জামায়াত তবে সত্যিই এখন ক্ষমতায়!
বাংলাদেশে জামায়াতের আনুষ্ঠানিক ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণ জিয়াউর রহমানের আমলেই। তারপর থেকে জামায়াত ছিল ক্ষমতার পাহাড় আর তাতে হনুমানকুলের ভূমিকা গ্রহণ করেছে কখনও এরশাদ, কখনও বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ এই পাহাড়টাকে কখনও দেখেও দ্যাখেনি, আবার মাঝে মাঝে দেখে দু’একটা হুমকি-ধামকি দিয়েছে, তারপর আবার নিজেদের সেই ক্ষমতার পাহাড়ে ওঠানোর আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ ব্যস্ত রেখেছে। কিন্তু জামায়াতের কোনও কিছুই আসে যায়নি। তারা বেড়েছে, তারা বেড়েছে, তারা বেড়েই চলেছে।
প্রক্সি ক্ষমতা থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রে বেগম জিয়া জামায়াতকে এক টানে পৌঁছে দিলেও জামায়াত কিন্তু বেগম জিয়াকে পুরোপুরি নিঃশেষ করে দিতে সর্বোতভাবে সফল। বিএনপি রাজনীতির ইতিহাস যদি কেউ কখনও লেখেন তাহলে তাকে অবশ্যই একথাটি নির্দ্বিধায় লিখতে হবে যে, বিএনপির কোকুনে জামায়াত প্রতিপালিত হয়েছে মাত্র এবং শেষ পর্যন্ত কোকুন কেটে বেরিয়েও এসেছে, এখন বিএনপির যা পড়ে আছে তাহলো জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত নোংরা ফসিল; জামায়াত যার সকল সারবস্তু শুষে খেয়ে এখন শুধু ছিবড়ে ফেলে রেখেছে। এতে বিএনপি’র কি কোনও দোষ নেই? আছে। তাদের সীমাহীন লোভ, ক্ষমতালিপ্সা, দেশপ্রেমের অভাব, চরম ভোগবাদ এবং সর্বোপরি রাজনীতিকে জিয়াউর রহমানের ভাষায় “রাজনীতিবিদদের জন্য কঠিন” করে তোলাই তাদের কাল। এখন তাই বিএনপি আসলে জামায়াতের বি-টিম নয়, বরং পুরোপুরি লেজুড় হয়ে পড়েছে। আর আমাদের ভয়টা সেখানেই।
এর মানে কিন্তু এই নয় যে, জামায়াতের গণভিত্তি রয়েছে। আপাতঃ একটা সস্তা ধর্মভিত্তিক জনপ্রিয়তা তারা পেতেই পারে, কারণ পেটের ক্ষিদের সামনে ধর্মের মতো আফিম আর কিছুই হতে পারে না। দারিদ্রের সঙ্গে ধর্মের মেলবন্ধন অতীব তীব্র (আবার ধর্ম বিত্তবানদেরও ভড়ং বটে!)ফলে জামায়াত এই জায়গায় কিছুটা আপারহ্যান্ড পেতে পারে। তবে জামায়াতের শক্তির উৎস অন্যখানে। আমরা এতোদিন অনেকেই বিশেষ করে আমাদের সুশীল সমাজের কারিগররা বরাবরই নানা উপহাসের সঙ্গে ড. আবুল বারকাতের “মৌলবাদী অর্থনীতি”কে অস্বীকার করেছেন। বারাকাত নিজেই বলেছিলেন যে, তাকে যখন জামায়াতীরা হুমকি-ধামকি, কাফনের কাপড় পাঠিয়ে ভয় দেখিয়েছে তখন অনেক সুশীলই তাকে চেপে থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু তাতে সত্যটা বদলায়নি।
আমরা দেখেছি হিটলার থেকে শুরু করে, এমনকি স্তালিনের কথাও বলা যেতে পারে, কট্টরপন্থী রাজনীতিতে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলটা গ্রহণ করা হয় সবার আগে। তারপর এর মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের মাথায় প্রথমে অস্ত্রপচার করে। যেমনটি জামায়াত করেছে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের মাথায়। প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয়, সেনা বাহিনী, পুলিশ, বৃহৎ ও গণভিত্তির রাজনৈতিক দল, বিচার ব্যবস্থা, চিকিৎসা ব্যবস্থা, বেসরকারী সাহয্যকারী সংস্থা- সর্বত্র, প্রতিটি গণতান্ত্রিক এবং জনসম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানকে এমনভাবে নিজেদের লোক দিয়ে জামায়াত সাজিয়েছে যে, এখন আর তার নগ্ন প্রকাশ কোনও ভাবে ঢাকার কায়দা নেই। আমরা দেখেছি জামায়াত ইচ্ছে করেই নিয়েছিল সমাজকল্যাণ আর কৃষি মন্ত্রণালয়, এই দুই মন্ত্রণালয়ের সরাসরি যোগ রয়েছে জনগণের সঙ্গে। আর তার নীট ফলাফল কি? প্রায় হাজার খানেক ইসলামি এনজিও’র রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্তি, গ্রামে গ্রামে ইসলামি-ক্লাব, জামায়াত করলে সার-বীজ পাওয়া যেতো নচেৎ নয়। আজ আবার সেই নিজামী জামিনে মুক্ত হলে হাজার হাজার জামায়াতকর্মী শো-ডাউন করে আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মুক্তাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করতে গেলে পুলিশ তাদের জরুরী অবস্থার ধুয়া তুলে বাঁধা দেয়। অবস্থাটা কতোখানি ছঙ্গিন হলে আমাদের এই পর্যায়ে এসে দাঁড়াতে হয়, একবারটি ভাবুন।
এটা কোনও ভাবেই অবিশ্বাস্য নয় যে, বাংলাদেশের ওয়েবপোর্টাল নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিও এখন জামায়াতের দখলে। এক্ষেত্রে তারা সরাসরি না হলেও যে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এখন আসলে কার্যকর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রক তারা যে জামায়াতের দ্বারাই পরিচালিত তা কিন্তু এখন আর প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। ইতোমধ্যেই তার বহু প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পাকিস্তানে এদেরই জাতভাইয়েরা ব্লগিং নিষিদ্ধ করেছে, তবে মজার ব্যাপার হলো, পাকিস্তানে ব্লগিং-এ কোনও রাজনৈতিক বক্তব্যকেই তারা কাটছাট্ করে, কোনও রসালো, পর্নোসাইটকে কিন্তু তারা নিষিদ্ধ করে না। কারণ তারা জানে যে, জনগণের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাকে দিকভ্রান্ত করতে হলে হয় ধর্মকে ছড়াতে হবে নইলে যৌনতার চেয়ে মহৌষধ আর কিছুই নেই। বাংলাদেশেও কি তাই হচ্ছে না?
সচলায়তনের মতো একটি প্ল্যাটফরম, যেখানে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে বাংলা ভাষায় নিজস্ব মতামত তুলে ধরা যায়, যেখানে প্রচণ্ড আবেগভরা প্রেমের কবিতার সঙ্গে তীব্র ও তীক্ষ্ণ ভাষায় রাষ্ট্রযন্ত্রের সমালোচনাও হয়, তবে সচলায়তনে একটি বিষয়ে কিন্তু কোনও প্রকার ছাড় নেই, সেটা কি বলুনতো? জামায়াত ও স্বাধীনতা-বিরোধী জামায়াতচক্রকে সেখানে কোনও ভাবেই প্রবেশের অনুমতিতো দেওয়াই হয় না, সেই সঙ্গে তাদেরকে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যে শব্দের খড়ম দিয়ে পেটানো হয়, নিক্ষেপ করা হয় সুতীব্র ঘৃণা ও একই সঙ্গে পদাঘাত। গাত্রদাহটা এখানেই। জামায়াত কোনও রকম সুযোগ দিতে চায় না বাঙালি-মানসকে, তারা আরেকটি একাত্তর চায় না। জামায়াতের অভিজ্ঞতা আছে পরাজয়ের, জনঘৃণা অর্জনের। শরকি, শাবলের কোপের নীচে পঁচাত্তর পর্যন্ত কম রাজাকারকে পড়তে হয়নি,এমনকি গোলাম আজমকে পর্যন্ত পল্টনে জুতোপেটা হতে হয়েছে। এর চেয়ে বড় পরাজয় আর কি হতে পারে? এটা এমন একটা মত ও পথ যার নায়েবে আমীরকে মানুষ জুতোপেটা করে দিনেদুপুরে। তারা তাই ভোলে না, দেয় না সামান্যতম সুযোগও।
আমরা দেখেছি যে, তারা ভাড়া করে লোক রাখে বাংলা ব্লগগুলিতে জামায়াতের বিরুদ্ধে কিংবা তাদের ঘৃণাভরা ইতিহাস নিয়ে কেউ কিছু লিখলেই সঙ্গে সঙ্গে সেই সব ভাড়াটেরা সমস্বরে চিৎকার করতে থাকে, “ক্যায়া হুয়া, ক্যায়া হুয়া; হুক্কা হুয়া, হুক্কা হুয়া” (দুঃখিত শৃগালকুল, জামায়াতের সঙ্গে তুলনা করে তোমাদের অপমানিত করার জন্য)।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সচলায়তনের ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে। জামায়াতের ভাড়াটে, বেতনভোগী সুবিশাল নেটওয়ার্কের উচ্চ পর্যায়ের ও নেট বিশেষজ্ঞ কেউ তার ওপরেওয়ালার নির্দেশে সচলায়তনের প্রবেশ পথে কাঁটা বিছিয়েছে। অবশ্যই রাষ্ট্রযন্ত্রও এদেরই হাতে, তাই আমাদের করার বিশেষ কিছুই নেই। প্রতিবাদ ছাড়া। দিকে দিকে তাই ধ্বনিত হোক সেই বারতা, আমরা বলতে চাই, আমরা বলবো, এক মুখ বন্ধ হলে, শত মুখ, শত মুখ বন্ধ হলে অযুত-নিযুত মুখে। আমাদের উদ্দেশ্য এক, আমাদের গন্তব্য এক, আমরা যাবোই, পথে জামায়াতি হায়না পড়বে, জামায়াতি সাপ পড়বে, পড়বে জামায়াতী দুর্গন্ধভেদুল, থাকবে জামায়াতি বিষ্ঠাও, সুখের কথা হলো এসব সবই আমাদের পায়ের তলায় থাকে, বড় জোর হাঁটু অবধি উঠতে পারে, আরও মজার কথা হলো, কুকুর কিন্তু হাঁটুর ওপরে কামড়াতে পারে না।
আমি ধরেই নিচ্ছি যে, সচলায়তনকে ব্যান করার সাহস জামায়াতের নেই। তাই বলে তাদের জামায়াতামি (পড়ুন ধূর্তামি) কিন্তু থেমে নেই। রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দখল করে, ইসলামকে শিখণ্ডি দাঁড় করিয়ে তারা করবে নোংরামি।এটা রুখতে হবে। আর তাই আমাদের সহনশীল হওয়া কিংবা থাকার দিন শেষ হয়েছে। রাষ্ট্র ও শাসনযন্ত্রকে পুরোপুরি কব্জায় নিতে তাদের পরিকল্পণা, ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। আর উস্কানীর কথা যদি বলি তাহলে তাদের উস্কানির কাছে আমাদের এই শুদ্ধ ভাষায় “এই গরু সরে দাঁড়া”মূলক কথাবার্তা নিছক ন্যাকামির মতোই শোনায়। একাত্তরে দেশ ও জাতির বিরোধীতা করার চেয়ে বড় উস্কানী আর কি হতে পারে? তারপর দেশে রগ-কাটা রাজনীতির শিবিরীয় ধারা চালু; শামসুর রাহমানকে হত্যার চেষ্টাসহ হুমায়ূন আজাদকে কোপানো; সারা দেশে বোমা বিস্ফোরণ; একুশে আগষ্ট সহ হাজারো উদাহরণ টানা যায় তাদের ভয়ংকর সব উস্কানীর। এসব একপক্ষীয় উস্কানীর মুখে আমরা যা করি তাতো নিতান্তই বালকোচিত। তবে হ্যাঁ, কুকুরকে শায়েস্তা করতে হলে কুকুর হতে হবে তার কোনও কথা নেই। জাতির পেছনে আজ ডিঙ্গোর মতো একপাল জামায়াত লেগেছে, আজ চুপ থাকার দিন নয়, নয় সহনশীলতা প্রদর্শনেরও সময়; লাথির ভূত কথায় যাবে না, ঝেড়ে লাত্থিটা কষাতেই হবে।
মন্তব্য
হুম।
Masuda Vatti, apnake biplobi salam.
Shochol asi shochol thakbo!!
------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
শুভেচ্ছা, দুর্দান্ত একটি লেখার জন্য।
-----------------------------------------------
Those who write clearly have readers, those who write obscurely have commentators.--Albert Camus
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
সময়োচিত ও যথোপযুক্ত বিশ্লেষণ।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
জামায়াতের উপযুক্ত চরিত্র বিশ্লেষণ। জাঝা আপনাকে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আলীগ বিএনপির চেয়ে কম কিছু করেনি। শেখ হাসিনার বেয়াই চিহ্নিত। শাহজালালে নামকরণ নিয়ে আন্দোলনের সময় হুমায়ুন রশীদ + তার অংশ প্রকাশ্যে জামাতের সমর্থন দিয়েছে। এরকম উদাহরণ ভুরি ভুরি।
- বলেছেন যা বলার দরকার ছিলো। এতো কিছুর পরেও এখনকার সুশীল কিংবা সামরিক সরকারের প্রতিনিধিরা জামাতকে সরকারে বসানোর মতো ভুলটা করবে না। এটা আমার অভিমত।
আর যদি জামাতকে রাস্ট্রের ক্ষমতায় বসানোর মতো চূড়ান্ত ভুল তারা করেই বসে তাহলে জামাতকে তো বাংলার মানুষ পরে দেখে নিবে, আগে পদ হইতে মস্তক পর্যন্ত প্রতিটা অঙ্গ ছিন্ন করা হবে তাদের। এইটা আমার কথা না, তারাও জানেন এটাই হবে সত্যি। পৃথিবীর কোনো দেশই তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না।
এই সত্যটা জামাতও জানে। তাদেরকেও মরতে হবে সর্বহারাদের মতো। যেখানে দেখা যাবে সেখানেই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
শিরিগালের সাথে রাজাকারদের তুলনা করার তীরিব্র পরতিবাদ করতেছি। তবে লেখার জন্য তারকা।
আছেন কোনও ভাই, যিনি এই কথাগুলো অস্বীকার করবেন?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
জামাত কে কবে ক্ষমতায় দেখছি , সেটাই দেখার আশঙ্কা। কেউ এ প্রসঙ্গে আনিসুল হকের - অন্ধকারের একশ বছর থেকে কিছু আপলোড করুন।
===========================
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
আমার কাছে থাকলে অতি অবশ্য করে দিতাম।
তবে বহুদিন আগে রাজাকার বিষয়ে আনিসুল হকের এক অসাধারণ রচনা প্রকাশ করেছিলাম আমার ব্লগে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন