পৃথিবী ঘোরে, ঘোরে শুধু, মাটি ছোঁয় না; পথ পড়ে থাকে, পথের মতো, একদিন এখানে ভিখিরী হাত পেতে বসেছিল, শিশুরা খেলছিল- একই রকম স্বপ্ন নিয়ে চোখে, কিছু পাবে বলে; এরপর অসংখ্যবার পৃথিবী ঘুরলো, সূর্য উঠলো, ডুবে গেলো, মানুষও পৃথিবীর সাথে ঘুরলো, শুধু ঘুরেই গ্যালো; অথচ সেই পথে আজও ভিখিরী বসে, আজও শিশুরা খেলে, শুধু বদলে যাওয়া মুখ।
২.
পিঁপড়েটা বড় হতে চেয়েছিল, চড়ুইটা তাকে খেয়ে ফেললো, সেও বড় হতে চায়; চিল ছোঁ মেরে নিয়ে গেলো চড়ুইকে, তাকেও বড় হতে হবে; বাজ যখন চিলকে ছিঁড়ে খেলো তখন তার শরীরে একে একে ঢুকলো পিঁপড়ে, চড়ুই এবং চিলও; তারপর আরামের ঢেকুর তুলে বাজ পাখিটা শুয়ে ছিল ডালে শিথেন দিয়ে, ঝড় এলো, পাখা ভেঙে পড়লো সে মাটিতে, শেয়াল খেলো তাকে, শেয়ালও রেয়াত পেলো না হায়নার হাত থেকে; হায়নার ভাগ্য অবশ্য সিংহের দাঁতের ফাঁকে আঁটকে যায় কখনও কখনও – মানুষ যদিও সিংহের মাথাসুদ্ধ চামড়া ঝুলিয়ে রাখে বসার ঘরের দেয়ালে, তবুও মানুষকে মানুষই খায়- পিঁপড়ে তখন মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।
৩.
একই জায়গা ছিল, একই মানুষ ছিল, তবু একটি দেয়াল দাঁড়ালো প্রথমে, তারপর দু’পাশেই স্বাধীনতা রক্ষার নাম করে সেই মানুষই দু’রঙের পোশাক পড়ে দাঁড়ালো, হাতে বন্দুক-বেয়নেট; স্বাধীনতার প্রমাণ হিসেবে দু’পাশেও পতাকাও হলো দু’রঙা, শুধু রঙের এদিক-ওদিক; দেয়ালের দু’পাশে লেখা, যদিও একই ভাষায়, একই নক্সায়, তবু কেউ কাউকে পড়তে পারে না, দেয়ালের দু’পাশে বৃষ্টি হয় ঠিকই, কিন্তু বৃষ্টির জল মিলতে পারে না; যেমন মেলে না দেয়ালের এপার ও ওপারের মানুষের কন্ঠস্বর- যা মেলে না বলেই প্রতিবাদ আসলে ভাষা পায় না।
৪.
তোমার কথার মিষ্টত্বে অসংখ্য বন্ধু পাবে তুমি – পাইনি, বাড়িয়েছি শত্রু অনেক।
তোমার হাসির ছর্রায় ঘায়েল হবে মানুষের মন – হয়েছে ঘায়েল, আহত মানুষেরা আমায় ঘৃণা করে।
তোমার হাঁটার ছন্দে পদ্ম ফুটবে – ফোটেনি, টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়েছে ভালোবাসার একেকটি ইঁট।
সূর্য এবং চাঁদের মতো অক্ষয় হবে তুমি – সূর্য আমি ঠিকই, তবে সোনালী ডানার শকুনের মতো দিন শেষে গিলে ফেলি চাঁদ – আমি চাঁদভূক।
৫.
জল ভাঙার শব্দ পাও? পিঁপড়েরা ডিম মুখে উঠছে ব্যাড়া বেয়ে, জল আসছে, টের পাও? অপরিষ্কার নোখ্-এ পোড়া ঠোঁট ছোঁয়ালে – জল ভাঙে, বোঝো? ফুলে ওঠা তলপেটে দাড়ির ঘষা লাগলে, জল গড়ায়, শোনো কান পেতে, জলের আওয়াজ; সন্তানের আসার পথ জলে ভাসে, জল গড়ায় – সাঁতার কাটবে?
মন্তব্য
আপনার লেখা সবসময়ই খুব ভালো লাগে। এটাও লাগলো, আশ্চর্য কিছু না। তবে এটা আপনার অন্যান্য অনেকগুলো লেখার থেকে বেশ আলাদা।
'সোনালী ডানার শকুন'টা নতুন, ইচ্ছাকৃত তো বটেই। আমরা চিল শুনে অভ্যস্ত, শকুনের ডানার রঙও জানি না। সে যাক, তবে রাষ্ট্রভাবনা রাজনীতি এই নিয়ে কবিতা বা কবিতাউপম কিছু লিখলে বোধ হয় এইরকমই হওয়া উচিত।
আপনার অন্য জাতের লেখাগুলোও লিখবেন কিন্তু, "চিকন কালা গো" বা "দ্যাওয়া এই বাড়ি আয়" ঐগুলো।
ভালো থাকুন।
ভালো লাগলো। শুভেচ্ছা রইলো আরো অনেক লেখার।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
এই লেখার পাঠানন্দে বিভোর আমি। অসাধারণ।
এটা তো কবিতাই।
..................................................................................
সত্যকথন-স্বভাব
যুদ্ধঘোষণার মতো একটা ব্যাপার প্রায় কথাসভ্যতায়
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
সবসময় অন্যরকম কিছু লাইন। পড়তে ভালো লাগে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
খুব সুন্দর লেখেন আপনি। যত পড়ছি আপনাকে ততই মুগ্ধ হচ্ছি।
নতুন মন্তব্য করুন