তখন কতো আর বয়স। হাঁটতে পারি, কথা বলতে পারি, এই। স্কুলে পড়ি কি না মনে করতে পারি না। একমাত্র বড় ভাই পড়ালেখা করতেন দূর নগর সিলেটে। শীতে বাড়িতে আসতেন। ভাই বাড়ি আসা মানেই গ্রাম ভরে উঠবে খেলাধূলার ঢেউয়ে।
হয়তো কিছুটা শীত নেমেছে বা অনেকটাই। অনেক সকাল ডুবে থাকে কুহেলিকায়। মন চাইতো আরেকটু ঘুমাই, মা'কে জড়িয়ে থাকি। কিন্তু ঘুমাতে পারি না। ভাই এসে নিঃশব্দে ডাকছে, যাতে মা- সে শব্দ শুনতে না পারে। ঘুমের ইচ্ছা তুচ্ছ করে আমিও উঠি। ভাই নিজ হাতে শরীরে পড়িয়ে দিচ্ছে ওমের কাপড়। বলে: আমরা দৌড়াবো, দেখিস আর শীত থাকবে না আর শরীরটাও কি ঝরঝরে হয়...। ঘর ছেড়ে বাইরে বের হয়ে দেখি আমরা দু'জন ছাড়া আর কেউ নাই। ভাইকে বলি, কেউ-ই তো নাই? এতো সকাল কোথায় কোথায় যাবো আমরা দৌড়ে?
দৌড়ের নিয়ম শিখিয়ে দেয়। তবু নিয়ম মতো পারি না দৌড়াতে। আমি দৌড়াই সাধারণ দৌড়। ভাই আবার শেখায়...এভাবে না ও ভাবে... দৌড়াই, মাঝে মধ্যে দেখি মানুষ আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে তা' নেয়। উৎসুক হয়ে তাকায় আমাদের দিকে। কেউ আবার আব্বুর নাম ধরে বলে- অমুক এর দুই ছেলে....
ভাই আবার রাতে ব্যাডম্যান্টন খেলতে যেতো বাড়ি থেকে একটু দূরে। আমি আম্মুকে বলতাম বলো না আমাকে নিতে, আম্মু ভাইকে বললে সে সোজা না বলে দেয়। আমি ঠিক করেছি কাল ভোরে ডাকলে আমিও তখন যাবো না। সত্যি যাই না। সেদিন রাতে ঠিক-ই আমাকে তার সাথে ব্যাডম্যান্টন খেলাতে নেয়, তবে খেলার যোগ্য নয় আমি, আমি দর্শক। এতো রাত হয়ে যায় যে আমি কোথায় ঘুমিয়ে পড়ি বলতে পারিনা। হঠাৎ জাগলে দেখি ভাইয়ের কোলে; আর আমাকে বকছে বলছিলাম-ই না আসার জন্য। আমি শুনে ও না শোনার ভান করি।
২
তখন আমি একটু বড়। স্কুলে পড়ি।
ক্রিকেট ছিলো আমার নেশা। মহল্লায় ২টি দল আছে। একটা বড় দল আর আরেকটা ছোট দল। বড় দল হলো ভাইয়ের, ছোট দল আমার।
কেবল সকাল শুরু হয়। আমার ঘুম ভেঙে যায়। বড় বোনের পাশে ঘুমাই। চেয়ে দেখি ঘরের সবাই ঘুমে। পা টিপে টিপে উঠি। শুধু মুখটা ধুই কোনো শব্দ না করে। খুঁজতে থাকি কোথায় ব্যাট-বল। আম্মু যাতে একটুও টের না পায়, টের পেলেই আমার খেলা গুল্লায় যাবে। চুরের মতো ঘর থেকে বের হতাম, বের হয়ে চলে যেতাম মাঠে। এক এক করে সবাই আসতো, শুরু হতো খেলা। সকালে যে কিছু খাই নি সেটা আর মনে থাকে না। কখনও কখনও খেলতে খেলতে চলে যেতো স্কুল এর সময়, তখন মনের ভেতর সৃষ্টি হতো ভয়। মা-কে না হয় বুঝানো গেলো, কিন্তু ভাই?
৩
এখন শীত আসে। এবারো এলো। আরো আসবে। আমি আর ফেরতে পারি না। ছেলেবেলা এসে দেখে যায় আমায়, মনে করিয়ে দেয় এসব।
এখন তো আর আগের মতো খেলিও না। কোনোদিনই সকাল দেখা হয় না, সকালের বিরহে লিখেছিলাম-
আমাকে নিঝুম এক ঘরে রেখে সকাল ভুল বুঝে চলে যায়,
কোনোদিনই আমার চায়ের কাপে সকাল থাকে না!
থাকেনা খবরের কাগজে এমনকি সবজিঅলার স্বরে।
এখন আমার সকাল কোনো কোনো দিন শুরু হয় দুপুরে। আর জীবনের যতো তিক্ততা সে তো আছেই। আর সে তিক্ততার মাঝে হীরক হয়ে আছে আমার ছেলেবেলা।
মৌসুমী ভৌমিক সব কিছু দিয়ে ছেলেবেলা যেভাবে চেয়েছেন, আমিও সব দিয়ে ছেলেবেলা কে চাই। পাব?
মন্তব্য
শিরোনামের "ছেলবেলা" পালটে ছেলেবেলা করে দেয়া হলো।
ধন্যবাদ জানবেন কালো-মডু
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
কালো মডুরে দেখলে মনে হোয় শোক পালন করছে
ভালো লাগলো অপূর্ব ! ছেলেবেলা ফিরে পাওয়ার সুযোগ নিতে আমি যেকোন কিছু করতে রাজি... ভালো থাকবেন ! *তিথীডোর
আপনিও ভালো থাকবেন।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারণ। ছেলেবেলা আর আসবে না বলেই সে এত মধুর। আরো লিখুন।
.................................................
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা
ধন্যবাদ আপনাকে।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
আহ্!
তবে আমি ছেলেবেলা না, কৈশোর ফেরত চাই- শীতের দিনের অল্পএকটু এক্সটেন্ডেড কৈশোর।
---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
পাঠ করার জন্য ধ্যনবাদ।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
নাহ, পাবেন না। এটা যতো সহজে মেনে নিতে পারবেন, ততো ভালো। কষ্ট কম লাগবে।
লেখাটা ভাল লাগলো। কবিতার পর আপনার গদ্য পড়ার সুযোগ হলো। আরও লিখুন।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
লেখা ভালো লাগলো। অতীতের কথা যেভাবে লিখেছেন তার সাথে এখন কেমন আছেন সে নিয়ে আরেকটু বিস্তার হলে বৈপরীত্যটা আরো চোখে পড়তো। সেটা দরকারি, কারণ এখানে এইটা বোঝা যাচ্ছে না যে আপনি এখন খারাপ আছেন আগের তুলনায়। তা যদি না থাকেন তো ছেলেবেলা ফেরৎ চাওয়ার কারণটা তেমন জোরালো হয় না। আমি নিজে তো কিছুতেই অতীতে যেতে চাই না, আবার ফেরৎ গেলে এবার আর ইস্কুলের গণ্ডিও ডিঙোতে হবে না, ডাহা ফেল মারবো। তার চেয়ে এই বেশ ভালো আছি।
ডাহা ফেল মারবো
দেখি বস লেখতে পারি কি নি।
ভালো থাকুন।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
লেখাটি কিছুটা বিষন্নতায় ডুবিয়ে দিল মন।
এমনই হয়, কিছু জিনিস চাইলেই পাওয়া যায় না।
ভালো থেকো
-----------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
ধন্যবাদ।
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
আমিও চাই। তবে দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত স্কুলের সময়টা বাদ দিয়ে
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমি স্কুলের সময় আরো বেশি করে চাই...
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ছেলেবেলার প্রতি একটা অন্যরকম হাতছানি সবসময়ই অনুভব করি। বড় দুই বোন ছিলো ওরা পুতুল খেলতো আর আমি বীরদর্পে মাস্তানি করে সব ভাংচুর করতাম। একমাত্র ভাই, তাই বেমালুম ক্ষমা পেতাম সবসময়ই। দু বোনের সেলামীর টাকা, মেলার পকেট খরচ সবসময়ই আমার একান্ত সম্পত্তি বলে গণ্য করতাম। কতদিন ঝগড়া করে বিকেলে ওদের স্যান্ডেল চুরি করে মাঠে চলে গেছি যেনো ওরা খেলতে যেতে না পারে !!
আর আজ বড় বোনটি অষ্ট্রিয়া, দেখা হয়না প্রায় বছর খানেক। আরেক বোন ঢাকাতেই আছে কিন্তু সংসারের কঠিন নিয়মে পড়ে দেখা হয় অনেকদিন পর পর। কিন্তু এখনো যদি কপালগুনে আমরা ৩ ভাই-বোন একসাথে হয়ে যাই তবে বাসায় রোজ কেয়ামত নাজিল হয়।
=======================================
সকলই চলিয়া যায়,
সকলের যেতে হয় বলে।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
সকল পরিবর্তন-ই মেনে নিতে হয় আমাদের...
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
পড়লাম ।
ভালো লাগলো ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
হুম...
_____________________________________________
তুমি হতে পারো একটি স্বার্থক বিষাদের সংজ্ঞা। স্বার্থক নদী, স্বার্থক ক্লান্তি অথবা স্বার্থক স্বপ্ন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
স্মৃতিকাতর করে দিলেন!
...................................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
তাই বুঝি জনাব...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
আপনার স্বাক্ষরে সার্থক বানানটা ঠিক করে নিতে পারেন।
ধন্যবাদ আপনাকে।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
নতুন মন্তব্য করুন