কিছুক্ষণ

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি
লিখেছেন মেহবুবা জুবায়ের [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০৬/২০১০ - ৬:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[প্রথম বর্ষে কলেজ ম্যাগাজিনে দেবার জন্য গল্পটা লিখেছিলাম। বাংলার শিক্ষক লেখাটা অশ্লীলতার দোষে ছোট্ট একটা নোট লিখে (ইঁচড়ে পাকা, ২০ বছর পরে এ ধরনের লেখা লিখবার উপদেশ দেওয়া হলো) বাতিল করে দিয়েছিলেন।

বিয়ের পর অনেক সংকোচের সাথে স্বামীকে লেখাটা দেখিয়েছিলাম। লেখাটা পড়ে স্বামী হেসে গড়িয়ে পড়ে কৌতুক করে বলেছিলো, প্রতিদিন সকালে তুমি একটা করে প্রেমপত্র লিখে রাখবে, আমি অফিস থেকে এসে পড়বো। খুব জোরাজুরি করাতে আর একটু যোগ করেছিলো যে, আমার লেখা বাজার-ফর্দের সাহিত্যমানের চেয়ে ভালো। রাগে-দুঃখে লেখাটা গুঁজে রেখেছিলাম আমার সনদপত্রের ফাইলে। সেভাবেই ওটার এ দেশে আসা। তারপর ভুলে গিয়েছিলাম।

ক’দিন আগে পুরনো কাগজ ঘাঁটতে গিয়ে লেখাটা পেলাম। সচলায়তনের প্রশ্রয় পেয়ে আমি ফোঁড়া-কাটা-নাপিত ডাক্তার! তাই সাহস করে এখানে দিলাম।]


ছয় বছর আগে কি এতো গরম পড়তো? মনে তো হয় না। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে রিক্সার জন্য। এখন পর্যন্ত একটাও খালি রিক্সা পেলো না। না, পায়নি বললে ভুল হবে। রাস্তায় মাঝে-মাঝেই দু’-একটা খালি রিক্সা যাচ্ছে, কিন্তু তারা ভাড়া নেবে না। দুটো বাজলো বলে, ওদের এখন জমা দেবার সময়। উল্টো দিকে যাবে না। এতোক্ষণ হাঁটতে শুরু করলে শাহবাগের মোড় ছাড়িয়ে বাড়ির পথে অর্ধেকটাই চলে যেতে পারতো সে। কিন্তু আশাভঙ্গ, বিরক্তি, অনভ্যাস সব মিলিয়ে হাঁটবার ইচ্ছাটাই হয়নি, বা হচ্ছে না।

কামালের ধারণা ছিলো ইউনিভার্সটিতে ওর ডিপার্টমেন্টে এলেই ওর কিছু পুরনো বন্ধু-বান্ধবীর সাথে দেখা হয়ে যাবে। বাকীদের খবর ওদের কাছেই পাওয়া যাবে। কিন্তু সিদ্ধান্তটা কতো বড়ো ভুল, সেটা এখানে আসবার পর বুঝতে পেরেছে। দু’-একজন শিক্ষক, কিছু অফিস কর্মচারি ছাড়া আর কাউকেই চোখে পড়েনি। একজনকেও নয়। ছয় বছর কি খুব বেশি সময়? ও প্রথম বর্ষ অনার্স পড়তে পড়তেই বিদেশে সুযোগ পেয়ে পড়তে চলে গিয়েছিলো । যদিও সে নিজে গত ডিসেম্বরে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। এতোটা সময় লাগবার কথা নয়, কিন্তু কাজ আর পড়াশোনা একসাথে চালাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এখানে কী হলো? ছয় বছরেই ওর ব্যাচের সবাই পাশ করে বের হয়ে গেলো নাকি? তবে যে সেশন জটের কথা বলা হয়, সেটা কি ঠিক নয় তাহলে?

এতোক্ষণ একটু আত্মমগ্ন হয়ে এসব কথা ভাবছিলো ও, হঠাৎ সামনে একটা খালি রিক্সা দেখতেই হাত তুললো ও। এবং ওকে অবাক করে দিয়ে রিক্সাটা গতি কমিয়ে ওর দিকে এগিয়ে এলো এবং ওকে ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে থেমে গেলো। ও দাঁড়িয়ে আছে ইউনিভার্সিটির মসজিদের দিকের গেট ছাড়িয়ে একটু এগিয়ে।

: অ্যাই রিক্সা, পুরানা পল্টল যাবে?

একটু উচ্চস্বরের মেয়েলী গলা শুনে এই প্রথম ও দেখতে পেলো, আর্ট কলেজের গেটের দিক থেকে একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে। কামাল আর কোন ঝুঁকি নিলো না, বেশ একটু দৌড়িয়ে গিয়ে রিক্সায় উঠে বসলো। মেয়েটা পৌঁছানোর আগেই। কিন্তু ওর হিসাবে একটু ভুল হয়ে গেলো। মেয়েটি ওকে এত সহজে রেহাই দিলো না। আক্ষরিক অর্থেই দৌড়ে এসে রিক্সার হ্যন্ডেল চেপে ধরলো।

: কী ব্যাপার, আমার রিক্সায় আপনি উঠে বসলেন যে!

