হতভাগ্য অপদার্থ

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৫/২০১২ - ৯:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শাজাহান বাদশা আর মমতাজ মহলের দ্বিতীয় পুত্র শা সুজা ছিলেন একটি অপদার্থ, জীবনে তিনি তেমন কিছুই করে যেতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে যে পন্থায় তার ও তার পরিবারের বাত্তি নিভিয়ে দেয়া হয় তা এমনকি শয়তানের পয়গম্বর আওরঙ্গজেবেরও পাওনা ছিলনা। জেনারেল মীর জুমলার ধাওয়া খেয়ে পলাতক রাজপুত্র সুজা পরিবারসহ গিয়ে ওঠেন আরাকান রাজার আশ্রয়ে। কথা ছিল রাজা মক্কাগামী জাহাজের ব্যবস্থা করে দেবেন, বদলে সুজা দিবেন মণি মাণিক্য। কেউ কথা রাখেনি।

শা সুজা লোকটির বুদ্ধি বা সাহস ছিলনা একথা বলা অতি অন্যায্য ব্যাপার। সৈনিক হিসেবে তিনি উঁচুপদেরই ছিলেন, তরুণ বয়সে অনেক যুদ্ধে বীরত্বের সাথে তার জয় হয়। তার বুদ্ধিসুদ্ধিও মন্দ ছিলনা, বড়ভাই দারার মতই তিনি শিল্পসাহিত্য ইত্যাদির কদর করতেন, বিশেষতঃ পারস্যের শিল্পসাহিত্য। শিয়াদের বিরাট ফ্যান ছিলেন কিনা। আওরঙ্গজেব ছড়িয়েছিলেন যে সুজা শিয়া হয়ে গেছে ইত্যাদি, কিন্তু সে অভিযোগ সম্ভবতঃ সঠিক নয়। সুজা শিয়াদের অত্যন্ত ভাল পেতেন, তার দুইটি বউই শিয়া ছিল, পারস্য ছিল তার মুগ্ধতার উৎস। ভারতবর্ষের গদীতে উঠার জন্য পারস্যের সাহায্যও তিনি কামনা করেছিলেন নিশ্চয়। কিন্তু তিনি অফিশিয়ালি শিয়া ছিলেন কিনা তা নিয়ে তর্কের অবকাশ আছে। সে যাই হোক, বীরত্ব শিল্পানুরাগ ইত্যাদি ভাল ভাল গুণ মাঠে মারা গিয়েছিল তার সুরা আর সুন্দরীর প্রতি অন্ধ আকর্ষনের জন্য। খুব জরুরী রাজকার্যের মাঝখানে তিনি হঠাত সব থামিয়ে হেরেমে নৃত্যগীতের আসর বসাতেন, মন্ত্রী মিনিস্টার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাত। সময় যেত সাধন হতনা।

তিনি যখন বাংলার সুবাদার ছিলেন তখন দেশ ভালই ছিল। উত্তর বর্ডারে কুচবিহার রাজ্য সহ কিছু কিছু এলাকায় হালকা ঝামেলা ছাড়া মোটের উপর কোন বড় যুদ্ধবিগ্রহ চলেনি, এলাকার জমিদারেরা স্বয়ং বাদশার ছেলেকে শাসক হিসেবে পেয়ে অভিভূতই ছিল। রাজমহলে স্থানান্তরের আগে তার রাজধানী ছিল ঢাকায়, চকবাজারের বড় কাটরা সুজা থাকবার জন্যেই তৈরি হয়। পরে অবশ্য তিনি সেখানে থাকেননি, রাজধানী স্থানান্তর হয় রাজমহল। তখন বড় কাটরা বিবিধ ধনী সওদাগরের আবাসিক হোটেলে পরিণত হয়। কাটরা শব্দটি সম্ভবত আরবি, এর অর্থ খিলানওলা বাড়ি। ফার্সি সাহিত্যে কাটরা কথাটি সরাইখানা অর্থেও ব্যবহৃত হয়। ঢাকায় সুজার আরেক কীর্তি শিয়া মাজার হুসেনী দালান। কারবালার যুদ্ধে নিহত শিয়াদের মহান ইমাম হুসেনের স্মরণে এই নামকরণ।

১৬৫৭ সালে শরতের মৃদুমন্দ বাতাসে ভেসে আসে জোর গুজব যে শাজাহান বাদশা খরচ হয়ে গিয়েছেন। বড়ভাই দারা কিন্তু এই গুজব অস্বীকার করেন, কিন্তু লোকের মনে বদ্ধমূল ধারণা হয় যে তিনি আসলে গুটি পাকাচ্ছেন। নানান ঢাকবাদ্য পিটিয়ে সুজা বাংলা ছেড়ে দিল্লীর রাস্তা ধরলেন গদীলাভের উদ্দেশ্যে, সেজভাই আওরঙ্গজেবেরও সেদিকেই নজর ছিল। অনেক অনেক যুদ্ধের পরে বিজয়ী হিসেবে খাড়া হন আওরঙ্গজেব। দারাকে ধরে দিল্লীর রাস্তায় প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়, আর সুজাকে ধাওয়া করেন আওরঙ্গজেবের এক নম্বর জেনারেল মীর জুমলা। পূবদিক ফিরে সুজা দেন দৌড়। ঢাকা হয়ে চিটাগং এর পথ ধরেন তিনি ও তার পরিবার।

এইখানে আমাদের গল্পের শুরু। আসুন পড়ি সুজার ফেরারী দিনের কাহিনী। যদুনাথ সরকারের হিস্ট্রি অফ আওরঙ্গজেব অবলম্বনে।

…......................................................................................................

১২ এপ্রিল সুজা ঢাকায় পৌঁছান। বিত্ত আর নামডাক হারিয়ে তিনি তখন নিঃস্ব। পরিচিত জমিদারের দল হাওয়া বুঝে তার বিপক্ষে চলে গেল, তাদের মোকাবিলা করার কোন শক্তিই তার ছিলনা। ধাওয়া করে আসছে মীর জুমলা। আরাকানের দস্যু রাজাকে খবর পাঠানো হয়েছিল, তখনো কোন উত্তর আসেনি। অধৈর্য্য হয়ে উঠলেন সুজা, ৬ মে পরিচিত শহর ছেড়ে অল্পকিছু অনুসারী আর পরিবার চাকরনফর নিয়ে ঢাকা থেকে ৮ মাইল দূরে ধাপায় রাত কাটালেন। পরদিন গেলেন শ্রীপুর। প্রতিদিনই তাকে ছেড়ে যাচ্ছিল একের পর এক সিপাই আর নৌকাওলা, এমনকি কিছু অত্যন্ত অনুগত লোকেও লম্বা দেয়। ৮ তারিখ শ্রীপুর ছেড়ে যাবার কিছু পরেই আরাকানের রাজার পক্ষে ৫১ মগ আর ফিরিঙ্গি জাইলা নৌকা পাঠান চাটগাঁ এর গভর্নর।

পরদিন যাত্রা শুরু হয় লক্ষীপুর পরগণা থেকে, ভালুয়া দূর্গের মাইল আটেক আগে যাত্রাবিরতি হয়। দূর্গের প্রধানকে ডাকেন সুজা, তারপরে ফট করে বন্দী করেন। দূর্গের ভিতর লোক পাঠানো হয় চিঠি লিখে যেন তারা সুজার কাছে দূর্গ সমর্পণ করে। তারা উলটে দূতকে বন্দী করে ফেলল।

১১ মে চাটগাঁয়ের এক মগ জেনারেল এসে হাজির হয় আরো তিনটে সামরিক জাহাজ নিয়ে। ফতুর সুজার দূর্গ আক্রমণের পরিকল্পনা শুনে মহা বিরক্ত হয় সে, আর খোলাখুলি ভাবেই বলে শোন হে রাজপুত্তুর, আমাদের রাজা বলে পাঠিয়েছেন যেন আমরা তোমাকে সাহায্য করি যদি তুমি কোন দূর্গ দখলের ক্ষমতা রাখ। তুমি তো দেখি ভালুয়া দূর্গই আমাদের সাহায্য ছাড়া নিতে পারছোনা দেখি। আজাইরা বয়তল কোথাকার। ওইসব বাদ দিয়ে চটপট জাহাজে উঠ, তোমাকে আরাকান পৌঁছে দেই। যত্তসব ঝামেলা।

ভগ্নমনোরথ সুজা চুপচাপ জাহাজে উঠলেন।

পরিবার পরিজন চাকরনফরের মধ্যে শুরু হল ব্যাপক ফিসফিস। পূববাংলার নদী বেয়ে চাটগাঁও এর দস্যুকাহিনী কে না জানে। আস্তা নোয়াখালি বাখরগঞ্জ জিলাই লোকশূণ্য হয়ে পড়েছিল এদের যন্ত্রনায়। এদের দুঃসাহসিক আক্রমণ, ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা, ছোটলোকের মতন বেশভুষা, জংলী আচরন, জাতপাতধর্মহীনতা আর নোংরা অপরিষ্কার পশু জবাই করে খাওয়ার গল্প ইত্যাদি সারা বাংলার হিন্দু মুসলমানের আতংকের বস্তু ছিল।

তাহলে কি সুজা ভুল করছেন? তার কিইবা করার ছিল, যত নিষ্ঠুরই হোক আওরঙ্গজেবের তুলনায় তো কিছুই না। পিতা ও অন্য দুই ভ্রাতার করুণ পরিণতির কথা ভেবে সুজা আত্মসমর্পনের আইডিয়া বাদ দেন। দয়ার সাগর পিতা শাজাহান বুড়ো বয়সে নিজেরই প্রাসাদে বন্দী। উদার ও মার্জিত দারাকে শিকলবন্দী করে দিল্লীর রাস্তায় চক্কর দেয়া হয়, আর ফালতু বিচারের প্রহসনের পর দাসেরা তাকে হত্যা করে। মহান সাহসী মুরাদ বখশ তার দরবেশ ভাই আওরঙ্গজেবের বন্দী। সুদর্শন সুলেমান পর্বত আর তুষারের রাজ্যে ফেরারী।

না, এই পরিণতির চেয়ে শ্রেয় দূর দেশে জংলীদের হাতে মরণ। খুদা হাফেজ হিন্দুস্তান, সকল ধন দৌলত ঐশ্বর্যের দেশ তুমি আওরঙ্গজেবেরই হলে তাহলে।

