প্রিয় পাঠক আজ মনখারাপের গল্প। দুখিনী ভারতবর্ষ যুগে যুগেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বলি, তার মধ্যে একটি দুর্ভিক্ষ। ভিক্ষার অভাব। এই অভাব আমাদের অনেকদিন ধরেই, বাংলার ঐশ্বর্যে চোখ ঝলমল করা বর্ণনা আমরা যে পাই বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থে তার মুদ্রার অপর পিঠের অন্ধকার নিয়ে লিখা আছে অল্পই। শায়েস্তা খাঁ এর টাকায় আট মণ চালের গল্পে উদ্বাহু হয়ে নৃত্য করার আগে যাচাই করে নেয়া জরুরী, কয়টা লোকের পকেটে টাকাটা ছিল। পর্যাপ্ত ফসলের অভাব নয় বরং ক্রয়ক্ষমতার অভাবকেই দুর্ভিক্ষের মূল কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন অমর্ত্য সেন।
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর কথাটি প্রায়ই শোনা যায়, কথাটা বাংলা ১১৭৬ সাল থেকে এসেছে। ইংরেজি ১৭৬৯ সাল, ব্রিটিশ আমল। তখনো কোম্পানী শাসন পোক্ত হয়নি, ক্লাইভ মাত্র চার বছর আগে দিল্লীর বাদশা শা আলমের কাছ থেকে বাংলা বিহার উড়িষ্যার দেওয়ানী পেয়েছেন। এদিকে নবাবী শাসনও ছিল পাশাপাশি, এক দেশ দুই রাজা। এক মানুষ দুই দিকে ট্যাকসো। কোম্পানির লোকে অবাধ লুন্ঠন অত্যাচার শুরু করে আর পয়সা হারাতে শুরু করে বাংলার মানুষ। সাথে যুক্ত হয় অনাবৃষ্টি। যোগফল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, কয়েক লক্ষ মানুষের মৃত্যু।
ইংরেজ আমলের আগেও ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ছিল, তবে তার রেকর্ড ঠিকমত জানা শক্ত। অশিক্ষিত মোগল ও অন্যান্য শাসকেরা বিলাসব্যসনেই মত্ত ছিল, তাদের চাটুকারেরা এইসব পেটি দুর্যোগের খবর দিয়ে সম্রাটের শরাবপানে বাধা দিতে দেয়নি। সাধারন মানুষের দরদী শাসক বলে কিছু ছিলও না, মানুষ ভাতের অভাবে মরুক তাতে কিছু যায় আসেনা, বিরিয়ানির চাল উৎপন্ন হলেই হল।
ইংরেজ ভিন্ন ঘরানার শয়তান, সে শরাবে মত্ত হয়ে খবর ইগনোর করেনি জেনেশুনেই ইগনোর করেছে। কোম্পানি শাসনের প্রথম দিকে পয়সার জন্যে ইচ্ছেমত লুটতরাজ চালানো হয়, ভারতের মানুষকে তারা মানুষ ভাবতোই না। পরের দিকে ইংল্যান্ডে খবর যাবার পরে স্থানীয় শাসকেরা কিছুটা বাটে পড়েন, চক্ষুলজ্জায় কিছু রিলিফ বিতরনও শুরু হয়। এছাড়া তারা নানান মিথ্যেও বলতেন দুর্ভিক্ষের তীব্রতা কমিয়ে দেখানোর জন্যে। অনেকটা আনন্দবাজারের মতন ব্যাপার, বর্ডারে ন্যাংটা করে পিটিয়েছে ঠিক আছে কিন্তু মিডিয়ায় যে আসলো এইটা আইএসআই এর কাজ। ভারতীয় মিডিয়া এই কাগজে সাদা থাকার ব্যাপারটা শিখেছে ইংরেজের মিথ্যে বলা দেখেই।
১৮৭৭ সালে প্রকাশিত ডোনাল্ড ম্যাকলড সম্পাদিত Good Words বইতে জি ডব্লিউ ফরেস্ট রচিত একটি প্রবন্ধ আছে ভারতবর্ষের দুর্ভিক্ষের ওপর। তার ভাবানুবাদ পড়ি আসুন।
…....................................................................................
ভারতে দুর্ভিক্ষ নতুন কিছু নয়। আমাদের শাসন শুরু হওয়ার পর আটটার মতন দুর্ভক্ষ হয়েছে, আর এই শতকেই হয়েছে চোদ্দটার মতন। এই দশকে চারটে। দুর্গম এলাকাগুলোয় দুর্ভিক্ষের খবর ঠিকমত পাওয়াও যায়না, সবই কেমন ঝাপসা। শুধু খবর আসে মরে চলেছে মানুষ, মাইলের পর মাইল এলাকা জনশুণ্য। শুধু ক্রন্দন আর হাহাকার। ১৩৪৫ সালের দিকে দেখা দুর্ভিক্ষের বর্ণনা দিয়ে গেছেন ইবনে বতুতা, “একদিন আমি শহরে বেরোই উজিরসায়েবের সাথে দেখা করতে, দেখি রাস্তায় তিনটে মহিলা একটা ঘোড়ার চামড়া মাংস কেটে খাচ্ছে। ঘোড়াটি কয়েকমাসের মৃত।”
শাজাহান ব্যাপক চমকদার সম্রাট ছিলেন, তার আমলে দিল্লী শহর ঐশ্বর্যে ঝলমল করতো। তার সময়ই একটি বড় দুর্ভিক্ষ হয়। মৃতের সংখ্যা সকল পরিসংখ্যান ছাড়িয়ে যায়। শহরে রাস্তার ধারে অথবা গ্রামে মাঠের পাশে নতুন বীজের বদলে পড়ে থাকত খুলি আর হাড়গোড়। মানুষের মাংস খেত মানুষ, পিতামাতা গিলত তাদের সন্তানের দেহ। রুটিওলারা হাড় সংগ্রহ করে গুঁড়ো পাউডার বানাতো, তার সাথে অল্প আটা মিশিয়ে রুটি বানিয়ে বেচত ধনী লোকের কাছে। মানুষের দেহ রোদে পড়ে থাকলে তলায় পানি জমে, ঐ পানির জন্যে মারামারি লাগাত লোকে।
যার আমলে মোগল সাম্রাজ্য সাফল্যের তুঙ্গে পৌঁছে সেই আওরঙ্গজেবের আমলেও খবর পাওয়া যায় একটি বৃহৎ দুর্ভিক্ষের। এই দুর্ভিক্ষের পুরো সংবাদ ঠিক পাওয়া যায়না, তবে এটা ঠিক যে সেটা সারা ভারতজুড়ে ছিলনা। পাঞ্জাব আর বাংলায় উৎকৃষ্ট চাল উৎপন্ন হয়েছিল সেবার। আওরঙ্গজেব এর কিছু অংশ অল্পদামে বাজারে ছাড়েন আর বাকিটা বিলিবাঁটোয়ারা করে দেয়া হয়। এতে করে কিছু এলাকার লোকে নির্ঘাত মৃত্যুর কবল থেকে রেহাই পায়।
অষ্টাদশ শতকে হয় গুরুতর বাংলার দুর্ভিক্ষ। ১৭৭০ সালের কথা। এই দুর্ভিক্ষের চাপ বাংলার উত্তরাঞ্চলে ১৭৬৯ সালের নভেম্বরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। গাছের ছাল লতাপাতা খেয়ে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত চেষ্টার পর মারা যায় অগণিত মানুষ। রাস্তাঘাটে মাঠে ময়দানে লাশ আর লাশ। বাংলায় প্রতি তিনজনে একজন মারা যায়। যারা বেঁচে ছিল তারা প্রায়শই খেতে বাধ্য হয় নিষিদ্ধ ঘৃণিত পশুর মাংস। এমনও প্রায়ই হত যে শিশু বসে মৃত পিতার মাংস খাচ্ছে অথবা মাতা তার প্রিয়তম শিশুটিকে। ১৭৮৩ সালে পাঞ্জাব থেকে বাংলা ছড়িয়ে পড়ে দুর্ভিক্ষের ভয়ালথাবা।
২ এপ্রিল ১৭৮৪ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস কাউন্সিলে এক পত্রে লিখেন, “বক্সার থেকে বেনারস আমি দেখছি অসন্তুষ্ট মানুষের গোলমাল চেঁচামেচি। দীর্ঘ খরায় এদের দুর্দশা বেড়েই চলেছে সন্দেহ নেই, কিন্তু আমার মনে হয় এর মূল কারণ একটি ত্রুটিপূর্ণ ও দূর্নীতিগ্রস্ত সরকার ব্যবস্থা। দুঃখের সাথে বলছি যে আমি দেখেছি বক্সার হতে ভারতের অপর প্রান্ত পর্যন্ত গ্রামের পর গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।” দুর্নীতি সত্যই বাংলা রাজ্যে দুর্দশা ডেকে আনার মূল কারণ। ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রবল অত্যাচার ও নিপীড়নের আইনের মাধ্যমে যার শুরু তা পরিপূর্ণ হয় দীর্ঘ খরার আগমনে।
১৮০৩ সালে ভারতের উত্তর পশ্চিম প্রদেশগুলোয় দুর্ভিক্ষের আগমন ঘটে, কিছুটা খরার জন্য আর কিছুটা ইংরেজ সরকারের অদূরদর্শিতার কারণে। ঐ এলাকার লোক তখন সদ্যই এক অত্যাচারী শাসকের থেকে মুক্তি পেয়েছে, আর নতুন শাসকেরা বাম্পার ফলন দেখে অতি উচ্চ হারে খাজনা চড়িয়ে দেয়। মানুষের হল দুঃখ দুর্দশার চূড়ান্ত। মিল আর থর্নটনের ইতিহাস বইয়ে হলকর আর সিন্ধিয়ার বিরুদ্ধে মিলিটারি অভিযানের চুলচেরা বৃত্তান্ত আপনি পাবেন, কিন্তু যুদ্ধের বাইরে সাধারন মানুষের ধুঁকে ধুঁকে মরার সত্যকারের ইতিহাস মিলবে না। দুর্ভিক্ষের তুলনায় যুদ্ধে মানুষ কষ্ট পায় কম। যুদ্ধে শুধু সিপাইদের যাত্রাপথের আশপাশের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়, কিন্তু দুর্ভিক্ষে জ্বলে মরে পুরো গ্রাম।
১৮৬৬ সালে দুর্ভিক্ষ মরণকামড় বসায় উড়িষ্যায়। এই দুর্ভিক্ষ যেভাবে সরকারিভাবে সামাল দেওয়া হয়েছিল, তা শুধু সভ্য সরকারের অপমানই নয় পুরো সভ্যতারই কলঙ্ক বলা চলে। আতঙ্কিত হবার মত গল্পগুলো মনে পড়িয়ে দেয় বোকাচ্চিও বর্ণিত ফ্লোরেন্সের প্লেগের কথা। হাজারে হাজার মানুষ হারিয়ে যায়, কেউ কুটোটিও নাড়েনি। উড়িষ্যার তিনভাগের একভাগ মানুষ মরে গিয়ে তাদের হাড়গোড়ে সাদা করে তোলে মাইলের পর মাইল জমি। এর দুই বছর পর পাঁচ লক্ষ মানুষ মরে রাজপুতানার দুর্ভিক্ষে। ইংল্যান্ড কত অল্প অ্যাটেনশন দিয়েছিল এইসব গুরুতর ব্যাপারে তা অবাক হবার মত। জার্মানি আর ফ্রান্সের যুদ্ধে কত মানুষ মরেছিল? খুব বেশি হলে এক লক্ষ? তাতেই তো ইংল্যান্ড বিরাট সোরগোল করে যুদ্ধাহতদের রিলিফ পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে দেয়। আর ভারতে তার চাইতে শতগুণ নিষ্ঠুর মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার করার জন্য একমুষ্টি চালের ব্যবস্থা কেউ করে না। মানুষের জীবনের দাম তাদের বাঁচানোর খরচ দিয়ে মাপলে চলে না।
কয়টা ফ্যাক্ট আমরা দুর্ভিক্ষের ইতিহাসে বারবারই পাই। প্রথমত, আভাস না দিয়ে হুট করে দুর্ভিক্ষ আসে না। কয়েকটি বাজে মৌসুম পার করে তবেই জেঁকে বসে দুর্ভিক্ষ। দ্বিতীয়ত, ছোট লোকাল দুর্ভিক্ষ নিয়ম করে প্রতি পাঁচ, দশ বা পনেরো বছর পর পর আসে, কিন্তু সর্বব্যাপী বিশাল দুর্ভিক্ষ আসে অনেক বছর পর পর। বলা যায় প্রতি পঞ্চাশ, একশো বা দেড়শ বছর পর পর আসে এমন দুর্ভিক্ষ। সূর্যের গতিবিধির সাথে এই ট্রেন্ডের মিল নিয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে, কিন্তু সিদ্ধান্তে আসার মত যথেষ্ট ডাটা এই মুহুর্তে আমাদের হাতে নাই।
আসল প্রশ্ন হল, ভারত সরকারের এমতাবস্থায় করণীয় কি? এখানে বলে রাখা ভাল, ইংল্যান্ডের মানুষের সদাশয়তার উপর ভরসা করে দুর্ভিক্ষ এড়ানো সম্ভব নয়। শুধু খাবার সাপ্লাই করলেই চলবে না, তা সঠিক স্থানে নিয়মিত পৌঁছেও দিতে হবে, এবং ঠিকমত বাঁটোয়ারাও করে দিতে হবে। মূল শস্য যখন ফেল মারে তখন বড় আকারে শস্য আমদানির ভার সরকার বা ব্যক্তিগত কোম্পানীর নিতে হবে। সরকার কয়েকটি ব্যক্তিগত কোম্পানীর চেয়ে বেশি আমদানি করার সামর্থ্য রাখে বটে, কিন্তু সকল ব্যক্তিগত কোম্পানী মিলে যে পরিমান আমদানি করে সক্ষম তা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
তবে দুম করে প্রাইভেটাইজেশনের আগে দুটো কথা আছে। পলিটিকাল ইকোনমির সকল মডেল কিছু শর্ত আগেই ধরে নেয় যা বাস্তবে অনুপস্থিত। যেমন, পার্ফেক্ট কম্পিটিশন হলে শুধুমাত্র লাভ লোকসানের ব্যাপারটাই ক্রেতা বিক্রেতা বিবেচনা করবে, অন্য কিছুই নয়। ধরে নেয়া হয় দুনিয়ার তাবৎ সওদাগর তার নিজ নিজ ক্রেতার চাহিদা বিবেচনা করে মাল আমদানি করবে। ইংরেজ অর্থনীতিবিদগণ ভারতের জাতভেদ ব্যাপার নিয়ে কিছুই জানেন না তাই এরূপ চিন্তা।
জাতভেদ একটা ট্রেড ইউনিয়ন, যেখানে কুসংস্কার সম্পূর্ণ অনুমোদিত। আর কুসংস্কারের প্রতি ভারতবাসীর ভাতের চেয়েও কড়া টান। অ্যাডাম স্মিথের সাপ্লাই ডিমান্ড মডেল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেবার শক্তি রাখে ভারতীয় কুসংস্কার, কারণ এই কুসংস্কারের ফলে সকল ক্রেতা সমান হবার ব্যাপারটি আর থাকে না। পার্ফেক্ট কম্পিটিশন মডেলের অন্যতম শর্ত আইডেন্টিক্যাল ক্রেতাশ্রেণী। এছাড়া আরেকটি ব্যাপার ক্রয়ক্ষমতা, প্রত্যন্ত গ্রামের চালবিক্রেতা চাহিদা হঠাত বেড়ে গেলেই তা পূরণ করার মত পুঁজি রাখে না, ফলে চাহিদা বেড়েই চলে।
যোগাযোগের ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হবে, চাহিদা বাড়বে যোগান আসবে আর স্থিতিবিন্দুতে (ইকুইলিব্রিয়াম পয়েন্ট) সঠিক দাম ও পরিমাণ নির্ধারিত হবে এই মডেলে যোগাযোগ ব্যবস্থার অনিত্যতা অনুপস্থিত। খরার মৌসুমে উড়িষ্যা ভারত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, বোম্বে প্রেসিডেন্সির দুর্ভিক্ষে কিন্তু তা হয়নি। রেলে করে নিয়মিতই চালান এসেছে, আর বোম্বে সরকারের প্রাইভেট মার্কেটে হস্তক্ষেপ না করার কড়া নীতির ফলে অবস্থা কিছুদিনের মধ্যেই আয়ত্বে আসে। এই সাফল্যের একক কৃতিত্বের দাবীদার রেলওয়ে লাইন। বম্বের এই অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায় প্রাইভেটাইজেশনের গুরুত্ব কতখানি, আর শেখায় রেলের ডিভিডেন্ড দিয়ে তার মূল্য মাপলে চলবে না। রেলের মূল্য তার চাইতে অনেক বেশি।
মাদ্রাজ সরকারের পলিসি কিন্তু পুরোই ভিন্ন ছিল। তারা গোপনে একটি স্থানীয় পাইকার থেকে তিরিশ হাজার টন গম কিনে, কিন্তু সরকারী ব্যাপার গোপন রাখা অত সোজা নয়। খবর পাচার হয়েই যায়। গুজব ছড়িয়ে পড়ে সরকারি হস্তক্ষেপের, ব্যক্তিগত চালান স্থবির হয়ে পড়ে। সরকারের স্বীকার করতেই হবে যে যদি তারা রাষ্ট্রীয় মূল্যে মাল ছাড়ে তাহলে পাইকারেরা বাজার মূল্যে বিক্রি করা কমিয়ে দেবে, জন্ম নেবে কালোবাজার। লর্ড লিটন তাই বুদ্ধিমানের মতন মাদ্রাজ সরকারকে এহেন কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতে বলেন।
যাই হোক এই স্বল্প পরিসরে অনেক কিছুই আলোচনা করা গেল না, সরকারের কিছু অবশ্যপালনীয় কর্তব্য নিয়ে বিশদ কথায় যাওয়া সম্ভব নয়। এটা ঠিক যে দুর্ভিক্ষের কালে বড় শহরের কাছে বড় খোলা এলাকায় রিলিফ ক্যাম্প পরিচালনা করতে হবে। কাজটি সহজ নয়, জাতপাত বাঁচিয়ে অন্যান্য সামাজিক ব্যাপার যথাসম্ভব মাথায় রেখে রিলিফ কার্যক্রম চালাতে হবে। ছোট হাসপাতাল থাকতে হবে পাশে, লাগবে অষুধের ব্যবস্থা আর মৃত সৎকারের সাপ্লাই। ক্ষুধার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠলে অবধারিতভাবেই তারা পড়বে ডাইরিয়া, কলেরা, জ্বর ইত্যাদি ব্যাধির খপ্পরে। সেগুলো সামলানোর ব্যবস্থাও থাকা চাই। হাজারে হাজারে মরছে মানুষ, তাদের বাঁচাতে আমাদের এগিয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত।
মন্তব্য
ভাল লাগলো, অনেক অজানা তথ্য জানলাম। আরও পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম।
নিশ্চয়ই দিব ভাই।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক তথ্যবহুল লেখা। পুরোটা পড়ার সময় হল না। পরে শেষ করব।
ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
জি ডব্লিউ ফরেস্টের রচনাটির বেশির ভাগ জায়গা "সিম্পলি রাবিশ"। এর কোন কোন প্রসঙ্গকে "রাবিশ" বললাম সেটা ব্যাখ্যা করাটা সময়ের অপচয় মাত্র। ভারত সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ প্রসঙ্গগুলো চিহ্নিত করতে পারবেন। তাই সাহেবদের রচনাগুলোকে যাচাই ছাড়া ইতিহাসের মর্যাদা দেয়ার কোন উপায় নেই।
ভারত সম্পর্কে (আরো ভালোভাবে বললে, বাংলা সম্পর্কে) "সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা" নামক একটা মীথ আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। উৎপাদিত খাদ্য, প্রাপ্য সুপেয় জল, প্রাপ্য ব্যবহারযোগ্য জল ইত্যাদি আসলেই এখানকার জনগোষ্ঠীর চাহিদার তুলনায় প্রতুল কিনা সেটার কোন ঐতিহাসিক তথ্য-পরিসংখ্যান নেই। তবে এদেশের ইতিহাসে দুর্ভিক্ষ, খরা, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি এমন সব বিপর্যয়ের কথা কম-বেশি জানা যায়। বাংলা ও তদসংলগ্ন অঞ্চলে ১৭৭০ বা তৎপূর্বের দুর্ভিক্ষ 'ক্রয়ক্ষমতা'-র তত্ত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে কিনা তাতে আমার সন্দেহ আছে। এইক্ষেত্রে অধিগম্যতা (access) একটা বড় নিয়ামক। অজ্ঞতা, ভ্রান্ত ধারণা, কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিধিনিষেধের প্রাদুর্ভাবে জনগণের মধ্যে বিকল্প খাদ্য গ্রহন না করার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল তার ভূমিকাও কম নয়। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনা, অযোগ্য-অত্যাচারী স্থানীয় প্রশাসন খাদ্যের প্রাপ্যতা সহজতর করা, মূল্যবৃদ্ধি রোধ করা, বাজার অধিগম্যতা সহজ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর অন্তরায় ছিল।
ঔপনিবেশিক মুঘল বা বৃটিশ আমলে সংঘটিত এক একটা দুর্ভিক্ষে বাংলায় যে পরিমাণ মানুষ না খেয়ে মরেছে এখন তার এক শতাংশ ঘটনা ঘটলেও দেশে প্রলয় হয়ে যাবে। এর মানে এই না যে, আমি বলছি দেশে এখন দুর্ভিক্ষ নেই। বাংলাদেশে এখনো দুর্ভিক্ষ আছে; তবে তার প্রকোপটা কম, দৈর্ঘ্য অনেক বড়। এই দুর্ভিক্ষকে গরিবী নিয়ে ব্যবসা করনেওয়ালারা "অপুষ্টি" বা "অপুষ্টিজনিত রোগ" বলে চিহ্নিত করেন। এখনো এখানে দুর্ভিক্ষে মানুষ মারা যায়, তবে রেকর্ডে সেটা "ডায়রিয়াজনিত কারণে মৃত্যু" বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অমর্ত্য সেন ক্রয়ক্ষমতার কথাটা বলেছিলেন বিংশ শতাব্দীর দুর্ভিক্ষ দেখে, ঠিক ঐভাবে ১৭৭০ এর দুর্ভিক্ষ মাপা যাবেনা ঠিকই। অধিগম্যতার ব্যাপারটা একবারে ঠিক, এখনও তা সত্য অনেক ক্ষেত্রে। উত্তরাঞ্চলের মঙ্গার ব্যাপারটা নিয়ে আমার পড়াশোনা কম, এইটা নিয়ে ভালো তথ্যযুক্ত কিছু পড়তে পেলে মন্দ হতনা।
..................................................................
#Banshibir.
ছিয়াত্তরের মনন্তরের সময় তবে কি ওয়ারেন হেস্টিংসই গভর্নর জেনারেল ছিলো ??
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর শুরু হয় ১৭৭০ এ, চলে বছর চারেক। ১৭৭৪ সালে গদীতে আসে হেস্টিংস, দুর্ভিক্ষ তখন প্রায় শেষ।
..................................................................
#Banshibir.
ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় প্রচলিত শাসন ব্যবস্থাটি 'দ্বৈত শাসন' নামে সমধিক পরিচিত। ১৯৬৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দিল্লীর সুলতান শাহ আলমের বদান্যতায় বাংলার দেওয়ানী (রাজস্ব আদায়ের ভার) লাভ করেন। কোম্পানি রাজস্ব আদায় করলেও বিচার সহ অন্যান্য প্রশাসনিক কাজের ভার তারা শুরুতেই কুক্ষিগত করেনি। বরং প্রশাসনিক বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্য তখনো একজন নবাব নিয়োগ দেয়া হত। পুতুল নবাবগণ কোম্পানির লোকেদের ফরমায়েশ মোতাবেক সকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতেন।
দ্বৈত শাসনের ধারাবাহিকতায় মন্বন্তরের সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে জন কার্টিয়ের (১৯৬৯-১৯৭২) বাংলার শাসক ছিলেন। তার উপর দেওয়ানীর (আর্থিক) ভার ছিল। আর প্রশাসনিক কাজের ভার ছিল মীরজাফর হতে নাজিমুদ্দিন আলী খানের পর বাংলার পুতুল নবাব হিসেবে অধিষ্ঠিত নাজাবুত আলী খানের উপর। ১৭৭০ সালের শুরুতে তিনি মারা গেলে আশরাফ আলী খান তার স্থলাভিষিক্ত হন।
ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭১ সাল হতে কলকাতার গভর্নর ছিলেন। ১৭৭৩ সালে তিনি ব্রিটিশ বাংলার প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৮৮৭ সালে এডমন্ড বার্ক ব্রিটিশ পার্লামেন্ট-এ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশে বিপুল দুর্নিতির অভিযোগে অভিশংসনের প্রস্তাব আনেন। তবে দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৮৯৫ সালে তিনি ে অভিযোগ হতে খালাস পান।
---------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ---
সংশোধনী--- কার্টিয়ের (১৭৬৯- ১৭৭২)
সংশোধনী-- ১৭৮৭ সালে এডমন্ড বার্ক ব্রিটিশ পার্লামেন্ট-এ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় উপমহাদেশে বিপুল দুর্নিতির অভিযোগে অভিশংসনের প্রস্তাব আনেন। তবে দীর্ঘ শুনানি শেষে ১৭৯৫ সালে তিনি ে অভিযোগ হতে খালাস পান।
হেস্টিংস ছিল ব্যাপক চোর, ব্যক্তিগতভাবে সে প্রচুর ধনদৌলত চুরি করে লন্ডন নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যে ইমপিচমেন্টে হেস্টিংস ধরা খায়নি তার এক বড় কারণ ঐ পয়সা ব্যবহার করে সে অনেক প্রভাব খাটায় আর সেরা উকিলের বুদ্ধি নেয়। এছাড়া তার পক্ষে সাফাই গায় আরেক বদমাশ লর্ড কর্নওয়ালিশ। ব্যাটার কপাল ভালো।
মন্তব্যে
..................................................................
#Banshibir.
এমনিতেই মন খারাপ, এই লেখাটি পড়ে আরো মন খারাপ লাগছে।
আমার কাছে মনে হয়, প্রতিটা দুর্ভিক্ষই মানুষের দ্বারা সৃষ্টি ( এটা শুধুই আমার ব্যক্তিগত অভিমত যে কারো আপত্তি থাকতে পারে।)
ঠিক কথাই।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক তথ্য জানলাম।
..................................................................
#Banshibir.
পড়ছি। জানছি।
ভাল থাকুন।
..................................................................
#Banshibir.
অজানা অনেক তথ্যে পরিপূর্ণ লেখা। জানার কোন শেষ নেই
ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নিয়ে ছাড়া ছাড়া পড়া ছিল,কিন্তু অন্য গুলোর কথা এভাবে জানতাম না।লেখাটা বেশ ভাল লাগল।
..................................................................
#Banshibir.
নবাবী আমল কিংবা মুঘল আমলের কোন দূর্ভিক্ষ সম্পর্কে জানা ছিলো না । টাকায় আট মন চালের বুজরুকী বুঝি। বাপ যখন বলে আট আনা কেজী চালের কথা, আমি তখন তাঁর ঐসময়ের মাস্টারির বেতনের কথা জিজ্ঞেস করি। সে কাচুমাচু করে বলে ৭৫ টাকা।
নবাব মোগল ইংরেজ সব শালা বদমাইশ। কি আর করা।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক কিছু জানলাম। তথ্যসমৃদ্ধ পোস্টের জন্য ধন্যবাদ। যদিও মনটা খারাপ হয়ে গেল।
..................................................................
#Banshibir.
এই ব্যাটা তো দেখি মহামান্য হালার হালা ইংরেজ বাহাদুরের গুণগানই গেয়ে গেলো, আর শেষে এসে দিল গাদা গাদা হেদায়ত। ভাবখানা এমন যেন আমাদের মতো 'কালো' মানুষদের উপর কত উপকারই না করছে!
ডাকঘর | ছবিঘর
হ এইরকমই ভাব ইংরেজ লিখকগুলার। আমরা হইলাম উনাদের বার্ডেন, উনাদের হেদায়েত ছাড়া ভাত নাই আমাদের। শালার কোটি টাকা চুরি করে দশ টাকা দিয়ে রিলিফ ক্যাম্প খুলে হাত্তালি চায় বুঝলেন।
..................................................................
#Banshibir.
দারুন একটা লেখা পড়লাম!!
_______
বুনোফুল
ধন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
ভালো লেখা
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
..................................................................
#Banshibir.
১৯৭৪ সালে ১০ লাখ লোক মরে। পরের ২ বছর ৫ লাখ মরে ১৯৭৪ সালের ফলে।
মোট পনেরো লাখ? বাপরে, আমি কোথায় যেন কয়েক লাখ দেখেই আঁতকে উঠেছিলাম। পনেরো লাখের কোন রেফারেন্স দেওয়া যায় ভাই?
..................................................................
#Banshibir.
পীর সাহেবের ইমেইল খুজে খুজে হয়রান। শেষে হিমুদাকে বললাম। তিনি আপনার সাথে পোেস্ট কথা বলতে ব্ললেন।
আমি কি আপনার ইমেইল পেতে পারি?
পোস্টএ বিরক্ত করার জন্য দুংখীত।
-দহন বেলা
গুপনে কি কথা ভাই? এখানেই কয়া লান
খুবই গুপন বিষয় হৈলে (ধরেন লিখা পইড়া খুশি হওয়া কিছু ট্যাকা পাঠাইতে চান) তাইলে ইমেল করেন mir178এটyahoo.com
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন