১৯৭১ আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছিল, তবে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষাটি ঘুমন্ত বাঙালি ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ গভীর রাতের আঘাত থেকে পেয়েছিল তাহলো, ধর্ম আসলে কোনও বড় আচ্ছাদন নয়, কোনও দখলদারী মনোভাবকেই ধর্মের ঐক্য দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না, তা কোনও না কোনও সময় কখনও না কখনও প্রবল ও প্রচণ্ড হয়ে নেমে আসে। নইলে ১৯৪৭-এ যে বাঙালি মুসলমানকে ধর্ম দিয়ে জিন্না সম্মোহিত করে গোটা একটি দেশ হাসিল করে নিলেন, মাত্র ২৫ বছরের মাথায় কি করে সেই সম্মোহন একেবারে মৃত্যুবাণ হয়ে বাঙালির ওপর নেমে এলো তা সত্যিই গবেষণার বিষয় হলেও সাদা কথায় এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, যখন স্বার্থে আঘাত পড়ে এবং নিজের ভাগে কম পড়ে তখন ধর্মের দোহাই দিয়ে স্বার্থহীনতা দেখানোর উদারতা পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশেও তার ব্যত্যয় হয়নি।
ওপরের এই কথাগুলি যে আমার মনে আসেনি তা নয়, কিন্তু তা আমার ভেতরে আরও প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন এমন একজন, যার কথা আজকের এই দিনে স্মরণ না করলেই নয়। তবে দুঃখজনক সত্যি হচ্ছে, আমি তার নামোল্লেখ করতে পারবো না। তার সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটেছিল ইউরোপের একটি দেশে।এই লেখাতে আমি তাকে আনা হিসেবে উল্লেখ করতে চাই। যদিও একসময় তার একটি চমৎকার বাঙালি নাম ছিল। কিন্তু একাত্তরের পর তিনি সেই নামটি ছেড়ে এসেছেন, চোখ ছল ছল করে বললেন তিনি।
২৬শে মার্চের কথা বলুন, জানতে চাইলাম। বললেন, সে রাতের কথা কী বলবো আর? রাত ভোর হবার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম, কিন্তু সেই কালরাত কি আর ভোর হয়? নাকি হতে চায়? সন্ধ্যের কতোক্ষণ পর বলতে পারবো না, হঠাৎ করেই হলের ভেতর মিলিটারি, চারদিকে গুলির শব্দ মেয়েরা চিৎকার করছে। কেউ কেউ দেয়াল টপকে বেরুনোর চেষ্টা করছে, কেউ বা দরোজা বন্ধ করে রেখে নিজেদের বাঁচাতে চাইছে। কিন্তু ওভাবে যে বাঁচা যায় না সে বোধটি আমাদের তখন কারোরই হয়নি। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা তো তখন সবেমাত্র বেরুতে শুরু করেছে, এতো বোধগম্মি কি তখন হয়েছে?
কথা শুরু হয়েছিল ২৫শে মার্চের রাত নিয়ে, ২৬ মার্চের সকালে চলে গেলেন আনা।ট্রাকে করে আমাদের নিয়ে এলো ওরা। আমরা কয়েকজন, দু’একজন মুখ চেনা। কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছিলাম না। কোথায় এলাম বুঝিনি, ঢাকার শহরতো ভালো করে চিনি না। একটা মেয়েকে দেখলাম হাতে করে কোরআন শরীফ নিয়ে এসেছে।থর থর করে কাঁপছে। কাঁদছে অঝোরে, শব্দহীন। আসলে আমরা সবাই কাঁদছিলাম, অথচ কেউই শব্দ করে নয়, আমরা মনে হয় শব্দ করতে ভুলে গিয়েছিলাম।