: আপনার রিক্সা হবে কেন? আমিই তো হাত তুলে ডাকলাম।

: আপনি ডাকবার অনেক আগেই আমি ডেকেছি।

ও সে কথা বলতেই পারে, কারণ ও ছিলো আর্ট কলেজের গেটের দিকে। কামাল ছিলো ইউনিভার্সিটির মসজিদের গেটের দিকে কিন্তু আর্ট কলেজের দিকে মুখ করে। রিক্সাটা আসছিলো টি এস সির দিক থেকে। কামাল রিক্সাটা দেখেনি, ও হয়তো দেখে থাকবে। কিন্তু তাতে কী! কামাল যখন রিক্সায় উঠে বসেছে, তখন সে-ই যাবে। কামাল মেয়েটার কথার উত্তর না দিয়ে রিক্সাওয়ালাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

: চলো ভাই, তোমাকে আমি ডবল ভাড়া দেবো।

: ইশ! আবার পয়সার গরম দেখানো হচ্ছে! নামেন শিগগির।

: না, নামবো না। কী করবেন, করুন।

ওদের এই বাদানুবাদের মধ্যে রিক্সাওয়ালা, বোধ হয়, নিজেকে জড়াতে চাইলো না, কামালকে বললো,

: আমি যামু না, আমার রিসকা জমা দ্যাওনের টাইম হইয়া গেছে। আপনে নামেন, ছ্যার।

এর পর আর কী করার আছে! ওকে নামতেই হলো। কিন্তু নামবার আগে নিজেকে আর সামলাতে পারলো না, বলে উঠলো, “শিট”। হতাশা আটকাতে গত ছয় বছর ধরে ঠিক যেভাবে ও বলে আসছে। এবার মেয়েটির দিকে ফিরে বললো,

: এবার হলো? আপনিও যেতে পারলেন না, আর আমাকেও যেতে দিলেন না।

: বেশ করেছি, কেন আপনি আমার রিক্সায় উঠলেন?

: কী তখন থেকে আমার রিক্সা, আমার রিক্সা করছেন, আপনার হলো কীভাবে? রিক্সায় কি আপনার নাম লেখা ছিলো?

: নাম লেখা থাকতে হবে কেন? আমি আগে ডেকেছি, ব্যস ওটা আমার রিক্সা।

: আপনি বললেই হলো?

: হ্যাঁ হলো! একশো বিশবার হলো!

মেয়েটার কথা শুনে কামালের হাসি পেয়ে গেলো। কী বাচ্চাদের মতো করছে। এই প্রথম মুখ তুলে ও মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালো। মেয়েদের বয়স ও ধরতে পারে না। তবে এর বয়স বিশের নিচেই হবে। পাঁচ আড়াই-তিনের মতো লম্বা। আকাশী নীলের মধ্যে সাদা পলকা ডটের কামিজ পরনে। হলুদ মেশানো ফর্সা গায়ের রং। হালকা ধূসর চোখে তেজি দৃষ্টি। ঠিক বনবেড়ালির মতো। বাঁকা ঠোঁটে জেদ ঝুলে আছে। স্বভাবের বিপরীতে গিয়ে চেষ্টা করে দৃষ্টি মুখ থেকে নিচে নামতে না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো কামাল। সব মিলিয়ে দেখতে ভালোই। না, ভুল হলো। মেয়েটা দেখতে সুন্দরী। ধ্যাত! এই পাজি মেয়েটার কথা কেন ও ভাবছে? খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে মুখটা উল্টো দিকে ঘুরিয়ে আবার রিক্সার জন্য অপেক্ষা করতে শুরু করলো। গরমটার যেন কোথাও যাবার তাড়া নেই। থমকে দাঁড়িয়ে আছে। ওর ফুল স্লিভ টি শার্ট ঘেমে গায়ের সাথে লেপটে গেছে। সকালে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করার পর যখন ফ্যানের নিচে বসে নাস্তা করছিলো, তখন ওর রীতিমতো শীত করছিলো। বের হবার সময় তাই ফুল স্লিভই পরে নিয়েছিলো। কে জানতো, কপালে এই লেখা আছে আজ? স্লিভ গুটিয়ে কনুইয়ের ওপর তুলে দিলো সে। রুমাল ব্যবহার করার অভ্যাস চলে গেছে। তাই সঙ্গে রুমালও নেই। শার্টের হাতা দিয়েই যতোটুকু পারলো মুখ মুছে নিলো ও।

আরো পনেরো মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকেও ওরা একটাও খালি রিক্সা দেখতে পেলো না। এবার মেয়েটি হাঁটতে শুরু করলো। ওকে ছাড়িয়ে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। খানিকটা এগিয়ে এলো ওর কাছে।

: এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে আপনি এখন একটাও রিক্সা পাবেন না। তার চেয়ে চলুন সোহরওয়ার্দি পার্কের ভেতর দিয়ে ওপাশে ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটের পাশ দিয়ে বের হই, তাহলে ওপাশে রিক্সা পাওয়া যাবে।

: এই বুদ্ধিটা যদি আপনার মাথায় পনেরো মিনিট আগে আসতো তাহলে এতোক্ষণ আমি ওই রিক্সাটা করে বাড়ির পথে আধাআধি চলে যেতে পারতাম।

: উঃ অসহ্য! লোকে কি আর সাধে বলে, যেচে পরে কারো উপকার করতে নেই।

মেয়েটা এবার বেশ গটগটিয়ে চলতে শুরু করলো। ওর চলে যাবার দিকে তাকিয়ে থেকে কামালের বোধোদয় হলো। আরে! এই মুহূর্তে ওকে বাসায় ফিরতেই বা হবে কেন? ও কি গাধা নাকি? এই বয়সের একটা সুন্দরী মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ থাকতে পারা তো ভাগ্যের কথা! আর ও কিনা মেয়েটাকে খুচিয়েই যাচ্ছে! নিজের গালে কষে চড় মারতে ইচ্ছে হলো। আর দেরি না করে কামাল মেয়েটার পেছন পেছন চলতে শুরু করলো। কিছুদুর গিয়ে মেয়েটি রাস্তা পার হবার জন্য দাঁড়ালো। এই অবসরে কামাল ওকে ধরে ফেললো। পাশে দাঁড়িয়ে খুব নরম স্বরে বললো, “সরি, আই অ্যাম ভেরি সরি”। উত্তরে মেয়েটি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকালো সেই বন্য রাগী চোখে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো একদৃষ্টিতে। তারপর চোখ নামিয়ে রাস্তা পার হতে শুরু করলো। কামাল ওকে অনুসরণ করলো। রাস্তা পার হয়ে ওরা পাশাপাশি চলতে শুরু করলো। হঠাৎ করেই কামালের মন ভালো হয়ে গেলো, পুরো ব্যাপারটাতে মজা পেতে শুরু করলো।

: শাস্ত্রে আছে, তিন পা একসাথে হাঁটলে তাকে বন্ধু বলা হয়, আমরা তো অনেকক্ষণ একসাথে হাঁটলাম। আমাকে একটু মাফ করে দেওয়া যায় না?

মেয়েটা ওকে আপাদমস্তক দেখলো ভালো করে, উত্তর দিলো না। কিন্তু তাতে কামাল কিচ্ছু মনে করলো না, বেশ আপন ভেবে আর একটু পাশে ঘেঁষে এলো। আড় চোখে দেখলো, মেয়েটা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। কামাল চোখের রে ব্যান সানগ্লাসটা খুলে বুকের বোতামের সাথে আটকিয়ে রাখলো। শেষ কবে ও এই রাস্তায় হেঁটেছিলো, এখন আর মনে করতে পারছে না। কিন্তু তখন কি এতো ভালো লেগেছিলো? চারদিকে দেখবার এই চোখ কি তখন ছিলো? এ কি শুধুই ছয় বছর দেশকে মিস করার প্রভাব, নাকি পাশের এই আকর্ষণীয়ার প্রভাব, ও বুঝতে পারলো না। ওপরে তাকিয়ে দেখলো, কী প্রচণ্ড নীল আকাশ। ছেঁড়া ছেঁড়া সাদা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আরে ইউক্যলিপ্টাস গাছগুলো এতো বড় হলো কবে? যদিও গুমোট গরম, বাতাস নেই বললেই চলে, তবুও ইউক্যালিপ্টাস গাছের পাতাগুলো হুটোপুটি খাচ্ছে। দুই একটা ঝরাপাতা ঘুরে ঘুরে মাটিতে এসে পড়ছে। একটা পাতা ওর গায়ে এসে পড়লো, কামাল পাতাটা দু’আঙুলে কচলিয়ে নাকের কাছে ধরলো, আহ! কী সুন্দর লেবু লেবু গন্ধ! ইতিমধ্যে ওরা এসে পৌঁছালো বড় লোহার গেটের সামনে। একজন মানুষ যেতে পারে এতোটা ফাঁক রেখে গেটের মাঝখানটা মোটা চেন দিয়ে বাঁধা। ওরা একে একে ফাঁক গলে মাঠের মধ্যে ঢুকলো। মাঝখানে পাথর বসানো পায়ে চলা পথ। একটুক্ষণ পাশাপাশি চলার পর কামাল এবার পথ ছেড়ে ঘাসের মধ্যে দিয়ে হাটতে শুরু করলো। সপ্তাহ দু’-একের না-কাটা ঘাস। কী নরম, সবুজ! পা ডুবে যাচ্ছে। নিচু হয়ে একটা ঘাসের শীষ ছিঁড়ে দাঁতে কাটতে কাটতে ও একটা বেগুনি ফুলে ছাওয়া জরুল গাছের নিচে বসে পড়লো।

: কী হলো, বসে পড়লেন যে?

কামালকে আশ্চর্য করে দিয়ে মেয়েটি বলে উঠলো। ও তো ভেবেছিলো, মেয়েটা আর ওর সাথে কথাই বলবে না।

: খুব ভালো লাগছে, একটু বসি এখানে।

: না উঠুন, সামনে এর চেয়েও ভালো জায়গা আছে বসবার জন্য।

কামাল উঠে পড়লো। মেয়েটা এবার পথ ছেড়ে ঘাসের মধ্যে দিয়ে ওর পাশাপাশি হাটতে শুরু করলো।

: কবে এসেছেন?

: মানে?

: মানে দেশে কবে এসেছেন?

: কী করে জানলেন?

: কথায় কথায় শিট বলা, (তারপর ওকে আড়চোখে আপাদমম্তক দেখে নিয়ে) এই সব নেম ব্র্যান্ডেড জামা-কাপড়! এখানকার স্হানীয় ছেলেরা পরে না বা এফোর্ড করতে পারে না। যারা পারে, তারা আপনার মতো রিক্সার জন্য দাড়িয়ে থাকে না।

: এক সপ্তাহ।

: বন্ধুদের সাথে দেখা হলো না, তাই না?

: বুঝলাম না!

: না বোঝার কী আছে? পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করতেই তো ভার্সিটিতে ছুটে এসেছিলেন, না?

: আপনি কি অন্তর্যামী নাকি?

: এতে অন্তর্যামী হতে হয় না। ঘটে একটু বুদ্ধি থাকলেই বোঝা যায়।

: তা আপনি কী বুঝলেন, একটু শোনা যাক!

মুখ ঘুরিয়ে এবার কামালের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো মেয়েটি, ওর ওই হাসিটুকু কিউপিডের তীর হয়ে কামালের বুকে এসে লাগলো। হাসি দিয়ে ঘায়েল করা বোধহয় একেই বলে!

: শুনবেন? আচ্ছা, বলছি, মিলে গেলে অন্তত নিজের কাছে স্বীকার করবেন।

: বিদেশ থেকে দেশে এসে বন্ধুদের জন্য আপনার পুরনো প্রেম উথলে উঠেছিলো। এবং তাদের সাথে দেখা করতে ভার্সিটিতে ছুটে এসেছিলেন। ভেবেছিলেন, সবাই বোধহয় ডালি সাজিয়ে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। এর সঙ্গে অন্য কোনো অফিসিয়াল কাজও থাকতে পারে। তবে সেটা এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো। ধরে নিই, বাড়ি থেকে বের হয়েছেন ১১-১২টার দিকে, বন্ধুদের কাছে নিজেকে জাহির করতে ঘণ্টা দুয়েক, আমেরিকান ডলারের গরম দেখাতে আরো ঘণ্টা দুয়েক, তারপর বাড়ি ফিরবার পথে কাউকে বগলদাবা করতেন বা ওদের করো সাথে বগলদাবা হয়ে যেতেন। এভাবে একা একা ফিরে যাবার জন্য রিক্সা নিয়ে একটি মেয়ের সাথে ঝগড়া করতেন না।

: আমি যে আমেরিকাতে থাকি সেটা কেন ধরে নিচ্ছেন?

: আপনাদের মতো হতভাগ্য বাংলাদেশী যুবকদের আর কোন চুলায় জায়গা হবে বলুন?

: ও, আমি হতভাগ্য যুবক? আমেরিকা চুলো? নিজে যেতে পারছেন না বলে খুব জ্বলুনি হচ্ছে, তাই না? কথায় বলে না, আঙুর ফল টক!

: কে বললো, যেতে পারি না, আমাদের মতো সুন্দরী মেয়েদের আমেরিকা যাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। শুধু দেখে-শুনে আমেরিকা ফেরত কারো কাঁধে ঝুলে পড়লেই হলো, আর-

কথাটুকু শেষ না করেই লম্বা লম্বা পা ফেলে ঘাসের ভেতর দিয়ে একট বেশ বড় বড় পাতার বিরাট ঝাঁকড়া গাছের নিচে দাঁড়ালো ও।

পায়ে পায়ে কামাল ওকে অনুসরণ করলো। ছায়ায় ঢাকা জায়গাটা সত্যি খুব সুন্দর! ছোট ছোট পাতার ঝোপ দিয়ে ইংরেজি সি অক্ষরের মতো করে ঘেরা। ফাঁকে ফাঁকে বাহারি পাতাবাহার ও লিলির ঝাড়। সামনের জায়গাটুকু পরিষ্কার করে কাটা সবুজ মখমলের মতো ঘাস বিছানো। গাছটার নিচে ঝোপের আড়ালে একটা পাথরের বেঞ্চ। কয়েকটা ঘন পাতাবাহারের ঝোপ দিয়ে এমনভাবে ঢাকা যে বাইরে থেকে দেখাই যায় না।

: এখানটায় বসতে পারেন। কী সুন্দর জায়গাটা, না? আমার ভারি ভালো লাগে এখানে।

বলে ঘেরার বাইরে ঘাসের ওপর মেয়েটি বসে পড়লো। কামাল বললো,

: এখানে কেন? চলুন, ওই বেঞ্চটাতে বসি।

: না, তাহলে মনে হবে আমরা প্রেমিক-প্রেমিকা, অসামাজিক কাজে লিপ্ত।

উত্তরে কামাল সশব্দে হেসে উঠে ওর পাশে বসে পড়লো।

: প্রেমিক হিসেবে আমি কিন্তু খুব খারাপ হবো না, আপত্তি আছে?

উত্তর না পেয়ে আবার বললো,

: কেন, এই তো একটু আগে বললেন, দেখে-শুনে আমেরিকা ফেরত কারো কাঁধে ঝুলে পড়লেই হলো। উত্তরে মেয়েটি তার কটা চোখে গাড় করে তাকালো কামালের দিকে, যেন ভেতর পড়তে চেষ্টা করছে। এবারও উত্তর দিলো না। কামালের কী হলো কে জানে, কাঁধটা ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

: ঝুলে দেখোই না, ঠকবে না। বহন করতে পারবো।

মেয়েটি ওর মুখের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে দূরে ঝোপটার দিকে তাকিয়ে বললো,

: প্রথমত, আমি আমেরিকা যারার জন্য পাগল নই, দ্বিতীয়ত, ঝুলবার জন্য কাঁধটা তেমন শক্ত বলে মনে হচ্ছে না। আর আমার সাথে চালাকি করবেন না। তুমি বলবার মতো অন্তরঙ্গতা আপনার সাথে আমার হয়নি।

কামাল ল্জ্জা পেয়ে একটু মাথা নিচু করে বললো,

: আমি মানে, আমি ভেবেছিলাম, মানে আপনাকে অনেক খোলা মনের, মানে...

: থাক, হয়েছে। বুঝতে পেরেছি। বলে ঠোঁট টিপে হাসলো একটু।

: আমি সরি।

মেয়েটা হঠাৎ কামালকে বললো,

: দেখি ডান হাতটা?

এবার আবার কামালের অবাক হবার পালা। মেয়েরাও আজকাল হাত দেখার ছল করে ছেলেদের হাত ধরে নাকি! জামানা বদলে গেলো দেখছি!! কামাল হাত বাড়িয়ে দিলো। ও নিজের দুই হাত দিয়ে কামালের ডান হাতখানা বন্দি করে নিজের দিকে টেনে নিলো। তারপর মনোযোগ দিয়ে হাতটা দেখতে লাগলো। আর কামাল! ওর ভেজা-ভেজা নরম উষ্ণ হাতের স্পর্শ সবটুকু অনুভুতি দিয়ে অনুভব করতে করতে বুঝতে পারলো যে, ওর সমস্ত ধমনীতে রক্ত ছুটে বেড়াতে শুরু করেছে। এ এক অসহ্য সুখ, বেশিক্ষণ সহ্য করা যায় না। ওর নতমুখের দিকে তাকিয়ে রইলো তৃষিত চাতকের মতো।

মেয়েটি হঠাৎ করেই ওর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বললো,

: আপানার হাতে তো বিয়ের রেখাই নাই, আপনার আর বিয়ে করা হবে না।

: সে কী! না, না, ভালো করে দেখো তুমি, ঠিকই বিয়ের রেখা আছে!!

তারপর জিভ কেটে বললো

: সরি, আপনি মানে আপনি দেখুন।

: চলুন, ওঠা যাক। বলে ও উঠে দাঁড়ালো।

: প্লিজ, আর একটু বসুন না?

: নাহ।

: প্লিজ. দশ মিনিট?

: আপনি বসুন, আমাকে যেতে হবে।

:খুব জেদি আপনি, বলে উঠে পড়লো এবং ওর পাশে পাশে হাঁটতে শুরু করলো কামাল।

কিছুক্ষণ পর কামাল মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করলো,

: তোমার নামটা তো জানা হলো না, কী নাম তোমার?

এবার আর ও “তুমি” বলা নিয়ে কিছু বললো না।

: আমি কী আপনার নাম জানতে চেয়েছি?

: আমার নাম...

: প্লিজ জানতে চাই না, বলবেন না।

: বা রে! আমরা এতোক্ষণ একসাথে আছি, এত সুন্দর সময় কাটাচ্ছি, নাম-পরিচয় জানবো না, এটা হয় নাকি? আমি তোমার সাথে পরিচিত হতে চাই।

ও হঠাৎ রেগে গেলো,

: না, চাইবেন না। সব কিছু কেন নিয়মমাফিক হতে হবে? নিয়মের বাইরে কেন কিছু হবে না? কেন একটু অন্য রকম হতে পারে না? গতবাঁধা নিয়মের ঘানি আমাদের কেন টানতে হবে?

: ঠিক আছে, ঠিক আছে, নাম বলতে হবে না।

এখন আবার গরমটা টের পাচ্ছে, বেশ ঘাম হচ্ছে, হিউমিডিটির জন্য। ও যেখানে থাকে, সেখানে সামারে এর চেয়ে বেশি গরম পড়ে। কিন্তু তেমন টের পাওয়া যায় না। সবখানেই তো সেন্ট্রাল এসি। গাড়িতে ওঠা-নামাতে যতটুকু মালুম হয়! ওর পানির তেষ্টা পেয়ে গেলো। এদিক-ওদিক তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেলো না। আগে তো এখানে বালতি করে ফানটা বিক্রি করতো পিচ্চিগুলো।

: পানি খাবেন?

মেয়ে অন্তর্যামী নাকি?

: এখানে পানি কোথায় পাবো?

: আছে। বলে একটু এগিয়ে একটা ঝোপের ভেতর ঢুকে পড়লো ও।

আসলে ওটা ঝোপ নয়।

কাটা মেহেদি গাছ দিয়ে খানিকটা জায়গা ঘেরা এবং একটা কলের সঙ্গে লম্বা পানির পাইপ লাগানো। মালিরা ব্যবহার করে সম্ভবত। ও কলের মুখ থেকে পানির পাইপটা খুলে ফেললো। তারপর কলের মুখ খুলে দিলো। বেশ কিছুটা পানি পরে যাবার পর, ও কলের নিচে হাত জোড় করে পানি খেতে শুরু করলো। কামাল মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো ওর পানি খাওয়ার ভঙ্গি। সেই সঙ্গে ওকেও। ওর লম্বা চুলের বেণীটা একপাশে কাত হয়ে ঝুলছে। ওড়নাটা গলায় আটকানো। পরনের কামিজের কাপড়টা পাতলা সুতির। ভেতর থেকে ওর ব্রার রেখা দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট। পাজামা বেঁধেছে বেশ নিচু করে। পিঠ থেকে কোমরের বাঁকটার শুরু অনেকটা জায়গা বাদ দিয়ে। মেয়েদের এই বাঁকটার একটা সুন্দর নাম আছে। নামটা মনে পড়ছে না। কামালের চোখ ওর বুকে এসে থমকে দাঁড়ালো। অবশ্য পাশ থেকে যতোটুকু দেখা যায়। কামালের বুকের ভেতর শিরশির করে উঠলো। ওর পানি খাওয়া হয়ে গেলো। হাতজোড়া ওড়নাতে মুছতে মুছতে কামালের কাছে এসে বললো,

: আপনি খাবেন তো খেয়ে নিন, তারপর কলটা বন্ধ করে পাইপটা লাগিয়ে দেবেন। বলে কামালের খুব কাছে এসে মুখের দিকে চোখ তুলে তাকালো। ওকে দেখবার ঘোর তখনো কামালের কাটেনি। ঠিক বাঁ গালের মাঝখানে ছোট্ট একটা খয়েরি তিল। পানি খাওয়ার ফলে ওপরের ঠোঁটের দু’পাশে ভিজে সাপটে আছে নীল নীল রোম। চাপা নাক, মাঝখানে ডাবানো পুরো ঠোট।

: কী? হাঁ করে কী দেখছেন? পানি খাবেন? না খাবেন না?

: না, মানে এই পানি খাবো?

: তো অবে জমজমের পানি কোথায় পাবেন?

: যদি কিছু হয়? মানে পেটের গণ্ডগোল?

: আমি তো খেলাম। তবে আমার তো আপনার মতো স্পেশাল আমেরিকান পেট নয়।

কামাল লজ্জা পেয়ে এগিয়ে গিয়ে পানি খেতে শুরু করলো। খুব ঠাণ্ডা, তবে কেমন যেন কাদা কাদা গন্ধ। তৃষ্ণা মিটিয়ে পানি খেয়ে ও যখন মেয়েটির দিকে মুখ তুলে তাকালো, দেখলো ও এক দৃষ্টিতে কামালের দিকে তাকিয়ে আছে।

: কী দেখছেন?

: আপনাকে।

: কেমন দেখলেন?

: এক কথায় বলা যাবে না।

: দুই কথায় নাহয় বলুন।

: কোনটা আগে শুনতে চান? খারাপটা, না ভালোটা?

: খারাপটাই আগে বলুন।

: রং খুব ফর্সা, চুল পাতলা, খুব শিগগিরই টাক পড়বে। নিজেকে জাহির করার একটা প্রবণতা আছে, সৌজন্যবোধ তলানিতে এসে ঠেকেছে। চেহারার মধ্যে একটা হাসমত হাসমত ব্যাপার আছে।

: আমি হাসমত? আচ্ছা, এবার ভালো দিকগুলো বলুন।

: আপনার কোনো ভালো দিক নেই, শুধু উচ্চতা আর স্বাস্থ্যটা ছাড়া।

: আপনি সবসময় সবার সাথে এভাবে কথা বলেন?

: না।

: তাহলে আমার সাথে কেন বলছেন?

: আপনি শুনতে চাইছেন বলে।

কামাল ভেবে পেলো না, নিজের ইমেজ পুনোরুদ্ধার করতে এখন ওর কী বলা উচিত। মেয়েদের সাথে ও আগে কখনো মেশেনি তা তো না, ঘনিষ্ঠভাবেই সে মেয়েদের সাথে মেলামেশা করেছে। তাহলে এখন এমন কেবলু মেরে গেলো কেন, সেটাও ভেবে পাচ্ছে না। না, মেয়েটাকে বেশি পাত্তা দেওয়া হয়ে গেছে। এবার একটু ডাঁট দেখাতে হবে। ও আর কোন কথা না বলে চুপচাপ এগোতে লাগলো।

পার্কের এপাশের গেটটা পুরোটাই খোলা। লোকজন, হকার মিলে বেশ জমজমাট। আইসক্রিমওয়ালা, বাদামওয়ালারা খদ্দের ধরার জন্য ডাকাডাকি করছে। বেশ ক’টা খালি রিক্সাও দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে নিচুস্বরে একটা রিক্সাওয়ালাকে কিছু বলে, রিক্সাটাতে উঠে বসলো। কামালের সম্বিৎ ফিরলো এতক্ষণে। এগিয়ে গিয়ে ওর রিক্সার হ্যান্ডেলে হাত রেখে বললো,

: এটা কী হলো?

: কেন, এই রিক্সাটাও আপনার চাই নাকি? ঠিক আছে, আমি আরেকটা নিচ্ছি।

: প্লিজ! রিক্সা নয়, আপনি এভাবে চলে যেতে পারেন না।

: কেন?

: যাবার আগে আপনার নাম ও পরিচয়টা দিন, আমি যোগাযোগ করতে চাই।

: আমি চাই না।

: কেন এমন দাম বাড়াচ্ছেন? চলুন, আপনাকে নামিয়ে দিয়ে আসি। যেতে যেতে কথা হবে।

: আপনার আরো একটা দোষ কী, জানেন? আপনি কথাও বলতে জানেন না, কোথায় কী বলতে হয় তা‌ও জানেন না।

: ঠিক আছে, ঠিক আছে তুমি যা বলবে, সব ঠিক! আমি খুব খারাপ, হাবা হাসমত! কিন্তু এভাবে চলে যেও না।

: দেখুন, সবাই হাঁ করে দেখছে?

: আমি কেয়ার করি না, ফোন নাম্বারটা দাও।

: না, রিক্সা ছাড়ুন, অ্যাই রিক্সা চলো।

কামাল রিক্সার হ্যান্ডেলটা ছেড়ে দেয়। রিক্সা চলতে শুরু করে।

: অন্ততপক্ষে নামটা বলো?

: নাম বলবো না, কেন জানেন?

: কেন?

: যাতে করে আমাকে সারা জীবন মনে রাখতে পারেন।

মেয়েটিকে নিয়ে রিক্সাটা চলে গেলো। কামাল তাকিয়ে রইলো যতক্ষণ পর্যন্ত না রিক্সাটা বাঁক নিয়ে দৃষ্টি সীমানার বাইরে চলে যায়।


মন্তব্য

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বিয়াফক ভালু পাইলাম, ৫ তারা
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

লইজ্জা লাগে

--------------------------------------------------------------------------------

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বেচারাকে এই ভাবে কষ্টে রেখে গল্প শেষ করলেন??

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

তোমার জীবনে এই ঘটনা ঘটলে তুমি কী কষ্ট পাইতা? আমি কামাল হইলে ঐ মেয়েকে খুঁজে বেড় করতামই। শুরু করতাম দুইটা সুত্র নিয়ে। আর্ট কলেজ আর পুরোনা পল্টন। পাড়ার মুদির দোকান হলো সবচেয়ে বিশস্ত স্হান!

--------------------------------------------------------------------------------

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমি তো "ধরো তক্তা, মারো পেরেক" নীতিতে বিশ্বাসী, ভাবি! বিশ্বাস না হলে বৌকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। প্রেমের ঘোর কাটার আগেই বৌ, এখন দিনরাত হায়-হায় করে... দেঁতো হাসি

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

দেঁতো হাসি
একমত! একমত।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

আরও ১২ বছর আগে লেখটা পড়লে নিশ্চিত বুকের বাদিকে হালকা চাপ অনুভব করতাম দেঁতো হাসি

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

হো হো হো

--------------------------------------------------------------------------------

প্রখর-রোদ্দুর এর ছবি

রে-বেন সানগ্লাস খুলে রেখেছে না লিখেও ছেলেটে যে রে-বেন ব্যহার করে তা মেয়েটির কথার মাধ্যমে পরবর্তিতে এমনিতেই বুঝানো যেতো । এমন জাতীয় প্রকাশ গুলো লেখনীকে হাল্কা করে ফেলে কিছুটা ।

ভালো লাগলো অনেক কিছুই সেই সাথে চোখে লাগার জায়গাটি বল্লাম বলে আশা করি কিছু মনে করেন নি ।

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

ধন্যবাদ, ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। আর যদি কখনো কিছু লিখি, তাহলে এটা মনে রাখবো।
"চোখে লাগার জায়গাটি বল্লাম বলে আশা করি কিছু মনে করেন নি ।" এটা লেখার দরকার ছিলো না। আমি যখন এখানে লিখি তখন আমি শুধুই একজন ব্লগার, জুবায়েরের বউ নই।

--------------------------------------------------------------------------------

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমি যখন এখানে লিখি তখন আমি শুধুই একজন ব্লগার, জুবায়েরের বউ নই।

পরিচয়ের খাতিরে এসে যাবে, কিন্তু এই পরিচয়গুলো আসলে বড় হবে বলে মনে হয় না। এখানে ব্লগার পরিচয়টাই বড়।

গতরাতেই কথা হচ্ছিলো আনিস ভাইয়ের সঙ্গে। কথা না, আসলে ঝগড়া হচ্ছিলো, কেন তিনি সচল ছাড়বেন।
আমি একটাই কথা বলেছিলাম, আনিস ভাই মোটেও এখানে জুবায়ের ভাইয়ের ভাই না। আনিস ভাই নিজস্ব চিন্তা চেতনা দিয়েই আমাদের শ্রদ্ধার জায়গায় চলে গেছেন। আনিস ভাই সচলে না আসতে পারেন, কিন্তু আনিস ভাইয়ের প্রতি আমার অন্তত শ্রদ্ধার জায়গাটা আজীবন থাকবে।

একই কথা বলতে পারি সন্ন্যাসীদার ক্ষেত্রে। পরিসংখ্যান না জেনেই বলছি, আমার জানামতে সন্ন্যাসীদা সচলের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন। কিন্তু আমরা জুবায়ের ভাইকে হারানোর আগ পর্যন্ত খুব কম লোকই জানতাম যে সন্ন্যাসীদা জুবায়ের ভাইয়ের ভাই।

তেমনি আমি জানি, ভাবী [ভাবী বলছি সম্পর্কের বিচারে, কিন্তু আমি আপনাকে এখানে সহব্লগার হিসেবেই জানি] আপনি একজন সচল, এর বেশি কিছু না। আমাদের বৃহত সচল পরিবারের একজন সদস্য। আর কিছুই না।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ভাবি এবং নজু ভাইয়ের কথার সাথে সহমত। তবে আমার মনের একটা কোণে জুবায়ের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে এঁদের প্রত্যেকের নাম দেখলেই। এই মানবিক দুর্বলতাটুকু এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

রাইরান [অতিথি] এর ছবি

কামালের কি মনে আছে ঐ মেয়েকে?

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

আপনি কামাল হলে কী মনে রাখতেন? হাসি

--------------------------------------------------------------------------------

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মুগ্ধ!

আরেকটি ব্যাপার ভাবছিলাম, সময়ের পরিক্রমায় পারষ্পরিক বিশ্বাস কমে যাচ্ছে... এই যেমন গল্পে অচেনা কারো সঙ্গে পথ হাঁটা, কথা বলা, বিশ্বাস করা; এসব এখন কি সম্ভব...?

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

আমাদের সময় সম্ভব ছিলো। তোমাদের সময় নিয়ে তো কিছু বলতে পারবোনা শিমুল! তবে যৌবনের ধর্মই তো পাগলামি করা। না হয় করলেই একটু পাগলামি!! কী আর হবে? ভালো হলে তোমার ভালো, ভালো স্ত্রী পাবে। খারাপ হলে দশের ভালো (গন পিটুনি) হো হো হো

--------------------------------------------------------------------------------

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হা হা!
ভয়ই পেলাম... চোখ টিপি

মুস্তাফিজ এর ছবি

ঠিক আছে, বাজার-ফর্দের সাহিত্যমানের চেয়ে ভালো হইছে।

...........................
Every Picture Tells a Story

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

দুর মিয়া! আপনিও একদম জুবায়েরের মতো!! আপনাকে পুরা মাইনাস!!

--------------------------------------------------------------------------------

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভাবী, পুরোনো সব কাগজপত্র বিছানা বালিশ ঘেঁটে আর যত গল্প পান সব পোস্ট করেন তাড়াতাড়ি হাসি (লিখতে বল্লেই আশঙ্কা করছি বলবেন, সময় নেই অথবা পারিনা মন খারাপ )

[গোপনে: ভাবী, কোমরের বাঁকটার সুন্দরমত নামটা কি? খাইছে ]
____________________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ !

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কুলদা রায় এর ছবি

কোমরের ঐ বাকটার নাম ফায়ারবাক।
এই নামে একজন দার্শনিক আছেন শুনেছি। তিনি বাল্যকালে মহাভারতপাঠকালে একটি পুকুরে ডুব দিয়েছিলেন। তারপর তার এইরূপ নামপ্রাপ্তি হয়। পরবর্তীকালে আবিষ্কৃত হয় ঐ পুকুরটির উদক তৃষ্ণানিবারক এবং তার নাম--যে জলে আগুন জ্বলে। গণেশসম্প্রদায় উহাকে কেরাসিন হিসাবে চিহ্নিত করে। ফায়ারবাকের কথা অমৃত সমান। শুনিলে কর্ণ লালতপ্ত হয়।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

--------------------------------------------------------------------------------

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

--------------------------------------------------------------------------------

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

আরো! পড়লানা মোস্তাফিজ কী লিখছে? লেখাটাতো ছাপা হয়ে গেছে। এখন এইটারে ক্যমনে কোথায় লুকানো যায় সেই বুদ্ধি দাও এবার।

গল্পটা যখন প্রথম লিখেছিলাম, তখন নামটা লিখেছিলাম, "মেখলা"।
বাবা, সচল বলে কথা!! না যাইনা লিখলে খরব আছে। অভিধানে দেখলাম মেখলা মানে 'কটিভূষণ' তাইলে এখন কী করা? তাই একটু ভুকি চুকি করলাম আরকি। তবে ফায়ারবাক! না, এই নাম আমার জানা ছিলো না। জানলে যুদ্ধেই যাইতাম না।

--------------------------------------------------------------------------------

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

এইটা একদম আমার দোষ না। তিনবার মুছলাম, তারপর ও জায়গা মতো লাগলো না। "অনার্য সঙ্গীত নিচের মন্তব্যটি তোমার, দয়া করিয়া পড়িয়া লইয়ো।"
@ কুলোদা রায় আপনার মন্তব্যের জবাবটা কোথায় দেই বলেন তো? পুরা তো গিট্টু লেগে গেলো!!

--------------------------------------------------------------------------------

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

"সনদপত্রের" সাথে যত্নে রাখার মতনই...

"ছোট প্রাণ,ছোট ব্যথা,ছোট ছোট দুঃখ কথা,নিতান্তই সহজ সরল" ভাবে লেখা।
-----------
"সে এক পাথর আছে কেবলি লাবণ্য ধরে"

-----------
চর্যাপদ

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

বাংলা ক্লাসে ছোট গল্পের সঙ্গা পড়াতে গিয়ে এটা শিখিয়েছিলেন বাংলার শিক্ষক। লিখেছিলামও ঐ কথা মাথায় রেখে। "শেষ হইয়া ও হইলো না শেষ"

--------------------------------------------------------------------------------

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

সুইট লাগলো। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

হাসি

--------------------------------------------------------------------------------

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

আরে ভাবী ... জোশ লাগলো তো !!!

===============================================
ভাষা হোক উন্মুক্ত

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

আহারে! এই কথা যদি আগে কেউ বলতো!! মন খারাপ

--------------------------------------------------------------------------------

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গল্পটা দুপুরে পড়ছিলাম। মন্তব্য করতে গিয়ে দেখি নেটলাইন ডাউন। করতে পারি নাই। এখন জানায়ে গেলাম ভালো লাগছে গল্পটা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

কী সান্তুনা পুরস্কার দিলা ?

--------------------------------------------------------------------------------

তাসনীম এর ছবি

দেরিতে পড়লাম ভাবী। গল্পটা দারুণ লেগেছে।

++++++++++++++
ভাষা হোক উন্মুক্ত

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মেহবুবা জুবায়ের এর ছবি

থেনকিউ হাসি

--------------------------------------------------------------------------------

স্পর্শ এর ছবি

আরেহ!
কদিন আগে সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্টে আমার জীবনে সত্যি সত্যিই এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল!! এই যে লিঙ্ক

লেখাটা খুবই ভালো লাগলো আপু!! কিন্তু সে সময় এই লেখাটা আটকে দিলো কেন? এখন হলে আটকাতো না নিশ্চই। আসলে এই 'স্টান্ডার্ডগুলো' প্রতিনিয়ত যে কীভাবে পরিবর্তন হচ্ছে... এখন যেগুলো আটকে যাচ্ছে একদিন সেগুলো দেখেও অবাক হবে আগামি দিনের পাঠক।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

ভাল লেগেছে।
আর ঘটনা মনে হয় প্রায় একই আছে, এতদিন পরেও। মানুষ আসলেই কি আর অত বদলায়? হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।