শাজাহান বাদশার ফ্যামিলিটি ছিল একটি আস্ত চিড়িয়াখানা। তার সাত ছেলেমেয়ের কেউ বাঘ তো কেউ সিঙ্গি, কেউ ধুর্ত শিয়াল তো কেউ মাথামোটা বেবুন। এক ভাই গান গায় তো আরেক ভাই কুরান মুখস্ত করে, এক বোন বই লেখে তো এক বোন সারাদিন আয়নার সামনে বসে কপালের টিপ সোজা করে। এক ভাই লালপানি টানতে টানতে ফার্সি বয়েত পড়ে তো আরেক ভাই কুস্তি লড়ে। ব্যাপক হুলস্থুল কান্ড। প্রতিটি বৃহৎ পরিবারের মতন সেখানে দলাদলিও ছিল, যাকে বলে রাজকীয় দলাদলি। বড়ভাইবোন দারা আর জাহানারা এক টীম, পিতার আশির্বাদধন্য। পরে অবশ্য অসুস্থ হওয়ার পরে দারার ব্যবহারে শাজাহান কিছুটা সন্দিহান হন, তবে কন্যা জাহানারাকে আমৃত্যু অত্যাধিক স্নেহ করতেন সম্রাট। পাঠক “অত্যাধিক” শব্দটি খেয়াল করবেন। অনেকেই এর বিশেষ অর্থ করেন যা কখনোই প্রমাণিত হয়নি।
টীম নম্বর দুই তৃতীয় পুত্র আওরঙ্গজেব আর দ্বিতীয় কন্যা রওশনআরা। মৌলবাদী আওরঙ্গজেবের চক্ষের বিষ দারাশুকো, আর কুটিল রওশনআরার টার্গেট বড়বোন জাহানারা। আমে দুধে হল মিল। রওশনআরা ছিলেন হারেমে আওরঙ্গজেবের স্পাই। দ্বিতীয় পুত্র শা সুজা একটি প্রকৃত ইডিয়ট, মদ খেয়ে গদির স্বপ্ন দেখা ছাড়া তিনি তেমন কিছু করতেন না। এই রাজপুত্রের পারস্যের প্রতি বিশেষ আকর্ষন ছিল, শিয়াদের তিনি খুব ভালো পেতেন। আওরঙ্গজেব পরে ছড়িয়েছিলেন যে সুজা শিয়া হয়ে গিয়েছে, কিন্তু তা সত্য নয়। আওরঙ্গজেব সত্য বলতেন অল্পই।
সবচাইতে ছোট ছেলে মুরাদ বখশ ছিলেন একটি জড়বুদ্ধি পালোয়ান। সারাদিন তীরধনুক নিয়ে শিকার করে বেড়ানো ছাড়া জীবনে তার আর কোন লক্ষ্য ছিলনা। যুদ্ধে কূটচাল ও সমঝোতার পরিবর্তে পেশিশক্তির ব্যবহারই তার কাছে প্রধান ছিল। তবে লোকটি সত্যই ধার্মিক ছিলেন, বুদ্ধিমান ধড়িবাজ আওরঙ্গজেবের মত তিনি ধর্মকে ব্যবহার করেননি। তার একটি কারন হতে পারে সেরকম করার মত বুদ্ধি তার ছিলনা।
ছোট কন্যা গওহরআরা বা মেহেরুন্নিসা ছিল তার মত। একটি ঝলমলে জামা বা হীরের নাকছাবি দিলেই সে তা নিয়ে দিন কাটিয়ে দিত। রাজনীতিতে তার আগ্রহ দেখা যায়নি।
ওয়াল্ডেমার হ্যানসেন রচিত The Peacock Throne: The Drama of Mogul India বইতে পাওয়া যায় শাজাহানের পরিবার নিয়ে বর্ণনা। আসুন পড়ি ভাবানুবাদ। এখানে নিকোলাই মানুচ্চি বলে একজনের কথা আসবে, ভেনিশিয়ান এই পর্যটকটি দারার কর্মচারি হিসেবে দরবারে কাজ করেছেন। লুল বাদশা জাহাঙ্গীর নিয়ে তিনি চমৎকার কিছু গল্প লিখে গেছেন, তবে সেই গল্প আরেকদিন। এখন পড়বো শাজাহানের পরিবারের কথা।
…......................................................................................................