তারপর যেখানে এলাম, সেখানে লাইন ধরে অনেকগুলো রুম।আমাদের একই রুমে রাখা হলো। তখন দুপুর হবে মনে হয়, তখন ওরা এলো, একের পর এক। কিছু বলার সুযোগ দেয়নি, একের পর এক, আমরা মাত্র ছয় কি সাতজন। আর ওরা সংখ্যায় কতো ছিল এখন আর মনে করতে পারি না, তবে চাইও না। আপনি ছাব্বিশে মার্চ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, এই যে, এইতো আমার কাছে ছাব্বিশে মার্চ ১৯৭১। তারপর আর দিনক্ষণ, সময়ের ঠিক ছিল না আমাদের কারোই। আমরা ওই রুমে ছিলাম, মড়ার মতো পড়ে থাকতাম। ওরা আসতো যেতো, শুধু মাঝে মাঝে খেতে পেতাম, পরনে কাপড় ছিল না। কি শোনাচ্ছে না গল্পের মতো? কেউ আপনারা বিশ্বাস করবেন বললে, এসব কথা? মনে হয় না। যাহোক, আর বলবো না। সরি, দয়াকরে আমায় আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন না।
আনাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি। জানতে চাইনি, কবে ছাড়া পেয়েছিলেন? কি করে এলেন এই দেশে? এইসব সাতপাঁচ, কী হবে জানতে চেয়ে? আমরা কফি খেলাম দীর্ঘ নীরবতা নিয়ে। তারপর আনা আমার দিকে তাকালেন, বললেন, “জানেন, আমরা প্রতিদিন কোরআন পড়তাম।ওরা তাও মানতো না। ছুঁড়ে ফেলে দিতো। পরে শুনেছি যে, ওরা নাকি মসজিদে ঢুকেও মানুষ হত্যা করেছে। জানেন, আমার আর কোনও আনুষ্ঠানিক ধর্মের প্রতি বিশ্বাস নেই।এরপর নিজেকে আমি ধর্ম থেকে সরিয়ে নিয়েছি”।
কি বলবো আনাকে? ভাবছিলাম। এসব কথার কোনও উত্তর হয় না। মনে মনে ভেবেছি, শুধু কি বাংলাদেশে? ধর্মের নামে এই ইতরামি কোথায় হয়নি? ইতিহাসে এর ভুরি ভুরি উদাহরণ রয়েছে। আজকের ইসলামি সাংগ্রি-লা ইরানে ধর্মের নামে যা হচ্ছে তাতে এই লন্ডনে এমন সব ইরানির সঙ্গে পরিচয় হয়েছে যারা তাদের আনুষ্ঠানিক ধর্মের খোলশ ছেড়েছে কেবলমাত্র ধর্মের নামে ঘটে যাওয়া সব অনাচার দেখে দেখে, তার শিকার হতে হতে।১৯৭১ সালে যেসব পাকিস্তানী সৈন্য বাংলাদেশে লুটতরাজ, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালিয়েছে তারা তো কেউই ধর্মে অবিশ্বাসী ছিল না, বরং তারা সকলেই ছিল ধর্মপ্রান মুসলিম। ১৯৭১ সালের নয়মাস ধরে চলা যুদ্ধে একটি মাস ছিল রমজান মাস। সেই মাসেও কিন্তু পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী ধর্ষণের মতো গর্হিত কাজ করেছে, কি করেনি? তখন কিন্তু ধর্ম তাদের এই অনাচার থেকে রুখতে পারেনি। তার মানে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল যে, তারা যা করছে তা আসলে ইসলামকে রক্ষায়। সেদিক দিয়ে বিচার করতে গেলে, ১৯৭১ আসলে আর কিছুই নয়, ধর্মের নামে নিরীহ মানুষকে হত্যা আর নারী ধর্ষণের চূড়ান্ত উদাহরণ। একই কথা আমরা তুলতে পারি আফগানিস্তানের তালিবান শাসনামল সম্পর্কে। সেখানেও ধর্মের নামে একই ঘটনা ঘটেছে।
আনাও প্রশ্নটি আমায় করেছিলেন, ওরা কি ধর্ম রক্ষায় এতোবড় অধর্ম করেছিল? প্রশ্নটি আমায়ও ভাবিয়েছে ব্যাপক। আমার কাছে যা মনে হয়েছে তাহলো, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ধর্মকে রাজনীতির বর্মে মুড়ে তারপর যুদ্ধে নেমেছিল। যদিও এটা নতুন কিছু নয়, ১৯৪৭-এ যে দেশভাগ এবং দেশভাগকে কেন্দ্র করে যে হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজ তাও সেই একই ধর্মের বর্মে মোড়া পোড়া ক্ষত। সেই ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই আবার এলো একাত্তর। এবং একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো, যদিও ১৯৪৭-এ যা ছিল জনগণের একাংশের লোভ আর লালশার সঙ্গে ধর্মের মিশেল, ১৯৭১-এ তাই-ই হলো একটি সুশৃঙ্খল সেনা বাহিনীর রিরংসা এবং সেটাও ধর্ম দ্বারা সিদ্ধ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সকল ইসলামপন্থী দলই কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে সমর্থনই শুধু নয়, বাংলাদেশের জামায়াত ইসলামী সরাসরি তাকে এই ধর্ষণ, খুন ও রাহাজানিতে সহযোগিতা করেছে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে তারা এতে অংশও নিয়েছে।পরবর্তীতে তারা আবার রাষ্ট্র ক্ষমতাও পেয়েছে, তাও আবার তথাকথিত এক মুক্তিযোদ্ধার দ্বারা সৃষ্ট একটি রাজনৈতিক দলের ঘাড়ে চেপে। সে অন্য কথা। আজকে আনার কথা বলি শুধু।
আনা কথা বলেন কম। নার্সের চাকরি করতেন, ছেড়ে দিয়েছেন।চোখে-মুখে এখন আর তার কোনও ক্লান্তি নেই, থাকবে কেন? তিনি তো সেই দুঃসহ স্মৃতি, যেখানে পরতে পরতে সাজানো নির্যাতন, বঞ্চণা, স্বজনদের কাছে ফিরতে চেয়েও ফিরতে না পারা, সামাজিকতার দোহাই দিয়ে পরিবারের কাছে অগ্রহণযোগ্য হওয়া, এবং তারপর রাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় জন্মভূমি থেকে বেরিয়ে আসা – সবই তার স্মৃতিতে এতোদিনে ফিকে হয়ে আসার কথা। আনা বললেন, “মনে রেখে কি হবে ওসব? মনে রাখতে চাই না।মনে রাখতাম, যদি ফিরে যেতে চাইতাম। কিন্তু কোথায় ফিরে যাবো? দেশটাতো আমি ভুলে গেছি, ভুলে গেছি, কারণ দেশ আমাকে মনে রাখেনি। এটা তো আমার একার দায়িত্ব নয়, দেশেরই দায়িত্ব বেশি”। বলতে চাইলাম, “কি বলছেন আনা, আপনাকে মনে রেখেছে দেশ, মনে রেখেছি আমরা। এই যে দেখুন, আমি আপনাকে খুঁজে বের করেছি”। পরে ভাবলাম, এসব কথা তার কাছে কোনও মানে রাখে না। আসলেই রাখে কি?
ছোট করে ছাঁটা চুল, সামান্য পাক ধরেছে। পরে আছেন কালো রঙের একটি স্কার্ট, ইউরোপের উজ্জ্বল গ্রীস্মের মতো শর্ষে রঙের একটি টি-শার্ট। পায়ে আঁটো-জুতো।বললেন, “এবার উঠি। দয়া করে আমার কথা কাউকে বলবেন না। আমি চাই না কেউ এসে আমাকে আবার জিজ্ঞেস করুক, কী হয়েছিল? কী করে মুক্তি পেলেন? এইসব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না।কী হবে বলুন? উঠি কেমন?”
চমৎকার বাংলা বলেন আনা। উঠে দাঁড়ালেন। হেঁটে মিশে গেলেন ভিড়ের মধ্যে। আমি বসে রইলাম। তাকিয়ে থাকলাম পেছনে ফেলে যাওয়া আনার পথের দিকে।মনে মনে ভাবছিলাম, আনার মতো এরকম অনেক মেয়ে, একাত্তরে যাদেরকে পাকিস্তানীরা “গণিমতের মাল” হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার করেছে, স্বাধীন দেশে আমরা তাদেরকে নিয়ে বিব্রত বোধ করেছি। আমি নিশ্চিত ১৯৭১ যদি তখন না হয়ে এই ২০০৯ সালেও হতো আর একই ঘটনার শিকার হতো বাঙালি নারী, আমাদের মানসিকতার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আমরা দেখতে পেতাম না। আনার মতো বাংলার শেফালি, রতœা, চম্পা বা অন্য যে কাউকেই এরকম বিদেশে এসে নাম পরিবর্তন করতে হতো, নয়তো দেশেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হতো। যতোদূর জানি, স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তানী বাহিনীর ধর্ষণের শিকার এরকম হাজারো নারী স্বাধীন বাংলাদেশে আত্মহত্যা করে তাদের ত্যাগের চরম মূল্যটি দিয়ে গিয়েছেন। একবার ধর্মের নামে তাকে হতে হয়েছে ধর্ষিতা, আবার পরিবার তাকে সমাজের কাছে পরিচয় দেবার ভয় দেখিয়ে পথ দেখিয়ে দিয়েছে আত্মহত্যার।
আজকে ২৬শে মার্চের এই দিনে তাই আমি স্মরি সেইসব বাঙালি নারীকে।শ্রদ্ধা জানাই আনার মতো বিদেশে অবস্থানকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী, যারা নিজেদেরকে আর বাঙালি বলে পরিচয়ও দেন না, নাকি দিতে পারেন না? আনার ভেতরে বাঙালিত্বের বোধ বিদ্যমান বলেই আমার সঙ্গে কথা বলতে রাজি হয়েছে, আমারতো মনে হয়েছে, আনাকে যদি রাষ্ট্র কখনও বলে, তাহলে তিনি বাংলাদেশে ফিরে যেতেও রাজি হবেন।কিন্তু রাষ্ট্র কি বলবে? রাষ্ট্র যদি বলে তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালি এই নারী-বীরদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ আমাদের মতো কেউ না কেউ গ্রহণ করতে পারে।রাষ্ট্র তাদেরকে এনে সর্বোচ্চ সম্মান্ননা দিয়ে, গত ছত্রিশ বছরে জমা হওয়া অস্বীকৃতির পাপ খন্ডাতে পারে এই সুযোগে।
আমি আনার কথা বলেছি, এই স্বাধীনতা দিবসে, এরকম নারীর বীরত্ব গাঁথা এতো দুঃখ নিয়ে বলার কথা আমার ছিল না। আজকে আমার অন্য অনেক সুন্দর কথায় সাজানো একটি নিবন্ধ লেখার কথা ছিল না। কিন্তু আজকে, স্বাধীনতার এতো বছর পরেও আমাকে আনার কথা লিখতে হলো দুঃখের সঙ্গে।অথচ আনা হতে পারতো আমাদের জাতীয় প্রতীক, বীরোত্তম বা বীর প্রতীক খেতাবধারী।আমার মনে হয়, এখানেই রাষ্ট্রের খামতি। এই খামতি আমাদের নতঃশির করে, আর নতঃশির বেঁচে থাকাকে কি জীবন বলা যায়?
মন্তব্য
লেখাটি গেল ২৬শে মার্চ একটি দৈনিক প্রকাশিত। প্রকাশিত লেখা এখানে না দেয়ার নিয়ম থাকলে জানাবেন, মুছে দেয়া হবে।
ছাপামাধ্যমে প্রকাশিত লেখার ক্ষেত্রে ডুয়াল পোস্টিঙের নীতি প্রযোজ্য নয়।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
বীরাঙ্গনাদের নিয়ে আন্তর্জালে খুব ভালো আর্কাইভিং প্রয়োজন।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আসলেই তাই। মুক্তিযুদ্ধের এই অংশটি নিয়ে কাজ খুব বেশি হয়েছে বলে হয় না।
লেখাটা পড়ে নিজেদের মূঢ়তা ও বুদ্ধিবৈকল্যের কথা ভেবে বিচলিত বোধ করছি।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বীরাঙ্গনা শব্দটির প্রয়োগ নিয়ে আমার আপত্তি আছে। কারণ আমার মতে এখন বীরাঙ্গনা বলে তাদের শুধু অমর্যাদাই করা হয়। কেন রাষ্ট্রের কর্ণধাররা তখন তাদেরকে সঠিক মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হল? এখন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা না দিয়ে বরং সবধরনের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া দরকার। সবধরনের বলতে পাকিস্তানি আর্মি, তাদের এদেশীয় দোসরদের সাথে তখনকার সুযোগ সন্ধানীদেরও খুঁজে বের করে বিচার করা একান্ত দরকার। আজ থেকে হাজার বছর পরে হলেও আমরা এসব পিশাচদের কবরে গিয়ে থুতু নিক্ষেপ করে হলেও বিচার চাই, তাদের ছাড়ব না।
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
না , যায় না । আর যায় না বলেই আমরা শুধু মানচিত্রের বদল পাই , লালসবুজ পাতকা পাই ।
কিন্তু সেই নতুন মানচিত্র , নতুন পতাকা আমাদেরকে সুখী করতে পারে না।
আমরা আমাদের হৃদয়ের গভীরে জানি , এই আনা'দের সাথে আমরা নিষ্ঠুর আচরন করেছি ।
সেই নিষ্ঠুরতা আমাদের বুকে দগদগে ক্ষত হয়ে বসে থাকে ।
আনা'রা আমাদেরকে অভিশাপ দেন না , কিন্তু তাদের দীর্ঘশ্বাস আমাদেরকে ছারখার করে দেয় , ছারখার করে দিচ্ছে ...।
লেখাটি আমাদের সাথে ভাগ করার জন্য লেখককে অশেষ ধন্যবাদ। এই রকম লেখা যত বেশি প্রকাশিত হবে ততই মানুষ বেশি জানবে। বারংবার আমাদের তাদের আত্মত্যাগের কথা উপলব্ধি করতে হবে।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কী বা বলার আছে!!!
অথচ আনা হতে পারতো আমাদের জাতীয় প্রতীক, বীরোত্তম বা বীর প্রতীক খেতাবধারী।আমার মনে হয়, এখানেই রাষ্ট্রের খামতি। এই খামতি আমাদের নতঃশির করে, আর নতঃশির বেঁচে থাকাকে কি জীবন বলা যায়?
___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে
বড় পাপ হে!
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আনা হয়তো আমাদের ক্ষমা করবেন একদিন
আমরা নিজেরা নিজেদের ক্ষমা করতে পারবোনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আমি এই কিছুদিন আগে শাহীন আখতারের 'তালাশ' পড়লাম। চমৎকার বই। সেটি পড়ে নির্যাতিত নারীদের মধ্যে যাদের বিদেশে পাঠানো হয়েছিলো, কী ঘটেছিল তাদের ভাগ্যে এরকম একটা জিজ্ঞাসাও তৈরি হয়েছিলো মনে।
পরিশ্রমের ব্যাপারটা আন্দাজ করে ভয় হয় তবু বলি, লিখেন না মাসুদা আপা একটা ডকু ফিকশন এঁদের নিয়ে। আমাদের জন্য।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
আমার একটা চিন্তা দানা বাঁধছে যে, আমাদের রাষ্ট্র একাত্তরের সমগ্র অভিজ্ঞতাটিকে বাইপাস করে ক্ষমতা সাজিয়েছে। সেটাই এই রাষ্ট্রের বড় অবিচার। এ না করা পর্যন্ত, হক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলা যায় না।
এ ধরনের লেখা বেশি বেশি আসা দরকার। বিশেষ করে একাত্তরের অভিজ্ঞতাটা।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
যতোদূর জানি, এঁদের একটি বিশাল অংশ আছেন নেদারল্যান্ডে, ডেনমার্কে, জার্মানীতে এবং খুব অল্প সংখ্যক আছেন পোল্যান্ডে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারো কারো পারিবারিক যোগাযোগ আছে বাংলাদেশে, তাও শুধু পরিবারগুলোকে অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়ার জন্য, বাংলাদেশে স্থায়ী ভাবে ফিরে যাওয়ার কথা পরিবার থেকেও বলা হয় না কখনও, বছর কয়েক আগে যে দু'জনের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল তারা আমাকে এই করুণ ও নিষ্ঠুরতার কথা বলেছিলেন।
ধন্যবাদ সবাইকে লেখাটি পড়ার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন