শুরু হলো বিচারবিভাগ নিয়ে নতুন ডাং-গুলি খেলা। মানুষ যাবেটা কোথায়? এতোদিন হাইকোর্ট যতোগুলো রায় দিয়েছে সবগুলোই গিয়ে সুপ্রীম কোর্টে হয় স্থগিত, নয় বাতিল হয়েছে। তাহলে তো হাই কোর্টের আর কোনও প্রয়োজন নেই, তাই না?
ঘটা করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক করা হলো, কিন্তু তার ফল কতোটা জনস্বার্থে হলো আর কতোটা ক্ষমতাসীনদের, তা নিয়ে আলোচনায় খুব বেশি লাভ নেই। নইলে, প্রধান বিচারপতি কেমন করে কোনও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই আরেক বিচারপতির রিট ক্ষমতা কেড়ে নিতে? সুষ্ঠু আইনী প্রক্রিয়ায় যাকে থামানো যাবে না, তাকে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ দিয়ে এভাবে বিচার-প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার এখতিয়ারও কি প্রধান বিচারপতির আছে কি না তা কে বলবে? সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রধান বিচারপতি কার নির্দেশে কাজটি করলেন, তাও আমাদের জানতে হবে? আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে, রাষ্ট্রীয় এসব প্রতিষ্ঠানকে আর কতো নিম্নস্তরে নিয়ে যাওয়া হবে? আর কোথায়ইবা এর শেষ?
আমরা দেখেছি, সাম্প্রতিক অতীতে রাষ্ট্র-কাঠামোর প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভয়াবহ ভাবে ভেঙে-চুরে তছ্নছ্ করা হয়েছে। বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বত্রই একের পর অবৈধ হস্তক্ষেপের ফলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে ঘূণ ধরেছিল তার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছিলাম, দুর্বিসহ রাজনৈতিক অস্থিরতা, আঘাত-প্রতি আঘাত এবং এর ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে জলপাই রঙের মাথা-গলানো এবং টুপি-ব্যবসায়ীদের উত্থান ও উল্লম্ফণ।
একদিকে রাষ্ট্র-কাঠামোয় কোরানিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য একটি পক্ষ উঠে-পড়ে লেগেছে, যদিও তা ব্যক্তি বা কোটারি স্বার্থেই। নইলে, সমাজের অবহেলিত অংশ নারীকে যখন রাষ্ট্র সামান্য কিছু দিতে চাইছে, তখন কোরআনের ধূয়া তুলে সেই সামান্য-টুকু টেনে নিজের ভাগে নেওয়ার জন্য চলছে ছুঁচোর লড়াই। যেনো বাংলাদেশের আইনের সবকিছুই কোরানকে মেনে করা হয়েছে, যেনো এতে ব্রিটিশ আইনের কোনও ছোঁয়া নেই, ছায়া নেই। আমার মনে হয়, এই যে শুরু হলো কোরানিক আইনের ধূয়া, এটা চলতেই থাকবে। ধর্মের দোর্রা দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখার শুরু, এবং এর শেষ মধ্যযুগের মোল্লাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায়। সেসব দিনের কথা ভাবলে শরীর শিউরে ওঠে।
আমার খুব আশ্চর্য লাগে, এই যে যারা আজকে কোরানোর অজুহাত দিয়ে মহিলাদেরকে তাদের ন্যয্য অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাইছে তাদের দলে কি নারী-কর্মীরা নেই? তারা কোথায়? তারা কি তাদের কথা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে রেখেছেন, সুদে-আসলে বাড়ার জন্য? নাকি বাবা’র সম্পদ সম্পর্কে তারা নিস্পৃহ? অথবা এমনটাই কি যে, তাদের টুপিওয়লা স্বামীরা তাদেরকে এমন ভাবে রেখেছেন যে, তাদের আর কিছুরই প্রয়োজন নেই? জানি না, কোন্টা সত্য? কারণ ভোটের রাজনীতিতে অংশ নিতে হলে, এসব দলগুলোকে নারী ভোটারদের কাছে যেতেই হবে, আর সেক্ষেত্রে নারীকে এভাবে বঞ্চিত করলে ভোটের প্রশ্নে নারীর সম্মতি আলাদা হতে বাধ্য। তার মানে হচ্ছে, এইসব দাবীদাররা ভোটের রাজনীতি নিয়ে ভাবছে না, নির্বাচন ছাড়াও ক্ষমতায় যাওয়ার যে সকল উপায় আছে, তারা কি তাহলে সেই পথেই ক্ষমতা দখলে আশাবাদী হয়ে উঠছে?
আসলে সময়টা এখন প্রচণ্ডভাবে বিভ্রান্তির এবং অত্যন্ত গুমট। পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনও সুনির্দিষ্ট কিংবা সুচিন্তিত কোনও বিশ্লেষণও কেউ করতে পারছেন না। সবই খুব স্পেকুলিটিভ, কিংবা কেমন যেনো দায়সারা গোছের। সরকার এমন ভাবে এগুচ্ছে, যাতে মানুষের দৃষ্টি খুব বেশি হোঁচট না খায়, এতো গোপনীয়তার সঙ্গে দেশ চালানোর নজির বোধ করি আর নেই। এসব নিয়ে ভাবতে বসলে, যাদের দাতেঁ নোখ কাটার অভ্যেস আছে, তারা নির্ঘাত একসময় গোটা আঙুলটিকেই খেয়ে ফেলবেন, টেরও পাবেন না, কখন হাত থেকে একটি আঙুল খসে গেছে!
মন্তব্য
সেটাই...
এসব দলের নারীদের মাথা ব্যথা বা দ্বিমত থাকবে কেন? তাঁরা তো ইহকালের চেয়ে পরকালের প্রাপ্তিতে বিশ্বাস করেই এইসব দলে নাম লিখিয়েছেন (দাড়িওয়ালাদের)! পরকালের বেহেস্তের চেয়ে নিশ্চয় ইহকালের পিতার সম্পত্তিতে তাদের লোভ থাকার কথা নয় বলেই আমার ধারণা, নাহলে তো তাঁরা এই সব দলে নাম-ই লিখাত না !
নন্দিনী
পাকিস্তানী স্টাইলের বাংলাদেশী এডিশন। আপনার নিয়মিত কলাম চাই। ধন্যবাদ।
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
অন্ধকারের উতস হতে উতসারিত আলো
একমত।
নতুন মন্তব্য করুন