এক টুকরো শৈশব-৪

মেঘা এর ছবি
লিখেছেন মেঘা [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ১৭/১০/২০১২ - ৬:৩২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আম্মুর হারিয়ে যাওয়া

আমরা দুইজন অনেক ছোট ছিলাম আর অনেক দুষ্টু ছিলাম দেখে দেখা যেত আম্মু সারাদিন আমাদের পিছে ছুটাছুটি আর চিল্লাচিল্লি করতে করতে নিজেই কাঁদতে শুরু করে দিতো! মাঝে মাঝে রাগ হয়ে দিতো মার, তখন আমাদের কাছে আম্মু পচে যেতো। আমি মার খেতামই না বলতে গেলে। কারণ যদি কিছু করেও থাকি আম্মু জানতো নিজের বুদ্ধি খরচ করে দুষ্টামি আমি করি নাই সব আমার বোনের বুদ্ধি। তাই আমার অন্যায়ের মারটাও আমার বোন খেতো। আপুকে যদি জিজ্ঞেস করা হতো সবচেয়ে ভালো কে? ও বলতো আব্বু। কারণ আব্বু মারে না। সবচেয়ে খারাপ কে? বেচারা ভয়ে ভয়ে বলতো আম্মু! আর আমি পুরাই উল্টা ছিলাম। আমার কাছে ছিলো সবচেয়ে ভালো হলো আম্মু, আব্বু আর আপু। সবচেয়ে খারাপের উত্তর আমি দিতে পারতাম না।

আমাদের হারিয়ে যাওয়া অভ্যাস ছিলো। প্রায় দিন আম্মু আমাদের খুঁজে পেতো না। আমাদের ভয়াবহ বিপদজনক জায়গা থেকে মাঝে মাঝে উদ্ধার করা হতো। আমাদের রাজশাহীর ঐ বাসার পাশেই পুকুর ছিলো। গ্রীষ্মকালে টিউবওয়েলে পানি থাকতো না তখন সব কাজ পুকুরের পানি দিয়ে করতে হতো। ঐ পুকুর খুব পছন্দ ছিলো আমাদের। আম্মু সাঁতার পারে না তাই পুকুরে নামতে ভয় পেতো। পুকুর ঘাটে বসে মগে করে পানি নিয়ে আমাদের হাপুস হাপুস (গোসল) করাতো আর নিজেও করতো। কী হাস্যকর কথা! কোলে করে আমাকে নিয়ে অনেক আন্টিরা পুকুরের মধ্যে নিয়ে যেতে যেতে আমি একটু একটু ভাসতে শিখে গিয়েছিলাম। হাত দিয়ে ধরে রাখলে পা নাড়াতে পারতাম। এটা অনেক মজা ছিলো আমার কাছে। আপু পানি খুব ভয় পেতো। একদিন আম্মু আমাদের খুঁজে পাচ্ছে না। সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায় তাও পায় না। পরে কে যেন আম্মুকে বলেছে আমাদের পুকুরের দিকে যেতে দেখেছে। আম্মু পুকুরে যেয়ে দেখে আমি পুকুরে নেমে গেছি। সিঁড়ি হাত দিয়ে ধরে পা নাড়িয়ে সাঁতার কাটছি আর আপু পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে। আম্মুর মনে হয় তখন হার্ট ফেইল করার অবস্থা। আম্মু জোরে চিৎকার না দিয়ে আস্তে আস্তে কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করেছে “কি করো মা?” আমি পাকনু পাকনু কথা বলতাম খুব তখন। সাথে সাথে আম্মুকে বললাম “আমি সাঁতার কাটি আর আপু দেখে” আম্মু যে খুবই ভয় পেয়েছে সেইসব আমাদের বুঝতে না দিয়ে কোন রকমে পুকুর থেকে তুলে কোলে করে বাসায় নিয়ে এসেছে। তারপর থেকে আম্মু আমাদের আর বাইরে যেয়ে দিতো না। কী একটা যন্ত্রণা হয়ে গেলো আমাদের।

