গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর প্রথম যে বইটা পড়েছিলাম সেই বইটার নাম খুব অদ্ভুত ছিল! Memories of My Melancholy Whores নামটা দেখেই মনে হয়েছিল, এই বইটা দিয়েই না হয় আমি মার্কেজ-এর জাদুময় জগতে প্রবেশ করি! বই পড়তে শুরু করেই বলা চলে বেশ বড় সড় একটা ধাক্কা মত খেলাম। কারণ গল্পের প্রধান চরিত্র নব্বই বছরের একজন বৃদ্ধ সাংবাদিক! যে তাঁর নব্বইতম জন্মদিন পালন করতে চাচ্ছেন একেবারেই নিজের মতন করে! কোন অনুষ্ঠান অথবা শুভেচ্ছা না। সে নিজেই নিজেকে একটা উপহার দিতে চায়। আর সেই উপহার একটা ভালবাসার মানুষ! এক কিশোরী যৌন কর্মীর সাথে সময় কাটিয়ে সে তাঁর নব্বইতম জন্মদিন পালন করতে চায়। কারণ একটাই, সারাজীবন ভালবাসার ব্যাপারে উদাসীন হলেও শেষ বেলায় তাঁর মনে হয়েছে সে এই কিশোরী মেয়েটার জন্য সব করতে পারে। আর মেয়েটির কাছে এটা শুধুই শরীর বিক্রি করে তাঁর পরিবারকে আরও একটু সচ্ছল রাখার প্রচেষ্টা মাত্র। গল্পের একটা পর্যায় যেয়ে পাঠকের মনে এই ভাবনাই আসবে যে, ভালবাসার সত্যি কোন বয়স নেই। যে কোন বয়েসে, যে কেউ ভালবাসতেই পারে! তবে এতো আয়োজন এতো অপেক্ষা যে কিশোরীর জন্য শেষ পর্যন্ত পড়েও আপনি বুঝতে পারবেন না বৃদ্ধ সাংবাদিক কেন কোনোদিন কিশোরী মেয়েটির মুখ দেখার চেষ্টা করলেন না? গভীর ঘুমে নিমগ্ন কিশোরীর নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার জন্যেই হয়ত সে রাতের পর রাত কিনে নিতো কিন্তু কোনোদিন ঘুম ভাঙাত না! তবুও নব্বই বছরের বৃদ্ধ জেনে ছিল এই মেয়েটি তাঁর ভালবাসা আর ঘুমিয়ে থেকেও কেমন করে যেন ভালবেসে ফেলে মেয়েটা বৃদ্ধকে!
অসম্ভব জনপ্রিয় এই বইটি ইরানে ২০০৭ সালে সেখানকার সরকার নিষিদ্ধ করে দেন এই কথা বলে যে, “মার্কেজ এর এই বই পড়ে সব তরুণীরাই পতিতা হতে চাইবে!”
যদিও আমার পড়া প্রথম বই হতে পারতো “নিঃসঙ্গতায় একশ বছর” বইটি! অনেকদিন ধরে বাসায় থাকলেও কেন যেন ইচ্ছা করে নি পড়তে শুরু করি। ব্যাপারটা অনেকটা এমন, খুব মজার কোন খাবার বাচ্চারা পরে খাবো, পরে খাবো করে যেমন রেখে দেয়, অনেকটা তেমন। আমি জানি আমি বইটা পড়লেই চরমভাবে মুগ্ধ হবো আর সেই সাথে পড়ে ফেললেই বইটা শেষ হয়ে যাবে চিন্তা করে আমি অনেক দিন পড়ি নি। অবশেষে একদিন পড়েছি এবং অবধারিতভাবে ভয়াবহ ভাবে মার্কেজ-এর জাদুময়তায় আসক্ত হয়ে গেছি। এর পর একে একে অনেক বই পড়া হয়েছে। জেনেছি একটা মানুষ কত অসাধারণ কল্পনা শক্তির অধিকারী হতে পারে, কত অসাধারণ ভাবে অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যতকে এক লাইনে লেখার ক্ষমতা রাখে! জেনেছি সত্যিকার অর্থে কথার জাদুকর কাকে বলে!
