গঙ্গাতীরের উর্বর ভূমিতে একদল তুর্কী আর আফগান ঘোড়সওয়ার সবার পয়লা ইসলামের পতাকা হাতে হাজির হয়। তাদের তরুণ নেতার নাম ছিল মুহম্মদ বখতিয়ার, তার নেতৃত্বে সেই বাহিনী পথের সকল শহরপত্তন পায়ের তলায় মাড়িয়ে নির্দয়ভাবে এগোতে থাকে। বিহারের বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করে দেয় তারা, তীর্থশহর বেনারস জ্বালিয়ে দেয়া হয়। চলে লাগামছাড়া লুট। বাংলার নদীয়া শহরে এসে তারা ঘোড়ার সওদাগর সেজে ফট করে অন্দরে ঢুকে পড়ে, তারপর সহসাই কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে প্রহরীদের কল্লা নামিয়ে দিতে দিতে রাজার অন্দরমহল পর্যন্ত পৌঁছে যায়। রাজামশাই মোটে ভাত খেতে বসেছিলেন, খবর শুনে তিনি দিলেন উল্টোদিকে ছুট! ছুটতে ছুটতে তিনি সেই যে কোন জঙ্গলে পালিয়ে গেলেন, আর তার কোন খবরই পাওয়া গেল না। ঐ থেকে বাংলায় তুর্কী আফগান মুসলিম শাসন শুরু হয়, যা টিকে ছিল পরবর্তী পাঁচশো বছরেরও বেশি।
আরাকান রাজা নরমিথলা যখন বাংলায় পালিয়ে গিয়েছিলেন তখন সেখানে তুর্কী আফগান সুলতানাত দুইশ বছর পুরোন। ১৪৩০ সালে, আত্মগোপনের প্রায় তিন দশক পরে তিনি দেশে ফিরেন বিরাট সিপাইদল নিয়ে, তাদের অধিকাংশই আফগান ভাড়াটে দস্যু। অতি সহজেই তারা শহরের দখল নিয়ে নিল। শুরু হল এক স্বর্ণালী সময়ের, ক্ষমতা ও সমৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ সেই সময়। গঠিত হল বৌদ্ধ-মুসলিম সমন্বয়ে এক চমৎকার দোআঁশলা দরবার, যেখানে পারস্য ও ভারতের ঐতিহ্যের সাথে এসে মিলল পূবের বৌদ্ধ চিন্তা। রাজা পুরাতন রাজধানী ছেড়ে এক নতুন শহর পত্তন করলেন, তার নাম দেওয়া হল ম্রাওক-উ। আক্ষরিক অর্থে বানর ডিম। কেন যে এইরকম নামকরণ তা সঠিক জানা যায় না। রাজার জ্যোতিষেরা কইলেন এই শহর খুবই সুলক্ষণযুক্ত সন্দেহ নাই, কিন্তু তিনি সেখানে মুভ করলে অক্কা পাবেন। রাজা সেই ভাগ্য বরণে রাজি ছিলেন। ১৪৩৩ সালে মহা আড়ম্বরের সাথে শহরের জাঁকালো উদ্বোধন করা হয়, তার পরের বছর মারা যান রাজা।
ম্রাওক-ঊ ফুলেফেঁপে আন্তর্জাতিক শহরে পরিণত হয়, তার অধিবাসীর সংখ্যা এক লক্ষ ষাট হাজারে গিয়ে ঠেকে। সেখানে বাস করত আরাকান, বাঙালি, আফগান, বার্মিজ, ওলন্দাজ, পর্তুগীজ, পারসীয় এমনকি জাপানী খ্রিস্টান যারা নাগাসাকি থেকে শাসক হিদেয়োশি তোয়োতোমির অত্যাচার থেকে পালিয়েছিল। এদের কেউ কেউ ছিল সামুরাই যোদ্ধা, তারা আরাকানরাজের বডিগার্ডের কাজ শুরু করে। এই কসমোপলিটান দরবারে আকৃষ্ট হয়ে আসেন বাঙালি আরাকান সাহিত্যের দিকপালেরা। প্রথম বাঙালি