আম্মু খুব অসুস্থ হয়ে পরে এর পর। প্রচণ্ড জ্বর থাকতো ভীষণ খারাপ অবস্থা। আমার আপুজি আসলো, আমার খালামনি আসলো। আম্মুকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি করতে হবে। আমার চোখের সামনে দিয়ে যেতে পারবে না তাই আম্মু আমাদের ঘুম পাড়িয়ে তারপর রাতে গেছে হাসপাতালে। আমি হারিয়ে যাই, আপু হারিয়ে যায় তাতে কোন সমস্যা ছিলো না আমার। কিন্তু সকালে উঠে যখন দেখলাম আমার আম্মু হারিয়ে গেছে তখন অনেক খোঁজাখুঁজি তারপর কান্নাকাটি। তারপর চুপচাপ। আমি কিছুই বলি না, কিছুই করি না। আপু আম্মু নাই এই খুশীতে যা ইচ্ছা তাই মনের আনন্দে করে বেড়াতে যেয়ে পায়ের মধ্যে ইট ফেলে পা খোঁড়া করে ফেললো এমন অবস্থা আর আমি প্রচণ্ড জ্বরে আধমরা! সব মিলিয়ে বাসায় অবস্থা খুব বাজে। আব্বুর পাগল হয়ে যাবার মত দশা তখন। আম্মুর অপারেশন হয়ে একটু ভালো হবার পর আমার আপুজি আমাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছে আমাকে আম্মুর চেহারা দেখানোর জন্য। আম্মু এখনো বলে জ্বরে চোখ বের হয়ে যাচ্ছে এমন অবস্থা আমার। আম্মু যখন হাত পেতে বলেছে “আসো কোলে আসো।” আমি সাথে সাথে বলেছি “না।” আম্মু মন খারাপ করে বলছে “কেন আসবে না?” আমি বলেছি “কোলে গেলে তুমি মই (মরে) যাবা।” এই কথা শুনে আম্মু তো আর চুপ করে বসে থাকবে না কোলে নিয়েছে। আর আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বাপ মা মরে গেছে আমার এমন একটা ভাব করে ডাক ছেঁড়ে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছি। আমি পনের দিন আম্মুকে দেখি নাই! এই কষ্ট কোথায় রাখি!

আম্মু হাসপাতাল থেকে আসার পর আপু আম্মুর ব্যাগের মধ্যে খুব তল্লাশি চালিয়ে অবাক হয়ে বলল “বাবু কই?” আম্মুও ভীষণ অবাক হয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করে “কার বাবু?” আপু মনে হয় তখন আরও বেশি অবাক হয়েছিলো এই কথা শুনে। তারপর আম্মুকে বলেছে “বাবু আনতে যাও নাই তাহলে হাসপাতালে গেছো কেন?” আম্মু হাসপাতাল যাবার আগে আমার দুই খালামনি আমাদের বাসা থেকে রাজশাহী মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলো বাবু হবার জন্য। ও দেখেছে সবাই বাবু কোলে করে বাসায় আসে। তাই ও ভেবেছিলো আম্মু বাবু আনতে গেছে। বাবু নাই দেখে আপুর কান্না শুরু। পরে আপুর কান্না বন্ধ করানোর জন্য আম্মু বলেছিল আমাদের বাবুটা নাকি রাজশাহী মেডিকেলের ফ্রিজে রাখা। আব্বুর টাকা ছিলো না তাই আনতে পারে নাই। মনে আছে ঢাকা এসেও স্কুলে ভর্তি হয়ে আমরা টাকা জমাতাম বাবুটাকে নিয়ে আসার জন্য। আমাদের সেই বাবুটা আর আনাই হলো না!

আমি আম্মু হারানোতে এতো বেশি ভয় পেয়েছিলাম যে আম্মুকে রেখে আর কোথাও যেতাম না। আম্মু রান্না করলে একটু পর পর রান্না ঘরে যেয়ে আম্মুকে দেখতাম আর বলতাম “আমা কি কলো? নান্না কলো? আত্তা তুমি নান্না কলো আমি খেলি।” আমার এই জোর পাহারার কারণেই আমার আম্মুকে আমি আর হারাতে দেই নি।

আব্বু আম্মুর বিয়ে

আম্মুর অপারেশনের পর আমরা বাসা চেঞ্জ করে অন্য আরেকটা বাসায় চলে আসি। যে বাসা থেকে একা একা বাইরে যাবার কোন ব্যবস্থা ছিল না আমাদের। পুরো বারান্দার মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত গ্রিল দেয়া ছিল। আপু বাইরে বের হবার চেষ্টা করতে যেয়ে সেই গ্রিল বেয়ে একেবারে ছাদ পর্যন্ত উঠে যেয়ে আবার নেমে এসে আম্মুকে জিজ্ঞেস করতো, “আম্মু এটা কি জেল?” আমার আম্মুর কাছে বেশ বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল জেলের নাম ও জানলো কি করে? তবে আম্মু বেশি সুস্থ ছিলো না আমরা এটা বুঝতাম তাই আমরা নিজেরাও তেমন বেশি বাইরে যেতে চাইতাম না। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাইরে দেখতাম। একদিন আম্মুর সাথে আপু দাঁড়িয়ে আছে। তখন একটা হিন্দু বিয়ে যাচ্ছে। মাথায় টোপর পরা, সুন্দর কাপড় পরা আবার ঢোল বাজে! আপু তো পুরাই অবাক! আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছে “আম্মু এটা কি?” আম্মু বলেছে “বিয়ে যাচ্ছে।” আম্মু আবার ভালো মনে করে সব বুঝিয়ে দিয়েছে কোনটা বর, কোনটা বউ। তারপর আপুর প্রশ্ন “তোমার কি বিয়ে হয়েছে?” আম্মু তো হাসতে হাসতেই শেষ। বলেছে “হ্যাঁ বিয়ে হয়েছে।” আপু আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছে “তাই? কার সাথে?” আম্মু বলেছে “কেন তোমার আব্বুর সাথে!” তারপর আম্মুকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে চলে গেছে। আপু তখন একটা স্কুলে প্লে গ্রুপে পড়তো। আপুকে আনিস মামা পড়াতে আসতো। বিকালে যখন আনিস মামা এসেছে তখন আপু আনিস মামাকে বলে, “জানো আমার আব্বু আম্মুর যে বিয়ে হয়েছে?” মামা হাসি চেপে জিজ্ঞেস করেছে “তাই নাকি? কে বলেছে বিয়ে হয়েছে? হয় নাই তো” আপু সাথে সাথে প্রতিবাদ “না বিয়ে হয়েছে। আমি আর মেঘা দেখেছি। আমি এখনকার চেয়ে ছোট ছিলাম আর মেঘা বিছানায় শুয়ে থাকতো আরও অনেক ছোট ছিলো। তারপর আব্বু আম্মুর বিয়ে হলো, ঢোল বাজলো। আমরা হাত তালি দিলাম। মাথায় টোপর পরা ছিলো আব্বু জানো?” এই কথা শুনে মামা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবার অবস্থা! আমার বোন অসাধারণ কল্পনা প্রবণ ছিলো। যেকোনো জিনিস সে নিজের মতো করে কল্পনা করে নিতে পারতো। অবশ্য এখনো তাই করে! একটু কথা শুনে বাকীটা ভেবে নিতে ওর তেমন কোন অসুবিধা হয় না। যার জন্য এখনো আম্মু ওকে সব সময় বলে কল্পনা বন্ধ কর জুঁই!

সুখী পরিবার

যে গল্পটা বলতে চাচ্ছি যেটা বলার আগে আমাদের হুজুরের বর্ণনাটা দেয়া দরকার। নাহলে ঠিক বোঝানো যাবে না কেমন ইতর ছিল এই ব্যাটা।

