কিছুদিন ধরে কেমন জানি হয়ে গেছি! নিজের পরিবর্তন নিজেই বুঝতে পারছি। কোনো ইচ্ছা নাই, আড্ডাও মারছি না বন্ধুদের সাথে। ঘরের ভেতর অন্ধকার করে বসে থাকি। ফেসবুকেও বসি না। সময় তার মতো করেই হাঁটে, আমি শুধু দেখি আরেকটা দিন গেছে। সব কিছু কেমন এলোমেলো লাগে। না এলোমেলো আমি নিজে : জানি না। জানার চেষ্টাও করি না। তবু একটা জিনিস চাইলেও সারাতে পারি না, চোখের সামনে থেকেও না, ভাবনা থেকেও না! অন্ধকার ঘরের ভেতরও জানি মুখটি তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। মুখটা আমার আব্বুর মুখ। এমন আরো হয়েছে; যখনই আমি নিজেক পৃথিবীর অযোগ্য ভাবি, যখন কোথাও নিশ্চয়তার নিশান দেখি না, নিজেকে যখন খুব অসহায় লাগে, গলার কাছে যখন আটকে আসে শ্বাস ঠিক তখনই হাজির হয়ে যান আমার আব্বু। আব্বুর সেই মুখটি যে মুখ ভুলে গেছে আমার ছোট বোন কিন্তু ভুলি নি আমি।
অনেকে জানতে চান আমার আব্বুর অবয়ব আমার মনে আছে কি না! আমি একটু অবাক হই। উত্তর দেই খুব মেজাজ খারাপ করি- "না থাকার কারণ তো দেখি না"। ঠিক তেমনি আমি জানতে চাইলাম আমার ছোট বোনটির কাছে : তোর মনে আছে আব্বুর মুখ? সে কি সহজে মাথা নাড়ায়, নাড়িয়ে বলে "না"। আমি তখন ওর দিকে আর তাকাতে পারি না... আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে, এই লেখাটা লিখতে গিয়ে যেমন হচ্ছে!
মানুষের মৃত্যূ আমাকে খুব একটা নাড়া দেয় না। সত্যি দেয় না, কেনো দেয় না জানি না। আমার আব্বু মারা গেছেন এই জন্য? হতেও পারে।
কাল একজন বৃদ্ধ'র সাথে পরিচিত হলাম নতুন করে। আমি তাকে চিনি, আব্বুর কাছে অনেক আসতেন। আব্বুর স্মৃতি শুনতে আমার সবচে' বেশি ভালো লাগে। বৃদ্ধ প্রায় একশ'র কাছাকাছি। আমি ভাবি, উনিও তো বেঁচে আছেন এতো বয়স পর্যন্ত আর আমার আব্বু ৫৩ তেই কোনো পিছুটান না রেখে চলে গেলেন!
বৃদ্ধ যখন জানলেন আমার পরিচয় তখনই তিনি আমাকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলেন! "তোমার বাপরে আমি ন্যাংটা দ্যাখছিরে ব্যাটা, হে আমরারে তইয়া কবেই গেলোগি, তোমার বাপের মতো ব্যাটা আমার চউখো আর কাউরে লাগে নারে " হঠাৎ টের পেলাম আমার চোখ জলে ভরে গেছে...।
বাড়ির পাশেই আব্বুর কবর। রোজই দেখি। কবরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে পথ ভাঙি। আজ অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলাম কবরের পাশে। কবর দেখা যায় না। শুধু অনুমান করি এখানেই তো ৯৬'র ডিসেম্বরে সাদা কাপড় পড়িয়ে রেখে এসেছিলো সবাই আমার আব্বুকে। দূর সম্পর্কের এক মামা আমাকে ধরে ধরে নিয়ে গেছলেন সবার সাথে। আমি অপলক তাকিয়ে দেখছিলাম গত ২দিন আগে যার সাথে একসাথে ঘুমাতাম সেই মানুষকে আজ মাটিচাপা দিচ্ছে সবাই মিলে।
কবরের খুব কাঝাকাছি গিয়ে ডাক দেই আব্বু... যদি সকল নিয়ম ভেঙে দিয়ে দেন একটা উত্তর এমন আশায়, ডাকি, ১বার ২বার...ডাকতেই থাকি উত্তর তবু আসে না! মনে মনে উচ্চারণ করি ডাকিলে কও না কথা কি নিঠুর নীরবতা...
"শিরোনাম'টা সুমন সুপান্থের একটা লাইন"
মন্তব্য
লেখাটা পড়ে মনখারাপ হয়ে গেল...
এ ধরণের লেখা লেখাটা খুব কঠিন মনে হয়...
আপনার লেখার শিরোনাম অতুলপ্রসাদের একটা গানের লাইন, "ওগো নিঠুর দরদী একী খেলছ অনুক্ষণ, তোমার কাঁটায় ভরা মন...."
লেখাটা ছুঁয়ে গেল। কাছের মানুষ হারানোর বেদনা বুঝি কখনো ম্লান হয়না, যতই সময়ের প্রলেপ পড়ুক।
আপনার লেখার শিরোনামটা অতুলপ্রসাদ সেনের "ওগো নিঠুর দরদী" গানটির লাইন, সুমন সুপান্থ সেখান থেকেই পেয়ে থাকবেন লাইনটি।
এমন ব্যাপারগুলো এজনকে ছাপিয়ে অন্যের মনকেও প্লাবিত করে।
___________________________________________
ভাগ্যিস, আমার মনের ব্যাপারগুলো কেউ দেখতে পায় না!
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
সব স্মৃতি কি ভোলা যায়!?
অনেক ভালো লাগা থাকলো।
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
__________♣♣♣_________
না-দেখা দৃশ্যের ভেতর সবই সুন্দর!
দিলেন আমার প্রিয় বাপটার কথা মনে করায়ে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই জন্মে আমি অন্য কারো লেখা পড়ে এতোটা ব্যাকুল হই নি । অসহায় বোধ করি নি । তাই আপনার ছোট্ট এই লেখায় অনেকগুলো বানান ভুলের বেদনা ভুলে গেলাম ( লেখাটা ২য় বার দেখে নেবার মতো ধৈর্য্য কবে যে আপনার হবে ) !
ভালো লাগলো লেখাটা । এই 'আব্বু'টা আমারও বলেই হয়তো ।
হুম , আমার একটা লেখার এই শিরোনাম অতুলপ্রসাদের ওগো নিঠুর দরদী গান থেকেই নেয়া ।
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
লেখাটা লেখার পর ২য়বার পড়ার কোনো ক্ষমতা দেয়নি আমার চোখ!
*************************************************************************
যা সত্যি তা সব সময় আনন্দের নয়!
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
কিচ্ছু বলার নেই...
--------------------------------------------------
"আমি তো থাকবোই, শুধু মাঝে মাঝে পাতা থাকবে সাদা/
এই ইচ্ছেমৃত্যু আমি জেনেছি তিথির মতো..."
*সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
মনটা কেঁদে উঠল। কোত্থেকে একটা অসহায় নিঃসঙ্গতা এসে জাপটে ধরল হঠাৎ।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এই সাত সকালে মনটা খারাপ করে কেন দিলেন?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
এমন করে লিখেন নারে ভাই, মনের উপর চাপ বাড়ে! বড্ড অসহায় লাগে! ..................................................................
আমি অতো তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চাই না;
আমার জীবন যা চায় সেখানে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় আছে,
পৌঁছে অনেকক্ষণ ব'সে অপেক্ষা করার সময় আছে।
এরকম অনুভূতিগুলো লিখে ফেলাটা সহজ নয়।
'বালক'এর দ্বারাই সম্ভব হল।
ভালো কাটুক সময়গুলো....
-------------------------------------------------------
জানতে হলে পথেই এসো, গৃহী হয়ে কে কবে কি পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
ভালো থাকুন, আর কী বলি!
নতুন মন্তব্য করুন