একবার তাকে বলেছিলো পাহাড় দেখাবে। সে ও বিশ্বাস করেছিলো ঠিক কিন্তু তাকে রেখেই সেইবার পাহাড়ে গেলো তারই দূর সম্পর্কের এক মামাতো ভাই! তারপর আর কোন কিছু ‘তার’ হয়ে তাকে আঁকড়ে ধরে না, সে ও ধরার চেষ্টা করেনি। আকাশ আর সবুজ হয়ে ভাসে না তার চোখে। হারিয়ে যায় তার রঙ পেন্সিল। ছিঁড়ে যায় রাত জেগে জেগে বুনে যাওয়া স্বপ্নের জাল। বদলে যায় জীবনের মানে, বদলে যায় বিশ্বাস! ভেঙে যাওয়া বিশ্বাসের দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একলাটি পথ হাঁটে মেয়েটি। সন্ধ্যায় টিউশনি শেষে যখন বাড়ি ফেরে কতো ভুল বানানের চিঠি উপেক্ষা করে আসতে হয় মেয়েটিকে! নিজের ইচ্ছে আহাদ গোধূলির আগুনে পুড়িয়ে দেয় মেয়েটি কিন্তু সে ও তো মানুষ, মনকে কিভাবে শেখল পড়াবে? পারেনা, একদিন সত্যি সত্যি শেকল ভেঙে মেয়েটি কলেজে দীর্ঘ মিছিলের একটি কান্ত মুখে গিয়ে থেমে যায় তার সব। মেয়েটি ভুলে যায় নিজেকে। হারিয়ে যাওয়া রঙ পেন্সিল, মলিন আকাশ সবকিছু যেনো সে পেয়ে যাবে হাত বাড়ালেই; তবু থেকে যায় ভয়!
মিছিলের ওই কান্ত মুখের ছেলেটির নাম গৌরব রায় আর মেয়েটি সারা ইসলাম! তারা দু’জন-ই মানুষ, তারা দু’জনেই দু’জনকে চায়। সুন্দর জীবন চায়। উড়ে বেড়াতে চায় মেঘেদের মাঝে, ভেসে ভেসে চলে যেতে চায় দূর দূরাশয়! তারপরও তারা পারেনা কারণ তাদের মধ্যে অদৃশ্য এক দেয়াল যেটা টপকানো যতটুকু সহজ ঠিক ততটাই কঠিন। গৌরব বলে ‘কঠিনকে জয় করাই বাহাদুরী, আমি পারবো, তুমি শুধু থেকো?’ সারা চুপ থাকে অনেক অনেক্ষণ। পেয়ে হারানোর যন্ত্রণা মেয়েটি খুব ভালো করেই জানে। নীরবতা ভেঙে সারা গৌরবের হাত ধরে আর বলে ‘আমি জানি তোমাকে আমার হারাতে হবে, তবু যতদিন পারি আমি তোমার হয়ে থাকতে চাই। আমার অদৃষ্টে এমনটা লেখা...! ছেলে আপত্তি তুলে, কিসের অদৃষ্ট? এসব ফালতু, ধর্ম কি? অন্ধ বিশ্বাস, মানুষে মানুষে ব্যবধান তৈরি করে দেওয়া ছাড়া তার আর কি কাজ? উত্তরে সারা জানায়- আমি জানি, কিন্তু সমাজ? সমাজের মুখ বন্ধ করবে কি করে? এই সমাজের জন্যেই আজ ‘তুমি’ তুমি হতে পেরেছো, আর এই তুমিকে আমি ভালোবাসি কিন্তু আমার হাত পা বাঁধা। আমি শূন্য, আমি জানি আমি তোমাকে ভালোবেসে ভুল করেছি...তবু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না...। মেয়েটির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। ছেলেটা ভাষাহীন মূক পড়ে থাকে, সারা আবার বলে ‘আমার বাবা যেদিন বল্লেন আমি ছাড়া তাদের আর কিছু নাই, আমি তাদের সম্পত্তি, তাদের শেষ অস্ত্র, এরপর কি করে বলো আমি তোমাকে অভয় দিতে পারি? না পারি তাদেরকে না তোমাকে...তারচে’ এই ভালো না মরে যাওয়া যেত যদি! মুখ আটকে ধরে গৌরব, আর বলে মৃত্যু তো পরাজয়, আমরা কেউ-ই তো ভবিষ্যত জানি না, ভালো হবে না খারাপ হবে সেটা তো আর আমরা এই কয়দিনে বলতে পারি না, মরে গেলেই তো সমাধান নয়, মাথা ব্যথা হলে ওষুধ খেতে হয়, তাই বলে মাথা কেটে ফেলে দিতে হয়? গৌরবের হাত ধরে রাখে সারা, এমন করে কেউ কোনদিন তাকে বলেনি, এমন আশ্রয় সে কারো কাছে পায়নি কখনও, এই শীতল আশ্রয় সারা হারাতে চায় না; হারিয়ে থাকতে পারবে না যে সেটা এই কয়দিনে বুঝা হয়ে গেছে।