অনেক বই পড়া হলেও আমার কখনো কোন বইয়ের রিভিউ লেখা হয় নি। সম্প্রতি মার্কেজ-এর Chronicles of a death foretold বইটা পড়া হলো। যখন বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম তখন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম এই নিয়ে। সেখান থেকে জেনেছিলাম অনেকেই এই বইটা পড়ে নি! কিছুটা উপযাজোক হয়েই বলা যায় নিজের কাঁধে রিভিউ লেখার দায়িত্ব নিয়ে নিলাম। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কে নিয়ে কোন কিছু লিখতে অথবা বলতে অনেক বেশি সাহসের প্রয়োজন এবং সেই পরিমাণ জ্ঞানের প্রয়োজন রয়েছে অবশ্যই। তারপরও খুব সাহস করে মাত্র শেষ করা বই Crónica de una muerte anunciada এর ইংরেজি অনুবাদ “Chronicles of a death foretold” নিয়ে একটা রিভিউ লিখবো ভেবেই ফেললাম। ভাবা পর্যন্তই আমার কাজ হয়েছে আসলে! এতদিন ধরে সাহস করে লিখেই উঠতে পারছি না। লিখতে গেলেই মনে হয় আমি কি লিখবো? আমি কি জানি আর কতটাই বা বুঝি ম্যাজিক রিয়েলিজমের? জানি না কী হতে যাচ্ছে এই লেখা তবুও সাহস করে যারা পড়েন নি তাঁদের একটা ধারণা দিতে চাই “একটি পূর্বঘোষিত মৃত্যুর কালপঞ্জি” নামক গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ-এর এই উপন্যাস সম্পর্কে! যেটাকে নিঃসন্দেহে অন্যতম সেরা উপন্যাসের একটি বলতেই পারেন নির্দ্বিধায়! স্প্যানিশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদের কাজটি করেছেন মার্কেজের প্রশংসা ধন্য লেখক গ্রেগরি রাবাসা।
সাধারণত লেখকেরা যে কাজটা করেন সেটা হলো, গল্পের প্রধান চরিত্র যে থাকে সে মারা যাবে এটাই যদি গল্পের শেষে তাঁর নিয়তি হয়ে থাকে তো লেখক পুরো গল্প এমন ভাবে লিখে যান যেন যারা পড়ছে তাঁরা গল্পের শেষ পৃষ্ঠায় আসার আগে বুঝতেই না পারেন যে একটা মৃত্যু ঘটতে যাচ্ছে। পাঠক বিপুল বিস্ময়ে আবিষ্কার করে গল্পের প্রধান চরিত্র মৃত!! পাঠকের বিস্ময়ে গল্প সার্থক হয়। তবে অন্য সব লেখকদের সাথে মার্কেজকে মিলিয়ে ফেলা যাবে না কোনও স্তরেই। মার্কেজ গল্পের প্রথম লাইনেই জানিয়ে দিয়েছেন যে তাঁর গল্পের প্রধান চরিত্র সান্তিয়াগো নাসার মারা যাবেন এই উপন্যাসে। আর যেদিন মারা যাবে সেদিনের সকালের বর্ণনা দিয়েই গল্প শুরু হয়েছে। মানে পড়তে শুরু করেই আপনি জেনে যাচ্ছেন যে শেষ পরিণতি একটা মৃত্যু। ভাবছেন হয়ত বিস্মিত হবার মত কিছুই থাকল না তাহলে এই বইয়ে! কিন্তু যেহেতু বইয়ের লেখক মার্কেজ সাহেব তাই একটি পূর্বঘোষিত মৃত্যুর ঘটনাও যে আপনাকে কতটা বিস্মিত এবং হতবাক করতে পারে এবং কেমন করে গল্পকে শ্বাসরুদ্ধকর পর্যায় নিয়ে যেতে হয় এই বই তার উদাহরণ!!
এই বইটা শুধুমাত্র গল্পের মেটাফোরিং উপস্থাপনের জন্যেই না সেই সাথে মার্কেজের ব্যক্তিগত কিছু সিদ্ধান্তের কারণেও উল্লেখযোগ্য। মার্কেজ তাঁর জীবনে লেখালেখির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুইবার। একবার স্বৈরশাসক যতদিন পতন না হবে ততদিন তিনি আর কলম ধরবেন না ভেবেছিলেন আর একবার মায়ের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এই বইয়ের চরিত্রেরা যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাঁদের নিয়ে কিছুই লিখবেন না। ত্রিশ বছর আগের এই ঘটনার অনেকেই ছিলেন মার্কেজের পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন। তবে সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা না করে শেষ পর্যন্ত সত্যিকারের সেই ঘটনা থেকে যে উপন্যাস মার্কেজ লিখেছেন সেটা অনেকটাই বাস্তব বিবর্জিত হয়েছে, সেটা মার্কেজের নিজের বলা কথা।