আগ্রার লালকেল্লায় মহা জাঁকজমক করে থাকতেন শাজাহান ও তার পরিবার। মুমতাজ মহল আর সন্তানেরা নিজ নিজ মহলে থাকলেও তা একই প্রাসাদের ভেতরে, পরে ছেলেরা বড় হয়ে গেলে তাদের যমুনার তীরে নিজস্ব ডেরা তুলে দেয়া হয় এবং বিবিধ দিকে গভর্নর করে পাঠিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য সম্রাটের প্রিয় বড় পুত্র দারা দরবারেই রয়ে যায়।
গৃহশিক্ষকের কাছে চার পুত্র (মুরাদের বয়স তখন চার, আওরঙ্গজেব দশ, সুজা প্রায় বারো আর দারা তখন তেরো বছর বয়সী) মোটামুটি গৎবাঁধা জিনিষই শিখত। কুরানশরীফ, নানাবিধ ফার্সি সাহিত্য এবং তাদের পূর্বপুরুষ বাবুর হুমায়ুন আকবর আর জাহাঙ্গীরের বীরত্বগাথা। হস্তলিপিবিদ্যা (ক্যালিগ্রাফি) তখন বেশ চালু ফ্যাশন, সকল রাজপুত্রকেই সুন্দর হাতের লিখা শিখতে হত ঘাড় গুঁজে।
ছোটবেলা থেকেই চার ছেলের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে। চারজনের মধ্যে কেবল দারা সঙ্গীত ও চিত্রকলার দিকে আকৃষ্ট হয়, এছাড়া শিক্ষক মোল্লা আব্দুল লতিফের কাছে সে শিখতে থাকে দর্শনশাস্ত্র। অ্যারিস্টোটল ও প্লেটো হয়ে ওঠে তার পছন্দের গুরু। ফার্সি সাহিত্যে সে মন দিয়ে পড়তে থাকে সুফী ঘরানার কাব্যগুলো। মহান আলেক্সান্ডারের কড়া ভক্ত শাজাহান বাদশার পছন্দের বিষয় ছিল ইতিহাস, কিন্তু পিতার প্রিয় এই বিষয়ে দারা অতিশয় অরুচি প্রকাশ করে। তার কাছে ইতিহাস খুবই বোরিং ঠেকত, বরং নানান সুফী ফকির দরবেশের অলৌকিক ঘটনাগুলো তাকে টানত বেশি।
এইসব গভীর বইপত্র পড়ে দারার মনে হল ইসলাম ধর্মটা একদম পদের না। কেমন সংকীর্ণ কথাবার্তা আর আধ্যাত্মিকভাবে পানসে ধর্ম, তার উপর নিয়মকানুনও অনাবশ্যক কড়া। শরিয়া আইনটাইন পড়ে তার ঘুম আসত। রাজপুত্র দারার পরবর্তী জীবনের আধ্যাত্মিক কর্মকান্ডে হিন্দুরা ভারি খুশি হয়ে মনে করেছিল আহা আকবরের মুক্তমনের পুনরাবির্ভাব ঘটলো বুঝি, আর এদিকে মোল্লার দল আস্তাগফিরুল্লা জপতে জপতে দেখতে থাকে দারার ফকির দরবেশ আর খ্রিস্টান পাদ্রীদের সাথে ওঠাবসা।
ছোটভাই আওরঙ্গজেব ছিল চরিত্রের দিক থেকে দারার একেবারে আপসাইড ডাউন। কট্টর ধর্মাবলম্বী বনে যায় সে। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে সে কুরানশরীফ অধ্যয়ন করে, পরে সে হাফেযে পরিনত হয়। জীবনের নানা সিদ্ধান্ত সে নেয় কুরানের আয়াত অনুসরন করে, অথবা হাদিস অনুসারে। বড়ভাই দারার মতই সে আরবি ও ফার্সি ভাষায় পন্ডিত হয়ে বসে। যদিও হিন্দুস্তানি ভাষায় দৈনন্দিন কার্যক্রম চলত, সাহিত্যের ভাষা ছিল প্রধানত ফার্সি। পরবর্তিতে মিলিটারি অপারেশনের সময় বলখ আর কান্দাহারে আওরঙ্গজেব তুর্কি ভাষাও শিখে নেয়, এক খিচুড়ি আর্মির সর্বাধিনায়ক হিসেবে কাজটা খুবই উঁচুদরের ছিল বলতে হবে।