ঢাকায় যখন আমরা এসেছি তখনও আমি স্কুলে পড়ার বয়স অর্জন করতে পারি নি। আপুকে নতুন স্কুলে দেয়া হয়েছে। আমরা আসার কিছুদিন পরই বাসায় আমার ছোট চাচা এসেছে বেড়াতে। আমার বোনের বয়েসী তার মেয়ে এর মধ্যে আরবী শেখার জন্য হুজুরের কাছে যাচ্ছে আর বেশ ভাল করে শিখছে বলে বেশ একটা বড়াই করে আব্বুকে শুনিয়ে গেল। তখন আব্বু ভাবল হ্যাঁ মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে। তাকে এখনই আরবী শেখাতে হবে। তো আমাদের যে হুজুর পড়াতে আসতো সে ছিল বাসার কাছে মসজিদের মোয়াজ্জেম। এই লোকটাকে আমি কেন যেন চোখেই দেখতে পারতাম না। আম্মু চা দিতে গেলেই যে আম্মুকে প্রত্যেকদিন আমার নামে নালিশ দিতো যে আমি নাকি দুষ্টু। আম্মু খুব অবাক হতো এটা শুনে কারণ আপুর সামনে আমি দুষ্টু বলা মানে প্রতিভাবান রেখে বাড়ীর রাখালের গুণ গাওয়ার মত অবস্থা! হুজুর চিনিখোর ছিল! হুজুরকে চা দিয়ে যাবার সাথে সাথে সে কাপ দিয়ে আম্মু কাছে আপুকে পাঠিয়ে দিতো চায়ে চিনি হয় নি বলে। আম্মু পিচ্চি কাপের মধ্যে ৩ চামচ চিনি দিলেও বলে হয় নাই। একদিন আম্মু রাগ করে আধা কাপ চিনি আর একটুখানি চা দিয়ে এক ঘন সিরাপ ব্যাটাকে দিয়েছিল। সেই চা খেয়ে সে বলে আজকে চায়ে চিনি হয়েছে! যা হোক যা বলছিলাম তাই বলি, আমার দাদী আমাদের সাথে থাকত তখন। আমি কেন হুজুরকে দেখতে পারি না এটা জানার জন্য আপু যে রুমে পড়তো তার পাশের রুমের জানালার পর্দা একটুখানি ফাঁকা করে দেখে যে হুজুর আমাকে জোর করে কোলে বসিয়ে বিশ্রী করে আমার গালে চুমু দিচ্ছে আর আমি রাগে হুজুরের দাঁড়ি আমার সর্ব শক্তি দিয়ে টানছি! তাই দেখে আমার দাদী আমাকে ডাক দিয়ে বলেছে “দাদু আমার কাছে আসো। আর হুজুর আমি এই জানালার কাছে দাঁড়ানো আছি আপনি পড়ান।” অসভ্য হুজুর তো বুঝেছে দাদী কেন এটা বলেছে। সেদিন হুজুর যাবার পর আম্মুকে ডেকে বলেছে যে হুজুরকে কালকেই বাদ দিয়ে দেবে। এই রকম বদ হুজুরের কাছে আরবী শেখার দরকার নাই।

এই হুজুর যেদিন আব্বুর সাথে আপুকে পড়ানোর ব্যাপারে প্রথম কথা বলতে এলো সেদিন আমি আর আপু আব্বুর কাছেই দাঁড়ানো ছিলাম। তো আব্বু অনেক গল্প করতে করতে জিজ্ঞেস করেছে, “হুজুর আপনার কয় ছেলে-মেয়ে?” হুজুর বলেছে, “আল্লাহ দিলে আছে আমার ৬ মেয়ে আর ৪ ছেলে।” আপু পাশে দাঁড়িয়ে এই কথা শুনে আব্বু কিছু বলার আগেই হাতে গুণে বলে, “আপনার ১০টা ছেলে-মেয়ে?! আপনার তাহলে অসুখী পরিবার।” আব্বু আর হুজুর চরম আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করেছে কেন? তখন আপু বলে “নরডেট ২৮ ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তানই যথেষ্ট।” আব্বু রাগে কিটমিট করে তাকিয়েছে দেখে ও আব্বুকে বলে “আমরা দুবোন আমরা সুখী পরিবার তাই না আব্বু?”

হুজুরের সামনে এরকম অপদস্থ হবার পর আব্বু তো এসে আম্মুকে বকা যে মেয়েকে এসব কি শিখিয়েছ? আম্মু তখন বলে আমি কি আর এসব শিখিয়েছি? সারা দুপুর রেডিও নিয়ে বসে থাকে দুই মেয়ে সেখান থেকে শিখেছে! কিছুদিন আম্মু অবশ্য চেষ্টা করেছিল আমাদের কে রেডিওর হাত থেকে উদ্ধার করতে তবে তখন দুপুরের ঘুমের কাছে আম্মু পরাস্থ হয়ে যেত আর আমাদের পাখা বের হতো শয়তানী করার জন্য!