প্রেমের কাহিনী লিখিয়ে দৌলত কাজি এখানে স্বতন্ত্র মৌলিক লিখায় মত্ত হন। আবার আলাওল, যাকে কিনা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ধরা হয়, তিনি ফার্সি হিন্দী ভাষা থেকে অত্যুত্তম সাহিত্য অনুবাদ করেন। অনেক রাজা মুসলিম টাইটেলের পাশাপাশি পালি পদবি নেন, পারস্য অনুপ্রাণিত জামাকাপড় ইস্ফাহান দিল্লীর অনুকরণে জমকালো পাগড়ি পরার পাশাপাশি প্রচুর বৌদ্ধ বিহার ও প্যাগোডাও তারা তৈয়ার করেন। তাদের মুদ্রায় ইসলামি কলেমা মুদ্রিত থাকত।
শহরটি ছিল ভেতরের দিকে, নানাবিধ কেল্লা পরিখা দ্বারা দুর্ভেদ্য করে রাখা হয় একে। সাথে ছিল ঘন জঙ্গল আর দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা। পর্তুগীজ পাদ্রী এ. ফারিনিয়া অসংখ্য নদীর মিলনক্ষেত্র এই শহরকে ডেকেছিলেন দ্বিতীয় ভেনিস নামে। অন্যান্য সমসাময়িক বিভিন্ন লিখকও একে লন্ডন আমস্টার্ডামের সাথে তুলনা করেছেন।
ছবিঃ সপ্তদশ শতাব্দীর ম্রাওক-উ, পর্তুগীজ পত্তনি।
প্রায় একশ বছর ধরে আরাকান পাশের বাড়ির বাংলা সুলতানাতকে তেল দিয়ে চলতো। কিন্তু পরে যখন বাংলা বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ গোলযোগে লিপ্ত হয়, তখন আরাকান তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে। শত শত জাহাজ নিয়ে তৈরী হয় শক্তিশালী নৌবাহিনী, তারা রামু দ্বীপ দখল করে ১৫৭৮ সালে দখল নেয় চিটাগং বন্দর। পর্তুগীজ বজ্জাত আর নানান ভাড়াখাটা দস্যুর সাথে মিলে তারা পূববাংলার অধিকাংশ এলাকা বুঝে নেয়। আরাকানেরা পূর্বদিকেও গিয়েছিল, কিছুদিনের জন্য তাদের দখলে ছিল পেগু। ঐখানে তারা রাজপরিবারের লোকসহ প্রায় হাজার তিনেক লোককে লাথি দিয়ে বের করে দেয়। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে আরাকান শাসন, কিছুদিনের জন্যে তাদের অধীনে থাকে ঢাকা থেকে মার্তাবান পর্যন্ত হাজার মাইলব্যাপী এলাকা।
পর্তুগীজ সওদাগর দুয়ার্তে বারবোসা ১৬১০ সালের দিকে এই শহরে আসেন। তিনি লিখে গেছেন, রাজার জন্যে বারোটি অত্যাধিক সুন্দরী কচি মেয়ে দেশের বিবিধ প্রান্ত থেকে নিয়ে আসা হত। তাদের সটান রাজার কাছে নিয়ে যাবার বদলে খাড়া রোদে জামাকাপড় পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হত। দিনের শেষে তাদের জামা খুলে তা পাঠানো হত রাজার কাছে। তিনি বসে বসে সেগুলি শুঁকতেন, আর যার ঘামের গন্ধ পছন্দ হত সেই মেয়ের ডাক পড়তো অন্দরে। বাকী মেয়েগুলিকে দরবারের আজাইরা মন্ত্রী মিনিস্টারের কাছে পাঠানো হত।
