সুবা বাংলার সর্বশেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ ছিলেন একটি মহামূর্খ। দূরদর্শিতা ও বুদ্ধির অভাব এবং শরাবে ডাইলুটেড ঘিলু নিয়ে তিনি বেশিদূর এগোতে পারেননি। কিন্তু তার টার্গেট ছিল সঠিক, বেনিয়া ইংরেজ যে হাতের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছিল তা তিনি নানা আলিবর্দির মতই ধরতে পেরেছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সিরাজ আলিবর্দি ছিলেন না। ইংরেজকে টাইট দিতে গিয়ে নিজেরই হালুয়া টাইট হয়ে যায় তার। সেই পুরান পোকার খেলার নীতি, ইউ হ্যাভ টু নো ওয়েন টু হোল্ড ইয়োর কার্ড অ্যান্ড ওয়েন টু ফোল্ড। সিরাজ কখন কার্ড ফোল্ড করতে হয় জানতেন না, তিনি বেট মেরেই চলেছিলেন। নভিস খেলোয়াড়।
আজকের পর্ব দীর্ঘ পর্ব, পাঠক চা নিয়ে বসুন। গত পর্বে আমরা দেখেছি কাশিমবাজার কুঠি ঘেরাও হবার পথে। আজ দেখব নবাবের কাশিমবাজার দখল ও কোলকাতা দখলের উদ্দেশ্যে ফোর্ট উইলিয়াম আক্রমণ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয়ে আসুন আলোচনা সেরে নেই মূল অনুবাদ পড়ার আগে।
দেখা যাচ্ছে সিরাজ ইংরেজের প্রতি মহাক্ষিপ্ত কিন্তু ফরাসীদের প্রতি তার বেশ দরদ। ব্যাপারটা একটু বিশ্লেষন করা যাক। শোনা যায় মৃত্যুশয্যায় আলিবর্দি সিরাজকে বলে গিয়েছিলেন, “এদের দূর্গটুর্গ গড়তে দিওনা প্রিয় নাতি আমার, তাহলে দেশটা আর তোমার থাকবে না।”১ তাই ইঙ্গ ফরাসী ওলন্দাজ নির্বিশেষে তিনি দূর্গ গড়তে নিষেধ করে দেন। তখন সাত বছর ব্যাপি যুদ্ধ চলছে ব্রিটেন আর ফ্রান্সের মধ্যে, তার বাতাস বাংলাদেশেও এসেছিল। তাই ইংরেজ ফরাসী দুই পক্ষই নিজ নিজ দূর্গ মেরামতে মন দেয়। নবাবের হুকুম পাবার পর ফরাসী তৎক্ষণাৎ তা মেনে নেয়, কিন্তু ইংরেজ পত্রপাঠ সেই প্রস্তাব উড়িয়ে দেয়। এই তাচ্ছিল্য সিরাজের মতন নবাবের চান্দি গরম করে দেবার জন্যে যথেষ্ট। এছাড়া ইংরেজ যে মোগল ফরমানের অপব্যবহার করে যাচ্ছিল তা আমরা গত পর্বেই দেখেছি।
চিনসুরার ওলন্দাজেরা বাণিজ্যেই মন দিয়েছিল, দূর্গটুর্গে তাদের আগ্রহ ছিলনা। দূর্গ গড়ার পয়সাও তাদের ছিলনা, হেড অফিস বাটাভিয়া থেকে সাহায্য পেত অল্পই। তাই দূর্গ না গড়ে ফরাসী ওলন্দাজ নবাবের খড়্গ থেকে রেহাই পেল আপাতত। তবে তাই বলে তাদের একবারে ছেড়ে দেয়া হয়নি, ফরাসী ও ওলন্দাজদের কাছ থেকে এককালীন যথাক্রমে সাড়ে তিন ও সাড়ে চার লাখ রূপী আদায় করা হয়।২
এছাড়া আজকের পর্বের আরেক উল্লেখযোগ্য বিষয় ইংরেজ দূর্গ ফোর্ট উইলিয়াম। ফোর্ট উইলিয়ামের পতন মানেই কোলকাতার পতন। ফোর্ট উইলিয়াম একটা নয় দুটো। আমাদের আজকের পর্বের আলোচ্য ফোর্ট উইলিয়াম হচ্ছে প্রথম দূর্গ। জোব চার্নক তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে এই দূর্গের পত্তন করেন। আমাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের এই সাধের দূর্গের তেরোটা বাজিয়ে দেবেন কিছুক্ষনের মধ্যেই, তাই পরে ইংরেজপাড়ার দক্ষিণে গোবিন্দপুরে একই নামে আরেক দূর্গ গড়বে রবার্ট ক্লাইভ।৩ যাই হোক সেসব অনেক পরের কথা। হেডস আপ, এই অরিজিনাল ফোর্ট উইলিয়ামের গার্ডরুমটিই পরে অন্ধকূপ হত্যার মূলমঞ্চ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। অন্ধকূপ নিয়ে আলোচনা আগামী পর্বের জন্য তোলা থাকল।
চায়ের কাপ ফিলাপ করে নিয়ে আসুন। এবার পড়বো হিল সায়েবের অনুবাদ।
…...........................................................................
(দ্বিতীয় পর্বের পর)
পয়লা জুন সিরাজউদ্দৌলা মূর্শিদাবাদে পৌঁছে কমান্ডার রায় দুর্লভকে দূর্গ দখলের আদেশ দেন। রায় দুর্লভ গেটে গিয়ে দেখেন সিপাইরা বেয়নেট উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি দিলেন পিছনে ফিরে দৌড়। ফিরে এসে দুই নম্বরি পথ খুঁজা শুরু করেন, ওইটেই তিনি ভাল পারেন। তিনি দূর্গপ্রধান ওয়াটস সাহেবকে চিঠি লিখে বললেন কুনো চিন্তা নাই, বের হয়ে আইস। ওয়াটস তখন দূত পাঠালেন তার সার্জন ফোর্থ সাহেবকে। তাকে খাঁটি জামাই আদর করা হল এবং তিনি ভারি খুশি হয়ে হাকিম বেগের পুত্র মী হুসেন আলি কে নিয়ে দূর্গে ফিরে গেলেন। তখন ওয়াটস বাকিদের সাথে শলা করে ঠিক করলেন যাই নবাবের সাথে দেখা করে আসি। লেফটেন্যান্ট এলিয়ট বলে এক অফিসার এর ঘোর বিরোধিতা করলেন, কিন্তু ওয়াটস এর কথা হল কুঠির কমান্ডার লোকাল নবাবের সাথে কথা বলবে তাতে অস্বাভাবিক কি আছে। গেলেন তিনি দূর্গের বাইরে। নবাবের তাঁবুর সামনে আসার পর তাদের পাকড়ে হাতে দড়ি পরানো হল আর সোজা ফাটকে পুরিত হলেন ওয়াটস ও তার দল। নবাব তাকে মুচলেকা লিখতে আদেশ দিলেন যেন ইংরেজ সকল দূর্গ গুঁড়িয়ে সমান করে দেয়, সরকারি হুলিয়া জারীকৃত সকল ব্যক্তিকে নবাবের হাতে তুলে দেয় আর তাদের বাঁদরামির জন্য নবাবের যে লস হয়েছে তা তামাম ক্ষতিপূরণ দেয়। ওয়াটস বললেন কাউন্সিলের মতামত ছাড়া এ সই দেয়া অসম্ভব। দূর্গের ভিতর তখন লোক পাঠানো হল যেন বাকিরা এসে সই করে, ওয়াটস পই পই করে বলে দিয়েছিলেন যেন তারা কোন অবস্থাতেই তাঁবুতে না আসে। কিন্তু ঐ মেসেজ ঠিকমত যায়নি, অথবা তারা তা অগ্রাহ্য করেন। সকলেই দূর্গ ছেড়ে নবাবের তাঁবুতে আসেন আর বলেন কোলকাতা কাউন্সিলের অনুমতি ব্যতিত এ মুচলেকা তারা সই করতে অপারগ। নগদে তাদের হাতেও দড়ি পড়ল। সিরাজ মন দিলেন কোলকাতা দখলে।
খাড়া গরমের সিজনে কাঁচা রাস্তা ধরে গরুর গাড়ি আর হাতি বাহিত আর্টিলারি সমেত যুদ্ধ যাত্রা সহজ কথা নয়। অতি উত্তেজিত সিরাজ ঐ কন্ডিশনে প্রায় ১৬০ মাইল যাত্রা করেন মাত্র এগারো দিনে। একই সময় তিনি ফরাসী আর ওলন্দাজদের ডাকছিলেন আয় আয়, আমার সাথে যুদ্ধ কর। তোদের কোলকাতা দিমু। কিন্তু ফরাসী ওলন্দাজ দুইই সেই আমন্ত্রন উপেক্ষা করে। ফরাসীরা তখন ভাবছিল নবাব নিজেই ব্যাপক ভীত কারন তিনি খাজা ওয়াজিদকে৪ ইংরেজদের সাথে চুক্তি করতে পাঠান।
রাস্তাঘাটে গরুহাতির আর্টিলারি চলতে সময় লাগলেও ঘোড়া চড়ে রানারের সময় লাগে অল্প। ওয়াটসের লিখিত নবাবের কাশিমবাজার দখলের রিপোর্ট কলকাতায় পৌঁছে তেসরা জুন। কাউন্সিল রিপোর্ট পড়ে বুঝে যায় নবাব যুদ্ধ লাগানোর ধান্দাতেই আছেন, তারা তখন চিন্তায় পড়ল। খাজা ওয়াজিদকে চিঠি লিখা হল যেন নবাবের সাথে কথা বলা যায়। ওয়াজিদ চিঠিটি হাতে পান পরে, ততদিনে মেলা পানি ঘোলা হয়ে গেছে। প্রথম প্রথম ঐ চিঠি নিয়ে নবাবের দরবারে তার ঢুকতে সাহস হচ্ছিলনা, ইংরেজের পক্ষে ঐ মূহুর্তে কেউ কিছু বললে নবাব তাকে কেটে সালাদ বানিয়ে খাবেন।
তেসরা জুনে কাউন্সিল ঢাকাসহ অন্যান্য কুঠিতে খবর পাঠানো হল যুদ্ধ আসন্ন, রেডি থাকো। পালাতে হতে পারে। সকল বকেয়া আদায়ের জন্য তাড়া দেয়া হল, যুদ্ধে পয়সা প্রয়োজন। কোলকাতা কাউন্সিল চিন্তায় অধীর ছিল, তাদের কাছে কোন বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছিলনা যারা নবাবের বাহিনীর আগমনের খবর দিতে পারে। বাহিনীর সাথে স্বয়ং নবাব আছেন কিনা ছাতা এই তথ্যটাই কেউ দিতে পারছিলনা। কাশিমবাজার পতনের গুজব প্রথম আসে চান্দেরনগর থেকে ছয় জুন সন্ধ্যায়, পরদিন সকালে পাওয়া যায় নিশ্চিত খবর।
ফরাসী ওলন্দাজের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। সাদা সাদা ভাই ভাই। বাদামীর রক্ত চাই। ওলন্দাজ বাংলায় যুদ্ধবিগ্রহ এড়িয়ে চলত, তারা না করে দিল। ফরাসীরা অতটা না হলেও সাহায্যে রাজী হলনা, তবে অফার দিল যে ফোর্ট উইলিয়ামের পতন ঘটলে চান্দেরনগরে তারা আশ্রয় দেবে। কিন্তু যুদ্ধে তারা সাহায্য করবে না। নবাবের কোলকাতা যাত্রার পথেই পড়ে চান্দেরনগর চিনসুরা, নিজেদের কপালে কি আছে তাতেই তারা নিশ্চিত ছিলনা সাহায্য পরের কথা। শোনা যায় ফরাসীদের কিছু নৌকা নবাব জোর করে নিয়ে যান যাবার পথে। তবে শহরে ভিতর দিয়ে তিনি মার্চ করে যাননি ভদ্রতাবশত।
৭ তারিখে ইংরেজ খবর পায় পার্শ্ববর্তী জমিদারদের নবাব খবর পাঠিয়েছেন ইংরেজদের সাপ্লাই বন্ধ করতে। একই দিনে ড্রেক জরুরী কাউন্সিল ডাকল প্রতিরক্ষা প্ল্যান আলোচনা করতে। ফোর্ট উইলিয়াম পুরো মেরামত হয়নি, মারাঠা পরিখার কাজও অসম্পূর্ণ। গ্যারিসনে সিপাই ও স্বল্প, জানা গেল ৭০ ইয়োরোপীয় সিপাই অসুস্থ, ২৫ জন অনুপস্থিত আর বাদবাকি ১৮০ জনের অধিকাংশই পর্তুগীজ। ঠিক হল শ্বেতাঙ্গ পাড়ার তিনটে মূল সদরে আউটপোস্ট বসানো হবে, সরু রাস্তা খুঁড়ে তার উপর ব্যারিকেড বসানো হবে, সমুদয় ব্রীজ উড়িয়ে দেয়া হবে, আর দূর্গের পূর্বে গভীর পরিখা কাঁটা হবে। নেটিভ পাড়া প্রতিরক্ষার কোন চেষ্টা দেওয়া হলনা। একই দিনে ঢাকা, বালাসোর আর জগদিয়ার ইংরেজদের তার করা হল যেন তারা কোলকাতায় আশ্রয় নেয়, আর কোলকাতা নিবাসীদের হুকুম জারি হল যেন তারা যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র দূর্গে জমা দিয়ে আসে। মাদ্রাজে রেইনফোর্সমেন্টের অনুরোধ ও পাঠান হল।
কোলকাতায় এক নম্বর সমস্যা ছিল বারুদ বন্দুক। নানাবিধ গাদাবন্দুক, সবগুলিতে গুলি ফুটেওনা ভালো করে। বিপদের আশঙ্কায় সকলেই বন্দুক টাইপের কিছু দেখলেই নিয়ে নিত, চলে কিনা পরের কথা। বারুদের অবস্থাও কেরোসিন। বেশিরভাগই ড্যাম্প, বাংলাদেশের বিশ্রী বাদলা সিজনে বেশিরভাগ বারুদই নষ্ট হয়ে যায়, বছরের পর বছর টিকেনা। নয়া বারুদ বানানোর সময় ছিলনা, আর থিকথিক করা ফোর্ট উইলিয়ামে সেই ভিজে বারুদ শুকানোর জায়গাও পাওয়া যায়নি।
চরেরা খবর দিল নবাবের মিলিটারি বারাসাতে পৌঁছেছে, আর ছোট একটা স্কাউট দল দমদমে পাঠানো হয়েছে। নবাববাহিনীতে তিরিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার সিপাই, ১৫০ হাতি আর উট, কাশিমবাজারে দখলকৃত কামান, ২৫ ইয়োরোপীয় আর ২০০ পর্তুগীজ গানার। নবাবের ইয়োরোপীয় টীমের ক্যাপ্টেন ছিলেন ফরাসী মার্কে দ্য সঁ জ্যাক, এই লোকটি চান্দেরনগরের ফরাসীদের মতে বিপথগামী ছিলেন। যাই হোক, সাদা সাদা ভাই ভাই ইত্যাদি বুলি সংবলিত গোপন চিঠি পাঠান হল জ্যাকের কাছে, তিনি ইংরেজদের সাথে যোগ দিলে কতনা লাভ হবে এইসব বিতং লিখা চিঠি। চিঠি তার হাতে গিয়েছিল কিনা কেউই ঠিক শিওর না, যা নিশ্চিত করে জানা যায় যে এই লোকটি সাড়া দেবার বদলে ফরাসী ওলন্দাজ কুঠিতে নবাবের হয়ে সাহায্যের দাবী জানিয়ে খবর পাঠায় আর বাঁকিবাজারে ফরাসীরা তাকে বিপুল পরিমান বারুদ দিয়ে সহায়তা করে। ১৫ তারিখ নবাব চিনসুরা পৌঁছান, তাকে বরণ করতে ছুটে যায় ফরাসী ওলন্দাজ। ফরাসীদের ব্যাপক আদর করা হয়, আর ওলন্দাজের জোটে তাচ্ছিল্য আর অপমান।
পরদিন নবাবের ৪০০০ সদস্যের ছোট বাহিনীর আক্রমণ দেখে দূর্গের মহিলাদের জড়ো করা হয়। আক্রমণ আসছিল মারাঠা পরিখার দিক থেকে, এখন যেখানে চিতপুর ব্রীজ। দুপুরের দিকে হামলা শুরু হয়। তবে খুচরাখাচরা যুদ্ধ চলে, দুপক্ষের তেমন হতাহত কেউ হয়নি। ইংরেজ চর খবর দিল নবাব তাঁবু গেড়েছেন উমিচাঁদের বাগানবাড়িতে, আর ১৮ তারিখ শুক্কুরবার তিনি হামলা শুরু করবেন। শুক্রবার পবিত্র দিন কাফির মোকাবিলার জন্য ভারি যুতসই। নবাবের প্ল্যান ছিল মারাঠা পরিখা পার হয়ে যাবেন হেভি আর্টিলারি নিয়ে, কিন্তু উমিচাঁদের জমাদার জগন্নাথ সিং মোক্ষম খবর দিল যে পরিখা পুরো দূর্গ ঘিরে নেই, পূবদিক থেকে পরিখা পার হওয়া ছাড়াই দূর্গ অ্যাটাক সম্ভব। ১৭ জুন আস্ত দিন গেল নবাবের পুরো বাহিনী কোলকাতায় জড়ো করতে। এদিকে শহরে চলছিল সমানে লুটতরাজ। তারা দূর্গের উত্তরে বড় বাজারে আগুন ধরিয়ে দিল, সাথে পুড়লো নেটিভ পল্লী।
প্রথম হামলা এলো উত্তর আউটপোস্টে, কিন্তু তা শুধু বিভ্রান্ত করার জন্য। পূবদিক দিয়ে হল আসল আক্রমণ। দুই পক্ষে চলে তুমুল গোলাগুলি, নবাবেরই ক্ষয়ক্ষতি হল বেশি। কিন্তু তার সিপাই ও ছিল অগুনতি। নবাবের সরে পড়ার কোন লক্ষন দেখা গেল না। সন্ধ্যেবেলায় দেখা গেল ঘটনা এইঃ ইংরেজ যে দক্ষিন আর পূর্ব দিক শক্তভাবে অন্তত কিছুদিন ধরে রাখবে ভেবেছিল তা প্রায় হাতের বাইরে অলরেডি। পরের লাইন অফ ডিফেন্স দূর্গের চারপাশে নানাবিধ পাকা দালান। সেগুলোয় সশস্ত্র প্রহরা বসানো হল। পাইক লস্কর আর কুলির দল ততক্ষনে পগারপার। মহিলা ও শিশুদের আগেই নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই চাকর বাকর পাইক পেয়াদা কুলিবিহীন দূর্গে রইল কেবল অফিসার আর সিপাই। এমনকি রান্না করার লোকও গিয়েছে ভেগে, তাই খাবার দাবারের বারোটা বাজল। গুদামভর্তি চাউল ডাউল আটা ময়দা সুজি আন্ডা বেকন থাকা সত্ত্বেও লোকে মোটামুটি না খেয়েই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাধ্য হল।
(চলবে)
স্যামুয়েল চার্লস হিল লিখিত Bengal in 1756-1757; a selection of public and private papers dealing with the affairs of the British in Bengal during the reign of Siraj-uddaula অবলম্বনে। অনুদিত অংশের সকল মতামত লিখকের নিজস্ব।
মন্তব্য
আজকে ব্লগ পড়ার প্ল্যান ছিলনা। সচলায়তনে একটু স্কিম থ্রু করার মানসে লগইন করতেই এটা চোখে পড়ে গেল। আর যায় কোথায়- এক নি:শ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। দারুন জমছে, যেমনটা আশা করছিলাম। তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি পোস্ট ছাড়ুন।
থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু।
..................................................................
#Banshibir.
নেটে বসলে সচলে আসি, ঢুঁ নয় থাকতেই আসি। নতুন কিছু পড়ার না পেলে সচলের ১৮৫০ পৃষ্ঠা থেকেই পড়া শুরু করি। সকালেও এসেছিলাম, এখন আবার এসেই দেখি সিরাজ ভাই হাজির, সৌজন্যে আপনি। আমি কিন্তু সত্যি সত্যি মগ ভরে চা করেছি, কিন্তু মগ ফুরানোর আগেই এই পর্ব শেষ , এদিকে চা ও ঠান্ডা হয়ে গেলো।
প্রবল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম আগামী পর্বের জন্য।
অফ টপিকঃ আজকের লেখাটার মধ্যে গাম্ভীর্য বেশি। আপনাকেও খুব সিরিয়াস মনে হলো।
মানী লোকের মান রাখতে হয়, সিরাজ নিয়ে রঙ তামশা করলে চলবে? সিরিয়াস টপিক সিরিয়াস পুস্ট
আমার চা কই?
..................................................................
#Banshibir.
পোস্ট রেডি করেন আর আমি কফি হিটার দিয়ে পানি গরম করি পোস্ট আসা মাত্র টি-ব্যাগ পানিতে দিব, চিনি দিব, (আপনি কি চিনি কম পছন্দ করেন? ) একটু লেবু। ব্যাস, লেবু চা তৈরী
পোস্টাইলে পরে চা দিবেন? আপনের তো ভাই পাথরের দিল দেখতেসি। আমি আরো ভাবলাম বিয়াপক দুর্যোগের ঘনঘটা নিয়া বই ঘাঁটতে ঘাঁটতে চা খাব
হিঃ হিঃ হিঃ। অনেক ধন্যবাদ চা অফার করার জন্য। পরের পর্ব আসতে আসতে উইকেন্ড হয়ে যাবে। তার আগে এক পর্ব দেশে বিদেশে নামাবো ভাবতেসি।
..................................................................
#Banshibir.
হবেনা ? গত পর্বে সিরাজভক্তের কোপানলে পড়েছিলো যে!
..................................................................
#Banshibir.
খুব মন দিয়ে ফলো করছি লেখাটা, দারুন লাগছে
ধন্যবাদ জানবেন।
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ। তবে বড় পোস্ট এর আশায় চা কফি নিয়ে জুত করে বসছিলাম, কয়েক চুমুক দিতে না দিতেই পোস্ট শেষ। হয়তো পোস্ট বড়ই ছিলো ঝরঝরে লেখার কারণে দ্রুত পড়ে ফেলেছি।
দাঁড়ান পরের পোস্ট এমন লম্বা করব যে চা না পড়তে পড়তে ভাত খাওয়ার টাইম হয়ে যাবে
..................................................................
#Banshibir.
@পীরসাব- পোস্ট ছোট কেন?? জাতি জানতে চায় । শুরু না হইতেই শেষ
বিয়াপক গবেষণার ফসল, আর কত বড় হইব মিয়া?
..................................................................
#Banshibir.
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
আপনি সত্যিই বস মানুষ। ইতিহাস এভাবেও বলা যায়
ডাকঘর | ছবিঘর
ইতিহাস একটি অসাধারন বিষয় কি বলেন?
..................................................................
#Banshibir.
প্রথম লাইনটা যা হয়েছে না, পুরাই
facebook
..................................................................
#Banshibir.
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
এই লাইনদুটিতে দুঃখ নাই, রামছাগল রাজা নবাব তো কতই দেখি। এর পরের লাইনটা হল দুঃখের, যে সিরাজের টার্গেট সঠিক ছিল। এই মূর্খের বদলে একটি বুদ্ধিমান নবাবের শাসন থাকলে ইংরেজ এত সহজে পার পেতনা। ক্লাইভ একটি নিচুস্তরের শয়তান, বুদ্ধির খেলায় তাকে হারিয়ে দেয়া অসম্ভব ছিলনা। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধি হিসেবে পেলাম অপরিপক্ক সিরাজকে।
..................................................................
#Banshibir.
একদম মনের কথা কইছো মিঞা।
সিরাজ না হয়ে যোগ্য কেউ বসলে এমনটি হতো না। মীর কাশিম চেষ্টা করছিল কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল।
ভাবতেই কষ্ট লাগে।
এই স্টুপিডগুলার জন্য দুশো বছর ব্রিটিশদের বুট পালিশ করতে হইছে।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
সিরাজ বা তার চৌদ্দপুরুষ বা আর কেউই কি তখন আমাদের/বাঙালির/সাধারন মানুষের প্রতিনিধি ছিল আসলে? সিরাজ জিতে গেলেই কি আমাদের মহা কোন উপকার হত? ধরেন, এই উপমহাদেশে যদি ইংরেজ বা আর কোন ইউরোপীয় শাসকের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠিত না হত, তাহলে আমাদের ইতিহাস এবং বর্তমানের চেহারাটা কেমন হত? তুলনামূলকভাবে ভাল কিছু হত, নাকি আমরা আজও সেই প্রায় মধ্যযুগীয় অন্ধকারে বাস করতাম আর চতুর্দিক থেকে মগ-বর্গী-মারাঠা-ফিরিঙ্গি-হার্মাদ দস্যু-গণখুনি আর লুটেরা-ধর্ষক-নিপিড়ক নওয়াবরাজের দৌড়ানি খেয়ে প্রতিমুহূর্তে থরহরিকম্প হয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম আর 'বর্গী এল দেশে/খাজনা দিব কিসে' বলে ছড়া কাটতাম?
থাকত কি আমাদের এই 'জাতিরাষ্ট্র', গনতন্ত্র, সেকুলারিজম, ব্যক্তিস্বাধীনতা, মানবাধিকার, নারীর সমানাধিকার, 'আইনের শাসন'-এর ধারনা, ইতিহাসচেতনা, আধুনিক শিক্ষা-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-সাহিত্য-চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি, যার বেশির ভাগই এই উপমহাদেশের মানুষ ইউরোপীয়দের কাছ থেকে পেয়েছে?
রামমোহন, বিদ্যাসাগর, ডিরোজিও ও 'বেঙ্গল রেনেসাঁ'-র অন্যন্য নায়করা, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশ্চন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা, গান্ধী, মতিলাল, জওয়াহারলাল, জিন্নাহ, মুজিব, কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, একের এক মিছিলের মত অজস্র নাম উঠে আসে যারা ব্রিটিশের শিক্ষায় শিক্ষিত এবং ইউরোপীয় রেনেসাঁ ও শিল্পবিপ্লবের ভৌগলিক ভাবে দূরবর্তী হলেও সরাসরি ফসল, যারা আমাদের ইতিহাসকে বর্তমানের চেহারা দিয়েছেন - তারা কোথায় থাকতেন বা কি হতেন নবাবি অসভ্যতার বাতাবরণে? তারা কি তারা হতেন, নাকি থেকে যেতেন মধ্যযূগীয় অন্ধকারে অদৃশ্য? আর এইরকম সব পূর্বসুরীদের বাদ দিয়ে নবাবি-বর্গী-হার্মাদদের অশিক্ষিত ভিশনহীণ লুঠ-খুন-শরাব-ধর্ষন-হারেম-বাইজি-মাস্তি-মৌজের সংস্কৃতিতে কোন পূর্বসুরী পেতাম আমরা আর তাদের কাছ থেকে পাথেয় হিসেবে কি শিক্ষা আর উত্তরাধিকারই বা পেতাম আমরা?
নিচে রাজাবাবু বললেন,
আমার প্রশ্ন হল, ব্রিটিশের বদলে ২০০ বছর ধরে ঐ স্টুপিড বা তাদের ধূর্ত হারামি ভাই-বেরাদারদের বুট পালিশ করলেই বা আমাদের কি মোক্ষ লাভ হত?
আমি-আপনি-আমরা আজ কোথায়-কেমন থাকতাম?
কারো সমালোচনা বা কারো সাথে দ্বিমত নয়, জাস্ট কৌতুহল!
****************************************
এখানে কিছু শিশুসুলভ বক্তব্য দেবার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র ও সমাজবিজ্ঞানে আমার তেমন পড়াশুনা নাই, তাই তলিয়ে দেখা সম্ভব না। সহজে আমি যা ভাবি, শিল্প সাহিত্য বিজ্ঞান ইত্যাদি ইয়োরোপীয়রা বের করেছে আর আমরা করিনি তার কারন আমাদের ঘরে চাল ছিলনা। ইংরেজ যখন আমাদের দেশের শেষ কপর্দক নিজের পকেটে ভরে আমাদের না খাইয়ে রেখেছে, তখন জীবনসংগ্রামেই আমরা ব্যস্ত থেকেছি। পরদিন সকালের খাবার নিয়ে চিন্তা থাকে যখন তখন শিল্প বিজ্ঞান ইত্যাদি নিয়ে মানুষের ভাবনা থাকার কথা নয়।
হাইপোথেটিক্যালি, ধরুন ইংরেজ কোন পয়সাকড়ি নেয়নি গত দুইশ বছর। নবাব মহারাজারা বড়ই আনন্দে ছিল এই কয় দিন। আর সাধারন মানুষ জাঁতার তলে। এখন দুই হাজার বারো সালে এসে, যদি ধরেও নেই গত দুইশ বছরে আমাদের কোনই অর্জন নেই, তখনও আমরা শুধুমাত্র টাকা দেখিয়ে সারা বিশ্বের মাথা কিনে নিতে পারতাম আর দেশ ধাঁই করে এগিয়ে যেত।
যেরকম বলেছিলাম, নিতান্তই শিশুসুলভ আমার চিন্তা। কিন্তু আমার সবসময়ই মনে হয়েছে আমাদের সব দুঃখকষ্টের মূল কারন আমাদের পয়সা নাই। আর পয়সা না থাকার কারন ঔপনিবেশিকতা।
..................................................................
#Banshibir.
আর্মানী সওদাগর খাজা ওয়াজিদ।
এই লোকের আসল নাম কি?
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
আরমেনিয়ানদের তো খৃষ্টান হবার কথা, এদের আবার নিজস্ব ভাষাও আছে। কিন্তু ব্যাবসার খাতিরে এরা আরবী, ফার্সি, তুর্কি নাম ব্যাবহার করত। খাজা ওয়াজিদ সম্বন্ধে এখানে ৫১ পাতায় দেখতে পারেন।
হুমম। সেটাই ভাবছিলাম।
আর্মেনিয়া তখন আবার উসমানিয়াদের অধীনে ছিল।
লিংকের জন্য ধন্যবাদ।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
ওসমানি প্য়াদানি খেয়ে তারা শাহ আব্বাস (নামে মাত্র, আসলে ক্ষমতায় তখন আরেকজন "মুরশিদ কুলি খান") এর দেশে চলে আসে। আব্বাস তাদের ইস্পাহানের 'নয়া জুলফায়' সেটিং করে দেয়। এর পর থেকে কিন্তু খোদ আরমেনিয়ার বদলে, ইস্পাহান হয়ে ওঠে তাদের এইচ কিউ।
যেই ইংরেজদের বোংগা বোংগা দেবার চেষ্টা করেছে তাকে সালাম, হোক সে কমবুদ্ধির সিরাজ।
ইংরেজ = বোংগা বোংগা
..................................................................
#Banshibir.
বুড়া আঙ্গুল উপ্রে।
আঙুল ব্যথা হয়া যাইতেসে নামান
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন