1971
পাকিস্তান আমলে প্রতিটি ইসলামি অনুষ্ঠান খুব ঘটা করে পালন করা হতো। শবেবরাত থেকে শুরু হতো উৎসবের আমেজ আর তার রেশ চলতো ঈদ পর্যন্ত। রোজা শুরুর আগেই এ্যনুয়াল পরিক্ষা শেষ হয়ে যেতো। শুরু হতো আমাদের লাগাতার ফুর্তি আর আনন্দ!
শবেবরাতে মোমবাতি দিয়ে ঘরবাড়ি সাজানো হতো, রুটি হালুয়া করে বাড়ি বাড়ি বিলানো হতো, কে কত ভালো ও কত রকমের হালুয়া বানাতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলতো আম্মাদের মাঝে। পাতলা ফিরনী রান্না হতো গোলাপজল আর পেস্তা,বাদাম দিয়ে। সেই ফিরনী খাওয়া হতো ‘শিরমল’ নামে এক ধরণের রুটি দিয়ে। পুরানো ঢাকার চকবাজারের ঐতিহ্য এই রুটি! ছোট ছোট আয়না, পুতি আর কিশমিশ বাদাম দিয়ে সাজিয়ে বিরাট থালার সমান শিরমল রুটি বানানো হতো, সে এক দেখার মতো জিনিস ছিলো।
ভিখারীরা বাড়ি বাড়ি রুটি চাইতে আসতো। সেদিন তারা সব বাসা থেকেই অনেক আদর যত্ন পেতো। আমরা মেহেদি দিতাম, পটকা ফোটাতাম, তারা বাতি জ্বালাতাম। মসজিদে মসজিদে কোরআন খতম হতো, সারারাত জিকির চলতো। বলা হতো চুল থেকে যত ফোঁটা পানি ঝরবে তত ফোঁটা নাকি সোওয়াব আমলনামাতে লেখা হবে। সোওয়াব শিকারী আমরা সন্ধ্যাবেলা গোসল করে চুল মুসতাম না। তারপর সারারাত নামাজ পড়তাম।
একে তো যুদ্ধের জন্য চারিদিকে দমবন্ধ করা অবস্হা, তার ওপর তখন জোর গুজব চলছিলো বঙ্গবন্ধুকে নাকি গোপনে বিচার করে মেরে ফেলা হবে। লন্ডনের কোন একটা পেপারে নাকি ছাপা হয়েছিলো। এই নিয়ে বড়দের মাঝে চলছিলো নানা ধরণের জল্পনা কল্পনা আর মনখারাপের পালা। তাই এবার শবেবরাতে কিছুই করিনি আমরা। শুধু ভিখারীদের জন্য রুটি আর সুজির হালুয়া বানানো আর সারারাত নামাজ পড়া ছাড়া। গোটাকয়েক মাত্র ভিখারী এসেছিলো আমাদের বাড়িতে রুটি চাইতে। ওদেরকে বেশ যত্নকরে অনেক রুট-হালুয়া দেওয়া হয়েছিলো।
আমাদের রোজার বাজার বগুড়া থেকে আসতো। শুধু রোজার বাজারই নয় কাচাঁবাজার ছাড়া প্রায় সবকিছুই বগুড়া-রাজশাহী থেকে আসতো। আমার মার ঢাকার কোন জিনিসই পছন্দ হতোনা। হলুদে রঙ হয়না, মরিচে ঝাল নেই। চাল মোটা ইত্যাদি ইত্যাদি নানা ফিরিস্তি দিয়ে সব জিনিস তিনি বাপের বাড়ি থেকে আনাতেন। তাই প্রতিবছর নানা রোজার আগে আগে আসতেন সব জিনিসপত্র নিয়ে। প্রথম রোজাটা আমাদের সাথে করে তারপর ফিরে যেতেন। কখনো এর ব্যতিক্রম দেখিনি, এবারই প্রথম নানা আসলেন না। আমরা তো নানাদের খবরই জানিনা। মন খারাপ নিয়ে নানা বিহীন প্রথম রোজা শুরু হলো। আগে রোজা শুরুর আগের দিন থেকেই কেমন উৎসব উৎসব একটা ভাব চলে আসতো, এবার তার কিছুই হলোনা। আর সব সাধারণ দিনের মতোই রোজাও শুরু হলো খুব সাধারণ ভাবে।
কিন্তু রোজা শুরু হবার পর থেকেই শুরু হলো সব অসাধারণ ঘটনা। শেষরাত্রে গুলির শব্দেই ঘুম ভেঙ্গে যেতো। আমাদের আর ঘড়িতে এলার্ম দিতে হতোনা। গুলির শব্দ শুনতে শুনতে শেহরী খেতাম। গুলির শব্দ শুরু হতো মধ্যরাতের পর, আর চলতো প্রায় সারারাত। সে সব একটু আধটু শব্দ নয়, বেশ অনেকটা সময় ধরে চলতো। আমরা এই গুলির শব্দে অনূভব করতাম এক ধরণের প্রশান্তি, মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্হিতি। এর ব্যতিক্রম হলেই মন খারাপ হয়ে যেতো। মনে হতো ওরা কী ধরা পড়ে গেলো? আগের রাতের গুলির শব্দ ও পরের দিনের পেপারের খবর পড়ে আমরা বুঝে যেতাম কী হয়েছে। যুদ্ধটা ভেতরে ভেতরে যে জোরে সোরে চলছে, মুক্তিবাহিনীরা যে পাকিদের শক্ত মার দিচ্ছে, সেটা খুব ভালো ভাবে বোঝা যেতো। আব্বা বলতেন, এদের সময় ঘনিয়ে এসেছে, এরা কোনঠাসা হয়ে পরেছে, এবার এরা মরণ কামড় দেবে। সময় খুব খারাপ। আমরা হয়ত কেউ রেহাই পাবো না। আমাদের সাবধান থাকতে হবে।
আর দিনে চলতো প্রকাশ্য দিবালোকে চোরাগুপ্তা হামলা। প্রতিদিনই বোম ফুটতো কোথাও না কোথাও। এমন সব জায়গায় বোমা ফুটতো, যে প্রথমে শুনে বিশ্বাসই করা যেতো না। তবে সে সব ঘটানার কথা পেপারেও ছোট ছোট কলামে ছাপা হতো দুষ্কৃতিকারীদের কাজ বলে, তখন অবিশ্বাসের আর অবকাশ থাকতো না। আব্বা তার অবাঙ্গালী বিজনেস সহচরদের কাছ থেকে সব ভেতরের খবর পেতেন। আমার বাবার সাথে যারা একই ধরণের ব্যবসা করতো তারা সব ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানি বা অবাঙ্গালী, এই লাইনে আব্বাই মনে হয় একমাত্র বাঙ্গালী ছিলেন। কয়েকটা ব্যবসা প্রতিস্ঠানের নাম শুধু আমার মনে আছে। পিমকো সায়েন্টিফিক, পাক-এশিয়া সয়েন্টিফিক এন্ড কেমিকেল কোঃ, মেরিনা ট্রেডিং কোঃ ইত্যাদি। এর মধ্যে পিমকোর মালিক ইয়াহিয়া জার্দার আব্বার খুব প্রিয় বন্ধু ছিলো। তখন আমেরিকাতে পাকিস্তানিদের জন্য অনারাইভাল ভিসা ও ইমিগ্রেশন দেওয়া হচ্ছিলো। তবে মনে হয় যেতে হতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। আমার ঠিক মনে নেই। ইয়াহিয়া আঙ্কেলই প্রথম ব্যবসা গুটিয়ে আমেরিকা চলে গেলেন। তিনি ছিলেন সিন্ধী। আব্বাকে বলে গেলেন আমেরিকাতে চলে আসতে, বলেছিলেন পান্জাবী জাতকে তোমরা চেনোনা, এরা পারেনা পৃথিবীতে এমন কোন খারাপ কাজ নেই। এতো সহজে ওরা তোমাদের ছাড়বে না, যদি ছাড়তেই হয় তবে তোমাদের জাতের মাথাগুলিকে পরিস্কার করে তোমাদের পঙ্গু করে রেখে যাবে। তুমি বাঁচতে পারবে না ইয়ার। চলে এসো। সব ঠিক হয়ে গেলে আবার চলে আসতে পারবে। মাঝখান থেকে আমেরিকার সিটিজেনশিপটা নিয়ে নাও। একদিকে প্রচন্ড দেশ প্রেম অন্য দিকে পরিবারের প্রতি কর্তব্য আব্বা দোটানায় ভুগছিলেন। সমাধান করে দিলেন আম্মা। মরলে সবাই একসাথে মরবো। একা বাঁচতে চাইনা।
তারপর এক এক করে সব বড় বড় ব্যবসা প্রতিস্ঠানের মালিকরা আমেরিকা ও পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেতে শুরু করলো। এই সময় আব্বা তার এক অবাঙ্গালী বন্ধুর কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্য দিয়েই শান্তিনগরের হক কনফেকশনারির পাশে একটা বাড়ি কিনেছিলেন। সেই বাড়ি ১৯৭৪ সনে বন্দুকের নলের ডগার সামনে বসে সাদা স্ট্যম্প পেপারের উপর সাইন করে গাজী গোলাম মোস্তোফাকে দিয়ে দিতে হয়েছিলো। না দিলে আব্বাকে আর দিনের আলো দেখতে হতো না।
বহু বছর পর ১৯৮৭ সালে ইয়াহিয়া আঙ্কেলের সাথে আমার দেখা হয়েছিলো ডালাসের “আনারকলি” ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে, আমি তখন ওখানে ওয়েট্রেসের কাজ করি। তিনি আমাকে দেখেই বলেছিলেন, “তোমার স্যকোল আমার এক পুরানি জিগরি দোস্তের সাথে মিলতি ঝুলতি হ্যায়।” তিনি এভাবেই বংলা বলতেন।
একদিন মতিঝিল গার্লস স্কুলের হেডমিস্ট্রেসের বাসায় বোমা ফুটলো। এই স্কুলে সকালের শিপ্টে উর্দ্দু সেকশন ও দিনের শিপ্টে বাংলা সেকশন ছিলো। প্রথম থেকেই স্কুলটা পুরোদমে চলছিলো। ম্যট্রিক পরিক্ষা থেকে শুরু করে ঘটা করে ১৪ই আগষ্ট পালন করা, ঈদি মিলাদুন নবীর মিলাদ সহ সব কিছুই এখানে বেশ জাঁক-জমক করে পালন করা হয়েছিলো। মুক্তিযোদ্ধারা হেডমিস্ট্রেসকে নাকি কাফনের কাপড় ও টাকা পাঠিয়ে সাবধান করে দিয়েছিলো। কিন্তু তিনি পাত্তাই দেননি। সুযোগ পেয়েই ছুটলাম দেখতে। গিয়ে দেখি বাড়ির সামনে একটা নাড়িকেল গাছ ছিলো, সেটা শেকড় উপড়িয়ে এক্কেবারে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। খাবার ঘর ও রান্না ঘরের কাছে বোমাটা মনে হয় ফেটেছিলো। ওদের এদিকটার গোলাপী রঙের দেওয়ালের সবটাই একদম ধসে গেছে। সব ঘরের কাঁচ ভাঙ্গা। আর সারা বাড়িতে ছোট্ট ছোট্ট কাগজের টুকরায় ভরা, হয়ত বোমার মধ্যে কাগজ থাকে, কে জানে? এরপর পুরোপুরি স্কুলটা বন্ধ হয়ে গেলো।
আমাদের সবচেয়ে কাছের শপিং মার্কেট ছিলো মৌচাক মার্কেট, ওখানে একটা ব্যংক ছিলো। ইউনাইটেড ব্যংক মনে হয় নামটা। পরিস্কার মনে নেই। ওখানেই আমার মা টাকা-পয়সা রাখতেন। ঘটনাটা আমার মার নিজ চোখে দেখা।
তিনি গিয়েছিলেন ব্যংকে টাকা তুলতে... ব্যংকের ক্যশিয়ার তাকে একটা টোকেন দিয়ে বসতে বলেছিলো, তো আম্মা ভাবলেন কতক্ষণ বসে থাকবো যাই এই ফাঁকে ললনা টেইলার্সে গিয়ে দেখে আসি ব্লাউজগুলি তৈরী হয়েছে কিনা। ব্লাউজ নিয়ে ফিরে এসে ব্যংকে ঢুকতে গিয়েই বাঁধা পেলেন। তিনজন ছেলে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো। ভাবলেন কি ব্যপার এরা এমনি করে দৌড়ে পালালো কেন? ভেতরে ঢুকে বুঝলেন ব্যংক লুট হয়ে গেছে। ক্যশিয়ারের কাছে যেতেই সে ইশারায় হাসি হাসি মুখে জানালো মুক্তিবাহিনী ব্যংক লুট করেছে। সংগে সংগে কলাপ্সিবল গেট বন্ধ হয়ে গেলো। তার তো আত্নারাম খাঁচা ছাড়া। হায় আল্লাহ এখন তো মেলেটারি ধরে নিয়ে যাবে। আম্মাদের সংগে আরো কয়েকজন ছিলো, তাদের সবাইকে সোফাতে বসে থাকতে বলা হলো। কিছুক্ষণ পর কয়েকজন মিলিটারি আসলো, তারা তাদের অনেকক্ষন আটকিয়ে রেখেছিলো, অনেক কথা জিজ্ঞেস করেছিলো মুক্তিরা দেখতে কেমন? কতজন ছিলো? এই রকম আরো অনেককিছু। যখন ওরা সন্তেষ্ট হলো যে ব্যাংকের কেউ এর সাথে জড়িত নয় তখন আম্মারা ছাড়া পেয়েছিলেন।
আম্মা ফিরে এসে খুব উত্তেজিত হয়ে আমাদের সব জানালেন। কথা তো আর বসে থাকেনা খুব তাড়াতাড়ি পাড়ায় সবাই জেনে গেলো আমার মা ব্যংক ডাকাতির চাক্ষুস সাক্ষী। ব্যস শুরু হলো... সেদিন বিকাল থেকে আমাদের বাসায় পাড়ার লোক আসা। আর আম্মা অতান্ত খুশী হয়ে ততধিক মনোযোগের সাথে ব্যংক লুটের বর্ণনা দিতে শুরু করলেন। দুই-একদিনের মধ্যেই ঘটনার অনেক ডাল-পালা গজিয়ে গেলো। প্রথমবার আমাদের কাছে বলা গল্পটার সাথে তার অল্পই মিল খুঁজে পাওয়া যেত। এরপর তিনি স্পষ্ট মনে করতে পারতেন ছেলে গুলির হাতে স্টেইনগান ছিলো, একজনের গায়ে খয়েরী স্টাইপশার্ট ছিলো, ওদের মধ্যে চুল লম্বা, অনেক দিনের দাড়ি না কাটা একজন লম্বা কালো শুকনা ছেলে ছিলো। এরপর যোগ হলো তিনি মার্কেটে যাবার সময় রিক্সা থেকে চট্টোলা কনফেকশারির সামনে একটা গাড়ী দাড়িয়ে থাকতে দেখেছিলেন। পরে সেটা লাল রঙ্গের টয়োটা করোলা হয়ে গিয়েছিলো। গল্পটা শুরু হতো এভাবে...”আর বলবেন না ভাবি, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে, দেখেন, এই দেখেন”,। আমরা সত্যিই দেখতাম আম্মার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছে। তারপর তার গল্পবলা চলতো অনেকক্ষণ। কালে কালে সেটা গিয়ে দাড়ালো হুমায়ূন আহম্মেদের উপন্যাসের আধা ফর্মার সমান। এ বিষয়ে তাঁর বিশ্লেষণ ছিলো...প্রথমে তার এতো কথা মনে ছিলো না তাই বলেননি, এখন ধীরে ধীরে তার সব মনে পড়ছে, তাই তিনি বলছেন।
আমি বলছিনা যে আম্মা বানিয়ে কিছু বলেছেন। হয়ত আম্মা ঠিকই বলেছিলেন, তবে তার গল্পে যে অনেক লেজ গজিয়েছিলো, সে বিষয়ে আমাদের পরিবারের কারোই কোন সন্দেহ ছিলোনা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে সব ঘটনা ও কাহিনি রচিত হয়েছে, যেগুলিকে আমরা অকৃত্রিম বা যথার্থ বলে জানি, সেটা কতটুকু প্রামাণিক আর কতোটুকু ডাল-পালা গজানো সে বিষয়ে নতুন প্রজন্মের একটু খেয়াল রাখা উচিত।
মন্তব্য
যথারীতি পড়ার উপরই থাকছি।
আর ডালপালার যেধরণটা শেষে বললেন ওরকম ডালপালা গজালে অসুবিধা নাই। কারণ তাতে মূলগল্পটা বদলায় না।
অজ্ঞাতবাস
তাই কী?
--------------------------------------------------------------------------------
লেখা ভাল লাগল।
আর ডালপালার ব্যাপারে বলতে গেলে আমার এক বন্ধুর ডায়লগটাই ঝাড়তে হয়,
"যারা সামনে থেকে কোনও ঘটনা দেখেনি তাদের কাছে বর্ণনা করতে গেলে একটু বাড়িয়ে বলাই ভাল। ব্যাপারটা ঠিক লেভেলে ফিল করতে পারবে।"
ঠিক লেভেলটা কোনটা?
--------------------------------------------------------------------------------
ঠিক লেভেল বলতে যেটা সত্যি ঘটেছিল সেটাই।
শবেবরাতের আগে আগে আপনার লিখায় শবেবরাত চলে আসছে।
আমরা ও ছোটবেলায় একি কাজ করেছি ভাবী।
এতো বছরের ব্যবধানেও দেখছি আমাদের ছেলেবেলার গল্প মিলে যাচ্ছে। সময় বদলে গেলেও অনেক কিছুই দেখছি বদলায় না।
--------------------------------------------------------------------------------
আমাদের(নতুনদের) যারা ৭১দিচ্ছে- একটা সত্য সবুজ হিসেবে গাছ দিক... আমরা কোনটা শেকড়- কোনটা প্রশাখা তা চিনে নিতে পারবো...
এই তো চাই!
--------------------------------------------------------------------------------
শুধু চুপচাপ পড়েই গেলাম।
ডাকঘর | ছবিঘর
জেনে ভালো লাগলো তাপস।
--------------------------------------------------------------------------------
কল্পনা ছাড়া গল্প হয় না। তবে কল্পনার ভিত্তিতে সত্য ও সততা থাকলে, সেই গল্পও সৎ ও সত্য হয়। এর বাইরে অসত্য ও অসৎ কল্পনাও তো কম না, মুক্তি দরকার সেগুলির হাত থেকে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
সবে বরাত যখন আসলো তাই আমার ছোটবেলার কর্ম একটু বলি। দিন যত এগিয়ে আসতো পটকা বাজি কেনার একটা ধুম পড়ে যেত। বুড়ি মা নামে চকলেট বাজি ছিল একেবারেই সেইরকম । পাল্লা দিয়ে বাজি ফুটানো হত পাড়ায়। তারপর একটা রিক্সা নিয়ে দুই একজন বন্ধু মিলে সকল কবরস্থান জিয়ারতে বের হতাম। রিক্সা চড়ার ফাকে দুই একটা বাজি ফাটানো জারি থাকতো । তারপর কয় এক রাকাত নামাজ পড়ে ভোর বেলা বাসায় ফেরা হত। এভাবেই পার করতাম সবে বরাতের রাত।
আমি তো এতদিন তোমাকে মেয়ে বলে জানতাম। নাকি তুমি মেয়েই! তাহলে তো বলতে হয় তুমি তো পুরোই একটা টমবয় ছিলে।
--------------------------------------------------------------------------------
মেহবুবা আপা ,আমি ছেলেই । আপনার দেয়া নামটি 'টমবয়' মনে রাখলাম।
facebook
অণু তোমার চোখ দিয়ে তো পৃথিবীর অর্ধেকটাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এবার আমাদের কাছে এসে একটু এদিকটা ঘুরে দেখাও সবাইকে? পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
--------------------------------------------------------------------------------
ছোটবেলায় দেখেছি, শবেবরাতে বাসায়ই নানা ধরনের হালুয়া, রুটি ইত্যাদি বানানো হতো। এখনতো অধিকাংশই দোকান থেকে কিনে আনা হয়। ভাল লাগলো, স্মৃতিচারণ।
আজকাল কী দোকানে হালুয়া-রুটিও কিনতে পাওয়া যায় নাকি? ঢাকায় পরোটা পাওয়া যায় দেখেছি কিন্তু চালের আটার রুটি দেখেনি। ধন্যবাদ প্রৌঢ় ভাবনা।
--------------------------------------------------------------------------------
এই ব্যাঙ্ক ডাকাতির বর্ণনা আসাদ ভাইয়ের মুখে শুনেছি। রাইসুল ইসলাম আসাদ... এই দলের সদস্য ছিলেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
প্রথমে জুবায়ের ও পরে আসাদ ভায়ের মুখে সেটা আমি শুনেছি। বাচ্চু ভায়ের মুখে শুনেছি একই দিনে তারা দুটো ব্যংক লুট করে্ছিলেন। পলওয়েল মার্কেটের একটা ব্যংক বাচ্চু ভাই লুট করেছিলেন। আম্মা মনে হয় আসাদ ভাইকেই দেখেছিলেন।
--------------------------------------------------------------------------------
হু, বর্ণনা শুনে আমারও তাই মনে হলো। হুবহু আসাদ ভাইয়ের বর্ণনা
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গাজী গোলাম মোস্তফা লোকটার পরে কী হয়েছিলো? সে বা তার ছাওপোনারা কি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলো?
এই গাজী-ই কি সেই কাজি যার জন্য ডালিম ১৫ই আগষ্ট-এর হত্যাকান্ডে জড়িয়ে গিয়েছিল?
ইনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তার পুত্র গাজী শাহাবুদ্দিন 'সচিত্র সন্ধানী' নামে একটা সাপ্তাহিক প্রকাশ করতেন। পল্টনের বহুতলবিশিষ্ট 'গাজী ভবন' ইনাদের। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের দলের অন্যতম মেজর ডালিমের সাথে গোলমাল লাগানোর ঘটনাতেও এনার লোকেরা জড়িত। দুষ্টুলোকেরা বলে খোদ বঙ্গবন্ধু নাকি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "গাজী, আমার ভাগের কম্বলটা কই?"
গাজী জিয়ার আমলের পুরোটাই ফকিরাপুলের হোটেল আল-হেলাল এ বসে বসে মদ আর মেয়ে মানুষ নিয়ে কাটিয়েছে। (এই হোটেলের বেনামে মালিক ছিলো গাজী) এরশাদের সময় মনে হয় বেশ ঘটা করে বউ নিয়ে হজ্জ করেছিলো। রোড এক্সিডেন্টে বউ আর এক ছেলে নিয়ে মারা গিয়েছিলো শুনেছি।
কোথায় কোথায় বাচ্চা ফুটিয়েছিলো তা তো বলতে পারবো না। তবে ওর সারে হারামজাদা তিন ছেলে ছিলো। অরুণ, শাহিন আর আধা পাগোল একজন, নাম জানিনা।
স্বাধীনতার পর এই শাহিন একটা কলাপাতা রং ভিভা গাড়ী নিয়ে স্কুলের সামনে দাড়িয়ে থেকে মেয়েদের জ্বালাতো। নাম্বারটা এখনো মনে আছে ঢাকা-খ, ৯। আমাদের পাড়ার একটা সুন্দরী মেয়েকে একবার এসেছিলো উঠিয়ে নিয়ে যেতে, জানতে পেরে শহিদবাগের ছেলেরা মেরে ওকে হসপিটালে পাঠিয়েছিলো।
অরুণের ঢাকা মসলিন নামে বায়তুল মোকারামে একটা শাড়ীর দোকান ছিলো। ওখানে তার যে মেয়েকে পছন্দ হতো তাকেই প্রেমের প্রস্তাপ পাঠাতো। ফোন করে জ্বালাতো। শাহীনটা বাপের সাথে মরে গেছে। পাগোলটা পাগলা গারদে। অরুণ এখনো বেঁচে আছে। কোথায় আছে তা জানিনা। ওদের আবার রাজনীতি? ওরা বাপ-বেটা মিলে জোচ্চুরি আর মেয়ে বাজী করেই কুল পেতোনা।
--------------------------------------------------------------------------------
এই যে মেজর ডালিমসহ অন্যান্যরা গাজী গোলাম মোস্তফার অজুহাত টানে, এরা শেখ মুজিবকে গুষ্টিশুদ্ধু খুন করে ফেললেও গাজীকে কিছু বলেনি দেখছি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গাজীকে কী করবে? ও তো ছিলো পরক্ষ কারণ? যারা তাঁকে নিজে হাতে খুন করেছিলো, তাদেরকেই গলায় ফুলের মালা পড়িয়ে, জামাই আদর করে রাতের আধারে বেড়াল পার করে দিয়েছিলো। দেখোনি তো সেই সব দিনগুলি!
--------------------------------------------------------------------------------
বিউটিফুল বাংলাদেশ খ্যাত বিজ্ঞাপন নির্মাতা গাজী শুভ্র...
গাজী ট্যাঙ্ক এর সঙ্গেও সম্পৃক্ততা আছে এই পরিবারের...
আর সাম্প্রতিক গাজী টিভির
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল, বিউটিফুল বাংলাদেশের গাজী শুভ্র সম্ভবত গাজী গোলাম মোস্তফার নাতি। তবে গাজী ট্যাঙ্ক-গাজী গ্রুপ-গাজী টিভি'র সাথে এই পরিবার সম্পৃক্ত নয়। ওগুলো গাজী গোলাম দস্তগীরের। গাজী গোলাম মোস্তফা গাজীপুরের মানুষ, গাজী গোলাম দস্তগীর পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত।
গাজী শুভ্র হচ্ছে গাজী শাহাবুদ্দিনের পুত্র।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
পড়লাম।
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
--------------------------------------------------------------------------------
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
--------------------------------------------------------------------------------
আপনার ৭১ এর সিরিজটা পড়ছি
চলুক
--------------------------------------------------------------------------------
শুরুর দিকের প্যারাগুলোর গ্যাপ বাড়িয়ে দিলে চোখের আরাম হত ভাবী।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
দেলাম।
--------------------------------------------------------------------------------
সবসময় ভাবি এই সিরিজে মন্তব্য করব, কিন্তু পড়তে গিয়ে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আমার স্পষ্ট মনে আছে সেই নয় মাসের কথা। কি ভয় যে আমার বাবা মা পেতেন আমার জন্য। যদি আর্মিরা আমাকে নিয়ে যায়।
আমার বয়স মাত্র তের। আমরা বহুদিন গ্রামে লুকিয়ে ছিলাম। একবার একজন খবর দিল আর্মি আসছে। আমি গোসল করছিলাম, শুনতে পেয়ে গায়ে কাপড় জড়িয়ে একা একা প্রায় মাইল খানেক দৌড়ে গিয়ে বুঝতে পারি আমার বাবা,মা ভাই বোন কেউ আসেনি।
পরে জানা গেল খবরটা ভুয়া।
যুদ্ধের শেষের দিকে বাবার কাজের সুত্রে আমরা তখন মুনশীগঞ্জে। আমাদের বাসার পাশেই একটি হিন্দু পরিবার ছিলেন। ওদের ১৭ আর ১৯ বছরের দুটি মেয়ে ছিল। প্রতিদিন কয়েকটা পাকসেনা ওই বাড়ীতে যেত মেয়েদুটোর জন্য। তখন বর্ষাকাল, চারিদিকে পানি। ওরা দূর থেকে দেখতে পেয়ে পাশেই বিলের পানিতে কচুরি পানার নীচে শরীর ডুবিয়ে শুধু নাকটা ভাসিয়ে রাখত। আর্মিরা চলে যাবার পর যখন উঠে আসতো, তখন ওদের সারা শরীর ফ্যাকাসে হয়ে যেতো।
আমার বাবা মা ওদের সে সময় অনেক সাহায্য করেছে।
এই রকম আরও কত ঘটনা যে আছে।
আমরা কি করে পাকিস্তানীদের ক্ষমা করব?
১৯৭১ এ আমি নেহায়েতই পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে, তারপরও যতটুকু যা দেখেছি এবং সে কারণে যে ভয়টা বুকের ভিতর গেঁথে গিয়েছিল সেটা এই এতো গুলো বছর পরও আমাকে তাড়া করে ফেরে । বড়দের চেয়ে বাচ্চাদের উপর এক একটি ঘটনার প্রভাব যে কত সুদূর প্রসারী হতে পারে তা আমরা ভেবেও দেখিনা । বুঝি বাচ্চা বলেই সে কিছু বুঝছে না, যা ভ্রান্ত একটা ধারণা । আমার মনে হয়না আমি কখনো পাকিস্থানিদের বন্ধু ভাবতে পারব অথবা ওদের সাথে দহরম মহরম সহ্য করতে পারব ।
আমার এক ছেলে এক মেয়ে যাদের জন্ম বিদেশের মাটিতে, ওরা আর কতটুকুই বা আমার মত প্রাণের ভিতর থেকে ব্যাপারটা বুঝে, তারপর ও লজ্জার মাথা খেয়ে (কারণ আমি জাত পাত ধর্ম দেশ গোত্র দিয়ে যেহেতু মানুষকে বিচার করিনা, ওরাও সেটা জানে ) ওদের বলি, বন্ধু/সংগী হিসেবে তোমরা যাকেই পছন্দ করবে আমার কোন আপত্তি নেই, কিন্তু প্লীজ প্লীজ ভুলেও কখনো পাকিস্থানীদের সাথে মিশ না, ইদানীং ব্যাপারটা আরো বেড়েছে আমার মেয়ে পিএইচডি শুরু করার পর যখন থেকে জেনেছি ওর ল্যাবে একটা পাকিস্থানী পিএইচডি স্টুডেন্ট আছে । রোজ উইনি থেকে ফিরলে জিজ্ঞেস করি, পাকিস্তানিটার সাথে কোন কথা বলেছে কি না ! আমার ব্যাপারটা এখানে উল্লেখ না করে পারলাম না এই কারণে যে আমি কি বাড়াবাড়ি করছি ?
সাবেকা
সাবেকা, আমার মনেও একধরনের ভয় কাজ করে পাকিস্তানীদের ব্যাপারে। আমার দুই মেয়েকেও বলি পাকিস্তানীদের সাথে বন্ধুত্ব না করতে, যেখানে আমরা জাত, ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে সবার সাথে মিশি। হয়ত আমি ঠিক না। আমার বাসায় একটি বড় তৈলচিত্র আছে যেখানে তিনজন মুক্তিযোদ্ধার চোখ বাঁধা, ওদের গুলি করার জন্য দাড় করানো হয়েছে। আমার মেয়েরা যাতে আমাদের যুদ্ধের কথা সব সময় মনে রাখে সে জন্যই ছবিটি আমি কিনে ছিলাম। আমার ৩২ বছরের প্রবাস জীবনে কোন পাকিস্তানী বন্ধু হয়নি, আমার মেয়েদেরও হয়নি।
ধন্যবাদ নীলকমলিনী, আমিও ওদেরকে নানাভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সহ আরও নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছি সেই বলতে গেলে প্রায় ওদের জন্মের পর থেকেই ! নাটক সিনেমা দেখিয়েছি যখন যা পেয়েছি, কিছু কিছু ইংরেজী বই ও পড়তে দিয়েছি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের উপর । মোটামুটি আমার পক্ষ থেকে যা যা করা সম্ভব করার চেষ্টা করেছি এবং করে চলেছি । ওরাও পাকিস্তানিদের পছন্দ করেনা । আমার মত করে না হলেও প্রায় কাছাকাছি । তবুও ওই যে আমার ভয়, এটাই সমস্যা !
ডিপার্টমেন্টে আমার একমাত্র এশিয়ান ক্লাসমেটটি পাকিস্তানী। মুখোমুখি হলেই মেজাজ খারাপ হয়।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ভাবী, অনেকদিন হলো লিখছেন না।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ছোটবেলায় শবেবরাতে সন্ধ্যার আগে আগে অনেকগুলো পিচ্চি মিলে গোসল করতাম আর গড়িয়ে যাওয়া পানি দেখিয়ে বলতাম, দেখো সব পাপ ধুয়ে যাচ্ছে। নামাজ পড়ার কথা তখনো ভাবি নাই।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
একটা হাদিস বলি। আপনি বা যে কেউ নবি বা তার সাহাবাদের নামে যে কোন ভাল কথাকে হাদিস বলে চালিয়ে দিতে পারেন। তাতে আপনার গুনা তো হবেই না বরঞ্চ আপনি বেশুমার স্ওয়াব হাসিল করবেন। আপনার আম্মা তো ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন, সেই সময় তাঁর মনের অবস্থা চিন্তা করে তার বক্তব!্য কিছু অতিশয়োক্তি থাকল্ওে তা মার্জনা পেতেই পারে, না-কি!
দারুণ
মেহবুবা আপা,
মাঝখানে অনেক দিনের বিরতির পর আপনি আবার নিয়মিত হয়েছেন দেখে ভাল লাগল। পাকিস্তানিদের প্রতি সব সময়ই আমার মনোভাব একইরকম-হারামির জাত। তবে ইদানিং ভাবছি, পুরো পাকিস্তানের সবাই তো একই ধরণের ছিলেননা। বিশেষ করে একজন বাঙ্গালী প্রেমী পাক গভর্ণর ও বোধহয় কিছুদিন এখানে দায়িত্বে ছিলেন। আবার বেলুচরাও শুনেছি স্বাধীনতার আশায় মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। হয়তো আমার জানার ও বোঝার ভুল থাকতে পারে। আশা করি সহসচলরা শুধরিয়ে দিবেন।
নির্ঝরা শ্রাবণ
আপনি সম্ভবত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজম খানের কথা বলছেন। আজম খান আইয়ুবের শাসনামলের শুরুর দিকে দুই বছর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ছিলো। পাঞ্জাবি প্রশাসকদের তুলনায় এই পাঠান জেনারেল কিছুটা কম খারাপ আচরণ করেছিলো বাঙালিদের সাথে। এক আমলার স্মৃতিচারণে পড়েছিলাম, আইয়ুব সরকার আইন করতে যাচ্ছিলো, দক্ষিণবঙ্গে কেউ নারকেল পেড়ে খেতে পারবে না, সেই নারকেল রপ্তানি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য রাখতে হবে। সুন্দরবন এলাকা পরিদর্শন করতে গিয়ে জেনারেল আজম খানের পিপাসা পায়, তাকে ডাব খেতে দেয়া হয়। ডাব খেয়ে কৃতজ্ঞ জেনারেল আইয়ুবের এই নারকেলনীতির বিরোধিতা করে এই বলে যে এই অঞ্চলের মানুষের মিষ্টি পানির চাহিদা আল্লাহ একমাত্র ডাব দিয়ে পূরণ করেছেন, তাদের ডাব খাওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া যাবে না। ইত্যাদি।
পুরো দেশের সবাই তো কখনোই এক রকম থাকে না। নাৎসি জার্মানিতেও তো ভালো লোক ছিলো। সেই গুটিকয়েক ভালো লোককে দেখিয়ে কেউ নাৎসিদের প্রতি মানুষের বিদ্বেষ বা ভীতিকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করে না নিশ্চয়ই। পাকিস্তানে বিবেকবান ভালো মানুষও নিশ্চয়ই আছে। তবে তাদের সাক্ষাৎ পাওয়া খুব দুরূহ। ১৯৭১ প্রসঙ্গে নিঃশঙ্কচিত্তে পাকিস্তানের ভূমিকার নিন্দা করতে পারে, এমন পাকিস্তানীর সংখ্যা হয়তো গুণে ফেলা যাবে। আর এই "ভালো পাকিস্তানী"দের মত যদি পাকিস্তান রাষ্ট্রের আচরণে প্রতিভাত না হয়, বা পাকিস্তান রাষ্ট্র যদি "খারাপ পাকিস্তানী"দের আচরণেরই প্রতিনিধিত্ব করে, তাহলে সব পাকিস্তানী খ্রাপ না বলা নিরর্থক।
তোমার সাথে একমত।
ধন্যবাদ হিমু ভাই,
জানতাম আপনার কাছ থেকেই মোক্ষম জবাবটা পাব। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে পাকিস্তানকে এতদিন ঘৃণা করে এসেছি, আজীবনই করে যাব। তবে আমার এক কলিগ যে তাঁর শিক্ষাজীবন কাটিয়েছে পাকিস্তানে তাঁর কয়াছ থেকেই জানলাম ওইখানে প্রদেশ ভেদে আচরণ ভিন্ন। এমনকি ৭১ নিয়ে মনোভাবও ভিন্ন। তাঁর কথার সূত্র ধরেই মন্তব্যটা করা।
নির্ঝরা শ্রাবণ
বালুচিস্তানের এক পাঠান দীর্ঘদিন আমার ফ্ল্যাটমেট ছিলো। সে এবং তার অন্যান্য পাকিস্তানী বন্ধুদের কাছ থেকে দেখে আমার মনে হয়েছে, পাঞ্জাবি আর উত্তর পাকিস্তানের পাঠান বাদে অন্যরা তুলনামূলকভাবে কম উগ্র। বালুচিস্তানের পাঠানরা বালুচিস্তানের বালুচদের পছন্দ করে না, আর উত্তর পাকিস্তান আর আফগান পাঠানদের বর্বর মনে করে। সিন্ধি কয়েকজনকে দেখেছি, তারাও আচরণে নম্র। কিন্তু পাঞ্জাবি আর উত্তর পাকিস্তানের পাঠানদের একজনের আচরণেও মনে হয়নি এরা সভ্য। তবে ১৯৭১ প্রসঙ্গ উঠলে সবাই শক্ত হয়ে বসে। আমার সামনে বসে ইংরেজি বা জার্মানে হ্যাঁ হ্যাঁ ৭১ সালে আর্মি যা করেছিলো তা ভালো হয়নি বললেও আমার আড়ালে উর্দুতে নিজেদের মধ্যে ঠিকই বাংলাদেশকে গালাগালি করতে শুনেছি। ইসলাম প্রসঙ্গেও তারা কমবেশি সবাই একই রকম, অমুসলিমদের মনুষ্যপদবাচ্য স্বীকার করতেই এদের কষ্ট। এদের আলাপের ৯৫% জুড়ে একটা শব্দই বারবার উচ্চারিত, লেড়কি। কাফের জার্মান মেয়েদের নিয়ে আলাপবিলাপে নামাজের ওয়াক্ত পার হয়ে যায়, ঐদিকে ঠিকই কাদিয়ানী খ্রিষ্টান শিয়া হিন্দুদের গালি দিয়ে ভূত ছুটিয়ে ফেলে। আমার ফ্ল্যাটমেট মানুষ হিসেবে বেশ ভালো ছিলো, সেও মাঝেমাঝে দুঃখ করে বলতো, পাকিস্তানে বড় শহরের সরকারী অফিসে তার মতো কোয়েটাবাসীর সঙ্গে কেমন খারাপ আচরণ করা হতো। পাঞ্জাবিদের সেও পছন্দ করে না, কিন্তু ১৯৭১ সালে ভারতের ষড়যন্ত্র নয় বরং পাকিস্তানীদের কারণেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা মানাতে গেলে তার মুখচোখ কালো হয়ে যেতো। তাদের টেক্সটবুকে কোনো এক আইবেক সাহেব লিখেছে, ভারতীয়রা নাকি পাকিস্তানী উর্দি পরে ৭১ সালে বাংলাদেশে মানুষ মেরেছে। আমি বললাম, তোমাদের কোয়েটায় আজকে ভারতীয়রা পাকিস্তানী উর্দি পরে এক রাতে পঞ্চাশ হাজার মানুষ মেরে ফেলতে পারবে? সে কোনো কথা বলে না।
পাকিস্তানীরা যতোই ভালো হোক, ভদ্র হোক, হাই হ্যালো সালাম আদাব দিয়ে ফাটিয়ে ফেলুক, ১৯৭১ নিয়ে তাদের বেশিরভাগের চেহারা টিক্কা খানের চেহারা থেকে খুব বেশি ভিন্ন নয়।
পাকিস্তানের প্রায় সব এলাকার মানুষদের সাথে ওঠাবসার মাধ্যমে আমার কাছে মনে হয়েছে পাঠানরা হচ্ছে ঘাউড়া শয়তান আর পাঞ্জাবীরা শেয়ানা শয়তান। যদিওবা কোনও পাঠানকে অল্পস্বল্প বিশ্বাস করতে পারেন, ভুল করেও কোনও পাঞ্জাবীকে বিশ্বাস করে যায়না। গত কয়েক বছর ধরে বালুচিস্তানে রাতের পর তার ১০টা ২০টা বালুচের লাশ রেল লাইনে কাটা পড়ে থাকছে বা নর্দমায় ডুবে বা ভেসে থাকছে, এ সবই পাঞ্জাবী আর পাঠানদের শয়তানী। তুলনামুলকভাবে গিলগিট বালতিস্তানের লোকেরা পাকিস্তানীদের ভিতরে সবথেকে নম্র ও ভদ্র।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ধন্যবাদ হিমু।
--------------------------------------------------------------------------------
আমার অভিজ্ঞতাও একই রকম। ১৯৭১ আসলেই তাদের সুর পাল্টে যায়।
নিরঝরা শ্রাবন, আপনি Benazir Bhutto র Daughter Of Destiny বইটি পড়ে দেখতে পারেন। ৭১ প্রসঙ্গে প্রায় কিছুই লেখা নেই। আমার এত মনকষ্ট হয়েছিল মিথ্যে কথাগুলো পড়তে যে কি বলব। অনেক সময় নিয়ে বইটি শেষ করেছি। পাকিস্তানিদের দুঃখ ওরা ভারতীয়দের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, বাঙ্গালিদের গণহত্যার কথা স্বীকারই করে না। আর বাবার সাফল্যের কথায় ভর্তি। কি করে ৯০,০০০ হাজার পাকসেনাদের সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে বীরের মত দেশে ফিরে আসলো ভারত থেকে। বেনজিরের বই পড়ে ভ্রান্ত ধারনা হওয়া ১০০%।
কিন্তু আমার এবং অনেকেরই ধারণা যে পাকিস্তান চেয়েচিন্তেই ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলো। এমনটি হতে পারে যে-
ক। পুঁচকে বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করার চেয়ে শক্তিশালী ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ তাদের কাছে অধিক সন্মাঞ্জনক ( ) মনে হয়েছিলো; এবং
খ। রুশ-মার্কিনী পোলারাইজেশনে তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টা প্রতিষ্টিত করতে এটা করেছিলো যাতে মার্কিনী পোলের কাছে পাকিস্তান অধিক সহানুভূতির জায়গায় থাকতে পারে।
আমার ধারনা অবশ্য ভুলও হতে পারে।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
রাতঃস্মরণীয় ভাইয়া,
আমার কাছেও সেটাই মনে হয়েছে। কুত্তাগুলান ভাবছিল অনিয়মিত কোন সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলে হয়তো জান নিয়া বাড়িতে ফিরতে পারবেনা।
নির্ঝরা শ্রাবণ
নীলকমলিনী,
ঐ বেজন্মাগুলার বই থেকে এর চাইতে বেশি কিছু আশা করাও ঠিক না। তবে সিদ্দিক সালিকের "Witness to surrender" পড়ে দেখতে পারেন। ওদের গণহত্যার কিছুটা হলেও এই বইতে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
ভালো থাকবেন।
নির্ঝরা শ্রাবণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হিমু, আপনার কথাগুলো খুব ভাল লাগল । এইটাই আসলে সার কথা ।
এই সিরিজটা খুব মন দিয়ে পড়ি।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
ভালো লাগলো। ৭১ এর বর্ণনা শুনতে সবসময় একটা আগ্রহ অনুভব করি, আর চাক্ষুষ বর্ণনা হলে তো কথা নেই।
----------------------------------------------------------------------------------------------
"একদিন ভোর হবেই"
পড়ছি। আপনার আম্মার সামান্য বাড়িয়ে বলাটা মনে হয়না ইতিহাসের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যাবে, অনেক জনের ভাষ্য থেকে সত্যি ঘটনাটা ঠিকই জানা হয়ে যায়।
---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
সজল আম্মা বেঁচে থাকলে তোমার মন্তব্য পড়ে খুব খুশী হতেন। আমরা আম্মাকে খুব ক্ষেপাতাম। আমাদের বাসায় একটা কথা চালু ছিলো। অতি রন্জিত কিছুর বর্ণনা দিতে গেলে আমরা বলতাম, আম্মার সেই ব্যংক ডাকাতির গল্পের মতো।
--------------------------------------------------------------------------------
পড়ছি।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
--------------------------------------------------------------------------------
আম্মো পড়ছি।
আরে তাইতো! ধন্যবাদ দিয়ে আর খাটো করবো না।
--------------------------------------------------------------------------------
অমানুষিক ব্যস্ততার মাঝেও যে সময় বের করে লিখলেন আমাদের জন্য, এ কারণে অজস্র ধন্যবাদ, ভাবী। ভাল থাকুন। শুভেচ্ছা।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
নতুন মন্তব্য করুন