মারাঠা যন্ত্রণা কিছুটা কমে আসার পর আলিবর্দি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নানান ফ্যামেলি ঝামেলি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তার অতি আদরের ধন সিরাজ গদি পাবার জন্য লাফঝাঁপ আরম্ভ করে দেয়, ১৭৫০ সালে সে বিদ্রোহও করে বসে। তরুণ গর্দভটিকে আলিবর্দি ক্ষমা করে দেন, বৃদ্ধ নবাবের এই নাতিটির প্রতি অসীম ভালবাসা ছিল। সেই ভালবাসার সুযোগ নিয়ে সিরাজ ইচ্ছেমত পাইকারি বজ্জাতি চালিয়ে যেতে থাকে। স্থানীয় ঐতিহাসিক গুলাম হুসেন খানের মতে,
“ভালমন্দের বাছবিচার না করে, আদব লেহাজের ধার না ধেরে তিনি যখন যা খুশী তাই করতেন। ছোট বড় মেয়ে মদ্দ কারুরই ছাড় ছিলনা তার সামনে। অতি অল্প সময়ে মিশরের ফারাও এর মতই তিনি ঘৃণ্য হয়ে উঠলেন, আর তাকে দেখা মাত্র লোকে মনে মনে ভাবত ও আল্লা বাঁচাও ডরাইসি!”
গুলাম হুসেন সিরাজের কাজিন, বলা হয়ে থাকে গুলামের মাতা সিরাজের পিতার বোন।
নাতিটির পাকনা স্বভাব মোটেই নবাবের নজর এড়ায়নি। তিনি বলেছিলেন তিনি চোখ উল্টাবার পরে যখন সিরাজ গদীতে আসবে তখন হ্যাটওয়ালারা (ইয়োরোপীয়রা) পুরো এলাকা চুষে খাবে। তাই তিনি শংকিত হয়ে সিরাজের এক নম্বর পাকনামী মদ খাওয়া ছাড়ানোর উদ্যোগ নিলেন। কুরানশরীফ ছুঁয়ে সিরাজ বিরাট শপথ নিল সে আর কোনদিন শরাবের তালব্য শ টাও ছুঁয়ে দেখবে না। কুরানশরীফ সম্ভবত দুনিয়ার একমাত্র বস্তু যেটার কসম সিরাজের কেয়ার করার কথা, কিন্তু ওইটে ভাঙতে তার আদৌ কোন সময় লাগেনি।
নানান ইন্নালিল্লা সিরাজউদ্দৌলার গদিলাভের পথ সুগম করেছিল। তার পিতা জয়নুদ্দিন আফগান সিপাইদের হাতে মারা যান ১৭৪৭ এ, আলিবর্দির বড় ভাই হাজি আহমেদও একই সময় নিহত হন। ১৭৫২ সালে আলিবর্দি সিরাজকে উত্তরাধিকারী ঘোষনা করেন, তবে গদির দিকে আরও দুইট লোকের নজর ছিল। একজন সিরাজের চাচামিয়া নওয়াজিশ মুহাম্মদ (ছোটা নবাব নামে পরিচিত) আর আরেকজন পূর্ণিয়ার গভর্নর সৈয়দ আহমদ। নওয়াজিশ যৌবনে ভারি দুষ্ট ছিলেন, কিন্তু বয়েসের সাথে সাথে তিনি ঠিক হয়ে যান। তার অনেক পয়সাকড়ি ছিল আর দানধ্যানও করতেন মেলা, লোকের নয়নের মণি হতে তার টাইম লাগেনি। কিন্তু তিনি তেমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন না, তার জীবন আবর্তিত হত সিরাজের ছোট ভাই ফজল কুলি খাঁ কে ঘিরে। তাকে তিনি দত্তক নিয়েছিলেন। ভাতিজার অকাল মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন, তার নিজেরও মৃত্যু হয় ১৭৫৫ সালে। তবে মারা যাবার আগে তিনি দুর্বল ইশারায় মন্ত্রী হুসেন কুলি খাঁ এর হত্যাকান্ডে সিরাজকে উৎসাহ দিয়ে যান। হুসেন কুলি অতি ক্ষমতাধর ব্যক্তি, আলিবর্দি সিরাজকে নবাব উত্তরাধিকারী ঘোষণা করার পর যারা উষ্মায় ফেটে পড়ে হুসেন কুলি তাদের পালের গোদা। হুসেন কুলি আর তার ভাই হাসানুদ্দিনের লাশ নামিয়ে দেয়া হয়। চতুর্দিকে পটাপট লাশ নামতে দেখে সিরাজের আরেক চাচা পূর্ণিয়ার গভর্নর বাবাজী ভাবলেন নবাবী করে কি হবে যদি কল্লাই না আস্ত থাকে? তিনি আস্তে করে কেটে পড়লেন।
এইবার সিরাজের রাস্তা ক্লিয়ার, তবে হাল্কা যন্ত্রনা বিগত ভাই ফজল কুলির দুধের বাচ্চা মুরাদ। মরহুম চাচা নওয়াজিশের বিধবা বউ ঘষেটি বেগমের সম্পত্তি মুরাদ। আরেকটি হাল্কা যন্ত্রনা কাজিন শওকত জং। দুইটার একটাও কোন কাজের প্রতিপক্ষ না, কিন্তু দিয়ে মিলে শলা করলে তা সিরাজের মাথাব্যথার কারন হয়ে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা। সিরাজ নিজেও জানতেন তিনি মানুষটা মোটেই পপুলার নন, যেকোন রকম প্রতিপক্ষই আমজনতার সমর্থন পাবে। ইংরেজের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল সিরাজ গদি কোনদিনই পাবেন না, অন্যান্য ইয়োরোপীয়রাও গদি নিয়ে কামড়াকামড়ি অনুমান করছিল।
আলিবর্দি এগুলি হিসেব করে রেখেছিলেন আগেই। সিরাজের এক নম্বর শত্রু হুসেন কুলিকে সরিয়ে দেয়া হয়। এরপর দরবারের প্রভাবশালী উজিরনাজিরদের হাত করার ব্যবস্থা হয়। মীর জাফর আলি খাঁ, যিনি আলিবর্দির আধা বোনকে বিবাহ করেন, ছিলেন বক্সী অর্থাৎ খাজাঞ্চী + সেনাবাহিনী সর্বাধিনায়ক। দেওয়ান ছিলেন রায় দুর্লভ নামে এক হিন্দু। ব্যাপক যোদ্ধা হিসেবে আদৌ কোন রেপুটেশন না থাকা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। রায় দুর্লভ নানাবিধ উপহার প্রদান করে আর মীর জাফর কুরানশরীফ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেন সিরাজকে তারা সারাটিজীবন ভয়ংকর ভালবাসার সাথে পূর্ণ সেবা প্রদান করে যাবেন। মীর জাফর গভীর জলের মাছ, দরবারে তার মেলা কানেকশন ছিল। যৌবনে তিনি ব্যাপক বীরত্বের সাথে অস্টেন্ড ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাত থেকে বাঁকিবাজার দূর্গ উদ্ধার করেন। ১৭৩৩-৩৪ সালের কথা। মারাঠার সাথে কোন এক যুদ্ধে শোনা যায় তিনি একাই দশটে কল্লা নামিয়ে দেন আর যুদ্ধ জয় করেন।
এভাবে নাতির নবাবী লাভের পথ সুগমে আলিবর্দির ত্রুটি ছিলনা, কেবল একটি জিনিষ তিনি করে যেতে পারেননি। সিরাজের সাথে তার খালা/চাচি ঘষেটি বেগমের মিলমুহব্বত হয়নি। ১৭৫৬ এর এপ্রিলের দশ তারিখে বিরাশি বছর বয়সে আলিবর্দি মারা যান। তাকে গোর দেয়া হয় মুর্শিদাবাদের কাছে খুশবাগ বাগানে।
আগে বাড়ার আগে আলিবর্দির সাথে বাংলার ইয়োরোপীয় জাতের সম্পর্কটা দেখে নেই আসুন। মোটাদাগে, তার আচরন ছিল কড়া কিন্তু ন্যায্য। মারাঠাদের সাথে যুদ্ধের সময় তিনি তাদের দূর্গ গড়ার অনুমতি দেন, বিশেষত ইংরেজরা তখন কোলকাতার উত্তরের আদ্ধেক জুড়ে পরিখা খনন করে। অন্যদিকে ১৭৪৪-৪৫ এ তিনি তাদের মারাঠা যুদ্ধবাবদ বিরাট অঙ্কের টাকা আদায় করেন, এক ইংরেজই দিয়েছিল সাড়ে তিন লাখ রূপী।
যদিও তিনি দূর্গ গড়ার অনুমতি দেন, তবু তিনি পই পই করে বলেছিলেন শুধু মারাঠা থেকে বাঁচার জন্য যতটা দেয়াল গাঁথা দরকার গাঁথ, আস্ত কামান সিপাই সুদ্ধা বড় দূর্গ গড়ার প্রয়োজন নেই। তিনি ভালই জানতেন পরে তা তার বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হবে। যখনই কেউ দূর্গ সম্প্রসারণের ভাও করতো তিনি উত্তর দিতেন, “তোমরা হলে সওদাগর, আস্তা দূর্গ দিয়ে তোমরা করবে কি হে? তোমাদের আমার মাটিতে কেউ আক্রমন করলে সেই দায় আমার।” শোনা যায় তিনি বলতেন ইয়োরোপীয়দের গুষ্টি হল মৌচাকের মতন, এদের দুইয়ে মধু বের করে খেতে বড়ই মজা কিন্তু এদের ত্যক্ত করলে এরা উড়ে এসে দিবে পাইকারি হুল।
শ্বেতাঙ্গদের কাইজা নিয়ন্ত্রনেও আলিবর্দি ছিলেন কড়া। ১৭৪৯ সালে ইংরেজ অফিসার গ্রিফিন যখন এক আর্মেনীয় সওদাগর এর মাল বাজেয়াপ্ত করে তিনি তৎক্ষণাৎ সিপাই নিয়ে ইংরেজ কুঠি ঘেরাও করেন আর তার শর্তে রাজী না হওয়ায় মাসখানেক কুঠি বন্ধ রাখা হয়। ইংরজরা ঘ্যানঘ্যান করত স্বয়ং বাদশা ফররুখশিয়ারের ফরমান মেনে কাজ করতে নবাব আলিবর্দি বাগড়া দিচ্ছে, আর আলিবর্দির যুক্তি ছিল ফরমান তারা অপব্যবহার করছে আর স্থানীয় লোকেদের ঠকাচ্ছে।
মোটের উপর এই ছিল নবাব ইয়োরোপীয়র সম্পর্ক যখন সিরাজ গদি পান। ইংরেজদের তো মোগলাই ফরমান ছিল, ফরাসী ওলন্দাজের কিসুই ছিল না। তবু তাদের আলিবর্দি বাণিজ্যের অনুমতি দেন, অনেক ছোট পরিসরে তবু পরোয়ানা তো বটে। চিনসুরার ওলন্দাজেরা পুরোপুরি বাণিজ্যে মন দেয়, দূর্গ দেয়াল গড়ার কোন চেষ্টাই তারা দেয়নি। বেচাল দেখলে কেটে পড়বে এই ছিল তাদের ধান্দা। বাংলার ফরাসীরাও ওইরকমই, তবে দক্ষিণ ভারতে তাদের নেতাদের কার্যকলাপ কিঞ্চিৎ সমীহ জাগানিয়া।
এইরকম পরিস্থিতিতে আলিবর্দি খাঁর মৃত্যু ঘটে। রেখে গেলেন পরিবার দুইটি তরুণের হাতে, যাদের সম্বন্ধে তাদেরই আত্মীয় গুলাম হুসেন বলে গেছেন, “বাংলা বিহার উড়িষ্যার ভবিষ্যত অর্পিত হল দুইটি পাহাড়সম অহংকারী, পর্বতসম উজবুক আর মহাপর্বতসম নিষ্ঠুর তরুণ সিরাজউদ্দৌলা আর শওকত জং এর উপর।”
(চলবে)
স্যামুয়েল চার্লস হিল লিখিত Bengal in 1756-1757; a selection of public and private papers dealing with the affairs of the British in Bengal during the reign of Siraj-uddaula অবলম্বনে। সকল মতামত লিখকের নিজস্ব।
মন্তব্য
আগে ক্যালায়ে নিলাম, এখন পড়ি
আপনে পড়েন আমি থুতনি চুলকাই।
..................................................................
#Banshibir.
বাহ। অবাক ভাবে 'ট্রান্জিট' সমস্য়া যেমন আজকে বহুল আলোচিত, সিরাজ-ইংরেজ কাইজার মূলেও কিন্তু 'ট্রান্জিট' একটা বড় ভুমিকা পালক করেছিল। শাহজাহানের ১৬৫০ মনে হয় রপ্তানী উন্নয়নের লক্ষেই, কোম্পানিকে সারা ভারত থেকে শুল্কমুক্ত রপ্তানির ফরমান দেয়। সেই ফরমানে ট্রান্জিট-টোলের ক্ষেত্রে কোন অব্য়াহতি দেয় নাই। ইংরেজরা সোনার চান্দেরা শাহ সুজা রে সিস্টেম কইরা, শাহজাহানের সেই ফরমানের রেফারেন্সে এমন একটা 'নিশান' বাইর করছিল, যেটা অনুযায়ী তাদের পুরা বিজ্নিস মানে আভ্য়ন্তরীন বানিজ্য় আর রপ্তানী - দুইটাই শুল্কমুক্ত। এইসব ফরমান-নিশান-পরওয়ানা আবার এগুলার অরজিনাল প্রণেতা বা জামিনদারের হায়াতের সমান হায়াত। তাই ইস্য়ুকারি বা জামিনদার মরলে এগুলা ইন্ভালিড। ব্য়াপারনা। ইংরেজরা পর পর ছয়টা পরওয়ানা (রিনিইউয়াল) দিয়া তাদের ফাইল চালু রাখছিল।
আরো একটা বিষয় হইল, ফরমান কোম্পানির। কিন্তু সেই টাইমে কোম্পানির বজরা-গরুর গাড়িতে 'পেরাইভেট' মালামাল ও বিনা শুল্কে পার হইয়া যাইতো। কিন্তু আওরানংজেব আর শায়েস্তা খান আসার পরে 'সিস্টেম' খরচা বাইড়া গেলগা। মুরশিদ কুলির টাইমে তো আরো গরম অবস্থা। ট্রান্জিটের উপর দিল্লীর আর হাত নাই। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়নই তখন ট্রান্জিট-টোল উঠায়। তার উপর আবার পুরা দস্তক (বিল অফ লেডিং) দেইখা। কুঠির দস্তকে মালের উল্লেখ না থাকলে তো কেস আরো কেরাসিন। ইংরেজ কান্ট্রি ম্য়ানেজার তখন ফররুখসাইয়ারে 'সাইজ' করল।
মুরশিদ কুলি তো আর ফররুখসাইয়ারে পুছে না। তার দেওয়ান রায় দুরলভের কাছে সব হিসাব ছিল। ১৭৫৬ সালে সিরাজ কোম্পানির কাছে সেই আমলেই ১.৮৫ মিলিয়্ন পাউন্ড স্টারলিং অনাদায়ী ট্রান্জিট শুল্ক দাবী কইরা বসছিল।
পুরাই ও এম জি সিচুয়েশন।
..................................................................
#Banshibir.
ইগু আরও জব্বর হৈছে বা। তয় কতা হৈল পরের পর্ব দিতে দেরি কইরেন না, বুইচ্ছেনি বা।
ডাকঘর | ছবিঘর
আরে তাফসদাদা আউকা আউকা, খম্লালেবুর বাস দেওয়া সা খাইতেন নি রে বা? ফরের ফর্ব দিরাম বউকা
..................................................................
#Banshibir.
হা হা হা হা। অয়, অয়। আমি খিন্তুক পাত পিঁড়ি বিছাইছি।
ডাকঘর | ছবিঘর
মারাত্মক লাগলো। পরের পর্বের জন্য মুখিয়ে থাকলাম।
দিব উদাস ভাই। সহসচলেরা আপনের নিকের মতই চরম উদাস, সিরিজ শুরু করে ফিনিশ করার নাম নাই। এই আপনেও দুই মাস পর পর এসো নিজে করি সিরিজ ছাড়তেসেন। তাই আমি ব্যাপক সাহসের সাথে দুইটা সিরিজ একসাথে ইশটাট দিসি, ফরাসী বাংলা আর সিরাজউদ্দৌলা। সপ্তায় সপ্তায় এক কিস্তি দিমু দুইটারই। সাথে আছে দেশে বিদেশে সিরিজ। হুঁ হুঁ, আমি কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিয়াস লুক আসি
..................................................................
#Banshibir.
ওই মিয়া, আমি দুইমাস পর পর লেখা দেই এইডা একটা কথা বিচারের কথা কইলেন? আমার হিসাব বান্ধা, মাসে ২ টা। দুই সপ্তাহে গড়ে একটা। আর তা ছাড়া আমার লেখা যেহেতু গবেষণা ও শিক্ষামূলক ধরণের তাই একটু টাইম লাগে আরকি রিসার্চ করতে।
আপনের কথায় যুক্তি আসে। শিক্ষামূলক ও গবেষণাভিত্তিক গঠনমূলক লিখা পুস্ট করতে টাইম লাগারই কথা।
মাসে দুইটা তাইলে? ঠিকাসে। দেইখেন আমি কিন্তু দশ পর্যন্ত গুনতে পারি, ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা দিয়া লাভ নাই।
..................................................................
#Banshibir.
ইতিহাসে সিরাজ আর সাহিত্যে সিরাজ, দুই চরিত্র। আপনার বিবৃত চরিত্রানুরূপ একটি বই পড়েছিলাম মনে হয়।
যাহোক, পড়তে ভাল লাগছে। তরতরিয়ে চলুক।
ঠিক, নাটক সিনেমায় দেখা সিরাজের দুঃখ লিখতে গিয়ে কিবোর্ড ফেটে পানি আসার কথা। মূল সিরাজ লোকটি মোটেই সুবিধার ছিলেন না। ইংরেজরা বাড়িয়ে লিখেছে ঠিকই কিন্তু পুরোটা মিথ্যে নয়।
..................................................................
#Banshibir.
অনুবাদে
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
..................................................................
#Banshibir.
এতদিন পর মনস্কামনা পূর্ণ হইল। যাক্, লেখাটা শুরু করছেন তাইলে; মারহাবা মারহাবা। চলুক।
কৈসিলাম না সবুরে মেওয়া ফলে? ধরেন কত মেওয়া খাবেন খান।
..................................................................
#Banshibir.
আয় সিরাজ অবশেষে, সাথে শিরাজি!
facebook
আপনে দেখি সিরাজের মতই পাকনা, খালি শিরাজির দিকে নজর
..................................................................
#Banshibir.
দেইখেন আয় আয় করে বাসায় যেটা আনছেন সেটা আসল জিনিষ না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আসল জিনিষের উৎপাদন অনেক আগে থেকেই বন্ধ বলে জানি, ঐ নামে যেটা চলে ওটা আসলে অন্য জিনিষ।
****************************************
সিরাজের পর্ব শুরু করার জন্য। আমি কি আর একটা মনবাসনা জনাব সত্যপীরের কাছে জানাতে পারি? আচ্চা জানায়েই দিই। পূরণ হইলে বহুৎ খুশি হব। বাংলার স্বাধীন সুলতানী আমল অর্থাৎ ১৫৩৮ থেকে শুরু হওয়া সময়ের ইতিহাস নিয়ে কোন নতুন সিরিজ করেন না। ক্লাস নাইনের ইতিহাস বইতে যা আছে তার বাইরে আর বেশি কিছু জানিনা। সত্যপীরের কাছে জানতে মন চায়।
অবশ্যই অবশ্যই। হঠাত একদিন দেখবেন সুলতানী সিরিজ হাজির
..................................................................
#Banshibir.
টুইটার
সত্যপীরের ইতিহাস পঠনে যে সুখ সেটা যদি ক্লাস সেভেন এইটে থাকতো
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
বিরাট শরম পাইলাম
..................................................................
#Banshibir.
-- ডুপ্লি হইলে ঘ্যাচাং-যোগ্য --
পীরছাহেব,
'আলেয়া' কে ছিল জানেন ? সিরাজের স্ত্রী হিসেবে 'লুৎফা' বা লুৎফুন্নেসা বেগমের নাম জানি, কিন্তু সিরাজ প্রসঙ্গে এই 'আলেয়া' নামটাও কোথায় কোথায় যেন পড়েছি। ইনি কে ছিলেন? আসলেই সিরাজ-সংশ্লিষ্ট কোন বাস্তব ঐতিহাসিক ব্যক্তি, নাকি কোন ঐতিহাসিক-গুজব বা সাহিত্যিক চরিত্র?
আর ইয়ে, স্কুলে থাকতে ইতিহাস বইয়ে বিভিন্ন টাইটেল-সহ সিরাজের একটা প্রায় দুই-লাইন লম্বা নবাবী নাম দেখেছিলাম, যেটা ভুলে গেছি এখন। আপনার বইয়ে এই বিশাল রাজকীয় নামটা আছে ?
****************************************
আলেয়া সিরাজের পেশকার মোহনলালের বোন।
নবাবে আলা জং বাহাদুর হাবিজাবি মুহাম্মদ কিছু একটা মার্কা ভড়ং টাইটেল সব নবাবেরই ছিল। হিল সায়েবের বইতে পাইলাম না। অন্য কোথাও পেলে কমুনে।
..................................................................
#Banshibir.
সিরাজের পুরা নাম আছিল---
শাহ কুলি খান মির্জা মোহাম্মদ হায়বৎ জং বাহাদুর (সিরাজদ্দৌলা)
বালক বেলার নাম আছিল মীর্জা মোহাম্মদ
----------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
..................................................................
#Banshibir.
আমার পপকন কো?
..................................................................
#Banshibir.
ভাল লেখা। সিরাজের সাথে যে বিশ্বাসঘাতকের দল জুটে ক্লাইভের বিজয় দিয়েছিল, তারা কে কেন বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তা নিয়ে আলোকপাত করলে ভাল লাগবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বিস্তারিত লিখা আছে বইটাতে। চেষ্টা করব দিতে অবশ্যই। পড়বার আমন্ত্রন রইল।
..................................................................
#Banshibir.
একটা কথা যোগ করি,
সিরাজউদ্দৌলা বিষয়ে পশ্চিমা ঐতিহাসিকের কাছ থেকে নিরপেক্ষ বর্ননা আশা করা যায় না। সিরাজের উপর দু ধরনের লেখা পড়েছি। এক দল সিরাজকে দেবতা বানাবার রাস্তা খোঁজে, আরেকটা শয়তান। এখনো পর্যন্ত এমন কোন বর্ননা পাইনি যেটার উপর আস্থা রাখা যায়।
আরো ২০০ বছর পর আমাদের শেখ মুজিবের অবস্থাও তাই দাড়াবে। যদি দীর্ঘকাল জামাত বিএনপি লবির লোক ক্ষমতায় থাকে শেখ মুজিব হয়ে যাবে নষ্ট ভ্রষ্ট, একাত্তরে ত্রিশ লক্ষ লোকের প্রাণহানীর দায়ী আসামী। আবার যদি সেরাম দীর্ঘকাল আওয়ামী লবির লোক ক্ষমতায় থাকে, তারা শেখ মুজিবকে দাঁড় করিয়ে দেবে আসমানের ফেরেশতার সাথে, যার বানীগুলো তুলনীয় হবে হাদিসের সাথে।
ইতিহাস বড় বিভ্রান্তকর বিষয়। বিশেষ করে সেসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে যাদের ভূমিকা ইতিহাসের পটপরিবর্তনের সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন থাকে। সিরাজ ও শেখ মুজিব দুজনের মৃত্যুই ইতিহাসের পট পরিবর্তনের সাথে গুরুতরভাবে সম্পর্কিত।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
খাঁটি কথা। আমাদের ম্যাডাম জিয়ার ভাষায় পাগল ও শিশু ছাড়া কেউই নিরপেক্ষ নয়। পাগল বা শিশুরা বই লিখে না খুব একটা।
তবে সিরাজ লোকটি আসলেও মহামূর্খ ছিল। তার একমাত্র ক্রেডিট ইংরেজবিদ্বেষ।
..................................................................
#Banshibir.
সিরাজ হয়তো তার সময়ের অন্যান্য সিংহাসন দাবীদার হতে অনেক যোগ্য ছিলেন। কিন্তু তার চারিত্রিক দুর্বলতাই ছিল তার পতনের মূল কারন। আসলে, আলীবর্দী খানের যোগ্য কোন উত্তরাধীকারী ছিল না। মন্দের ভাল সিরাজের উপর তিনি দায়িত্ব দিয়ে যান।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
নাহ। তিনি অন্যান্য দাবীদারের মতই মহামূর্খ।
..................................................................
#Banshibir.
মহামূর্খদের মধ্যে যোগ্যতম(!) আর-কি।
মদ্যপ-মাথামোটা এই নবাবগুলো শুধু নামকাওয়াস্তা শাসক ছিল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
..................................................................
#Banshibir.
ইতিহাস সিরাজের সময় দুইজন গুলাম হুসেনের কথা বলে-
০১। গুলাম হুসেন সেলিম যৌধপুরী। এই লোক ব্রিটিশ কর্মচারী ছিল। ইনি ব্রিটিশদের কথায় সিরাজনামা লিখেন, যার নাম, রিয়াজুস সালাতিন।
০২। গুলাম হুসেন হান তাতাবাই হাসানী। এই লোক সিরাজের মুনশী (সচিব) ছিল। তবে, এই গুলাম হুসেন সারা ভারতের নানান জায়গায় মুঘলদের অধীনে চাকুরী করেছেন। ইনিও একটি ইতিহাস বই লিখেন, যার নাম সিয়ার-আল-মুতাহিরিন।
সিরাজের গুলাম হুসেন নামে আসলেই কোন আত্মীয় ছিলেন কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর, তোমার লেখায় যে গুলাম সিরাজের বদনাম করছিল, তা নি:সন্দেহে ব্রিটিশ কর্মচারী ঐতিহাসিক গুলাম হুসেন সেলিম যৌধপুরী, যে সিরাজের আত্মীয় নয় বরং ব্রিটিশরা তাকে নিজেদের ঐতিহাসিক স্বার্থে সিরাজের আত্মীয় বানিয়ে দেয়।
* সিরাজকে নিয়ে বানানো সিনেমায় যে গোলাম হুসেনকে দেখান হয় তিনি গুলাম হুসেন হান তাতাবাই হাসানী। তবে, ঐতিহাসিকভাবে প্রমানিত এত উঁচুদরের মুঘল কর্মচারীকে পরিচালক এমনভাবে বিতিকিচ্ছিরিভাবে মুভিতে দেখিয়েছেন, যার অর্থ বুঝিনি। আর, সেই গুলাম হুসেনও কিন্তু সিরাজের আত্মীয় নন।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
রিয়াজুস সুলাতিন সিরাজনামা নয়, বাংলায় মুসলমান শাসকদের ইতিহাস।
তা ঠিক। তবে, ব্যক্তি সিরাজের সবচেয়ে বেশি বর্ণনা এই বইতেই পাওয়া যায়।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
না এই লোকটি গুলাম হুসেন খান তাবাতাবাই, সিয়ার মুতাহিরিন এর লিখক। তিনি মোগল অফিসার ইংরেজের নয়। দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের কোটেশনটি সিয়ার মুতাহিরিন এর ভলিউম দুই পৃষ্ঠা ৬৬ হতে নেয়া, সর্বশেষ অনুচ্ছেদের কোটেশনটি একই বইয়ের ১৮৯ পৃষ্ঠা হতে নেয়া।
মূল ইংরেজী, In the Seir Mutaqherin, Ghulam Husain is said to have been son of a sister of Siraj-ud-Daula's father, and, therefore, his cousin. In the Asiatic Annual Register, 1801, "Characters", p. 28, it is stated that his maternal grandfather was son to the aunt of Alivirdi Khan.
সিয়ার মুতাহিরিন পড়ে দেখিনি কিন্তু পৃষ্ঠা নাম্বারসুদ্ধা দেয়া আছে তাই মিথ্যে হবার চান্স কম।
..................................................................
#Banshibir.
গুলাম হুসেনকে নিয়ে আমার লিখা মন্তব্যটির উৎস শ্রী যতীন্দ্রমোহন রায়ের বাংলার ইতিহাস বইতে কিন্তু উল্টোটি লেখা।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
গত পরশু খেকে পড়ছি। আগের সব লেখা পড়ে তারপর আজ এটা শেষ করলাম। অদ্ভুত আপনার ইতিহাস লেখার হাত। গল্পের মত তরতর করে এগিয়ে যায় বর্ননা। চলতে থাকুক। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
টুইটার
অসংখ্য ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্যে। পরেরগুলোর আমন্ত্রন রইল।
..................................................................
#Banshibir.
একসাথে দুইটা পড়লাম।
সত্যপীর সাহেব খালি পড়াশুনা র খোঁচা দিলেন দেইখা তার প্রিয় লেখক হিল এর বই টা খুঁজে বের করলাম। হিল লিখেচেন
“To this promise, Siraj-uddaula is said to have rigidly adhered, but it was too late-his mind was already affected.
It is curious to remember that the oath on the Koran, which seems to have been the sole bond Siraj- uddaulah respected............”
সত্যপীর এর অনুবাদ দেখুন ঃ
এই টা সিরাজ কে মদ্যপ প্রমাণ এর জন্য ইচছাক্রিত কিনা বুজলাম না, এত পড়াশুনা করা লোকের এই অনুবাদ ... নাকি সহজ ইংরাজি না বুঝার ফল। আফসোস।
নতুন মন্তব্য করুন