প্রথম পর্ব > দ্বিতীয় পর্ব > তৃতীয় পর্ব > চতুর্থ পর্ব > পঞ্চম পর্ব > ষষ্ঠ পর্ব > সপ্তম পর্ব
গ্রামগুলি আর নিরাপদ ছিলো না। ঢাকার ওপর দখল নিয়ে পাক-আর্মিরা তখন আশে-পাশে গ্রাম-গঞ্জে হামলা চালাতে শুরু করেছে। আমাদের গ্রামে থাকাটা আব্বার কাছে আর নিরাপদ মনে হলো না। ঠিক মনে নেই, তবে মনে হয়, এপ্রিলের শেষের দিকে আমরা ঢাকায় ফিরে এলাম। আমার মেজবোনের জন্মদিন ২৮শে এপ্রিল। আমরা ফিরবার পর আম্মা ওর জন্মদিন উপলক্ষে পায়েস রান্না করেছিলেন। আমাদের উত্তরবঙ্গের লোকদের মাঝে, মনে হয়, ঘটা করে জন্মদিন পালন করবার রেওয়াজ ছিলো না। তবে জন্মদিন উপলক্ষে পায়েস রান্না করা হতো, সেটা কাঁসার বাটিতে করে জুড়োতে দেওয়া হতো মিটসেফের ভেতর। যার জন্মদিন তাকে কিশমিশ-বাদাম ছড়িয়ে বেশ যত্ন করে তা খেতে দেওয়া হতো।
পরে অবশ্য যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়মটা বদলে গিয়ে আমার ছোট ভাই ও বোনদের জন্মদিন ঘটা করেই পালন করা হতো।
ফিরে আসবার পর নিচতলার চাচিরা জানালেন, আমাদের পাড়ায় প্রতিদিন মিলিটারি আসে। লুট-পাট করে। পাড়ার সেতুদের কয়েক ঘর ভাড়াটিয়া ছিলো, তাদের মেয়েদেরসহ বাড়িসুদ্ধ সবাইকে পাকি মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গেছে। তারপর আর কেউ ফিরে আসেনি। আমাদের বলা হলো বারান্দায় না যেতে, জানালা না খুলতে এবং আলো না জ্বালাতে।
আব্বা ফিরে এসেই তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আব্বার অফিস ছিল টিকাটুলি আর ওয়্যারহাউস ছিলো নবাবপুরের কোর্ট হাউস স্টিট্রে। জায়গাগুলি নিরাপদ ছিলো না এক্কেবারেই, ঠিক কেন এখন আর মনে করতে পারছি না। আব্বা প্রতিদিন সকালে এমনভাবে আমাদের কাছে বিদায় নিতেন, যেন এই যাওয়াই তাঁর শেষ যাওয়া।
আম্মার ফুপাতো ভাই সুলেমান মামা এসেছিলেন বগুড়া থেকে। আমাদের না পেয়ে চাচিদের কাছে চিঠি লিখে রেখে গেছেন। চাচি সেই চিঠি আম্মাকে না জানিয়ে আব্বাকে দিয়েছিলেন। ক’দিন পর আব্বা চিঠিটা আম্মাকে দিলেন। চিঠি থেকে জানা গেলো, আমার ছোটখালুর বড়ভাই আজাদ মামা (বগুড়ার প্রথম শহীদ, সম্ভবত ৪-৫ এপ্রিলে বগুড়া অবরোধের সময় তিনি মারা যান) পাকি মিলিটারির গুলিতে মারা গেছেন। ছোট খালু তার বন্ধু পটল ও তপনকে নিয়ে বগুড়া স্টেট ব্যাংক লুট করে ইন্ডিয়া চলে গেছেন।
[তাঁরা প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকা লুট করেছিলেন। পথে অনেক ঘটনার জন্ম দিয়ে ৯ কোটির মতো টাকা নিয়ে বডার্র পার হতে পেরেছিলেন। শেষমেশ ৪ কোটি টাকা স্বাধীন বাংলা সরকারের হাতে পৌঁছিয়ে দিতে পেরেছিলেন। এই টাকা নিয়ে যে কত নোংরামির ইতিহাস আছে, সেটা নিয়ে আমার অনেক বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিলো। তা করলে অনেক মুখচেনা মানুষ ও নেতার মুখোশ খুলে যেত। কিন্তু খালুর অনুমতি নিতে গিয়েই বিপদে পরে গেলাম। আমার খালু কিছুতেই রাজি হলেন না। “খবরদার কলাম, ওই কামও করো না বাপু, সময় খারাপ, হামার তাফালিঙ হয়্যা যাবি ব্যারে”।]
আমার নানার বাড়ি ছিলো বগুড়ার কালীতলা হাটের ওপর মদিনা মসজিদের পেছনে। তাদের পুরা বাড়ি লুট করে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালা কিচ্ছু নেই, শুধু পোড়া ইট পড়ে আছে। নানা-নানীদের খরব কেউ জানে না। বেঁচে আছেন না মারা গেছেন, তাও কেউ জানে না। ছোটখালা তার শ্বশুরবাড়ির সাথে কোথায় কোন গ্রামে যেন চলে গেছেন। অন্য খালা ও মামাদের খবরও কারো জানা নেই। গুজব ছোট মামাকে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গেছে।
আমার মা ছিলেন খুব আমুদে হাসি-খুশি মানুষ। রান্না করতে এবং লোকজন ডেকে খাওয়াতে বড়ো ভালোবাসতেন। বিকেলে চুল বেঁধে খোঁপায় ফুল গুঁজতেন। গুনগুন করে সারাক্ষণ গান গাইতেন। খুব গল্পের বই পড়তেন। বেগম পত্রিকায় সেলাই ও রান্না নিয়ে কলাম লিখতেন। সেই মা আমার বদলে গেলেন পুরোপুরি। হাসতেন না, কথা বলতেন না, রান্না করা দূরে থাকুক, খাওয়া-দাওয়াও ঠিকমতো করতেন না। জানালার গ্রিল ধরে শুধু কাঁদতেন। (৮৬ সনে দেশ ছেড়ে চলে আসবার পর আমি আমার মায়ের মনের অবস্থাটা খানিকটা বুঝতে পেরেছিলাম। আমি তো জানতাম, আমার পরিবার ভালো আছে। তবুও বুক ফেটে কান্না আসতো। বাথরুমে গিয়ে কেঁদে বুক ভাসাতাম। আম্মা তো সেটুকুও জানতেন না। আহারে আমার মা’র না জানি কত কষ্ট হয়েছিলো।)
আমাদের বুয়া আমিন আলীকে রেখে দেশে চলে গেলো তার আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ-খবর নিতে। রেহেনাকে ওর বাবা এসে নিয়ে গেলো। আমরা চলে যাবার পর হালিম পুলিশ লাইনে কাজ শুরু করেছিলো। ও আর ফিরে এলো না। তবে মাঝে মাঝে খাবার-টাবার নিয়ে আমাদের দেখতে আসতো। অনেক গল্প বলতো। পাকি মিলিটারিরা নাকি পয়সা খরচ করে কিছু কেনে না। যা দরকার সব লুট করে নিয়ে আসে হাট-বাজার ও মানুষের বাড়ি থেকে। আমরা হালিমের আনা খাবার খেতাম না। ফেলে দিতাম।
আমাদের দেখা-শোনা করার কেউ নেই, রান্না করার কেউ নেই। সে যে কী একটা অবস্থা! বড়াপু, মেজাপু আর আমিন আলী মিলে রান্না করতো। ছোটবোন দুটোকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব পড়লো আমার উপর।। আমি সেটা একদমই করতাম না। ফলে প্রতিদিন নিয়ম করে বড়াপুর হাতে মার খেতাম। আগে মার তারপর ভাত - এই ছিলো নিয়ম। যদিও ওদের রান্না করা অখাদ্য আমি এমনিতেই খেতে চাইতাম না। দিনের আলো থাকতে থাকতেই সব করতে হতো। সন্ধ্যা হতেই সব বন্ধ করে ভুতের মতো বসে থাকতাম, গরমে সিদ্ধ হতে হতে। ফ্যান ছাড়তেও পারতাম না। তাহলে বাতাসে পর্দা নড়বে তাই। গেস্ট রুমের সব পর্দা খুলে ফ্যান ছেড়ে রাতে আমরা সবাই মিলে ওখানে ঘুমাতাম, ঘরটা ছিলো বাড়ির পেছন দিকে। আর চারিদিকে নারিকেল গাছ দিয়ে ঘেরা। রাতে শুরু হতো গুলির শব্দ। আমাদের শুনতে শুনতে চেনা হয়ে গিয়েছিলো কোনটা এলএমজি আর কোনটা থ্রিনটথ্রি’র শব্দ। মেজাপু ছিলো খুব ভীতু আর দুর্বল টাইপের। গুলির শব্দ শুরু হলেই তার কান্না আরম্ভ হতো। তারপর হতো পেট ব্যাথা, এবং সেই সঙ্গে বমি। এতসব শব্দে সবচেয়ে ছোট বোন শিমুলের ঘুম ভেঙ্গে যেত। ঘুম ভেঙ্গে পিচকিটা শুরু করতো চিলের মতো চিৎকার! কার বাপের সাধ্য ওর কান্না থামায়! ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে রাখা হতো। বেচারি মুখ থেকে হাত সরাবার জন্য কি রকম যে করতো! উঃ সে যে কী বীভৎস একটা পরিবেশ, ওখানে না থাকলে কারো পক্ষে আন্দাজ করা সম্ভব নয়। সবাই জেগে বসে থাকতাম, শুধু আমার চার নাম্বার বোন হাবা বাবলিটা পড়ে পড়ে ঘুমাতো।
আমিন আলী ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আমি একা হয়ে গেলাম। দুপুরবেলা একা একা ঘুরে বেড়াতাম সারা পাড়াময়। সেতুদের বন্ধ মেইনগেটে বিরাট একটা তালা ঝুলানো। ওদের ভাড়াটিয়াদের সবার সবগুলি ঘরের দরজা-জানালা হাট করে খোলা। কাগজ-পত্র, বিছানা-বালিশ, কাপড়-চোপড় সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে এক্কেবারে লণ্ড-ভণ্ড অবস্হা। হাঁড়ি-কুড়ি সারা রান্নাঘরময় ছড়ানো ছিটানো। কী ছিলো আর কী খোয়া গেছে কে জানে?
জনমানবশূন্য ফাঁকা পাড়া, সমস্ত পাড়া জুড়ে গোটা কয়েক পরিবার বাদে সবাই পাড়াছাড়া। প্রায় সবগুলি খালি বাড়ি বড় বড় ঘাস আর আগাছায় ভরা। বাড়িতে বাড়িতে গাছ ভরে কাঁচা আম ঝুলছে। কেউ পাড়ার নাই।
আমাদের পাড়ায় অভিনেতা ইমাম আহমেদের মেয়ে থাকতেন। তাদের বাসায় ছিলো সবচেয়ে সুন্দর বাগান। তেমনি ছিলো সব ধরনের ফলের গাছ। আমাদের ছোটদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাড়ি সেটা। বাড়িটা ছিলো উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরা আর গেটটা সব সময় বন্ধ থাকতো। ফিরে এসে ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখলাম, গেটটা হাট করে খোলা। কেউ নেই সারা বাড়িতে। অত সুন্দর বাগান আগাছায় ভরে গেছে। গাছে গাছে কত ফল! চাইলেই কোঁচড় ভরে পেড়ে নেওয়া যায়। কেউ বারণ করবার নেই। কিন্তু ফল-ফুল চুরি করবার মানসিকতাই বদলে গেছে কেমন করে কে জানে। দরজাটা বন্ধ করে ফিরে এলাম।
আমাদের পাড়ায় হায়দ্রাবাদের একটা পরিবার থাকতো। আমরা হায়দ্রাবাদী চাচা বলতাম। দেশ বিভাগের পর হায়দ্রাবাদ থেকে তারা পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন। তাদের পরিবার পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলিয়ে থাকতো। খুবই ধনী ছিলো তারা। বেভারেজ কম্পানি সহ আরো অনেক ব্যবসা ছিলো তাদের। তার ছিলো নয় ছেলেমেয়ে। প্রথম তিন ছেলে বড়। বড় দুটো বিবাহিত। তারা বাপের ব্যবসা-বাণিজ্য দেখতো। তারপর তিন মেয়ে, জগ্নু, আনিস আর আম্মু। আম্মু বাজি ছিলো বড়াপুর সমান, দুজনেই নাইনে পরতো। তারপর আবার তিন ছেলে। ছোটটার বয়স কয়েক মাস। বড়টার নাম হামেদ, আমার সমবয়সী, তবে আমার সাথে খেলতো না, মুখ বেঁকিয়ে বলতো, “আরে ছো লারকীকি সাথ ম্যায় নেই খেলুঙ্গি”। ও খুব ভালো লাটিম ঘুরাতে পারতো। ওর একটা কালো মোষের শিং-এর লাটিম ছিলো। ওটার জন্য আমার খুব লোভ ছিলো। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম সুযোগ পেলে লাটিমটা চুরি করবো। ৭২-এ পাকিস্তানে চলে যাবার সময় হামেদ নিজে থেকেই আমাকে লাটিমটা দিয়ে বলেছিলো, “তু রাখলে”।
পাক আর্মিতে তাদের অনেক বড় বড় আত্মীয়-স্বজন ছিলো। কর্নেল-ব্রিগেডিয়ার টাইপ সব। সেই হায়দ্রাবাদি চাচাই উপর মহলে যোগাযোগ করে আমাদের পাড়ায় মিলেটারি আসা বন্ধ করলেন। এখানে সব শরিফ আদমি থাকে। সুতরাং তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হোক। এ পাড়ার জন্য তিনি জিম্মি হলেন। কোনো রকম খোঁজ-খবর দরকার হলে যেন তাঁকে জানানো হয় এই কথা বলে। এরপর অনেকদিন আমাদের পাড়ায় কোন মিলিটারি টহল দিতে আসেনি। তবে মাঝে মাঝেই জিপে করে বড় বড় আর্মি আফিসাররা হায়দ্রাবাদি চাচার বাসায় দাওয়াত খেতে আসতো। ওদের বাসাটা ছিলো দেড়তলা। দু’তলার অর্ধেকটা ছিলো ছাদ। আমাদের পেছনের বারান্দায় গেলে ওদের ছাদ স্পষ্ট দেখা যেত। সেই ছাদে টেবিল লাগিয়ে, অনেক আলো জ্বালিয়ে পার্টি হতো। মাঝরাত পর্যন্ত গান বাজতো। জগ্নু বাজিরা তাদের ভাবিদের সাথে ওখানে বসে থাকতো। চাচা খুব ধার্মিক ছিলেন, শুধু পাড়ার লোকের জীবন বাচাঁবার জন্য নিজের পরিবারের ইজ্জত বিসর্জন দিয়েছিলেন। মিলিটারিরা উচ্চ স্বরে হাসতো, জোরে জোরে কথা বলতো, গ্লাসে টোকাটুকি করে পান করতো। ছাদের উপরই কাবাব বানাতো হতো। তার গন্ধ ভেসে আসতো। আমার যে কী ভীষণ খেতে ইচ্ছে করতো! অন্ধকার বারান্দায় চোরের মতো বসে বসে ওদের ফূর্তি করা দেখতাম। আর রাগে-দুঃখে কাঁদতাম। বুঝতে পারতাম না কার দোষে আমাদের জীবনটা এমন করে বদলে গেলো? কেন আমরা এত কষ্ট করছি আর মিলিটারিরা এত আনন্দ করছে?
১৯শে ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীরা হায়দ্রাবাদি চাচা ও তার পুরো পরিবারকে (চাচী, হামেদ আর ওর ছোট দু’ভাই বাদে, ওরা বাসাতে ছিলো না।) মাঝরাতে স্টেনগানের মুখে উঠিয়ে মাদারটেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মেরে ফেলে রেখে দিয়েছিলো। পাড়ার লোক জানতে পেরেছিলো সকালে। ওখানে পৌঁছোবার আগেই সবাই মারা গিয়েছিলো। আম্মু বাজির পেটে গুলি লেগেছিলো, সারা রাত রক্তক্ষরণর পরও ও বেচে ছিলো। পরে হাসপাতালে নেবার পথে মারা গিয়েছিলো। সাদা কাগজের মতো ওর মৃত-মুখটা, নীল সালায়োর-কামিজ পরা মৃতদেহটা আর ওদের সেই ছাদে রাখা সারি সারি লাশগুলি। আমার এখনো স্পস্ট মনে আছে।
গুজব, এর পেছনে আমাদের পাড়ার আমানউল্লাহ কন্ট্রাক্টারের হাত ছিলো, এর কিছুদিন পর তিনি সেভেন-আপ কোম্পানির মালিক বনে গিয়েছিলেন।
এই অনভিপ্রেত মর্মস্পর্শী কলঙ্কময় ঘটনাটি আমাদের শহিদবাগের সবার লজ্জায় মাথা নত করে দিয়েছিলো। লজ্জায় দুঃখে ঘরে ঘরে সেদিন মাতম করেছিলো সবাই। যারা নয় মাস আমাদের পুরো পাড়া রক্ষা করেছিলেন, আমরা এতগুলি মানুষ স্বাধীন দেশে তাদের রক্ষা করতে পারলাম না!
মন্তব্য
আমি ভাবছিলাম, এইবারের পর্বটা পড়ে মন খারাপের কিছু নেই, আপনারা পুরানো বাড়িতে ফিরে এসেছেন, কষ্ট হচ্ছে, তাও সবাই একসাথে আছেন, ভালো আছেন, বোনেদের পিট্টি খাচ্ছেন, ছোটগুলোকে হাঁদারাম বলছেন, একা একা টো টো করছেন... তারপর শেষে এসে সব হিসাব উল্টা-পাল্টা হয়ে গেল... আবারো চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি ঝরে পড়লো, আর মনে হলো, মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিকথা, সব্বার স্মৃতিকথাই কি এইরকম...
সব সময়েই কি তার সাথে অনেকের অনেক কষ্ট জড়িয়ে থাকে...
সেই জন্যেই কি ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও তারা যখন সেইসব দিনের কথা বলেন মনে হয় এই সেদিনের কথা... নিজে না দেখলেও মনে হয় আমিও দেখেছিলাম এমন কিছু...
আম্মার বর্ণনাতে, আব্বারটাতেও এইরকম পরিবারেরা আছে... আর এখন সেই সব মানুষও টিকে আছে যারা কত অত্যাচার করেও আজ মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে, বংশ-বংশানুক্রমে সুবিধাভোগের জন্যে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আর এখন সেই সব মানুষও টিকে আছে যারা কত অত্যাচার করেও আজ মুক্তিযোদ্ধার সনদ জোগাড় করে, বংশ-বংশানুক্রমে সুবিধাভোগের জন্যে।
আমরা-আমাদের প্রজন্ম সব জেনেও তাদের মুখোশ খুলে দিতে পারিনি। উল্টো তাদের ভয়ে বা সুবিধা আদায়ের জন্য, যাই বলো না কেন, কেন্নোর মতো নিজেদের গুটিয়ে রেখেছি। আমাদের এই জেলীফিস প্রজন্মের কোন মেরুদন্ড নেই, পারলে আমাদের এ অক্ষমতা তোমরা ক্ষমা করো।
--------------------------------------------------------------------------------
ভাবী, ইতিহাস যেটুকু বলছেন না, সেটুকুও বলা উচিত বোধ হয়। অন্তত লিখে রাখা উচিত। এখনই না বললেন। একটু না-হয় সময় নিলেন! কত দুর্ভাগ্য আমাদের! স্বাধীন দেশেও ইতিহাস বলা যায় না!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
খুব লেখার ইচ্ছে ছিলো, কিন্তু স্বাধীন দেশেও যে আমরা পরাধীণ রে ভাই!
একটু না-হয় সময় নিলেন!
ভালো বলেছো! ৪০ বছর তো সময় নিলাম, বদলেছে কিছু? সব রসুনের এক গোড়া যে! এক দল যাবে, আর এক দল আসবে। আমরা নিজেদের বাঁচাতে মুখে কুলূপ এটে বসে থাকবো।
--------------------------------------------------------------------------------
......................
--------------------------------------------------------------------------------
লিপিবদ্ধ হোক ইতিহাস আপনার লেখনীতে।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
ধন্যবাদ!
--------------------------------------------------------------------------------
এই পর্বের শেষটা যে এমন হবে ভাবিনি। প্রতিটি বর্ণনা খুব জীবন্ত লাগলো। অনার্য সঙ্গীতের সাথে একমত। যতটুকু এখন এখানে বলতে পারলেন না, সেটুকু লিখে রাখুন ভবিষ্যতের জন্য।
আমার ছোট খালুর কাছে সেই সব দিনের কথা শুনে শুনে আমরা বড় হয়েছি। তারপরও অনেক খুটি-নাটি মনে নেই, এ বিষয়ে লিখবার আগে তাই তার কাছে আর একবার গল্পটা শুনতে হবে। এসব তো আমার নিজের চোখে দেখা নয়, তাই ভুল তথ্য যাতে না থাকে সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাই।
দেশ স্বাধীন হবার পরও যখন তিনি ফিরে এলেন না তখন আমরা ধরে নিয়েছিলাম যে সে মারা গিয়েছে। তিনি প্রায় ১১ মাস ইন্ডিয়াতে জেল খেটেছিলেন। পরে সে খরব পেয়ে অনেক, অনেক চেষ্টার পর তাকে ৭২ এর আগষ্ট মাসে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
--------------------------------------------------------------------------------
এই সিরিজটার জন্য অপেক্ষায় থাকি সবসময়
জেনে খুব খুশি হলাম অমিত। ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
এইবার দাবী প্রকাশ্যে জানাই ভাবী। এই সিরিজের ইবই হোক।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
না রে বাবা না!
--------------------------------------------------------------------------------
কেন না, সেটা বুঝলাম না। আমরা সাহায্য করবো, আপনি লেখা শেষ করুন, ই-বই হোক।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
--------------------------------------------------------------------------------
সহমত
...........................
Every Picture Tells a Story
জি না!
--------------------------------------------------------------------------------
মন্তব্য করা হয় না সব সময়, তবে পড়ছি নিয়মিত। লিখতে থাকুন নিয়মিত।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
অনেক ধন্যবাদ সজল লেখাটা পড়ার জন্য। মন্তব্য করাটা তেমন জরুরী নয়।
--------------------------------------------------------------------------------
আমরা সবাই পড়ছি । একটি সংকলন বের করা হোক। এই লেখা হারিয়ে কোনমতেই হারিয়ে চলবে না ।
হারাবে কেন? সচালায়তনেই তো থাকবে। যারা এ লেখাটা পড়তে চাইবে, তারা আমার অনেক অনেক অনেক প্রিয় সচলে আসবে এটা পড়বার জন্য।
--------------------------------------------------------------------------------
যা বলা গেলোনা তা বলার মত একটা সময় আসুক। আমাদের সব জানার দরকার, সব। মুখোশ না খুললে মুখোশধারীদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে যেতেই থাকবে। ভালো থাকুন, আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য মঙ্গলকামনায়, শুভেচ্ছা,
আমি অনেক আশাবাদী এ প্রজন্মের আপনাদের নিয়ে। আপনারা জেগে উঠছেন। এদের মুখোশ খুলবেই, আজ অথবা কাল। আমরা যে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছি আপনারা তা কখনোই হতে দিবেন না। আমরা যা পারিনি বা করিনি, আপনারা সেটা করে দেখাবেন।
দোয়া ও শুভকামনা রইলো আপনাদের জন্য।
--------------------------------------------------------------------------------
ই-বই হোক।
আবার ই-বুক কেন দুর্দান্ত? এই তো বেশ আছে!
--------------------------------------------------------------------------------
ব্যাঙ্ক ডাকাতি এবং পরবর্তী ঘটনাগুলো জানতে খুব ইচ্ছে রইলো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আগের অধ্যায় গুলো পড়লাম কিন্তু কোন মন্তব্ব করিনি। হয়ত আজকের এই লেখাটার জন্য। আসলে আমার পড়া সব ১৯৭১ এর ইতিহাস কোন না কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির লেখা। তারা কোন না কোন ভাবে রাজনিতিক আদর্শে বিশ্বাসী তাই হয়ত হাত বা মন খুলে লেখেননি। আবার বড় লেখক গন যা লেখেন তারা ঘটনার মূলের চাইতে তাদের চিন্তা আর কাহিনী তুলে ধরেন । ফলে আমরা যত ভিতরের কথা জানতে চাই তা পারি না। বলা যায় অসম্পূর্ণ থেকে যায় আমাদের জানার ইতিহাস। তাই আগে ইচ্ছা জাগত ইসস কেও যদি সেই কথার ইতিহাস জানাত আমাদের, রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে বিরত থেকে।
আপনার লেখনী থেকে তার আভাস পাচ্ছি না। হয়ত অনেক কিছু জানতে পারব যা আশাও করিনি।
শুধু একটাই অনুরোধ থামবেন না। বলে যান আপনার দেখা সব কিছু। কারন আপনারা না বললে আমারা জিবনেও জানতে পারবনা অনেক ইতিহাস।
আমাদের বাড়ী বগুড়ায়। কাটনারপাড়া, কালীতলা হাট থেকে ১০ মিনিটের হাঁটা পথ। ১৯৭১ এর গল্প শুনেছি। ব্যাংক ডাকাতি, পটল এসব শুনেছি।
অসাধারন লেখা হচ্ছে। অবশ্যই ইবুক হওয়া দরকার। তাছাড়া আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এই ধরনের লেখাগুলো এক যায়গায় করে অন্তত ইংরাজী ভাষায় অনুবাদ সহ যত্ন করে রাখা দরকার। এতে দেশের নতুন প্রজন্ম যেমন যানবে, সেইসাথে বাইরেও অবাংলা-ভাষীরা কিছু জানতে পারবে। ছাগলের মত মন্তব্য করা হয়তো ঠেকানো যাবে না কিন্তু করলেও রেফারেন্স দেওয়া যাবে বা গুগোলে সার্চ করে যেন পড়ে শুনে জেনে নিতে পারে বাইরের মহাজ্ঞানী আর পন্ডীতেরা। কতদিন পরেও নাজীদের ধরে ধরে বিচার করা যায়, আর আমাদের দেশের রাজাকারগুলোর বিচার করা যায় না যেখানে এখনো প্রত্যক্ষদর্শীরা বেঁচে। আসলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কত কাজ করার আছে, তার আর সীমা নাই, অনেক কিছু নষ্ট করে ফেলা হয়েছে, যা আছে তা ছাড়া ছাড়া আর অগোছালো। একটা সামগ্রীক মুভমেন্টের খুব দরকার। যখন মুক্তিযুদ্ধের এই প্রত্যক্ষদর্শীরা আর বেঁচে থকবে না তখন কি হবে? একটা বিশাল বড় গোষ্ঠী কি তারই অপেক্ষায় কোনমতে কালক্ষেপণের উছিলায় মত্ত? আমার মনে আছে, তখনো স্কুলে যাই না সারা দিন খেলে বেড়াই, বাবাকে অনেক অনেক কাগজ পত্র পুড়িয়ে ফেলতে দেখেছি এই ভয়ে যেন মুক্তিযুদ্ধের সাথে তাঁকে সম্পর্কিত করা না যায়। শুধু কি তাই, একটা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়ে কত অপমান আর নিয়মিত অপ্রাপ্য কিন্তু নিশ্চিত বঞ্চনা, অসম্মান, নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটিয়েছি, এগুলো মাঝে মাঝে যখন মনে আসে তখন এত রাগ আর ঘেন্না হয় যে মনে হয় যা হচ্ছে হোক, কোন দিন দেশের কথা চিন্তাও করবনা আর ফিরেও যাব না। কিন্তু এর মাঝে হঠাত হঠাত আপনার মত দু'য়েক্টা লেখা পড়ে মনে জোর পাই। আপনি দয়া করে থামবেন না, আরো একটু বিস্তারিত লিখুন, দরকার হলে একটু সময় নিয়ে লিখুন। আপনার লেখাও এত চমৎকার যে শুরু করলে আর থামা যায় না।
(আবেগপ্রবণ হয়ে আপনার লেখায় অনেক বড় মন্তব্য করে ফেললাম যার মনে হয় কোন দরকার ছিলো না, দুঃক্ষীত)
নতুন মন্তব্য করুন