দু’জনের ক্ষেত্রেই একই কথা চালিয়ে দেয়া যায়। গৌরব ও প্রথম বুঝতে পারে জীবনের মধ্যে আরো একটি জীবন ছিলো যেটা সে এর আগে কখনও টের পায়নি। তার শিরায় শিরায় এমন ঢেউ উঠেনি আগে কখনও, তার মন এমন ভাবে আনচান করেনি কোনদিন। সময় পাল্টায়, পাল্টায় তার বেঁেচ থাকার দিনলিপি, তার জীবনের মানে বড় হতে থাকে, এতোটাই বিশাল হতে থাকে তার জীবন, যেখানে সে সব নিয়ম নীতি অস্বীকার করে শুধু মেয়েটিকে নিয়ে স্বপ্নডিঙায় ভাসে।
মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে, মানুষদেরকে বোকা বানিয়ে তারা দুজন শুধু দু’জনার হয়ে হয়ে সত্যি সত্যি উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশ পাতাল, শহরের অলি-গলি। নিজেদের ভালোলাগা নিজেরাই তৈরি করে রাত্রি-দিন, সুখের খড়খুটো কুড়িয়ে নেয়, সারাও এখন ভয় পায় না কিছু। হয়তো তাদের একদিন থেমে যেতে হবে, জীবনযাপনের প্রচলিত নিয়মকানুন ওদের পক্ষেও অপরিহার্য হয়ে উঠবে। এই মুহূর্তে এসবকিছুই তারা যেমন জানে না আমিও বলতে পারছি না শুধু এইটুকু বলতে পারছি পাঠক এখন সারা ও গৌরবের কাছে আর কোন জগৎ নেই, অন্য কোন পৃথিবী নিয়ে তারা ভাবছে না, তারা শুধু জানে একে ওপরকে ছাড়া তারা অস্পূর্ণ। তারা দু’জন দু’জনকে ভালোবাসে। তারা পৃথিবীর সকল নিয়মকে পাপোষ করে শুধু ভালোবাসার কাছে আপোষ করেছে। মানুষ পোড়া বাতাসকে জানিয়ে দিচ্ছে সাহসী এক জুটি হেঁটে যাচ্ছে নিজেদের অরণ্যে।
মন্তব্য
ভালো লাগলো।।
ধন্যবাদ...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
বালক মহাশয় বেশ বিরতিতে এলেন মনে হচ্ছে। নিয়মিত থাকুন।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
ধন্যবাদ পাঠ ও মন্তব্যের জন্যে।
লিখতে পারিনা তো কিছু তার জন্যে আসা হয় না খুব একটা...
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
ধন্যবাদ
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
এই লেখাটা খুব বেশি ভাল লাগে নাই, মহৎ উদ্দেশ্যে লেখা একটা অপরিণত গপ্পো মনে হয়েছে। কিন্তু শিরোনামটা অসাধারণ। যৌথডানা শব্দটা উচ্চারণ করতেই ভাল লাগে।
আর আপনার অন্যান্য লেখা পড়েছি। ভাষার উপর চমৎকার দখল আছে !
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভালো লাগলো মন্তব্যটি। ধন্যবাদ।
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
আপনার গল্পের থিমটা আমাকে খুব টাচ করেছে, তবে গল্পটা আর ও পরিনত হতে পারতো।
ধন্যবাদ মন্তব্যটির জন্যে
____________________________________________________________________
"জীবনের বিবিধ অত্যাশ্চর্য সফলতার উত্তেজনা
অন্য সবাই বহন করে করুক;
আমি প্রয়োজন বোধ করি না :
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ হয়তো
এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।"
নতুন মন্তব্য করুন