ছদ্ম নৈতিকতা ও মর্যাদাবোধের রহস্যময় ধারায়, এই গুপ্ত চক্রান্তের কাহিনী পরম্পরা ও আতঙ্ক কলাম্বিয়ার অভ্যন্তরের বদ্ধজলে আবদ্ধ একটি ছোট্ট ঘনবসতিকে কতটা জটিল করে তুলতে পারে তার অসাধারণ দৃষ্টান্ত এই বই। কাহিনী বর্ণনাকারী মার্কেজ নিজেই সময়ের সাথে একবার এগিয়ে একবার পিছিয়ে গল্পের বর্ণনা করেছে। গল্প শুরু হয়েছে যেদিন সান্তিয়াগো নাসারকে বিকারিও ভাইয়েরা মারতে আসবে সেদিনের ভোরে খুব অল্প সময়ের জন্য ঘুমিয়ে দেখা স্বপ্নের বর্ণনা দিয়ে। আরব বাবা এবং কলাম্বিয়ান মায়ের একমাত্র সন্তান সান্তিয়াগো নাসার একুশ বছর বয়েসেই বিশাল বড় পারিবারিক র্যাঞ্চের মালিক হয়ে যায় বাবা মারা যাবার কারণে। লেখক স্বয়ং সাংবাদিক হিসেবে সাতাশ বছর পর যখন এই পূর্বঘোষিত হত্যা কাণ্ডের ব্যাপারে খোঁজ করতে শুরু করে তখন সান্তিয়াগো নাসারের মা প্লাসিদা লিনেরো সেদিনের ঘটনার সব খুঁটিনাটি মনে করে বলতে যেয়ে বলছিল “গাছ-পালার স্বপ্ন দেখত সান্তিয়াগো সব সময়”। প্লাসিদা লিনেরো ছিলেন অন্যের দেখা স্বপ্নের অর্থ বলে দেয়ায় বিশেষ পারদর্শী। কিন্তু সেদিন সে তাঁর ছেলের দেখার স্বপ্নে কোন অশুভ লক্ষণ দেখতে পান নি। বরং বলেছিলেন, “পাখির বিষয়ে কোনও স্বপ্নের মানেই হলো ভাল স্বাস্থ্য!” সেদিন খুব কম সময় ঘুমিয়ে সান্তিয়াগো স্বপ্ন দেখেছিল গাছপালার পরিবেষ্টিত বনের মধ্যে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে সে হেঁটে বেড়াচ্ছে। স্বপ্নেই খুশি হয়ে উঠছিল তাঁর মন। তবে ঘুম থেকে ওঠার পর তাঁর মনে হয়েছিলো তাঁর পুরো শরীর পাখির গুয়ে মাখামাখি হয়ে গেছে! ভোর ছয়টায় বিশেষ অনুষ্ঠানে পরার মত পোশাক পরে বের হয়ে যাচ্ছিল বিশপের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে তখন সে সাথে করে কোন অস্ত্রই নিয়ে বের হয় নি। অথচ আরব বাবার কাছ থেকে সান্তিয়াগো শিখেছিল কীভাবে করে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করতে হয়, উড়ন্ত পাখি শিকার করতে হয়। আর মায়ের কাছ থেকে সে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিল ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ব্যাপার! কিন্তু ভোরবেলা বাড়ি থেকে বের হয়ে এক ঘণ্টা পর মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত সে তাঁর এই সহজাত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে একটুও আন্দাজ করতে পারে নি তাঁর অবধারিত মৃত্যু। বরং সেদিনের সেই সকালে যারা তাঁকে দেখেছিল তাঁদের মনে হয়েছে সান্তিয়াগো কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন কিন্তু তাঁর মন ভাল। আর সে সবার কাছেই বলেছিল যে আজকের দিনটা ভারি সুন্দর! অস্ত্র চালনাতে পারদর্শী হলেও কখনো গুলি ভরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতো না সান্তিয়াগো বাবার কাছ থেকে শিক্ষা পাবার কারণে। আর সেটা বেকারিও যমজ ভাইদের ভালই জানা ছিল।
সকালে সাজ পোশাক পরে বাড়ি থেকে বের হবার সময় মাকে সান্তিয়াগো জানিয়েছিল সৌভাগ্যক্রমে যদি বিশপের হাতে চুম্বনের সুযোগ পেয়ে যায় তাই এই বিশেষ কাপড় পরে নদীর তীরে যাচ্ছে বিশপকে অভ্যর্থনা জানাতে। আর প্লাসিদা লিনেরো বলেছিলেন, বিশপ এই শহর ঘৃণা করেন আর সে নৌকা থেকেই নামবেন না। তবুও ধর্মের উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল সান্তিয়াগোর। সান্তিয়াগো নাসার থাকতো তাঁর মা প্লাসিদা লিনেরো আর রাঁধুনি ভিক্তোরিয়া গুসমান ও তাঁর মেয়ে দিবিনা ফ্লোর কে নিয়ে। ভিক্তোরিয়া গুসমান ছিলেন সান্তিয়াগোর বাবার এক সময়ের রক্ষিতা। যৌবন পেরিয়ে যাবার পর যাকে বাড়ির রাঁধুনি বানিয়ে দেয় ইব্রাহিম নাসার। এই জন্যেই মনে মনে একটা ভীষণ ঘৃণা পুষে রেখেছিল ভিক্তোরিয়া, নাসার পরিবারের জন্য। তাঁর উঠতি বয়েসী মেয়ে দিবিনা ফ্লোরকে নিয়েও সে ভয়ের মধ্যে থাকতো যে সান্তিয়াগো তাঁর মেয়েকে ব্যবহার করবে যেভাবে করে সান্তিয়াগোর বাবা তাঁকে করেছিলো! বাড়ির বৃদ্ধ গৃহকর্তী প্লাসিদা লিনেরোর সাথে কথা বলা শেষ করে লেখক ভিক্তোরিয়া গুসমান ও তাঁর মেয়ের সাথে সাতাশ বছর আগে ঘটে যাওয়া এই অভাবনীয় হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে খোঁজ করতে গেলেও দেখতে পায় মৃত্যুর এতো বছর পরও ভিক্তোরিয়া তাঁর মনের সেই ঘৃণা কিছুতেই লুকাতে পারে না। তাঁর মতে সান্তিয়াগো ছিলো ‘গুয়েরও অধম’ একটা মানুষ!
