চতুর্থ মোগল বাদশা নূরউদ্দীন মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের বুদ্ধিশুদ্ধি ছিল অল্প। তার টাইটেল জাহাঙ্গীর ফার্সীতে বোঝায় দুনিয়াজয়ী ব্যক্তি, তাই তার হুকুমে আঁকা ছবিতে প্রায়ই দেখা যায় তিনি হাস্যকরভাবে জামাজুতাসুদ্ধা একটা আস্ত ভূগোলকের উপর খাড়িয়ে আছেন। এইরকম একটা ছবি নিয়ে আলোচনা করি আজকে চলেন। ছবিতে মাছের উপর গরু, গরুর উপর পৃথিবী, পৃথিবীর উপর জাহাঙ্গীর। হাতে সোনার ধনুক, সেইটে দিয়ে সোনার তীর ছুঁড়ে মারছেন সড়কির উপর গাঁথা একটি কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের কেটে ফেলা মাথার হাঁ করা মুখের দিকে।
কৃষ্ণাঙ্গ মানুষটি দক্ষিণ ভারতের আফ্রিকান বংশোদ্ভূত গেরিলা কমান্ডার চাপু ওরফে মালিক অম্বর, যার যন্ত্রনায় বাপবেটা আকবর জাহাঙ্গীর ছিলেন অতীষ্ঠ।
ছবির নানান দিক নিয়ে কথা বলা যাবে তবে তার আগে দুই কথায় দেখে নেই মালিক অম্বর সাহেব কে এবং কেন। মালিক অম্বর একটি সম্মানসূচক টাইটেল, জন্ম নাম নয়। তিনি জন্মেছিলেন ষোড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগে ইথিওপিয়ায়। লোকে ডাকত চাপু। অল্পবয়েসে তাকে দাস করে পূবপানে নিয়ে যাওয়া হয়, ইয়েমেনের মোকায় এসে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। পোক্ত শরীর এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী চাপু দ্রুত লোকের নজর কাড়েন। তৎকালীন আরব মালিক তার শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেন। নানা ঘটনার ঘনঘটার মাধ্যমে তিনি প্রথমে বাগদাদ এবং তারপর ভারতের দাক্ষিণাত্যে হাজির হন।
১৬১০ সাল। দাক্ষিণাত্যে মালিক অম্বর ততদিনে দুর্ধর্ষ মিলিটারি কমান্ডার। ইংরেজ বণিক উইলিয়াম স্মিথ লিখে গেছেন মালিক অম্বরের নেতৃত্বে দশ হাজার হাবশি সিপাই আর চল্লিশ হাজার ভারতীয় সিপাই। তৎকালীন পর্যটকদের কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে বলার অভ্যাস ছিল তবে বাহিনী যে বিশাল ছিল সেইটা সত্য বলে ধরা যায়। বিবিধ সিপাইয়ের পাশাপাশি অশ্বারোহী এবং গোলন্দাজ বাহিনী ছিল তার কমান্ডে। আফ্রিকান বেরাদার পানির গেরিলা জঞ্জিরার সিদ্দিদের সাথেও মালিক অম্বরের ব্যাপক খাতির ছিল, দুই হাবশি দল মিলে মোগলদের তারা বিরাট বাঁশের উপর রাখতেন জলে-ডাঙ্গায়।
জঞ্জিরার সিদ্দিদের গল্প আরেকদিন। দাক্ষিণাত্যে ফিরি।
মোটের উপর অম্বরঘটিত যন্ত্রণায় বাদশা জাহাঙ্গীরের ছিল মহা মুসিবত। আহমাদনগর তথা দাক্ষিণাত্য জয়ের স্বপ্ন তার বাপ আকবরের, কিন্তু এই বদমাশ হাবশি জেনারেলের আঁৎকা গেরিলা আক্রমণে তার আর উপায় রইল কই। ১৬০০ সালের দিকে আকবর আহমাদনগর জয় করেন ঠিকই কিন্তু নগদে তা ফের মালিক অম্বরের আয়ত্বে চলে যায়। ১৬০৫ থেকে ভূগোলকের উপর খাড়ানো জাহাঙ্গীর রাগের চোটে কাঁথাবালিশ বগলে নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে রইলেন কাছাকাছি মান্ডুতে, যেন যেকোন মূল্যে দাক্ষিণাত্য হাত করা যায়।
শেষতক তা আর হয়নি। ছবিতে কাটামাথা হাবিজাবি প্রোপাগান্ডা যাই দেখেন না কেন, সত্য হল জাহাঙ্গীর সাদা পাদুকা সহকারে মালিক অম্বরের ত্রিসীমিনাতেও ঘেঁষতে পারেননি, ছবিতে তীর ছুঁড়ে মনকলা খাওয়াই সার।
এইবার পাঠক স্ক্রল করে উপরে যান। ভালো করে ছবিটা খেয়াল করেন। ছবির শিল্পীর নাম আবুল হাসান, ১৬১৬ থেকে ১৬১৮র দিকে আঁকা। জাহাঙ্গীরের গ্লোব ফেটিশের কথা আগেই বলেছি, তাই আপাতত গ্লোবের উপর নিচ খিয়াল করি। ভূগোলক দাঁড়িয়ে আছে গরুর উপর, গরু আছে মাছের উপর। এই দুনিয়ার তলায় গরু আর মাছের কাহিনী ভারতের পুরাণ মেটাফর, মৎস্যের উপর ষাঁড় “ধর্ম” ইত্যাদি।
ছবির ডানদিকে মাঝামাঝি জাহাঙ্গীরের পাছার পেছনে সোনালি একটি পাখি বিনা কারণে উষ্ঠা খাচ্ছে। এইটি গুরুত্বপূর্ণ মেটাফর, পাঠক খেয়াল করেন মালিক অম্বরের মাথার উপরে পেঁচা। পেঁচা ইজিকোল্টু রাত ইজিকোল্টু অন্ধকার ইজিকোল্টু আফ্রিকান মালিক অম্বর ইজিকোল্টু খারাপ লোক, আর তার বিপরীতে উষ্ঠারত সোনালি পাখি ইজিকোল্টু ভোর ইজিকোল্টু জাহাঙ্গীর ইজিকোল্টু কতনা ভালো সবকিছু। আরো খেয়াল করলে দেখবেন কাটামাথার নিচে আরেকটা পেঁচা ঘাড় মটকে ঝুলে আছে। তাকে জাহাঙ্গীর জোরপূর্বক ঝুলিয়েছেন নাকি সে পেঁচা ব্যাটা নিজেই খারাপ ইজিকোল্টু অন্ধকারের জীব সেই লজ্জায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে গিয়েছে বলা কঠিন।
মালিক অম্বর আর তীরন্দাজ জাহাঙ্গীরের মাঝখানে ঝুলানো দাঁড়িপাল্লা। সৎ লোকের শাসন চাই জাতীয় বালছাল প্রোপাগান্ডার ইতিহাস দেখা যায় আমাদের পুরাতন।
উপরে মুক্ত আকাশে দুইটা ইয়রোপীয় স্টাইল ফেরেস্তা টাইপ দেবশিশু তীরতলোয়ার এগিয়ে দিচ্ছে। এইটে পরিষ্কার ইয়োরোপীয় টেকনিক, চিত্রকর আবুল হাসানের স্পষ্টতই পশ্চিমা ছবির উপর পড়াশোনা ছিল।
মালিক অম্বরের মাথায় পাগড়ি নাই। এইটি মর্যাদাপূর্ণ অপমান। ক্লোজ রেঞ্জে দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গীর একটি তীর এরই মধ্যে মালিক অম্বরের মুখে নিখুঁত নিশানায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন এবং দুই নম্বর তীর এই গেল বলে। মালিক অম্বরের আজকে আর নিস্তার নাই। ভাগ্যিস সে ব্যাটা সোজা চেয়ে আছে, মাথা নিচু করলে অম্বর দেখতে পেতেন তলায় ঠেস দেওয়া জাহাঙ্গীরের গাদাবন্দুক। ঢিঁসিঁয়া!
অতএব পাঠক একেই বলে বাদশাহী মনকলা। ছবির প্রোপাগান্ডায় প্রতারিত হইবেন না, দুর্ধর্ষ আফ্রিকান মিলিটারি কমান্ডার চাপু ওরফে মালিক অম্বর দুর্দান্ত দাপটে ১৬২৬ সালে অক্কা পাবার আগ পর্যন্ত মোগলদের আওতার বাইরেই ছিলেন।
ছবির গল্প আজকের মত শেষ হল।
… … …
পুনশ্চঃ ছবির টেকনিকাল দিক উপরের নিন্দাবাদ মুক্ত। ছবিটি কৌশলগত এবং খুঁটিনাটি দিক দিয়ে নিশ্চিতই একশোতে একশো, চিত্রকর আবুল হাসানের টুপিখোলা কুর্নিশ সহকারে সাবাশি প্রাপ্য।
সূত্রঃ
নাভিনা নাজাত হায়দার, মারিকা সরদারঃ সুলতানস অফ ডেকান ইন্ডিয়া ১৫০০ - ১৭০০
সঞ্জীব প্রসাদ শ্রীবাস্তবঃ জাহাঙ্গীর এ কনোসিয়র অফ মুঘল আর্ট
কেনেথ রবিন্স, জন ম্যাকলডঃ আফ্রিকান এলিটস ইন ইন্ডিয়া
রোজমেরি ক্রিল, কপিল জরিওয়ালাঃ দি ইন্ডিয়ান পোর্ট্রেট ১৫৬০ - ১৮৬০
https://en.wikipedia.org/wiki/Jahangir
https://en.wikipedia.org/wiki/Malik_Ambar
মন্তব্য
অপদার্থ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আলোচনা করার কিছু নাই; শুধু এটুকু বলার যে, সে নিজেও একজন পেইন্টার, তার নিজের স্টুডিও ছিল যেখানে আবু আল হাসান তো বটেই হাসানের বাবা রেজা হিরাতী, হাসানের ওস্তাদ মানসুর, মানসুরের সমসাময়িক নানহা, মিসকিনা'র মতো পেইন্টারেরা কাজ করেছেন।
জাহাঙ্গীরের অনেক ছবিতেই ভূগোলক দেখা যায়। এর কারণটা হচ্ছে তার আমলে মুঘল বিজ্ঞানীরা seamless ভূগোলক বানাতে সক্ষম হয়।
আবু আল হাসানের চিত্রকলায় নানা প্রকার পাখি ও জীবজন্তুর উপস্থিতি স্পষ্টতই ওস্তাদ মানসুরের প্রভাব। তাঁর ছবিতে ইউরোপীয় ঘরাণার ছাপের উৎসও একই। ওস্তাদ মানসুর নিয়ে কারো আগ্রহ থাকলে তারা এই বইটা আর এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন (ছবি দেখতে পারেন)।
মালিক অম্বরের জীবনকাহিনী সিন্দাবাদ বা এই জাতীয় কিংবদন্তীদের সাথে তুলনীয়। সমস্যা হচ্ছে তাঁর ওপরে তথ্য পাবার সম্ভাব্য ভালো দুটি উৎসের একটা হচ্ছে হাশিম বেগ আশ্তারাবাদী'র 'ফুতুহাত-ই-আদিল শাহী' আর আরেকটা হচ্ছে পিয়েতর ফন দেন ব্রোয়েক-এর জার্নাল। প্রথমটা দুষ্প্রাপ্য আর দ্বিতীয়টা ডাচ ভাষায় লেখা - মানে দুইটাই আমাদের মতো আমজনতার নাগালের বাইরে। 'সিদ্দি'রা মুঘলদেরও আগে থেকে ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন। জাহাঙ্গীরের আমলের সাড়ে তিনশ' বছরেরও বেশি আগে সুলতান রাদ্বিয়াহ্'র আমলে তাঁর বয়ফ্রেন্ড জামাল উদ্ দীন ইয়াকুতও সিদ্দি ছিলেন।
'জঞ্জিরার সিদ্দি' কথাটার মানে বুঝতে পারিনি।
অশোক কুমার দাস এর কয়েকটা ভালো বই আছে মোগল পেইন্টিং এর উপরে, কিন্তু ইন্টার্নেটে খালি খাবলা খাবলা। আস্ত বই (অবৈধ বিজলিবই আর কি ) পাইনাই। লাইবিরিতে পাওয়ার কথা, দেখি পাইলে আরো কয়টা ছবির গপ হবেনে।
মালিক অম্বরের উপর ছাড়াছাড়া লেখা প্রচুর পাওয়া যায়, আমি বিস্তারিত পাইসি ইটনসাবের বইতে। সময় থাকলে ওইটার তর্জমা নামায় দিতাম। বইটাতে তারাবাঈয়ের কাহিনিও জটিল ও কুটিল।
সিদ্দিদের নৌ-দূর্গের নাম জঞ্জিরা না?
..................................................................
#Banshibir.
ছবির গপ যদি করতে চান তাইলে মুঘল বাদশাহদেরকে টার্গেট না কইরা ওস্তাদ মানসুররে টার্গেট করেন।
বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মধ্যে দেখবেন বাঁধানো রাস্তা দিয়ে হাঁটার প্রবণতা। ফলে মুঘলরা যখন ফকিরি হালতে আর মারাঠাদের আলিশান অবস্থা, তখনও তারা 'মুঘল মুঘল' জপতে জপতে অস্থির। ফলে ইতিহাসের বইয়ে মালিক অম্বরদের মতো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের উপস্থিতি খাবলা খাবলা, গোটা দক্ষিণ আর দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের রাজ্য ও রাজপরিবারগুলো প্রায় অনুপস্থিত। আর আধুনিক উত্তর-পূর্ব ভারত যে ১৯৪৭ সালের আগেও ছিল সেটা ইতিহাসের বই পড়ে বোঝার উপায় নেই।
মালিক অম্বর সংশ্লিষ্ট কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যাপারের কথা বলি।
গেরিলা যুদ্ধঃ মালিক অম্বর মুঘলদের বিরুদ্ধে সাফল্যের সাথে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিল, বিশেষত পার্বত্য অঞ্চলে। অম্বরের সেনাপতি মালোজী রাজে ভোঁসলে তার কাছ থেকে গেরিলা যুদ্ধের কৌশল ভালোভাবে রপ্ত করে। মালোজীর কাছ থেকে এই জ্ঞান তার পুত্র শাহ্জী ভোঁসলে, এবং শাহ্জীর কাছ থেকে তার পুত্র ছত্রপতি শিবাজী এই জ্ঞান লাভ করে মুঘলদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। এই যুদ্ধ কৌশলের মধ্যে একটা উল্লেখযোগ্য কৌশল হচ্ছে প্রতিপক্ষের সাপ্লাই চেইন কেটে দেয়া। এর বহু কাল পরে দিয়েন বিয়েন ফুহ্'তে ফরাসীদের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামীজরা এমন কৌশল সাফল্যের সাথে প্রয়োগ করে।
মারাঠা উত্থানঃ মালিক অম্বরের বাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রেজিমেন্ট ছিল মারাঠা লাইট ক্যাভালরী। পারসীক-আফগানসমৃদ্ধ সুন্নী মুঘল আর পারসীক-লোকালসমৃদ্ধ শিয়া বিজাপুর সালতানাতের বিরুদ্ধে মারাঠাদের দিয়ে যুদ্ধ করাতে করাতে মালিক অম্বর নিজের অজান্তে ভবিষ্যত মারাঠা সাম্রাজ্যের বীজ বুনে দিয়েছিল। অম্বর খিড়কী শহরের ডিস্ট্রিক্টগুলোর নামও মারাঠা সেনাপতিদের নামে দিয়েছিল। যেমন, মালপুরা, খেলপুরা, ভিতাপুরা।
বহুজাতিক বাহিনী – বহুজাতিক কৌশলঃ মালিক অম্বর তার পদাতিক বাহিনীতে ব্রিটিশ, পর্তুগীজ, ডাচ আর পূর্ব আফ্রিকানদের এবং নৌবাহিনীতে তার জাতভাই সিদ্দিদের নিয়োগ দিয়েছিল। একইসাথে তাদের নিজস্ব যুদ্ধকৌশলও রপ্ত করেছিল। দরিয়ায় ভীত আর জল-জংলায় ভীত মুঘলরা এ’কারণে মালিক অম্বরকে কব্জা করতে পারেনি।
হাশিমের জলরঙঃ হাশিম মূলত মুঘল পেইন্টার হিসেবে পরিচিত হলেও তার শুরু, শিক্ষা ও মূল কাজের পেছনে মালিক অম্বরের দাক্ষিণ্য ছিল। হাশিমের আঁকা একটা ছবি দেখুন এখানে। শুধু হাশিম নয়, অম্বর আরও বহু লোকাল (হিন্দু ও মুসলিম) শিল্পী ও কারুশিল্পীর পেট্রন ছিল।
জনপ্রশাসন আর রাজস্ব ব্যবস্থাতেও নাকি মালিক অম্বর কিছু নতুন জিনিস ইন্ট্রোডিউস করেছিল। এই ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পারিনি। রিচার্ড ইটন সা’ব আর রিচার্ড প্যাঙ্কহার্স্ট সা’ব কি কিছু বলে গেছেন?
আপনে তো উস্তাদ মনসুরের বিরাট পাঙ্খা দেখা যায়। ধৈযয ধরেন। ছবির গপে ভবিষ্যতে আপনের মনসুর, আবুল হাসান, বাসবন, বিষেন দাস, মনোহর দাস, নয়নসুখ সকল উস্তাদই একে একে আসব। আল্লা ভরসা।
মালিক অম্বরের গেরিলা ওয়ারফেয়ার তথা মোগলদের ভাষায় "বর্গি-গিরি" নিয়া আরো লেখার অবকাশ আছে। মোগল বনাম জয়েন্ট হাবশি (সিদ্দিসুদ্ধা)-মারাঠা কোয়ালিশন ফোর্স লেখালেখির জন্য কিম্বা এমনকি মুভি-টিভি সিরিজ বানানোর জন্য চমৎকার উপাদান। সাথে ডেজার্ট হিসাবে এক চিমটি ইয়োরোপীয় বাহিনী।
প্যাঙ্কহার্স্ট সাবের এই বই পড়সি বলে স্মরণ হইতেসে না, আফ্রিকান ডায়াস্পোরা নিয়া বই একসময় পড়ছিলাম কিন্তু লেখকের নাম মনে নাই। ইটন সাবের বইতে মালিক অম্বর নিয়া মেলা ভালো ভালো কথা লিখা। ওয়াটার সিস্টেম নিয়া বিশদ বলা নাই, যেরকম বলা নাই প্রশাসক হিসেবে মালিক অম্বরের অবদানের কথা। ছুটাছাটা এদিক সেদিক নানান তথ্য আছে, যেমন এক ওলন্দাজের সার্টিফিকেট অনুযায়ী মালিক অম্বর রাস্তাঘাটে ডাকাতের উপদ্রব কমায় দিছিলেন। তারপরে যুদ্ধযাত্রায় তিনি ছিলেন কড়া, তার ক্যাম্পে কেউ মদ খায়া টাল হইলে তার গলায় নাকি গরম সীসা ঢাইলা মারা হইত সবার সামনে। মাতাল বাদশা জাহাঙ্গীররে এই সীসা ট্রিটমেন্ট দিলে একটা সাবাসি দিতাম
..................................................................
#Banshibir.
আয়রনির বাংলা প্রতিশব্দ ঠিক জানা নেই আমার। মালিক অম্বরকে নিয়ে একটা আয়রনির কথা মনে পড়ছে। আবিসিনিয়ায় (ইথিওপিয়া) জন্ম নিয়ে অনেক হাত ঘুরে অম্বরের ঠাই হয় চেঙ্গিস খানের কাছে। চেঙ্গিস খান তখন নিজামদের প্রধান মন্ত্রী। চেঙ্গিস খান নিজেও একজন হাবশি ক্রীতদাস ছিলেন, অর্থাৎ এই চেঙ্গিস সেই চেঙ্গিস নন, এমনকি তার ধারেকাছের কেউও নন। মুঘলদের সাথে আসল চেঙ্গিস, যিনি পৃথিবীর মহানতম সম্রাটদের একজন, খানের ঘোরানো প্যাঁচানো একটি আত্মীয়তা রয়েছে বলে জানি। চেঙ্গিসের বংশধর জাহাঙ্গীর কিনা নাকাল হলেন চেঙ্গিসেরই তালেবে এলেমের কাছে! চমৎকার লেখাটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে, সত্যপীর।
---মোখলেস হোসেন
তথ্যগুলো জানানোর জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
চেঙ্গিসখান কিভাবে মহানতম সম্রাট হিসেবে গণ্য হতে পারেন? "বিজয়ী" হওয়া আর "মহান" হওয়া এক করে ফেলা মনে হয় ঠিক না। অনেক বিজয়ীই মহান ছিলেন না।
শুভেচ্ছা
মহান বলতে মহৎ বোঝাতে চাইনি মেঘলা মানুষ, Great বুঝিয়েছি। যে অর্থে আলেকজান্ডার, রামেসিস, অশোকা কিম্বা আকবর মহান, সে অর্থে চেঙ্গিস মহান কিনা সেই প্রশ্ন যদি করে থাকেন তাহলে বলবো তিনি এঁদের কারো চাইতে কম ছিলেন না।
হ।
..................................................................
#Banshibir.
প্রসঙ্গ চেঙ্গিসঃ মালিক অম্বরকে আবিসিনিয়ার (হারার) দাস বাজারে প্রথমে বিক্রি করে দেয় খোদ তার পিতা। সেখান থেকে কয়েক হাত ঘুরে সে পৌঁছায় ইয়েমেনের (আল মুখা) দাস বাজারে। ইয়েমেন থেকে আবার কয়েক হাত ঘুরে সে পৌঁছায় ইরাকের (বাগদাদ) দাস বাজারে। ইরাক থেকে তাকে মক্কার প্রধান বিচারপতি (কাযী-উল-কুয্যাত) তাকে কিনে মক্কায় নিয়ে যায়। বিচারপতি তাকে বাগদাদের মীর কাসিমের কাছে বিক্রি করে দিলে আবার তার ঠাঁই হয় বাগদাদে। মীর কাসিম তাকে শিক্ষিত করে তুলে নিযামশাহী সালতানাতের মন্ত্রী চেঙ্গিস খানের কাছে বিক্রি করে দেয়। ১৫৯৪ সালে এই চেঙ্গিস খানের মৃত্যু হলে মালিক অম্বর ওরফে চাপু ওরফে সাম্বু মুক্তি পায়। মালিক অম্বর তার কনিষ্ঠ পুত্রের নামও চেঙ্গিস খান রাখে।
প্রসঙ্গ মহানঃ ইংলিশ Great-এর বাংলা মহান হয় বটে, তবে নানা প্রকার সম্রাটদের নামের শেষে যে the Great লাগানো হয় তার বাংলা 'মহান' করাটা বোধহয় ঠিক হয় না। কারণ, এই বিশেষ্য পদটি 'মহত্ত্ব' বিশেষণের সাথে সম্পর্কিত। রামেসিস, অশোক, আলেকজান্ডার, চেঙ্গিস, আকবরের মহত্ত্ব যে কোন সাধারণ মানুষের মহত্ত্বের সাথে তুলনীয়। বরং তাদের নৃশংসতা, কঠোরতা, একঘুঁয়েমী, অমানবিকতা, দম্ভ, লোভ, ঈর্ষা, প্রতিহিংসাপরায়ণতা, আমিত্ব ইত্যাদি বিবেচনা করলে মহত্ত্বের স্কেলে তাদের ঠাঁই শূন্যের নিচে নেমে যাবে।
আওরঙ্গাবাদ আওরঙ্গাবাদ হয়ে উঠার আগে মালিক অম্বর যখন শহরের পত্তন করেন, পানির ব্যাপক সংকট ছিল। শহরে পানির সাপ্লাই নিশ্চিত করতে তিনি আন্ডারগ্রাউন্ড নালার ব্যবস্থা করেন যেন সকল কোণাকাঞ্চিতে পানি পৌঁছে যায়। সেই ওয়াটার নেটওয়ার্কই নহর ই অম্বরি, তৎকালীন ভারতে এরকম সিস্টেম ছিলনা। মালিক অম্বর বাগদাদে থাকার সময় সম্ভবত মন দিয়ে খেয়াল করছিলেন প্রাচীন অ্যাকুয়াডাক্ট সিস্টেম।
আর টাল বাদশা জাহাঙ্গীরের বইতে মালিক অম্বর নিয়া খালি গালাগালি। কালা, হাবশি, আন্ধারমুখ, হতভাগা এইসব ছাড়া মালিক অম্বরের নাম নেওয়া হয়নাই। হালা উজবুক।
..................................................................
#Banshibir.
প্রাচীন ভারতের কোন কোন জায়গায় ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমের ভালো ব্যবস্থা ছিল। যেমন, মালিক অম্বরের বহু বহু শতাব্দী আগে সিন্ধু সভ্যতার কোন কোন জায়গায় বর্তমান ওয়াসার মতো ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সিউয়েজ সিস্টেম ছিল। তবে সিউয়েজ সিস্টেমে ভারতীয়দের আজীবন অনীহা আর বেশিরভাগ জায়গায় সারফেস ওয়াটারের পর্যাপ্ততা থাকা বা অ্যাকুইফারের অবস্থান ৮ মিটারের মধ্যে হওয়ায় ভারতে ওয়াটার সাপ্লাই এন্ড সিউয়েজ সিস্টেম ব্যবহারের প্রসার বা স্থায়িত্ব ঘটেনি। পারস্য আর কুর্দীস্তানে 'ক্বারিজ' আর ইরাকে 'কানাত' নামে যে আন্ডারগ্রাউন্ড অ্যাকুয়াডাক্ট বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত মালিক অম্বর সেটা খেয়াল করে থাকতে পারে। একই ধরনের ব্যবস্থা ভারতের কন্নড়ে প্রচলিত ছিল 'সুরঙ্গম' নামে। তবে মালিক অম্বর খিড়কী (পরে আওরঙ্গাবাদ) শহরে যে ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম চালু করেছিল সেটা কানাতের সাথে ওসমানীয় বাগদাদ ইলায়েতে প্রচলিত ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেমের কম্বিনেশন ছিল।
যারা মাসুদ রানা সিরিজের 'পপি' বইটা পড়েছেন তারা সেখানে কানাতের কথা জেনেছেন।
@মোখলেস হোসেন, অনেক ধন্যবাদ ফিরে এসে মন্তব্য করে বিষয়টা খোলাসা করার জন্য। Great শব্দটার বাংলা অনেকভাবেরই করা যায় আসলে।
মানুষের মধ্যে "বিজয়ীর পূজা" জিনিসটা অনেক বেশি। অপকর্ম করে বেড়ালেও মানুষ 'হিরো' দের ছায়া পছন্দ করে। গুগল করে আপনার কথার প্রতিধ্বনি পেলাম আরেক জায়গায়: "From what I know of the history it does not seem that Genghis Khan was any more evil or sociopathic than Julius Caesar, Charlemagne or Alexander the Great."
পরামর্শ: অতিথি হিসেবে মন্তব্য করলে প্রতি মন্তব্যেই নিজের নাম দেয়া দরকার (আমিও দিতাম)। তা না হলে অন্য কেউ ঢুকে মন্তব্য করলেও বোঝা কঠিন।
শুভেচ্ছা
"প্রসঙ্গ চেঙ্গিস প্রসঙ্গ মহান" মন্তব্যটি খুব সম্ভবত মোখলেস হোসেনের নয়।
..................................................................
#Banshibir.
বাবুর মায়ের দিক থেকে চেংগিসের বংশধর। বাবুরনামা তে লিখে গেছে বাবুর যে তার নানা ছিল ইউনাস খান।
"Yunas Khan, son of Wais Khan, son of Sher-'ali Aughlon, son of Muhammad Khan, son of Khizr Khwaja Khan, son of Tughluq-timur Khan, son of Aisan-bugha Khan, son of Dawa Khan, son of Baraq Khan, son of Yesuntawa Khan, son of Muatukan, son of Chagatai Khan, son of Genghis Khan"
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
যুগে যুগে মুহম্মদ জাহাঙ্গীররা নানা প্রোপাগাণ্ডা ছড়ান।
কথা সত্য।
..................................................................
#Banshibir.
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এরা কাদের মেটাফর? তৎকালীন সভসদদের?? বর্তমানে এরা কারা??? বুদ্ধিজীবি বা নসু ????
-আতোকেন
ফেরেস্তারা আল্লাপাকের নির্দেশে জাহাঙ্গীররে কলামূলা আগায় দিতেছে এইট বুঝাইল আর কি।
..................................................................
#Banshibir.
চরম উদাস ছাড়া এইরাম চিত্রকর্ম কারো পক্ষে আকা সম্ভব সেইটা কেমেন বিশ্বাস করি
০২
জাহাঙ্গীরের পিছনে ওইটা কি টেলিফোন? এইটা নিয়া কিছু কইলেন না?
ভেম হইয়া গেছে, টেলিফোন উল্লেখ করা উচিৎ ছিল। টেলিফোনের হ্যান্ডেল বাদশাহী মুকুট, আর টেলিফোনের গোল ডায়ালপ্যাডে জাহাঙ্গীরের গুষ্টির নাম ফার্সিতে লিখাঃ "নূরউদ্দিন মুহম্মদ পাদশাহ গাজী, ইবনে আকবর পাদশাহ, ইবনে হুমায়ুন পাদশাহ, ইবনে বাবুর পাদশাহ, ইবনে উমর শেখ মির্জা, ইবনে সুলতান আবু সায়িদ, ইবনে সুলতান মুহম্মদ মির্জা, ইবনে মিরান শাহ, ইবনে আমীর তৈমুর সাহিব কিরান"।
টেলিফোন স্ট্যান্ডের বামে চিত্রকরের দস্তখৎঃ "আল্লাহু আকবর। আশেকান ভাইসকলের নগণ্য মুরিদ আবুল হাসান অঙ্কিত"।
..................................................................
#Banshibir.
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের ব্যাখ্যা বাদ গেছে। যে ভূগোলকের উপর জাহাঙ্গীর দাঁড়ানো; সেইটাতে কিন্তু একটা সোনালি রংয়ের গরু আর কালা ছাগল স্পষ্ট করে দেখা যায়; এগুলোর মানে কী? সেই দুনিয়ায় কি কোনো মানুষ নাই?
এইটা আমি দেখিনাই, সূত্র বইগুলাতে এই গরু ছাগল নিয়া কিছু দেখলাম না। গ্লোবের বামে দাঁড়িপাল্লার নিচে লেখা আছেঃ "আল্লা মহান। বাদশা নূরঊদ্দিন মুহম্মদ জাহাঙ্গীরের মহান ন্যায়পরায়ণতা ও দৃঢ়তায় এমনকি সিংহও ছাগলের স্তন হতে দুধ খায়"...ছাগলের উল্লেখ এই একখানেই পাইতেছি আপাতত। সোনালি রঙের গরু আসলে সিংহমামা কিনা জুম করে দেখতে হইব। আমি আরো কয়টা বই খুঁজে দেখি বস গরুছাগলের মেটাফর ব্যাখ্যা করা আছে কিনা, একটু সবুর করেন।
..................................................................
#Banshibir.
লীলেনদা তো ভাইভা নেয়া শুরু করছেন
আমিও একটা কুশ্চেন করি, ছবির চারপাশে এইযে এত লতাপাতা ঘাসফুল -এইগুলার মাজেজা কি? এইটা দিয়ে শিল্পি কি বুঝাইতে চাইছিলেন?
হাসায়ে দিলেন আমারে।
বর্ডারে লতা ঘাস ফুল পাতার কারুকাজ সিগনেচার পারসিক ছবির কায়দা। সব মোগল ছবিতেই পাইবেন।
..................................................................
#Banshibir.
হ। পীরসাবের কোরমা খাইবার লাইগা তো ছাগল আর গরু জায়েজ হের লাইগা এইগুলা না দেইখা চামে সরাইয়া নিবার তালে। গরুরে সিংহ কইয়া নিজের গোয়ালে নিয়া পরেরবার কুরবানি দিবার তাল কিন্তু ভালা না। আমরা চাষা বাঙাল মানুষ। সিংহ টিংহ না চিনল্ওে গরু ছাগল চিনি। আর ইশকুলের বই পইড়া অন্তত এইটা জানি যে সিংহের মাথায় শিং নাই
০২
পীরসাব চশমা লাগাইয়া দেখেন। একটার মাথায় দুই শিং+ থুতনিতে দাড়ি+লেঙ্গুর ছোট= ছাগল
আরেকটার মাথায় দুই শিং+ লম্বা ল্যাঞ্জা+ওলান+ পায়ে খুর= গাইগরু
ক্ষ্যাপেন ক্যা। ছাগলের দুধচোষা সিংহের কথা লিখছে তাই কইলাম। গরুছাগলের মেটাফর খুঁইজা দেখতেছি সবুর করেন।
..................................................................
#Banshibir.
ক্ষ্যাপলাম কই? আপনে গরুরে সিং কইয়া সরাইয়া রাখলেন। মানলাম
কিন্তু ছাগু বাদদিয়া মোগল শিল্প আলোচনা কইরা ফালাইলেন সেইটা কেমনে মানি?
আমার বইপুস্তক গরুছাগল বিষয়ে নীরব, ব্যাপক শরমিন্দা করলেন। লাইবিরিতে হার্ডকপি কিছু পুস্তক আছে সেইটা ঘাঁটতে হইব। আপনে আর কুশ্চেন পাইলেন না
মোগল দাঁড়িপাল্লা ইজিকোল্টু সৎ লোকের শাসন ইত্যাদি লেখায় দিছি কিন্তু। ছাগু পুরা বাদ পড়ে নাই।
..................................................................
#Banshibir.
কোনটা আসলে সঠিক - "বাদশাহ" নাকি "পাদশাহ"?
ফার্সি পাদশাহ আরবিতে বাদশাহ হয়া গেছে ধারণা করি। দুইটাই ঠিকাছে।
..................................................................
#Banshibir.
জাহাঙ্গিররে আমার বেভুতা মনে হয় সবসময়
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বয়তল একটা।
..................................................................
#Banshibir.
বৈতল
মেহেরুন্নেসার জামাইর মার্ডার নিয়া আপনার কোন লেখা আছে?
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নাই। আলি কুলিরে নিয়া পড়াশুনাও অল্প, ঘাঁইটা দেইখিনাই। লেখা দিমু নাকি?
..................................................................
#Banshibir.
আবার জিগায়!
জলদি দেন।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আল্লা ভরসা।
..................................................................
#Banshibir.
দারুণ পোস্ট! দুনিয়ার কিছু জানি না।
লটারি জিতে কুটিপতি হলে আমিও এইরকম একটা ছবি আঁকাবো।
এই নুরউদ্দিন মুহম্মদ জাহাঙ্গীর কি আমাদের ড. ইউনূসের ভাই?
কুটিপতি হইলে আমারে পয়সা দিয়েন আপনেরে সপ্তম মোগল বাদশা বানায় উপন্যাস নামামু, পাবলিকে ধর্তেই পারব না কিসু।
..................................................................
#Banshibir.
আপনি পারেনও! লেখাটা পড়তে শুরুর আগে শুধু ছবিটা দেখে আমি টানা পনের মিনিট ধরে হাসতেই আছি।
তারপর লেখা পড়তে শুরু করলাম। এবং লেখা পড়ে দুনিয়ার মনকলা সম্রাটের এহেন 'মর্যাদাপূর্ণ অপমানে' আমি মিনিমাম রকমের মর্মাহত হলাম। লীলেনদার মতো আমারো পেছনে দাঁড়ানো 'টেলিফোন' জিনিসটার কথা ভাবছি। কিন্তু আলেকজাণ্ডার গ্রাহামবেলের জন্মের দুইশো বছর আগে টেলিফোন আসবে কই থেকে। মনে হয় ওটা আতরদানী বা সাবানদানী জাতীয় কিছু হবে। কালা হাবসীর খুনরাঙা গান্ধা হাত ধুয়ে ফেলার কাজে লাগবে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
ঐসময় জাহাঙ্গীর টেলিফোন ব্যবহার করতেন। তখন পুরা দুনিয়াতে একপিসই টেলিফোন ছিল, তাই উনি কাউরে কল করতে পারতেন না। তাও অন্য কেউ জবাব দিবে সেই প্রত্যাশায় উনি প্রতি রাতে টেলিফোন তুলে বলতেন, "হ্যালো, ক্যান ইয়্যু হিয়্যার মেহ, . . . . . হ্যালো ফ্রম দি আদারসাইড"
শুভেচ্ছা
উনার হয় না।
..................................................................
#Banshibir.
হাসির ছবি আরো আছে, এই দেখেন জাহাঙ্গীর তীর মাইরা দারিদ্র দূর করতেছেন। ছবির নাম Jahangir heroically killing poverty। কালা ধূমের মধ্যে বুইড়া লোকটাই দারিদ্র্যের প্রতীক, তীর মাইরা জাহাঙ্গীর পভার্টি ইরাডিকেট কইরালাইছেন।
..................................................................
#Banshibir.
যাব্বাবা! দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর মৌলিক আইডিয়াও তাইলে বাবুদা'র না?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এইত ছবির মধ্যে সিংহ আর ছাগল চইলে আসছে!
হ। ছাগলের দুধ চুষতেছেনা অবশ্য কিন্তু সিংহ ইন পীসফুল কোএগজিস্টেন্স বিকজ অফ মাইটি মাতাল জাহাঙ্গীর।
..................................................................
#Banshibir.
এইখানেও দেখেন ছাগল আছে। সিংহ তার উপরে লেঞ্জা বিছাইয়া থুইছে। নীচে মাছ আছে। কিন্তু মাছের উপরে শুইয়া থাকা দাড়িওয়ালা রূপসীডা কিডা?
দাড়িওলা রূপসী মনু। বিষ্ণুর অবতার মৎস্য তার জীবন বাঁচাইছে আর মানবজাতি হইছে ধন্য। ক্লোজআপ অব রুপসীঃ
..................................................................
#Banshibir.
ধুত্তুরি, মাছের উপর ভেবেছিলুম মৎসকন্যা, এখন দেখি ভুঁড়িয়াল সন্নেসি!
মুঘোয়েবলস!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নামটা আমারে গুপন পত্রে দিলে এই নামে সিরিজ শুরু করতাম
..................................................................
#Banshibir.
সমস্যা নাই, কাগুরাইট দাবি করুম না, লিখ্যা ফালান।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এক ধরণের মানসিকতার জন্য আমাদের ছোটবেলায় একটা কথা চালু ছিল - শ্যামবাজারের পরে পৃথিবী শেষ। সেই মানসিকতার লোকেরা যখন মসনদে বসে তখন এইরকম ছবি ছাড়া আর কি হবে!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
এক-আধটা ব্যতিক্রম ছাড়া যে কোন কালে, যে কোন দেশে মসনদে-বসা লোকজনের কাছে শ্যামবাজারের পরের পৃথিবী অস্তিত্ত্বহীন। মসনদে-না-বসা লোকদের ক্ষেত্রেও কথাটা সত্যি। বাস্তব জীবনে শ্যামবাজারের পরে না গিয়েই বেশিরভাগ মানুষের জীবন পার হয়ে যায়। সুতরাং 'নাই দেশে ভেন্না বৃক্ষ' হতে অসুবিধাটা কোথায়।
মাঝে মাঝে আবাক হয়ে ভাবি কিভাবে মানুষ এমনতর নারসিসিসট হতে পারে ! সেদিন এক জামাতির সাথে আলাপ হচছিলো। আর সব জামাতির মত ইনিও ধনি ( মানে বহুত টেকাটুকা আছে আর পুংলিংগ দারুণ শকতিশালি - উনার পেয়ারে বিবির সংখ্যা মাতরো ৩ জন )। উনি আমাকে বহুত গিয়ান দিলেন , এইসব বাংলাদেশি শিলপিরা কি সব কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আকে । পেনটিং হল মুঘলদের মিনিয়েচার , লাহোরের , আগরার কারুকাজ ওগায়রা ওগায়রা ।
ভাবছি উনাকে এই বোলগটি উপহার হিসাবে পাঠিয়ে দেব কিনা !
মোগল মিনিয়েচার শিল্প হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার, কিন্তু যে বলদে বাংলাদেশী শিল্পিদের আঁকা ছবিকে কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং মনে করে তার রুচি এবং পড়াশুনা নিম্নমানের। বাট আই রিপিট মাইসেলফ, আপনি তো বলেছেনই সে লোক জামাতি
..................................................................
#Banshibir.
ছবির গল্প অতি চমৎকার। দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বাদশাহ জাহাঙ্গীর আপনার বেহেস্ত নসীব করুন।
আওরঙ্গজেব শুনলে রাগ করব, তার মুটামুটি দৃঢ় বিশ্বাস জাহাঙ্গীর দোজখে গেছে।
রাজাগজার ব্যাপার
..................................................................
#Banshibir.
খুব অবাক করা ব্যাপার! জাহাঙ্গীর কি বিশ্বাস করতো যে পৃথিবীর আকার গোলাকার? কেন? কিভাবে তার মনে এই বিশ্বাস এলো?
মধ্যযুগ এবং তার কিঞ্চিৎ আগের জ্যোতির্বিদেরা (মুসলমান সহ) অনেক আগে থেকেই গোল পৃথিবী গোল আকাশের হিসাব রাখত তারা গুইনা। মোগল বাদশা নিজস্ব জ্যোতির্বিদ দিয়া নভোগোলক (Celestial Globe) বানায় পোজ দিছিলেন ছবিতে। ইয়োরোপীয় এবং ইসলামিক দুই ধারাতে জাহাঙ্গীর বাদশা পয়দা হওয়ার বহু আগে থেকেই জ্যোতির্বিদেরা গোলক কিম্বা সূর্যঘড়ি (গোল) নিয়া কাজ করছেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞান বুঝিনা দেইখা মোগল জমানার এই বিষয়টা নিয়া বিস্তারিত লিখতে হাত আটকায়। গানিতিক ব্যাপার স্যাপার সব
..................................................................
#Banshibir.
আবু ইয়াহিয়া জাকারিয়া ইবন মুহাম্মাদ ইবন মাহমুদ আল কাজিনি, ইনি তাঁর সময়ে(১২০৩-১২৮৩) ইসলামী জগতের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ইতিহাসবিদ, ভূগোলবিদ এবং বিশ্বকোষ রচয়িতা বলে কথিত। তাঁর রচিত "আজীব আল মখলুকাত ওয়া গারিব আল মাওজুদাত(সৃষ্টির বিস্ময়)" নামক বিখ্যাত কিতাবটি হুমাউনের আমলে মোগল ভারতে ফার্সিতে অনূদিত হয়। এই বইয়ে চিত্র সহকারে পৃথিবীর আকৃতি বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে দেখানো হয়েছে, পৃথিবী একটি গোলাকার চাকতির মত, যার চারিদিকে রয়েছে দরিয়া, আর এই দরিয়া সহ সারে জাহানকে দৃঢ়ভাবে বেস্টন করে আছে ক্কাফ পর্বতমালা। আবার এই সমুদয় মাল সামানা যাতে ধপাস করে পড়ে না যায়, সে জন্য গরু এবং অন্যান্য নানা রকম সাপোর্ট ব্যবহার করা হয়েছে। তো জাহাঙ্গীর এই অতি উপাদেয় সৃষ্টিতত্ত্ব ধারন করেই ছিলেন, নাকি পরিবরধন/পরিমার্জন করেছিলেন সেটাই ভাবনার বিষয়।
চাকতি টু গ্লোব আপগ্রেডের কথাটা পাশ কাটায় অন্য একটা দিক একটু দেখা যাক। ফাঁপা গোলক সাধারণত আলাদা আলাদা ভাবে আদ্ধেক বানায়ে মধ্যযুগীয় ধাতুবিদেরা জোড়া দিয়ে গোলক বানাতেন। এইটে মোটামুটি সারা দুনিয়াতেই টেকনিক ছিল। জাহাঙ্গীরের আমলে লাহোরের একটা গোপন ল্যাবে মোগল ধাতুবিদেরা দুই টুকরা জোড়া না দিয়া Seamless গোলক প্রস্তুত করেন, এইটা নিয়াই প্রকৃত হাউকাউ। মনে রাখা চাই গোলকটি ফাঁপা সুতরাং পুরু ধাতু কুঁদে গোলক বানানো হচ্ছেনা। ভিতরে ফাঁপা কিন্তু কোন জোড়া নাই। জোড়াবিহীন ফাঁপা গোলক তৈয়ারের এই গ্রাউন্ডব্রেকিং টেকনোলজি নিয়া বাদশা জাহাঙ্গীর অত্যন্ত গর্বিত ছিলেন এবং সেইজন্যে দুনিয়াজয়ী ব্যক্তি (জাহান-গীর) মেটাফর বুঝাতে ফট করে তিনি একটা নভোগোলকের উপর খাড়িয়ে যেতেন ছবিতে।
জাহাঙ্গীরের আরেকটা ছবির গল্প প্রস্তুত করতেছি আসবে সপ্তাখানেকের মধ্যে। গোলক নাই অবশ্য
..................................................................
#Banshibir.
বাহ! একটা সায়েন্টিফিক-টেকনলজিক্যাল এচিভমেন্ট নিয়ে গর্বকরাটা ভালু পাইলাম।
আজকাল এইরকম সিমলেস ওয়েল্ডিং দিয়ে রকেট বানায় স্পেস-এক্স।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
মোগল ছাইঞ্ছ টেকনোলজি নিয়া গপ লিখতে মন চায়। বই পত্র কম আর জ্ঞান স্বল্প, নাইলে লেইখা ফাটাইতাম।
..................................................................
#Banshibir.
****************************************
আহ, কত কিসু জানি না রে
ফাহমিদুল হান্নান রূপক
নতুন মন্তব্য করুন