নরডেট ২৮ বলুক আর সেই বলুক কথা সত্যি আমরা সুখী পরিবার।

(চলবে)

এক টুকরো শৈশব-১
এক টুকরো শৈশব-২
এক টুকরো শৈশব-৩


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

খুব মজা পেলাম আপনার শৈশবের গল্প পড়ে। আগের গুলও পড়েছিলাম। আমি তো মনে মনে খুঁজছিলাম শৈশবের গল্প বলা মেয়েটা গেল কই? আর হাঁ আমরাও দুই বোন, তাই হয়তো আপনার গল্পটা আমার বেশিই ভাল লাগে চলুক
-লাবণ্যপ্রভা

মেঘা এর ছবি

ধন্যবাদ লাবণ্য আপু। অনেকদিন ধরে আমার লিখতে না পারা অসুখ হয়েছি। কোন লেখাই লিখে শেষ করা হয় না। হাতে আছে অনেক লেখা। কী যে বিশ্রী সমস্যা মন খারাপ নিজের ছোটবেলার গল্প লেখা সহজ তাই শেষ পর্যন্ত এটাই লিখতে পারলাম দেঁতো হাসি দুই বোন মানেই মজা।

অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

শাব্দিক এর ছবি

আম্মু হাসপাতাল থেকে আসার পর আপু আম্মুর ব্যাগের মধ্যে খুব তল্লাশি চালিয়ে অবাক হয়ে বলল “বাবু কই?” আম্মুও ভীষণ অবাক হয়ে আপুকে জিজ্ঞেস করে “কার বাবু?” আপু মনে হয় তখন আরও বেশি অবাক হয়েছিলো এই কথা শুনে। তারপর আম্মুকে বলেছে “বাবু আনতে যাও নাই তাহলে হাসপাতালে গেছো কেন?”

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
আমার মা ও একবার হাসপাতালে গিয়েছিল, বাবুসহই ফিরেছিল, কিন্তু বাবুটা ছেলে বাবু ছিল, খালি কাঁদত সারাদিন ট্যা ট্যাঁ করে।
আপুকে খুবি পছন্দ হল, নিজের কোন বোন না থাকার কষ্টটা আরেকবার অনুভব করলাম।

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

মেঘা এর ছবি

আমরাও তো তাই ভেবেছিলাম যে হাসপাতালে মানুষ বাবু আনতেই যায়। শুধু আমার আম্মুই একা চলে এসেছিল মন খারাপ অনেক মন খারাপ করেছিলাম।

আমার আপু তো অনেক মজার ছিল দেঁতো হাসি ও না থাকলে আমার জীবনটা যে কী হতো!

অনেক ধন্যবাদ শাব্দিক আপু হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চমৎকার লেখেন তো আপনি।
পড়তে বেশ ভাল লাগল।

মেঘা এর ছবি

ধন্যবাদ রাজা ভাই হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

আপনার এই সিরিজের লেখাগুলো পড়লে কী মনে হয় জানেন? চৈতালী সন্ধ্যায় আপনাকে উঠানের এক কোনে পানের বাটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলি, "গল্প বল, তোমার ছোটবেলাকার রোদ মাখানো দিনগুলির গল্প বল আপু। " হাসি কিছু গল্প আছে পড়ার চাইতে শুনতে বেশি আরাম। কেউ একজন স্বপ্নালু চোখে শৈশবের দিনগুলি দেখবে আর আপন্মনে বলে যাবে সোনালী সূর্যের গল্প। হাতের মুঠোয় আলো ধরে রাখার গল্প।

ভাল থাকবেন।

মেঘা এর ছবি

আমি যদি দাঁত পরে যাওয়া রকমের বুড়ো হয়ে যাই কখনো তাহলে নিশ্চিত পানের বাটা কোলে করে এমন করেই মনে হয় গল্প করবো দেঁতো হাসি

এই ছেলেমানুষি লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। খুব ভাল থাকবেন। অনেক শুভকামনা।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অতিথি লেখক এর ছবি

স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো।

“হুজুর আপনার কয় ছেলে-মেয়ে?” হুজুর বলেছে, “আল্লাহ দিলে আছে আমার ৬ মেয়ে আর ৪ ছেলে।” আপু পাশে দাঁড়িয়ে এই কথা শুনে আব্বু কিছু বলার আগেই হাতে গুণে বলে, “আপনার ১০টা ছেলে-মেয়ে?! আপনার তাহলে অসুখী পরিবার। গড়াগড়ি দিয়া হাসি

