ভারত সাগর, ১৬০৭। মাঝারি আকারের চৈনিক জাহাজ হায় ছাঙ এর ডেক। ভোর।
জাহাজের সর্বময় কর্ত্রী পী না’র কপালে গভীর ভাঁজ। গুমোট জাহাজের পরিবেশ গতকাল থেকে। গতকালের ঝড়ে বেঁচে বের হওয়া যাবে এইটা অনেকেই বিশ্বাস করেনি, এরকম পাহাড়ের সমান উঁচা ঢেউ দেখে কলজের জোর ধরে রাখা শক্ত। সেইটা থেকে বাঁচা গেছে সত্য, কিন্তু আরেক কঠিন সমস্যা তৈরি হয়েছে। খাবার নেই।
বহরে জাহাজ ছিল তিনটে। হায় ছাঙ তার মধ্যে সবচেয়ে বড়। আঠেরোটা কামানের ছিদ্র দুই পাশে, এছাড়া ছোট জানালা খোলা বন্ধ করা যায় প্রয়োজনমত। ছোট জানালা দিয়ে তীরন্দাজ আর বর্শা হাতে সৈন্য খাড়িয়ে যায় লড়াইয়ের সময়। ডেকের মাঝামাঝি লম্বা ক্যাটাপল্ট বা গুলতি, পাথর বা লোহার বল (এমনকি বালতি ভরা তরল লোহা যা শত্রুর চামড়া মুহুর্তেই গালিয়ে দেবে) ছুঁড়ে মারা যায় শত্রুর জাহাজে ঐ দিয়ে। শক্তিশালী যুদ্ধজাহাজ হায় ছাঙ। জাহাজে মাল রাখার তেমন জায়গা নাই, খাবার সরিয়ে পী না নির্দেশ দিয়েছিলেন সিল্ক ভরতে। মাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আদন কিম্বা পূর্ব আফ্রিকা। দূরপাল্লার যাত্রা, খাবার ও পানীয় মূলত নেয়া হয়েছিল অন্য দুই জাহাজে। সেই দুই জাহাজ ডুবে গেছে কাল। চাল নেই আর বেশীদিনের। জাহাজে চাপা ভয় এবং অসন্তোষের ফিসফিস শোনা যাচ্ছে।
ভুরূ কুঁচকে পী না মানচিত্র দেখায় মন দিলেন। কাছাকাছি দ্বীপজাতীয় কিছু পেলে ভাল হত। মানচিত্র তিনি ভাল বোঝেন না, তার দিকবিশেষজ্ঞ চাঙ চ্যুইনও অক্কা পেয়েছে অন্য জাহাজের সাথে, এখন যন্ত্রপাতি দিয়ে দিকভাল নির্ণয়কারী ঝানু লোক জাহাজে কার্যত নেই। মানচিত্রে মনে হচ্ছে ভারতের কিছু উপকূল সম্ভবত কাছে, তবে ভারতে সিল্কবোঝাই জাহাজ নিয়ে এরকম হুট করে থামা হয়তো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। চৈনিক জাহাজ দেখে এরা তেমন অভ্যস্ত নয়, ভারত জায়গাটাও সুবিধার না একেক কোণে লোকে একেক ভাষায় কথা বলে। তার উপর পর্তুগীজ হারামীরা বন্দরে থাকলে ঝামেলা আরো বাড়বে।
কমবয়েসী চাকর ওয়াং জি এসে একবাটি স্যুপ দিয়ে গেল। কচ্ছপ সিদ্ধ করে বানানো স্যুপ, তাতে কিছু গাছড়া দেয়া। অনেকদিন মাছ খাওয়া হয়না, পানির মধ্যে বসবাস কিন্তু চলন্ত জাহাজের কাছে কোন মাছই আসেনা। দুঃখজনক।
পী না স্যুপে চুমুক দিতে দিতে ভাবতে লাগলেন।
...........................................................................
ইংরেজ সওদাগর র্যালফ অ্যান্ডারসনের বাসভবন। সন্ধ্যে।
ঝড়বাদল থেমেছে, দরিয়া জাহাজ ছোটানোর উপযুক্ত এখন। ক্যাপ্টেন ব্রুকস এক টুকরা বিস্কুট মুখে দিয়ে চিবাতে চিবাতে ভাবছিলেন, এই সময় কয়েকটি বুটের খটাশ স্যালুট শোনা গেল। ক্যাপ্টেন ব্রুকস চেয়ে দেখলেন ল্যুটেনেন্ট জনসন, ল্যুটেনেন্ট আর্মস্ট্রং, কোয়ার্টার মাস্টার টেইলর, চীফ গানার লসন এবং সেইলিং মাস্টার ও’ডেল। ক্যাপ্টেন ইশারা দিতে তারা টুপি খুলে ঘরে ঢুকল।
স্যার, ও’ডেল মুখ খুললেন প্রথম, দক্ষিণ পুর্ব দিকে দ্রুত রওনা দেয়া চাই। মাঝে একটু ঠেলে সরিয়ে চালাতে হবে বহর, সিদ্দিদের কাছ দিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। পরে বহর সময়মত আবার দ্রুত কোর্সে ফিরিয়ে আনা যাবে।
ক্যাপ্টেন ব্রুকস জিজ্ঞেস করলেন, পর্তুগীজদের জাহাজ কয়টা?
ল্যুটেনেন্ট আর্মস্ট্রং বললেন, তিনটা। সাথে বাহার গুলিস্তান, তবে সেটা সশস্ত্র নয়।
আচ্ছা। কত বড় জাহাজ?
তিনটা জাহাজের দুইটা নাও। দুইশ কি আড়াইশ টন হবে একেকটা, আমাদের জাহাজের মত স্যুইফট নয় স্যার, ঘুরাতে সময় লাগে।
অন্যটা কি?
অন্যটা ছোট জাহাজ। ঠিক কি টাইপ আমাদের ইন্টেল বলতে পারল না।
বলতে পারল না? বলতে পারল না? এইসব খুঁটিনাটি খবর যদি ঠিকমত না দিতে পারে তো এই অপদার্থ ইন্টেল নিয়ে আমরা কি করব? কার কাছে গিয়েছিলে রেইমন্ড?
