সে আমায় জানে
সে জানে, কোন জলে আমি স্বাচ্ছন্দে সাঁতার কাটি
কোন্ পথের ধুলোয় আমি হাঁটতে পারি খালি পায়ে
তাই ভরা চৈত্রের ফাঁটা জমি সে ভিজিয়ে রাখে মেঘে
সে জানে কী করে আমায় ভালোবাসতে হয়
সমুদ্রের দুলুনির মতো ঘুম পারাণিয়া গল্পে
গভীর রাতের মতো দীর্ঘ উপন্যাসের বর্ণনায়
মহাকাব্যিক উপমায়, সে ভালোবাসে
আমি তখন, কেবলই বেজে যাই, শুধুই বেজে যাই
পিলু কাহরবা মিশ্র খাম্বাজ কিংবা শুধুই ভৈঁরো-তে।
২.
সবকিছুইকে দাঁড় করিয়ে রেখেছি, দরোজায়। গোল চাঁদ, কুচি কুচি তারা, জানালার ধারে নাকফুল ভরা আতা গাছটাও। কেবল তোমারই প্রবেশাধিকার এই ঘরে, বাহু ও চুম্বণ ছাড়া কিছুই রাখিনি, বাকিটুকু তোমার দায়িত্ব, জাগিয়ে তোলো, ভাসাও কিংবা ডোবাও; ঘরের মেঝে যদিও পাথুরে ঠাণ্ডা, শীতকে বসন্তে বদলে দিতে না পারো যদি তবে ধরে নেবো সমস্ত রঙধনু জীবনে একবারই উঠেছিল, আর বদলে দিয়েছিল আকাশের শরীর।
৩.
তুমি কি পারো? পারো কি ছায়া থেকে ছায়া সরিয়ে নিতে, শ্বাস থেকে বাতাস, জল থেকে জলের দাগ? যখন ছুঁয়ে থাকো, কিংবা থাকো অন্তর্গত, তখনও, কিংবা যখন বহিরাগত শত্রুরা আসে কালো ঘোড়সওয়ার হাতে তলোয়ার শিরোস্ত্রাণ পরে, তখন পারো কি ঢাল হতে, ছাড়িয়ে নিতে আমাকে আমারই কাছ থেকে; আমি চাই তা হোক, তুমি কি পারো?
৪. বাতাস হামলায় দুপুরের রোদে এঁড়ে বাছুরটির মতো, যার মাত্রই বয়ঃপ্রাপ্তি হয়েছে, বাতাস ছুটে যায় উইলো গাছটিকে তছনছ করে, মানুষ যদিও বলে উইলো কাঁদে, শরীর ও মন দুর্বোধ্য সব কল্পনা ফাঁদে, যার কাছে কালিগুলাও তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ; শুধু বাইরে তখনও বাতাস হামলায়, এঁড়ে বাছুরের মতো।
৫. এ এমন এক রাতের গল্প, যে রাতে জানালার সামনে জামদানী আকাশ জরী ওড়ে আঁধারে, চোখ পাতলে দেখা যায় পৃথিবী থমকে দাঁড়ানো। চোখের ভেতর ছায়া পড়ে অন্ধকারের, চীনামাটির পেয়ালায় আঁকা ছবির মতো; এই ছবি শুধুমাত্র তখনই দেখা যায়, যখন ক্লান্ত পরিশ্রান্ত নারীটি বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে কোনও তৃপ্ত পুরুষকে।
৬. আমি যতোই আঁধারের পথে হাঁটি, আলো আমাকে ঠিকই খুঁজে বের করে। তার মধ্যরাতের চোখ আমার শরীরকে ঠিকই চেনে।আঙুল চিন্তা করে চুমুচিহ্ন আঁকে, আমি নিজেই তখন হয়ে যাই ইজেল, আঁধারের রঙে তুমি আঁকবে বলে ল্যান্ডস্কেপ, আমি প্রস্তুত হতে থাকি; দ্রুত।
মন্তব্য
প্রিয় মাসুদা,
বহুদিন পর আপনার এমন তুমুল কাব্যগন্ধী গদ্য পেলাম।
অন্যেরা কী বলবেন জানিনা, আমার কাছে এই লেখা--- নিখাঁদ কবিতা।
আপনি সচরাচর যে ধরনের লেখা লেখেন, এই লেখার সুর তাদের চেয়ে ভিন্ন।
যদি বেয়াদপি না নেন তবে দুয়েকটা কথা বলতে চাই----
'ঘুম পারানিয়া', 'জামদামী', 'জরি ওরে' এই ক'টি বানান একটু চোখে লাগছে।
আর 'মিশ্র এশ্রাজ' এর বদলে কি অন্য কোন রাগ হবে? পিলু, খাম্বাজ,ভৈঁরো--এইসব রাগের নামের মাঝে 'এশ্রাজ' (এস্রাজ হবে মনে হয়) যন্ত্রটা কেমন করে জানি ঢুকে গেছে।
আশা করি রাগ করবেন না।
ভাল থাকুন---আর এই রকম লেখা আরো আসুক!
প্রিয় অনিকেত
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ, বানানে যে আমি কি পণ্ডিত, সেটা আমি আর প্রকাশ করে লজ্জা পেতে চাই না। তাই সবাইকেই বলি, বানান নিজ দায়িত্বে পড়বেন। তবে কয়েকটি ভুল একেবারে টানা হাতে লিখে যাওয়ার, আমার আরও এক বদ অভ্যেস, লেখা শেষ করে আমি আর কখনোই সেটা পড়ি না, অনেক চেষ্টা করেও এ থেকে বেরুতে পারছি না। আমার যে কি হবে!!!!
ভালো থাকুন। ঠিক করেছি, তারপরও হয়তো অনেক ভুল, থেকেই গেলো, ভুল কি আর শুধরে কোনও দিন?
খুব সুন্দর লাগলো। অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এমন আরো লিখবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
অসাধারন লাগল।
সুন্দর!
জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা
অদ্ভুত সুন্দর !
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
নতুন মন্তব্য করুন