ছোটবেলায় আমাদের কত সহজ অভিব্যাক্তি , এখনও মনে পড়লে একা একা হাসি। আপনার লেখা সেই সব স্মৃতি মনে করিয়ে দিল।

ভালো থাকবেন মেঘা আপু।

অমি_বন্যা

মেঘা এর ছবি

আমরা তো এরকম কত ভয়াবহ কথাবার্তা যে বলতাম। আম্মুকে লেখা পড়ে শোনাচ্ছিলাম একটু আগে তখন আম্মু বলে এটা বলে নাই তো! বলেছিল আপনার ১০টা ছেলে-মেয়ে? নরডেট ২৮ খাওয়াতে পারেন না? হো হো হো

ধন্যবাদ অমি ভাই হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

পানর বাটা কোলে নিয়ে নাতি-পুতিদের শোনানো গল্প ভালই লাগছে। খাইছে চলুক

মেঘা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। পানের বাটা হাতে নিয়ে গল্প শোনানোর মত অতদিন বাঁচবো কিনা কে জানে! তাই গল্পগুলো এখনই শুনিয়ে যাই। অন্য কেউ নাহয় আমার গল্প বই থেকে পড়ে নাতি পুতিদের শোনাবে দেঁতো হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

তারেক অণু এর ছবি

খুব সুন্দর লেখা, বৃষ্টির রিম ঝিম শব্দের মত!

মেঘা এর ছবি

অণু ভাইয়া লেখার উপমা খুবই পছন্দ হয়েছে দেঁতো হাসি ধন্যবাদ আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

গৃহবাসী বাঊল এর ছবি

লেখা খুবই কুইট আই মিন কিউট হইছে। হাততালি

আপনার লেখা পড়ে আমার ফুফাত বোনের কথা মনে পড়ে গেল।
ওর বয়স তখন ৪ কি ৫ বছর। ফুটফুটে, গাব্দা গোব্দা সাইজ। বেশিরভাগ সময় নিজের মত থাকে, আর মাঝে মাঝে এসে একটু আধটু আল্লাদ করে, খুব বেশি কথা বলে না। একবার তারা বাসা বদল করছে। বাসার সবাই ব্যস্ত। বোন তার নিজের মত খেলছে। খেলতে খেলতে এক পর্যায়ে তার হাতে পড়ে কিছু ছবির এলবাম। এবং সে মনযোগ দিয়ে সেই এলবাম দেখতে থাকে। কেউ কিছু বলেনি তাকে। দুপুরে খাওয়ার সময় তাকে খেতে ডাকা হল, সে রাগত স্বরে জানিয়ে দিল এখন থেকে সে কিছুই খাবে না। ভয়ানক রাগ করেছে, যেটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ। তাকে জিজ্ঞেস করা হল রাগ করার কারণ। সে জানাল, এলবাম থেকে সে তার বাবা মায়ের বিয়ের ছবি দেখেছে, এবং সেই ছবি দেখে সে রাগ করেছে। তার বাবা মা তাকে সব বিয়েতে নিয়ে যায়, কিন্তু তাদের বিয়েতে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এতে সে চরম অপমান বোধ করেছে এবং প্রতিবাদ হিসেবে সে না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারপর তাকে যতই বোঝানো হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে চাচ্ছে না। তার একই কথা, তার বাবা-মা তাকে আপন মনে করে না, তাই তাকে তাদের বিয়েতে দাওয়াত দেয় নি। হা হা হা। সেই বোন এখন ভার্সিটিতে পড়ে। আমরা এখনও ওকে এই কথা বলে খেপাই।

আপনার ছোটবেলার কথা বলা জারি থাকুক। ইটা রাইখ্যা গেলাম... পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

