মেয়েটির হাতে ঝিমায়মান একগুচ্ছ ফুল ছিল, হলুদ বিবর্ণ হলে চোখ তাকে সইতে পারে না, তার ঠোঁটে ক্ষীণ সুরও ছিল, কথাহীন সুরও মানুষ নিতে পারে না বেশিক্ষণ, সাধারণ মানুষ কথা আর সুরের মিল চায়, মানুষ গান খোঁজে; মেয়েটির জীবন ছিল, যৌবন নয়, জলের তলায় ওঁৎ পেতে থাকা কুমিরের মতো, আনাকোন্ডাও হতে পারে; তবে ভালোবাসা সবুজ পাতার আভরণে আশ্রয় নেয়া গেছো ব্যাঙের মতো মেয়েটির জীবনে সামান্য সবুজ এনেছিল, একটু নড়াচড়া, একটু দৌড়ঝাঁপ; সবুজ ব্যাঙ আর মেয়েটিকে জীবন্ত মনে হতো বেশ; যখন দেশ খরাক্লিষ্ট হলো সবুজ ব্যাঙের সঙ্গে মেয়েটিও ক্রমশঃ ক্লিশে হতে হতে হতে হতে ….. মেয়েটি এখন একদা হলুদ স্মৃতি।
২.
সবুজ ঘাসের ওপর পাখাভাঙা প্রজাপতি, মরে যাওয়ার অপেক্ষায়; এমন যদি হতো মৌমাছিরা মধুর চেয়ে মানুষের রক্ত চুষতে বেশি ভালোবাসতো, তখন মৌচাকে মধু না হয়ে রক্ত ঝুলে থাকতো- মাছিটিও হঠাৎই আঁটকে গ্যালো ঝুলন্ত গামছায়, গামছাটি কিছুক্ষণ আগেও ভেজা চুলে জড়ানো ছিল, চুলের গন্ধেই টের পাওয়া যায় নারীর বয়স, কোমরের খাঁজের গভীরতা – মাছিটি আঁটকে গেলো, সেও মরে যাওয়ারই অপেক্ষায়।
৩.
ধরে নিচ্ছি আমি সমুদ্রপারের একমাত্র গাছ, বাকি সব ভেঙে-ভেসে গেছে সর্বশেষ ঝড়ে, প্রবল ঝড়, জল আর বাতাসের সে উত্তুঙ্গ মিলন, বাৎসায়ন বেঁচে থাকলে কামসূ্ত্রের নতুন অধ্যায় হতো, আমার চারপাশে এখন স্লেট-রঙা আকাশ, ক্রমশ নেমে আসছে আমার কাছে, ঔদ্ধ্যত তার বিদ্যুৎ-শিশ্ন, টান টান; আমি সমুদ্র পারের একমাত্র গাছ – আজ ঝড়ের রাতে তার বিদ্যুৎ-অভিসার।
৪.
যার জানালার শিক গলে সুর্য আসে, শুপুরি বাগানের একটা একটা গাছ ডিঙিয়ে, গতকালের সব দুঃশ্চিন্তা সরিয়ে পৃথিবীর সব পাতা ছুঁয়ে রোদ আসে, দাঁড়ায় না কোথাও, রোদ মানুষ নয়, মানুষেরই পড়ে যাওয়ার আগে দাঁড়ানোর প্রয়োজন পড়ে, মানুষই ঘুম থেকে জেগে ওঠে রোদের আগে প্রতিবেশীর মৃত্যু চিৎকারে; নরক না দেখেও মানুষ কল্পনা করে নিয়েছে নরকের, স্বর্গও নির্মাণ করেছে কল্পনায় – যা দ্যাখা যায় না, যা অনুভব করা হয়নি, মানুষের কল্পনায়ও তা নেই; সূর্য রোদ স্বপ্ন মৃত্যু নরক কিংবা স্বর্গ – সবই মানুষের চেনা সত্যই।
৫.
শুনশান রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তার মনে হলো, দু’পাশের বাড়িঘর সব মৃত, গভীর অন্ধকার মৃত্যু এই সব নেতিবাচক কথা ভাবলেন তিনি; তার মনে হলো তিনি একটি পড়ে থাকা খুলিও দেখলেন, চোখ-কোটর দিয়ে আলো বাতাস জল সব বেরিয়ে আসছে, তার নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো, তিনি হাঁটলেন, অতিক্রম করলেন দীর্ঘ পথ, তারপর মুখোমুখি হলেন একটি ভাঙা কবরের, নামফলকহীন, তারিখবিহীন, জন্ম এবং মৃত্যুহীনও; তিনি এবার বসে পড়লেন মাটিতে, ছোট্ট সুড়ঙ্গ পথে একটু একটু করে আলোবাতাস ঢুকছে মাটির ভেতর; তিনিও নিজেকে সেঁধিয়ে দিলেন – তারপর শুরু হলো তার জীবন।
মন্তব্য
আপনার লেখাগুলো পড়লে কেমন ঘোর লাগে, মনে পড়ে জীবনানন্দের সেই টায়ার সিন্ধুর পারের অলীক প্রাসাদের কথা, যেখানে অনেক কমলা রঙের রোদ্দুর, গেলাসে তরমুজ মদ আর কার মর্মরপাথরের মত সাদা নগ্ন নির্জন হাত।
আরো লিখবেন।
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
নতুন মন্তব্য করুন