৩১ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৮
আমরা প্রতিদিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খতমে খাজাগান পড়তাম। মাকসুদরা এটা খুব বিশ্বাস করে, ও-ই উদ্যোগ নিতো। রোজার মাস বলেই হয়তো সবাই ওর জন্য তারাবির পরে দোয়া করতো। শুধু ডালাসে নয়, যেখানে যত আত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধব আছে, সবাই ওর জন্য দোয়া করতো। প্রতিদিনই ও একটু একটু করে ইমপ্রুভ করছিল। আর আমরা একটু একটু করে আশায় বুক বাঁধছিলাম। ডা. শান্টু (ওর খুব প্রিয় একজন মানুষ, জুবায়ের ঠাট্টা করে তাঁকে “নেতাজী” বলে ডাকতো) মিশিগান থেকে এসে ওর চিকিৎসার ব্যাপারে ইনভল্ভ্ড হলেন। উনি ওংকোলজিস্ট। ইতিমধ্যে একটা কথা উঠলো যে, এই হাসপাতালটা এক্কেবারে বাজে। এখান থেকে ওকে মুভ করাতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। এই হাসপাতালটা আগে ছিল বেলোর এর অন্তর্ভুক্ত, অর্ণবের জন্মও এখানেই। এখন এটা কিছু ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি ডাক্তারের প্রাইভেট হাসপাতাল। জুবায়েরের ডাক্তার এই হাসপাতালের সাথে জড়িত। তাই ওকে এখানে আনা হয়েছে। এই ব্যাপারটা আগে আমরা কেউ জানতাম না।
কিন্তু শান্টু ভাই এদের চিকিৎসায় সন্তুষ্ট। তিনি ব্যাখ্যা করলেন, যেহেতু জুবায়েরের এই অসুখের কোনো ওষুধ নেই, সুতরাং ওর এখন যে ট্রিটমেন্ট চলছে, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড প্রসিজিউর। আর সাধারণত আমেরিকার সব হাসপাতালের ICU-তে প্রায় একই রকম স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা হয়। পরে কী হবে, বলা যায় না। তবে এবার ও ইনশাল্লাহ সারভাইভ করবে।
মেজমামা ও মাকসুদকে ফিরে যেতে হলো নিজেদের শহরে, কারণ ওদের কাজে যোগ দিতে হবে। ডাক্তার সকাল ৭টার দিকে রাউন্ডে আসতো এবং ৮টার মধ্যেই চলে যেত। তাই আমি সেহেরি খেয়েই হাসপাতালে চলে যেতাম। এ কয়দিন মাকসুদ অর্ণবকে স্কুলে নামিয়ে দিতো। কিন্ত ও চলে যাওয়াতে সমস্যায় পড়ে গেলাম। শিমুল আবার গাড়ি চালাতে পারে না। আমার ছোট্ট ছেলেটা জানালো যে, সে হেঁটেই স্কুলে যাবে। ও কি বুঝে গিয়েছিল, এখন থেকে ওর বাবা আর ওকে স্কুলে নামাবে না?
৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ সেপ্টেম্বর
ডোরা শুক্রবার দুপুরের মধ্যেই হাসপাতালে চলে এলো। জুবায়ের এখন নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিতে পারছে ৬০%। বোনকে পেয়ে এই প্রথম অর্ণব একটু স্বাভাবিক হলো, ডোরা নার্সকে জিজ্ঞেস করেছিল, “বাবা কি আমাদের কথা শুনতে পাবে?”