মেঘা এর ছবি

আপনার বোনের কথা শুনে খুব হাসলাম গড়াগড়ি দিয়া হাসি ছোটবেলায় বাবা মার বিয়ে আর আমরা কোত্থেকে আসলাম এ এক জটিল প্রশ্ন ছিল আমার কাছে। আম্মুকে নাকি একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম "আমা আমি কোথেকে আছলাম?" তখন আম্মু বলেছে আকাশ থেকে। সাথে সাথে আকাশের দিকে তাকিয়ে পরের প্রশ্ন "কিভাবে আছলাম?" আম্মু বলেছে তুমি জুঁইয়ের লেজ ধরে চলে এসেছো। আমার বোনের সে কী চিন্তা তারপর থেকে যে ওর একটা লেজ আছে। পিছনে হাত দিয়ে সে সেই লেজ খুঁজতো খাইছে

পড়ার জন্য ধন্যবাদ গৃহে থাকা বাউল হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

ফাহিম হাসান এর ছবি

স্মৃতিচারণ সবসময়ই ভালো লাগে। তবে হুজুর প্রসঙ্গে প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়ে গেল - এই ধরনের লোককে শক্ত মার দিতে পারলে আত্মা ঠাণ্ডা হত।

মেঘা এর ছবি

সেটাই এই ধরণের হুজুরদের মার দিলে এদের স্বভাবে পরিবর্তন আসতো হয়ত। আর এগুলোই কিন্তু চাইন্ড এবিউজ। যেটা একটা বাচ্চার মনে খুব খুব মারাত্মক রকমের বাজে প্রভাব ফেলে। বড় হয়ে ভয় আতংক এই ধরণের ঘটনা থেকেই জন্ম নেয় মনের মধ্যে।

পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন। হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

আপনার ছোটবেলার কথা পড়তে পড়তে নিজের ছোটবেলা চোখে ভাসছিল।
শুধু আপনার বোনের জাইগায় আমাকে বসাতে হবে আর আপনার স্থানে আমার বোনকে হো হো হো

খুব চমৎকার লেখা আপনার, ভীষণ ভালো লাগলো। চলুক

মেঘা এর ছবি

আমার আম্মু শুনে শান্তি পাবে যে এরকম আরো বাচ্চা আছে। আম্মুর ধারণা আমাদের মত বদ বাচ্চা নাকি মানুষের হয় না আম্মুর একাই হয়েছে।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ আরজু আপু।

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চিন্তিত

কড়িকাঠুরে এর ছবি

ঝরঝরে...

মেঘা এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

কৌস্তুভ এর ছবি

হেহেহেহে ভারি মজা পেলাম। দেঁতো হাসি

(হুজুরদের কথা আর কী বলি...)

মেঘা এর ছবি

থ্যাংকু কৌ'দা দেঁতো হাসি

(হুজুরগুলো বদের হাড্ডি। এদের শক্ত মার দিতে পারলে লুল গিরি ছুটে যেত রেগে টং )

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নিলয় নন্দী এর ছবি

ছোটবেলার গল্পগুলো সব সময়ই ভাল লাগে।
আম্মুর হাসপাতাল কাহিনিটা খুব মর্মস্পর্শী। ইয়ে, মানে...
এরকম আরো লেখা চাই।

চলুক

মেঘা এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ নিলয়'দা। ভীষণভাবে লজ্জিত এতো দেরিতে উত্তর দেবার জন্য। নতুন কোন মন্তব্য কোন লেখাতে এসেছে কিনা এটা আসলে বুঝতে পারি না তাই মিস হয়ে যায়। লেখাটা আবার শুরু করবো ভাবছি হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

অনিকেত এর ছবি

আমি আম্মু হারানোতে এতো বেশি ভয় পেয়েছিলাম যে আম্মুকে রেখে আর কোথাও যেতাম না। আম্মু রান্না করলে একটু পর পর রান্না ঘরে যেয়ে আম্মুকে দেখতাম আর বলতাম “আমা কি কলো? নান্না কলো? আত্তা তুমি নান্না কলো আমি খেলি।” আমার এই জোর পাহারার কারণেই আমার আম্মুকে আমি আর হারাতে দেই নি।

--আহা রে .....

মেঘা এর ছবি

মন খারাপ আম্মুটা অনেক অসুস্থ এখন। আমি খুব জোর পাহারা দিয়ে রাখি। আম্মুকে হারিয়ে যেতে দিবো না কখনো ওঁয়া ওঁয়া

পড়ার জন্য ধন্যবাদ অনিকেত'দা হাসি

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।