খানিকক্ষণ আগে একটা সন্দেহজনক চরিত্র হেফাজতে ইসলামের উদ্ভট মামার বাড়ির আবদাগুলির একটা উত্তরের তালিকা ফেসবুকে ইনবক্স করে 'ছড়িয়ে দেবার জন্য' অনুরোধ করেছে।
ভালো করে পড়ে দেখলাম এটা তো ছাগুদেরই প্রশ্নের ছাগুমার্কা উত্তর, আর মুক্তমনাদের হাতেই তার প্রচারের ভার পড়েছে! (হেফাজতে ইসলামী জামাত শিবিরের দাবীর সমর্থক এবং যুদ্ধাপরাধীদের মু্ক্তি চেয়েছে, কাজেই ছাগু বলতে তাদের কোন সমস্যা দেখি না)
দাঙ্গা বাঁধাতে না পেরে, এবং তথাকথিত ইসলামিক রেভুলুশন ঘটাতে না পেরে মুত্রে মতিঝিল ভাসিয়ে ফিরে যাবার পর পরেই অনলাইন ছাগু বাহিনী সক্রিয় হয়েছে।
হেফাজতের কুকর্মের বিষ্ঠা ছেঁকে যতটুকু তারা বাঁচাতে পারছে, সেটাই আপনাকে আমাকে গেলানোর অপচেষ্টা এখন করছে। তাদের এই নতুন প্রপাগান্ডা, যাতে নাস্তিক, নিধর্মী, মুক্তমনাদের হেয় করে বক্তব্য প্রচারের চেষ্টা দেখা যায়, সে বিষয়ে আমাদের খুব সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে বলে মনে হচ্ছে।
তাদের 'উত্তর-মালা'র একটা নমুনা দেখুন... উত্তরগুলিতে নাস্তিকদের পাশাপাশি নাস্তিক-মুরতাদ বলার চেষ্টা হয়েছে, যা সাধারনত ইসলামিস্টদের ভাষ্য।
লক্ষ্য করুন:
হেফাজতীস্লামী'র তৃতীয় দাবি: // কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুৎসা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা। //
ছাগুদের বানিয়ে দেয়া উত্তর: // শাহবাগ আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী কোন নেতা-নেত্রী নাস্তিক মুরতাদ নয়।- রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে অন্যন্য দেশপ্রেমিকের ন্যায় 2/3জন নাস্তিকও শাহবাগ আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের 3 নং দাবিটি মূলত জামাতে দাবি। রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগ আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য জামাত এবং হেফাজত তাদের নাস্তিক বলে নিজেরাই বিতর্কিত হচ্ছেন। //
এখানে খেয়াল করুন, নেতৃত্বে যে আসলে কোন নাস্তিক-'মুরতাদ' উপস্থিত নেই এ বিষয়টা নিশ্চিত করবার মাধ্যমে তারা 'ইসলামী বিশ্বাসী ব্যক্তিই নেতৃত্বের যোগ্য' -জাতীয় নীতিখানা শক্ত করে প্রতিষ্ঠা করছে! আমরা জানি, প্রকৃতপক্ষে শাহবাগ আন্দোলন স্বাধীনতাকামী বাঙালী এবং সচেতন নাগরিকদের বিশাল এক সন্মিলন, এতে ধর্মের কোন ভূমিকা নেই, এবং ধর্ম কিংবা নাস্তিকতা / আস্তিকতা নিয়ে কথা তোলা এবং উত্তর দেবার ফাঁদে পড়া, দুইই ইসলামিস্টদের সুবিধে দেবে। আমাদের সেলিব্রেটী ব্লগারগন এ ফাঁদে ইতোমধ্যেই পা দিয়ে আন্দোলনের বারোটা বাজানোর ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন প্রায়।
বাস্তবতা হলো, ক্রমবর্ধমান মুক্তচিন্তা এবং এতে আলোকিত মুক্তমনারা সউদি ঔপনিবেশিক মন্ত্র ইসলামের বিরূদ্ধে এতোটাই সরব এবং কার্যকর হয়েছেন, যে ইসলামিস্টগন তাদের মূলধন 'ইসলাম'কে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে এবং অন্যদিকে মুক্ত-মত, পথ, চিন্তা এবং যোদ্ধাদের নিষ্ক্রিয় করতে সচেষ্ট হতে বাধ্য হয়েছে। এই প্রচেষ্টার ধারাবাহিক প্রতিফলণ আমরা দেখতে পাই থাবা বাবার হত্যা, আমারদেশপাকিস্তানের ক্রমাগত নাস্তিকতাকে একটি ঋণাত্বক বিষয় ও অপরাধ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা, এমনকি ঘুমিয়ে থাকা বাংলাদেশ সরকার, সুশীল সমাজ, সেলিব্রেটি ব্লগারদেরকে এই ইসলামিস্ট ফাঁদে পা দিয়ে 'আমরা তো কেউ নাস্তিক ন্ই, বাংলাদেশ তো নাস্তিক নামই শোনে নাই' জাতীয় কৈফিয়ত দিতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক রাজনীতি করা এবং সকলের কাছে প্রো-সেকুলার হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ সংগঠনগুলি নিয়েও এই মচ্ছবে যোগ দেয়, এখনো দিচ্ছে।
বাঙলাভাষী মুক্তমনা তারুণ্য, নিশ্চিত নাস্তিক, দোদুল্যমাণ সংশয়বাদী সকলের কাছে আর্জি আমার, নিজের অন্তরের কাছে সৎ থাকা দরকার আমাদের। যদি আমরা নিশ্চিত জানি ইশ্বর আছেন কি নেই এই বক্তব্যের বৈজ্ঞাণিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কারো কল্পকাহিনী আমাদের শোনা জরুরী নয়, ততোক্ষণ পর্যন্ত কারো ভয়ে পুনরায় ক্লজেটে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য অনুচিত, অমর্যাদাকর এবং এতোদিনের কষ্টের ফসল ছাগুদের হাতে তুলে দেবার নামান্তর। থাবা বাবা নিজের প্রাণ দিয়েছেন, কণ্ঠের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে আমরা অন্ততঃ তাঁর এই জীবনদানকে শক্তি মনে করে তাঁর স্মৃতিকে সমুজ্জল রাখতে পারি।
উপরে উল্লেখিত তৃতীয় দাবির প্রকৃত উত্তর তৈরি এবং বাকি বারোটি মামার বাড়ির আবদারের উপযুক্ত উত্তর তৈরি এবং বিতরণের জন্য, সর্বোপরি মুক্তির পথ প্রশস্ত করবার জন্য আমাদের এক থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের বহু দেশের মতো বাংলাদেশও অসংখ্য 'মনে মনে নাস্তিক' আছেন যারা ভীতির পরিবেশ দুরীভূত হলে এমনিতেই আত্মপ্রকাশ করবেন।
আসুন তাঁদের জন্য, বাংলাদেশের সেকুলারিজমকে আরো শক্ত কাঠামোতে দৃঢ় করবার জন্য সবল সচেষ্ট থাকি।
ভীতিই তাদের একমাত্র অস্ত্র আর জ্ঞাণ, যুক্তি ও মানবতা আমাদের অস্ত্র।
আরিফুর রহমান
৯ এপ্রিল ২০১৩
লন্ডন, যুক্তরাজ্য
---
মূল দাবী ও উত্তরের ইমেজ ভার্সন:
১.
২.
৩.
মন্তব্য
সহমত
অবাক হয়ে লক্ষ্য করি - এক দল ইসলামিস্টকে প্রতিহত করার জন্য আরেক দল ইসলামী নেতাদের প্রদত্ত বাণী (মতান্তরে ফতোয়া) গর্বভরে প্রচার করা হয়। হেফাজতী কিংবা জামাতিরা যখন শাহবাগে আন্দোলনকারীদের নাস্তিক বলে ফতোয়া দেয়, অন্য দল কিন্ত ঠিক একইভাবে জামাতিদের নাস্তিক বলে ফতোয়া দেয়। কিন্তু কোনোটা কি গ্রহণযোগ্য? সেই আরেক দল যে অন্যদিন হেফাজতীদের মতো নারীদের পর্দাপ্রথার নামে মধ্যযুগীয় দাবি নিয়ে আসবে না, তা কি বলা যায়?
চলুন, নিজেদের বিচার-বিবেচনায় শান দেই।
নতুন মন্তব্য করুন