১৪
১৯৭১
মেহবুবা জুবায়ের
ঈদের পর পরই হিন্দুস্থান-পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে গেলো। হ্যাঁ এইভাবেই আমরা ভাঙ্গা মন নিয়ে, অবাক হয়ে শুনলাম ও দেখলাম এতদিন ধরে তিল তিল করে গড়ে তোলা আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা, আমাদের স্বাধীনতার যুদ্ধটা পাকিদের কাছে হিন্দুস্থান-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়ে গেলো। শুধু পাকিদের কথাই বা বলি কেন? আশে পাশের অনেক চেনা-জানা বাঙ্গালীর কাছেও মুক্তিযুদ্ধটা হিন্দুস্তান-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। নিতুর বাবা ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম। নিতুর বড় চাচা ছিলেন পাক-আর্মির কর্নেল পর্যায়ের ডাক্তার। আর তিনি নিজে ছিলেন পি ডব্লিউ ডি এর ম্যাকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। আইয়ুব খানের সময় থ্রী নট থ্রী তে পড়ে চাকুরী চলে গিয়েছিলো। এই থ্রী নট থ্রী টা ঠিক কী আমি ভালো জানিনা। তবে ঘুষ টুষ খেয়ে চাকুরী চলে যাওয়া টাইপের কিছু হবে। তার চাকুরী চলে যাবার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর খুব ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। জয় বাংলার পক্ষে চলে এসেছিলেন। কিন্তু ভেতরে ভেতরে পাকিস্তানি পন্থিই রয়ে গিয়েছিলেন।
মাগরিবের নামাজের পর নিতুর বাবা আমাদের গাড়ি বারান্দার কাছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে পাড়ার আরো অনেকের সাথে তুমুল তর্ক জুড়ে দিতেন, উপর থেকে পরিষ্কার শোনা যেতো সে সব কথা, ইন্ডিয়া নাকি পাকিস্তান ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করছে। ইন্ডিয়া পূর্ব পাকিস্তান দখল করে নেবে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নাকি আসলে সত্যি। এসব কথাও বলতেন তারা। দুদিন আগে পর্যন্ত যারা ইন্ডিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় বন্ধু বলে গলা ফাটাতেন তারাও নিতুর বাবার সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। তাদের কথায় পরিষ্কার বোঝা যেত যে তারা ইন্ডিয়ার এই আক্রমণ পছন্দ করছেন না। আমি তো অত কিছু বুঝতাম না। তবুও ওদের কথা শুনে আমার খুব মন খারাপ হয়ে যেতো। হিন্দুস্থান-পাকিস্তান যুদ্ধ হলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কী হবে, আমাদের দেশটা কেমন করে স্বাধীন হবে? কেঁদে কেঁদে লালু মামাকে জিজ্ঞেস করতাম কী হবে এখন আমাদের? লালু মামা আমাকে বোঝাতেন, বলতেন যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে ইন্ডিয়া আমাদের সাহায্য করছে যেনো আমরা তাড়াতড়ি দেশটা স্বাধীন করতে পারি। কথাটা শুনে আমার ভরসা হোত না, একটুও ভয় কমতো না। ইন্ডিয়া তো আমাদের সাহায্য করছেই। জায়গা দিয়ে, খাবার দিয়ে, ট্রেনিং দিয়ে। কিন্তু আমাদের যুদ্ধটা কেন ওরা করবে? আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাই তো যুদ্ধ করছে। তারাই তো দেশ স্বাধীন করতে পারবে, এবং করবেও। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বড়দের কথা, এবং প্রতি রাতের গুলি-গোলার শব্দ শুনে আমার মনে হোত ঢাকা শহরের মিলিটারি গুলিকে মেরে ফেলতে পারলেই আমরা স্বাধীন হয়ে যাবো, সে আর কতদিন! বড়ো জোর ছয় মাস এক বছর! কিন্তু এখন কী হবে? এই যুদ্ধে ইন্ডিয়া তো জিতবেই, তারপর যদি ইন্ডিয়া আমাদের দেশটা নিয়ে নেয়! এমনটি ভাবার পেছনে কারণও ছিলো... ইন্ডিয়া সম্বন্ধে আমাদের প্রজন্মের কোন ভালো ধারণা ছিলো না। বুদ্ধি হবার পর থেকে ইন্ডিয়া সম্বন্ধে সব নেগেটিভ প্রোপাগান্ডা শুনে শুনে আমরা বড়ো হয়েছি।
এতদিন তো ছিলো মুক্তিযুদ্ধ সেটা আমাদের যুদ্ধ, পাকিস্তানিরা কখনোই সেটা স্বীকার করতো না, বলতো সব স্বাভাবিক আছে। কিছু কিছু দুষ্কৃতিকারী, ইন্ডিয়ার চরেরা ঝামেলা করছে। এবার কিন্তু চারিদিকে যুদ্ধ যুদ্ধ রব উঠে গেলো। রেডিও-টিভিতে যুদ্ধের গান বাজানো শুরু হোল। ‘পলাশ ঢাকা, কোকিল ডাকা’ এই গানটা রেডিওতে খুব বাজানো হোত। পাড়ার লাইট-পোষ্টের লাইটে কাগজের ঠোঙ্গার মতো কী যেন একটা লাগানো হোল যাতে আলো বেশিদূর না ছড়াতে পারে। জরুরী অবস্থা, সান্ধ্য আইন, ব্ল্যাক আউট আরো কী সব, কী সব শুরু হোল।
প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সাইরেন শুরু হোত। এই রকম একরাতে প্রথমে সাইরেন এবং পরে ভারী দুম দুম শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সাইরেনের শব্দে আমরা বিছানা থেকে নেমে এলাম কিন্তু এই দুম দুম শব্দটা কিসের তা কেউ বুঝতে পারলাম না। একটু পরেই শুনলাম প্লেনের শব্দ তবে খুব দূর থেকে। পরের দিন জানা গেলো ইন্ডিয়া বিমান হামলা চালিয়েছে। আর সেই দুম দুম শব্দ হোল এন্টি এয়ারক্র্যাফট গান বা বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলার শব্দ। সেদিন সকাল থেকে শুরু করে সারাদিন ধরে বিমান আক্রমণ চললো।
লালু মামা সেই সকাল থেকে ছাদে গিয়ে বসে আছেন। ওখানেই নাস্তা খেয়েছেন। একটু পর পর আমিন আলী তাকে চা দিয়ে আসছে। আর নীচে নেমে এসে আমাদের কাছে বিমান হামলার তাজা খবর দিচ্ছিল। কয়টা প্লেন দেখলো, কেমন করে বোমা ফেলে, এমনি সব কতো কথা। সকাল থেকেই আম্মা আমাদের চার বোনকে ঘরে আটকিয়ে রেখেছিলেন, এমন কী বারান্দায়ও যেতে দিচ্ছিলেন না। (মেজাপুকে মে মাসেই বিক্রমপুরে মেজ মামার শ্বশুরবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। ও গুলির শব্দে ভয় পেয়ে খুবই অসুস্থ্য হয়ে গিয়েছিলো, তাই)। মুরগী যেমন তার বাচ্চা পাহারা দেয় ঠিক তেমন করে পাহারা দিচ্ছিলেন। তার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিলো অদ্যই শেষ রজনী! কিন্তু দুপুর নাগাদ তিনি তার ধারণা বদলাতে বাধ্য হলেন, কারণ ততক্ষণে আমাদের পাড়ার ছাদগুলো আর খালি নেই, সবাই ছাদে উঠে বিমান হামলা দেখছে। জানালা দিয়ে সে দৃশ্য দেখে, “যা বাইরে যা, কিন্তু ছাদে যাবি না” বলে আমাদের মুক্তি দিলেন তিনি অবশেষে।
মুক্তি পেয়ে সবার আগে আমি এক দৌড়ে ছাদে গেলাম, গিয়ে দেখলাম পরিষ্কার ঝক্ঝকে আকাশ আর দক্ষিণ-পশ্চিম-কোনের সারাটা আকাশ জুড়ে ছোট ছোট মেঘের ফুটকি। যেন নীল আকাশে সাদা মেঘের পলকা ডট! লালু মামাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওগুলোই বিমানবিধ্বংসী কামানের গোলার চিহ্ন। মাঝে মাঝে বিমানের শব্দ শুনলাম, কিন্তু সেদিন আর তেমন কিছু দেখা হোল না।
পরদিন সকাল থেকে শুরু হোল বিমান যুদ্ধ। সাইরেন শুরু হবার সঙ্গে সঙ্গে ছাদে চলে গেলাম। আজ আর আম্মা বাঁধা দিলেন না। শুরু হোল এন্টি এয়ার ক্র্যাফটের দুম দুম শব্দ। সেই সাথে আকাশে সাদা সাদা মেঘের ফুটকি ফুটে উঠতে থাকলো। তারপরই পরিষ্কার দেখতে পেলাম প্লেনটা, সাথে সাথে কান ফাটানো প্লেনের শব্দ। তার পেছনে আর একটা প্লেন। রুপালী চিক চিক করছে। মুখটা সুচালো, পেটটা চেপটা, পাখাগুলো পেটের সাথে লাগানো। দেখতে অনেকটা লম্বাটে ত্রিভূজের মতো। লালু মামা জানালেন এগুলিকে মিগ বলে। রাশিয়া থেকে কেনা। তারপর আরো দুটো। ঢাকার আকাশে মোট চারটা ইন্ডিয়ান প্লেন দেখলাম একসাথে। চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে প্লেন গুলি চলে গেলো তেজগাঁও এয়ারপোর্টের দিকে। শব্দ আছে কিন্তু প্লেন নেই। সেদিন সারা দিনই এই চলতে থাকলো। সব সময় জোড়া জোড়া প্লেন আসতো। ওরা আকাশে চক্কোর দিতো, সাইড হয়ে উড়ত, ড্রাইভ দিতো। তারপর পেছনে ধোঁয়ার দুটো সরলরেখা রেখে মিলিয়ে যেতো। লালু মামা তো সব সময় আমাদের হাসাতেন। প্লেনগুলো চলে গেলেই বলতেন, “পাইলট গুলান চা খাবার গেলো বারে।”
অপরদিকে পাকিস্তানি প্লেনের নাম ছিলো স্যাবর জেট, আমেরিকার তৈরী, ছাই ছাই রঙ্গের। মিগ গুলির মতো চক চক করতো না। দেখতেও ছিলো একটু ভোতা ভোতা। মুখটাও ছিলো ভোতা মতন। তবে এই প্লেন গুলি খুব ডিগবাজি খেত।
এবার আমার দেখা সবচেয়ে স্মরণীয় বিমান হামলার কথা বলি... যথারীতি ছাদে বসে বিমান হামলা দেখছি। প্রথমে দুটো মিগ দেখলাম আকাশে। জোড়া বেধে উড়ছে। রুপালী পেট গুলি চিকচিক করছে। আকাশ জুড়ে দুটো চক্কোর খেয়ে সোজা মাঝ আকাশে চলে এলো। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেন তাদের পেছনে একসাথে তিনটা জেট তাড়া করলো। মনে হোল যেন মেঘের ভেতর থেকে জেট তিনটা বেড় হয়ে এলো। কিছুক্ষণ পর জেট গুলির পিছু পিছু আরো দুটো মিগ আকাশে উঠে এলো। জেট গুলি করলো কী ডিগবাজি খেতে খেতে তিনটা জেটই সবকটা মিগের পেছনে চলে এলো। সামনে দুটো দুটো করে চারটা মিগ, পেছনে তিনটা জেট। মিগ গুলি এক একবার সাইড হয়ে, একবার ড্রাইভ দিয়ে আক্রমণ আটকাচ্ছিল। হঠাৎ দেখি একসাথে আরো দুটো মিগ জেট গুলির পেছনে আকাশে উঠে এসেছে। এবার সামনের মিগ গুলিও মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এইবার জেট গুলি ফাঁদে পড়ে গেলো। দু পাশ থেকে আক্রমণ শুরু হোল। একটা জেটের পাখায় গুলি লেগে ধোঁয়া বের হতে শুরু করলো। সেটা কাত হয়ে উড়ে তেজগাঁও দিকে চলে গেলো। বাকী জেট-দুটো ডিগবাজি খেতে খেতে অনেক নীচে নেমে এলো। এতো নীচে যে ওদের সাদার মাঝে সবুজ গোল চিহ্নটা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। এদিকে উপর্যুপরি এন্টি এয়ার ক্র্যাফট গানের গুলি শুরু হোল। মিগ গুলি তেজগাঁও এর দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে মানে যেদিক থেকে এসেছিলো সে দিকে চলে গেলো। (কুমিল্লার দিকে)
বিমান যুদ্ধ শুরু হবার পরদিন থেকেই রেডিও, টেলিভিশন ও খবরের কাগজে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো যে কাঁচের জানালায় কাগজ লাগাতে, যাতে করে বাইরে যেনো আলো না যায় এবং বোমা পড়লে কাঁচ ভেঙ্গে লোকে যেনো জখম না হয়। আমাদের বাসাতে অনেক জানালা ছিলো। এতগুলি জানালাতে কাগজ লাগানো বেশ সময় সাপেক্ষ কাজ। করি করবো করে করা হচ্ছিলো না। বিমান আক্রমণ বেড়ে যাওয়াতে কাগজ লাগানোটা জরুরী হয়ে পড়লো, তাই আব্বা অনেক ব্রাউন পেপার কিনে নিয়ে এলেন। কয়েক রিম হবে। ময়দার লেই করা হোল। কাগজ গুলি মাপমতো কাটা হোল। প্রথমে আমরা আঙ্গুল দিয়ে আঠা লাগাচ্ছিলাম। কিন্তু সেটা এমন কিছু সহজ কাজ নয়। তাই লালু মামা বুদ্ধি করে পেয়ারা গাছের চিকন চিকন ডাল এক ফুট সমান করে কেটে আনলেন। তার ডগায় নারিকেলের ছোবড়ার ভেতরের অংশ ছেঁচে নরম করে বেঁধে দিলেন। তারপর সমান করে কেটে পেইন্টিং ব্রাশের মতো ব্রাশ বানিয়ে ফেললেন। সেই ব্রাশ দিয়ে আঠা লাগানো খুব সহজ।
প্রথম প্রথম তো শুধু চারিপাশে আঠা লাগিয়ে জানালায় সাঁটা হচ্ছিলো। হঠাৎ করে লালু মামা সেই ব্রাউন পেপারে ময়দার লেই দিয়ে পোস্টার লেখা শুরু করলেন। তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের কী যেন ছিলেন। তার পোস্টার লেখার অভ্যাস ছিলো। প্রথমে চারিদিকে আঠা লাগিয়ে তারপর মাঝখানের ফাঁকা জায়গায় তেরছা তেরছা করে লিখতে শুরু করলেন “জেলের তালা ভাঙ্গবো শেখ মুজিবকে আনবো” ।“রক্ত চোষার দল বাংলা ছাড়” ।“জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” ।“লড়াই, লড়াই করে বাঁচতে হবে”। আরো অনেক কিছু লিখেছিলেন, আজ আর সবগুলো মনে নেই। লালু মামা লিখে শেষ করেন, আমরা প্রবল উৎসাহ আর উদ্দীপনায় সেই কাগজগুলো জানালায় সেঁটে দেই। পরম তৃপ্তি নিয়ে আমরা কাজ শেষ করলাম।
কিন্তু বিপদ এলো রাতের বেলা! ঘরে যখন লাইট জ্বালানো হোল তখন বাইরে থেকে পরিষ্কার দেখা যেতে লাগলো লেখাগুলি। আঠা শুকিয়ে লেখাগুলি জানালার কাঁচের সাথে লেগে গেছে। যদিও উল্টো লেখা তবে উৎসাহী বাঙ্গালীদের পড়তে অসুবিধে হলোনা। মাগরিবের নামাজের পর নামাজিদের চোখে পড়লো বিষয়টা। আমাদের বাড়ীর সামনে রাস্তায় লোক জমে গেলো। আমরা তখনো জানিনা কী হয়েছে। নীচতলার চাচা আব্বাকে ফোন করে নীচে ডাকলেন। [সেদিন আব্বাকে বেশ করে ধমকে দিয়েছিলেন পাড়ার লোকেরা। হায়দ্রাবাদী চাচাও আব্বাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে এই বলে সাবধান করে দিয়েছিলেন যে লালু মামাকে সরিয়ে দিতে, তার জানের উপর বিপদ হতে পারে। সেই সঙ্গে এই পাড়ায় উপরেও।]
আব্বা এসে প্রথমেই সব ঘরের লাইট বন্ধ করে দিলেন। তারপর আমাদের বসার ঘরে ডেকে ইচ্ছামতো বকাবকি করলেন। সবচেয়ে বেশী বকলেন লালু মামা আর বড়াপু কে। লালু মামাকে বললেন ভোর হবার আগেই যেন তিনি বাসা ছেড়ে চলে যান। তারপর আমাদের বাড়িসুদ্ধ সবাইকে হুকুম করলেন, এখুনি জানালা থেকে কাগজ উঠিয়ে ফেলতে। লালু মামা চলে যাবে জেনে আমাদের কান্না শুরু হোল। আম্মাকে সবাই গিয়ে ধরলাম আব্বাকে বোঝাবার জন্য। কিন্তু আম্মা আমাদের বোঝালেন এখানে থাকলে তার বিপদ হবে। চিন্তা না করতে লালু মামাকে নিরাপদ জায়গায়ই পাঠানো হচ্ছে। (পরে জেনেছি লালু মামাকে বাসাবোতে আব্বার পরিচিত একজনের বাসায় রাখা হয়েছিলো।) আমরা মধ্যরাত পর্যন্ত চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সেই কাগজ গুলি পানি দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে, ঘষে ঘষে তুললাম। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আর লালু মামাকে দেখলাম না।
মন্তব্য
ভারতবিরোধী প্রচারণা, ভারত জুজু তার মানে দেখা যাচ্ছে বহু আগে থেকেই প্রোথিত।
লেখা পড়ে ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মুক্তিযুদ্ধকে দেখতে পাচ্ছি, ধন্যবাদ। লিখতে থাকুন।
অসাধারন বর্ণনা।
চলুক
---কালামিয়া।
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার এমন টানটান বিবরণ আমি খুব কমই পড়েছি।
সাধারণ কিংবা অভূতপূর্ব যাই হোক না কেন, কোনো ঘটনা যখন ঘটে, ঘটনার সেই স্থান আর সময়ে সশরীরে উপস্থিত না থাকলে তাকে প্রকৃতভাবে উপলব্ধি করা যায় না। তাই আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পরে জন্মেছি, তাদের বুকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধকে একটা যাদুকরী সময় বলে মনে হয়। আপনার একাত্তরের এমন বর্ণনা সেই যাদুর বলয়কে ভেঙ্গে আমাদেরকে একদম ১৯৭১য়ের ঢাকাতে নিয়ে যায়, মনে হয় আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখছি।
আপনি সৌভাগ্যবান, মুক্তিযুদ্ধের সময়কে যাপন করতে পেরেছেন। আর আমরা সৌভাগ্যবান, আপনার লেখা পড়তে পারছি।
অসাধারণ বর্ণনা, রুদ্ধশ্বাসে পড়লাম, চোখের সামনে যেন সেই সময়গুলো পর পর দেখতে পাচ্ছিলাম। বিমানযুদ্ধ, দিনের বেলায় জানালায় কাগজ লাগান, রাতে টেনে তুলে ফেলা, কি টান টান উত্তেজনা।
কাছ থেকে দেখেছে এমন কারো কাছ থেকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনতে খুব অন্যরকম অনুভূতি হয়- আহা কত কষ্ট, ত্যাগ, তিতিক্ষার পরেই না এই দেশটি পেয়েছি আমরা।
এখুনি আপনার আগের লেখাগুলো পড়ে ফেলতে হবে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।
দারুণ!
দারুণ বর্ণনা
চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এই কথাটা মনে হলে খুব বিষন্ন হয়ে যাই। পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিলো জেনারেল অরোরার কাছে, এটা একেবারেই মেনে নিতে পারি না।
জেনারেল অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ কথাটা খুব টুইস্টেড শোনায়, কারণ আত্মসমর্পণ করা হয়েছিলো মিত্রবাহিনীর কাছে, যার অধিনায়ক পদাধিকার বলে অরোরা ছিলেন।
কার কাছে আত্মসমর্পণ করলে মেনে নিতে পারতেন?
ব্যক্তি জেনারেল অরোরাকে নিয়ে হয়তো আমার মাতমটা বেশিই হয়ে গেছে। কিন্তু ১৯৭১ এ পাকিস্তান ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, এটিই কি বহির্বিশ্বে প্রচলিত ফ্লেবার নয়?
"বহির্বিশ্বে" প্রচলিত ত্রুটিপূর্ণ ফ্লেবারকে পুনরাবৃত্ত করে জোরদার না করাই কি শ্রেয় নয়? বিশেষ করে খুব পরিষ্কার দলিলপত্র যখন হাতের নাগালেই থাকে?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
অনেকদিন পর পড়লাম আপনার ১৯৭১। আবারো বলি, অসাধারণ!!!
একাত্তরের এরকম প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা দুর্লভ।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ভয়ানক সব দিন। রুদ্ধশাসে ঠাসা সময় গুলো অনুভব করতে পারি আপনার লেখা পড়ে।
অসাধারণ। জীবন্ত। যেন সামনে বসে এই গল্প বলে যাচ্ছে কেউ...
ডাকঘর | ছবিঘর
অসাধারণ। পুরোটা শেষ হলে ছাপার অক্ষরে দেখতে চাই। সংগ্রহে রাখব। লেখায় পাঁচতারা।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
অসাধারণ একটা কাজ করছেন।
নতুন মন্তব্য করুন