে। আর এভাবেই অসততার চর্চা দিন দিন জনপ্রিয় হতে থাকে। যার কেউ (সম্পর্ক-অর্থ) নেই তাকে দিন কাটাতে হয় দরিদ্রতার সাথে লড়াই করে কিংবা সুযোগের অভাবে সৎ থাকার দীর্ঘশ্বাস ভরা কষ্ট নিয়ে।

অথচ যদি সঠিক আইনের শাসন থাকতো তাহলে চারিদিকে এত অসততার কারখানা গড়ে উঠতে পারতো না। অপরাধ করলে শাস্তি নিশ্চিত হলে দিকে দিকে এত শুয়োরপাল গজিয়ে উঠতো না। একটা কথা মনে রাখা প্রয়োজন নীতিশিক্ষা দিয়ে আমি-আপনি করে বদলে গিয়ে সমাজ-রাষ্ট্রকে শত বছরেও কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছে দেওয়া সম্ভব না, অথচ আইনের শাসন তথা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে দেশ কে তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছাতে শত বছরের এক চর্তুথাংশ সময়ও লাগবে না। বাংলাদেশে সেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই সবচেয়ে জরুরি। আর সেই কাজটি করতে না পারলে কোন নৈতিক কিংবা ধর্মীয় শিক্ষাই বাঙালিকে এই মায়াময় অসততার কারখানা থেকে ফেরাতে পারবে না। বাংলাদেশ দিনে দিনে হয়ে উঠবে অসৎ মানুষের স্বর্গভূমি।


মন্তব্য

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

যদ্দিন রাষ্ট্রীয় আইন বলবে "চুরি-ডাকাতি যাই হোক, সর্বোচ্চ ৩০ ট্যাকা ট্যাক্সো দিলেই বাকি ৭০ টাকার সাতখুন মাপ" তদ্দিন হুদাই "আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা" আশা কইরা লাভ নাই। মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মাসুদ সজীব এর ছবি

হ । আমি আশাবাদী মানুষ না, চারিদিকে যা ঘটে চলেছে তাতে আশার কিছু দেখিনা। রেগে টং

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

হ,যারেই দেখি, সব হয় অসৎ, না হয় সুযোগের অভাবে সৎ। বঙ্গবন্ধু কইছিল না- ‘আমি পাইছি চোরের খনি’- এটাই দস্তুর। যে নিতান্ত সৎ (বাধ্য হয়েই), সে এটা ঢাকতে নিজের নানা কল্পিত চাতুর্যের গল্প করে। যে ধূর্ততা সে কখনো হয়তো করেনি, তাও সে রসিয়ে রসিয়ে বলে- নাইলেতো মান থাকবে না। অসততার গল্প করে না- তবে যা করে তাতে বোঝা যায় এখানে সৎ হয়ে থাকাটা বোধ হয় লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবেন, মাথা বরাবর লাঠি মেরে বসবে। ‘মদ খাওয়া বড় দায়, জাত রাখি কী উপায়’ এই দশা আর কি।

একটু কি রেগে আছেন নাকি?

স্বয়ম

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যাবাদ। রেগে নেই, তবে হতাশা আছে। যা বলেছি, যা দেখেছি তাই লিখেছি। কষ্ট শুধু চারিদিকে নষ্টভ্রষ্টদের জয়জয়কার দেখছি, আর নিজের জন্মভূমিকে তলিয়ে যেতে দেখছি মৌলবাদ আর ভন্ড সাধুদের হাতে হাত রেখে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মন মাঝি এর ছবি

চলুক মন খারাপ

আপনার লেখাটা পড়তে পড়তে ইটালো কালভিনোর এই গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল। গল্পে আর বাস্তবে কি আশ্চর্য মিল!

মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের বাস্তবতা ফিকশনের চেয়েও বেশি ফিক্‌টিশাস আসলে। এরকম বাস্তবতা সম্ভব নাকি আদৌ! কে জানে, আমরা হয়তো পেট ভরে মশল্লাদার খাবারের ডিনার খেয়ে ঘুমুতে যাওয়া অন্য দুনিয়ার কোন বিকট স্যাডিস্টিক ডিজর্ডারে ভোগা ইবলিশ শয়তানের মস্তিষ্কের নিউরনজাত ততোধিক স্যাডিস্টিক শয়তানি সুখস্বপ্নের একটা অংশমাত্র। ব্যাটা ঘুম থেকে উঠলেই আমাদের নিজেদের কাছে প্রতীয়মান এই অসম্ভব বাস্তবতাটা শুন্যে মিলিয়ে যাবে। এরকম একটা অতিজাগতিক স্যাডিস্টিক শয়তানের অশ্লীল সুখস্বপ্নের ভয়ঙ্কর কল্পজগত ছাড়া আর কোথায় এমন অসম্ভব ছ্যাঁচড়া, নীচ, ইতর আর নিকৃষ্ট জীবদের পক্ষে জন্মানো সম্ভব?

****************************************

মেঘলা মানুষ এর ছবি

সেই গল্পটা আসলেই চমৎকার ছিল!

মাসুদ সজীব এর ছবি

আপনার অনুবাদ করো এই গল্পটি আমার খুব প্রিয় আর আক্ষরিক অর্থেই বাংলাদেশের অবস্থায় সাথে মিলে যায় এটি। শুভেচ্ছা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মেঘের কান্না  এর ছবি

আজকে আমাদের দেশে যে শিশুটি বড় হচ্ছে তার আশপাশটা দেখলেই তো বুকটা মুচড়ে উঠে। তার সামনে যারা আদর্শ তারা সবাই কম বেশি অসৎ এর ডিপো। এই শিশুটি যখন বড় হবে তারও অসৎ হওয়ার সম্ভাবনা পুরোপুরিই শতভাগ। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এই লেখাটি লিখার জন্য, আমরা সবসময় আমাদের নেতাদের দিকেই আঙ্গুল তুলি। এই কথাটা ভুললে চলবে না যে নেতা কিন্তু আকাশ থেকে উদয় হয়না।

মাসুদ সজীব এর ছবি

সেটাই, যে দেশের জনগন যেমন সে দেশের নেতাও তেমন হয়। শুভেচ্ছা জানবেন হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

স্বপ্নহারা এর ছবি

কিছুদিন আগে এই সিরিজটি দেখছিলাম।

লেখায় পাঁচতারা। অনেক কিছু তুলে এনেছেন। চলুক

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়নামতি এর ছবি

চলুক মন খারাপ

মাসুদ সজীব এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- মন খারাপ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

চাকরি করার সময় আমার ব‌হুজাতিক কম্পানিটি ‌ঠিকঠাক ট্যাক্স কেটে রাখত, এন্ট্রি লেভেলে থেকেও বছরে পুরো আয়ের নির্ধারিত (১০% ?) অংশ চলে যেত। অথচ, আমারই পরিচিত ব্যবসায়ী আমার আয়ের প্রায় শ'খানেকগুণ আয় করেও আমার কয়েকভাগের একভাগ ট্যাক্স দিতেন।

আমরা স্বাভাবিকভাবেই অসৎ, কিভাবে দেশটা চলছে সেটা এক বিস্ময়ই বটে।
মন খারাপ

মাসুদ সজীব এর ছবি

গরীবদের পরিশ্রমে আর বিদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্সে সচল অর্থনৈতিক চাকা এই দেশের, অথচ এর চেয়ে অনেক বেশি ভালো করা সম্ভব ছিলো মন খারাপ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ধুসর জলছবি এর ছবি

দারুণ লেখা। চলুক ডাক্তার হওয়ার সুবাদে হাসপাতালের এইসব দুর্নীতির সাথে আমিও পরিচিত। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে আপনি যদি নিয়ম মানতে চান, বাড়তি সুবিধা নিতে না চান, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকেন তাহলেই মানুষ আপনাকে এলিয়েন ভাববে।

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যবাদ। সৎ থাকতে চাওয়ার বিপদ বেশি, শত্রু বাড়ে।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মাসরুফ হোসেন এর ছবি

যদিও শুধুমাত্র চিকিৎসা সেক্টরের কথা বলেছেন, আমি বাজি লেগে বলতে পারি আপনার এই পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টরের জন্যে সত্য। "গুটিকয়েক মানুষের জন্যে সবার বদনাম হচ্ছে" এটা একটা ফালতু এবং পিঠ বাঁচানো কথা যার কোন ভিত্তি নেই ( স্বীকার করছি, এই পিঠ বাঁচানো কথাটি আমি নিজেও বলে থাকি মাঝে মাঝে)। পেশাগত কারণে খুব কাছ থেকে এই জিনিসগুলো দেখেছি, আমাদের সমাজের ভদ্র চেহারার আড়ালে যে শ্বাপদসংকুল রূপ বিদ্যমান, তার সাথে পরিচিত হয়ে শিউরে উঠেছি বারবার। এই লেখাটির জন্যে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি, আমার ইচ্ছে থাকলেও এরকম কিছু লেখা নানা সীমাবদ্ধতার কারণে লেখা সম্ভব নয়। অনেক অনেক ধন্যবাদ মাসুদ ভাই!

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুম সব সেক্টরেই এই অবস্থা হাসি । পড়ার জন্যে ধন্যবাদ, শুভেচ্ছ হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

দেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাস করতে ভালোবাসে, 'কেবলমাত্র' রাজনীতির কারণে দেশটা রসাতলে গেল। রাজনীতিবিদেরা আম্লীগ-বিম্পি-জামাত মিলেমিশে থাকলেই দেশটা সোনায় সোহাগা হয়ে যাবে। অধিকাংশ মানুষ নিজেদের দিকে আঙ্গুল তুলতে চায় না, নিজের মুখটা আয়নায় দেখার প্রতি আমাদের ভীষণ অনাগ্রহ। সেই সাথে সবাই রাজনীতিবিদ এবং রাঘব বোয়ালদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজের অপরাধের একটা জাস্টিফিকেশান তৈরি করে। আর সার্কেলের অনেক বেশি মানুষ দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকলে বা তার সুবিধাভোগী হলে সবার জন্য এক ধরণের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি হয়। এই সাপোর্ট সিস্টেম মানুষকে যেমন মোরালি নিজেকে আর নিম্নস্তরের কোনোকিছু ভাবায় না, তেমনি এটা একটা কার্যকরী নিরাপত্তা বলয় হিসেবেও কাজ করে।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মাসুদ সজীব এর ছবি

হুম, সাধারণ মানুষের কথা শুনলে মনে হবে সব দোষ রাজনীতিক নেতাদের আর দেশের ১৭ কোটি মানুষ সব সাধু রেগে টং । অথচ সাধারণ মানুষি রাজাকারদের ভোট দেয়, জঙ্গিদের ক্ষমতায় আনে, স্বৈরাচার আর ষড়যন্ত্রকারী দের নেতা-নেত্রী বানায়। এখানকার মানুষের শিক্ষায় সমসা আছে, ধর্ম-কর্মে সমস্যা আছে, সমস্যা আছে চিন্তা-চেতনা আর কর্মে। পারিবারিক সঠিক শিক্ষা আর মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের ইতিহাস না জানলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি নেই সহসা।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

পাঁচটি তারা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

মাসুদ সজীব এর ছবি

ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

অতিথি লেখক এর ছবি

তুমি এই সেক্টরটার সাথে যুক্ত বলে জানতে পারছো আর বাদ বাকী গুলো? এবার আমি বলি?
শোন, বেপজার কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্ট এর একজন ম্যানেজারের বেতন ছিল ৫০০০০ টাকা ।উনার সন্তান হচ্ছে না তাই টেষ্ট টিউবের মাধ্যমে সন্তান গ্রহন করলো লন্ডনে গিয়ে আর এক ধাক্কায় খরচ হলো ৮০০০০০০ টাকা , এবার বোঝ!আমি কি বোঝাতে চাই। আমি যেহেতু একটা কোম্পানীর কমার্শিয়াল সেকশান এ কাজ করি তাই , ব্যাংক , কাস্টমস ও অন্যান্য সরকারী সেকটর গুলো কি পরিমান ধুয়া তুলসীপাতা তা বুঝতে পারি
-----------------
রাধাকান্ত

মাসুদ সজীব এর ছবি

এমন অসততার চিত্রগুলো তুলে ধরো, জানুক মানুষ কোথায় কোথায় কত বড় পীরেরা এই দেশে বাস করে?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।