খ্রিস্টজন্মের ৩২৭ বছর আগের কথা। ভারতবর্ষ। সুদূর ম্যাসিডোনিয়ার গ্রীক রাজা আলেকজান্ডার সৈন্যবাহিনী নিয়ে কাবুল নদী পার হয়ে দ্রুত সিন্ধুনদের দিকে ধাবমান। তার বয়স মোটে আঠাশ বছর, তবু তার পায়ের তলায় পশ্চিম ইয়োরোপ থেকে পারস্য পর্যন্ত। এশিয়াতে তার নাম লোকে একই সাথে শ্রদ্ধা ও ত্রাসের সাথে উচ্চারন করতো, তিনি ছিলেন তাদের কাছে দেবতার মতই। অন্য সাধারন তাতার কমান্ডারের মত তিনি শুধুই লুটপাটের জন্যে রাজ্য দখল করতেননা, কিংবা গ্রীক সংস্কৃতি দিকে দিকে ছড়িয়ে দেবার মহান দায়িত্বও তার ছিলনা। তার স্বপ্ন ছিল সারা দুনিয়াকে তার সাম্রাজ্যে পরিণত করা।
দারিয়ুসের১ সিংহাসনে চড়ে তিনি প্রথম বুঝতে পারেন যে টাইটেলের বেইল নাই যদি উত্তর আর পূর্বের বর্বর জাতিগুলাকে হাতের মুঠোয় না আনা যায়। অতএব তিনি উত্তরে হানা দিলেন, পশ্চিম হিমালয় পার করে বলখ দখল করতে। এদিকে অক্সাস২ নদী পার হয়ে খিভা৩ আর জাক্সার্টেস৪ নদী পার হয়ে বুখারা পর্যন্ত দখল হল। ম্যাপের উত্তর দক্ষিন পশ্চিম সব কোণাকাঞ্চির জাতিগোত্র হাতের মুঠোয় এনে তিনি ভারতের পাঞ্জাবের দিকে নজর দিলেন। তার ধারণা ছিল পূর্ব সাগরের পারে সবশেষ পয়েন্ট ভারত, এরপরে আর কিছু নেই। তার মহান কল্পিত সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রদেশ ছিল ভারতবর্ষ।
কিন্তু তার ম্যাসিডোনিয়ার সৈন্যবাহিনীর তেল ফুরিয়ে আসছিল। আলেকজান্ডার তার সাদা বন্ধুদের কথা বাদ দিয়ে বাদামী চাটুকারদের কথায় কান দেয়া শুরু করলেন, গ্রীক হেলমেটের বদলে তিনি পরা শুরু করলেন পারসীক মুকুট। আচার আচরনেও পরিবর্তন এলো তার। বাপ ফিলিপের মত তার নারী দেখলে জিভ দিয়ে পানি পড়তো না, কিন্তু ব্যাক্ট্রিয়ার৫ সুন্দরী রোক্সানার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে ফেলেন তিনি। প্রেমের ব্যাপারটা অবশ্য গুজব হবারই সম্ভাবনা বেশি, আলেকজান্ডার নারী নয় মদে আসক্ত ছিলেন।
এদের পাল্লায় পড়ে আলেকজান্ডারের ভিতর মেয়েলী ঢং, প্রতিহিংসা, প্রশংসা আর চাটুকারিতার প্রতি দূর্বলতা ইত্যাদি এশিয়ান বদ স্বভাব গড়ে উঠলো। চাটুকারের দল তাকে বোঝাল তিনি অমর দেবতা টাইপ কিছু। খ্যাতি ও প্রতিপত্তি পাবার লোভে তিনি পাগল হয়ে উঠলেন, দিকে দিকে তার নামে পুজা আরম্ভ হয়ে গেলো। কতদূর সেই পূজা ছড়িয়েছিল তা বলা শক্ত, কিন্তু তা সারা ইরান তুরান সহ গোটা ভারতবর্ষে গভীর ছাপ ফেলে গেছে তা নিশ্চিত। আলেকজান্ডারের প্রাচ্য নাম সিকান্দার এশিয়ান মুসলমানদের মধ্যে সেইরকম সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয় যেমন আলেকজান্ডার নামটি পশ্চিমা জগতে।
আলেকজান্ডারের ভারত দখলের প্ল্যানটি অল্প কথায় বুঝিয়ে দেয়া সম্ভব। কাবুল নদীটি কাবুল, জালালাবাদ আর পেশোয়ার হয়ে আটক দূর্গের কাছে সিন্ধুনদে গিয়ে শেষ হয়। সিন্ধুর পূর্বপাড়ে সুফলা পাঞ্জাব, তাতে পানি দেয় সিন্ধু, ঝিলাম, চেনাব, রাভি, বিপাশা, শতদ্রু ও সরস্বতী নদী। আলেকজান্ডারের মতলব ছিল সিন্ধুর পশ্চিমে কাবুলসহ পুরো এলাকা দখলে নেয়া, তারপরে সিন্ধু পেরিয়ে আটক, তারপরে পাঞ্জাব দিয়ে মার্চ করে কোনাকুনি দক্ষিন পুর্বে এগোন। সবশেষে দিল্লী আগ্রা দিয়ে গঙ্গা যমুনা নদী পার হয়ে প্রাচীন নগর প্রাজ্ঞ ও গৌড়ের মাঝামাঝি পুরো মগধ বা পাটলিপুত্র সাম্রাজ্য জিতে নেয়া। ভারত কমপ্লিট।
প্ল্যানে কিছু সমস্যা ছিল। পথে পড়ে বিস্তর বজ্জাত ছোটখাট রাজ্য, যেমন কাবুলের ভেতর মাসাগা নগরী। মাসাগা ছিল আশাকান জাতির রাণীর শহর । সিন্ধুর ওইপাড়ে অন্তত তিনটে এলাকা ঝামেলা পাকানোর মতলবে ছিল;- সিন্ধু আর ঝিলামের মাঝামাঝি তাক্সিলা, ঝিলাম আর চেনাবের মাঝামাঝি পুরান পৌরব, চেনাব আর রাভির মাঝে নতুন পৌরব। পুরান পৌরব সবচাইতে শক্তিশালী শোনা যায়, কিন্তু তারা ছিল খুবই বন্ধু টাইপ জাতি। ডাইনে বাঁয়ে তাক্সিলা আর নতুন পৌরব বাবাজীদের সাথে তার মুখ দেখাদেখি বন্ধ। উত্তর দক্ষিনেও ছোটখাট রাজাদের সাথে কাইজা ছিল তাদের।
একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা দরকার। এশিয়াতে সাম্রাজ্য ব্যাপারটা মোটের উপর একগাদা লোকাল রাজা বা সামন্ত প্রভুদের যোগফল, একক সম্রাট বলে কিছু নেই। এরা সবাই মাসে মাসে প্রভুদের চাঁদা দিত আর মিলিটারি পুষতো যদি যুদ্ধ লেগে যায় ওইজন্য। গৃহযুদ্ধ লাগানোর একবারে নিখুঁত ব্যবস্থা! তলোয়ার ছাড়া এই সিস্টেম বহাল রাখা অসম্ভব। আলেকজান্ডারের আগমনের সময় কাবুল আর পাঞ্জাবে এইরকম বেড়াছেড়া শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।
আলেকজান্ডারের আক্রমন কোন সাধারন দস্যুর মত ছিলনা। তার নিজের ও সৈন্যবাহিনীর দক্ষতা সম্বন্ধে অতি উচ্চ ধারনা ছিল ঠিকই, কিন্তু খাঁটি সৈনিকের মত তিনি বুঝে পা ফেলতেন। যাকে বলে খুব খিয়াল কইরা। সম্মুখের শত্রুকে তিনি পরোয়া করতেননা, কিন্তু এশিয়ার অভিজ্ঞতা তাকে পেছনের শত্রু সম্বন্ধেও সাবধান হতে শিখিয়েছিল।
আলেকজান্ডারের প্রথম পদক্ষেপ খুবই বুদ্ধিমানের মতন ছিল। কাবুল নদীতে পৌঁছে তিনি ঘাটে ঘাটে দূত পাঠিয়ে দিলেন যেন তারা এসে তার ক্যাম্পে কথা বলে যায়। পুরান পৌরবের শত্রু নগরীগুলো ভাবলো এইবার একটা শক্ত লোক পাওয়া গেছে, এর সাথে দোস্তি করে পুরান পৌরবকে ভর্তা বানানো যাক। তার ক্যাম্পে রাজাগজার লাইন পড়ে গেল, বিশেষত তাক্সিলার রাজা চরম দামী আর বিরল উপহারে ক্যাম্প ভরিয়ে দিলেন। তাক্সিলা রাজ্য সিন্ধুনদ আর পৌরবের মাঝখানে, পৌরব আক্রমনের মিলিটারি অপারেশনের জন্য চমৎকার। উত্তরে আলেকজান্ডার পিউকেলাটিস৬ রাজ্য দখলে লোক পাঠিয়ে দিলেন, সৈন্যবাহিনীর সিন্ধুনদ পেরুতে তা দরকার ছিল।
আলেকজান্ডার তখন কাবুলের উপজাতিদের বাঁশ দিতে মন দিলেন। কাবুলে আফগানীদের বাস। এরা যেকোন ভারতীয়দের তুলনায় যুদ্ধবাজ। এদের মাঠে হারিয়ে দিলে দেয়ালঘেরা শহরে গিয়ে ওঠে, শহরে হারিয়ে দিলে পাহাড়ে পালায়। বিরাট যন্ত্রনা। মাঝে মাঝে আলেকজান্ডারের বাহিনীর আসার খবর পেয়ে নিজেরাই শহর জ্বালিয়ে পাহাড়ে উঠে বসে থাকে, মহাবীর আলেকজান্ডার এসে দেখেন বেবাক ফাঁকা! অনেকগুলি ছোট যুদ্ধের পর তারা হার মেনে এদিকসেদিক ছিটিয়ে পড়লো। সবচেয়ে দুর্ধর্ষ ছিল আশাকান জাতির রাণী ক্লিওফেস, মাসাগায় থাকতেন তিনি। সারা ভারত ছেঁকে সাত হাজার যোদ্ধা জড় করেছিলেন তিনি, যারা খোলা প্রান্তরে ম্যাসিডোনিয়ানদের যুদ্ধে আহবান করতো। আলেকজান্ডার দূরে পালিয়ে যাবার ভান করে সরে যেতেন, তারপরে হঠাৎ দুম করে এগিয়ে আক্রমন করতেন। শেষে তারই বিজয় হয়, কিন্তু শহরের অধিকাংশ লোক পালিয়ে শহরে আশ্রয় নেয়। তুমুল যুদ্ধ চলে মাসাগায়, কিন্তু সেনাপ্রধানের মৃত্যুতে তারা পিছু হটে আর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। যোদ্ধাদের ম্যাসিডোনিয়ান ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয় তাদের সৈন্য হিসেবে যোগ দেয়ার জন্য। কিন্তু আলেকজান্ডার খবর পান তারা গভীর রাতে পালাবার ধান্দা করছে, তার হয়ে লড়ে তারা রাণীর বিরুদ্ধে যেতে আগ্রহী নয়। তাদের মুন্ডু কর্তন হল। মাসাগার পতন হল পরদিন, রাণী আত্মসমর্পন করলেন।
কাবুল হাতের মুঠোয় আনার পর তিনি সিন্ধু পেরিয়ে পাঞ্জাব ঢুকলেন। পথে তাক্সিলায় থেমে একটু জিরিয়ে নিলেন, তারপর ঝিলাম নদীর পথ ধরলেন। পুরান পৌরব নদীর ওপারে হাতী ঘোড়া সৈনিক নিয়ে প্রস্তুত। শত্রুর সামনেই বৃষ্টিবাদলার মধ্যে নদী পার হতে হল আলেকজান্ডারকে, অন্ধকার ঝোড়ো রাতে তার বাহিনী ধীরে ধীরে এগুতে থাকলো। পাঁড়ে আসার কাছাকাছি বিদ্যুৎচমকের দ্রুত আলোয় তাদের আসার কথা টের পেয়ে যায় পৌরবরা, তাদের রাজা তার ছেলেকে ঘোড়ার রথবাহিনী দিয়ে পাঠিয়ে দেন। বৃষ্টিস্নাত কাদামাটিতে রথের চাকা আটকে বেকায়দায় পড়ে তারা, সবাই ধরা পড়ে। আলেকজান্ডার যুদ্ধে হারান তার ঘোড়া, পৌরবরাজ হারান তার ছেলে।
এই ভয়ংকর খবর পেয়ে রাজা তার শ্রেষ্ঠ বাহিনীকে যুদ্ধে পাঠান। ধুলোধূসরিত এক প্রকান্ড মাঠে তারা অবস্থান নেয়। সামনে ছিল দুইশ হাতী, একেকটি প্রায় একশ ফিট দূরত্বে। তার ঠিক পেছনেই সেনাবাহিনী, আর দুই পাশে ঘোড়সওয়ারের দল। আলেকজান্ডার দুই দিক থেকে আক্রমন করলেন। পৌরব ঘোড়ার দল কোণঠাসা হয়ে তাদের নিজেদের হাতীদের মধ্যে পড়ে গেল, বেচারা হাতী কি আর ঘোড়া চেনে...সে সামনে যে ঘোড়া পেল তাকেই গদাম দিতে থাকলো। এরপরে হাতী দেখলো আরেক উৎপাত, ঘোড়ার পিঠের সৈন্য সে পৌরবই হোক আর গ্রীকই হোক তারা বর্শা দিয়ে হাতী খুঁচাতে শুরু করলো। আহত ভীত হাতীর দল দিল পিছন ফিরে ছুট, এইবার তাদের পায়ের তলায় ভর্তা হল পৌরব সেনাবাহিনী। পরাজিত হল পৌরব, তাদের রাজা আত্মসমর্পন করে রাজপুত প্রথা অনুযায়ী বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেন। আলেকজান্ডার রাজি হলেন। দুদিন আগের দুই চরম শত্রু আজ শপথ নিলেন ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে।
(পরের পর্বে সমাপ্য)
…..................................................................
জেমস হুইলার রচিত “The History of India from the Earliest Ages: Hindu Buddhist Brahmanical revival” অবলম্বনে।
মন্তব্য
পড়ছি ... চালান
চালাচ্ছি...
..................................................................
#Banshibir.
মজাই মজা, ইতিহাসের সব বই আপনারে দিয়া লেখানো হৌক!
..................................................................
#Banshibir.
যথারীতি পাঁচ তারা।
আলেকজাণ্ডার না প্লেটো না এরিস্টটল কার শিষ্য ছিলেন?
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
্দারুনসসস......চালিয়ে যান.........গ্রীকরা চলে যাবার পর থেকে যাওয়া যবন দের সম্পর্কে কিছু যদি লিকতেন বা ভারত বর্ষে যবনদের প্রভাব নিয়ে !!... এরিষ্টটল এর শিষ্য সিকান্দার শাহ এর বাংলা সম্পর্কে অভিমত কি ছিল?? কিনবা...গঙ্গারিডো রাজ্য সম্পর্কে কে জানি কি বলেছিল??...পীর সাহেব , আপনি কিন্তু কড়া পীর!!
নিশ্চই দিব যবনদের প্রভাব নিয়ে যদি ভালো সোর্স পাই।
..................................................................
#Banshibir.
ভাইজান অ্যারিস্টটল টলেমী সহ বাঘা বাঘা টিউটর পেয়েছিলেন, অতিবড় শিক্ষিত মানুষ বলা যায় সিকান্দারকে।
..................................................................
#Banshibir.
পড়ছি। আপনার সিগনেচার irreverent স্টাইলটা বেশ মজা লাগে। পরের পর্বে কালানস ইত্যাদিদের গল্প আসবে তো?
নতুন শব্দ শিখলাম, irreverent. একবারে খাঁটি শব্দ আমার সিরিজের জন্য। পরের পর্বে ঠিক কি কি দিব ভেবে দেখিনি, আলেকজান্ডারের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটনা লিখব এটুকু জানি। দেখা যাক।
সাথে থাকার জন্য লন এক কেজি
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ দারুণ!
ধর্মবিষয়ক বদ চিন্তা আলেক্সান্ডারের মাথায় মিশর থেকে ঢোকে বলে জানি। সে নিজেকে ফারাও হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে একেবারে 'আমন'-এর অবতার হিসেবে দাবী করে। সবটা মনে নেই।
লেখা চলুক।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
মিশর একটু দূর হয়ে যায়, পুরো পৃথিবীর ইতিহাস লিখার চেয়ে আপাতত ফোকাস করছি বাংলাদেশ তথা অবিভক্ত ভারতের ইতিহাসের দিকে। অ্যামো ফুরিয়ে আসলে বিশ্ব ইতিহাসের দিকে মন দিব।
সাথে থাকার জন্য
..................................................................
#Banshibir.
আহা এত সুন্দর ইতিহাস যদি বইতে থাকত তবে ছোটবেলায় আমিও ইতিহাসে কত নম্বর পেতাম !
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব পাঠান ।
নম্বর দিয়া কি করবেন ভাই এই তো বেশ মানুষ হইসেন। পরীক্ষার নম্বরের গুলি মারেন।
..................................................................
#Banshibir.
তা যদি কন, কমু ঠিকই কইসেন ।
চমৎকার লিখেছেন। তবে কিছু নাম যেমন তাক্সিলা>তক্ষশিলা চোখে লাগছে।
ধন্যবাদ। লেখকের শব্দচয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, তাক্সিলা অক্সাস খিভা জাক্সার্টেস এইসব শব্দ সচেতনভাবেই প্রয়োগ করা। এগুলির বদলে আমি সহজেই তক্ষশিলা আমুদরিয়া খোরাসান সিরদরিয়া ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করতে পারতাম। এইটা সাদা লোকের বর্ণনায় সাদা শাসকের বিজয়ের গল্প, মূল লিখার ফ্লেভার ধরে রাখা দরকার আছে। আক্ষরিক অনুবাদ এই সিরিজের উদ্দেশ্য নয়, বরং আমি যেমন পড়তে পড়তে "...অক্সাস নদী? এইডা আবার কুন চিপায়" মার্কা ধন্দে পড়ে যেতাম সেই ধন্দে আপনাদেরও ফেলতে চাই।
আশা করি বুঝাতে পেরেছি। গুড অবজারভেশন।
..................................................................
#Banshibir.
এই লাইন পড়ে স্পষ্টই বোঝা যায় এগুলি জেনোফোবিক, রেসিস্ট বা প্রাচ্যবিদ্বেষী পশ্চিমা ঐতিহাসিকদের মূল্যায়ন। এসব ওদের মধ্যেও কোন অংশে কম ছিল না - গ্রেকো-রোমান মীথ ও ইতিহাস এবং রাজনীতি তার সাক্ষী। আলেকজাণ্ডার নিজেই সম্ভবত এইসব ভণ্ডামির ভিক্টিম - খুব সম্ভবত নিজের লোকের হাতেই তিনি নিহত হয়েছিলেন।
আলেকজাণ্ডার কিছু কিছু প্রাচ্য আচার-আচরন এডপ্ট করেছিলেন বলা হয় - কিন্তু কোথায় যেন পড়েছি এসব ছিল নিছক রাজনৈতিক কূটকৌশল আর তার অনুসারীদের মধ্যে এর বিরোধিতাটাও ছিল অভ্যন্তরীন রাজনীতির ব্যাপার।
যাহোক আলেকজাণ্ডারের সমসাময়িক ঐতিহাসিক মেগাস্থিনিসের বিখ্যাত গ্রন্থ 'ইন্ডিকা' এখানে পাবেন।
****************************************
ঠিক কথা। আমারও ধারণা এগুলি রাজনৈতিক চাল, এরা জাতে মাতাল তালে ঠিক।
..................................................................
#Banshibir.
facebook
চলুক, সাথে আছি। ধন্যবাদ
..................................................................
#Banshibir.
শ্রদ্ধা থেকে দেবতা হতে দেবতা হতেই পারে; কিন্তু ত্রাস? বোধগম্য হয়নি!
কেন? মুসলিমদের সাথে উনার কোন ধরনের আত্মিক, নৃতাত্বিক, সামাজিক, বা সাংস্কৃতিক যোগাযোগ রয়েছে? নইলে কি করে সময় ঘড়ির বাঁধা ডিঙ্গিয়ে মুসলিমদের মনে জায়গা করে নিলেন?
এখনকার আফগানরও কিন্তু সেই ঐতিহ্য মোটামুটি ধরে রেখেছে!
কিন্তু এর ফলে কি ক্ষতি হল আলেকজান্ডারের, তা লেখাটিতে পাওয়া যায় না!
পরিশেষে আপনার ইতিহাস লিখন চলতে থাকুক, সেই প্রত্যাশা!
সময়মতো পূজা না দেয়ার অপরাধে দেবতা পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছেন এরকম টেররিস্ট দেবতা গ্রীক ভারতীয় সব পুরানেই একটা দুটা থাকে। দেবতা মানেই মহান শ্রদ্ধার পাত্রবিশেষ তা মনে করার কিছু নেই। ঈশ্বর দেবতারা ত্রাস উৎপাদন করতেও সমান ওস্তাদ।
পাওয়া যায়। পরের প্যারাগ্রাফই সেই ক্ষতির বর্ণনা। লেখকের মতে, "এদের পাল্লায় পড়ে আলেকজান্ডারের ভিতর মেয়েলী ঢং, প্রতিহিংসা, প্রশংসা আর চাটুকারিতার প্রতি দূর্বলতা ইত্যাদি এশিয়ান বদ স্বভাব গড়ে উঠলো। চাটুকারের দল তাকে বোঝাল তিনি অমর দেবতা টাইপ কিছু। খ্যাতি ও প্রতিপত্তি পাবার লোভে তিনি পাগল হয়ে উঠলেন, দিকে দিকে তার নামে পুজা আরম্ভ হয়ে গেলো।" এইটেই লেখকের মতে সাদা লোকের বদলে বাদামী লোকের কথা শোনার কুফল।
..................................................................
#Banshibir.
আপনার একটা লেখা পইড়া উইকি দশবার গুঁতোই।
অতঃপর - ও-ও-ও এই কথা !
চলুক
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
হ উইকি জিন্দাবাদ। একদিন উইকি বন্ধ ছিল মনে হইতেসিল পানি না খেয়ে আসি
..................................................................
#Banshibir.
হুইলার এর সমস্যা তো আগেই বলেছি। এই পাবলিক ও তার মত আরো অনেক ভিক্টিরিয়ান গুলগপ্পে ভরা ইতিহাস সাপ্লাই দিয়া মিটিমিটি হাসতেই আছে। আসেন আলেক্সান্ডারের 'বিশ্বজয়' এ বাইর হওনের আগে পারসিক সম্রাজ্যের ছবিটা দেখি।
এইবার আসেন দেখি আলেক্সান্ডারের বিশ্বজয়ের রুটম্যাপ
যেইটা বুঝাইতে চাইলাম, সেইতা হল আলেক্সান্দার দারিউসের সম্রাজ্যের বাইরে একটাও পা রাখে নাই। কিন্তু রোমান আর ইংরেজদের কাছে তিনি 'গ্রেট'।
"পশ্চিম হিমালয় পার করে বলখ দখল করতে।"
পারস্য থেকে ব্যাকট্রা বা বলখে যেতে হিমালয় পার হতে হয়না।
"চাটুকারের দল তাকে বোঝাল তিনি অমর দেবতা টাইপ কিছু। খ্যাতি ও প্রতিপত্তি পাবার লোভে তিনি পাগল হয়ে উঠলেন, দিকে দিকে তার নামে পুজা আরম্ভ হয়ে গেলো। কতদূর সেই পূজা ছড়িয়েছিল তা বলা শক্ত, কিন্তু তা সারা ইরান তুরান সহ গোটা ভারতবর্ষে গভীর ছাপ ফেলে গেছে তা নিশ্চিত।"
আপনি হয়তো প্রস্কিনেসিস এর কথা বলছেন। পারস্যের কেন্দ্র থেকে দেখলে ম্যাসিডোনিয়ার উপজাতীয়রা (আলেক্সান্ডার যাদের নেতা) পাসিরগাদায় এর আদবকায়দাকে বুঝতে পারেনি। তবে এই আদবকায়দা আলেক্সান্ডারে আগে ও পরে বেশ ভাল ভাবেই বহাল ছিল।
"আলেকজান্ডারের মতলব ছিল সিন্ধুর পশ্চিমে কাবুলসহ পুরো এলাকা দখলে নেয়া, তারপরে সিন্ধু পেরিয়ে আটক, তারপরে পাঞ্জাব দিয়ে মার্চ করে কোনাকুনি দক্ষিন পুর্বে এগোন। সবশেষে দিল্লী আগ্রা দিয়ে গঙ্গা যমুনা নদী পার হয়ে প্রাচীন নগর প্রাজ্ঞ ও গৌড়ের মাঝামাঝি পুরো মগধ বা পাটলিপুত্র সাম্রাজ্য জিতে নেয়া। ভারত কমপ্লিট।"
এই পরিকল্পনার গপ্পোটাও ইংরাজ সাহেবদের। ঠিক একই সিস্টেমে তেনারা আর্যদের দ্বারা ভারত জয় করাইছে। এইগুলা পইড়া বিশ্বাস কইরাই তো নিয়াজিরা ঢাকা-দিল্লী-করাচি করিডোর বানানো স্বপ্ন দেইখা প্যান্ট ভিজাইতো।
মূল ইংরেজী, "...accordingly, he invaded the north, crossed the Western Himalayas, and conquered Balkh". আপনের কথা ঠিক, ম্যাপে এর মধ্যে হিমালয় পড়েনা। তাইলে কি আমি বুঝতে ভুল করলাম? উনি কি বুঝাতে চেয়েছেন যে আলেকজান্ডার পশ্চিম হিমালয় ক্রস করেন এবং বলখ জয় করেন? অর্থাৎ হিমালয় ক্রস করা আর বলখ জয় দুইটা ভিন্ন বিজয়?
..................................................................
#Banshibir.
'তাক্সিলা' যে আমাদের 'তক্ষশিলা' সেটার উল্লেখ দরকার ছিল।
তক্ষশিলা 'আমাদের' কবে ছিল?
তক্ষশিলা 'কাদের' ? 'আমরা' কারা ?
****************************************
আরো ভাল প্রশ্ন!
প্রশ্ন ভাল তো বুঝলাম, কিন্তু উত্তরও তো লাগবে।
আপনি আপনার মত একটা ট্রাই নেন না !
****************************************
যিনি শুরুতে 'আমাদের' বলেছেন, তার চোখে আমার কারা সেটা জানা দরকার। আমার চোখে তো আমরা বাংলাদেশী। এবার আসেন তক্ষশিলা 'কাদের' হতে পারে, এটা বুঝতে চেষ্টা করি।
আপনি জানেন নিশ্চই যে তক্ষশীলা (১) উত্তরপথ (২) ব্যাক্ট্রিয়া-গঙ্গাঅববাহিকা সংযোগ কাফেলা (৩) কুঞ্জেরাব দিয়ে উত্তরভারতীয় রেশম-পথ - এই তিনটা বড় বানিজ্যিক সড়কের মিলনস্থল। প্রাচীন মহাজনপদ বা সেরকম স্বাধীন নগররাষ্ট্রগুলো এধরনের বানিজ্যিক কেন্দ্রগুলো ঘিরেই গড়ে উঠেছিল। আমরা জানি এইসব স্বাধীন রিপাবলিকগুলোর মধ্যে ঔপনিবেশিকতা খৃপূ ৫০০ সালের আগে প্রবেশ করেনি। তক্ষশীলার উপর প্রথম আক্রমন আসে পশ্চিম দিক থেকে।
(দিন তারিখ বাছবেন তো ভাই, আন্তাজে দিতেছি। দুই-দশ বছর এদিক সেদিক হতে পারে)
১) খৃপূ ৫১৮- ৩৩১ পর্যন্ত পারসিক (সেল্যুসিডকে পারসিক ধরে নিয়ে)।
২) খৃপূ ৩৩১ - খৃপূ ১০০ পর্যন্ত মৌর্য
৩) খৃপূঃ ১০০ - খৃপূ ২০ পর্যন্ত শক
৪) খৃপূঃ ২০ - ৩২০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত কুশান/ইন্দো-সাসানিয়
৫) ৩২০-৭৫০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত গুপ্ত/হুন/ইসমাইলি মুসলিম এ কামড়াকামরি
৬) ৭৫০-১২০০ আপাতঃ স্বাধীনতা, পাল-আব্বাসীয়-গজনভি মিথস্ক্রিয়া
৭) ১২০৬- সুলতানি, মোঘল, শিখ, ইংরেজ, ভারত ইত্যাদি ইত্যাদি।
এর মধ্যে একমাত্র পাল ছাড়া আর কেউ বাংলার সাথে উত্তর পশ্চিমের প্রশাসন একসাথে করতে পারেনি। তবে পাল আমলেও প্রশাসন ভুক্তি/মন্ডলে বিভক্ত করেই পরিচালনা করা হত। তক্ষশিলার সেই বিভক্ত প্রশাসন ১৯৩৫ সালের ইন্ডিয়া এক্ট পর্যন্ত বলবত ছিল। এর পরে ১৯৪৭ সালে তক্ষশিলা সহকারে পাঞ্জাবের এই অংশ ভারতে প্রবেশ করে।
এই কারনে বাংলাদেশের মানুষের তক্ষশিলা কে 'আমাদের' বলার বিশেষ কোন ভিত্তি দেখিনা।
কেন, কনটেক্সট ভেদে শব্দটার অর্থ, সংজ্ঞা বা পরিধি কি বদলাতে পারে না ? পারে না আরো ইনক্লুসিভ বা আরো এক্সক্লুসিভ হতে? নাকি সেটা ভুল হবে? আপনার কি মনে হয়?
কিন্তু আমি তো যদ্দুর জানি তক্ষশিলা এখন পাকিস্তানে। এখানে দেখুন।
এটা যদি ঠিক হয়, উপরের যুক্তি অনুসারে 'মহাভারতের' উৎস তক্ষশিলা তাহলে এখন পাকিস্তানের। ভারতীয়দের কি কোন অধিকার থাকে তাহলে এটাকে আর 'আমাদের' বলার?
****************************************
তক্ষশীলা পাকিস্তানেই। আমার ভুল হয়েছে।
পাকিস্তানি ও ভারতীয়রা যদি ঢাকাকে 'আমাদের' বলতে পারে, তাহলে ভারতীয়রা তক্ষশীলাকেও আমাদের বলতে পারবে।
আমাদের জেনারেল এরশাদ কম যায় কীসে?
এরশাদ সিকান্দারের চেয়ে অবশ্যই মহান। বানে ভেসে যাওয়া প্রজার দুঃখ দেখে সিকান্দারকে কবিতা লিখতে দেখা যায়নি।
..................................................................
#Banshibir.
'আমাদের' না বলে আমাদের কি 'তেনাদের' বললে ভাল হত ? ভারতবর্ষ ভেঙ্গে আজকের ভারত-বাংলা-পাকিস্তান মাত্র তো সেদিনের সৃষ্টি !
ইংরেজরা আমাদের শিখিয়ে পড়িয়ে দেবার আগে 'ভারতবর্ষ' বলে কোন বস্তু ছিল কি? ব্রিটিশ ভারতে তক্ষশীলা কবে যুক্ত হয়? প্রাক-ইংরেজ উপমহাদেশে বাংলা আর তক্ষশীলার রাজনৈতিক সম্পর্ক কিরকম ছিল বলে আপনার মনে হয়?
দারুণ লাগলো। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকব।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
আ-সি-তে-ছে।
..................................................................
#Banshibir.
আপনার ইতিহাস ক্লাসে এসে বসলে আমার খালি হাসি পায় ...
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হাসতে থাকেন। বেজারমুখে স্কুলটিচারের পড়ানো ইতিহাস তো মেলা শুনলেন...এইবার হালকা বিনোদনে ভরপুর ইতিহাস শুনার পালা। খুব কারেক্ট ইতিহাস হবে গ্যারান্টি দিতেসিনা কিন্তু ব্যাপক বিনোদনের গ্যারান্টি রইল।
..................................................................
#Banshibir.
আপনি একের পর যেইভাবে সব রাজা বাদশাহ বীরদের কাছা খুলে উদোম করে দিচ্ছেন, বড়ই আনন্দ পাচ্ছি
কি আছে জীবনে, খেতা আর বালিশ! দেই শালাদের ইজ্জত মেরে অসুবিধা কি?
..................................................................
#Banshibir.
পরের পর্বের অপেক্ষায়...
অনুবাদে
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নতুন মন্তব্য করুন