ইয়েস স্যার, রেইমন্ড। বলতে পারল না অন্য জাহাজটা ঠিক কি, কেবল বলল ছোট জাহাজ।
শ্বাস ফেলে ক্যাপ্টেন ব্রুকস বললেন, মাতাল রেইমন্ড। তার বাপের খুঁটির জোর না থাকলে তাকে বহু আগেই লাথি দিয়ে আমি ডান্ডি পাঠিয়ে দিতাম। গর্দভ একটা।
সকলে চুপ করে রইল। ক্যাপ্টেন আবার শুরু করলেন, মেন! নাও গ্যালিওন যা থাকে থাকুক, আওয়ার কিংস মাইটি শিপস উইল ডেস্ট্রয় দৌজ ব্লাডি পর্তুগীজ লাইক ককরোচেস! আমাদের এক্ষুনি রওনা দেয়া প্রয়োজন। সময় স্বল্প। টেইলর, আর ইউ উইথ মি? শিপ রিপোর্ট কিরকম?
অফিসার রব টেইলর জাহাজের কোয়ার্টার মাস্টার। জাহাজের আভ্যন্তরীণ সকল দেখভাল করা তার দায়িত্ব। যুদ্ধের সময় ক্যাপ্টেনের ক্ষমতা যেরকম অসীম ও বাধাহীন, বস্তুতঃ শান্তিকালীন সময়ে কোয়ার্টার মাস্টারের ক্ষমতাও মোটামুটি সেরকমই। এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেনকেও কোয়ার্টার মাস্টারের অনুমতি নিতে হয়। তবে এখন যুদ্ধ, সুতরাং সর্বময় ক্ষমতা ক্যাপ্টেনের হাতে।
গলা খাঁকারি দিয়ে টেইলর বললেন, ইয়েস স্যার। সকল জাহাজ প্রস্তুত, সর্বমোট ছয়টি। শিপ অফ দ্যা লাইন ক্যাসান্ড্রা ইন টপ কন্ডিশন। অন্য একটা জাহাজ মেরি’জ ড্রিম এর মাস্তুল ভাঙা ছিল, সেইটে মেরামতের কাজ শেষ। তবে ঝড় আসলে উড়ে যাবার সম্ভাবনা আছে বটে। আমি কার্পেন্টারের সাথে বিস্তারিত আলাপ করে রেখেছি, মাস্তুলে ফাটল ধরলে সে ঝড়বাদল যাই থাকুক মেরামতি শুরু করবে।
গুড।
মাথা ঝাঁকিয়ে টেইলর বললেন, ইয়েস স্যার। সকল গান ঢেকে রাখা ছিল ড্যাম্প কন্ডিশন বলে, লসনের লোক তা ঘষে পরিষ্কার করে রেখেছে। গান ইজ নো প্রব্লেম। তবে…
মাঝপথে থেমে টেইলর গানার লসনের দিকে তাকালেন। মধ্যবয়েসী তাগড়া অফিসার জেরেমি লসন, কিংস নেভির গানার পদে বহুদিন ধরে কর্মরত। সে কানে একটু কম শোনে, দীর্ঘদিন ধরে কামানের আকাশ ফাটানো আওয়াজ শোনার ফলে সম্ভবত। তাই সে একটু চেঁচিয়েও কথা বলে। উঁচু স্বরে লসন বলল, গানস অ্যান্ড অ্যামুনিশনস রেডি স্যার। উই শ্যুড বি অলরাইট। তবে পাউডার মাঙ্কি নাই, ছেলে বেশীরভাগ ভেগেছে। দুইটার কলেরা।
ক্যাপ্টেন ব্রুকস চোয়াল শক্ত করলেন। এই খবরে তিনি মোটেই খুশি হলেন না। পাউডার মাঙ্কি প্রয়োজনীয় জিনিস। বিপদজনক বারুদ ব্যারেলে করে রাখা হয় জাহাজের একদম নিচে সাবধানে একটি শুকনা কক্ষে। কক্ষের নাম পাউডার রুম। গানপাউডার এতই বিপদজনক জিনিস যে আগে থেকে এইটা বানিয়ে রাখা হয়না, শুধু উপাদানগুলো রাখা থাকে আর দরকারমত লড়াইয়ের সময় বা অল্প আগে অভিজ্ঞ গানার যতটুকু দরকার ততটুকু বানায়। কামান, পিস্তল আর বন্দুকের জন্য গানপাউডার তৈরির অনুপাত ভিন্ন, একটার জন্য তৈয়ার বারুদ দিয়ে অন্যটা চলবে না ফেটে যাবে। বারুদ তৈরি করে একটা কাগজে মুড়ে রাখা হয়, তাকে বলে কার্ট্রিজ। সেইটা আবার সাবধানে ভরা হয় চামড়া বা মোটা কাপড়ের থলিতে।
কার্ট্রিজ বানানো শেষ হলে গানার চিৎকার করে বলে রেডি। এইবার কিছু প্রশিক্ষিত চটপটে ছেলেপেলে (আট থেকে বারো বছর বয়েসি সাধারণত) দৌড়ে আসে এবং কার্ট্রিজের হাতল ধরে বাতাসের বেগে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে কামানের কাছে যায় বা পিস্তলওলার কাছে যায় কার্ট্রিজ দিয়ে আসতে। এই পিচ্চিগুলোই পাউডার মাঙ্কি। এক হিসাবে তাদের উপর লড়াই নির্ভর করে থাকে, চালু পিচ্চিগুলো দ্রুত দৌড়ে ঠিক ঠিক লোকের কাছে গিয়ে কার্ট্রিজ দিয়ে আসতে না পারলে আর গোলাগুলির আশা নাই, সবই ফক্কা।
ক্যাপ্টেন ব্রুকস বললেন, তাহলে আমাদের প্ল্যান কী?
স্যার সেইলরদের দিয়েই আপাতত কাজ চালাতে হবে। এত দ্রুত নেটিভ বাচ্চা কাউকে ধরে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব নয়, তাছাড়া ভারতীয় বাচ্চাগুলো গাধাও বটে। তাদের এত বুদ্ধি নেই, ধরতে সময় লাগবে।
সেইলর দিয়ে...ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে আমার কাছে। যথেষ্ট এবিএস আছে আমাদের?
এ বি এস অর্থাৎ এবল বডিড সেইলর। অফিসার টেইলর বললেন, কাজ চলবে স্যার। অপারেশন তো বেশীদিন চলার কথা নয়, এছাড়া সুরাটে খবর পাঠানো হয়েছে তারা রিইনফোর্সমেন্ট নিয়ে আসছে।
ক্যাপ্টেন ব্রুকস চিন্তিত স্বরে বললেন, আচ্ছা।
………………………………………………………………………
ভারত সাগর। পর্তুগীজ অধিকৃত মোগল জাহাজ বাহার এ গুলিস্তাঁ। সন্ধ্যে।
মাস্তুলে বেঁধে হাবিব মনসুরকে পেটানো হচ্ছে বিকেল থেকে। কার্লুস দড়ি দিয়ে বিশেষভাবে তৈয়ার একটা চাবুক রাখে নিজের সাথে, সেইটা দিয়ে পিট্টি চলছে। ছয়টা সরু দড়ি প্যাঁচ মেরে বাঁধা, একেক মারে একত্রে ছয়টা করে চাবুকের বাড়ি খাচ্ছে হাবিব মনসুর। তার ভাঙা গলায় চিৎকারের শব্দ ডেকের পাশে গবাদিপশুর মত গুটিশুটি মেরে থাকা বাহার এ গুলিস্তাঁর সকল ভারতীয় যাত্রী পাংশুমুখে শুনছে আর আল্লা আল্লা করছে। হজ্ব করতে গিয়ে ইকি বিপদের মধ্যে পড়া গেল!
কাপ্তেন মিগেল এখন পর্যন্ত যা বুঝলেন তা নিয়ে আলোচনা করতে বসলেন কার্লুসের সাথে। মিটিং এ আরো ছিল দুয়ার্চি এবং উগো। দুইবার হাবিব মনসুরের চিঠি পড়া হল জোরে জোরে। উগো বলল, কাপিতওঁ ইংরেজ গেঞ্জাম করতে আসবে এ আমি নিশ্চিত। এই চিঠি আমাদের হাতে পড়েছে এই খবর এতক্ষণে তাদের কাছে গেছে নিশ্চয়ই। তারা আমাদের গোয়া পৌঁছুবার আগেই আক্রমণ করবে।
কাপ্তেন মিগেল সায় দিয়ে বললেন, ঠিক। তারা আসছে। কথা হল আমরা তাদের আগে গোয়া পৌঁছুতে পারব কিনা।
উগো বলল, ইংরেজ সুরাট থেকে আসবে, তাদের সময় লাগার কথা। আমরা তার আগেই পৌঁছে যাব, বিশেষ করে সম্ তোমে। আমাদের অন্য দুই জাহাজ আর মুর জাহাজের গতি ধীর এইটা সমস্যা।
কার্লুস বলল, ইংরেজ সুরাট থেকে আসবে কে বলল? মাঝ দরিয়াতেও তাদের জাহাজ থাকতে পারে। বা জিঞ্জিরার কাছে।
মাঝ দরিয়ার জাহাজ মুর চিঠির কথা কীভাবে জানবে?
কার্লুস কিছু বলল না। কাপ্তেন মিগেলেরও মন খচখচ করতে থাকল, তিনি বললেনঃ
প্রস্তুত হয়ে থাকা ভাল। চারঘন্টার ওয়াচে লোক রাখো, প্রত্যেক মুহুর্ত আমাদের খেয়াল রাখা চাই ইংরেজ আসছে কিনা। সত্যি বলতে ওলন্দাজ দেখলেও সাবধান থাকা জরুরী। কোন জাহাজ চোখে পড়লেই আমি খবর চাই।
তাই হবে কাপিতওঁ।
হ্যাঁ। এবার জাহাজের রিপোর্ট দাও, আমার তিনটে জাহাজই কি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত?
চীফ গানার দুয়ার্চি গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, সান্তো আন্তোনিও প্রস্তুত নয় কাপিতওঁ।
কাপ্তেন মিগেলের চোখ দিয়ে আগুন বর্ষিত হতে থাকল এই কথায়। তার তিনটা জাহাজঃ সম্ তোমে, সান্তো আন্তোনিও এবং সান্তো আমারো। সান্তো আমারো সবচাইতে বড় জাহাজ, কিন্তু ধীরগতির। সম্ তোমে সবচেয়ে ছোট এবং দ্রুত জাহাজ, বড় লড়াইয়ের উপযুক্ত নয় কিন্তু যথেষ্ট কামান রয়েছে। আর রয়েছে সান্তো আন্তোনিও। কাপ্তেন মিগেলের প্রতিটা জাহাজই দরকার যদি ইংরেজ সত্যিই আক্রমন করে।
কাপ্তেনের অগ্নিদৃষ্টি উপেক্ষা করে দুয়ার্চি বলতে লাগল, ঝড়ে সান্তো আন্তোনিও কাত হয়ে গিয়েছিল কাপিতওঁ। একটা কাঠের তক্তা নিচের দিকে উড়ে গিয়েছিল আর তাই দিয়ে সারারাত পানি ঢুকেছে। আমি তদারক করে পানি সাফ করিয়েছি বটে, তক্তা মেরামতিও শেষ। কিন্তু বারুদ ভিজে গেছে আর কামানের ভিতরেও ভিজা। সেগুলি শুকাতে সময় লাগবে।
সব কামান নষ্ট?
না আটটা কামান ঠিক আছে। বারুদ নেই তেমন, অন্য জাহাজ থেকে কিছু বারুদ নিয়ে যেতে হবে।
কাপ্তেন মিগেল ঠোঁট কামড়ে কী একটা ভাবতে লাগলেন। তারপরে বললেন, হ্যাঁ গানপাউডার বিস্ফোরক এগুলি যথেষ্ট পরিমাণে মজুত কর সান্তো আন্তোনিওতে। কামান নিয়ে ভাবতে হবেনা। আর লোক সরিয়ে কেবল জাহাজ চালানোর মত জনা পঁচিশ নাবিক রাখো ঐ জাহাজে, বাকীদের সান্তো আমারো তে সরিয়ে নাও। আর পিশাবের পাত্রগুলোও সরিয়ে নিও।
দূরপাল্লার জাহাজে পিশাব দরিয়ায় করার অনুমতি নেই, নির্দিষ্ট কাঠের বালতিতে পিশাব করে সকলে। তারপরে কেবিন বয়েরা বালতি ভরে গেলে তা ব্যারেলে জমিয়ে রাখে আলাদা করে। জাহাজে আগুন লাগলে এই তরল কাজে লাগানো হয়। কাপ্তেন এই পিশাবের ব্যারেলগুলোর কথাই বলছেন।
দুয়ার্চি আর উগো কাপ্তেন মিগেলের সাথে কাজ করছে দশ বছরের উপরে হল। কাপ্তেন থুথু ফেললেও এই দুজন বুঝতে পারে থুথুর কারণ। কাপ্তেনের নির্দেশ শুনে দুজনেরই রক্ত চলকে উঠল। কী সর্বনাশ...কাপ্তেন কি তবে…
কাপ্তেন মিগেলও জানতেন এরা তার নির্দেশের কারণ বুঝতে পারবে। গম্ভীর মুখে তিনি পাশের ধাতব পানপাত্র থেকে দুই চুমুক রাম খেলেন, তারপরে চোখ বন্ধ করে ভাবতে লাগলেন। ইংরেজ আসলে বিপদ হবে, প্রস্তুতি ভালো নয়।
কার্লুস দুয়ার্চি আর উগো কাপ্তেনের কেবিন থেকে চুপ করে সরে পড়ল।
……………………………………………………………
মধ্যরাত।
কাপ্তেন মিগেলের কেবিনের দরজা ধড়াম করে খুলে হাঁফাতে হাঁফাতে কার্লুস বলল, কাপিতওঁ!
শান্ত গলায় কাপ্তেন মিগেল বললেন, এসে গেছে?
জ্বি কাপিতওঁ। বড় বহর।
বড় জাহাজ না বড় বহর?
বড় জাহাজের বড় বহর কাপিতওঁ। ছয়টা জাহাজ। ডান দিক দিয়ে আসছে।
দ্রুত দৌড়ে কাপ্তেন একটা খাম্বার দড়ি বেয়ে বাঁদরের মত উপরে উঠলেন। মিশমিশে অন্ধকার, ঝড়ো বাতাস। তেমন কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমন সময় চকিতে বিদ্যুৎ চমকাল, আর দূরবীণ দিয়ে কাপ্তেন দেখলেন উতাল ঢেউ কাটিয়ে লাইন ধরে আসছে ইংরেজ রণতরী। দূরবীণটা নামিয়ে রেখে কাপ্তেন ভাবলেন এক সেকেন্ড। এরা এক লাইন ধরে আসছে, তিন নম্বর জাহাজটা সবচেয়ে বড় অতএব ঐটাই শিপ অফ দ্য লাইন। ইতোমধ্যে এক লাইনে হয়ে গেছে মানে তারাও পর্তুগীজ সকল জাহাজ স্পট করে রেখেছে। লাইন অফ ব্যাটল চাচ্ছে ইংরেজ।
লাইন অফ ব্যাটল ট্যাকটিক্স কাপ্তেন মিগেলের ভালো করে জানা। এই তরিকায় নিজ দলের সকল জাহাজ এক লাইনে রেখে শত্রুপক্ষের সকল জাহাজের সমান্তরালে আনা হয়, তারপর ওপেন ফায়ার। জাহাজ কতটুকু কাছে এনে সমান্তরালে রাখতে হবে তা জাহাজের আকার এবং কামানের রেঞ্জের উপর নির্ভর করে। স্বাভাবিকভাবেই বেশী কামানযুক্ত বড় জাহাজের এই ট্যাকটিক্সে জেতার সম্ভাবনা বেশী। কাপ্তেন মিগেলের বর্তমান বহর লাইন অফ ব্যাটলের অনুপযুক্ত, নানান কারণে। অতএব দুঁদে কাপ্তেন মিগেল সেটাই করতে মনোনিবেশ করলেন যা তার জায়গায় আর যেকোন দুর্দান্ত বুদ্ধিমান কাপ্তেন করতেন।
তিনি প্রতিপক্ষের লাইন অফ ব্যাটল ভাঙতে মন দিলেন।
ইংরেজ ততক্ষণে এগিয়ে এসেছে, প্রায় সমান্তরালে এসে তার লক্ষ্য করল পর্তুগীজ বহর গতি কমিয়ে দিয়েছে। তারাও দ্রুত গতি কমিয়ে দিল। দুই পক্ষের জাহাজের কামানের পোর্টহ্যাচ ততক্ষণে খুলে দেয়া হয়েছে। প্রথম কামানটি ছোঁড়া হল পর্তুগীজ শিপ অফ দ্য লাইন সান্তো আমারো থেকে। মিশমিশে অন্ধকারের বুক চিরে সেই আগুনের গোলায় আলোময় হয়ে উঠল চারিপাশ। এক মুহুর্ত নীরবতা, তারপরে দুই পক্ষ থেকেই গোলাবর্ষন আরম্ভ হয়ে গেল।
ইংরেজ ক্যাপ্টেন ব্রুকস অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন পর্তুগীজ চারটে জাহাজই একটা কৌশল অবলম্বন করছে। একদফা গোলা ছোঁড়ার পর তারা জাহাজ খানিক বাঁকা করে রাখছে, তারপরে সোজা করে আরেকদফা গোলাবর্ষণের পরেই আবার বাঁকা হয়ে যাচ্ছে সমান্তরাল থাকছেনা। সম্পুর্ণ সমান্তরাল না থাকলে টার্গেট রেঞ্জ ছোট হয়ে আসে, অতএব ইংরেজের অর্ধেক গোলা নষ্ট হচ্ছে অযথা।
এইবার ক্যাপ্টেন ব্রুকস নির্দেশ দিলেন সকল জাহাজ ইউ শেপে নিয়ে পর্তুগীজ চারটে জাহাজ ঘিরে ফেলতে। তাহলে বাঁকা খানিক হলেও তারা রেঞ্জেই থাকছে।
কাপ্তেন মিগেল খেয়াল করলেন অধিকৃত মুর জাহাজ বাহার এ গুলিস্তাঁ র দিকে গোলাবর্ষন হচ্ছে কম। ঝট করে তিনি বুঝলেন ইংরেজ মুর জাহাজ কব্জা করতে চায় ধ্বংস নয়। তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল।
দুই মিনিট পর ইংরেজ শীপ অফ দ্য লাইন ক্যাসান্ড্রার ডেকে ল্যুটেনেন্ট আর্মস্ট্রং দৌড়ে এসে বলল, ক্যাপ্টেন! এরা বাহার গুলিস্তান সামনে রেখে কাছিয়ে আসছে। রিকোয়েস্ট টু এইম ডিরেক্টলি অ্যাট বাহার গুলিস্তান!
ক্যাপ্টেন ব্রুকসের মুখ তিতা হয়ে গেল। তিনি ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখলেন সত্যিই তাই, এরা বুঝে গেছে বাহার গুলিস্তানে সরাসরি গোলা ছোঁড়া হচ্ছিল না। মোগল জাহাজে পাতার টোকাটি পর্যন্ত না দেবার শর্তে সুরাটের মুৎসুদ্দি রাজি হয়েছে ল্যান্ড সাপোর্ট দেবার, মোগল জাহাজে গুলি করা যাবে না। গম্ভীর কন্ঠে ক্যাপ্টেন বললেনঃ
রিকোয়েস্ট ডিনাইড। কিপ ফায়ারিং ফ্রম আদার অ্যাঙ্গেলস।
স্যার ইয়েস স্যার!
ছুটে ল্যুটেনেন্ট যেখান থেকে এসেছিল আবার সেদিক দৌড় দিল।
ভালো তাক পাবার জন্য ইংরেজ দুইটি জাহাজ মেরি’জ ড্রীম এবং কিংস ক্রস ইউ শেপ ছেড়ে একটু এগিয়ে গেল। এইবার সোজা হলে পর্তুগীজ জাহাজ অন্য চারটি জাহাজের ফায়ারিং রেঞ্জে, বাঁকা হলে সরাসরি মেরি’জ ড্রীম এবং কিংস ক্রসের রেঞ্জে।
সম্ তোমে জাহাজের মাস্তুল আচমকা দুই ইংরেজ জাহাজের সমান্তরাল ফায়ারে উড়ে গেল। মাস্তুলবিহীন জাহাজ সম্ তোমে ভয়ানক দুলুনির মধ্যে পড়ল। গানার লুই দেখল গোলাও শেষ হয়ে আসছে। সমস্যা। তার নির্দেশে নিচ থেকে নাবিকেরা ভারি শিকলে বাঁধা চেইনবল নিয়ে আসতে থাকল।
চেইনবল শিকলে বাঁধা দুইটা গোলা, বা পাথরের বল। ঠিকমত মারতে পারলে বিধ্বংসী, কারণ চেইনে বাঁধা দুইটা বল মাঝপথে বাতাসে অতিরিক্ত মোমেন্টাম পায় আর দ্বিগুণ জোরে জাহাজে আঘাত হানে। কখনো কখনো মাস্তুলে লেগে মড়াৎ করে ভেঙেও ফেলে। আর মানুষের মাথায় পড়লে তো হলই।
একের পরে এক চেইনবল কিংস ক্রস জাহাজের সাইড রেলিং ভেঙে দিল এবং নিচে কামানের হ্যাচের উপর পড়ে ফুটা করে দিতে থাকল। জাহাজের চীফ অ্যান্থনির নির্দেশে জাহাজ একটু সরে গেল অন্য জাহাজ মেরি’জ ড্রিমের দিকে।
এই সুযোগেরই অপেক্ষায় ছিলেন পর্তুগীজ কাপ্তেন মিগেল। কাছাকাছি ঘনত্বে দুইটা ইংরেজ রণতরী দেখে তিনি দৌড়ে হাত নেড়ে ইশারা দিলেন আর চিৎকার করতে থাকলেন। সান্তো আন্তোনিওর উপর থাকা আলেসান্দ্রি তা দেখে দ্রুত সকলকে বললেন পুর্বনির্ধারিত নির্দেশ পালন করতে।সকলে দৌড়ে নির্দিষ্ট স্থানে বিস্ফোরক রেখে আসতে থাকল, তারপর পিছনে বাঁধা ছোট ডিঙ্গিতে উঠে গেল। আলেসান্দ্রি দ্রুত জাহাজের নাক ঘুরিয়ে সোজা দুই ইংরেজ জাহাজ বরাবর নাও চালিয়ে দিলেন এবং সর্বোচ্চ গতি উঠালেন। বিপজ্জনক দ্রুততায় সান্তো আন্তোনিও এগুতে থাকল।
ইংরেজ দুই জাহাজ যখন এক মিনিট দুরত্বে তখন নিজ জাহাজে আগুন ধরিয়ে দ্রুত ডিঙ্গিতে লাফ দিলেন আলেসান্দ্রি, আর ডিঙ্গি যেতে থাকল সান্তো আমারোর দিকে। বিস্ফোরক বোঝাই পর্তুগীজ জাহাজ সান্তো আন্তোনিওতে মুহুর্তের মধ্যে আগুন লেগে গেল, আগুন দাউ দাউ করতে থাকা জাহাজ তখন ইংরেজ দুইটি জাহাজের থেকে মাত্র তিরিশ সেকেন্ড দূরে।
কিংস ক্রস জাহাজের উপরে থাকা ইংরেজ সেইলর প্যাট্রিক চোখ বিস্ফোরিত করে চিৎকার করে বলল, ফা-য়া-আ-আ-আ-আ-র শী-ই-ই-ই-ই-ই-ই-প!
ক্যাপ্টেন ব্রুকস অসহায়ের মত অল্প দূরে ক্যাসান্ড্রা থেকে দেখতে লাগলেন কীভাবে ফায়ার শীপ পাঠিয়ে একই সাথে দুই দুইটি ইংরেজ জাহাজে আগুন লাগিয়ে দিল পর্তুগীজ। জাহাজ দুইটা থেকে তখন টুপটাপ করে ইঁদুরের মত ইংরেজ সেইলরেরা ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে, আর কালো দরিয়ার পানি যেন গিলে নিচ্ছে তাদের সাথে সাথে। জাহাজের ডেকে আগুন লাগা কিছু মানুষের পাগলের মত হুটাপুটি দেখা গেল, আর কিছুক্ষণ পরে কান ফাটানো আওয়াজ করে বিস্ফোরিত হল তিনটে জাহাজ।
ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে গেল জাহাজগুলো।
ক্যাপ্টেন ব্রুকস সর্বশক্তি দিয়ে এইবার পর্তুগীজ তিনটে জাহাজ আক্রমণে মন দিলেন। নিজ জাহাজ ক্যাসান্ড্রা এগুতে থাকল মোগল জাহাজ বাহার এ গুলিস্তাঁর দিকে। সেইটের সাথেই পর্তুগীজ অন্য বড় জাহাজ।
পর্তুগীজ কাপ্তেন মিগেল ততক্ষণে দেখলেন এই হাউকাউয়ের মধ্যে ইংরেজ লাইন অফ ব্যাটল ভেঙে গেছে। তারা একটু বিভক্ত হয়ে গেছে, আর নিজেরা নিজেদের সমান্তরালে একত্রে আসছে। তাদের বড় জাহাজটা মুর জাহাজের দিকে টার্গেট করা। দ্রুত পর্তুগীজ জাহাজ পজিশন নিল সর্বডানে, এইবার তাদের এবং অন্য ইংরেজের জাহাজের মাঝে একটা ইংরেজ জাহাজ। অন্য ইংরেজ জাহাজ অসহায়ের মত ফায়ার করা বন্ধ করতে বাধ্য হল, নইলে সামনে থাকা তাদের নিজেদের জাহাজই সেমসাইডে মারা যাবে। সর্বশক্তি দিয়ে পর্তুগীজ সামনের ইংরেজ জাহাজটিকে আক্রমণ করে গেল।
গোলার আঘাতে বাঁকা হয়ে ডুবে গেল তৃতীয় ইংরেজ জাহাজ ডায়ানা।
এইবার ক্যাসান্ড্রা জাহাজে ক্যাপ্টেন ব্রুকসের কাছে দৌড়ে এসে ল্যুটেনেন্ট আর্মস্ট্রং বললেন, স্যার ভিক্টোরিয়া জাহাজ আমাদের ডিসঅবে করে সরে যাচ্ছে স্যার। তারা পালাচ্ছে।
চোয়াল শক্ত করে ক্যাপ্টেন গালি দিয়ে বললেন, বাস্টার্ডস!
চূড়ান্ত গোলাবর্ষণ উপেক্ষা করে ক্যাসান্ড্রা ক্যাপ্টেন ব্রুকসের নির্দেশে মোগল জাহাজ বাহার এ গুলিস্তাঁ এর একদম কাছে চলে এল। ইংরেজ জাহাজ অল্প উঁচু, তাই সেখান থেকে টপাটপ ইংরেজ সিপাইরা বন্দুক এবং তলোয়ার হাতে মোগল জাহাজে লাফ দিয়ে নামতে থাকল আর হাতের কাছে যাকেই পায় তার সাথেই মারামারি শুরু করে দিল।
কাপ্তেন মিগেল নিজের জাহাজে ইংরেজ আক্রমন দেখে দ্রুত নির্দেশ দিলেন সকল মুর যাত্রীকে মেরে ফেলতে। তারপর নিজে এগিয়ে গেলেন সম্মুখ সমরে। ইংরেজ সিপাই তখন পিলপিল করে নামছে ডেকে আর রেলিং বেয়ে। পর্তুগীজ নাবিকেরা ধপাধপ তাদের কল্লা নামিয়ে দিতে থাকল এবং ইংরেজও পালটা মার দিতে থাকল।
নরক নেমে এল যেন জাহাজের ডেকে।
…………………………………………………………………………
সকাল। সদ্য ইংরেজ করায়ত্ব সাবেক পর্তুগীজ অধিকৃত মোগল জাহাজ বাহার এ গুলিস্তাঁ। ভোর।
লড়াই থেমে গেছে, সকল পর্তুগীজ নিহত। অল্প কিছু ইংরেজ নাবিক আর কয়েকজন অফিসার বেঁচে গেছে। ইংরেজ দুইটি জাহাজ পালিয়েছে, বাকিগুলি ডুবে গেছে। মূল জাহাজ ক্যাসান্ড্রাতে আগুন লেগে পুড়ে ছাই। পর্তুগীজ জাহাজও কোনটা আর নেই।
পর্তুগিজ ক্যাপ্টেন মিগেলের বডি হাতড়ে হাবিব মনসুরের চিঠি পাওয়া গেছে, ক্যাপ্টেন ব্রুকস তা হাতে নিয়ে শক্ত করে ধরে রাখলেন। এই ব্লাডি চিঠির জন্যই মূল্য দিল কত সাহসী ইংরেজ, ভাবলেন তিনি।
সারারাতের ধকলে তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না, ধপ করে ডেকে শুয়ে পড়লেন ক্লান্তিতে।
কিছুক্ষণ পর আচমকা খালি পায়ের লাথি খেয়ে তিনি ধড়মড় করে উঠে দেখেন সামনে দশ চৈনিক নাবিক তলোয়ার ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আরে, এরা আবার কারা...ভাবলেন ক্যাপ্টেন ব্রুকস। তাকে ততক্ষণে পিছমোড়া করে ধরে এক দশাসই চৈনিক নাবিক গলায় তলোয়ার ধরে রাখল।
বুটের শব্দ তুলে আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে আসলেন চৈনিক পাইরেট শীপ হায় ছাঙ এর নারী ক্যাপ্টেন পী না। তার বুট ছিলনা, এইমাত্র এক মরা ইংরেজের পা থেকে খুলে নিয়ে পরেছেন। ভালই লাগছে।
পী না অভিজ্ঞতায় জানেন এই লোক ফিরিঙ্গি অফিসার শ্রেণীর, কিন্তু এই মুহুর্তে তার দরকার খাবার এবং জহরত। ইংরেজ অফিসারে তার কোন দরকার নেই। ভোরের ঠিক আগে এই জাহাজ তার দূরবীনের নজরে আসে, বড় ধরনের মারামারি হয়েছে রাতে বোঝাই যাচ্ছে। ভালোই হয়েছে, এখন জাহাজটা মালসুদ্ধ তার হবে।
ভাবতেই মুখ টিপে হাসলেন পী না। আর মাড়ি কেমন ব্যথা করে উঠল। একটা দাঁত অনেকদিন ধরে নড়ছিল, জিব দিয়ে নাড়িয়ে দেখেন পুরো খুলে এসেছে। হাত দিয়ে বের করে নিজের দাঁত মন দিয়ে দেখলেন পী না, হলদে রঙ, প্রায় লালচে। শুঁকে দেখলেন, ভয়ানক বদ গন্ধ!
ক্যাপ্টেন ব্রুকসকে ধরে রাখা দশাসই নাবিক জিজ্ঞেস করল, এই ফিরিঙ্গিকে রাখব?
থু করে লাল রক্তমাখা থুতু ফেললেন পী না। তারপর হাতের দাঁত ছুঁড়ে ফেলে উদাস গলায় বললেন, নাহ। ফেলে দে।
তৎক্ষণাৎ তলোয়ার আমূল বুকে বসিয়ে দিয়ে ক্যাপ্টেন ব্রুকসকে মেরে ফেলল চীনা নাবিক, অপ্রয়োজনীয় আটার বস্তার মত তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হল দরিয়ায়।
আর সেই সাথে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সদ্যমৃত ক্যাপ্টেন ব্রুকসের শিথিল মুঠি থেকে ছুটে হাবিব মনসুরের চিঠি উতাল দরিয়ার ঢেউয়ে টুপ করে পড়ে কোথায় মিলিয়ে গেল।
(শেষ)
মন্তব্য
ইংরেজ পর্তুগিজে মারামারি করে
পী না-য় খায় দই!
Emran
কথা সত্য মিয়াভাই। ইনসাফ নাই।
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ, আরো দেন
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
বিকালেই দিতেছি
..................................................................
#Banshibir.
ও ভাই বিকাল হইছে?
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কফি খাইতেছি। খাওয়া শেষুক।
..................................................................
#Banshibir.
ঠিকাছে, কফি শেষে কফা আসুক তাইলে
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
কফি শেষ। খিচুড়ি দিয়া ভুনা মাংস খাইতেছি। শেষুক।
..................................................................
#Banshibir.
আমিও খাইতে চাই
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
যাক শেষ... [ সমাপ্ত লেখায়ও রাখন লাগে, ঘোর কলিকাল ]
খন্দকার সা'বের বই পইড়া মাথা আউলায়া আছে, পাতায় পাতায় সাসপেন্স
আপ্নের লেখা মাথায় ঢুকেনা... কাইলকা পইড়া বুঝুম নি
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এরপরে কুন্দিন যেই লেখা এখনো লেখিনাই সেই ভবিষ্যত লেখার জন্যেও ইটা খামু। মহাবিপদ
..................................................................
#Banshibir.
ধুর, কোথা থেকে এক চাইনিজ এসে সব পাল্টে দিল।
অ্যাকশন দৃশ্যগুলো জমজমাট ছিল।
এটা নিয়ে সিনেমা বানালে কেমন হত ভাবছি
ভাল থাকুন, শুভেচ্ছা
ম্যান প্রপোজেস উম্যান ডিসপোজেস। কি করবেন কন?
..................................................................
#Banshibir.
পী না’র বয়স কত?
..................................................................
#Banshibir.
মুনে লয়, দেবীচৌধুরানীর গল্পের কঞ্ছেপ্টের শানে নুজুল এই পীদেবী-ই আছিল। পীরছাব অনেকদিন মূলা ঝুলায় রাক্চিলেন এট্টা টিশটিং কিস্তি আইতাসে, এইবার এক্কেবারে গাদাইয়া নামায় দিছেন।
গল্পের ছোট ছোট 'ডিটেল'-গুলো বরাবরই খুব উপভোগ করি। এ পর্বও বাদ যায় নি!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হ চান্সে পচুর গুলাগুলি নামায় দিলাম। গল্প লম্বা হয়ে যাচ্ছিল, নইলে চৈনিক জাহাজের আরেকটু পার্ট রাখতে চেয়েছিলাম। তারা অ্যাকশন দেখানির কুনু চান্সই পাইল না
ডিটেল মনোযোগ দিয়া পড়ার জন্যি ধন্যবাদ, তার উপর এমন লম্বা গল্পের ডিটেল। লম্বা পোস্ট দেখলে আমার নিজের ঘুম আসে, তাই আরেকজনে মন দিয়ে পড়ছে দেখলে ভালো লাগে। ধন্যবাদ। আপনাকে "সর্বাপেক্ষা মনোযোগী পাঠক" খেতাব দেওয়া হইল। পরের গল্প সীজ ওয়ারফেয়ার নিয়া নামানো যায় কিনা ভাবতেছি। মাঝদরিয়া থিকা একবারে খটখটে ডাঙ্গার উপরের গল্প। তবে একই পরিমাণ গুলাগুলি রাখতে আমি মনে করেন অঙ্গীকারাবদ্ধ।
..................................................................
#Banshibir.
প্রচুর ধন্যবাদের সহিত খেতাব গ্রহণ করা হইল। (পীর ছাবের খেতাব ফিরাইয়া মরি আর কি!)
পরের গল্পের গুলাগুলির অপেক্ষায় আছি। আপনার বাড়ির মহা গোলন্দাজটিরে সামলে সুমলে আপনি যেভাবে লেখায় গোলাগুলি চালিয়ে আমাদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন তার জন্য আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ ও প্রীতি-শুভেচ্ছা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
-মনে রাইখেন! গুলাগুলি কইমা গেলে আর মজা কই?
অ্যাকশন, অ্যাকশন
ডায়রেক অ্যাকশন!
(অন্য লাইনে চইলা গেল মনে হয়)
..................................................................
#Banshibir.
মারামারির দৃশ্যগুলা ভালো ফুটাইছেন
ধুন্দুমার গুলাগুলি ছাড়া গল্প জমে নাকি?
..................................................................
#Banshibir.
এরপর কি হইলো। তৃতীয় পর্বের দাবী রাখলাম।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
হাবিব মনসুরের চিঠি মাঝ দরিয়ায় ভাইসা গেছেগা। অতএব কাহিনিও ফিনিশ!
..................................................................
#Banshibir.
আপনি কোন্দলে আছিলেন? চায়না-মোগলাই বিটিশ?
আমি চতুর্দিকে কোন্দল লাগায় ফুটি। ড্যান্স পাপেটস ড্যান্স। এই দেখেনঃ
..................................................................
#Banshibir.
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বড় হলে আপনি ভালু যুদ্ধবাজ হতে পারবেন
গল্পটা লিখেছেন দারুণ
এই অংশটুকু না থাকলেও গল্পের জন্য কিছু আসতো যেতো না(ব্যক্তিগত মত)।
টাইপো ঠিক্রেন
'ভুরূ' বানানটা কি ইচ্ছাকৃত ভাইয়া?
'থাকা' হতো যেন
আপনার খাওয়া দাওয়ার চেইনাকশন শেষ হলে কবুতর ফারুককে স্পটে আনুন উইথ হেভি ভিশুম ভুশুম
পক্ষ, থাকা ঠিক করলাম। আপনাকে "ঈগলচক্ষু" উপাধি দেওয়া হইল।
ব্যক্তিগত মত মন দিয়া শুনলাম, জায়গাটা রেখে দিলাম তবু। দুঃখিত , হয়ত জায়গাটা ঠিকমত ফুটে ওঠেনাই। তবে প্যারাটা গুরুত্বপূর্ণ। কত অবহেলায় তুচ্ছ বিষয় নিয়া চিন্তা করতে করতে একজন মানুষ উদাস কণ্ঠে আরেকটা মানুষের জান কতল করতে নির্দেশ দেয় সেইটা দেখাইলাম। উলটা হইলে হয়ত ক্যাপ্টেন ব্রুকসও চিকেন পট পাই খেয়ে দাঁত খিলাল করতে করতে এই চৈনিকের জান নিত। কে জানে। দরিয়ার জীবন কঠিন। লাইফ অন দীয ট্রেচারাস সীয এট সেটেরা এট সেটেরা।
কবুতর ফারুক চোগান সিং এর চুরি যাওয়া ছবির সন্ধানে গেছে শুনলাম, বিস্তারিত জানিনা ঠিক। ছবিটার কোন গুপন ব্যাপার আছে, সন্ধানে ধন্দায় নবাবে। সে ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরত আসলে পুরা ঘটনা শুনে ছাপায় দিব এইখানে।
..................................................................
#Banshibir.
এই দেখেন! আপনি বলায় ছবিটা সুন্দর বুঝে গেলাম এখন। নিজের চড়ুই পাখির মগজরে ধিক্কার!
আমার বেবুদ্ধিরে ক্ষমার চোখে দেখবেন ভাইয়া পিলিজ লাগে
লিখেন না এই দীন দুঃখী ডাকাত মহিলাকে নিয়ে আরো কিছু।
'ঈগলচক্ষু' উপাধির উপলক্ষে চিজ্ কেক ভক্ষণ করিবো
পী না বিষয়ে একটা গল্প ফাদেনতো এইবার
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বেচারির দাঁতে ব্যথা, তার পরের গল্প করুণ ও বেদনাবিধুর। পয়সার অভাবে ডেনটিস্ট দেখাতে না পেরে একে একে সকল দাঁতই পড়ে যাবার দুর্বিষহ জীবনের গল্প, শুনলে চোখে পানি ধরে রাখতে পারবেন না। বাদ দেন।
তবে দূর ভবিষ্যতে চা বিজিনেস নিয়ে গপ্প ফাঁদা যাইতে পারে, সেইখানে নিচ্চয় থাকবে চৈনিক লুকজন।
..................................................................
#Banshibir.
আহারে, চৈনিক দাঁতের ডাক্তারও তাইলে কসাই!!!
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
কসাই কি পয়সার বিনিময়ে ব্যথা দেয়? সে দেয় উত্তম মাংস। খামোকা ডেন্টিস্টের সাথে মিলিয়ে কসাইকে অপমান কচ্চেন কেন হোয়াই?
..................................................................
#Banshibir.
মিস্টেক হইছে। তবে এইটা আমার মিস্টেক না। বাঙ্গাল মুল্লুকে সারা জীবন কেনো এই উদাহারন বেবার হইতেছে, এইটার জবাব আগে খুজতে হইবে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শুরু থেকে শেষ ভাল লাগলো। শুভকামনা।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ধন্যবাদ!
..................................................................
#Banshibir.
ইসরাত
মানুষের হাত দুইটা এইখানে দেখি কবজি তিনটা। তিন নম্বর বুড়া আঙ্গুলটা কার?
..................................................................
#Banshibir.
আহ্ শান্তি!
আর টেনশন নাইক্কা।
ভালো থাকেন সত্যপীর।
আপনার জন্য শুভকামনা।
******************
কামরুজ্জামান পলাশ
জীবন ভর্তি টেনশন, খামোকা সচলে টেনশন লইবেন কেন? বাদ দেন। গপ পড়তে থাকেন রিলাক্স কইরা।
..................................................................
#Banshibir.
জমসে জব্বর!
****************************************
পাইরেটে ইংরেজে ফাইট লাগাইছেন দেখি। পপ্পন নিয়া বসলাম
..................................................................
#Banshibir.
ছেলেকে ঘুম পাড়ায়ে আরাম করে পড়লাম। আপনি দিন দিন আর আর মার্টিনের মত নিষ্ঠুর হয়ে যাচ্ছেন। তাও সেইভদ্রলোক এখনো কিছু পাব্লিক বাঁচায়ে রেখেছে।
আরোহকে প্রথম পর্বের দম পোখতের বর্ননা পড়ে শোনানোর পর আঙ্গুল খেতে লাগলো। কাজেই পাঁচতারা ফ্রম বোথ অব আস!
--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।
সবাইরে মারি নাই হে রিক্তা, কবুতর ফারুক জীবিত আছে। মার্টিন দাড়িওলায় ওরও কল্লা নিত কয়দিন পর। কবুতর ফারুক আমার হাতে নিরাপদ, সে রাজকুমারী চাঁদনিবালার গপ্প নিয়ে আসতেছে।
..................................................................
#Banshibir.
বাংলা ভাষায় নৌ যুদ্ধের উপর এত চমৎকার বিবরণী আমি পাইনাই।
সেই সাথে যদি তথ্য সূত্র উল্লেখ করতেন তাইলে আরও ভাল করে পড়াশুনা করা যেত। অনেক ধন্যবাদ।
অনলাইনে লেখালেখির একটা আনন্দ হল হঠাৎ হঠাৎ ছয় বছর আগে লেখা গল্পের তারিফ করে নিলয় সাহেবের মত কেউ কেউ এসে হাজির হয়। আপনার মন্তব্য পড়ে আবার পুরনো লেখায় চোখ বুলিয়ে আসলাম। ব্যাপক নৌ যুদ্ধের আঞ্জাম করছিলাম
বাংলা ভাষায় জাহাজ সম্পর্কিত বই অনলাইনে আমি তেমন পাই নাই। বাধ্য হয়ে ইংরেজ ক্যাপ্টেনের মুখের ভাষায় গপ ফাঁদতে হইল। বাংলা নৌ পরিভাষা বা গল্প প্রবন্ধ পেলে আমাকে জানিয়ে যাবেন সম্ভব হলে।
ছয় বছর আগে ঠিক কী বই ঘেঁটেছিলাম তা আর স্মরণ নাই। আমার ইবই কালেকশনে এই কয়টা বইতে "জাহাজ" ট্যাগ দিয়ে রেখেছি, মানে এই বইকয়টা সম্ভবত ব্যবহার করেছিলাম তথ্যের জন্য। আরো লিঙ্ক ছিল হয়তো হারায় গেছে।
Battle at Sea: 3,000 Years of Naval Warfare
By R.G. Grant
Tudor Warships (1): Henry VIII’s Navy
Angus Konstam
Tudor Warships (2): Elizabeth I’s Navy
Angus Konstam
The Pirate Ship 1660–1730
Angus Konstam
Elizabethan Sea Dogs 1560–1605
Angus Konstam
..................................................................
#Banshibir.
নতুন মন্তব্য করুন