বিশ বছর যে দেশ শাসন করেছেন আর তেতাল্লিশ বছর যেখানে কাটিয়েছেন, সেই বাংলা ছেড়ে সুজা আরাকান রওনা দেন ১২ মে ১৬৬০ সালে। সাথে পরিবার আর জনা চল্লিশেক অনুসারী। তার পরের কাহিনী রহস্যে ঘেরা। আমাল - ই - সালিহের লিখক ১৬৭১ সালে লিখে যান, “আরাকানে সুজার যে কি হল কিছুই জানা যায় না। সে যে কোন দেশে কোন খানে আছে, বেঁচে আছে না মারা গেছে খুদাই মালুম।” ষাট বছর পর, কাফি খাঁ সায়েবও কিছু জানতে পারেননি। তিনি বলেন, “আরাকানে সুজার কোন নামগন্ধ নাই। সে যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে, (ভারতে) কেউই তার সন্ধান পায়নি।” নানান কান ঘুরে আওরঙ্গজেবের কানেও এরকম গুজব আসতে থাকে। কেউ বলে সুজাকে পারস্যে দেখা গেছে, আবার শোনা যায় ভারতের কোন কোণায় সুজার ছেলে বুলন্দ আখতারকে হেঁটে বেড়াচ্ছে।

এইসব পাতলা খবরে বিরক্ত আওরঙ্গজেব বাংলার নয়া সুবাদার মীর জুমলাকে আসাম দখলের পর আরাকান যাত্রার নির্দেশ দেন, হুকুম হয় সুজা ও তার পরিবারকে পাকড়ে নিয়ে আসার। মীর জুমলার উত্তরাধিকারী শায়েস্তা খাঁ যখন ১৬৬৬ সালে চাটগাঁও মগদের থেকে উদ্ধার করেন তখনও সুজার খবর নাই। আরাকানে তখন ইয়োরোপীয় ব্যবসাদারদের অবাধ আনাগোনা, সুতরাং তারাই একমাত্র কিছু খবর জানতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।

এরকম একটি সূত্রে আমরা জানতে পাই, “আরাকানের অনেক মোগল পাঠান অধিবাসী সুজার প্রতি আনুগত্য দেখায়, আর তাদের সাথে নিয়ে রাজার বিরুদ্ধে ক্যু করার ফন্দী আঁটেন সুজা। এরপরে তার প্ল্যান ছিল আবার বাংলা অধিকার।” আরাকানের রাজা এই খবর জেনে যান, আর “সুজাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। অল্প কিছু অনুসারী নিয়ে সুজা জঙ্গলে পালান, পেছনে ধাওয়া করে মগের দল। তারা কুপিয়ে ফালাফালা করে তাকে হত্যা করে।”

এই তথ্যের উৎস ওলন্দাজ বণিক ইয়ান টাক। ওলন্দাজ দপ্তরী নথিতে উল্লেখ আছে যে, ৭ ফেব্রুয়ারী ১৬৬১ সালে যখন আরাকানিরা সুজার বাড়ি ঘেরাও করে আর আগুন ধরিয়ে দেয়, তখন সুজা পরিবার নিয়ে ত্রিপুরার দিকে পালান। কিন্তু সম্ভবতঃ শেষ রক্ষা হয়নি। ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে, যদিও নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যায়না তবে তিনি নিহত হয়েছিলেন ঠিকই। জঙ্গলে পালানোর গুজব সম্ভবতঃ ছড়ায় তার অনুসারীর দল।

…...............................................................................................................

এই হল যদুনাথ সরকারের জবানে সুজার কাহিনী। তিনি যেরকমটি বলেছিলেন, পুরো ব্যাপারটিই ধোঁয়াশায় ঘেরা। কি যে হল ঠিক করে বুঝা মুস্কিল।

আরেকটি বইয়ে উঁকি মারি আসেন। বইয়ের নাম বার্মা - পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট, লিখক অ্যালবার্ট ফিচ। তিনি বলছেনঃ

“...আওরঙ্গজেবের সাথে পরাজয়ের পর তিনি পিছিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। সাগরের কাছেই ঢাকা বলা চলে, কিন্তু সুজার জাহাজ ছিলনা। কোথায় যে যাবেন দিশা না পেয়ে তিনি পত্র লিখেন আরাকান রাজার প্রতি যেন তাকে একটি জাহাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ঐতে চেপে তিনি মক্কা যাওয়ার ধান্দা করছিলেন। নানান পর্তুগীজ আধা ফিরিঙ্গীভর্তি জাহাজ গেল সুজাকে উদ্ধারের জন্য। আরাকানের রাজা তাকে আদর করেই বরণ করলেন, আর মোগল রাজপুত্রের প্রয়োজনীয় মালসামানের আয়োজন করা হল।

সমস্যা হল, জাহাজের আর খবর নাই। দিন যায়। অস্থির হয়ে পড়েন সুজা। তার হাতে তখনও ধনজহরত যথেষ্ঠ, জাহাজের দাম তিনি মিটিয়ে দিতে সক্ষম। আবার ঐ জহরতের দিকেই ছিল আরাকান রাজার নজর।

বলা হয়ে থাকে রাজামশাই আওরঙ্গজেবের কাছ থেকে বিরাট অংকের ঘুষ পেয়েছিলেন যেন সুজাকে হস্তান্তর করা হয়। সেজন্যই নাকি তিনি দেরি করছিলেন। সুজা লোক পাঠাল জাহাজের খোঁজে, রাজা উলটে সুজাকে তলব করলেন। প্রাসাদে যেতে সুজার সমস্যা ছিল, তার ধারণা ছিল রাজা তাকে পত্রপাঠ গারদে ঢুকাবে। সুজা তার বড় ছেলেকে পাঠালেন। ছেলে বলল সুজা অত্যাধিক অসুস্থ, তাই আসতে পারলেননা। এই তার নজরানা।

আরাকানরাজ আরও অস্থির হয়ে পড়ল, কয়দিন পরে সে খবর পাঠাল সুজার একটি মেয়ের সাথে তার শাদীর খায়েস। সুজার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল, পাগলে বলে কি। তৈমুরের রাজবংশের মেয়ের সাথে বিয়ে আরাকানের মগ রাজার? আস্ত বংশ তো রসাতলে গেল। না করে দেওয়া হল। তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে আরাকানরাজ।

এইবার ফিকির খুঁজা শুরু করে সুজা। বিদ্রোহ করতে হবে। আরাকানের মুসলমানদের একত্র করার চেষ্টা করলেন তিনি, সাথে ছিল বাংলা থেকে আনা অনুসারীর দল। ঐ নিয়ে প্ল্যান হল তলোয়ার নিয়ে রাজার কল্লা ঘ্যাচাং করা হবে। অসম্ভব উন্নাসিক প্ল্যান, কিন্তু ব্যাপার হল এরকম প্ল্যান করে আগেও সফল হয়েছে কিছু খুচরা পর্তুগীজ হার্মাদ।

দুঃখের বিষয় প্ল্যানের আগের দিন সব ফাঁস হয়ে যায়। পালানোর চেষ্টা করেন সুজা, কিন্তু ঘন জঙ্গলে বেশিদূর তিনি যেতে পারেননি। বলা হয়ে থাকে তাকে ঐখানেই হত্যা করা হয়। সুজার কোন খবর আর কখন জানা যায়নি। তার পরিবারকে পাকড়ে ফিরত আনা হয়, সোজা গারদে পোরা হয় তাদের। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বড় মেয়েকে শাদী করে খায়েস পূরন করেন রাজা, শোনা যায় রাজমাতারও সুজার বড় ছেলের দিকে নজর ছিল।

সুজার ছেলের তাতে নিশ্চিতই আপত্তি ছিল, বরং সেও বাপের মত বিদ্রোহ ঘটানোর পাঁয়তারা শুরু করে। এই খবরও ফাঁস হয়ে যায়। রাজা অসম্ভব ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, আস্ত পরিবার খতম করার হুকুম জারি হয়। এমনকি সদ্যবিবাহিত বউটিকেও, যে কিনা গর্ভবতী ছিল তখন। সুজার ছেলেদের কল্লা ভোঁতা কুড়াল দিয়ে নামিয়ে দেয়া হয়, অন্ধকার খুপরিতে আটকে না খাইয়ে মারা হয় সুজার মেয়েদের।”

এই হল ফিচসায়েবের বর্ণনা। তিনিও শোনা কথা বলছেন, তার গল্পের উৎস বার্নিয়ের এর লিখা বই। ফ্রাঁসোয়া বার্নিয়ের ছিলেন ফরাসী চিকিৎসক ও পর্যটক, ঘুরতে ঘুরতে ভারতে আসার পর তিনি আওরঙ্গজেবের ডাক্তার হিসেবে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন। বার্নিয়েরের গল্প আরেকদিন। হতভাগ্য সুজার গল্প আজ এখানেই শেষ।

…..............................................................................................................................
তথ্যসূত্রঃ
History of Aurangzib: Based on Original Sources, যদুনাথ সরকার
Burma Past and Present, অ্যালবার্ট ফিচ
The river of Lost Footsteps: A Personal History of Burma, থান মিন ইয়ু
The Living Age... Volume 173, ইলিয়াকিম লিটল, রবার্ট লিটল, মেকিং অফ আমেরিকা প্রজেক্ট
Advanced Study in the History of Modern India...Volume 2, জি এস চাবরা
উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া।


মন্তব্য

Dohar এর ছবি

সত্যপীর মানে কি ভাই? সত্য যে পীর?? কৌতুহল থেকে জানতে চাওয়া, লেখার সাথে কুনো সম্পর্ক নাই।

সত্যপীর এর ছবি

সত্যপীর মুজতবা আলীর ছদ্মনাম।

..................................................................
#Banshibir.

নীড় সন্ধানী এর ছবি

সুজার পরিণতি সম্পর্কে আলবার্ট ফিচের কাছাকাছি একটা বর্ণনা আরো একটা সুত্রে পেয়েছিলাম। মক্কা যাবার জন্য আরাকানরাজ নৌকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং তাকে একটা নৌকাও নাকি দিয়েছিলেন। সেই নৌকা যাত্রার শুরুতে ডুবে যায় বা ডুবিয়ে দেয়া হয় আরাকানরাজের ষড়যন্ত্রে। সূজাকন্যাকে বিয়ে করার আরাকানরাজের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করার প্রতিশোধ। পরে মেয়েটাকে জোর করে বিয়ে করে এবং মেয়েটা বাবার হত্যার প্রতিশোধ নিতে আরকানরাজকে খুন করতে গিয়ে নিজেও খুন হয়। এটা নিয়ে কক্সবাজারে একটা জনপ্রিয় লোক গীতিকা প্রচলিত আছে, নামটা মনে পড়ছে না এই মুহুর্তে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

সুজার শেষ দিনগুলি নিয়ে কতরকম গল্প যে আছে! তবে সুজার মেয়ের খুন করার চেষ্টার কথা শুনিনি, খুব ইন্টারেস্টিং তথ্য দিলেন। লোকগীতির ব্যাপারটিও জানতে ইচ্ছে করছে। পরে মনে পড়লে জানিয়েন, আর সহসচল কারো জানা থাকলে আওয়াজ দিয়েন।

..................................................................
#Banshibir.

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

গত বছর এই গীতিকাকে ভিত্তি করে একটি নাটক হয়েছিল হাসি
(এইটা আমার ৫ম প্রচেষ্টা মন্তব্য করার, এর আগে যতবার মন্তব্য লিখি, সাবমিশন করতে দিলেই ভেরিফিকেশন করতে বলে চেক বক্স থেকে কিন্তু চেকবক্স কোথাও দেখায় না চিন্তিত । )

নিলয় নন্দী এর ছবি

আমি মন্তব্যে ছবি যুক্ত করার বিষয়টার আগা-মাথা বুঝতে পারছি না।
ছবির ইউআরএল দৈর্ঘ-প্রস্থ এই সব কী?
আছেন কোন ভাই-বেরাদর, জায়গায় খাড়াইয়া আওয়াজ দেন।

স্যাম এর ছবি

আমারো---

জাতিস্মর এর ছবি

পরের পর্বের অপেক্ষায় ।
যথারীতি সেইরকম।

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সত্যপীর এর ছবি

ইয়ে, পরের পর্ব তো নাই ইয়ে, মানে... এইটা সিরিজ না। এইখানেই খতম।

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

অবশেষে আমি মন্তব্য করতে পারিলাম। সেই সকাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম মন্তব্য করতে, কিন্তু পারছিলাম না।

শাহজাদা সুজার কথা আগেও পড়েছি, তার করুন পরিনতির কথা, তার মেয়েদের হত্যা করা এইসব; পড়ে মন খারাপ হয়েছিল। মানুষ যেমনই হোকনা কেন, পড়ে মন খারাপ হয়েছিল। আবার যখন সুজার নৃশংসতার কথা পড়েছি, তীব্র ধিক্কার দিয়েছি তাকে।
ধন্যবাদ আপনাকে। হাসি তবে লেখা অনেক ছোট, তৃষ্ণা মেটেনি। মন খারাপ

সত্যপীর এর ছবি

পোস্ট ছোট নাকি? আমি তো ভাবলাম অনেক লিখে ফেলসি চিন্তিত

ধরেছেন ঠিকই, সুজা লোকটির জন্য মন খারাপ করার কিছু নাই।

..................................................................
#Banshibir.

নিলয় নন্দী এর ছবি

সোজাসুজি বলতে গেলে সুজার জীবনটা তেমন সোজা ছিল না।
বেচারা!

লেখায় চলুক

সত্যপীর এর ছবি

হ্যাঁ সুজা লোকটিই বাঁকা ছিলেন।

..................................................................
#Banshibir.

ফারহানা আহমেদ এর ছবি

রবীন্দ্রনাথের 'দালিয়া' নামের একটা ছোটগল্প আছে, সেখানে কিন্তু আরাকান রাজের মেয়ের সাথে শাহ সুজার মেয়ের মধুর মিলন দেখানো হয়েছে।

সত্যপীর এর ছবি

বলেন কি? মধুর মিলন? চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

ব্রুনো এর ছবি

হ, এই দেখেন। রবি বুড়ো আসলে এতো চমৎকার প্লট পেয়ে আর না লিখে থাকতে পারেন নি দেঁতো হাসি

ধুসর জলছবি এর ছবি

রবিগুরুর এই গল্প পড়ে তো আমার ধারনা ছিল আরাকান রাজা না জানি কত ভাল আর রোমান্টিক ছিল। এখন তো দেখছি ভয়ানক। মন খারাপ

সত্যপীর এর ছবি

পড়লাম। মধুর মিলনই বটে। পুরো গল্পজুড়ে ভারি জটিল প্রেমের প্যাঁচঘোঁচ, কার নাম যে কি আর কে যে কোথায় কাকে দেখে প্রেমে পড়ে কার পিতার প্রতিশোধ নিতে কোথায় ছুরি বসানোর ভাও করছে তার হিসেব রাখাই এক সমস্যা।

জুলিখা অগ্রসর হইয়া রাজার নিকটবর্তী হইয়া দেখিল , রাজা নিঃশব্দে সকৌতুকে হাসিতেছেন ।

বছরখানেক পরে যখন একে না খাইয়ে মারার জন্য অন্ধকূপে আটকানো হয় আর তার ভাইগুলোর মাথা দাও দিয়ে নামিয়ে দেয়া হয় তখনও রাজার সকৌতুক হাসিটি ছিল কিনা জানতে মন চায়।

তবে পড়ে ভালো লেগেছে হাসি

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

- ঢাকার ৮ মাইল দূরের জায়গাটার নাম ‘দাপা’ বা ‘ইদ্রাকপুর’।

- মাতাল, লম্পট, কাপুরুষ মুরাদকে কি শ্লেষ করে “মহান সাহসী” বললেন?

- শাহ্‌ সুজা’র পরিণতি নিয়ে আরেকটা গল্প শুনুনঃ

১৬৬০ সালের শেষভাগে রোহিঙ্গারাজের সাথে কাজিয়ায় ফেরারী মুঘলরা কচুকাটা হতে শুরু করলে শাহ্‌ সুজাসহ কতিপয় মুঘল উত্তরে ত্রিপুরার দিকে রওয়ানা হয়। ১৬৬১ সালের মাঝামাঝি তারা আগরতলা পৌঁছায়। কিন্তু ত্রিপুরারাজ মীর জুমলার সাথে কোন ঠোকাঠুকিতে যাবার মতো অবস্থায় ছিল না, অমন কোন ইচ্ছেও তার ছিল না। কারণ, ত্রিপুরারাজ ছত্রমাণিক্য মুঘলদের সহায়তায় গোবিন্দমাণিক্যকে হঠিয়ে সিংহাসনে বসেছিল। তাছাড়া গোবিন্দমাণিক্য রাজ্য হারিয়ে আরাকানে পালিয়ে গেলে সেখানে তার সাথে নাকি শাহ্‌ সুজার সাথে সাক্ষাত হয়েছিল এবং পরস্পর পরস্পরকে সহায়তা করার গোপন সমঝোতা হয়েছিল। সুতরাং ত্রিপুরারাজ ছত্রমাণিক্য অনতিবিলম্বে শাহ্‌ সুজাকে আরো পূর্বে মণিপুরে পাঠিয়ে দিল। ত্রিপুরা থেকে খবরটা মীর জুমলার কানে ঠিকই পৌঁছায়। শাহ্‌ সুজা গং মণিপুরে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই ১৬১ সালের শেষে মণিপুরের রাজার কাছে মুঘলদের পক্ষ থেকে দূত - নূর বেগ, দূর বেগ ও রুস্তম বেগ মণিপুরে পৌঁছে যায়। দূতেরা জানায় শাহ্‌ সুজাকে ফেরত পাঠাতে হবে। মণিপুররাজ খুন্‌ জাওবা’র উত্তর কী ছিল সেটা নিশ্চিত নয়। তবে নূর বেগকে সুজাকে চোখে চোখে রাখার দায়িত্ব দিয়ে দূর বেগ আর রুস্তম বেগ রাজধানীতে ফিরে যায় শাহ্‌ সুজার অবস্থান সম্পর্কে খবর জানাতে। বিপদ বুঝে ১৬৬২ সালে শাহ্‌ সুজা ইম্ফলের আরো পূর্বে কাইরাঙ জেলার হাইগনাঙ-এ আশ্রয় নেয়। শাহ্‌ সুজা ওখানে যে জায়গায় থাকত তার এখনকার নাম শুজা-লোক অর্থাৎ সুজার গুহা। শাহ্‌ সুজাকে আশ্রয় দিয়েছিল পাঙ্গাল জনগোষ্ঠীর লোকেরা। পাঙ্গালরা হচ্ছে মুসলিম মণিপুরী বা মিঞাঁ মৈতৈ। সপ্তম শতকের প্রথম ভাগে মুসলিমদের মণিপুরে পদার্পণের পর মণিপুরীদের মধ্যে যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছিল তারাই পাঙ্গাল। মুঘলদের তৎপরতায় শাহ্‌ সুজা উখরুল পাহাড়ের দিকে সরে যায়। ধারণা করা হয়, শাহ্‌ সুজা এখানেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল।

এখানে দু’টো প্রশ্ন থেকে যায়। এক, আওরঙ্গজেব মণিপুরে শাহ্‌ সুজাকে ঘাঁটায়নি কেন? উত্তর হচ্ছে, চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মণিপুরে যেতে হলে ত্রিপুরা বা কামরূপের উপর দিয়ে যেতে হবে। কামরূপ ছিল হোস্টাইল আর গোবিন্দমাণিক্যের ভয়ে ত্রিপুরার ছত্রমাণিক্যের অবস্থা ছিল সঙ্গীন। গোবিন্দমাণিক্য ১৬৬৭ সালে ঠিকই ছত্রমাণিক্যকে হঠিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া ততদিনে আওরঙ্গজেব নিজের ক্ষমতা সুসংহত করে ফেলেছে। শাহ্‌ সুজা তখন আর বড় কোন ফ্যাক্টর ছিল না। দুই, তাহলে আরাকানে কচুকাটা হবার বা পুড়ে মারা যাবার এবং মক্কাবাসী হবার গল্প কি সত্যি নয়? উত্তর হচ্ছে, সম্ভবত না। ত্রিপুরা অভিমুখে পালানোর সময় শাহ্‌ সুজার শুভাকাঙ্খীরা মারা যাবার বা মক্কাবাসী হবার খবরগুলো ছড়িয়েছিল।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বহিরাগত শাসকদের মধ্যে সবচে’ অত্যাচারী, দুর্বল চরিত্র, অপদার্থদের মধ্যে শাহ্‌ সুজার নাম প্রথম সারিতে থাকবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

কল্যাণ এর ছবি

গুরু গুরু

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর এর ছবি

মাতাল, লম্পট, কাপুরুষ মুরাদকে কি শ্লেষ করে “মহান সাহসী” বললেন?

আমি বলি নাই, যদুনাথ সরকার বলেছেন। মুরাদ বখশ ছিল একটা জড়বুদ্ধি পালোয়ান।

কয়টা প্রশ্ন ছিল পান্ডবদা। ছত্রমাণিক্য যদি মোগলদের সহায়তায় গদীতে বসে তাহলে তাদের হাতে সুজাকে তুলে দিয়ে খুশী করার বদলে সুজাকে গোপনে মণিপুর পাঠানোর ব্যবস্থা করল কেন? সুজার প্রতি তার এই দরদের কারন কি? আরেকটা প্রশ্ন, সুজা কি একলাই পালাতে পেরেছিল? সুজার পরিবার তাহলে নিহত হয় আরাকানে?

একবারে সিনেমার কাহিনীর মতন অবস্থা দেখি!

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ এর ছবি

একবারে সিনেমার কাহিনীর মতন অবস্থা দেখি!

এইটা এক্কেরে উপযুক্ত কথা হইছে। এডভেঞ্চার, থ্রিল, একশন ইত্যাদি ইত্যাদি সবই আছে।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ছত্রমাণিক্য সুজাকে আটকে রেখে মুঘলদের হাতে তুলে দেবার সাহস করতে না পারার কারণ বোধহয় সুজার পেছনে গোবিন্দমাণিক্যের ছায়া থাকা। অথবা সুজার শক্তি সম্পর্কে ভুল ধারণা থাকা। মোটকথা ডরপুক ছত্রমাণিক্য সুজা নামক ঝামেলাটি আপসে বিদায় করতে চেয়েছিল।

আরাকান থেকে সুজা তার পরিবার-পরিজন ছাড়াই পালিয়েছিল। পরিবারের সদস্যদের রোহিঙ্গাদের হাতে কচুকাটা হতে দিয়ে নিজে জান নিয়ে পালানো সুজার মতো কাপুরুষের পক্ষে সম্ভব।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ দুইজনকেই, আচ্ছা তাহলে যে আমার শুনি আওরঙ্গজেবের আদেশে জীবিত অবস্থাতেই সুজার চক্ষু উৎপাটন করে তাতে লেবুর রস আর লবণ ঢেলে দেওয়া হয়েছিল, এগুলো নিছকই গুজব ?

সত্যপীর এর ছবি

অণু ভাই, আওরঙ্গজেব সুজাকে এই কাজ করেছিল কিনা জানিনা, আমি কোথাও দেখিনি। তবে এই কাজ করেছিল বাবুর বাদশার ছেলে হুমায়ুন, সে তার ভাই কামরান মীর্জার চোখ তুলে লেবুর রস লবণ ইত্যাদি ঢেলে আন্ধা করে দেয়।

..................................................................
#Banshibir.

কালো কাক এর ছবি

কামরান মির্জার চোখের পল্লব সেলাই করে দেয়া হয়, গুলবদন বেগমের হুমায়ুন নামা অনুসারে। চিন্তিত

সত্যপীর এর ছবি

চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

কীর্তিনাশা এর ছবি

দারুণ, এই পোস্ট এবং এর মন্তব্য থেকে অনেক তথ্য জানা হলো।

পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সত্যপীর এর ছবি

আরেক ভাইও দেখি বললেন, পরে তো আর পর্ব নাই ভাই। এই একটাই। আরাকান ইত্যাদি নিয়ে আমি প্রায়ই লিখি, আবার লিখব নাহয়।

..................................................................
#Banshibir.

বন্দনা এর ছবি

আপনি কেমন ডালভাতের মতন ইতিহাস নিয়ে লিখে ফেললেন, লেখা বেশ ঝরঝরে হয়সে, পড়ে আরাম পেয়েছি। আমার ইতিহাস ভালোলাগেনা, কিন্তু আপনার লিখার গুণেই পড়ে ফেললাম।

সত্যপীর এর ছবি

ইতিহাস তো গল্প, ভালো লাগতেই হবে। অসংখ্য ধন্যবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

কল্যাণ এর ছবি

এক টানে পড়ে শেষ করলাম। পীরের দরগা ভালোই জমজমাট, ঘুরাঘুরিতে কোন লস নাই। এইটা পড়তে পড়তেই চিন্তা করতেছিলাম এইখানে পান্ডবদা' অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছুমিছু যোগ করে দিতে পারবেন তার মন্তব্যে। ঠিক কি না?

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

সত্যপীর এর ছবি

হ পান্ডবদা জিন্দাবাদ।

..................................................................
#Banshibir.

তুলিরেখা এর ছবি

আহা, সুজার মেয়েদের কথা শুনে দাড়িওয়ালা বৃদ্ধের লেখা "দালিয়া" মনে পড়ে গেল। আমরা নিজেরাই সেটার নাট্যরূপ দিয়ে নাটক করেছিলাম। হাসি

আরাকানের এক ধীবরের ঘরে পালিতা শাহ সুজার মেয়ে আমিনা তিন্নি নামে মানুষ হয়েছিলো, তাকে ধীবর জালে পেয়েছিলো, শাহ সুজা নাকি মৃত্যুকালে নৌকা থেকে প্রা্য়-শিশু মেয়েকে জলে ফেলে দেন সম্মান বাঁচাতে, নইলে নাকি মগেরা নিয়ে বিয়ে করে ফেলবে। পরে ছদ্মবেশে মগ রাজপুত্র দালিয়া কিশোরী তিন্নির খুব বন্ধু হয়ে পড়ে, সব কাজ করে দিতো। এদিকে আমিনার দিদি জুলেখা কোথা থেকে এসে হাজির হয়, সে আবার বিরাট নাক উঁচু খানদানি রাজকন্যা, এরকম সব গাইয়া মগেদের মধ্যে ছোটো বোন পড়ে গিয়ে এরকম তিন্নি হয়ে গেছে, সেটা সে একেবারেই ভালো চোখে দেখলো না। কিন্তু কালক্রমে দালিয়া বলে এই রাখাল ছেলেটাকে জুলেখা পর্যন্ত স্নেহ করতে শুরু করলো, কৃত্রিমতাহীন সতেজ আন্তরিক নিরভিমান নানা কাজে দক্ষ খোলামেলা মনের এরকম চরিত্র জুলেখা কখনো দেখে নি তার খানদানে। যাইহোক, শোনা গেল তিন্নিকে নাকি ঢোল ডগর বাজিয়ে বিয়ে করে নিয়ে যেতে আসছে আরাকানের রাজপুত্র, জুলেখা দেখলো এই সুযোগ, বোনকে লুকিয়ে ছুরি দিয়ে দিলো, বললো বিয়ের রাতেই যেন স্বামীকে সাবাড় করে দেয়।
যাই হোক, দুই বোনেই তো রাজবাড়ী গেল, কিন্তু দেখা গেল সেই বিয়ের বর হলেন দালিয়া, তিনিই রাজপুত্র। হাসি
মধুরে সমাপণ হলো সব। হাসি

এই নাটক করতে গিয়ে কেলোর কীর্তি হয়েছিলো স্টেজে, তিন্নিবেশী পম্পি ফিরফির করে হেসে ফেলেছিলো কান্নার পার্টে। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সত্যপীর এর ছবি

তিন্নিবেশী পম্পির দোষ নাই পড়তে পড়তে আমারও বেশ মজা লাগছিল, রোমান্টিক কমেডি। ইনফরমেশনে মেলা গলদ। ভাবছিলাম রবি ঠাকুর সচলে ঐ লিখা দিলে পাব্লিক ধুয়ে দিত খাইছে

..................................................................
#Banshibir.

ব্রুনো এর ছবি

চমৎকার লাগলো বরাবরের মতো। চলুক

সত্যপীর এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ হাসি

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এহসান এর ছবি

আপনার বলবার ভাষা অনন্য। চলুক হাসি

সত্যপীর এর ছবি

লইজ্জা লাগে

..................................................................
#Banshibir.

সাফি এর ছবি

ভালই তো লাগছিল, কিন্তু চট করে শেষ হয়ে গেল কেন?

সত্যপীর এর ছবি

ইয়ে ইদানিং ভারি গবেষক হয়েছি তো, বিবিধ বই ঘেঁটে লিখি। কিছুক্ষণ পরেই হাই ওঠে আর "সংরক্ষণ" বাটনে টিপি দেই দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

আশালতা এর ছবি

সুজা কাহিনী ভালো লাগলো। চলুক

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

সত্যপীর এর ছবি

ধন্যবাদ, ভালো আছেন আশা আপু?

..................................................................
#Banshibir.

তৌফিক জোয়ার্দার এর ছবি

গতকাল একবার অনেক চেষ্টা করেও কমেন্ট পোস্ট করতে পারলামনা। এখন আবার চেষ্টা করছি। লেখা ভাল হয়েছে। এ্যাডিক্টেড বানিয়ে ফেলেছেন পুরা। লেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকি। তাড়াতাড়ি লিখুন।

সত্যপীর এর ছবি

সচলায়তন জিনিষটাই অ্যাডিক্টিভ!

..................................................................
#Banshibir.

তাপস শর্মা এর ছবি

জোশ। সিরিয়াসলি পীর'ভাই আপনার ইতিহাস বলার তুলনা নাই।

তয় কথা হৈল এই সুজা ব্যাটা হতভাগ্য ছিল এই ব্যাপারে সন্দেহ থাকলেও অপদার্থ যে ছিল এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই।

পান্ডব'দার বলা গল্পটা আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যের ইতিহাসের পাতায় [ রাজমালা ] আছে। কথা হল তখন ছত্র মাণিক্য, যার আসল নাম নক্ষত্র রায় গোবিন্দ মাণিক্যের সাথে ফাত্রামি করে রঘুপতির সহায়তায় রাজ শাসন চালাচ্ছিল। এবং রাজ্যের পাহাড়ি জনগণ ওর শাসনে খুব একটা খুশি ছিল না। তাছাড়া গোবিন্দ মাণিক্যের প্রতি ছিল জনগণের আস্থা। এই অবস্থায় নড়বড়ে রাজা আর সুজাকে নিয়ে ব্যাস্ত হন নি। নিজের গদি নিয়েই ব্যাটার যায় যায় অবস্থা ছিল।

সত্যপীর এর ছবি

ধইন্যবাদ তাপসদাদা। বিবিধ মাণিক্যের গল্প শুনতে মজাই লাগল, রাজমালা পড়া হয়নি দেখি খুঁজে পাই কিনা।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।