লুট আর শহর পত্তনির সাথে সাথে ম্রাওক-উ ধনী থেকে ধনীতর হতে থাকে। বাণিজ্য থেকেও তার ব্যাপক পয়সা আসে, বিশেষত দাস বাণিজ্য। বঙ্গোপসাগরের তীরে দাস ব্যবসা ছিল জমজমাট। এটা সপ্তদশ শতাব্দীর কথা যখন আফ্রিকার গাম্বিয়া, অ্যাঙ্গোলাসহ অন্যান্য স্থান থেকে লক্ষ লক্ষ ক্রীতদাস ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভার্জিনিয়ায় পাঠানো হচ্ছে। পর্তুগীজ ও অন্যান্য নানাজাতের দস্যু আনন্দের সাথে দাস ব্যবসায় আরাকানরাজের সাথে হাত লাগাল, বাংলার তীরে তীরে তারা ঝটিকা আক্রমনে বন্দী করতে থাকল হাজার হাজার দাস। জনবহুল এলাকা পরিণত হল বিরানভুমিতে। কিন্তু ম্রাওক-উ এর জন্যে এর অর্থ আরো ধন আরো মুনাফা, আরো অনেক অনেক উজ্জ্বল শহর।
এই ব্যাপক ধনের দিকে নজর পড়ে ওলন্দাজের, তারাও এর মধ্যে নাক গলাতে চায়। ১৬০০ এর প্রথমদিকে পর্তুগীজ শক্তি কমে আসে, তার জায়গায় শুরু হয় অন্যান্য ইয়োরোপীয়ের আনাগোনা। ১৬০২ সালে গড়া হয় ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী যখন নেদারল্যান্ডস স্টেটস জেনারেল পূর্বে বাণিজ্য করার জন্য একচেটিয়া সনদ দেয়। বাটাভিয়া (বর্তমান জাকার্তা) এ আঞ্চলিক হেডকোয়ার্টার বসানো হয়, তাদের পত্তন দ্রুত জাপান, পারস্য, বাংলা, সিংহল, শ্যাম আর চীনে ছড়িয়ে পড়ে। সপ্তদশ সতাব্দীর মধ্যভাগে ওলন্দাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বা ভিওসি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ধনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাদের ছিল ১৫০ সওদাগরি জাহাজ, ৪০ যুদ্ধজাহাজ, পঞ্চাশ হাজার কর্মচারি আর শক্তিশালী নিজস্ব মিলিটারি। আরাকানের ম্রাওক-উ তে তাদের প্রধান আগ্রহ ছিল দাস ব্যবসায়, নিয়মিত হারে হাজার হাজার আরাকান-ধৃত দাস তারা কিনত নয়া ওলন্দাজ কলোনির জন্য। কিন্তু অত্যাচার আর ক্ষুধায় মারা পড়ত তাদের অধিকাংশই জাভা পৌঁছানোর অনেক আগে।
পেগু আর অন্যান্য বার্মিজ বন্দরেও ওলন্দাজ বাণিজ্য বহাল ছিল, নতুন নতুন বাণিজ্যের সাথে বাড়ে বিলাসদ্রব্যের আমদানি। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমদিকে বিপুল ধনবান বার্মিজেরা সুদূর উত্তর আমেরিকার সেন্ট লরেন্স ভ্যালি থেকে আনানো বিভার-হ্যাট মাথায় দিত, যার মূল্য যেকোন হিসাবেই ছিল আকাশছোঁয়া। আমরা কল্পনা করে নিতে পারি পেগু, আভা, আর হয়তো ম্রাওক-উ এর লোকেও রেমব্রাঁ অথবা ভার্মিয়েরের ছবির মতই চওড়া ফ্যাশনেবল টুপি মাথায় দিত।
…...............................................................................................................
