এতো সাজ জীবনেও সাজেনি নীলা। আজ এতো সেজেছে যে তার কান্না পাচ্ছে। কান্নাটা সেজেছে বলে যে পাচ্ছে তা নয়। কান্না পাচ্ছে তাকে আজ পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায়। সাজিয়ে-গুজিয়ে মানুষের সামনে নিয়ে যাওটাকে নীলা সহজ করে নিতে পারছে না। দুঃস্বপ্নেও এমটা ভাবেনি নীলা। অথচ আর তার মা-বাবা এই কাজটা করলেন। নিথর হয়ে বসে আছে নীলা। কি করবে, কিছু কি পারবে করতে; ভেবে যাচ্ছে, ভেবেই যাচ্ছে! তাকে করতে হবে কিছু একটা, এভাবে সে মেনে নেওয়া যাবে না। পাঁচ বছরের সম্পর্ক তার রাজুর সাথে, রাজু ছাড়া অন্য কাউকে সে বিয়ে করবে ভাবতে পারছে না। ভাবারও দরকার বোধ করছে না। কিছু একটা সে করবে। কিন্তু কিভাবে। ভয় লাগে নীলার। দুই বছর পেছনের দৃশ্য ভেসে উঠে নীলার চোখের সামনে।
রোহিত নীলার বড় ভাই। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো বাবার মতামত উপেক্ষা করে! তারপর, রোহিতকে বের করে দেয়া হলো বাড়ি থেকে। আজ পর্যন্ত রোহিতের সাথে কোন যোগাযোগ নেই বাবা-মা'র। আর এই তাড়াহুড়ো করে আজ নীলাকে বিয়ে দেওয়াটা ও রোহিতের জন্যেই। নীলার বাবার ধারণা রোহিতের ব্যাপারটা জানলে নীলাকে ভালো ঘরে দেয়া যাবেনা। তাই যতো দ্রুত বিয়েটা শেষ করে ফেলা দরকার।
নীলা বুঝে উঠতে পারছে না এই মুহূর্তে সে কি করবে। পাত্রপক্ষ বলে গেছে তাদের পছন্দ হয়েছে। এই সপ্তাহের ভিতরে বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়। নীলার বাবা তো হাতে আকাশ পেয়েছেন। আর দেরি কেনো...
নীলা শুনতে পায় তার বাবা খুব উল্লাসীত। খুব হাসিখুশি। অনেকদিন বাবাকে এমন করে হাসতে দেখেনি। এমন করে আনন্দে দেখেনি রোহিতের ঘটনার পর থেকে বাবা চুপচাপ হয়ে থাকেন সমসময়। আজ অনেকদিন পর বাবার এমন আনন্দে দেখে অন্য রকম আবেগ কাজ করে নীলার ভেতর। ভাবে বাবার জন্যেও সে মেনে নিবে, মুহূর্তেই মনে পড়ে রাজু! তাহলে কি হবে রাজুর? না, এইটা কি করে সম্ভব। সম্ভব না।
নীলা জানলা ধরে অন্ধকার দেখে। অন্ধকারের ভেতর প্রশ্নের উত্তর খুঁজে। তার কি করা উচিৎ কে বলে দেবে তাকে? কাউকে খুঁজে পায়না, কারো নাম তার মনে ধরে না যে, এই জটিলতার সমাধান দিতে পারবে। রাজুর কথা মনে পড়ে কিন্তু রাজু এসব শুনে বলবে "চলো এক্ষনি বিয়ে করি"। হঠাৎ নীলার মায়ের আওয়াজ "কী রে তুই এখনও কাপড় বদলাস নি? কি করলি এতোক্ষণ? এখানে দাঁড়িয়ে করছিসটা কি? জানস তোর বাবা বললো কালকেই তাদের কে বলবে এই সপ্তাহের ভেতর তাদের সুবিধা করে একটা দিন ঠিক করে ফেলতে, কি সুন্দর ছেলেটা আর কতো বড় পরিবার...।" নীলা নির্বাক তাকিয়ে আছে। কোন শব্দ যেনো সে জানে না। নীলার মা চলে যান। নীলা কিছু না বুঝেই মোবাইল হাতে নেয়। একটা মেসেজ দেয়। রাত ১২টায় যেভাবেই হয় তুমি আমার ঘরের জানালায় এসো।
নীলা একটু শান্তি পাচ্ছে। রাত ১২টার আগ পর্যন্ত সে এই বিষয় নিয়ে আর ভাববে না বলেই সিদ্ধান্ত করেছে। এখন কেনো জানি শান্তি লাগছে। পোশাক বদল করে বসে আছে বিছানায়। রাত ১২টার অপেক্ষায়। ঘড়ি এখন ১০.৩০। নীলা কে খেতে ডাকছে, সে যাচ্ছে না। শুধু একবার গিয়ে মা-বাবার মুখটি দেখে আসবে বাবে। দুজনই খুব খুশী। মুখ দেখতে গিয়ে বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে নীলাকে। নীলার ভেতর দিয়ে কিছু যাচ্ছে না। না খেয়েই উঠে গেলো।
ঘড়ি এখন ১১টার ঘরে। খুব অশান্তি, ভয় হচ্ছে। ঘরের ভেতর এখনও আলো জ্বলছে। নীলার মনে হয় একবার গিয়ে বলে আসবে "বাবা তুমি ঘুমিয়ে যাও", কিন্তু আজ হঠাৎ এভাবে বললে বাবা যদি কিছু বুঝে যায়?
পায়চারী করতেই থাকে নীলা। মোবাইল হাতে নেয়। একটা মেসেজ ভেসে উঠে আছে স্কিনে। লেখা "আসবো"।
নীলা জানতো আসবে, আর এই জানতো বলেই সাহস করে বলে দিয়েছে আসতে।
নীলা পানি খাবার বাহানা ধরে যায়, গিয়ে দেখে বাবা টেলিফোনে কথা বলছে। বাবার ঘরের দরজা এখনও খোলা। এভাবে ঘর বাহির করতে করতে দেখে এক সময় বাবা-মা ঘুমিয়ে পড়ছে।
১২টা বাজতে এখনও ৫মিনিট বাকি। নীলা ঘরের আলো নিভিয়ে রাখে। জানলা খুলে পর্দাটাও খুলে রাখে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে জানালার পাশে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। শরীর কাঁপছে। যা করছে সেটা ঠিক হলো কি না। যদি বাবা জানে? না! ভাবতে চায় না এসব। তবু ভাবনা চকরির মতন ঘুরে ঘুরে আসে। নীলা সামনের দরজাটা ভালো করে আটকে রাখে। আবার এসে জানালায় দাঁড়ায়। আচমকা চমকিয়ে ওঠে ফিসফিস কণ্ঠে বলে ওঠে "কি সমস্যা?"
নীলার মুখ হাসিতে ভরে যায়, আসছো। কোন অসুবিধা তো হয়নি, অনেকদিন পর দেখলাম?
-না, চিরচেনা পথ অসুবিধা হবে কেনো।
তাই তো। আচ্ছা শোনো। আমার না বিয়ে ঠিক করে ফেলছে! আজকে আমাকে দেখতে এসেছিলো। এই সপ্তাহের ভেতর দিন ঠিক করবে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না করবো টা কি! একটা সমাধান দাও, কি করা যায়...তুমি তো জানোই সব...তারপরও...
- বাবা - মা যা ভালো মনে করে। আমি আর কি বলবো! এ জন্যে আমাকে এই রাতে ডাকার কি দরকার।
তুমিও এই কথা বললে? পারলে এইভাবে বলতে?
-না পারার কিছু নাই। অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয় মা-বাবার সুখের জন্যে। আমি যাই...
আজ আমার এসব কিছুই ঘটতো না, যদি না তুমি এই বিসর্জনটা দিতে পারতে ভাইয়া!
রোহিত চলে যায় আর কোন কথা না বলেই। নীলার মনে হয় সে শূন্যে দাঁড়িয়ে আছে, তার পায়ের নীচে কোন মাটি নেই!
মন্তব্য
ভালো লাগলো ।
------------------------------
আমার চারপাশ ডট কম
ধন্যবাদ।
ভালো থাকুন।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
দুনিয়ায় সবাই একা।
গল্পের শেষটা ভালো লেগেছে। এরকম পরিস্থিতিতে সাধারণত প্রেমিককেই মেসেজ দেয়া হয়, এটা ব্যতিক্রম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অনেক ধন্যবাদ
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ভাল হইছে।
----------------------
Sad Quote
বলাই'দার মন্তব্যে সহমত।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
গোছালো শব্দ ও বাক্যের বিন্যাস মন ছুঁয়ে গেল!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
নতুন মন্তব্য করুন