লালচরী মাঠের উপর সুলতান মহব্বত জং এর তাঁবু। সকাল।
বড় একটা গাছের গুঁড়ি মাঠে পোঁতা, তাতে পিছমোড়া করে বাঁধা মধ্যবয়েসী হাসিন বানু। একটু দূরত্ব রেখে তাকে ঘিরে গোল হয়ে দমবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রচুর মানুষ। ভীড় ঠেলে কসাই জমির আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল তার দিকে, হাতে ছুরি। প্রতিদিন বিশটার উপর গরু জবে দেয় সে, চিকন ছুরি দিয়ে পশুর ছাল ছাড়িয়ে আনা তার জন্য কোন ব্যাপারই না। তবে জ্যাতা মানুষের ছাল ছাড়ানো তার এই প্রথম।
খুব সাবধানে হাসিন বানুর ঘাড়ের পিছনে ছুরি দিয়ে পোঁচ দিতে শুরু করল জমির, আর হাসিন বানুর আর্ত চিৎকার শুনে ভয়ে ডানা ঝটপট করে উড়াল দিল পাশের ডালে বসা দুইটা পাখি।
অনতিদূরে অপেক্ষমাণ ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর তিন অফিসার সেই চিৎকার শুনে দুবাশ সুজা হাফিজকে জিজ্ঞাসা করল, কি ঘটনা হে?
সুজা হাফিজ বলল, সুলতানপুত্র মীর্জা সাদাতের প্রধান পরিচারিকাকে ধরে আনা হয়েছে ফিরোজগড় দূর্গ হতে। গাপ হবার সময় মীর্জা সাদাত তারই জিম্মায় ছিল। সুলতানের হুকুমে তাকে জ্যান্ত চামড়া ছাড়ানো হচ্ছে।
মুখ বিকৃত করে ক্যাপ্টেন হ্যালিগান বললেন, যতসব অসভ্য ভারতীয়।
মেজর অ্যাপলটন তার দিকে তাকিয়ে বললেন, সামলে ক্যাপ্টেন। এ ব্যাপারে পরে কথা হবে। আপাতত মুখে খিল দিয়ে থাকো।
সুলতানের উজীর আবদুল মালিক এই সময় ইংরেজ অফিসারত্রয়ের কাছে এসে বললেন, সুলতান সায়েব নমাজ পড়ছেন। বেশী দেরি হবেনা। আপনারা আসুন দরবারী তাঁবুর ভেতর।
সকলে মিলে প্রবেশ করল দরবারী তাঁবুতে। দস্তরখান পেতে তখন চাকরেরা দিয়ে গিয়েছে তিন রকম ফলের শরবৎ, কাটা ফল, দুধ আর ক্ষীরের নানান মিষ্টান্ন। হাঁটু ভাঁজ করে এক পাশে তিন অফিসার বসলেন, পাশে দাঁড়িয়ে রইল দুবাশ সুজা হাফিজ। আরেক পাশে বসা উজীর আবদুল মালিক, সেনাপতি মোহর খাঁ, গোলন্দাজ প্রধান আমীর নসরৎউল্লা, সওয়ার প্রধান ফরিদ হাশমত। দূরে মাঠ থেকে তখনও ক্ষীণ কন্ঠে ভেসে আসছে পরিচারিকা হাসিন বানুর চিৎকার।
অল্পক্ষণ পরে সুলতান এসে তাঁবুতে ঢোকার পরে সকলে শশব্যস্তে উঠে দাঁড়াল। সুলতান বসে সকলকে হাত দেখিয়ে বসতে বললেন। মাথা ঝুঁকিয়ে দুবাশ সুজা হাফিজ সুলতানের সামনে ইংরেজ কোম্পানীর ভেট রাখলেন। পারস্যের অত্যুত্তম গালিচা। এক মুহুর্ত সেইদিকে চেয়ে তারপর সুলতান ইংরেজ অফিসারদের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেজর অ্যাপলটন কে?
দুবাশ মারফত মেজর অ্যাপলটন বললেন, আমি।
সুলতান বললেন, মির্জা সাদাত খুন হয়নি। পানিতে সিদ্ধ করা হয়েছে কোন এক গরীবের বাচ্চা। মীর্জা সাদাতকে গুম করা হয়েছে, তুমি যেরকম লিখেছিলে। সাবাস মেজর, তোমার এলেম আছে বটে।
মেজর অ্যাপলটন মৃদু হাসলেন।
সুলতান আবার বললেন, মীর্জা সাদাত কোথায় আছে জানো নাকি? আকবরের কাছেই আছে শুনলাম? আর তাকে খুন করার নাটকের মানেই বা কী?
আমাদের কাছেও খবর সেরকমই সম্মানিত সুলতান, মেজর বললেন, মীর্জা সাদাত আপনার ভ্রাতা আকবর খাঁ সাহেবের জিম্মায়। ফিরোজগড় দূর্গের ভিতরেই, কিন্তু আকবর খাঁ এর মহলে নয় সম্ভবত। আপনার দ্বিতীয় বিবি তাহিরা বেগমের মহলে আছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে, তবে খবর পাকা নয়।
ঘাড় নাড়লেন সুলতান, আমিও সেরকম খবর পেয়েছি যে তাহিরা আকবরের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। সে নষ্ট চরিত্রা মেয়েলোক, গায়ে জামা রাখতে তার কুটকুট করে। কতক্ষণে কার সাথে জামা খুলবে সেই চিন্তা করে সারাদিন। তার মেয়েগুলাও হয়েছে মহানষ্টা।
এই বলে সুলতান থামলেন, আর সকলে চুপ করে রইল। সুলতান একটু পর আবার মুখ খুললেন,
কিন্তু মেজর সায়েব, ফরাসী আমার কাছে না এসে মদ্যপ আকবরের কাছে গেল কেন?
শান্ত কন্ঠে মেজর অ্যাপলটন বললেন, সম্মানিত সুলতান। আপনি ফরাসীদের সম্বন্ধে কতদূর জানেন আমি জানিনা, তবে আমি নিশ্চিত করে আপনাকে বলতে পারি ফরাসীরা একেকটি মূর্তিমান শয়তান। তাদের কাজই হচ্ছে সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলা, সোজা পথ বাদ দিয়ে বাঁকা পথে যাওয়া ইত্যাদি। সারাদিন মদ খেয়ে চিন্তাশক্তি লোপ পেলে মানুষ এরকমই আচরণ করে থাকে সুলতান বাহাদুর। ক্যাপ্টেন গি তেত্রো এক মদ্যপ গিয়ে ধরেছে আরেক মদ্যপ আকবর খাঁ কে, এতে অবাক হবার কিই বা আছে বলুন?
হাসলেন সুলতান, তাই বুঝি? বেশ বেশ। এই ফরাসীরা তো অতি বদ দেখি। ঠিক আছে। তা তোমাদের আমার কাছে কি প্রয়োজন?
এই মুহুর্তে আমাদের কর্তব্য আপনার পুত্র সন্তানের মুক্তির ব্যাপারে সর্বোচ্চ সহায়তাদান। আর কিছুই নয়।
বাহ। তোমরা তো মোটেই ফরাসী নও দেখছি। খুব ভালো কথা। তা মীর্জা সাদাত মুক্তি পেলে কিছু চাও টাও নাকি?
অস্বস্তিকর একটা নীরবতা নেমে এল তাঁবুতে। সুলতানের মিটিমিটি হাসি ধীরে ধীরে শুকিয়ে আসছে দেখে মেজর অ্যাপলটন তড়িঘড়ি করে বললেন, সব গোল মিটে গেলে আমরা হয়তো সম্মানিত সুলতানকে অনুরোধ করবো আমাদের শুল্কের ব্যাপারটা বিবেচনা করতে। সুলতান অবশ্যই জানেন বাদশাহ আলমগীরের ফরমান অনুযায়ী সাড়ে তিন শতাংশ শুল্ক আমরা দিয়ে থাকি হিন্দুস্তানে, কিন্তু অত্র এলাকায় তা পাঁচ শতাংশ। কিছু অসাধূ কর্মকর্তা আবার তার উপর আধা শতাংশ কেটে রাখে বন্দরে। মহান সুলতান যদি মনে করেন আমাদের বিশ্বস্ততা, আনুগত্য ও সর্বোচ্চ সহায়তার বিনিময়ে আমরা সাড়ে তিন শতাংশ বা তার কম শুল্ক প্রদান করতে পারি তাহলে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে।
স্থির চোখে তাকিয়ে সুলতান বললেন, পাঁচের বদলে সাড়ে তিন। অর্থাৎ দেড় শতাংশ। দেড় শতাংশ শুল্কহ্রাস। আমার পুত্র মালিক মীর্জা সাদাত বাহাদুরের জীবনের বিনিময়ে দেড় শতাংশ শুল্কহ্রাস।
ভয়ংকর জোরে মাথা নেড়ে মেজর অ্যাপলটন বললেন, কখনোই নয়। দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয় তো বটেই। মীর্জা সাদাতের মুক্তি আমাদের কর্তব্য। শুল্কের ব্যাপারটা সুলতানের বিবেচনা, এই বিষয়ে আমরা আপনার সাথে এমনিই যোগাযোগ করতাম। তবে এই মুহুর্তে শুল্ক আমাদের আলোচনার বিষয় নয়।
দীর্ঘ সময় সুলতান মহব্বত জং চুপ করে রইলেন। তারপর বললেন, ফরিদ হাশমত।
সওয়ার বাহিনী প্রধান ফরিদ হাশমত শশব্যস্তে বললেন, হুজুর।
ফিরোজগড় দূর্গ তাহলে কিভাবে আক্রমণ করা যায়? মীর্জা সাদাত আকবরের জিম্মায় থাকলে উত্তর পশ্চিম কোণে আছে, তাহিরার কাছে থাকলে দক্ষিণে। ঢাল আছে দক্ষিণে, ঐদিক দিয়ে ঢোকা ঠিক হবে কি?
প্রধান সেনাপতি মোহর খাঁ খুব বিরক্ত হলেন। এই ব্যাপারে নাম ধরে ডেকে ফরিদ হাশমতের সাথে কথা বলার কি হল, যুদ্ধের পরিকল্পনা করার অধিকার, অভিজ্ঞতা অথবা বিবিধ বাহিনী পরিচালনা করার ক্ষমতা কোনটাই তো ফরিদের নাই, রয়েছে মোহর খাঁ এর। সুলতান ফরিদ হাশমতের চাটুকারিতায় এসব ভুললে তো মুস্কিল।
তিনি বাধা বললেন, হুজুর ফিরোজগড় আমাদের নিজেদের দূর্গ। কামান দেগে নিজেদের ঘরবাড়ি উড়িয়ে দিলে তো বড় সমস্যা হবে হুজুর।
একটু বিরক্ত হয়ে ফরিদ হাশমত বললেন, কামান দেগে সমস্ত উড়িয়ে দেবার কথা আসছে কেন? আমরা এগুব ঠাণ্ডা মাথায়। সাতটা দরজার যেকোন দুই বা তিনটি ভেঙে এগুতে হবে। পশ্চিম দ্বার আর মূল ফটকে অবশ্য ফিরিঙ্গি দাঁড়িয়ে গেছে খবর পেলাম।
মেজর অ্যাপলটন মাথা নাড়লেন, সঠিক। গি তেত্রো এর বাহিনী অবস্থান নিয়েছে মূল ফটকের বাইরে, উপরে চৌকিখানায় এবং পশ্চিম তোরণের বাইরে। সেইদিক দিয়ে ঘোড়সওয়ার বাহিনী বা পায়দল সিপাই পাঠানোর আগে গোলন্দাজ বাহিনী পাঠানো জরুরী। আমরা তাদের সামরিক শক্তি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তারা সৈন্যসামন্ত এমনভাবে ছড়িয়ে রেখেছে যে মনে হয় তাদের কত না বড় বাহিনী। সত্য হল, তারা সংখ্যায় নগণ্য। সকলের বন্দুকও নেই।
সুলতান বললেন, আচ্ছা।
মেজর অ্যাপলটন বলে চললেন, আমাদের হিসাব মতে, আক্রমণ চালানো চাই আগামীকাল ভোরে। পশ্চিম, উত্তর পশ্চিম এবং…
কথা শেষ হল না, তাকে বাধা দিয়ে গলা উঁচিয়ে ফরিদ হাশমত বললেন, থামুন মেজর। আমাদের আগে জানতে হবে মীর্জা সাদাতের অবস্থান, তারপরে বাকি হিসাব।
মিটমিট করে হেসে মেজর অ্যাপলটন বললেন, বিকেলের মধ্যেই আমরা আমাদের গোপন সংবাদদাতার কাছ থেকে পেয়ে যাব মীর্জা সাদাত বাহাদুরের সঠিক বর্তমান অবস্থান। নিশ্চিন্ত থাকুন।
চোয়াল শক্ত করে কি একটা বলতে গিয়েও নিজেকে সংযত করলেন ফরিদ হাশমত।
…………………………………………………………………
বিকেল। ইংরেজ অফিসারত্রয়ের তাঁবু।
মেজর অ্যাপলটন টুপি খুলে পাত্র থেকে একটু পানি খেলেন, তারপর পাশে বসা ক্যাপ্টেন চার্লটনকে বললেন, কেমন বুঝছো?
ক্যাপ্টেন চার্লটন বললেন, এই সুলতান এক ত্যাড়া মাল। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে এ আমাদের সাহায্য নিয়ে পরে লাথি দিয়ে তাড়িয়ে দিবে।
মেজর বললেন, হ্যাঁ সেরকম সম্ভাবনা আছে বটে। ছেলে কিভাবে উদ্ধার হবে সেই প্ল্যানের আগেই এ জিজ্ঞেস করছে আমরা কি চাই আর ফরাসী তার কাছে কেন গেল না। এইটা একটা হারামী সুলতানই। এ আমাদের শুল্ক কমাতে রাজি হবে বলে মনে হয় না।
মাথা নাড়ল ক্যাপ্টেন চার্লটন আর ক্যাপ্টেন হ্যালিগান। মেজর অ্যাপলটন তাকিয়ায় হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলেন। ক্যাপ্টেন চার্লটন সঠিক, এই সুলতান তাদের সাময়িক সাহায্য নিচ্ছে মাত্র। শুল্ক কমাবে না মনে হয়। কিন্তু মেজর এখানে এসেছেন অনেক বড় মিশন নিয়ে, শুল্কহ্রাস একটা ছোট অংশ মাত্র। এছাড়াও লাগবে একটা বারুদের কারখানা বানানোর অনুমতিপত্র, আর চাল্লু পাহাড়ের উপর মাঝারি সাইজের দূর্গ গড়ার অনুমতি। চাল্লু নদী গিয়ে সাগরে পড়েছে, সেই লোকেশনের কাছে মারাঠি আর পর্তুগীজদের ভয়ানক উৎপাত। চাল্লু পাহাড়ে আউটপোস্ট থাকলে ইংরেজ জাহাজের উপর নজর রাখা যাবে এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে সাহায্য পাঠানো যাবে আক্রান্ত ইংরেজ জাহাজে।
এই সময় দুবাশ সুজা হাফিজ প্রবেশ করল তাঁবুতে। মেজরকে বলল, ফিরোজগড় থেকে চিটঠি এসেছে।
কি লিখা?
দুবাশ খুলে পড়ল গুপ্তচরের চিঠি। তারপরে বলল, কেবল লিখা মীর্জা সাদাত মহলের ভিতর আছে। তাহিরা বেগমের নিজস্ব কারকারাক খানাহ এর পাশে গোপন কক্ষে।
কারকারাক খানাহ কি?
পোষাক রাখার ভাণ্ডার সায়েব। বড় কামরা।
মাথা ঝাঁকালেন মেজর অ্যাপলটন। চিন্তা করলেন খানিক, তারপরে বললেন সুলতানের কাছে খবর পাঠাও। এখুনি। আমাদের আগামীকাল ভোরে অপারেশনের জন্য তৈরি হতে হবে দ্রুত।
সুজা হাফিজ বের হয়ে যেতে উদ্যত হতেই মেজর তাকে আবার থামালেন। বললেন, শোন দুবাশ। উজীর আবদুল মালিক আর সেনাপতি মোহর খাঁ কে আলাদা খবর দাও। বল আমি কথা বলতে চাই নিরালায়। সুলতানের সাথে সাক্ষাতের পরে। কাকপক্ষীও যেন টের না পায়।
অবশ্যই সায়েব। তাই হবে।
…………………………………………………………………
পরদিন কাকভোর। ফিরোজগড় দূর্গের বাইরের জঙ্গলঘেরা এলাকা।
ঘোড়ায় বসা সুলতান মহব্বত জং অস্থির হয়ে বললেন, সব ঠিক আছে? ফজর ওয়াক্তেই তো আমাদের ঢোকার কথা না?
পাশ থেকে সওয়ার বাহিনী প্রধান ফরিদ হাশমত বললেন, হ্যাঁ সব ঠিক। কামান দেগে পশ্চিম দরওয়াজা, বুলন্দ দরওয়াজা উড়িয়ে দেয়া হবে একই সাথে। দক্ষিণ দরওয়াজার ভেতর তখন খুলে দেবে মেজর অ্যাপলটনের লোক, আমি বাছাই করা কিছু সিপাই নিয়ে যাব সুলতানের সাথে ঘোড়ায়, কারকারাক খানাহ এর দিকে। মীর্জা সাদাত সেখানেই আটক আছে বলে আমি এবং ফিরিঙ্গি মেজর নিশ্চিত হয়েছি। দূর্গের ভিতর সৈন্য এবং সকল ফিরিঙ্গি পশ্চিম এবং বুলন্দ দরওয়াজায় ব্যস্ত থাকায় আমাদের মীর্জা সাদাতকে বের করে আনতে বেগ পেতে হবে না।
পাশে থাকা সকলে মৃদু মাথা ঝাঁকালেন। সকলেই প্রস্তুত। ধীরে ধীরে সকলে ছড়িয়ে পড়তে আরম্ভ করলেন। গোলন্দাজ বাহিনী প্রধান আমীর নসরৎউল্লার প্রথম দান। তিনিই প্রথম কামান দাগার সঙ্কেত দেবেন। পশ্চিম এবং মূল তোরণের বাইরে লুকানো কামান গর্জে উঠবে সেই সঙ্কেতে, আর আচমকা যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে সেই দুই দরজার দিকে। তার কিছু পরে মহলের কাছের তোরণ দক্ষিণ তোরণ খুলে দেবে গুপ্তচর যেন সুলতান আর ফরিদ হাশমত কিছু বাছাই করা ঘোড়সওয়ার নিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন।
আর তখনই আসল চাল চালবেন আমীর নসরৎউল্লা। তার সঙ্কেতে গোলন্দাজ বাহিনী কামান দেগে উড়িয়ে দেবে দক্ষিণ দরওয়াজা, সাথে সাথেই সুলতান এবং ফরিদ হাশমত এর ইন্নালিল্লা। গতকাল গভীর রাতে সেনাপতি মোহর খাঁ এবং উজীর আবদুল মালিক যখন ডেকে পাঠিয়েছিলেন তখনই নসরৎউল্লা বুঝেছিলেন কোন ব্যাপার আছে। তাদের সাথে নাকি কথা হয়েছে ফিরিঙ্গি মেজরের, সে প্রস্তাব দিয়েছে যুদ্ধে আকবর আর ফরাসীর সাথে সাথে সুলতানকেও খতম করে দেয়া হোক। সুলতানের নাবালক পুত্র মীর্জা সাদাত মেজরের লোকের হাতে, সে অক্ষতই থাকবে। নাবালক পুত্রের দেখভালকারী হিসাবে আস্ত রাজ্য চালাবেন উজীর আবদুল মালিক।
ফিরিঙ্গি ঠিক কি চায় তিনি সঠিক জানেন না অবশ্য, তবে সুলতান ও ফরিদ হাশমত হাপিশ হতে চলেছে এতেই তিনি সন্তুষ্ট। সুলতান ফরিদ হাশমত ছাড়া কারুর কথাই শোনেননা ইদানিং, বিরক্তিকর। এছাড়া সুলতানের নারীলোলুপতা এবং রাজকোষ খালি করে অর্থহীন যুদ্ধের আঞ্জাম করার খায়েশ মিটাতে গিয়ে রাজ্যের দফারফা। ফৌজের সিপাইদের বেতন বাকি আছে সাত মাস হতে চলল।
দূরে সুলতান মহব্বত জং হাত তুললেন, তাই দেখে আমীর নসরৎ শ্বাস নিলেন একটু। তারপরে সঙ্কেত দিলেন তার গোলন্দাজদের। আকাশ কাঁপানো আওয়াজ করে গর্জে উঠল সতেরোটি কামান, আর হইহই শব্দ করে পশ্চিম এবং বুলন্দ দরওয়াজা দিয়ে ঢুকে গেল সুলতানের সিপাই। ভিতরের ফৌজি সিপাই এবং ফরাসী সৈন্যরা পাল্টা আক্রমণ আরম্ভ করল, সে এক কেয়ামতি কাণ্ড!
এই সময় দেখা গেল সুলতান এবং ফরিদ হাশমতের দল ধুলো উড়িয়ে দক্ষিণ তোরণে প্রবেশ করছে। এ ই সময়। আমীর নসরৎ দেখলেন তার বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে, ঢোঁক গিলে তিনি সেদিকে কামান দাগার সঙ্কেত দিলেন। কান ফাটানো আওয়াজ করে দক্ষিণ দিকে তাক করা ছয়টা কামান গর্জে উঠল।
নিহত হলেন সুলতান মহব্বত জং। তার বাহিনী তখন ফিরোজগড় দুর্গ জয়ের পথে।
………………………………………………………………
তিন দিন পরের কথা। ফিরোজগড় দূর্গের বাইরে চত্বর।
বৃদ্ধ উজীর আবদুল মালিক নাবালক মীর্জা সাদাত কে বিশেষভাবে তৈয়ার সোনার কেদারায় বসিয়ে সামনের দাঁড়িয়ে থাকা প্রজাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে জনতা। আপনারা সকলেই জানেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় সুলতান আর আমাদের সাথে নেই। তিনি জান্নাতবাসী হয়েছেন। আল্লাহ তার আত্মাকে শান্তি দিন।
সমবেত জনতা মৃদুস্বরে বলল, আমিন। আমিন।
আবদুল মালিক আবার বলতে শুরু করলেন, তবে আল্লাপাকের অশেষ মেহেরবানি মরহুম সুলতানের ওয়ারিশ, আমাদের সকলের নয়নের মণি, আমাদের মালিক মীর্জা সাদাত বাহাদুর সুস্থ আছেন। গভীর ষড়যন্ত্রের নাগপাশ ছিন্ন করে আজ তিনি মুক্ত। আমাদের ভবিষ্যত সুলতান আছেন আমাদের মাঝেই। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলল্লাহ।
সকলে বলল আলহামদুলিল্লাহ।
আবদুল মালিক বললেন, দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমরা পাশে পেয়েছি এক নতুন বন্ধুকে। আমাদের সাথে আপনারা দেখছেন দাঁড়িয়ে আছেন ইংরাজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ফিরিঙ্গি মেজর জেমস অ্যাপলটন এবং তার অধীনস্থ দুই ক্যাপ্টেনকে। মির্জা সাদাতকে উদ্ধারে তাদের তৎপরতা ছিল তুলনাহীন। আমি দুই হাত তুলে স্বাগত জানাই আমাদের এই নয়া বন্ধুকে। আশা করি আমাদের এই বন্ধুত্ব থাকবে অটুট ও চিরস্থায়ী। ফিরিঙ্গি কোম্পানি কি জয়!
সকলে চিৎকার করে উঠল, ফিরিঙ্গি কোম্পানি কি জয়!
সুলতান মীর্জা সাদাত বাহাদুর কি জয়।
জনতা গর্জে উঠল, সুলতান বাহাদুর কি জয়!
পাশে দাঁড়ানো ইংরেজ কোম্পানির মেজর জেমস আর্থার অ্যাপলটন উল্লসিত জনতার দিকে চেয়ে ভাবলেন, বিনাশুল্কেই এইখানে কিনাবেচা করা যাবে সম্ভবত। বারুদ ফ্যাক্টরি আর চাল্লু দূর্গও কোন সমস্যা হবে না। উজীর আর সুলতানের ফৌজ কমান্ডারেরা তার লালকুর্তার পকেটেই থাকবে।
মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে তিনি আস্তে করে বললেন, পার্ফেক্ট!
(শেষ)
মন্তব্য
বহুত, খুব
মারহাবা
নজরানা?
..................................................................
#Banshibir.
ডলারে নিলে
কার্ডে নিলে
সোনার মোহরে নিলে
থলে লাগলে
আর আমার হাত থেকে না নিতে চাইলে
এইখানেও গোলাম আজম-নিজামী-মুজাহিদ গং? গল্পটা শ্যাষ কইরা দিলেন ক্যা? শ্যাষে গোআ’র কী হইল? এইখানেও কী মামায় ঘি মাখন খাইতাছে???
আর কত টানুম? গল্প ফিনিশ।
..................................................................
#Banshibir.
"মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে তিনি আস্তে করে বললেন, পার্ফেক্ট!
(শেষ)"
হ, এইভাবেই সব শেষ! এরপরে সবাইর এবং মেজরদিগের নুতন যুগের শুরু!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নারীলোলুপ এবং যুদ্ধবাজ সুলতানের যুগ থাকলেই কি আর ভালো ছিল?
..................................................................
#Banshibir.
না: এর উপ্রে আর কুন কথা নাই!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
পার্ফেক্ট।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
..................................................................
#Banshibir.
ওহে, আপনার গল্পগুলোর শমপর্ব আগের পর্বগুলোর থেকে পিছিয়ে থাকছে। :-/
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
শমপর্ব, চমৎকার বলেছেন তো।
ইন্টারেস্টিং পর্যবেক্ষণ, আমার পক্ষে সত্যমিথ্যা যাচাই করা সম্ভব নয়। আমার লেখা গল্প আমি পাঠকের চোখ দিয়ে দেখতে পাইনা। তবে এই পর্যবেক্ষণ যদি সত্য হয় তার একটা কারণ হতে পারে আমার গল্প লিখার তরিকা। আমি একটা গল্পের খসড়া (অথবা অন্য যেকোন লেখার খসড়া) যখন করি তখন আমি মোটা দাগে দুইটা জিনিস ঠিক করে তাতে স্টিক থাকি, নড়ি না। বিগিনিং এবং এন্ডিং। এন্ডিং যেকোন মিডিয়ার লেখার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্লগ ফর্ম্যাটে প্রথম প্যারাগ্রাফটার গুরুত্ব অপরিসীম। সেই প্যারা পড়েই মানুষ ঠিক করবে বাকিটা পড়বে কি না। পাঠকের সময় মূল্যবান। ব্লগ ছাড়া অন্য মাধ্যমে বিগিনিং এর এইরকম মারাত্মক ক্ষমতা নাই।
যাই হোক, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে যেহেতু আমি আমার এন্ডিং এ স্টিক থাকি তাই হয়তো শেষটা সকলের মনমতো হয়না। মাঝের অনেক কিছুই লিখতে লিখতে চলে আসে, তখন হয়তো শেষটুকুতে তার প্রভাব পড়ে।
তবে আমি শেষটা স্থির রাখি একটা কারণে। আমার কল্পনাশক্তি সীমিত, লিখতে লিখতে ফাটানি এন্ডিং দিব এই ভরসায় যেকোন একটা গল্প শুরু করা আমার জন্য অসম্ভব।
..................................................................
#Banshibir.
না না! গল্পের শেষে পাত্রপাত্রীদের কী হলো বা ঘটনা প্রবাহ কোথায় গিয়ে পৌছল সেটার কথা বলিনি কিন্তু। এবং শুরুর আগে শেষটা ঠিক করে নেওয়ার পিছনে আপনার যুক্তির সাথেও দ্বিমত নেই।
আমি বলছি গল্প প্রবাহের কথা। ধরুন প্রথম দুটি পর্বে যে তালে গল্প এগিয়েছে। এই পর্বে এসে হঠাৎ করেই মনে হয়েছে, তালটা ভিন্ন। লাফ দিয়ে যেন শেষে চলে এলাম।
আমি ভেবেছিলাম গল্পটা ছয় - সাত পর্ব হবে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আচ্ছা গল্পের টেম্পোর কথা হচ্ছে। আমি একেক বসায় একেক পর্ব লিখি, টেম্পো ঠিক রাখতে মনে থাকেনা। ভবিষ্যতে খেয়াল রাখব।
আমি ভেবেছিলাম গল্পটা চার পর্ব হবে। তিনে নামিয়ে আনতে হয়েছে কয়টা বিষয়ে তথ্যের অভাবে।
..................................................................
#Banshibir.
গল্পটি পড়ে শেষ পর্যন্ত মনে হল এই উপোমহাদেশে সব যুদ্ধেই কোন কোন ভাবে মীর জাফররা প্রভাব বিস্তার করেছে। আর শেষে তারাই রাজত্য করেছে।
পলিটিক্স পোকারের মত। ব্লাফ এইখানে কমন ট্যাকটিক্স।
..................................................................
#Banshibir.
চিঠিতে পিশাব করে মহাবীর বেশ ঘোল পাকিয়ে তুলেছিল।
সেই অপমান জিইয়ে রেখে সুলতানকে পার করে দিলেন?
বেচারা
-ছায়াবৃত্ত
হ মহাবীর বাঁইচা গেল এই যাত্রা।
..................................................................
#Banshibir.
আপনি কাহিনী খতম করে দিলেও কিছু কথা কিন্তু থেকেই যায়। বৃদ্ধ উজীর আবদুল মালিক কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিল? তার পরে কে? সেনাপতি মোহর খাঁ, নাকি নসরৎউল্লা? মেজর অ্যাপলটন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠতে কতদিন সময় নিয়েছিল? ইতিহাস জানতে মঞ্চায় আর কি।
সুমায় থাকলে আস্তা সাতকাণ্ড রামায়ণ লিখতাম।
..................................................................
#Banshibir.
তিনটা পর্ব পড়লাম পর পর। আগের দুই পর্বের, বিশেষ করে প্রথম পর্বের, দম আটকানো ভাবটা নেই এটাতে। কিন্তু সুলিখিত কাহিনির সুচিন্তিত পরিণতি আছে। দারুণ লিখেছেন।
কে যেন বলছিলেন আপনার কাহিনি নিয়ে নাটক/সিনেমা করার জন্য। এতে একটা কথা এসেছিল খরচ নিয়ে। এখন ওয়ারিশ পড়ার পর থেকে মাথায় ঘুরছে অ্যানিমেশন ফিল্ম করা যায় কিনা!
____________________________
অ্যানিমেশন ফিল্ম তো আরো খরচের ব্যাপার মিয়াভাই।
..................................................................
#Banshibir.
শেষ হল এবং চমৎকার হল।
মনে রাখার মত লেখা
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
মুখস্ত করসেন? পড়া ধরুম কিন্তু।
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ হয়েছে গল্পটা। সামনে আরো বড় আকারের গল্প পড়ার আগ্রহ জানিয়ে গেলাম। এ ধরনের গল্পগুলোকে এক করে কবুতর ফারুককে দিয়ে জোড়া দিতে পারলেও মন্দ হয় না।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটা অসাধারণ উপন্যাস আছে ফ্রান্সিসকো পিজারোর পেরু জয়ের পটভূমিতে, "সূর্য কাঁদলে সোনা"। আপনি আস্তে আস্তে পরিসর বাড়াতে থাকলে বছর দুয়েকের মধ্যে সেরকম আরেকটা ইতিহাসনির্ভর জমজমাট থ্রিলার পড়ার সুযোগ পাবো আমরা।
(আউটপোস্টের বাংলা কী হতে পারে?)
আউটপোস্টের সাধারণ তর্জমা ফাঁড়ি টাইপ কিছু। তবে মেজর অ্যাপলটনের মনে যা আছে তাতে ফাঁড়ি বললে মনে হয় ঠিক হয়না। আউটপোস্ট বা আরো সঠিক করে বলতে গেলে অবজার্ভেটরি টাওয়ার, এইটে চাল্লু পাহাড়ে বসানোর পরিকল্পনা ইংরেজদের। দূর্গের সাথে লাগোয়া।
সূর্য কাঁদলে সোনা একটা সত্যকারের মাস্টারপিস। এইরকম গল্প ইংরেজি বা অন্য রোমান ভাষায় লেখা হলে এতোদিনে সিনেমা হয়ে যেত। এই মাপের লেখা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব নয়, সূর্য কাঁদলে সোনা হল হাঁ করে তাকিয়ে থাকবার মত জিনিস। অনুকরণ করা বাতুলতা। ব্যক্তিগতভাবে আমি মারা যাবার আগে অন্তত একটা গল্প লিখে যেতে চাই শরদিন্দুর "রক্ত-সন্ধ্যা" গল্পের মত। মাথা নষ্ট করে দেওয়া একটা ছোটগল্প, শরদিন্দুর ঐতিহাসিক সমগ্রে পাবেন। কালিকটে ভাস্কো দা গামার সাথে এক মুর ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্ব নিয়ে গল্প। ডিটেলের কাজ মারাত্মক।
কবুতর ফারুক এবং তার গার্লফ্রেন্ড তারাবাঈকে নিয়ে স্পিশাল প্ল্যান আছে। দোয়া খায়ের কাম্য।
..................................................................
#Banshibir.
"রক্ত-সন্ধ্যা" আমারও খুব প্রিয় গল্প, বলতে কি ঐ সংগ্রহের গল্পগুলো এক একটা রত্ন, "অমিতাভ"(বুদ্ধের সময়ের ), "বিষকন্যা"(শিশুনাগবংশের রাজত্বের আমলের), "চুয়াচন্দন"(চৈতন্যের আমলের), "মৃৎপ্রদীপ"(প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলের), "মরু ও সংঘ "(মধ্য এশিয়ায় বৌদ্ধধর্ম প্রসারের আমলের), "তক্ত মোবারক" (আওরঙ্গজেবের আমলের)---কত আর বলি! ঐরকম অনাসক্ত অনুরাগীর মতন প্রাচীন ইতিহাস চমৎকার করে গল্প করে বলা আর কারও লেখায় পাইনি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
মাঝে মাঝেই বসে যাই এই গল্পগুলো পড়তে - হারিয়ে যাই এদের মাঝে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
তিনটা একসাথে পড়লাম। কারণ এক- পেরেশানিতে ছিলাম কয়েকদিন আর দুই হইলো আপনার ফুরায়নাপর্ব
ধুন্ধুমার হইছে। বিশেষ করে দুইনম্বরটা!
কড়িকাঠুরে
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ। চমৎকার। পার্ফেক্ট। একটানে পড়ে শেষ করলাম।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
সাব্বাস, এইতো চাই
..................................................................
#Banshibir.
ধইন্য হইলাম।
কিন্তু একটা কথা পীরসাব, একটু কিন্তু কিন্তু কইরা বইলাই ফালাই, আমি আরো বেশ বড়ো কাহিনি আশা করসিলাম। ঐসব গুপ্ত মন্ত্রণা নানারকম কৌশলী গুপ্তচর এইসব জায়গা গোটা গোটা পর্ব আশা করসিলাম, সিনেমার মত আরকি।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
এইতো ধইরে ফেলছেন, আমি যে অল্প কাটছাঁট করসি কেউ না কেউ ধরবে জানতাম। আমার মূল প্ল্যানে ফরাসী ক্যাপ্টেন গি তেত্রোর একটা পার্ট ছিল, ঐটা দুঃখের সাথে কেটে বাদ দিতে হইসে আমার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য ছিলনা বলে। জীবন দুঃখময়।
পরেরবার আরেকটু খাইটা লিখব।
..................................................................
#Banshibir.
আকবর খাঁর উদ্দেশ্য কি? ফরাসিদের সাহায্যে ক্ষমতা দখল? তাহিরা বেগমের কি হইল?
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
হেরা হারু পার্টি। কল্লা ঝুলতেছে দোনোজনেরই এই মুহুর্তে
..................................................................
#Banshibir.
****************************************
কোন কারণে ক্রোম আই.ই. ম্যাক্সথন কিছু দিয়াই আপনের জাদুবাক্স খুলল না, কিন্তু আইফুনে পোষ্কার দেখতে পাইলাম। জটিল বানাইছেন। অর্ক মুখার্জির প্রথম প্রোগ্রামটা দেখা ছিল, আশিফেন্তাজের কমেডি উপরি। অন্যগুলা দেখিনাই, অশেষ ধন্যবাদ। নজরানা অতি চমেতকার হইছে। আপনারে একটা মনসবদারি দিব ভাবতেছি হা হা হা হা!
লন আপনেও একটা গান শুনেন। জলের গান।
..................................................................
#Banshibir.
জাদুবাক্স তার জাদুর খেল দেখাইতে পারল না কেন বুঝলাম না। আমি তো ফায়ারফক্স আর ক্রোম দুইটাতেই দেখতেছি, তবে ফায়ারফক্সেই বোধহয় ভাল। আপনার ব্রাউজারের জাভাস্ক্রীপ্ট কি ডিজেবল করা? এইটা ডিজেবল করা থাকলে কোন কিছু দিয়াই দেখতে পারবেন না। আরেক কাজ করতে পারেন, ডাইরেক্ট এইখান থিকা দেখতে পারেন - http://jakblak.t15.org/nojrana_2/orko.html । ২য় ভিড্যুটা যদ্দুর পারেন দেইখেন। মজা আছে। বড় স্পিকারে গান শুনার মজাই আলাদা!
আপনার দেয়া গানটাও শুনলাম। অতি চমেতকার হইছে! আমাদের গানের ভাণ্ডারে যে কত মণিরত্ন, ভাবতেই অবাক লাগে।
আর হ্যাঁ, শুধু মনসবদারি কেন আপনি তো আরও অনেক কিছুই পারেন। এই যেমন, এইসব রাজা-বাদশার দুয়েকটা সু... থাক আর কইলাম না। লইজ্জা লাগে, আপনি বুইজ্জা নিয়েন।
****************************************
অসাধারণ। আরো চাই। লিখতে থাকুন। অপেক্ষায় রইলাম। তবে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আর সবার মতো আমার কাছেও মনে হয়েছে যে গল্পটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল; হয়তো আরেকটু বড় হওয়া দরকার ছিল। পড়ে মনে হয় মাঝখানে কোথাও একটা Time Lapse হয়েছে।
ধারাবাহিকের প্রতি পর্ব তাতার ধনুকের ছিলার মত টান রাখা মুস্কিল, গল্প বেশী লম্বা হলে আমার অসুবিধে। তাই দিলাম ইস্তফা। লিখতে লিখতে হাত পেকে ঝুনা নারিকেল হইলে গল্প লম্বা করব নিশ্চয়ই।
..................................................................
#Banshibir.
চমৎকার!
নাটক/সিনেমা/অ্যানিমেশন ফিল্ম কে কী করবে জানি না, আপনার কাজ হলো এরকম টানটান সিরিজ নিয়মিত লেখা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
লিচ্চয় কেন নয়। তিন চারটা প্লট মাথায় ভনভন করতেছে, তারমধ্যে একটা খুবই রক্তারক্তি ঘটনা। যেমনে ভাবতেছি তেমন কইরে লিখলে মডু আইসা দিব আমারে আবার অতিথি লেখক বানায়া, যেনো মডারেশন পার হইতে হয় বাকি পর্ব হা হা হা হা হা!
..................................................................
#Banshibir.
লেখা অতি চমত্কার লাগলো । এই বেলা শিশু কিশোর পোলাপানদের জন্য ইতিহাস-নির্ভর উপন্যাসের আর্জি জানায়ে গ্যালাম।
-আনন্দময়ী মজুমদার
শিশু কিশোর পুলাপান পাঠক সচলায়তনে তেমন নাই, ঐরকম গল্প এখানে লিখার কোন কারণ দেখিনা। মাঝে হৈ চৈ বলে একটা ছোটদের কাগজ বের হবার কথা ছিল, ঐখানে লেখা দিয়েছিলাম। কাগজটা আর বের হয়নি। বের হলে নিশ্চয়ই আবার চিন্তা করে দেখব পুলাপানের গল্প লিখার ব্যাপারে।
..................................................................
#Banshibir.
ধন্যবাদ! সম্পূর্ণ পড়ে ভাল লাগল| শেষটাও খারাপ হয়নি| পরিণতি এমনই হওয়া উচিত ছিল|-মোঃ জাকির হোসেন
কথা সত্য।
..................................................................
#Banshibir.
মেজর সাহেবের মতো একদম পারফেক্ট বলতে পারলুম না পীর সাহিব।
প্রথম কারণ এই পর্বের গতি আগের গুলোর তুলনায় অনেক অমসৃন ছিল। দ্বিতীয় কারণ হলো আপনি প্রত্যাশার মিটার অনেক উপরে তুলে দিয়েছেন।
অতএব, আরো কড়কড়ে মধ্যযুগীয় গল্প তরতর করে আসতে থাকুক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আপনেগো চাটগাঁও এলাকায় এক দস্যু হার্মাদের বজ্জাতি নিয়া লিখব ভাবতেছি
..................................................................
#Banshibir.
বাহ, বহুদ্দিন হাপিস থাকনই দেহি ভালা... একলগে পড়া যায়... পার্ফেক্ট
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হাপিস ক্যান...পুলিশ ধরছিল?
..................................................................
#Banshibir.
এই না হইলে পীরবাবার সম্ভাষণ!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মুখে চওড়া হাসি ফুটিয়ে আমি আস্তে করে বললাম, পার্ফেক্ট!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমিও
মুখে খালি পার্ফেক্ট বললে হপে? দেখা হইলে কলিজার সিঙ্গাড়া একটা খাওয়ায় দিয়েন.
..................................................................
#Banshibir.
সবই আপনেদের দু'আ ও ভালোবাসা.
..................................................................
#Banshibir.
পার্ফেক্ট বস্।
ভালো থাকবেন, সত্যপীর।
-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
বেশ ভালোই আছি বস. আপনেও বেশ ভালো থাইকেন.
..................................................................
#Banshibir.
http://www.youtube.com/watch?v=NoZV-2GqkdQ
খুব খুব ভাললাগল
aliahasan
দারুণ
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
নতুন মন্তব্য করুন