থান মিন য়ু রচিত The River of Lost Footsteps: A Personal History of Burma এর কিছু অংশের ভাবানুবাদ। সকল মতামত লিখকের নিজস্ব। ব্যবহৃত ছবিটি উইকিমিডিয়া হতে প্রাপ্ত।
মন্তব্য
বাংলা সাহিত্যে আরাকান রাজদরবারের ভূমিকা নিয়ে কি কি সব পড়েছি মনে পড়ে। এটাই কি সেই আরাকান রাজা, যার দরবারের বাংলাভাষার কবিরা পাড়ি জমিয়েছিল? নাকি সেটা ভিন্ন?
লেখা অসাধারণ লাগল বরাবরের মতোই; শুভেচ্ছা।
বাংলার দুইটি কবির কথা এখানে আছে, দৌলত কাজি আর আলাওল। চাটগাঁয়ের দৌলত কাজিকে বৌদ্ধ আরাকান রাজা সুধর্ম ডেকে নিয়ে যান। আলাওলের কাহিনী ভিন্ন, পিতার সাথে নৌকাভ্রমণের সময় পর্তুগীজ তাদের হামলা করে ও তার পিতা নিহত হন। পালিয়ে সাঁতরে আরাকান তীরে যান আলাওল। ঐখান থেকে কিভাবে কিভাবে মগ সিপাই হিসেবে মিলিটারিতে যোগ দেন তিনি, আর পরে কবিতাটবিতা লিখে রাজার নজর কাড়েন। রাজার প্রধানমন্ত্রী মগন ঠাকুর তার শিষ্যও হয়েছিলেন পরে। এই আর কি। দক্ষিণ পূর্ব বাংলার সাথে আরাকানের ভালোই দোস্তি ছিল।
..................................................................
#Banshibir.
শাহসুজার সাথে আলাওয়লের দোস্তি না হলে এই নামে যে একটা লোক ছিল, সে যে আবার টুকটাক ফারসি কবিতা অনুবাদ করে, সেটা মনে হয় কেউ জানতে পারতো না।
দৌলত কাজি আর আলাওলের হাতে রচিত (অনুবাদ বা রূপান্তর নয়) কিছু খোঁজে আছে নাকি ভাই? আরাকানি বাংলাটা কি জিনিস দেখতে ইচ্ছা করে।
দৌলত কাজির "সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী" থেকেঃ
"কর্নফুলী নদী পূর্বে আছে এক পূরী
রোসাঙ্গ নগরী নাম স্বর্গ অবতারী।।
তাহাতে মগধ বংশ ক্রমে যুদ্ধাচার
নাম শ্রী থুধম্মা রাজা ধন অবতার।।
প্রতাপে প্রভাত ভানু বিখ্যাত ভুবন
পুত্রের সমান করে প্রজার পালন।।
দেব গুরু পুজ এ ধর্মেতে তান মন
সে পদ দর্শনে হএ পাপের মোচন।।
পূণ্যফলে দেখে যদি রাজার চরণ
নারকীও স্বর্গ পাএ সাফল্য জীবন।।
.......................................
মুখ্য পাত্র শ্রীযুক্ত আশরাফ খান
হানাফী মোজাহাব ধরে চিস্তিয়া খান্দান।।
..........................................
শ্রীযুক্ত আশরাফ খান লস্কর উজীর
যাহার প্রতাপ বজ্রে চুর্ণ আর শির।।"
থুধম্মা রাজা তো রাজা সুধর্ম বোঝাই যায়, চিশতিয়া খান্দানের আশরাফ খান ভাইটি ছিলেন আরাকানের মিলিটারি জেনারেল।
আরাকানি বাংলা জিনিষটা মন্দ নয় কি কন দুর্দান্তদা?
..................................................................
#Banshibir.
লিন্ক দেন, পঠন করি।
উপরেরটা পাইসি উইকিমামুর কাছ থেকে, এছাড়া পেলাম এইটা। আলাওল পেলাম এখানে এবং এখানে।
..................................................................
#Banshibir.
বেশ মজারু। দুইজনের দুই কবিতায় জেনারেশন গ্য়াপের ছায়া পরিস্কার।
কাজিসাবের কবিতায় পুরাতন/প্রাকৃ্ত/পশ্চিমা শব্দে জারেজারঃ সুখ লাগু, ভাব জাগু, আন্ধিয়ারী, ধামারি, মেহু, ওখার, জগ-উজিয়ালা!! চরযাপদের হালকা গন্ধ পাওয়া যায়।
আর আলাওল একেবারেই দিশী, যেন পুঁথি!
ঢাকায় এত্তেলা পাঠাই, আস্ত কিতাব পড়বার বাসনা জাগাইয়া দিলেন। মারহাবা!
উনারা এখন ইয়াবা বিক্রি করেন।
ইয়াবা ব্যবসায় হাই রিস্ক হাই মার্জিন, দাস ব্যবসার মতই। হিসাব ঠিক আছে।
..................................................................
#Banshibir.
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
..................................................................
#Banshibir.
অনেক দিন পর সচলে ঢুকলেও আপনার লেখা এর-ওর লিঙ্কের মাধ্যমে ঠিকই পড়ে যেতাম।
ম্রাওক-উ শহরের বর্তমান নাম কি?
শহর তো আর নাই, মাটি খুঁড়ে প্রত্নতাত্বিক এলাকা করা আছে ট্যুরিস্টরা যায়টায়। শহরটা উঠিয়েছিল পর্তুগীজ ইত্যাদি পাইরেটের গুষ্টি, পরে বাংলায় মোগল শাসন পোক্ত হতে থাকে আর আওরঙ্গজেব মামু পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে পবিত্র জিহাদ ঘোষনা করেন। আরাকানে নানান গৃহযুদ্ধও শুরু হয়। পরে আসে ব্রিটিশ, তারাও আরাকানের সাথে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়। বানরের ডিম ততদিনে ভাজি হয়ে গেছে
আছেন ভালো?
..................................................................
#Banshibir.
আহা বেচারারা
আজ্ঞে
শহরটার নাম এখনো 'ম্রাউক উ'-ই রয়ে গেছে। ওটা এখন একটা পর্যটন কেন্দ্র।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
..................................................................
#Banshibir.
__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;
..................................................................
#Banshibir.
থান মিন ইউ প্রথম প্যারাগ্রাফটা কেন লিখেছিলেন সেটা বুঝতে পারছি না। ইখতিয়ারকে নিয়ে এই দেশের মানুষ এতো কচলাকচলি করেছে যে বলার মতো না। এখন দেখি বর্মীরাও কচলেছে। এটা নিয়ে আমিও একদা একটু কচলেছিলাম (লিঙ্ক দিলাম না)। এই পোস্টটা দেবার সময় এই প্যারাগ্রাফটা বাদ দিলেও চলতো।
নাম সংক্রান্ত ব্যাখ্যা-১: আরাকানী ভাষায় "ম্রাউক উ" মানে প্রথম অর্জন। কার অর্জন, ক্যাম্নে অর্জন? আরাকানী "হ্যামলেট"-এর নায়ক পাই ফ্রু তার প্রতিপক্ষ পি ইউ-দেরকে এই শহরের কাছে কচুকাটা করেছিল। আরকানী হ্যামলেটের জীবনে এটা ছিল প্রথম অর্জন। তাই এর নাম ম্রাউক উ। তা হ্যামলেট পাই ফ্রু-র জীবনে দ্বিতীয় অর্জনটা কী ছিল? নিঃসন্দেহে তার মায়ের শয্যা দখলকারী চাচাজানকে খতম করা।
নাম সংক্রান্ত ব্যাখ্যা-২: এই জায়গায় এক বানর অর্ঘ্য হিসাবে গৌতম বুদ্ধকে নাকি একটা ডিম দিয়েছিল। বানর = মাইয়্যাউক, ডিম = উ। সেখান থেকে ম্রাউক উ। এখানে যে সত্যটা নাই সেটা হচ্ছে, গৌতম বুদ্ধ তার জীবনে কপিলাবাস্তু থেকে একশ' মাইল দূরেও যাননি, সেখানে আরাকান তো বহু দূরের ব্যাপার। কিন্তু আজকাল যেখানে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড প্রভৃতি জায়গাতেও গৌতম বুদ্ধের পায়ের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানে বাড়ির কাছে আরশীনগরে গিয়ে বানরের কাছ থেকে কলার বদলে ডিম নিতে অসুবিধাটা কোথায়!
নাম সংক্রান্ত ব্যাখ্যা-৩: এক একা-বোকা থাকা বানরী এক সুপুরুষ বার্মীজ ময়ুরের পেখম দেখে প্রেমে পড়ে গেল। তারপর তারা ঐসব করল, এবং এতে বানরী একটা ডিম প্রসব করল। ও হরি! ডিম ফুটে বানর বা ময়ুর বের না হয়ে বের হল এক শক্তিশালী আরাকানী রাজকুমার। এটা ক্যাম্নে হৈল সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, আমি বাঙালীর সন্তান। সেই রাজকুমার তার বাবা-মায়ের আবাসস্থল ভেঙে যে নগরের পত্তন করল তার নাম হচ্ছে ম্রাউক উ বা বানরের ডিম।
এবার পাঠক যে ব্যাখ্যাটা আপনার পছন্দ হয় সেটা বেছে নিন। তবে ঐতিহাসিকেরা বলেন ১৪৩৩ সালে মিঙ চো মন আরাকান রাজ্যের রাজধানী হিসাবে এই নগরীর গোড়াপত্তন করেন।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্যাখ্যা ২ আর ৩
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পান্ডব দা রক্স।
facebook
প্রথম প্যারায় য়ু সায়েব একটু বাংলার ইসলাম আগমন ইতিহাস দুই লাইনে বলতে চেয়েছেন কারন ঐ ইসলামঘেঁষা বাংলাতেই আরাকানের রাজামশাই তিরিশ বছর পালিয়ে ছিলেন। ফিরে যাবার সময় সাথে নিয়ে যান দিল্লী পারস্যের সহবত ইত্যাদি। ঐজন্যই প্রথম প্যারায় দুই লাইন ইখতিয়ার বখতিয়ার। আমার কাছে বরং কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে শেষদিকে অযথা ওলন্দাজ কোম্পানী নিয়ে কথাবার্তা, ঐটা না হলেও বুঝি চলতো। ভেবেছিলাম বাদ দিব, কিন্তু মূল লিখা এত ছোট যে কাটছাঁট তো করি নাইই বরং একটা ছবি জুড়ে দিয়েছি যেন লিখার সাইজ ভদ্রস্থ লাগে
আপনের তিন নম্বর ব্যাখ্যায় ভোট দিলাম। বানর ময়ুরের ডিম ফেটে বেরুনো বীর রাজকুমারের ঘটনাই যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে।
..................................................................
#Banshibir.
ব্যাখ্যা-৩ কেই সবচেয়ে সঠিক বলে মনে হচ্ছে
হ। ব্যাখা ০৩। পাণ্ডব'দা রক্স!!
ডাকঘর | ছবিঘর
..................................................................
#Banshibir.
কিন্তু ম্যাপ দেখে তো মনে হচ্ছে রাজগৃহ আর বৌদ্ধ গয়া কপিলাবস্তু থেকে একশো মাইলের বেশী দূরে অবস্থিত। নাকি গৌতম বুদ্ধ রাজগৃহ আর বৌদ্ধ গয়াতেও যান নি? অবশ্য কোথায় যেনো পড়েছিলাম সত্যি সত্যি বুদ্ধের অস্তিত্বও ঠিক প্রমাণিত না।
আরে দাদা, আমি কি একশ' মাইল বলতে কাঁটায় কাঁটায় একশ' মাইল বুঝিয়েছি! মন্তব্যটার টোন লক্ষ করেছেন আশা করি। তবে বুদ্ধ বলে যদি কেউ ইতিহাসে থেকেও থাকেন তাহলে তিনি আরাকান দূরে থাক, ঢাকা পর্যন্ত যে আসেননি সেটা ঠিক। আর বুদ্ধের অস্তিত্ত্ব নিয়ে যে সন্দেহ আছে সেটা আমিও শুনেছি। এই ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন রণদা'। সুযোগ পেলে ব্যাপারটা তাঁর কাছ থেকে জেনে নেয়া যেতে পারে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আরকানের সাথে বখতিয়ার কেন বুঝলাম না ।
তথ্যবহুল লেখা- কমেন্টস্ ।
কড়িকাঠুরে
পান্ডবদার মন্তব্যের উত্তরে ব্যাখ্যা করেছি উপরে দেখে নিতে পারেন। পড়ার জন্য ধন্যবাদ কাঠুরে ভাই।
..................................................................
#Banshibir.
রসবোধ কমে গেলে যা হয় আরকী! সব গৌতম বুদ্ধের দোষ। ব্যাটা এরকম মিথ আর হিস্ট্রি মিলিয়ে খিচুড়ি পাকিয়ে বসে থাকলে আমি আর কতক্ষণ বিভ্রান্ত না হয়ে থাকতে পারি।
রণদা লিখলে খুবই ভালো হয়। দাবী জানিয়ে গেলুম।
লেখায় এবং মন্তব্যে-প্রতিমন্তব্যে অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আমার বেশিরভাগ লিখার মন্তব্যের ঘরেই আসল খেলা হয়, বিশেষত পান্ডবদা যখন পাতাজোড়া মন্তব্য করেন
..................................................................
#Banshibir.
পুরাতন বাতাভিয়া রোমান আমলের একটা রোমান নগরি। কিছু ওলন্দাজ নিজেদের বাতাভিয়ানদের উত্তরসুরী ভাবতে পছন্দ করতো, করে। তারাই ক্রমে তিনটি ওলন্দাজ উপনিবেশে 'বাতাভিয়া' নামক শহর গড়ে। একটার কথা তো সত্যপীর বলেই দিয়েছে। আরো দুটির একটি ছিল দক্ষিন আমেরিকায়, অন্যটি উত্তর আমেরিকায়। দক্ষিন আমেরিকার বাতাভিয়া এখন সুরিনামের ছোটখাট একটা শহর।
উত্তর আমেরিয়ার বাতাভিয়া এখন নিউইয়র্ক স্টেটের অন্তর্গত।
দক্ষিন আফ্রিকাতেও তো এরা কলোনি গেড়ে বসেছিল সেই কবে থেকে, ঐখানে বাটাভিয়া বানায় নাই একটা?
খাঁটি ওলন্দাজ উচ্চারন কি বাতাভিয়া? এরাও ফরাসীদের মতন ট এর বদলে ত বলে?
..................................................................
#Banshibir.
জানার আছে অনেক কিছু
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
খাঁটি কথা।
..................................................................
#Banshibir.
অনেক কিছু জানতে পারলাম।
___________________
সৌরভ কবীর
..................................................................
#Banshibir.
বরাবরের মতই আগ্রহ নিয়ে পড়লাম। একটা বই ছাপানো আপনের জন্য এখন একটা সময়ের দাবী, যাকে বলে।
______________________________________
যুদ্ধ শেষ হয়নি, যুদ্ধ শেষ হয় না
(লজ্জিত হওয়ার ইমো আসে ব্যাপক লজ্জিত হওয়ার ইমো নাই ক্যান?)
..................................................................
#Banshibir.
(গুড়)
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
টেক্সাসে গরম কিরাম?
..................................................................
#Banshibir.
খারাপ নাহ্। ঘন্টাখানেক বাইরে হাঁটাহাঁটি করলে ছাতি ফেটে পটল তোলার সম্ভাবিলিটি দেখা দেয়, এই আর কি
তোমাদের ঐদিকের অবস্থা কেমন?
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
খালি ঠান্ডা বিষ্টি, ছাতার সামার। ঘন্টাখানেক বাইরে হাঁটাহাঁটি করলে মনের দুঃখে বুক ফেটে পটল তুলার সম্ভাবিলিটি।
..................................................................
#Banshibir.
আমার ইতিহাসের জ্ঞানের যে অভাব সারাজীবন ধরে ছিল সেটা আপনার পোস্ট আর এর মন্তব্যগুলো পড়তে পড়তে দিন দিন কমে যাচ্ছে। সেদিন আর বোধহয় বেশী দূরে নেই যখন আমিও ইতিহাস নিয়ে আলোচনাতে আর ভয় পাব না।
(আবারও ব্যাপক লজ্জিত হওয়ার ইমোর অভাব বোধ করছি)
..................................................................
#Banshibir.
ব্যাপক।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
মেলাদিন পর, আসেন ক্যামন?
..................................................................
#Banshibir.
দারুন!
বই এর ব্যাপারে আমিও আওয়াজ দিয়া গেলাম।
ডাকঘর | ছবিঘর
"ডরাইলেই ডর" বইতে লিখা ছাপা হইসে তো দ্যাখেন নাই?
..................................................................
#Banshibir.
ফাটাফাটি হইছে পীরছাহেব!
ইয়ে, বাংলাদেশের বান্দরবানের মার্মাদের পেগু-আরাকান কানেকশন নিয়ে কিছু লিখতে পারবেন? আমার মার্মা দোস্ত নিজেদের পেগুর কোন এক রাজবংশের (ভায়া আরাকান) ডাইরেক্ট বংশধর হিসেবে দাবী করে, অথচ একই সাথে বাংলাদেশের 'আদিবাসী' হিসেবেও। ব্যাপারটা আমার কাছে খুব ক্লিয়ার না। এ প্রসঙ্গে একটুস রিসার্চ করে আলোকপাত করতে পারেন কোন আলাদা পোস্টে?
****************************************
কংসরাজার বংশধর ভালো জিনিস। হইতেও পারে আপনের বন্ধু। আমার অন্য কথা মনে হয় মাঝে মাঝে, এই যে দ্যাশ গিজগিজ করতেসিলো পর্তুগীজ ওলন্দাজ আধা ফিরিঙ্গি এগুলির বংশধরগুলি গেলো কই?আপনে আমিও তো হৈতারি ঠিক না?
..................................................................
#Banshibir.
পারি বৈকি।
কোথায় যেন পড়েছি, কোস্টাল বেল্টের জেলাগুলিতে বিশেষ করে দ্বীপগুলিতে এদের কিছু রেশ নাকি দেখা যায়। চোখ/চুলের রঙ দিয়ে যা অনুমান করা হয়। সত্যি মিথ্যা জানি না। তবে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালির চেহারায় আমি তো পাশ্চাত্য ছাপ কিছুই দেখি না।
****************************************
আশ্চর্য, এই পোষ্টটা বাদ পড়ে গিয়েছিল! কি বিরাট মিস হতো, কারণ আরাকানী ইতিহাসের এই অংশটা আমার কাছে বরাবরই অস্পষ্ট ছিল। জানার আগ্রহ ছিল চরম। এখন অনেকটাই খোলাসা। ম্রুক উ শহরটার বর্তমান অবস্থা দেখতে ইচ্ছে করে। পৃথিবীতে এরকম একটা রাষ্ট্র নাই হয়ে যাবার নজীর খুব বেশী নেই। আরাকানীদের জন্য সত্যি দুঃখ হয়। দুই দিকের চাপে একদম পিষ্ট হয়ে গেছে একসময়ের প্রতাপশালী একটা জাতি।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
রাজা যায় রাজা আসে
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন