মোটর জটের ঢাকা, পাতাল ট্রেন এবং সাড়ে ছ হাজার কোটি টাকা

মেঘ এর ছবি
লিখেছেন মেঘ (তারিখ: রবি, ০৭/১০/২০০৭ - ১২:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মোটর জটের ঢাকা, পাতাল ট্রেন এবং সাড়ে ছ হাজার কোটি টাকা

একে কি প্রহসন বলা চলে? না কি অন্য সবার সাথে গলা মিলিয়ে বলবো যুগোপযোগী ভাবনা বা সিদ্ধান্ত? নিজের ইন্টেলেক্ট নিয়ে এমনিতেই আমার সন্দেহ আছে, এ কথা যদি জনসমক্ষে বলি সবাই আমাকে দুয়ো দেবে না তো? দিলেই বা কি! বোকা মানুষরা পাছে লোকে কিছু বলে নিয়ে তেমন একটা ভাবিত হয় না। বলেই ফেলি না কি বলেন?
সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা (ব্যাংকার হয়েও জানি না ঠিক কত টাকাকে একসাথে করলে সাড়ে ছ হাজার কোটি টাকা হয়) ব্যয়ে দেশে (দেশ বলতে কিন্তু শুধু ঢাকা শহরকে বোঝায় মনে রাখবেন) পাতাল রেল স্থাপনের কথা ভাবছে সরকার। দেশের (আবারও বলছি দেশ মানে শুদ্ধু ঢাকা শহর) যানজট নিরসনে সরকার বদ্ধপরিকর। যানজট হ্রাস করার মহত লক্ষ্যেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আশা করা যাচ্ছে শীঘ্রি এর বাস্তবায়নের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও নেয়া হবে।
ঢাকা শহরে যে রেললাইন আছে তাতে লোকাল অর্থাত ডেইলী প্যাসেঞ্জারীর ট্রেন দিলে কি হবে? লস হবে? মনে করেন আপনি টঙ্গী থাকেন। অফিস মতিঝিল। আপনি টঙ্গী থেকে মতিঝিল মিনিমাম পঁচিশ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে আসছেন। সময় লাগছে দু ঘণ্টা। আপনি ট্রেনে আসবেন না, সময় যদি এক ঘণ্টা লাগে আর ভাড়া হয় বিশ টাকা? আমি কিন্তু আসব। আমার মতো নিচু ইন্টেলেক্টের মানুষ যদি আসতে রাজি হয় আমার ধারণা আপনিও আসবেন। আমার যে সম্পদ বিদ্যমান তাকে কিভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ব্যবহার করা যায় তা আগে চিন্তা করা উচিত না কি ধার করে ঘি খাওয়াটা বেশি ভালো? ভারতীয় দর্শনের একটা ভাগ ছিলো ’চার্বাক’। এরা ’ধার করে ঘি খাওয়া’ কে উত্তম মনে করতো। এখন বাংলাদেশের সরকার যদি মনে করে সেটাই ভালো তবে তো এই নাদানের বলার কিছু নেই। অনেকেই অবশ্য বিভিন্ন উন্নত দেশের উদাহরণ দিবে, ভারতের পাতাল ট্রেন মেট্রোর কথা বলবে। এখানে উল্লেখ্য তারা শুধু পাতাল রেলের ব্যবস্থাই করেনি, মর্ত্যের রেলের সম্প্রসারণেও সমান গুরুত্ব আরোপ করেছে। ভারতের বহুল আলোচিত লালুপ্রসাদ যাদব রেল মন্ত্রী হয়ে চির লোকসানি এই খাতকে লাভের মুখ দেখিয়েছে।
সবাই আমার সাথে একমত হবেন কি না জানি না, হয়তো আমাকে ভারতের দালাল বলেও গালি দিতে পিছপা হবেন না। আমার শুধু মনে হয় ভারতীয়রা তাদের দেশকে যতটা ভালোবাসে ততোটুকু ভালো আমি বা আপনি কিংবা আমরা বাসি না বলেই আমাদের আজ এই দশা। আমরা চীনের তৈরী ভয়ংকর সব বাস আমদানী করেছি যেগুলোর পার্টস পাওয়া যায় না লোকাল মার্কেটে। একবার নষ্ট হলে খেল খতম। অথচ আমাদের ছেলেবেলায় 'প্রগতি' যেসব বাস তৈরী করেছে সেগুলো এখনো বহাল তবিয়তে চলছে।
পাতাল রেল হোক সমস্যা নেই। কিন্তু বিদ্যমান রেল সুবিধাকে সর্বোত্তম উপায়ে কাজে লাগাতে বাধা কোথায়?


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

যেকোনো বড় পদক্ষেপ নেয়ার আগে এর পাইলট হওয়া দরকার।
পাতাল রেল ঢাকায় শুরু করার আগে ছো্ট্ট কোনো জেলা শহরে চালু করে অন্তত: ২/৩ বছর দেখা দরকার।
তারপরই শুধু এতো বিশাল ব্যয়ে যাওয়া উচিত।
সব বিকল্পকে এভাবে যাচাই করে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
-----------------------------------------------
খড়বিচালি জোগাড় করি, ঘর বানাবো আসমানে

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

এখানে সমস্যা আছে একটা। মাইল্প্রতি খরচ অনেক বেশি, এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য যেটুকু সর্বনিম্ন দূরত্ব প্রয়োজন, তাতেই ঢাকার অনেকটা কাজ চলে যাবে।

একটু খরুচে হলেও এটা নিয়ে চেষ্টা করা যায়। তবে আমার চিন্তা অন্য। শুধু সময় বাঁচালেই হবে না, সময়ের গুণগত মানও বাড়ানো দরকার। প্রতিদিন এক ঘন্টা সময় বাঁচানো মানে যদি হয় দুপুর বেলা আরো এক ঘন্টা ঘুম, তাহলে এই খরচ নিরর্থক।

মেঘ এর ছবি

মেঘ
আমরা যাচাই মাচাই করি না। কারণ আমরা এ প্রকল্পরে বিপরীতে যাকে কাজ দেব তার কাছ থেকে কমিশন খাবো।

মেঘ

আরিফ জেবতিক এর ছবি

বুঝেন যখন ,কথা বলেন কেন তখন ?
নতুন পার্টি ফার্টি হচ্ছে। ৩০০ সৎ লোককে নির্বাচন করতে হবে,এই সব সৎ লোক টাকা পাবে কই?তাদের জন্য একটা ফান্ড তো শুরু করতে হবে। বিদ্যুৎ-বেবীটেক্সী-বিমান খাত থেকে তো আর বেশী নেয়া যাবে না,ওগুলো ভাইয়া হাপিস করে দিয়েছে।তাই নতুন সেক্টর দরকার।

পাতাল রেল খারাপ কিছু না।
তবে পাতাল রেল ছাড়াই যানজট বন্ধ করা যায়।
শুধু রাস্তার মোড়ে বাসগুলোকে দাড়াতে দিবেন না,দেখেন কতোটুকু উপকার হয়।

হিমু এর ছবি

সব রসুনের এক পাছা। সব সরকারী হেড অফিস ঢাকায়। সব ইন্ডাস্ট্রি হতে হবে ঢাকার ঊরু ঘেঁষে। যাবতীয় ভালো স্কুলকলেজ থাকবে শুধু ঢাকায়। সবাই ঢাকাকে, শুধু ঢাকাকেই ুদবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৌরভ এর ছবি

সবাই ঢাকাকে, শুধু ঢাকাকেই ুদবে।

এরপরে আর কিছু বলতে হয় না।
এতো কেবল শুরু।
আরো কতো কিছু আসবে। নতুন মহাপরিকল্পনা অথবা নতুন প্রযুক্তি। খবরদার, পিছনে কী আছে, খুঁজতেও যাবেননা। কারণ, সব রসুনের এক পাছা।
সব কিছু এক সুতোয় বাঁধা হওয়ার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯ ভাগ।



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

যানজট এমন কোনো সমস্যা না যে, এত টাকা গচ্চা দিতে হবে। পাতাল রেল বানিয়ে যানজট মোকাবেলা করতে হবে এমন উদ্ভট জিনিস বাংলাদেশেই সম্ভব। প্রকৃত উদ্দেশ্য পুরোপুরি ক্লিয়ার।

টেকনিক্যাল সাইডে, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা হয়তো ভালো বলতে পারবে, তবে ঢাকার মত জলাবদ্ধ পলিমাটির শহরে পাতাল রেল মেইনটেইন করতে সারাবছরই যে খোড়াখুড়ি লেগে থাকবে, তা বলাবাহুল্য।

তবে সেটা মেইন কনসার্ন না; কনসার্ন হলো, এই বিশাল অ্যামাউন্টের টাকাটা অনেক প্রোডাক্টিভ খাতে ব্যয় করা যায়। পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশই এক শহরকেন্দ্রিক না। শিল্প-রাজনীতি-সংস্কৃতি-শিক্ষা-চিকিৎসা সবকিছুর জন্য ঢাকা! দিনে দিনে এই ট্রেন্ড শুধু বাড়ছেই এবং এটা রোধে কোনো সরকারেরই উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেই। ঢাকার বাইরে যে বিশাল এলাকা তার সদ্ব্যবহার না করা অর্থনীতির জন্য একটা বিরাট লস।

আমাদের দুর্ভাগ্য যে, নির্বাচিত-অনির্বাচিত-স্বৈরাচার প্রত্যেকটা সরকারই এক একটা মাথামোটা বাঞ্চোৎ। নিজেদের পকেট ফুলাতে ফাঁপাতে পুরা দেশের পাইন মারাটাই এদের একমাত্র এইম ইন লাইফ।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

মেঘ এর ছবি

মেঘ
আমাদের দুর্ভাগ্য যে, নির্বাচিত-অনির্বাচিত-স্বৈরাচার প্রত্যেকটা সরকারই এক একটা মাথামোটা বাঞ্চোৎ। নিজেদের পকেট ফুলাতে ফাঁপাতে পুরা দেশের পাইন মারাটাই এদের একমাত্র এইম ইন লাইফ।

........সহমত

মেঘ

শেখ দীন মোহাম্মদ এর ছবি

আমার খুব ভালো লেগেছে যে আপনারা এক বছর আগে এমন একটা সাইটের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
পাতাল-রেল বুঝতে আপনাদের 'ফোকাস' হতে হবে। কত কোটি লাগবে তা পরে জানা যাবে। টাকার পরিমাণ নির্ভর করে কেমন রেল আপনি চান। প্রথম আপনি আদোউ চান কি না।
১৯৬৮ সনেই শহরের লোক-বসতির ঘনত্ব থেকে এ শহরে পাতাল-রেল আবশ্যক ছিল। দেশ স্বাধীন করার পর আমরা ঢাকাকে পরিকল্পনা মাফিক বানাইনি। শহর 'মার্কেট-ফোর্সের' উপর ছেড়ে দিয়েছি। শহর-শহরতলী থেকে রেল নির্বাসন দিয়েছি। নারায়ণ-গন্জ, ডেমরা, সোনার-গাও, নরসিংদিতে ঢাকার রেল যেত, বন্ধ করেছি। কমলাপুর রেল-স্টেশনের অর্ধেক ছিল 'আরবান-স্টেশন, কখনই চালাইনি। অধুনা তাতে 'আইসিডি' বানিয়েছি। অথচ এর জন্য 'বিমান-বন্দর'সহ একটা প্রকান্ড রেল-স্টেশন বানিয়ে সব কার্গো এক সঙ্গে মিলিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য করা যেত। তেজগাও স্টশনটিও ব্যবহার করা যেত। মেঘন হয়ে কুমিল্লা, মাওয়া হয়ে খুলনা, আরিচা হয়ে যশোর, যমুনা ব্রীজ হয়ে রাজশাহী; সব পথেই সড়কের সঙ্গে রেল রাখা যেত, রাখিনি। বরং গেন্ডারিয় হয়ে ফুলবাড়িয়ার রেল তোলে রেলের জমি ভাগ-বাটোয়ারা করেছি। জোয়ার-সাহারাতে রেল শ্রমিকরা যে জমিতে মার্কেট করেছে তাতে দিব্যি আইসিডি হতে পারত।
ঢাকা থেকে পাতাল-রেল না, গামেন্টস প্রতি জেলায় পাঠিয়ে দিন। শহর প্রকৃত কেবল ঢাকা, এটা সভ্যতার জন্য দরকার। সেলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।