অনেকেই বলছে কিংবা অনেকেই মনে করে দেশের ৮০ ভাগ মানুষ চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার বিষয়ে নীরব কিংবা সেটা কে সমর্থন করে। এবং এই ৮০ ভাগ মানুষের বিপক্ষে গেলে আওয়ামী লীগ ভোটের রাজনীতি তে নিশ্চিত পরাজিত হবে। ঠিক এ কারনে আওয়ামী লীগ এখন তাদের আদর্শ আর নীতি থেকে দূরে সরে এসেছ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন মতের সাথে প্রচন্ডভাবে দ্বিমত পোষন করি। ৮০ ভাগ মানুষ এমন ঘটনায় সমর্থন করলেও এই ৮০ ভাগের সব মানুষ কিন্তু বিএনপি-জামাতের ভোট না। অর্থাৎ এখানে আওয়ামী মনা ভোটার ও আছে। ছোট্ট একটা উদাহারণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে, যেমন অনলাইনে সিপি গ্যাং। এরা অন্য সবার মতো চাপাতি দিয়ে কোপানো কে সমর্থন করে কিংবা দুপক্ষ সমান দোষীতে বিশ্বাস করলেও এরা কিন্তু আওয়ামী ভোটার। আওয়ামী লীগ যা করবে এরা তাতেই সমর্থন দিবে অর্থাৎ এরা অন্ধ লীগার। যে কোন উপায়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক এটাই তাদের শেষ কথা। হেফাজতের সাথে জোট করলে ও তারা নানান যুক্তি দিয়ে এটি কে যেমন সহি করে নিবে তেমনি হেফাজতকে দূরে সরিয়ে রাখলেও তারা নানান যুক্তি দিয়ে তাদের রাজাকারপন্থি মৌলবাদী দল বানিয়ে ছাড়বে। অনলাইনের বাহিরে বাস্তব জীবনে ও অন্ধ আওয়ামী মনারা এরকম।
ভোটের রাজনীতি কিংবা ক্ষমতার রাজনীতিক আলোচনায় একটা বিষয় সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান রাখা অাবশ্যক। সেই আবশ্যক জ্ঞান হলো স্থায়ী ভোটার সংখ্যা কোন দলের কেমন। আমরা জানি বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দু পক্ষের-ই স্থায়ী ভোটার আছে। এই স্থায়ী ভোটার-রা কোন অবস্থাতেই তাদের দলের প্রতি সমর্থন বদলায় না। যদি % হিসেব করি তবে সেটিতে দুই দলেরি কমবেশি ৩০% স্থায়ী ভোটার আছে। ৯১র নির্বাচনে বিএনপি ৩০.৮ % এবং আওয়ামী লীগ ৩০.১ শতাংশ ভোট পায়। ৯৬র নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩৭.৪ % এবং বিএনপি ৩৩.৬ % ভোট পায়। ২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি ৪১.৪০ % ভোট এবং আওয়ামী লীগ ৪০.০২ % ভোট পায়। অর্থাৎ তিনটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ-বিএনপির ভোটের পার্থক্য ছিলো নগন্য। কিন্তু ২০০৮ সালে এসে দেখা যায় এই পার্থক্য টা অনেক বেড়েছে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৯.০% ভোট পায় এবং বিএনপি পায় ৩৩.২ % ভোট। ভোটের হিসেবে এতদিন যে পার্থক্য ছিলো ১-৩% এর ভেতর ২০০৮ নির্বাচনে গিয়ে সেটি দাঁড়ালো ১৫.৮%! এই বিস্মিয়কর পার্থক্য ১৫.৮% হয়েছিলো নতুন প্রজন্মের ভোটারদের জন্য। যে নতুন প্রজন্ম রাজাকারদের বিচারের কথা বলেছিলো, ধর্মান্ধ আর মৌলবাদে ভরা জঙ্গি রাষ্ট্র নয় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চেয়েছিলো। তাদের ভোটেই আওয়ামী লীগ এমন অভাবনীয় ভোট আর জয় পেয়েছিলো।
এখন প্রশ্ন হলো ৯১ থেকে বাংলাদেশে কি ধর্মান্ধ মানুষের সংখ্যা, জামায়তের ভোটের সংখ্যা কি বেড়েছে? উত্তর হলো, না, বাংলাদেশে এদের ভোটার বাড়েনি। ৯১-৯৬-২০০১-২০০৮ চারটি নির্বাচনে জামায়েতের ভোট ছিলো ১২.১%- ৮.৬ %- ৪.২৮- ৪.৬ %। অর্থাৎ দিন দিন জামাতের ভোট কমেছে। অন্যদিকে হেফাজত নুতন করে বাংলাদেশের রাজনীতি তে আবির্ভাব হলেও হেফাজতের যত ভোটার অর্থাৎ যারা কওমী মাদ্রাসা সহ নানান মাদ্রাসায় পড়েছে এবং পড়ছ তারা কোন দিন আওয়ামী লীগের ভোটার ছিলো না এখনো নেই। নতুন প্রজন্ম যারা রাজাকারের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলো, যারা রাষ্ট্রে সকল ধর্মের মানুষের সমান অধিকার চেয়েছিলো, পাহাড়ে মিনি সেনাশাসনের অবসান চেয়েছিলো, ধর্মান্ধ-মৌলবাদী-জঙ্গি রাষ্ট্রের বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র চেয়েছিলো তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী মনা ছিলো। আর ২০১৫ থেকে এই আওয়ামী মনাদের পক্ষে না গিয়ে আওয়ামী লীগ পক্ষ নিয়েছে হেফাজতে ইসলামের! কেন?
ভোটের হিসেবে? মোটেও না। আওয়ামী লীগ খুব ভালো করে জানে হেফাজত দশলক্ষ-পনের লক্ষ লোক নিয়ে যত বড় শোডাউন করুক না কেন তাদের ভোট সংখ্যা বাংলাদেশের মোট ভোটের সংখ্যায় ৫% ও হবে না। এবং এরা কোনদিন আওয়ামী লীগ কে ভোট ও দিবে না। ৯১ থেকে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মুসলমান বিদ্বেষী ট্যাগ ছিলো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মসজিদে আযান দেওয়া যাবে না, দেশের অর্ধেক ভারতের দখলে চলে যাবে এমন অসংখ্য প্রোপাগান্ডার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচন হয়েছে এবং সে প্রোপাগান্ডাকে মিথ্যে প্রমাণ করে বাংলাদেশের মুক্তমনা মানুষেরা আওয়ামী লীগ কে ভোট দিয়ে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। সেই অন্ধকার সময়ে এমন ভয়ংকর সব প্রোপাগান্ডা কে ভয় না পেলে এখন নাস্তিকে ট্যাগ খাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ কি ভোটের ভয় পাচ্ছে? না, আওয়ামী লীগ নাস্তিকের ট্যাগ খাওয়া কে ভয় পাচ্ছে না। নাস্তিকের ট্যাগ খাওয়া কে ভয় পেলে আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনা স্ব-ঘোষিত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ কে কোপানের পরে দেড় কিলোমিটার পাঁয়ে হেঁটে দেখতে যেতেন না! রাজীব হায়দার কে দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ বলতেন না!
নাস্তিক ট্যাগ নয়, আওয়ামী লীগের ভয় হলো রাজনৈতিক মাঠ অশান্ত হয়ে যাওয়া। যে অশান্তি হলে সবকিছু তাদের নিয়ন্ত্রনে না ও থাকতে পারে এবং সেই সুযোগে তৃতীয় কোন শক্তি তাদের কে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে দিতে পারে! বর্তমান বিএনপি-জামাতের যে অবস্থা তাতে তাদের পক্ষে রাজপথে কোন আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ সরকার কে বেকায়দায় ফেলা সম্ভব না হলেও তৃতীয় কোন শক্তির উত্থান হলে তারাই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে এটা আওয়ামী লীগ খুব ভালো করে জানে। এই তৃতীয় শক্তির অন্যতম যোগানদাতা হতে পারে হেফাজতে ইসলাম। বর্তমান সরকার কে যা একটু বেকায়দায় ফেলতে পারে সেটি এই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নামের সংগঠনটি। কারণ হেফাজত মোটামুটি একটি নিদিষ্ট স্থানের হলেও এরা সংগঠিত শক্তি। তাই তাদের শান্ত রাখাই ক্ষমতা দীর্ঘায়নে আওয়ামী লীগের বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের সাথে ভোটের কোন সম্পর্ক নেই। হেফাজতের সাথে নমনীয়তা, হেফাজতের সাথে উদারতা এসবি ক্ষমতাকে নিরিবিচ্ছিন্ন নিরাপদ রাখার কৌশল মাত্র। এই কৌশল দিয়ে হয়তো কিছুকাল অাওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকা হবে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলে এতে আওয়ামী লীগের পতন ঘটবে। সেই পতন শুরু হবে আওয়ামী লীগের মতো দলে ধর্মান্ধ মানুষের অনুপ্রবেশ, রাজাকারদের বংশধরদের মিলমিশ এবং সর্বোপরি মুক্তমনা মানুষগুলোর আস্থা হারানোর মধ্য দিয়ে। যা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের পতন মানে অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভবিষ্যত অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া, সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলোর উত্থান হওয়া, ঘরে ঘরে ধর্মান্ধতার চাষাবাদ শুরু হওয়া আর মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার মাধ্যমে বাংলাদেশ কে আরেকটা পাকিস্তানের দিকে নিয়ে যাওয়া।
মন্তব্য
সত্যিই
ছায়াবৃত্ত
প্রথম অংশটার ব্যাপারে ঠিক আশাবাদী নই, দ্বিতীয় পয়েন্ট ঠিকাছে!
পুনশ্চঃ আপনি আবার ঘুনপোকানুভূতিতে আঘাত দিচ্ছেন? হুমম?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
ধর্ম কেন্দ্রিক ভোটের রাজনীতিতে কেউ জান্নাত এর টিকিট দিচ্ছে,কেউ হেফাজত পুষছে।। তনুপ
আপনার পর্যবেক্ষণ ভালো। আমার মনে হয় আপনি যা বললেন সেদিকেই চলেছে দেশ।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
নতুন মন্তব্য করুন