তরুণ বয়সে সে ঘোষণা করে কুরানশরীফ নকল করে আর মাথার টুপি তৈরি করে জীবনের বাকী দিনগুলি কাটিয়ে দেবে। টুপির মধ্যে নানান কিসিমের ক্যালিগ্রাফি করা থাকত। এই পথ বেছে নেবার কারন নবী মুহম্মদ বলেছেন হে আমার উম্মত তোমরা উত্তম ব্যবসা করে খাও। এই ব্যবসার লাভের টাকা সে গরীব দুস্থদের জন্য বিলিয়ে দিবে বলে ঠিক হয়।
এই যে একতাড়া সুরা হাদিস মুখস্ত বলে যেত আওরঙ্গজেব তাতে করে কিন্তু তার মধ্যে কবিতার জন্য মহব্বত কখনই গড়ে ওঠেনি। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, বড়ভাই দারার মতই ইতিহাস ছিল তার দুই চোখের বিষ। তবে সে দারার মত শরিয়া আইন উপেক্ষা করেনি, ওইটার ধারা উপধারা তার খাড়া মুখস্ত ছিল। পরবর্তি জীবনে শরিয়া আইনকে সে কামানের মতই ব্যবহার করেছে। সঙ্গীতের ব্যাপারে বলতে হয় আওরঙ্গজেব বধিরেরও অধম ছিল, আর চিত্রকলাকে সে ব্যান করেছে পয়লা সুযোগেই।
ঘাড়ত্যাড়া পিচ্চি মুরাদ ছোটবেলা থেকেই কোন বিশেষ দিকে প্রতিভা দেখায়নি। প্রত্যেক বড় পরিবারেই একটা গাবর থাকে। রাজকুমার সুজার বুদ্ধিসুদ্ধি ছিল মোটামুটি, কিন্তু নারী ও সুরার দিকে তার ঝোঁক ছিল মাত্রাতিরিক্ত। এই দুই জনেই ভবিষ্যত মোগলাই গদির লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। মূল নায়ক যদিও হবে দারা বনাম আওরঙ্গজেব, আধ্যাত্মিক বনাম কাঠমোল্লা, মুক্তপ্রান বনাম গোঁড়া, তবু এই লড়াইয়ে বাকী দুই ভাই ভালোভাবেই জড়িয়ে পড়বে।
শাজাহানের মেয়েদের ছোটবেলা নিয়ে বিশদ জানার সুযোগ অল্প, হারেমের কড়া পর্দায় তারা ছিল ঢাকা। ১৬২৮ সালে জাহানারা চোদ্দ বছর বয়েসী, রওশনআরা এগারো। গওহরআরার তখনো জন্ম হয়নি। তাদের শিক্ষা দিক্ষা চমৎকারই হয়েছিল আমরা ধরে নিতে পারি, পরবর্তিতে জাহানারা লিখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।
এই মেয়েগুলি নিয়ে সবচাইতে ভালো বর্ণনা সম্ভবত দিয়ে গেছেন ইতালির নিকোলো মানুচ্চি, যদিও তার বর্ণনা একবারে পুরো নির্ভরযোগ্য নয়। মোগল দরবারে তার বেশ আনাগোনা ছিল, প্রতিটি মেয়ের সাথেই তার দেখা হয়। তাদের মধ্যে সবচাইতে বাজে রাজকুমারি হিসেবে তকমা পেয়েছে গওহরআরা, মানুচ্চির মতে, “এই মেয়েটিকে নিয়ে আমার বলার কিছুই নেই। খালি বলে যাই যে এই মেয়েটি মারাত্মক দম্ভী, অতিচালাক, হিংসুটে, স্বার্থপর আর একবারে বাজে দেখতে।”
মানুচ্চি রওশনআরাকেও বাজে দেখতে বলে গেছেন, তবে তার মতে মেয়েটি “খুব চালু, ঢং করতে ওস্তাদ, বুদ্ধিমান, হাসিখুশি, কৌতুকপ্রিয় আর বড় বোনের চেয়ে অনেক বেশি খোলামেলা। কিন্তু সে তার বড় বোনের মত মর্যাদা পেতনা দরবারে, তার স্বাধীনতাও কম ছিল। যতই আড়াল করার চেষ্টা করুক, সে যে দারা ও বেগম সাহিবের শত্রুপক্ষ তা ঠিকই মানুষ বুঝত।”
জাহানারা ছিল মানুচ্চির প্রিয় রাজকন্যা। তার মতে, “বড় মেয়েটি, যাকে তার পিতা অত্যন্ত আদর করতেন, ছিল দয়াময়ী, মুক্তমনা আর চরিত্রবতী। সকলেই তাকে পছন্দ করত।”
আজকের দিনে যে কেউই হারেমের মহল ঘুরে দেখতে পারে। ১৮৫৭ সালে ইংরেজ আগ্রার লালকেল্লার জেনানা মহলকে ব্যারাকে রূপান্তরিত করে। তামাম মহল লন্ডভন্ড করা হয়, দেওয়ালের রঙ নষ্ট করা হয়, ভেঙে তছনছ হয় কামরাগুলো। তবু এর মাঝেই খুঁটিয়ে নজর করলে দেখা যায় রূপার কাজ করা দেওয়ালে মর্মরের নালা বেয়ে গোলাপের পাপড়ি মিশ্রিত পানি আসার চিহ্ন। মহলগুলি লন্ডভন্ড হবার আগে একটা শৃঙ্খলা ছিল, একটি মহল যুক্ত ছিল পরবর্তি মহলের সাথে। যমুনার তীরে পুরো প্রাসাদ জুড়েই ছিল এমন গোলকধাঁধার মত মহল আর মহল। তাজ মহল, যা সম্ভবতঃ জাহানারা আর রওশনআরার জন্য তৈরি হয়েছিল, ছিল বাছাই করা সফেদ মার্বেল দিয়ে গড়া। উপরে ছিল পিতলের গম্বুজ।
হারেমবাসীরা ছিল ছোট ছোট দলে বিভক্ত, প্রতিটির কমান্ডার একজন উপরমহল মনোনিত নারী। উচ্চপদের নারীরা নিজস্ব মহলে থাকত। হারেমভর্তি গিজগিজ করত হাজার পাঁচেকের মত নারী। দ্বারে থাকত চব্বিশ ঘন্টা পাহারা, খোজার দল থাকত তরবারি উঁচিয়ে। বেচাল দেখলেই কল্লা ঘ্যাচাং।
মানুচ্চি হারেমের ভিতরের বর্ণনাও অল্প দিয়ে গেছেন। মোগল দরবারে তখন তার ডাক্তার হিসেবে বেশ পশার, হারেমেও মাঝে মধ্যে ডাক পড়ত। তিনি বলছেন, “আমি পর্দার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিতাম তাপমাত্রা মাপার জন্যে। মেয়েরা সেই হাত ধরে থাকত, চুমু দিত, আলতো কামড় দিত। কেউ কেউ হাত তাদের বুকেও ছোঁয়াত। এরকম প্রায়ই হত, আমি কিছুই হয়নি এমন ভান করে দাঁড়িয়ে থাকতাম যেনো খোজার দল কিছু সন্দেহ না করে।”
মোগল রাজকুমারিদের জন্য হারেম একদিক দিয়ে ছিল খুব দুঃখের ব্যাপার, তাদের বিয়ে করা নিষেধ ছিল। এই কড়া আইন চালু করেন আকবর, শাজাহানের আমলেও তা মেনে চলা হত। বলা হত মোগল রাজকুমারির জন্য কোন পুরুষই উপযুক্ত নয়, কিন্তু আসল ঘটনা ভিন্ন। পলিটিকাল ব্যাপার, ছেলেদের কে কখন আতকা বিদ্রোহ করে বসে তারই যখন গ্যারান্টি ছিলনা তখন সাধ করে কে নতুন বিদ্রোহের ক্যান্ডিডেট ডেকে ঘরে আনবে। জাহানারা, রওশনআরা আর গওহরআরা চিরকুমারিই রয়ে যাবে, ভবিষ্যত সিংহাসনের যুদ্ধে পিতা ও ভ্রাতাদের সাথে জটিল রাজনীতির চাল চালতে চালতে।
মন্তব্য
..................................................................
#Banshibir.
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
..................................................................
#Banshibir.
ভাল লাগল।
শেষের দিকের বিষয়গুলো আরেকটু বিস্তারিত হলে ভালো হত।
হারেম নিয়ে আরো লিখা আসবে, চমৎকার কয়টা বই পাইসি। মোগল কিচেন, হারেম, অস্ত্র, দূর্গ, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইত্যাদি নিয়ে ভালো ভালো বই। স্টে টিউনড, সুরের মধ্যে থাকেন
আসেন ক্যামন?
..................................................................
#Banshibir.
আছি আছি।
মানুচ্চি হয়ে হারেমে ঢুকতে মঞ্চায়।
ছি ছি আওরঙ্গজেব শুনলে রাগ করবে।
..................................................................
#Banshibir.
বাবার হইল একবার জ্বর সারিল ঔষধে
ঔষধ বাবাজিই যত নষ্টের গোড়া
..................................................................
#Banshibir.
মুঘল রাজকুমারীদের বিয়ে করা বারণ ছিল - কথাটার একটু ব্যাখ্যা দরকার। ক্ষমতাসীন মুঘল সম্রাটের কন্যাদের বিয়ে দেয়া বারণ করে বিধান জারী করেছিল সম্রাট আকবর। কারণটা পুরোপুরি রাজনৈতিক। এটা না করলে মসনদের দাবীদারদের দলে পুত্রদের সাথে জামাতারাও যোগ হতো। এতে মুঘল বংশের হাত থেকে ক্ষমতা রাজপুত বা মারাঠা বা গুজরাতের ক্ষমতাশালী কোন হিন্দু রাজবংশের হাতে চলে যাবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। খোদ দারা শিকোহ্ তার কাকা সুলতান পারভেজ মির্জ্জা’র কন্যা নাদিরা বেগম সাহিবাকে বিয়ে করেছিলেন। এই বিয়েটা দারা’র অন্য ভাইয়েরা ভালো চোখে দেখেনি। কারণ, এতে খুর্রম গ্রুপ ও পারভেজ গ্রুপ-এর অনেকেই দারার অভিষেকের পক্ষে চলে আসে।
রেফারেন্স চাইলে দিতে পারবো না, তবে মানুচ্চির ফাও গল্পের চেয়ে ভালো একটা গল্প আমি জানি। কৈশোরে আওরঙ্গজেব এক কাশ্মীরী কন্যার প্রেমে পড়েন। সে হিন্দু না মুসলিম ছিল তা নিশ্চিত নই, তবে বেশি সম্ভাবনা হচ্ছে কাশ্মীরী পণ্ডিত পরিবারের হবার। ভাগ্য আওরঙ্গজেব বা কাশ্মীরী বেগম কারো সহায় ছিল না। ১৬৪০ সালে দারা কাশ্মীরী পণ্ডিতদের কাছে উপনিষদ অধ্যয়ন করতে কাশ্মীর গেলে কাশ্মীরী বেগম তার নজরে আসে। এবং দারা তাকে তার হেরেমে পুরে ফেলে। আওরঙ্গজেব বা কাশ্মীরী বেগম কেউই দারার এই কীর্তি ক্ষমার চোখে দেখেনি। পরবর্তীতে কাশ্মীরী বেগম আওরঙ্গজেবের সাথে একটা গোপন যোগাযোগ গড়ে তোলে। ফলে দারা যখন তার পিতাসহ ভাইদের খতম করার জন্য নানা পরিকল্পনা করেছিল, তখন তার কয়েকটা আওরঙ্গজেব কাশ্মীরী বেগমের সুবাদে আগেভাগে জেনে গিয়েছিল। দারাকে খতম করার পর আওরঙ্গজেব কাশ্মীরী বেগমকে গ্রহন করেছিল কিনা জানতে পারিনি।
মুঘল ক্রাউন প্রিন্সেসদের বিয়ে না হলেও তাদের প্রেমিকের অভাব কখনোই ছিল না। জাহান আরা ও রওশন আরা’র একাধিক প্রেমিক খোদ শাহ্ জাহানের হুকুমে নির্মমভাবে নিহত হয়েছে। সুতরাং তাদের মোট প্রেমিক সংখ্যা আরো অনেক থাকাটাই স্বাভাবিক। পিতার সাথে জাহান আরা’র অজাচারের ব্যাপারটা একে বারেই রাবিশ্। জাহান আরা এটা বুঝে গিয়েছিল যে, দারার পক্ষে দিল্লীর মসনদে বসাটা প্রায় অসম্ভব। একে তো যুদ্ধ কৌশলে আওরঙ্গজেব দারার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল, তার ওপর মন্ত্রীসভা, সামন্তচক্র, প্রতিরক্ষা কর্তাগণ, রাজস্ব কর্তাগণ আর ধর্মগুরুরা কেউই দারাকে ভালো চোখে দেখেনি। দারার প্রশ্রয়ে ইউরোপীয়দের ও খ্রীস্টান মিশনারীদের বাড়-বাড়ন্ত হিন্দু-মুসলিম উভয় শ্রেণী ঘোরতর সন্দেহের চোখে দেখেছে। তাই শৈশব থেকে দারার পক্ষাবলম্বনকারী জাহান আরার পক্ষে অসুস্থ-বৃদ্ধ পিতাকে ঢাল বানিয়ে নিজেকে বাঁচানো ছাড়া উপায় ছিল না।
ফতওয়ায়ে আলমগিরীর জন্য আওরঙ্গজেবকে কেউ মনে না রাখলেও “মখ্ফী” ছদ্মনামে লেখা কবি জাহান আরাকে অন্তত ফারসী ভাষায় কবিতার পাঠকরা আরো অনেকদিন মনে রাখবে। জাহান আরার এপিটাফে উল্লেখিত তার কবিতা থেকে -
“সমাধীতে মোর চিরকাল রোক্ তৃণের আস্তরণ
দীনা’র কবরে হেন তৃণই সুযোগ্য আভরণ”
(কবিতার অনুবাদটা সম্ভবত লম্বাচুলের হাবিলদারটার করা। এর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার কিছু নেই। এই লোকটা আর তার “গুরুদেব” দাঁড়িওয়ালা শয়তানটার কাছ থেকে সম্ভব হলে শতহস্তে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।)
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ক্রাউন প্রিন্সেসদের হালি হালি প্রেমিকের ব্যাপারটা ঠিক, এ ব্যাপারে কোন এক ইউরোপীয় পর্যটক (মানুচ্চি কিনা মনে পড়ছে না) লিখে গেছেন আওরঙ্গজেবের গদিলাভের পর রওশনআরা ভারি অস্থির হয়ে পড়ে কারন তার নাকি ধারনা ছিল আওরঙ্গজেব তাকে বিয়ে করবে । এদিকে জাহানারাও তখন বাটে, সুতরাং হারেমের কর্ত্রিত্ব টেকনিক্যালি তারই। তখন নাকি রওশনআরা ভারি দুষ্টুমি শুরু করে দেয় আর হারেমে পাইকারি লাভার জড়ো করতে থাকে। আওরঙ্গজেব তাদের কয়টার কল্লা নামিয়ে দেন আবার কয়টার ঐ জিনিষটা ঘ্যাচাং করে দেন। পুরা সিনেমার মতন কাহিনী!
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
..................................................................
#Banshibir.
ওই আওরঙ্গিলা, তুই খারাইছ না- আমি আইতাছি- ইয়া ঢিসুয়া - টগবগ টগবগ....
হুহু হাহা- মুঘল হারেম... আমিও হারামি- হুউউ হুহু হাহা আ আ...
কড়িকাঠুরে
বাপ্রে কাঠুরে ভাই তো ব্যাপক জোশে আসেন
..................................................................
#Banshibir.
খালি খারান- আর দেহেন- কেমনে কচুকাটি...
হের পর- আপনি লিখবেন নয়া পাতিহাস- কাঠুরিয়া কাহানি... সুপার ডুপার বাম্পার হিট...
"কাইইইট্টা ফালা করছে"
কড়িকাঠুরে
কাঠুরিয়া কাহানি
এই কাহানি আপ্নেই লেইখা লান, পড়ি।
..................................................................
#Banshibir.
না রে ভাই... আমি লেকতারি না-
ডিসিশন পাইনাল- আন্নে আমার সভা পাতিহাস বেত্তা হইবেন ... হুকুম...
কড়িকাঠুরে
সঙ্গে আছি আপনার। চলুক লেখা।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
নিচ্চয় নিচ্চয়। অসংখ্য ধন্যবাদ!
..................................................................
#Banshibir.
জবের!
facebook
..................................................................
#Banshibir.
মোগল সম্রাটরাই দেখছি ইতিহাসের সবচেয়ে মারদাঙ্গা চৌধুরী সাহেব।
বদের হাড্ডি একেকটা।
..................................................................
#Banshibir.
দারুন!
ধইন্যবাদ।
..................................................................
#Banshibir.
..................................................................
#Banshibir.
আপনার এরকম পোস্টে পান্ডু'দার লম্বা মন্তব্য না হলে মজাটা অর্ধেক হয়ে যেত। খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করি আপনার এধরনের পোস্টের আর একই সাথে তাতে পান্ডু'দার মন্তব্যের।
মুঘলদের অন্দর মহলের খবর জানতে 'পপ্পন' নিয়া বইসা পড়লাম। জলদি পরেরটা পোস্টান!!
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
হে হে তইলেই দ্যাখেন, আমি না পোস্টাইলে পান্ডবদার পেট থেকে এগুলি বের করতে হৈলে আপ্নেদের কত কসরত করতে হৈত
..................................................................
#Banshibir.
মানুচ্চির প্রতি -
SCORE, DUDE!!
==========================
আবার তোরা মানুষ হ!
হ মানুচ্চি ভালোই স্কোর করসে
..................................................................
#Banshibir.
মুঘল রাজপরিবারের পাপ্পারাজি স্টাইল লেখা, চরম লাগতেছে, চালায়া যান।
"পাপ্পারাজি স্টাইল লেখা"
..................................................................
#Banshibir.
জব্বর লিখেছেন পীরছাহেব! শাহী মুঘলাই পরিবারের রঙিলা চিত্রটা দারুন ফুটে উঠেছে। একদম মুঘলাই খাবারের মতই জোশিলা আর মশলাদার।
শুধু একটা ছোট্ট খট্কা! লেখার মূল অংশের একদম শুরুতেই আপনি লিখেছেন - "আগ্রার লালকেল্লায় মহা জাঁকজমক করে থাকতেন শাজাহান ও তার পরিবার।"
আমি যদ্দুর জানি আগ্রার এই দূর্গের নাম "আগ্রা ফোর্ট", লালকেল্লা বা রেড-ফোর্ট দিল্লীতে। ২০০৫-এ আমি এখানে গিয়েছিলাম, তখন প্রবেশপথের সামনের ফলকেও "আগ্রা ফোর্ট"-ই লেখা দেখেছি। এখন উইকিতেও একই কথা লেখা দেখছি। উইকি বলছে লালকেল্লা পুরনো-দিল্লী্র শাহজাহানাবাদ এলাকায়। আমি মনে হয় এটাতেও গিয়েছিলাম। পুরনো-দিল্লী্র জামা মসজিদের কাছেই একটা দূর্গে গিয়েছিলাম, আমার ফিকিয়ে যাওয়া স্মৃতিতে যদ্দুর মনে পড়ছে এর নাম তখন শুনেছিলাম "শাহজাহানাবাদ দূর্গ"। কিন্তু উইকি দেখে এখন মনে হচ্ছে এটাই সেই লালকেল্লা। আমার স্মৃতিতে খানিকটা ভজঘট লেগে গেছে মনে হয়। পুরো ব্যাপারটাতে আরও প্যাঁচ লেগে গেছে যখন প্যাঁচ ছুটাতে গুগ্লাতে গিয়ে কিছু প্রাইভেট সাইটেও দেখলাম আগ্রা ফোর্টকেই আগ্রা ফোর্টের পাশাপাশি লালকেল্লাও বলা হচ্ছে। এখন আর বুঝতেই পারছিনা কোনটা লাল আর কোনটা নীল কেল্লা - চোখে স্রেফ লাল-নীল দেখছি!
আপনি এ বিষয়টা কোনভাবে পরিষ্কার করতে পারলে খুব ভাল হয়।
যাহোক, সত্যপীরবাবাজির দরবারে আমার তোলা আগ্রা ফোর্টের ভেতরের দুটো ছবি ভেট দিলাম নীচে (আশা করি দোওয়া পাব!)। এর প্রথমটা একটা জানালা টাইপের কিছুর ছবি। এর ভেতর দিয়ে আড়াই কিলোমিটার দূরে শ্বেতশুভ্র তাজমহল দেখা যায়। শাহজাহান জীবনের শেষ ৮ বছর (?) এই দূর্গেই ছেলের হাতে বন্দী ছিলেন এবং এখানেই মারা যান। এই দূর্গ আর তাজের মধ্য দিয়ে তখন যমুনা নদী প্রবহমান ছিল (এখন আর নেই)। আমাকে বলা হয়েছিল, শাহজাহান নাকি বন্দী জীবনে এই জানালা খুলে নদীর ওপারে তাজমহলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে স্মৃতিচারণ করে বন্দী জীবনের সময় পার করতেন। ২য় ছবিটা এই দূর্গেই "দিওয়ান-ই-আম' অর্থাৎ আমদরবার-এর। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় শাহজাহান (এবং তার পূর্বসুরীরা) এখানেই বিচার ও সাক্ষাৎপ্রার্থী সাধারণ লোকজনকে দেখা দিতেন। ছবিতে যে দুজন মানুষকে একটা বেঞ্চিতে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে, সেটা একটা মার্বেলের ডায়াস টাইপের কিছু যার উপরে সম্ভবত উজির-ছাহেব উঠে দাঁড়াতেন বা বসতেন। আর এরই পিছনে একটু উঁচুতে একটা মঞ্চের খোলা সামনের অংশটা দেখা যাচ্ছে - এই মঞ্চেই সম্রাট এসে বসতেন। এখানেই একটা সময় মনে হয় সেই বিখ্যাত ময়ূর-সিংহাসন শোভা পেত (এটা আমার কল্পনা)। এই ছবিতে যে কলামগুলি দেখছেন তার উপর দিকে অনেক লতাপাতা টাইপ হাল্কা-খোদাইকরা অলঙ্করন আছে। এই অলঙ্করনগুলি আদতে সম্ভবত বিভিন্ন ধরণের প্রেশাস বা সেমি-প্রেশাস স্টোন দিয়ে করা ছিল যা ইতিহাসের কোন এক বাঁকে কেউ ঘষে-খূঁড়ে তুলে ফেলেছে। দেখলেই বুঝা যায়। ঘষাঘষির চিহ্ণ এখনো মনে হয় কিছুটা আছে। আমি শুনেছি দূর্গটা মোগলদের হাতছাড়া হওয়ার পর লোভাতুর ও প্রতিহিংসাপরায়ন জাঠদের কাজ এটা। লণ্ডভণ্ডকাণ্ড বৃটিশরাই শুধু করেনি।
তবে আফসোস, 'রঙমহল' অর্থাৎ হারেমটা আমার যদ্দুর মনে হয় দেখা হয়নি। আপনার লেখা পড়ে এখন পস্তাচ্ছি!
এই পোস্টের সাথে আগ্রা ফোর্টের এই ছবি-গ্যালারিটা দেখলে অনেকে হয়তো আনন্দ পাবেন।
****************************************
বইয়ে Red Fort of Agra ই লিখা। আগ্রারটা পুরান কেল্লা, এইটার রঙ ও লাল। আগ্রার লালকেল্লা আকবর বাদশার আর দিল্লীরটা শাজাহানের। দুইটাই লালকেল্লা, একটা পুরান একটা নতুন। পুরানটা বর্তমানে আগ্রা ফোর্ট নামে পরিচিত। ইন ফ্যাক্ট, আপনে উইকিমামুতে গুঁতা দিয়া দিল্লীর লালকেল্লার পাতায় গেলে দেখবেন প্রথম লাইনেই লিখা "This article is about the Red Fort in Delhi. For the Red Fort in Agra, see Agra Fort."
ছবি দিয়া কাজটা ভালো করেন নাই। জীবনে ইন্ডিয়া যাওয়া হয়নাই আর এগুলি কিসুই দেখা হয়নাই
কি ধরনের স্মৃতি আলমপানার মনে পড়ত জানতে মঞ্চায়। তাজমহল প্রস্তুত হবার পর তার বাইশ হাজার লেবারের চুয়াল্লিশ হাজার হাতের কবজি কেটে দেবার স্মৃতি মনে পড়ত কি? বদমাইস একটা। ভালো হইসে বন্দী ছিল, শালারে ঐ ঘুলঘুলি দিয়া উলটা করে টানায় রাখা দরকার ছিল।
অফ টপিক, আসেন ভালো?
..................................................................
#Banshibir.
আরেকটা কথা বাদ পড়েছে। তাজমহলের মূল আর্কিটেক্ট ইস্তাম্বুলের মাস্টার ঈসা'র দুই চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছিল।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
তুখোড় !
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
জোস !
নতুন মন্তব্য করুন