ইব্রাহিম নাসার তাঁর বিরাট বড় বাড়ি তৈরি করেছিলেন অনেক ছেলে-মেয়ের প্রত্যাশা নিয়ে। বাড়িতে অনেকগুলো ঘর, রান্নাঘর, আস্তাবল ছিল। সাধারণত বাড়ির সামনের যে প্রধান দরজা সেটা বেশিরভাগ সময় থাকতো অব্যবহৃত। পেছনের দরজাটা দিয়েই আসা-যাওয়ার কাজ সারা হতো সব সময়। এই সত্যটা জানা থাকার পরও সান্তিয়াগোর খুনিরা ওকে মারার জন্য বসেছিল প্রধান দরজার বাইরে। আর সেদিন ভোরে দৈবক্রমে সান্তিয়াগো নদীর ডকে যাবার জন্য প্রধান দরজা দিয়েই বের হয়েছিলো। যদিও এর জন্য তাঁকে পুরো বাড়ি ঘুরে তারপর উঠতে হয়েছিল ডকে যাবার রাস্তায়। তবুও কেন সে সামনের দরজা নিয়ে গেলো এটা একটা প্রশ্ন সবার মনেই ছিলো। অনেকে অনেক কিছু বললেও প্লাসিদা লিনেরো জানিয়েছিলেন, সাজ পোশাক পরে সে পেছনের দরজা দিয়ে কখনও যায় না তাই সেদিনও সে সামনের দরজা দিয়ে গিয়েছিল। যে তদন্তকারী কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করেছিলেন এটা তাঁর কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার ছিলো।
ভিক্তোরিয়া গুসমান খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছিল সে সময় যে, সে আর তাঁর মেয়ে এই হত্যাকাণ্ড হতে যাচ্ছে সে ব্যাপারে আগে থেকে কিছুই জানতো না। তবে অনেক পরে সে লেখকের কাছে স্বীকার করে যে নাসার যখন কফি খেতে এসেছিলো ভোরে তখনই তাঁরা জানতো যে বিকারিও ভাইয়েরা নাসারকে মারার জন্য অপেক্ষা করে আছে। আর ভিক্তোরিয়া এটা নাসারকে জানায় নি মাতালের প্রলাপ মনে করে। আর এর পরের লাইনেই মার্কেজ লিখেছেন যে, ভিক্তোরিয়া মারা যাবার পর দিবিনা ফ্লোর জানিয়েছিল সেদিন সান্তিয়াগোকে ওরা মারার জন্য অপেক্ষা করছে জেনেও তাঁর মা কিছুই বলেনি কারণ সে মনে মনে সব সময় চাইতো ওরা ওকে মারুক। এক প্যারার মধ্যে মার্কেজ অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ লিখে দিলেন কোন রকম বাহুল্য ছাড়াই। এই বইয়ের প্রতিটা ঘটনা ঠিক এভাবে করেই বর্ণনা করা হয়েছে। সাতাশ বছর আগে সান্তিয়াগো নাসারের খুনের দিনের বর্ণনার পাশাপাশি সাতাশ বছর পর যখন লেখক তদন্ত করছেন সেদিনের বর্ণনা করেছেন এক লাইনেই। তার পরের লাইনেই হয়ত লিখেছেন আরও পরে সাতাশ বছরের সেই বর্তমানের থেকে ভবিষ্যতের কোন ঘটনাকে। এতো চমৎকারভাবে গল্প বলে যান মার্কেজ যে পাঠকের বিন্দুমাত্র বিভ্রান্ত হবার সুযোগ নেই। মনযোগী পাঠক মাত্রই মুগ্ধ হতে বাধ্য মার্কেজ-এর এই শব্দ খেলায়! অনেকগুলো দৈব ঘটনা পেরিয়ে তবেই এই হত্যাকাণ্ড হয়। যেমন প্রথমেই বলেছি যে সাধারণত পেছনের দরজা ব্যবহার করা হলেও সেদিন সান্তিয়াগো সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়েছিল। আরও একটু ব্যাপার বইয়ে উল্লেখ আছে সেটা হলো প্রধান দরজার নিচ দিয়ে কেউ একজন সান্তিয়াগোকে খুন করার জন্য খুনি অপেক্ষা করছে এটা জানিয়ে একটা চিরকুট দরজার নিচ দিয়ে রেখে গিয়েছিলো। কিন্তু সেটা যতক্ষণ না সান্তিয়াগো মারা গেছে ততক্ষণ কেউ দেখে নি!
এবার তাহলে একটু কেন সান্তিয়াগো নাসারকে বিকারিও দুই যমজ ভাই খুন করতে এলো সেই ব্যাপার নিয়ে একটু লিখি। পেদ্রো আর পাবলো বিকারিও হুবহু এক রকম দেখতে ছিল। দেখতে খুব কঠিন মনে হলেও স্বভাবে দুজনেই ছিলো খুব নরম। সেটার সাক্ষী পুরো শহরে যারাই তাঁদের চেনে তাঁরা সবাই দিয়েছে। যেদিন সান্তিয়াগো মারা গেলো তার আগের দিন ছিলো বিকারিও পরিবারের অসামান্য সুন্দরী মেয়ে আনহেলা বিকারিওর বিয়ে। যমজ দুই ভাইয়ের আদরের ছোট বোন আনহেলার স্বামী এতো বিপুল আয়োজন এই বিয়ে উপলক্ষে করেছিলো যে এতো বড় অনুষ্ঠান এই শহরের কেউ এর আগে দেখে নি, শোনে নি! পুরো শহরের মানুষ আমন্ত্রিত ছিলো এই বিয়েতে। অফুরন্ত খাবার আর পানীয়র ব্যবস্থা ছিলো সবার জন্য। সারা রাত ভর সান্তিয়াগো, লেখক নিজে এবং তাঁদের আরেক বন্ধু ক্রিস্তো বেদোইয়া মদ আর হৈ হুল্লোড়ে মেতে ছিলো। আনন্দ উৎসবের মাঝেই নাসার এই বিয়েতে কত খরচ হয়েছে তার হিসাব করছিলো। আর বন্ধুদের জানিয়েছিল সে ঠিক এমন ভাবে বিয়ে করতে চায়। যেন কেউ ভুলতে না পারে তাঁর বিয়ের জাঁকজমকের কথা! পরের দিন বিশপ এসেছিলেন নব বিবাহিত দম্পতিকে আশীর্বাদ দেবার জন্য। যদিও নৌকা থেকে না নেমেই দূর থেকে ইশারায় আশীর্বাদ দিচ্ছেন এমন ভঙ্গী করে নৌকা ঘুরিয়ে চলে গিয়েছিলো বিশপ। তখন পর্যন্ত কারও জানা ছিলো না যে আনহেলার স্বামী বিয়ের রাতে তাঁর স্ত্রী অক্ষতযোনি কুমারী না জেনে তাঁকে তাঁর বাবা-মার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। এই ঘটনা অজানা থাকলেও বিশপের জন্য যারা ডকে অপেক্ষা করছিলো তাঁরা অনেকেই জানতো সান্তিয়াগোকে মারার জন্য অপেক্ষা করে আছে বিকারিও ভাইয়েরা। সবাই ধরেই নিয়েছিল যে সান্তিয়াগো নিশ্চয়ই এতক্ষণে কারও না কারও কাছ থেকে জেনে গিয়েছে যে কী হতে যাচ্ছে আর সে নিশ্চয়ই সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু কেউ নিজে থেকে এসে তাঁকে জানায় নি তাঁর মৃত্যুর পরিকল্পনার কথা। এটাও একটা দৈব ঘটনাই বলা যায়!
কিছুটা আশ্চর্য হবেন আপনি যখন গল্পের আরও সামনের দিকে যেয়ে আনহেলা বিকারিও এবং তাঁর স্বামী বাইয়ার্দো সান রোমান সম্পর্কে জানবেন। আনহেলাকে বিয়ে করার ছ’মাস আগে প্রথমবারের মত এই শহরে এসেছিলো বাইয়ার্দো। তাঁর সাজপোশাক থেকে শুরু করে তাঁর ব্যক্তিত্ব সব কিছুই এই শহরের মানুষদের চেয়ে আলাদা ছিলো। আর সে ছিলো এক কথায় অঢেল সম্পদের মালিক। এবং শৌখিন একজন মানুষ। আনহেলাকে প্রথম দেখাতেই বাইয়ার্দো ঠিক করে ফেলেছিল যে সে আনহেলাকে বিয়ে করবে। স্বভাব সুলভ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের কারণে এক সময় আনহেলার পরিবারকে বাইয়ার্দো রাজি করিয়ে ফেলে শহরে নতুন আগন্তুক অচেনা একজনের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবার জন্য। আর আনহেলার কাছে এই বিয়ে ছিলো শুধুমাত্র বাবা মার ইচ্ছা আর তাঁদের খুশির জন্য ভালবাসা হীন এক সম্পর্কে নিজেকে সপে দেবার মত। তবে বাইয়ার্দো আনহেলাকে মুগ্ধ করার কোন চেষ্টাই বাকি রাখতো না। বিয়ের আগেই সে জেনে নিয়েছিল এই শহরের কোন বাড়িটা আনহেলার পছন্দ। আনহেলা যে বাড়ির কথা জানিয়েছিল সেটা ছিলো পাহাড়ের উপরে বানানো বাগানসহ খুব সুন্দর এক বিপত্নীক বৃদ্ধের বাড়ি। অনেক টাকা খরচ করে,অনেক লোভ দেখিয়ে এই বাড়ি বিয়ের আগেই কিনেছিল বাইয়ার্দো আনহেলার জন্য। এবং একেবারে নতুন করে সাজিয়েছিল তাঁদের ফুলশয্যার জন্য। কিন্তু আনহেলা যে অক্ষতযোনি কুমারী ছিল না এটা কেউ ধারণাও করতে পারে নি। কারণ তাঁর সঙ্গে কারও কোন সম্পর্ক আছে এমন কখনো শোনা যায় নি এবং কারও সাথে তাঁকে কোথাও দেখাও যায় নি কোনোদিন। সে তাঁর মায়ের কঠিন শাসনের মধ্যে বড় হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের দিন রাতে বান্ধবীদের শিখিয়ে দেয়া চতুরতায় যখন আনহেলা তাঁর স্বামীকে ধোঁকা দিতে পারে না তখন বাইয়ার্দো সান রোমান সেই বিয়ের পোষাকেই আনহেলাকে নিয়ে তাঁর মায়ের বাড়ি হাজির হয়। আনহেলার মা পুরা বিকারিও এতো বড় অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়ের চুলের মুঠি ধরে এমন ভাবে মারতে শুরু করে যেন সে কোন শব্দ করতে না পারে। রাত তিনটার দিকে পেদ্রো ও পাবলো বিকারিও বাড়ি ফিরে মায়ের কাছ থেকে বোনের বাড়ি ফিরে আসার ঘটনা জানতে পারে। আর ওরা আনহেলাকে জিজ্ঞেস করছিল, নামটা বলো শুধু। আনহেলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাঁর ভাইদের জানিয়েছিল সান্তিয়াগো নাসারের নাম!
যারা ওই শহরের অধিবাসী ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকে সান্তিয়াগো এবং আনহেলাকে বড় হতে দেখেছেন তাঁরা কেউই মনে করতে পারে না সান্তিয়াগোর সাথে আনহেলার এমন কোন সম্পর্ক ছিলো কিনা। কারণ ফ্লোরা মিগুয়েলের সাথে সান্তিয়াগোর বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়েছিল। কিন্তু তবুও নিজের এমন বিপদের সময় কেন আনহেলা সান্তিয়াগোর নাম নিলো সেটা পুরো বইতেই স্পষ্ট নয়। এবং শেষ পর্যন্ত পড়েও জানা যায় না আনহেলা কার কারণে কুমারীত্ব হারিয়েছিল। আনহেলাকে তাঁর স্বামী ফেরত পাঠিয়ে দেবার পর যে স্বামীর জন্য আনহেলার কোন ভালবাসার অনুভূতি ছিল না হঠাৎ করেই তাঁর জন্য মনের মধ্যে এক তীব্র ভালবাসার অনুভূতি তৈরি হয় আনহেলার। লেখক এখানে আনহেলার ভালবাসার মানুষকে ফিরে পাবার যে আকুতি আর অধ্যবসায়ের কথা লিখেছেন সেটা পড়ে সান্তিয়াগো নাসার নিরপরাধ হবার পরও আনহেলার একটা মিথ্যার কারণে তাঁর মৃত্যুর ঘটনাটার জন্য আপনি তাঁকে ঘৃণা করতে পারবেন না। আনহেলা যেভাবে করে অর্ধেক জীবন নিষ্ঠার সাথে বাইয়ার্দো সান রোমানকে তাঁর ভালবাসার কথা জানিয়ে চিঠি লিখে গেছে সেটা এক অভাবনীয় ব্যাপার। এবং অবশেষে তেইশ বছর পর একদিন বাইয়ার্দো আনহেলার কাছে ফিরে আসে সুটকেস ভর্তি খাম না খোলা দুই হাজার চিঠি নিয়ে। ভালবাসা হয়ত এমনই তাকে উপেক্ষা করা যায় না কিছুতেই!
নিজেদের পরিবারের সম্মান রক্ষা করার জন্য বিকারিও ভাইয়েরা সান্তিয়াগো নাসারকে খুন করবে সেটা তাঁরা কারও কাছে না লুকিয়ে বরং জনে জনে ডেকে ডেকে বলেছিল হয়ত তাঁদের এই হত্যা চেষ্টা কেউ নিবৃত করবে অথবা কেই সান্তিয়াগো কে জানিয়ে দেবে আর সে পালিয়ে যাবে চিন্তা করেই। কিন্তু বাস্তবতা এমন হয় নি। চেনা জানা বাড়ির পথে ফেরার সময় যখন সান্তিয়াগো জানতে পারে যে তাঁকে মারার জন্য অপেক্ষা করে আছে খুনি তখন প্রচণ্ড সাহসী, শক্তিশালী মানুষ হয়েও দিশাহারার মত পথ হারিয়ে ফেলে সান্তিয়াগো। আর প্লাসিদা লিনেরো ছেলে যখন প্রায় বাড়ির দরজার কাছে পৌঁছে গেছে এমন সময় জানতে পারেন তাঁর ছেলে খুন হতে যাচ্ছে। আর ছেলে বাড়ির ভেতরে আছে আর খুনিরা বাইরের থেকে এসে ছেলেকে মেরে ফেলবে এই বিভ্রান্তিতে ছেলেকে দৌড়ে আসতে না দেখেই মুখের উপর বাড়ির প্রধান দরজা বন্ধ করে দেয়। আর দরজার সামনেই বিকারিও ভাইয়েরা সান্তিয়াগোকে ভোর রাত থেকে ধার দেয়া কসাইয়ের ছুরি দিয়ে গেঁথে ফেলে। শেষ দৃশ্যের বর্ণনা পড়লে গল্পের প্রথমে বলা স্বপ্নের সত্যতা খুঁজে পাবেন। বাড়িতে ঢোকার জন্য নিজের হাতে নিজের নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে বাড়ির পিছনের দরজার দিকে যাচ্ছে সান্তিয়াগো গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে আর তাঁর পুরো শরীর গুয়া মাখামাখি কিন্তু ঠোঁটের কোণে একটা হাসির আভা যেমন স্বপ্নে তাঁর মন খুশি হয়ে উঠেছিল ঠিক তেমন!
ছোটখাটো আরও অসংখ্য ঘটনা আছে এই বইয়ে চমকে ওঠার মত। যারা পড়বেন তাঁদের ভাল লাগবে আশা করি। রিভিউ আসলে কীভাবে লিখতে হয় এই ধারণা না থাকার কারণেই হয়ত প্রত্যেকটা ঘটনাই বলতে ইচ্ছে হয় আর নিজের মতামত লিখতে ইচ্ছে হয়। তবে রিভিউতে সব বলা হয়ে গেলে আর বই পড়ে কি হবে চিন্তা করে এইবেলা লেখাটা শেষ করছি। ভুল-ত্রুটি হয়ে থাকলে প্রথমবার লিখছি চিন্তা করে বিচক্ষণ পাঠক আশা রাখি ক্ষমা করেই দেবেন।
উৎসর্গ: লেখাটা আমার বর তানভীরের জন্য। বিয়ের পর থেকে আমি লেখালেখি বন্ধ করে দিয়েছি বলে তাঁর অভিযোগের শেষ নেই। যদিও এমন একটা লেখা কেউ মনে হয় বরকে উৎসর্গ করে না। তবুও আমি করলাম। অনেকদিন লিখি না। যা লিখতে পারলাম সেটাই তোমার জন্য বাবুতা।
বিশেষ ধন্যবাদ অণু ভাইয়াকে। রিভিউ লেখার ইচ্ছা ভাইয়াকে দেখেই হয়েছিলো।
মন্তব্য
লেখার জন্য ধন্যবাদ , শেষ অংশটুকু পড়লাম না, কারণ বইটা পড়া হয় নি এখনো!
পড়া হলেই তোমার লেখা আবার পড়ব!
facebook
যতটা পড়েছো ততটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আর অবশ্যই মন্তব্যের জন্য। আমি আসলে রিভিউ না পুরো গল্পই বলে দিয়েছি
আবার পড়ে জানিও ভাইয়া কেমন হয়েছে লেখা।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
হাহহাহা আসলেই প্রায় পুরো গল্পই! আমার এরকম হয় যখন কাউকে প্রিয় কোন সিনেমা দেখার কথা বলতে যাই।
হিহিহি স্যাম'দা আমিও মাঝে মাঝে এই কাজ করি। আগ্রহ নিয়ে মানুষ হয়ত কিছু দেখছে আমি হুট করে বলে দিলাম যে শেষে তো এইটা হবে! আর খাই সবার বকা
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
পড়ার লিস্ট খালি বড় হইতেই আছে... হায় জীবন এত ছোট ক্যানে...
পড়ে ফেলেন দাদা! বই পড়া ছাড়া কি আছে জীবনে?
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
মার্কেজের নিঃসঙ্গতায় একশ বছর প্রথম যখন পড়ি, তখন কেন যেন বুঝিনি কিছুই। অস্থিরতায় ভুগছিলাম কিছু একটা নিয়ে সম্ভবত। খুব বিস্মিত এবং হতাশ হয়ে আবার পড়লাম পুরো মন লাগিয়ে। তারপর পুরো একটা ঘোরের মধ্যে ঢুকে যাওয়া যেন! কী অদ্ভুত একটা বই। কখনো সময় এবং সাহস হলে রিভিউ লেখার ইচ্ছে আছে।
মাবুদে ইলাহী, এখানেও বাবুতা!
Memories of My Melancholy Whores পড়িনি। পড়ব সুযোগ হলে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
হিহিহি তিথীপু আহ্লাদী করা একটা বাজে অভ্যাস আসলে। জায়গা নেই বেজায়গা নেই আহ্লাদী করে ফেলে।
একটা রিভিউ লিখো নিঃসঙ্গতায় একশ বছর নিয়ে। আমি নিশ্চিত তোমার রিভিউ পড়লে মনে হবে দীর্ঘ কোনো কবিতা পড়ছি!
অফটপিকঃ একটা গান দেবার জন্য খুঁজছিলাম তোমাকে ফেসবুকে। তুমি সেখানে নেই।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
ফেইস ভাল না তো, তাই বদ ফেইসবুক বাদ দিমু ঠিক করসি। দুদিনের দুনিয়া।
জিমেইলে পাঠাতে পারো, ঠিকানা জোগাড় করে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
জোগাড় করে ফেলব দেখো
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
পুরোটা পড়লাম-না, বই পড়বো। যতটুকু পড়লাম তাতে মনে হল আপনার রিভিউ লেখার নিজস্ব একটা ঢঙ আছে, চালিয়ে যান।
টোনা-টুনি’র জন্য শুভকামনা।
বুঝতে পারছি আমি আসলে রিভিউ লিখতে পারি না
অনেক ধন্যবাদ তানিম ভাই
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
মেঘা আপু,
আপনার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে পুরা উপন্যাসের একটা সারাংশ পড়ে ফেললাম। আমার বউ এর ও একই রোগ। বিয়ের আগ থেকেই ও যদিও লেখা বন্ধ করে দিসে আলসেমির জন্য ।
চালিয়ে যান।
ধন্যবাদ ভাইয়া। কথা ঠিক এটা আসলে সারাংশই হয়েছে
আমিও দিন দিন বিরাট অলস হয়ে যাচ্ছি। কিছুই করতে ইচ্ছা করে না। আর জামাই সেটা নিয়ে মহা জ্বালায় আছে! ও ভাবছে সব কাজ বাদ দিয়েছি মনে হয় ওর জন্যেই। আসলে ঘটনা অন্য কিছুও হতে পারে ঠিক শিউর না।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
মার্কেজের ছোট গল্পগুলো পড়েছেন? ছোট গল্পগুলো অন্যরকম মোহময়। ঠিক জাদুবাস্তব নয় কিন্তু কী ভীষণ আকর্ষণীয়। রিভিউ পড়লাম না শেষ পর্যন্ত। কারণ বইটি পড়া হয় নি। আর নিঃসঙ্গতায় একশ বছর ঠিক যেন অচেনা একটা তীব্র ঘোরে ডুবিয়ে রাখে অনেকদিন
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
আমি মোটামুটি মার্কেজের যেখানে যা পেয়েছি পড়েই গেছি! ছোট গল্প পড়া হয়েছে বেশ অনেকগুলোই। সব লেখাই আসলে আমার কাছে অসাধারণ লাগে। কোন্টা রেখে কোন্টার কথা বলবো?!
আমি আসলে বুঝে গেছি আমি কিছুই লিখতে পারি নাই দেখে কেউ লেখা শেষ পর্যন্ত পড়ছে না
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
বাবুটা
হয়নি, হয়নি ফেল।
বাবুতা। খুউপ খিয়াল কৈরা।
ইয়ে মেঘা আফা, রাগ কৈরেন না আবার। এট্টু মশকরা করলাম। পেমের ফাঁদ পাতা ভুবনেএএএ....
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আমি এতো সহজে মাইন্ড খাই না ডিয়ার আপু
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
এটা একটা ফাঁকিবাজি কমেন্ট! আর আমি মোটেই বাবুটা লিখি নাই। বাবুতা। আহ্লাদী করে বাচ্চাদের মত করে বলা বাবুটা। আমি একটা আপাদমস্তক আহ্লাদী এবং ঢঙ্গী মেয়ে ভাইয়া। বুঝতে হবে
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
দারুণ লেগেছে আমার। মূল বইটা পড়া থাকলে তোমার লেখাটা একটু মিলিয়ে দেখা যেত। মেঘা, রিভিউ মনে হয়নি আমার তোমার এই লেখা পড়ে। মনে হয়েছে তোমার ব্যাক্তিগত অনুভূতি জানালে পাঠকদের। এইটা আরও মজার। এ ধরণের লেখায় পাঠকদের সাথে একটা আন্তরিক যোগাযোগ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা থাকে। আমার মতে, তুমি আরও লেখো এধরণের লেখা। আর আমার কাছে তুমি যে সারাংশটি লিখেছ, সেটাও বেশ কাজের বলে মনে হল। এতে মূল বই পড়ার আগ্রহটা আরও বেড়ে যায়। ধন্যবাদ। আশীর্বাদ থাকছে।
মনি ভাইয়া অনেক ধন্যবাদ লেখাটা সম্পূর্ণ পড়ার জন্য। এই লেখা তো কেউ পুরোটা পড়ছেই না এমন কিছু লিখবো সাহস দিচ্ছেন? আমি বই তো পড়ি অনেক। চাইলে কিছু কিছু বই নিয়ে লিখতে চেষ্টা করতেই পারি। আমি চেষ্টা করবো ভাইয়া। উৎসাহ আর আশীর্বাদের জন্য ধন্যবাদ। আপনার আন্তরিক মন্তব্য খুব ভাল লাগে আমার। কৃতজ্ঞতা। ভাল থাকবেন। শুভকামনা সব সময়ের।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
তোমাকে আমি একটা পরামর্শ দিতে পারি মেঘা। তুমি বাংলার ছড়া নিয়ে কিছু কাজ করতে পার। তোমার লেখার যেমন স্টাইল, সেটা ঠিক রিভিউ লেখার জন্য উপযোগী নয়, কারণ তুমি তো আদতে রিভিউ লিখছনা। তুমি একটা উপন্যাস পড়ার পর তোমার ব্যাক্তিগত অনুভূতির কথা জানাচ্ছ। তোমার এই লেখাটিতে উপন্যাসের সারাংশের পরিমাণ বেশী, অনুভূতির পরিমান কম। কিন্তু তোমার ওই অনুভূতিটাই পাঠক হিসেবে আমি জানতে চাই। কাজেই তুমি একটা ছড়া পড়লে, কিংবা কবিতা আর তারপর সেই ছড়া কিংবা কবিতা ধরে ধরে আলোচনা করলে। তোমার অনুভূতি পাঠকের কাছে উন্মুক্ত করলে। এটা অনেক সমৃদ্ধ একটি কাজ হতে পারে। ভেবে দেখতে পার।
এ বইটির একটি বাংলা অনুবাদ সন্দেশ প্রকাশনী থেকে মৃত্যুর কড়ানাড়া নামে বের হয়েছিলো।পশ্চিমবঙ্গ থেকে মানবেন্দ্র বন্দোপাধ্যায়-ও সম্ভবত একটি অনুবাদ করেছিলেন।আমার কাছে আশ্চর্য লাগে যে,আমরা বাংলা বা ইংরেজি অনুবাদে-ই মার্কেজের বইগুলো পড়েই এতোখানি মুগ্ধ- মূল পড়তে পারলে ..................................!!!
ছোটখাটো ঘটনা মার্কেজে এতো বেশি যে সব বর্ণনা দেয়া যায় না।আপনার রিভিউ ভালো-ই হয়েছে,ধন্যবাদ।
জানা ছিলো না। বাংলা বইটা পড়া হয় নি। ইংরেজি অনুবাদটা খুব সাবলীল এবং সহজ। পড়তে ভাল লেগেছে। আমারও মাঝে মাঝে এই ইচ্ছাটা হয় যে স্প্যানিশ ভাষাটা শিখে নিতে পারলে বেশ হতো!
পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
এইটা তো পুরা একটা স্পয়লার
পড়লামনা পুরাটা কারণ বই পড়িনাই, বিকারিও রা ক্যান খুন করল ওইটা বই পইড়া দেখুম।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি
নতুন মন্তব্য করুন