নার্স বলেছিল, “ও সব শুনতে পাবে, তবে হয়ত পরে মনে করতে পারবে না।”
ভাই বোনে মিলে বাসা থেকে বাবার পছন্দের বিটলসের গান ও নেমসেক বইটা নিয়ে এলো হাসপাতালে। এরপর ওরা দুজন বাবাকে গান ও বই পড়ে শোনাতে শুরু করলো। এখন ওকে মাত্র ২০% মেশিনের সাহায্য নিতে হচ্ছে। বাকী ৮০% নিঃশ্বাস ও নিজে নিজেই নিতে পারছে। আমার কাজে ছুটি নিয়ে সমস্যা হওয়াতে ২রা আগস্ট থেকেই আমাকে কাজে ফিরে যেতে হয়েছিলো। (এই ছুটি নিয়ে জুবায়েরের অসুখের শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে ভুগতে হয়েছে। আমার লিভ অভ অ্যাবসেন্স-এর জন্য জুবায়েরের ডাক্তারের চিঠির দরকার, কিন্ত সেই মুহূর্তে ডাক্তার আমাকে চিঠি দিলো না, কারণ আমার তো ওর পাশে থাকাটা জরুরি নয়।)
৫ তারিখ রাত থেকেই ডাক্তার মেশিন বন্ধ করে দিলো। এখন ও সম্পূর্ণভাবে নিজে নিজে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ওর সব কিছু একদম ঠিকঠাক কাজ করছে, ডাক্তার বললো, ২৪ ঘন্টা দেখি, তারপর নিশ্চিন্ত হবো। সেদিন বিকেলেই ডাক্তার সেড্যাটিভ বন্ধ করে দিলো। সম্ভবত রাত ন’টার দিকে ও ধীরে ধীরে চোখ মেললো। শান্টু ভাই সব সময় ওর কাছে ছিলেন। উনি আমাদের একজন একজন করে দেখা করতে বললেন। প্রথমে ডোরা গেল এবং ওর পিছু পিছু অর্ণব। তারপরে ওদের পেছনে আমি। ডোরা বাবার বাম হাতটা নিয়ে ঠোঁটের ওপর ধরে আছে, আর ডান হাত দিয়ে জুবায়ের অর্ণবের হাতটা ধরে আছে। জুবায়ের তখনো কথা বলতে পারছিল না, কারণ মুখ থেকে টিউব খোলা হয়নি। আমি কাছে গিয়ে ওদের হাতের ওপর হাত রাখলাম, আমার হাতের মাঝখানে ওর হাতটা কেঁপে উঠলো। অর্ণব কী বুঝলো জানি না, বাবার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বললো, “বাবা, তাড়াতড়ি ভালো হয়ে ওঠো। তোমার মনে আছে তো, তুমি বলেছো আমার জন্মদিনে "রক ব্যান্ড টু" গেইমটা কিনে দেবে?”
জুবায়ের হাসির মতো একটা মুখভঙ্গি করলো, তারপর মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললো।
একে একে ওর সব ডাক্তার চলে এলো। ওর pulmonary spacialist-এর নাম Dr. Gaman। ওরা জুবায়েরকে থরোলি চেক-আপ করবে, আমাদের দশ মিনিট সময় দিল দেখা শেষ করতে। আমরা ভিজিটিং এরিয়াতে সবাই মিলে বসলাম, ইতিমধ্যে সবার কাছে খবর চলে গেছে যে, জুবায়েরের জ্ঞান ফিরেছে, তারাবীর পরে সবাই আসতে শুরু করলো। সবাই যে কী খুশী! কেমন একটা উৎসব-উৎসব ভাব সবার মনে।
আমরা যখন আবার ওর কাছে গেলাম, তখন মুখ থেকে টিউবসহ সব কিছু খুলে ফেলা হয়েছে, শুধু নাকে অক্সিজেন পাইপ লাগানো। মুকুল ভাইকে দেখে ও প্রথম কথা বললো, "কী মিয়া! খালি হাতে দ্যাকতে আইছেন, ট্যাকা কই? ট্যাকা দেন।"
মুকুল ভাই সেল ফোন দিয়ে ওর ছবি তুলে বললেন, "দাঁড়ান মিয়া, পরে ব্ল্যাকমেল করবো।"
ও হাত বাড়িয়ে মুকুল ভাইয়ের সানগ্লাসটা নিয়ে চোখে দিয়ে বললো," খাড়ান, এইটা পইড়া লই, পরে ডিনাই করুম।"
এই নিয়ে খুব হাসাহাসি হলো। এত লোক ওকে দেখতে আসছে, এবং শান্টু ভাই এত ব্যস্ততার মাঝেও সব কাজ ফেলে শুধু ওর জন্য রয়ে গেছেন – এসব দেখে খুব তৃপ্তির হাসি হেসে আমার দিকে চোখ নাচিয়ে বল্ললো, "হুঁহ্, পাত্তা তো দাও না! দেখলে, কেমন ইম্পরট্যান্ট মানুষ আমি?"
আগামীকাল ভোরবেলা শান্টু ভাই চলে যাবেন, তাই আজ রাতেই বিদায় নিলেন ওর কাছ থেকে। জুবায়ের শান্টু ভাইয়ের হাত দুই হাতে ধরে বললো, "ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে খাটো করবোই। কারণ তাতে আপনার কিছু আসবে যাবে না।"
শান্টু ভাই ৬ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা।
৮ সেপ্টেম্বর
গত রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত কাজ করে হাসপাতালে এসে দেখি জুবায়ের জেগেই আছে।
"কী ব্যাপার, এত সকালে উঠে গেছো কেন?"
"সারা রাত তো ঘুমাতেই পারিনি।"
"কেন?"
"ঘুমাতে দিলে তো! প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় নার্সরা এসে জাগিয়ে দেয়।"
ওর খুব হাসপাতালে থাকার শখ ছিলো। সেটা মনে করে দিয়ে ওকে বললাম, খুব তো শখ ছিলো হাসপাতালে থাকার, এবার একটু শখ মিটিয়ে নাও, কী বল? আমার কথা শুনে ও একটু হাসলো।
প্রথমে ওর মুখ ধুয়ে দিলাম, তারপর গরম পানি দিয়ে শরীর স্পঞ্জ করে দিলাম, হাতে পায়ে লোশন লাগিয়ে দিলাম। ও একটু আপেল জ্যুস খেলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, "সেল ফোনটা কোথায় রেখেছো? ফোনটা দাও, অফিসে ফোন করতে হবে।"
আমি বললাম, "বাসায় রেখে এসেছি, আর মাকসুদ তোমার অফিসে ফোন করে তোমার বসের সাথে কথা বলে সব ব্যবস্হা করেছে, ওরা তোমার short time disability জন্য সব ব্যবস্থা করছে।"
শুনে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। শুরু করলো আমার সাথে রাগারাগি: কেন আমি ওর জিনিসে হাত দেই? কেন ওর ব্যাপারে নাক গলাই? কেন মাকসুদকে দিয়ে ওর অফিসে ফোন করিয়েছি? যা বুঝি না, তা নিয়ে কেন মাতব্বরি করি? আমার বুদ্ধিশুদ্ধি আর কবে হবে?
আমি ওর কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। ও কি নিজের অবস্হা বুঝতে পারছে না? নাকি স্মৃতির কোনও সমস্যা হলো। ওর কথা শুনে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো। গত দশদিন আমার কীভাবে গেছে, ওর কি একটুও ধারণা আছে? একে তো ওকে হারাবার ভয়, তার ওপর খাওয়া নেই, ঘুম নেই, কাজ, হাসপাতাল আর বাসা - এই করেছি সারাক্ষণ। কিন্ত চোখের পানি দেখলে ওর মেজাজ আরো খারাপ হবে (জুবায়ের কান্নাকাটি একদম সহ্য করতে পারে না) তাই চুপ করে গেলাম।
ইতিমধ্যে ডাক্তার এলেন। ডাক্তারকে ওর মেমোরির কথাটা জিজ্ঞেস করলাম, উনি সব দেখে এবং কিছু টেস্ট করে বললেন, না, সব ঠিক আছে। আজকে থেকে ব্রিদিং ট্রিটমেন্ট শুরু হবে, তবে ও খুব দুর্বল, ওকে এনার্জি গেইন করতে হবে। নার্সকে প্রটিন শেক ও এনার্জি পিল দিতে বলে গেলেন।
আমার কাজিনের কাজিন ওচ্চু ভায়ের সাথে শিমুল, ডোরা ও অর্ণব চলে আসবার পর আমি বাসার দিকে রওনা দিলাম। ওর হাসপাতাল থেকে বাসা ২০ মিনিটের ড্রাইভ, যে কান্নাটুকু চেপে রেখেছিলাম, এখন আমার সামনের সমস্যার কথা চিন্তা করে সেটাই দুই চোখ বেয়ে ঝরে পড়তে লাগলো। এখন আমার সব সময় ওর কাছে থাকা দরকার, কিন্তু কীভাবে? হাসপাতালে জুবায়রের দেখাশোনা, অর্ণবের দেখাশোনা, চাকুরি আর সংসার – এই তিনের সমন্বয় কেমন করে কারবো? এদিকে দুনিয়ার বিল দেওয়া বাকি পড়ে আছে। জুবায়েরের কমপিউটারের পাসওয়ার্ড আমি জানি না। ও অনলাইনে বিল পরিশোধ করে। আমি জানি না কীভাবে সেটা করতে হয়। কখনো শিখতে ইচ্ছে করেনি। এখন আমাকে একটা একটা করে বিল মেইল করতে হবে। ফোন করে লেইট পেমেন্টের জন্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। সময় বাড়াবার জন্য কাকুতি-মিনতি করতে হবে। আর টাকা পয়সারই বা কী অবস্থা, কে জানে? ব্যাংকে ফোন করলে জানা যাবে, কিন্ত সেটারও পাসওয়ার্ড জানি না। এতদিন তো ওই এসব দেখাশোনা করতো। ব্যাংকে ফোন করলে হবে না। নিজে যেতে হবে। ফোনের কথায় মনে পড়লো, বাসার এবং সেল ফোন মিলিয়ে একশোরও বেশি মেসেজ জমে আছে। কিছু শোনা হয়েছে, কিছু হয়নি। কিন্তু একটারও রির্টান কল করা হয়নি সময়ের অভাবে।
বাসায় ফিরে জুবায়েরের ছোট ভাই ফিরোজকে (আনিস মাহমুদ) ফোন করে বললাম, "আমি তো ভয়ই পেয়েছিলাম যে, এত দিন অচেতন অবস্থায় থেকে হয়ত তোমার ভাইয়ের মেমোরির সমস্যা হবে। কিন্ত ও তো একদম ভালো হয়ে গেছে, মনে হচ্ছে। ঠিক আগের মতোই খুব মেজাজ দেখালো। হেবি ঝাড়ি খেলাম সক্কাল বেলাতেই।" তারপর জালাল (সচলায়তনের) ও নাসিম ভাইকে (বদিউজ্জামান নাসিম, কবি, বোস্টনবাসী) ফোন করে সর্বশেষ খবর দিলাম।
বকেয়া কাজগুলি সারলাম, জুবায়েরের জন্য পাতলা খিচুড়ি (আমার শাশুড়ির রেসিপি, ওর খুব প্রিয়) রাঁধলাম, তবে পানির বদলে চিকেন ব্রথ দিয়ে। ওর কিছু টয়লেট্রিজ, পাজামা, সেল ফোন, ল্যাপটপ আর নতুন আসা দেশ পত্রিকাটা সঙ্গে নিলাম। গোসল করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সময়ে কুলালো না। ডোরা আজ দুপুরে হাসপাতাল থেকেই অস্টিনে ফিরে যাবে। ওর জন্য কিছু খাবার প্যাকেট করলাম। মেয়েটা ওখানে কী খায়, কে জানে!
হাসপাতালে পৌঁছে দেখলাম মুকুল ভাই, রানা, শাহ-সহ আরো বেশ কিছু বাঙালি বসে আছে ওর রুমে। আমাকে দেখে ওচ্চু ভাই বললেন, " তুমি নাকি জুবায়েরের সেল ফোন হারাইয়া ফালাইছো?"
আমি তাঁর কথার উত্তর না দিয়ে ব্যাগ থেকে সেল ফোনটা বের করে জুবায়েরের হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস বললাম, "চার্জ নেই কিন্তু! গত দশদিন ধরে এমনিতেই পড়ে ছিল। চার্জ করতে দিবো?"
ওচ্চু ভাই হো হো করে হেসে উঠে জুবায়েরকে বললেন, "ধুর মিয়া! হুদাহুদি বেচারিরে দোষান ক্যান?"
জুবায়ের উত্তর দিলো, "পাগলের সাথে তো সংসার করেন না, জানবেন ক্যামনে? ও যত্ন করে কোনও জিনিস রাখলে সেইটা হারাইবোই।"
রব ভাই (ডোরার সবচেয়ে কাছের বন্ধু রেয়ার বাবা) ডোরাকে বাসস্টপে নামিয়ে দিয়ে কাজে ফিরে যাবেন। ডোরা বাবাকে আদর করে বললো, ''বাবা, গুড বয় হয়ে থাকবে, আম্মুর কথা শুনবে। পরের শুক্রবারে এসে তোমাকে যেন হাঁটতে দেখি। বাবা, এখন যাই?"
জুবায়ের মেয়ের হাত চেপে ধরে বললো, "না গেলে হয় না?"
"তুমি যদি চাও আমি থাকি, তাহলে আমি থাকবো, যাবো না।"
"না রে পাগলী, যা। ফোন করিস।" ডোরা চলে যাবার পর ওচ্চু ভাই শিমুল ও অর্ণবকে নিয়ে চলে গেলেন।
ডোরা চলে যাবার পর ও মন খারাপ করে রইলো। খাবার জন্য জোরাজুরি করলাম, এক চামচ খিচুড়ি খেয়ে বললো খুব লবণ। আর খেলো না। শুধু একটু প্রটিন শেক খাওয়াতে পারলাম। এরপর নার্সরা এলো ওকে চেইঞ্জ আপ করানোর জন্য, আমি বাইরে এসে দাঁড়াতেই অ্যাডমিন্সিট্রেশনের একজন আমাকে অফিসে ডেকে নিয়ে গেলো। ওখানে যাবার পর আমার হাতে বেশ কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো যে, আজ রাতেই হয়তো ওকে ইমিডিয়েট কেয়ারে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ওকে আমার সব ফোন নাম্বার একটা কাগজে লিখে দিয়ে বললাম, “তোমরা যখন ওকে মুভ করবার ডিসিশন নেবে, তখন অবশ্যই আমাকে খবর দেবে, আমি ওর সাথে থাকতে চাই।"
মহিলা বললো, “ঠিক আছে। ইমিডিয়েট কেয়ারে ওরা বেশি দিন রাখে না - দুই থেকে তিনদিন। সেখান থেকে রিহ্যাবে মুভ করা হবে।“
রিহ্যাবে নেবে শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্ত ওই মহিলা বুঝিয়ে বললেন, ভয় পাবার কিছু নেই। ওখানে জুবায়েরকে ব্রিদিং-এর ট্রেনিং দেওয়া হবে। কীভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডার ক্যারি করতে হয় – এমন সব হাজার রকম জিনিস শেখানো হবে। বেশ কিছু রিহ্যাবের ব্রোশিয়ার থেকে আমাকে পছন্দ করতে হবে, কোনটাতে জুবায়েরকে রাখবো। আর কী কী প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র লাগবে, সেগুলিরও লিস্ট দিলো। সবকিছু পড়ে টুইন ক্রিক হাসপাতালটাকে পছন্দ কারলাম। কারণ আমার বাসা থেকে দুই মিনিটের রাস্তা। আর আগে থেকেই জুবায়ের ওখানে যেত স্পিচ থেরাপি দেবার জন্য, হাসপাতালটা একদম নতুন, সব ধরনের লেটেস্ট ইকুইপমেন্ট আছে ওখানে। রিহ্যাবে কতদিন থাকতে হবে, কে জানে? আর ফিরোজ এলে (ফিরোজ ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করেছে তখন) ওর রাইড নিয়ে সমস্যা হবে না।
ওর রুমে এসে ওর মতামত জিজ্ঞেস করাতে ও সম্মতি দিলো। ইফতারের পরে রানা ও ওর বউ নাজু ( পীযুষদার বর্তমান স্ত্রীর বন্ধু) আসলো, ওদেরকে রেখে আমি কাজে ফিরে গেলাম।
রাত সাড়ে দশটার দিকে কাজ থেকে ব্রেক নিয়ে ICU-এর দুই নাম্বার রুমে এসে দেখি, ও রুমে নেই। নার্স এসে বললো, ওকে ইমিডিয়েট কেয়ার ইউনিটের ৩৩৬ নাম্বার রুমে মুভ করা হয়েছে।
আমার গেল মেজাজ খারাপ হয়ে! "তোমরাদের না বলে গেলাম, ওকে মুভ করার আগে আমাকে একটা খবর দেবার জন্য?"
সে কাঁধ ঝাকিয়ে বললো, "আমি কিছু জানি না, তুমি সুপারভাইজারের সাথে কথা বলতে পারো।"
নার্সের কাছ থেকে ডিরেকশন নিয়ে জুবায়েরের রুমে এলাম। ওর কাছে রব ভাই, শাকিল (আমার খালাতো ভায়ের বন্ধু), অর্ণব, শিমুল ও মুকুল ভাইরা বসে আছে। এতো খারাপ লাগছিলো! আমার স্বামীর পাশে আমারই সবার আগে থাকার কথা, আর আমিই কিনা সবার পরে এলাম। এটা একটা সিঙ্গল রুম কেবিন যেমন হয়, ঠিক তেমন। ওকে রেগুলার খাবার দিয়ে গেছে, শাকিল ওকে জোর করে খাওয়াচ্ছে। আমাকে দেখে জুবায়ের বললো, "শাকিলের হাত থেকে আমাকে বাচাঁও, আমি খেতে পারছি না, আমার বমি পাচ্ছে"।
আমি শাকিলকে বললাম, "থাক শাকিল, আর জোর করো না। যেটুকু খেয়েছে, ওটুকুই পেটে রাখতে দাও।"
"তেমন কিছুই কিন্তু খায়নি।"
"ঠিক আছে, আমি খাওয়াবো একটু পরে"।
ওকে একটু পানি খাইয়ে মুখটা মুছিয়ে দিলাম। অর্ণব বললো, "বাবা, আমি তোমার খাবারটা একটু ট্রাই করতে পারি?"
জুবায়ের খুব খুশী হয়ে বললো, "অফ কোর্স!"
রাত হয়ে যাচ্ছিলো, তাই সবাই আগামীকাল আসবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে গেলো। বারোদিন পর এই প্রথম আমরা দু’জন একা হলাম। ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "কী, খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলে, ভেবেছিলে মরে যাবো? মরে গেলে তো ভালোই হতো, তুমিই না সব সময় বলতে, ডোরা কলেজে চলে গেলে তুমি আর আমার সাথে এক ছাদের তলে থাকবে না।"
গত বছর দুয়েক জুবায়েরের জীবন ছিলো অফিস-, ছেলে-মেয়ে-, সচলায়তন- আর ফোনঅন্তময়। এর বাইরে আমাকে দেবার মতো ওর আর কোন সময় ছিলো না। সচলায়তন আর ফোন নিয়ে আমার আপত্তি ছিলো প্রবল। ভাবতাম, ওখানে ও কারো সাথে প্রেম করছে। তাই ওসব বলতাম।
আমি কথা বলতে পারছিলাম না, কান্নায় গলা বুঁজে আসছিলো। কান্না গিলে কোনো রকমে বললাম, "জুবায়ের, তুমি জানো আমি নাঁক-ফুল পরতে খুব ভালোবাসি, তুমি সব সময় কমপ্লেইন কর আমি তোমার কাছে কিছু চাই না। আজ চাচ্ছি, আমি সারা জীবন নাঁক-ফুল পরতে চাই। আর কথা দাও, তুমি আমার আগে চলে যাবে না।"
ও আর কোন উত্তর দিলো না, শুধু হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা শক্ত করে ধরে থাকলো।
(চলবে)
* লেখায় রেটিং না দেয়ার অনুরোধ রইলো।
মন্তব্য
পড়লাম।
যতক্ষণ পড়লাম মনে হলো, এইতো জুবায়ের ভাই ভালো হয়ে গেছেন। শেষ করে মনে হলো, না কিছুই আর ঠিক নেই।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
জুবায়েরের লেখা এলোমেলো ভাবনা থেকে।
নভেম্বর ২০,২০০৭
মৃতুকে কি এক ধরনের অনিচ্ছা প্রসূত স্বার্থপরতা বলা যায়? যে চলে যাচ্ছে তার দুঃখ ও বেদনাবোধ হাহাকারের সমাপ্তি ঘটে যায় চলে যাওয়া মাত্র। অথচ তার নিকট জনদের ক্ষত বা তার জন্য অভাববোধ অনেককাল থেকে যায়, হয়তো চিরকাল।
একবার এক মন্তব্যের জবাবে জুবায়ের ভাইয়ের একটা কথা বার বার মনে পড়ে, "ঝাঁকের সাথে মিশে বেশ ছিলাম..."
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
হ্যা ওই মন্তব্যটা আমিও পড়েছি। ওর কলেজে পড়ুয়া মেয়ে আছে এই প্রসঙ্গে কথাটা লিখেছিলো।
সামান্য কাশি হয়েছে আমার।
বাসার এক কোণা থেকে কাশলে ঐ কোণায় আমার নয়মাসের কন্যা শ্রেয়া উদ্বিগ্ন হয়ে মাথা ঘুরিয়ে নাকি তাকায়।
শ্রেয়ার এই আচরণে শুধু মনে পড়ে যায় জুবায়ের ভাইয়ের কাশি নিয়ে তার মেয়ের উদ্বিগ্নতার কথা, সেই লেখাটির কথা...
স্মৃতি বহন করে যাওয়া ভীষণ কষ্টের...
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
আপনার মেয়ের বয়ষ মাত্র নয় মাস! এখনই ও বাবার জন্য এ্যতো উদ্বিগ্ন!! ভাগ্যবান বাবা আপনি।
আমি গত সব পর্ব পড়েছি---কিন্তু কিছু মন্তব্য করতে পারিনি---
কেন জানি হাতটা স্থবির হয়ে যায়---
আজ বর্ণনা গুলো পড়ে মনে হল---হয়ত জুবায়ের ভাই আসলে ঠিকই আছেন---কোন বড় রকমের রসিকতা হয়ত করছেন--কিছুদিন পর ঠিকই আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে হো হো করে হাসতে হাসতে জানাবেন, কি? কেমন ধোঁকা দিয়েছি বল??
আমাকে হয়ত ডেকে বলবেন, কী বিষাদের পয়গম্বর? এই ক'দিন ডুব দিয়েছিলাম বলে মনের ইচ্ছা মত মন-খারাপ করা লেখা লিখেছেন(আমাকে 'আপনি আপনি' করতেন জুবায়ের ভাই)---আর যদি একটা মন-খারাপী লেখা দেখি----
সচলায়তনের অনেকের সাথে জুবায়ের ভাইয়ের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলাপ ছিল। অনেকের সাথে তার কথা হয়েছে, অনেকের সাথে নিয়মিত চ্যাটও হত।
আমি সেইরকম কিছুই ছিলাম না। তবু কেন মন এত খারাপ হয়?
যে মানুষটাকে না দেখে, না শুনেই এত পছন্দ করেছি, তাঁর এই অনায্য তিরোধান, অসময়ে সময় শেষ হয়ে যাওয়া দেখে বুক ভেঙ্গেছে কতদিন---- তাঁর কাছের মানুষদের দুঃখের পরিমাপ কোনদিনও করতে পারব না।
জুবায়ের ভাই, আই মিস ইউ---
আপনি চলে আসেন, আমি আর মন খারাপ করা লেখা লিখব না, প্রমিস--
আপনার মন্তব্যের জবাব ওর লেখা থেকে দিলাম।
আই মিস ইউ। এর বাংলা অনুবাদ কি হয়? তুমি নেই তাই। তুমি নেই বলে। বিরহ শব্দের ইংরেজি হয়? আসলে হয়তো হয়ই না। যেমন বাংলা ভাষার অভিমান শব্দের কোনো ইংরেজি প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না।
৩০শে জানুয়ারি ২০০৮
জানি না কি বলব।
পড়ছি।
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
কিচ্ছু বলতে হবেনা। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
পড়তে পড়তে আমিও মনের অজান্তেই আশা করছিলাম জুবায়ের ভাই এই ভালো হয়ে উঠলেন বলে...
পড়তে পড়তে আমিও মনের অজান্তেই আশা করছিলাম জুবায়ের ভাই এই ভালো হয়ে উঠলেন বলে...
ও তো ভালোই হয়ে গিয়েছিলো। শুধু ওর জেদ আর আমার বোকামির জন্য সব হারালাম।
সচলের সাথে আছি ১বছরের মতো।
এই সিরিজ শুরু হওয়ার পর বুঝতে পারছি আমি কতটুকু হতভাগ্য। আমার হিংসা হয় তাদের, যাদের সাথে জুবায়ের ভাইয়ের পরিচয় ছিল, কথাবার্তা হতো।
আসলেই আমরা অনেক বড় একজন মানুষকে হারিয়েছি।
ডোরা, অর্ণব তোমাদের প্রতি রইল আদর।
বড় মানুষ কিনা জানিনা। তবে ভীষন সৎও ভালো মানুষ ছিলো। মনটা ছিলো আকাশের মতো বড়।
হাসপাতালটা আমার কাছেও বেশি ভালো লাগে নি।
পড়ছি....
ওদেরকে 'সু' করার কথা অনেকে বলেছে। কিন্তু কি হবে? জুবায়েরকে তো ফিরে পাবোনা!
শেষ প্যারাটা পড়েই বুকটা চিনচিন করে উঠলো........আহা নাকফুল !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
২৪ তারিখ রাত্রেই কে যেন 'নাঁকফুল' টা খুলে নিয়েছিলো। তারপর আর ওটা খুঁজে পাইনি।
এই কষ্টের পরিমাপ করা অসম্ভব। সান্ত্বনার কোন বাক্যই যথেষ্ট নয়। আপনারা আছেন আমাদের শুভ কামনায়।
ধন্যবাদ।
অসম্ভব সুন্দর লেখা। মানুষের বাস্তব এত কঠিন হয় কিভাবে।আপনার মানসিক শক্তি দেখে আমি অভিভূত।
মিতু
সব মানুষের নয়। কিছু কিছু মানুষের। কেউ কেউ দুর্ভাগ্য নিয়ে জন্মায় এই পৃথিবীতে। তাদেরকে কঠিন বাস্তবের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সাধাসাধি করলেও ভাগ্য দেবী তাদের প্রতি প্রসন্ন হন না। কেন কে জানে।
আপনাদের জন্য শুভকামনা রইলো
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ।
কে হায়, হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে...
ঝিনুক নীরবে সহো, নীরবে সয়ে যাও
ঝিনুক নীরবে সহো, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
মনে হয় এই অধম! (অধমের কি স্ত্রী লিঙ্গ হয়?)
খুবই ভাল লেখা, ভাবী। খুব হৃদয়স্পর্শীও।
ভালো লাগলো জেনে।
গল্পটা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেতো .....
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
গল্পটা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেতো
....................
বয়স বাড়ছে, একে একে প্রিয় মানুষগুলো চলে যাচ্ছে। গত বছর দুজনকে হারিয়েছি। আরেকজন ছিলেন আমার নানী, একদম শৈশব থেকে আমার খুবই কাছের মানুষ ছিলেন তিনি।
এটাকেই মানুষ হয়ে বেঁচে থাকা বলে বোধ হয়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
বোধ হয়।
প্রতিটা পর্ব পড়ার পর খানিকটা সময় গুম হয়ে বসে থাকি। দম বন্ধ হয়ে আসতে চায়।
একটাই মাত্র জীবন; এত এত কষ্ট কেন সেটায়?
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
উত্তর জানা নেই।
পড়ছি । আজকে গত দুই পর্বের চেয়েও বেশি মন খারাপ লাগছে । ভাল থাকবেন ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
ভাল থাকবেন আপনিও।
জানি মন খারাপ হয়ে যাবে পড়তে পড়তেই, তবু না পড়ে পারি না। ভালো থাকুন ভাবী।
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ভালো থাকতে চেষ্টা করবো।
ভালো থাকবেন!
----------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ধন্যবাদ।
আমি পড়ি আর আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
দলছুট
==========
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।
দুঃখিত।
প্রতি পর্বেই বুকে দলামোচড়ানো এক অনুভূতি হয়.... ভালো থাকবেন ভাবী।
ধন্যবাদ।
ভাবী, আপনার লেখাটা পড়লাম, পড়ার সময় মোনে হল গলায় কি যেন আটকিয়ে আছে, ২ গলাস পানি খেলাম, সেই সকালে বের হয়েছি, ভাগ্যের ফেরে সারাদিন কোন খাবার জুটেনি, কাজেই গলায় খাবার আটকানোর কোন সম্ভাবনা নেই, অফিসে কিছু নেই, তাই ২ গ্লাস পানি খেলাম, পানিও যেন আটকিয়ে গেল। আমাকে যারা চেনেন, তারা জানেন, অনুভূতি আমাকে স্পর্শ করেনা বেশীর ভাগ সময়েই, মানুষের দু:খ কষ্ট দেখে হোহো করে হাসি আর উরাধুরা মন্তব্য করি, আপনার লেখাগুলো তারপরেও কেন যেন আমার বুকে শুন্যতার সৃষ্টি করে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আমার জীবনটা, এই মাসটা, এই লেখার মন্তব্য গুলি সব মিলিয়ে এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে পৌছেঁ গিয়েছি যে আমার সারাক্ষনই গলার কাছে কি যেন আটকিয়ে থাকে। হোহো করে হাসি আর উরাধুরা মন্তব্য গুলোই মনে হয় আমার বেশী ভালো লাগতো।
মেহবুবা,
তিন নাম্বার পর্বটাই বেশি খারাপ লাগালো।
আমার বন্ধুটির চলে যাবার জন্যই যদি এতো তাড়া ছিলো, তবে আবার আশা জাগিয়েছিলো কেন ?
অনেকদিন আগের একটা কথা মনে পরে গেলো। তখন আমাদের নতুন বিয়ে হয়েছে। একদিন সন্ধাবেলা ও আমাকে আফজাল ভায়ের মনিপুরি পাড়ার বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো। সেদিন কথা প্রসঙ্গে আফজাল ভাই যা বলেছিলেন তা অনেকটা এরকম।
" তোমার এই বরটা, কি ভাবে যে সব কিছু ম্যনেজ করে ওই জানে। পাশ করে আমরা যখন কি করবো ভাবছি। ও তখন গোটাগুটি একটা দোকান কিনে বসলো। অমরা যখন দুর থেকে মোটর সাইকেল দেখে, নিজে একটার মালিক হবার কথা ভাবতাম। জুবায়ের তখন ঢাকা শহরে লাল রঙের হোন্ডা ১১০ সি সি দাপিয়ে বেরাচ্ছে। অমরা যখন হলে হোস্টেলে, এখানে সেখানে সাবলেট নিয়ে থাকি, জুবায়ের তখন গোটা একটা ছবির মতো সুন্দর ফ্লাট ভাড়া নিয়ে বসে আছে। আর এখন যখন আমরা দুর থেকে মেয়েদের দেখি আর বড় বড় দির্ঘ্যশ্বাস ফেলি। ও তখন একটা জ্বলজান্ত বউ নিয়ে ঘুরে বেরাচ্ছে।" (আপনাদের বন্ধুদের মধ্যে ওই সবার আগে বিয়ে করেছিলো) আফজাল ভাই শেষটা বলেননি সেদিন। শেষটা আমি বলছি। আপনারা যখন ভাবছেন, বয়স হয়ে যাচ্ছে। একটু গোছালো দরকার। পরকালের জন্য কিছু করা দরকার। বা ওই রকম কিছু। ও তখন কি ভাবে যেন সব কিছু ম্যনাজ করে পরকালে যাত্রা করলো। আপনার এই বন্ধুটির বরাবরই সব কিছু সবার আগে করবার তাড়া ছিলো! ( ওই বোধহয় আপনাদের বন্ধুদের মধ্যে সবার আগে চলে গেলো তাইনা?
স্কুলের পরীখ্খায় মা পই-পই করে প্রতিবার বলে দিতো, তাড়াহুড়া করবি না, ঠান্ডা মাথায় লিখবি।
কে শুনতো কার কথা।
জুবায়েরও শুনলো না।..
পড়লাম... এরচেয়ে বেশি কিছু জানানোর নেই... কিছুই বলার থাকে না কখনও কখনও...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ভাব যেখানে গভীর ভাষা সেখানে স্তদ্ধ!
তবুও ভালো থাকুন।
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
নতুন মন্তব্য করুন