যখন সেভেন এইটে পড়ি ফিডব্যাকের বঙ্গাব্দ ১৪০০ অ্যালবামটি বের হয়। ভারি চমৎকার কভার, ভাঁজ খুলে দেখা যায় প্রতিটি গানের লাইন আর সাথে পাতাজোড়া ব্যান্ড সদস্যদের ছবি। ক্যাসেটের দাম ছিল তখন চল্লিশ টাকা, একসাথে অত টাকা বের করা সহজ ছিল না। যাহোক কোনভাবে কিনে শুনার পরে মাথা ঘুরে গিয়েছিল, আরে এমন গান তো শুনিনি। এরকম গানের আগে কবিতার লাইন? কোথাও রোমাঞ্চ নেই, খাঁটি করুণ বাস্তবতা, এবং এই বাংলাদেশেরই কথা? অথবা মনে পড়ে তোমায় গানটির শেষ লাইনে “...এবং এক মিনিট নিরবতায়” কথাটির সাথে টিকটক টিকটক শব্দ? নাহ আরো কিছু গান শুনতে হচ্ছে।
কিনা হল আরো ব্যান্ডের গান। এই কথাটা খুব চলতো, ব্যান্ডের গান। রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, আধুনিক গান এইগুলি টিভি রেডিও তে চলতো। সন্ধ্যা ছয়টায় আধুনিক গানের অনুষ্ঠান ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে তে গৎবাঁধা বিটিভির সেটে আড়ষ্ট অচেনা নারী গাইতেন আধুনিক সঙ্গীত। বন্ধু যদি চলে গেলে নিষ্ঠুর বিধাতা হে আমায় তুলে নাও টাইপ গান। আর চলতো রবীন্দ্র নজরুল অথবা পল্লীগীতির অনুষ্ঠান। ব্যান্ডের গান ছিল অছ্যুত, টিভি প্রোগ্রামে তাদের দেখা যেতনা বললেই চলে। মাঝে মধ্যে বিপ্লব বা ওইরকম কেউ লম্বা চুল নিয়ে ধোঁয়াময় বিটিভি সেট অন্ধকার করে অদ্ভুত কিছু গান করতো, ওইটাই ব্যান্ড সঙ্গীত বলে চালিয়ে দেয়া হত। মিডিয়ায় ব্যান্ড বলতে এটুকুই। তাই নিয়মিত ক্যাসেট কিনতে হত গান শোনার জন্যে।
জেমস আর বাচ্চুর একটি ডুয়েল অ্যালবাম শুনি। ক্যাপসুল ৫০০ বা ওইরকম কিছু। একপিঠে এলআরবি আরেকপিঠে ফীলিংস। এক পিঠে হাসতে দেখ অথবা নীল বেদনা, আরেক পিঠে কত কষ্টে আছি। এরপরে একটানে ফীলিংসের সবকটা অ্যালবাম শুনতে থাকি। পুরো বুঝতাম না কিন্তু তন্ময় হয়ে শোনার মত কিছু গান। আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে হেলেদুলে কলসি কাঁখে চলেছে হারাগাছের নূরজাহান। শেষ ট্রেনের হুইসেল যখন অতীতে হারিয়ে যায়, তখন তোমার কাছে আনবে চিঠি মধ্যরাতের ডাকপিয়ন। ফুরিয়ে যাওয়া মানুষের মত নির্ঘুম রাত জেগে জেগে গীটার কাঁদতে জানে। জেমসের পুরোন দিনের গানে একটা চমৎকার জিনিষ ছিল গানের শেষাংশে জ্যামিং। প্রায় এক দেড় মিনিট শুধু মিউজিক। গীটারে জেমস আর ড্রামে ফান্টি। কীবোর্ডে আসাদ বলে নাকি একজন ছিল কভারে দেখতে পাই, কিন্তু ফীলিংসের গানে কিবোর্ডের মিউজিক আতসকাঁচ দিয়ে খুঁজতে হয়। আসলে জেমস আর ফান্টিরই রাজত্ব। বাংলার লাঠিয়ালের ইনট্রোতে ফান্টির ধুন্দুমার ড্রামবাজী শোনা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা।
প্রথম কনসার্ট দেখার অভিজ্ঞতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রি ভবনের সামনে মাঠে। স্কুলে পড়ি তখন, ঐ মাঠের পাশেই স্কুল। বিরাট শাহী স্পীকার খাটিয়ে মঞ্চে গান গাইতে উঠলো রেনেসাঁ। ওয়েলকাম টু দ্য হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া। সাচ অ্যা লাভলি প্লেস। আর কি গান গেয়েছিল ভুলে গেছি, রেনেসাঁর গান মন দিয়ে শুনিনি তখনোও। এরপরে ফিডব্যাক। মঞ্চে মাকসুদের উপস্থিতি একটি অসাধারন জিনিষ। তিনি শুধু গানই গাননা তিনি শ্রোতাদের সাথে কথা বলেন। শ্রোতারাও তার জবাব দেয়। এইরকম প্রবল ক্যারিসম্যাটিক আরেক গায়ক ছিলেন দলছুটের সঞ্জীব চৌধুরী। তিনি গানের ফাঁকে ফাঁকে কৌতুক বলতেন অথবা কবিতা, মজা করে গান নিয়ে কোন একটি অভিজ্ঞতা বলতেন তারপর হঠাত দুম করে ভরাট গলায় গান ধরতেন আমি তোমাকেই বলে দেব কি যে একা দীর্ঘ রাত আমি হেঁটে গেছি বিরান পথে। তার মারা যাবার দিনটি একটি বিষাদময় দিন। ধরি মাছ না ছুঁই পানির মত গান গাওয়ার লোক দেশে আর কেউ রইলো না।
বেনসন অ্যান্ড হেজেস মাঝখানে তুমুল কনসার্ট করে ঢাকা মাতিয়ে দিল। শেরাটনে হল অ্যাম্পফিউশন, ওইখানে প্রথম অন্ধ বাউল শাজাহান মুন্সীর গান লাইভ শোনার সৌভাগ্য হয়। বাজনা বাজাচ্ছিল রেনেসাঁ, আর মঞ্চের মাঝে দোতারা হাতে শাজাহান মুন্সি গেয়ে চলেছেন, বাদিয়া মায়াডুরে কাঁদালে এমন করে এই কি প্রেমের প্রতিদান। অথবা সত্য কাজে কেউ নয় রাজী, সবই দেখি তানানানা। জাত গেল জাত গেল বলে। তার গায়কী অন্যরকম, তার উচ্চারন আলাদা জগতের। অ্যাম্পফিউশনের শেষে মঞ্চে উঠলো বাচ্চু আর মানাম। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দুজন, বাচ্চুর চোখ মানামের কীবোর্ডে আর মানামের বাচ্চুর গীটারে। এরা মিউজিক গুলে খাওয়া লোক, আঙুলের নাড়াচাড়া দেখে এরা ধরে ফেলে গান কোনদিকে যাচ্ছে। ঐভাবে দুইজন জ্যামিং চালিয়ে গেল কমপক্ষে পাঁচ মিনিট। আমি আমার সারা মাসের বেতন দিয়েও ঐ পাঁচটি মিনিট ফিরে পেতে চাই।
বড় একটি কনসার্ট হয়েছিল আর্মি স্টেডিয়ামে। আমি ঢুকার সময় শিরোনামহীন গান করছিল, ভাল শুনতে পাইনি। কোন একটি লালনের গান করছিল তারা এইটা আবছা মনে পড়ে। বুয়েটের কনসার্টে আমি খুব কম গেছি, একটিতে শিরোনামহীনের গাওয়া লালনগীতি শুনেছিলাম। অপার হয়ে বসে আছি, লয়ে যাও আমায়। চমৎকার। তো সেই অ্যাম্পফেস্টে এসেছিল জুনুন। হিন্দী পঞ্জাবী গান আমি তেমন শুনিনা, কিন্তু জুনুনের গীটার ও তবলার অভূতপূর্ব সম্মিলন এড়িয়ে চলা শক্ত। যাই হোক, সিল্ক রুট বা ওইরকম একটা হিন্দী গানের ব্যান্ডও এসেছিল। ওদের গান আমি আগে শুনিনি, কনসার্টে শুনে দুঃখই পেয়েছিলাম।
এরা নেমেছিল এলআরবির পরে। বিরাট ভুল সিদ্ধান্ত, মিসটেক অফ দ্য সেঞ্চুরী। এলআরবি যখন স্টেজে ওঠে তখন আঁধার নেমে এসেছে, স্টেজের আলো নিভিয়ে বাচ্চু গান ধরলো। সাথে গাইছে স্টেডিয়ামের প্রতিটি মানুষ। কিছুক্ষন পর বাচ্চু গাওয়া থামিয়ে দিল, গীটার থেমে গেলো, কীবোর্ডও। শুধু মৃদু ড্রামবিট। গান গেয়ে চলেছে স্টেডিয়াম। তুমি কেন বোঝনা তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়। আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে। আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে, তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়। স্টেডিয়ামভরা লোক যেন বুঝাতে চাইল বাচ্চু সারাটি জীবন আমাদের গান শুনিয়ে এলে আজ রাতে আমরা তোমায় গান শোনাই এসো। এইরকম একটি মুহুর্তের সাক্ষী হয়ে থাকা ভাগ্যের ব্যাপার।
কনসার্ট কাঁপাতে জেমসেরও জুড়ি ছিলনা। তার কয়টা কনসার্ট কোয়ালিটি গান ছিল, যেমন সুলতানা বিবিয়ানা অথবা যাত্রা কিংবা নাগনাগিনীর খেলা। বুক কাঁপানো ড্রামবীটের সাথে জেমসের উদাত্ত কন্ঠের হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ ব্যাপার শুনে লাফিয়ে না ওঠা শক্ত। তার অনেকগুলি কনসার্টে গিয়েছি, সবগুলিতে তার গলা ঠিক থাকতো না। দুষ্ট লোকে বলে মাল খেয়ে টাল হয়ে আসত। সে যাই হোক, পুষিয়ে যেত তার গীটার জ্যামিংয়ে। মূল গানের সুর এদিক সেদিক করে পাগলের মত গীটার বাজাতো জেমস মিনিটের পর মিনিট, ক্যাসেটে ধারন করা মূল গানের খোলনলচে বদলে একবারে ভার্সন টু গান পরিবেশিত হত।
ক্যানাডায় আসার পর গানের জন্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুঁ মারা শুরু করি। তখন ফ্রী এম্পিথ্রির দিন শুরু হয়ে গেছে, সিডি বের হবার দুই ঘন্টার মধ্যে গান আপলোড হয়ে যায়। নয়া ল্যাপটপ কিনেছি, ধুনায় ডাউনলোড শুরু করে দিলাম। এরপরে দেখি রাস্তা ঘাটে লোকে আইপড নিয়ে ঘুরাঘুরি করছে, আমারো কিনতে মঞ্চাইলো। তখন মাত্র এদেশে এসেছি হাতে পয়সাকড়ি নেই, লাঞ্চে খেতাম দুই ডলারের হটডগ। দুম করে একটা আইপড কিনে ফেলা সহজ ছিলনা। আইপড হাতে আসে আরো বছরখানেক পরে, ন্যানো। বৃত্ত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গান সিলেক্ট করতে হয়। অতি ঠান্ডা ব্যাপার। রিয়েল কুল। ঐ আইপড আমার এখনো আছে, চার বছরের উপরে হয়ে গেলো। আইফোন কিনার আগ পর্যন্ত আইপড ছাড়া আমি একটি দিনও ঘর ছেড়ে বেরোইনি, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে প্লেনে অথবা ট্রেনে আমি আমার আইপড ন্যানোতে বিশ হাজারতম বারের মত শুনতাম রোদ উঠে গেছে তোমাদের নগরীতে আলো এসে থেমে গেছে তোমাদের জানালায়।
টরন্টোয় ভিক্টোরিয়া পার্ক বলে একটা জায়গায় নানাবিধ বাংলা দোকানপাট। যথারীতি সিলডি ভাইয়েরা গ্রোসারী শপ চালাচ্ছেন দুনিয়া আলো করে। ওইখানে কিছু দোকানে গানের সিডি পাওয়া যায়। কিনি মাঝে মাঝে। সিডি শোনা হয়না, কিনি লজ্জাবশতই। এত গান শুনি গায়ককে একটা পয়সাও ছোঁয়াইনা বিরাট লজ্জার ব্যাপার। ইদানিং গান ডাউনলোডের সাইট কমে এসেছে, খুঁজে দেখতে হয় অনেক। তবে একটি সাইটে গান কিনতেও পারা যায়। মূল গায়কের কাছে কোন টাকা যায় কিনা কে জানে। নতুন সুবিধা হয়েছে ইউটিউব, প্রতিটি গানেরই মিউজিক ভিডিও বের হয় বা গানটি ইউটিউবে চলে আসে। এম্পিথ্রি হিসেবে ডাউনলোড করে সোজা চলে যায় আইফোনে। কিছুদিন আগে কয়েকটি দুর্দান্ত গান শুনেছিলাম ইউটিউবে, ওল্ড স্কুল বলে একটি ব্যান্ডের রূপকথা নেই অথবা জেমস ও শ্বেতাঙ্গ একটি অপেরা গায়িকার ফিউশন...অসম্ভব চমৎকার।
এখন শুনছি আনুশেহের গলায় প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের লিখা গান। এই মক্তবে নাই কুতুবে কেতাব, পাশ করিলে মিলেনারে মলানা খেতাব। মন দিয়া পড় আসল মাদ্রাসায়।
আমার এই তুচ্ছ লিখাটি তারেক মাসুদকে উৎসর্গ করলাম।
মন্তব্য
Ashadharon likha. Akkebare moner madhuri mishiye pathoker mone nara diye...
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্যে।
অভ্র ইনস্টলড নেই বুঝি? পৃথিবীর এক নম্বর সফটওয়্যার, আজই ট্রাই মারুন। ইংরেজীতে পড়েই এত ভাল লাগছে কথাটা বাংলায় লিখলে আরো বেশী ভাল লাগত।
..................................................................
#Banshibir.
স্মৃতিচারণ ভাল লাগলো।
অবস্কিউর ব্যাণ্ডের গানগুলা ভাললাগতো, আরও ছিল শ্রাবণের মেঘগুলি' গাওয়া ডিফারেণ্ট টাচ কিংবা খ্যাপা(ত্রিরত্নের)। ওয়ারফেইজ অনেক দিন ভালপেয়েছি, অবাক ভালবাসা, একটি ছেলে, বসে আছি একা, নির্বাসন বা মুক্তিচাই। কিছু ভাল ব্যাণ্ড পুরোপুরি মেলে ধরার আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে: ট্র্যাপ বা ভাইকিংস। প্রথম দিকের হাসান এর গানগুলার বড় ভক্ত ছিলাম! অন্যান্যদের কথা আপনার লেখায় আছে তাই আর উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকলাম। বিটিভি সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ যথার্থ। কোথা থেকে যে পাগল ছাগল ধরে এনে ব্যাণ্ড সংগীতের আসর জাতীয় প্রোগ্রামে ঢুকিয়ে দিত! বিশেষ দিনগুলি ছাড়া বড় ব্যাণ্ড তারকাদের দেখাই মিলতো না। কনসার্ট মাতানোতে জেমস মনে হয় তর্কসাপেক্ষে সব থেকে এগিয়ে। প্রাক্তন ওয়ারফেইজিয়ান সুমন এর অর্থহীন'ও ভাল পেতাম। সোলস এর একেকটা ক্লান্ত দুপুর কেটে যায়, তোমারই অপেক্ষায় বা ব্যস্ততা আমাকে দেয় না অবসর কিংবা কেন এই নিঃসঙ্গতা সুপা-ডুপা লাগতো।
বেঁচে থাকুক আমার প্রিয় বাংলা ব্যাণ্ড সংগীত।
love the life you live. live the life you love.
ত্রিরত্নের খ্যাপা একটি দারুন অ্যালবাম। পরে চারুর আরো কয়টি অ্যালবাম বেরিয়েছিল তারপরে আর খবর নেই। ভাইয়া সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন তখন এখন কোথায় কে জানে।
..................................................................
#Banshibir.
"দেশ টিভি"র সাথে আছেন উনি।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
দেখিনাই কখনো দেশ টিভি। ভালো চ্যানেল? জামাতি না তো?
..................................................................
#Banshibir.
ভালো লাগলো ।
ধইন্যবাদ। আপনের প্রোগ্রাম ছাড়াই লিখসি কইয়া রাখলাম (নাইলে পরে পেটেন্ট কালেক্ট করতে আইতে পারেন)।
..................................................................
#Banshibir.
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো।
তারাপ কোয়াসের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলি, বেঁচে থাকুক আমার প্রিয় বাংলা ব্যান্ড সংগীত।
ঠিক ঠিক।
..................................................................
#Banshibir.
নচিকেতা-সুমন-অঞ্জন বাদ গেল না?
৪০টাকা অনেক বেশি ছিল তখন! আমার লাইন ছিল, ৩৫ করে কিনতাম।
জেমসের কী গলা ছিল সেইসময়! আর গানের কী বৈচিত্র্য! মাইলস আর আর্ক রোমান্টিক লুকজনের খুব প্রিয় ছিল। মাকসুদ আসলেই সব উলট-পালট করে দিয়েছিল। আর ছিল ওয়ারফেইজ। এক বন্ধুর কথা মনে পড়লোঃ জেমসের সুন্দরী তমা দুইবার শুনলেই তার চোখ দিয়ে পানি ঝরতো!
দেশে থাকতে হাভাইত্যার মত গান শুনতাম। দেশি-বিদেশি-হিন্দি সব। আর এখন? পারতপক্ষে ইংরেজি শোনা হয় না। হিন্দি কোনদিন শোনা হয়নি। এখন সব বাংলা! সব নস্টালজিয়া! যৌবনের-কৈশোরের বাংলা গান শুনি!
দুই বছর আগে Re-dhun শুনে খুব ভাল লেগেছিল...
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
কত কি বাদ পড়লো। সব লিখলে সাত হাজার পর্বের সিরিজ লিখতে হয়
আসো ক্যামুন?
..................................................................
#Banshibir.
আমি প্রথম কনসার্ট দেখি ২০০১ সালে। তখন নতুন নতুন ঢাকা শহরে এসেছি মফস্বল থেকে। সে যে কি উত্তেজনাময় একটা দিন ছিল! আর্মি স্টেডিয়ামে বিশাল কনসার্ট। জ্যামিং এ আমার মতে শ্রেষ্ঠ ওয়ারফেইজ। তিনটা গিটার নিয়ে তিনজন যখন সুরের লড়াই শুরু করে, সে এক অপার্থিব অনুভূতি। লেখায়
আইজ্ঞা হ, গীটার জ্যামিং কাহাকে বলে ওইটা ওয়ারফেজের কনসার্ট দেখলেই বুঝা যায়।
..................................................................
#Banshibir.
, আহা, মাকসুদের নিষিদ্ধটা দারুণ ছিল।
জেমস নিজের শহর বলে রাজশাহীতে এক ফ্রি কনসার্টে এসেছিল, হঠাৎ বলে উঠল ( আধা মাতাল ) , ঐ তোরা মারামারি করবি?
সবাই বলে- হ্যা গুরু।
জেমসের উত্তর- কর তাহলে, আমি গেলাম।
facebook
হাঃ হাঃ হাঃ গুরু জিন্দাবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
স্মৃতিচারণ ভালো লাগলো।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
..................................................................
#Banshibir.
ভালো লাগলো।
বঙ্গাব্দ ১৪০০-র গানগুলো আমারো খুব প্রিয় ছিলো।
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
অসাধারন গান। অসাধারন অ্যালবাম। প্রতিটি গান বাঁধিয়ে রাখার মতন। এরকম কড়া অ্যালবাম ছিল বাচ্চুর কষ্ট আর জেমসের দুঃখিনী দুঃখ কোরোনা।
..................................................................
#Banshibir.
ওয়ারফেজ। ওয়ারফেজ। ওয়ারফেজ।
কলেজের কনসার্টে দলছুট।
বাংলা। আনুশেহ'র ভিন্নধর্মী কন্ঠ।
এখন আর্টসেল।
ধন্যবাদ।
ওয়ারফেজের একটা আনপ্লাগড শুনছিলাম সেদিন, ইউটিউবে। মিজান গাইছিল বসে আছি। গানের স্কেল চেঞ্জ করে, উচু স্কেলে সিডিতে ধারণকৃত গানের মত নয় নিচু স্কেলে। অসাধারন।
মন্তব্যের জন্য থাঙ্কু লন। নিয়মিত পড়ার জন্য আরো থ্যাঙ্কু লন।
..................................................................
#Banshibir.
শুনলাম। ভালো পাইলাম।
চমৎকার লিখা। গান নিয়ে আরো লিখুন।
আসাদ দেহলভী, ফিলিংস অ্যালবামগুলোর ম্যাক্সিমাম গানই তার লেখা। এমনকি ক্যাপসুল ৫০০মিলিগ্রাম এও দেহলভীর লেখা গান রয়েছে। এছাড়া স্ক্রু-ড্রাইভার অ্যালবামে 'বাংলার লাঠিয়াল', 'বেদুঈন' ও 'যে পথে পথিক নেই' এই তিনটি গান আসাদ দেহলভীর লেখা ও জেমসের সুরকরা গান।
ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে আরও লিখুন।
আসাদই দেহলভী? হায় হায় রে এই কথাটা আমারে কেউ কয়া দিলনা ক্যান? বেদুঈন একটি চরম গান। ব্যাবিলনের ব্যস্ত পথে হারিয়ে ফেলেছি তোমার পায়ের নূপুর।
ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে পড়াশোনা খুব অল্প, দিস্তে দিস্তে লিখার সাহস পাইনা। গান নিয়ে আরো লিখব হয়তো।
সাহস দেবার জন্য থ্যাঙ্কু।
..................................................................
#Banshibir.
মেটাল রেভলিউশান বাংলাদেশে এনেছিল রকস্ট্রাটা। আমরা তখন শিশু। তারপরও.....ছোট মামার সাথে সে কি হেডব্যাঙ্গিং আমাদের!
পোস্ট খুব হৃদয়-কাড়া হইছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হ রকস্ট্রাটা সময়ের তুলনায় রেভল্যুশনারী একটা ব্যান্ড।
আসো ভালো?
..................................................................
#Banshibir.
ফিডব্যাক, ক্লাস সেভেন, ভাইডি কি আমার সহপাঠী নাকি? আওয়াজ দিয়েন।
লেখা বরাবরের মতই, ট্রেডমার্ক আকারের ভালো।
৯৭ এ ম্যাট্রিক পাশ দিসি। সাট্টিফিকেট আসে। মিললো ব্যাচ?
..................................................................
#Banshibir.
হুম্মম্ম। ৯৭-৯৯ ব্যাচ। আওয়াজ দেন।
আরে এক ব্যাচ নাকি?
..................................................................
#Banshibir.
অনেক কথা মনে করিয়ে দিলেন। অনেক কথা। আপনার বলা সব গান হয়তো শুনিনি তবে ম্যাক্সিমাম গানগুলিই শোনা। জেমস কিংবা সঞ্জীব চৌধুরী অথবা হালের ওল্ড স্কুলের - চাঁদ মামা আজ বড্ড একা বড় হয়েছি আমি।
স্কুলে পড়তে মোবাইল কিংবা আইপড আমাদের তখনো হাতের নাগালে আসেনি। ছোট্ট এক ধরণের টেপ রেকর্ডার কিনতে পাওয়া যেত। বাবাকে বলে কেঁদেকেটে একটা জোগার করেছিলাম। ওটা দিলেই সব গান শোনা। বুকের কাছে আগলে রাখতাম। আর নতুন ক্যাসেট কেনার জন্য কাকা এবং পিসিমণিকে বারবার আবদার করা।
ব্যান্ড এর লাইভ শো গুলির কথা বলে লাভ নেই। স্কুলে থাকতে এতটা না শুনা হলেও কলেজ লাইফে টোটাল ব্যাং ব্যাং। ভূমি থেকে শুরু করে ক্যাকটাস, ফসিলস, কিংবা চন্দ্রবিন্দু - সবই( লাইভ) ।
শুনেছি জল, কিংবা সিল্ক থেকে শুরু করে ব্রায়ান এডামস কিংবা পিঙ্ক ফ্রয়েড।
এরপর আছে সলো পারফমনেস এর ব্যাপারগুলি। হায় নচিকেতা কিংবা অঞ্জনের গান। কিংবা লোপমুদ্রার উদাত্ত কন্ঠ, শ্রীকান্তের ঠুংরি।
আর সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় আমার এক পাগল দলছুট গানওয়ালা। কবীর সুমন। এক রাত ঘুমুতে পারিনি উনার সাথে প্রথম কথা বলে। এখনো সেই অনুভূতি ভুলার নয়, সারা অডিটোরিয়াম জুড়ে বেজে চলছে একটা বেস গীটার, আর গানওয়ালা গাইছেনঃ প্রথমত আমি তোমাকে চাই, দ্বিতীয়ত আমি তোমাকে চাই, শেষ পর্যন্ত তোমাকে চাই। কিংবা ছত্রধরের গান।
ডাকঘর | ছবিঘর
কবীর সুমনের স্টেজ প্রেজেন্স বিশ্বের সেরা। নেটে একটা ভিডিও পাওয়া যায় প্রবাসীর গান, বা ওইরকম কিছু। পিয়ানো বাজিয়ে গান গাইছেন সুমন। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলছে ভয়েস অফ অ্যামেরিকা বা ডয়েশ ভ্যালে তে কাটানো জীবনের স্মৃতি রোমন্থন, তারপরে হঠাত জোর গলায় গান আহা পাকস্থলীতে ইসলাম নেই নেইকো হিন্দুয়ানী, তাতে যাহা জল তাহা পানি। একেই বলে পারফর্মার।
..................................................................
#Banshibir.
জেমস এর আজকের জেমস হয়ে উঠার শুরুই ক্যাপসুল আর স্ক্রু-ড্রাইভার - এই এলবাম দুটো দিয়ে, অসাধারণ সব গান ছিলো এলবাম দুটোতে। মিক্সড এলবাম এর রমরমা ছিলো একটা সময়, ’ষ্টারস’ নাম দিয়ে দু’টো এলবাম বের হয়েছিলো, অদ্ভুত সব গান, সামিনা চৌধুরীর গাওয়া ’কোন এক সুন্দরী রাতে’ গানটা আমার সবচাইতে পছন্দের তালিকায় রয়ে গেছে এখনও।
আরেকটা এলবাম এর কথা কেন যেন মনে পড়ে গেলো - এলআরবি’র ’তবুও’ - আমার মতে এলআরবি’র এখন পর্যন্ত শ্রেষ্ঠ এলবাম।
সবাই ভুলে গেছে ’রেশাদ’ এর কথা, একটাই এলবাম, সেই এলবামে সংগীত আয়োজনে ছিলেন দেশসেরা সবাই। এই এলবামটার খোঁজ আছে কারো কাছে? কোন লিংক? রেশাদ ভাই নিজেই বা আছেন কোথায়?
বামবা’র কনসার্ট ..... কথা শেষ হবেনা এই নিয়ে ....
এই রিশাদ কি ফীডব্যাকে পরে যোগ দেওয়া গায়ক রিশাদ?
স্টারস অ্যালবামের কথা মনে পড়ছে, আশিকুজ্জামান টুলুর প্রডাকশন ছিল কি?
..................................................................
#Banshibir.
মাকসুদ ফিডব্যাক ছেড়ে চলে গেলে এই রেশাদ-ই ফিডব্যাক জয়েন করে।
রেশাদকে নিয়েই ফিডব্যাকের ০২ অ্যালবামটি বের হয়।
বাংলাদেশের ব্যান্ড মিউজিকে ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবামের প্রচলন শুরু করেন আশিকুজ্জামান টুলু।
আশিকুজ্জামান টুলুর সুরবিন্যাস ও সঙ্গীতায়োজনে বের হয় ‘স্টারস’ নামে একটি মিক্সড অ্যালবাম যেটি ছিল বাংলাদেশের প্রথম ব্যান্ড মিক্সড অ্যালবাম। এবং ঐ অ্যালবামের সফল ধারাবাহিকতায় পরবর্তী সময়ে আশিকুজ্জামান টুলুর সুরবিন্যাস ও সঙ্গীতায়োজ়নে বের হয় ‘স্টারস টু’ অ্যালবামটি। যেখানে মাকসুদের বিখ্যাত ‘একটু পরেই নামবে সন্ধ্যা’ গানটি সহ চমৎকার চমৎকার গান রয়েছে।
কত শত গান সেই সময়ের। বয়সের সাথে সাথে রুচির পরিবর্তনের ছোঁয়ায় একদা প্রতিদিন টানা ১৮ ঘন্টা ধরে শোনা গানের ক্যাসেট গুলোতে যখন দেখতাম সাদা ফাঙ্গাস পরে গেছে তখন কেন যেন খুব খারাপ লাগতো। ক্যাসেট খুলে বাড়ির ছাদের এই মাথা ওই মাথা ফিতা ঝুলিয়ে রোদে শুকিয়ে তুলোদিয়ে মুছে আবার পেচিয়ে নেয়া। আবার নতুন করে প্রিয় গানের তালিকায় ক্যাসেট গুলোর ঢুকে যাওয়া। সে সব ছিল একটা সময়।
এখন আর শোনা হয়না সেরকম ভাবে কোনও গানই। তবে মাঝে মাঝেই নিজের অজান্তেই দেখি অনেকদিনের পুরনো সেইসব ভুলে যাওয়া গানের দু-চার লাইন মাথার ভিতর পাক খেতে থাকে। আসলে কি ভোলা যায়, না তা সম্ভব?
ভালো লাগল আপনার স্মৃতিচারণ।
খাইসে রে পুরা ফিতে খুলে রোদে দিতেন আচারের মত তারপরে আবার ক্যাসেটে ভরতেন? আমি তো ফিতা একটু বের হইলেই প্যাঁচায় ফালাইতাম। সাব্বাসি দিতে হয়।
আপনাদের ভালো লাগা এই পোস্টের একমাত্র সাফল্য।
..................................................................
#Banshibir.
প্রথম প্রথম আমারো প্যাঁচ লাগতো। যখন এক যায়গায় দলা করে শুকাতে দিতাম। প্যাঁচ ছাড়াতে গিয়েই বাড়ির ছাদের এমাথা ওমাথা টানা দিতাম পরে। তবে মাঝে মাঝে ছিরেও যেত। তখন টেপ দিয়ে জোরা দিতুম। আসলে কাজ না থাকলে যা হয় আর কী!
আপনার একই বয়সি আমি !! স্মৃতিকাতর হলাম!! মাইলস আর সোলস এবং আরো কিছু ব্যান্ড যেমন নোভা, অবসকিউর, মনিটর, তীর্থক, সিমফনি !!!কত কত ব্যান্ড!! কত কষ্টে জমানো টাকা!! ক্যাসেট রোদে শুকানো!! ক্যাসেট প্লেয়ারের হেড পরিস্কার করা!! ক্যাসেটের ফিতা আটকে জাওয়া!!
নতুন মন্তব্য করুন