কিভাবে মোগল হবেনঃ একটি সহজ পপি গাইড

সত্যপীর এর ছবি
লিখেছেন সত্যপীর (তারিখ: রবি, ২৪/১২/২০১৭ - ১০:৫৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জন্ম ও শিক্ষা পর্ব

আ। সাব্বাস। কত লক্ষ কোটি মানুষের ভিড়ে হাজারে হাজার পুলাপান জন্মায় প্রতিদিন, তার মাঝে আপনি জন্ম নিলেন আজ মোগল বংশে। আপনাকে অভিবাদন। আসুন তবে পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই। আপনার পিতা স্বয়ং বাদশা। বংশ তিমুরিদ। মাতা রাজপুত। আপনার আগে দুই ভাই, ভিন্ন মাতার পেটে। একটা বোন। জন্মস্থান আগ্রার কোন এক দূর্গ। রোজ শনিবার।

আলহামদুলিল্লা। আগ্রায় আজ ঈদ, ঘরে ঘরে আনন্দ। হ্যাশট্যাগ জশনে জুলুছ। পাথর ও আতর চালাচালি। বিরিয়ানি ও হালুয়া পাকশাক। রাজপথে লোকের মুখে হাসি ও হাতে মোহর।

কুটিল মোগল জীবনের পয়লা দিনে স্বাগতম পাঠক। বন্ধুর এই পথে পীরের পপি গাইড হউক আলোকবর্তিকা।

আপনি জন্ম নিয়েছেন দূর্গের জেনানামহলে। চারপাশ মাথা ঘুরিয়ে দেখতে থাকুন। কেমন আলোকিত কক্ষ, চারপাশে গিজগিজ করছে মানুষ আর মানুষ। এইটে আপনার মাতার খাস কামরা। চিনিয়ে দেই সবাইকে। আপনি যার কোলে সাদা চাদর জড়িয়ে হেলান দিয়েছেন তিনি আপনার দুধমাতা আঙ্গা। এই মহিলাকে রাস্তা থেকে ধরে আনা হয় নাই, ইনি আপনার মাতার ঘরের দিকের লোক। আপনার পিতা মহান বাদশার সাপুটার এই মহিলার বংশ, আপনার পিতার ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা মনসবদারের দল ও তাদের গোয়েন্দা প্রচুর সুলুকসন্ধান করে খাঁটি, নির্ভেজাল ও দুষ্টবাতাসমুক্ত এই মহিলাকে নির্বাচন করেছে। আপনাকে বিষ খাইয়ে মারার খায়েশওলা লোকের অভাব নেই এই দূর্গে, যার তার হাতে কি আপনাকে তুলে দেয়া যায়?

আপনার দুধমাতার একটা তিন মাসের ছেলে রয়েছে, এই মুহুর্তে সে এই ঘরে নেই। তার সাথে আপনার নিকট ভবিষ্যতে দেখা হবে। আগেই বলেছি আপনার দুইটি ভাই রয়েছে, তবু আপনার দুধভাই তথা কোকার সাথে আপনার যে সারাজীবনের মেলবন্ধন, ভালুবাসা ও কত আশা হবে তার এক শতাংশও আপনার ভাইদের সাথে হবেনা। ভবিষ্যতে গদির লড়াইয়ে আপনি যখন ভাইদের সাথে যুদ্ধে নামবেন তখন আপনার ঝাণ্ডা উড়িয়ে ডাণ্ডা বইবে এই কোকা খোকাটিই। বুঝতে হবে।

যাক তবু আজ পয়লা দিন। গদির লড়াইর দিল্লি অতিদূর। কামরায় ফিরি। বিছানায় শায়িত দামী জামা পরিহিত ক্লান্ত মহিলাটি আপনার মাতাজান। তাকে শুশ্রূষা করছে তিন চাকরানি। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ যে মহিলাটি মিঠেহাসি সহকারে তাকিয়ে, তিনি আপনার দাদিজান। পাশের খালি কেদারাটি তারই, উত্তেজনায় তিনি এগিয়ে এসেছেন আপনার কাছে। চারপাশ ঘিরে রয়েছে ছোটবড় নারীদের ভিড়, সকলেই উঁকি দিয়ে আপনার খোমাটি দেখতে উৎসুক ও উদ্বেল। এক পাশে খোজাবালকের দল তালি দিয়ে গান গাইছে। ঢোলতবলায় জনা চারেক। কোমর দুলিয়ে নেচে চলেছে ছয় কিশোরী। ঢিংচাক।

আনন্দ অবশ্যই আপনার কামরায় সীমাবদ্ধ নয়। আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে বাইরে ও জীবনে। জনৈক বয়স্ক মহিলা এই মুহুর্তে গম্ভীরমুখে মহলের ঠিক বাইরে বসে থাকা পাঁচ কি ছয়জন বুড়া জ্যোতিষের সাথে আলাপে ব্যস্ত। আলাপের বিষয় আপনার সঠিক জন্মতিথি। ভারতীয় ও ইসলামী দুই ধরনের জ্যোতিষ সেই তিথিলগ্ন শুনে মোটা কাগজে খসখস করে নোট নিয়ে চলেছেন। আপনার কোষ্ঠী তৈয়ার হবে। সহজ কথা নয়।

ছেলে সন্তানের জন্ম মোগল জীবনে ধুন্দুমার উৎসবের বিষয়। জাহাঙ্গীর কয়েছিলেন যার নাই পুলা সে নয় খুশি। ছন্দ মিলল না যদিও তবু বাদশাবচন বলে কথা। শাজাহান শাজাহান হয়ে উঠার আগে খুররম অবস্থায় যখন তার চার নম্বর ছেলে মুরাদ জন্ম নেয়, সেই খবরে বিহারে যুদ্ধরত খুররমের তাম্বুতে তিনদিন ধরে খানা, গানা, বাজনা, বাহানা আর নানাবানা আরম্ভ হয়। সেই নানাবানার নানান তালিকা দিয়ে গেছেন ঐতিহাসিক মির্জা নাথান। এক হিসেবে দেখা যায় জাফরান তলব করা হয়েছে ১৮৫০ কেজি, হাজার দুই বোতল মিশরী আতর আর দশ হাজার বোতল কুয়ালিটি গোলাপজল। ব্যাপক ধুমধাম।


ছবিঃ জাহাঙ্গীরের জন্মউৎসব। শিল্পী বিষেন দাস।

তবে, এইখানে কথা আছে। আপনার জন্মতিথিতে কুঠি কুঠি রূপি খর্চা করে উৎসব করা হচ্ছে দেখে ধরে নিয়েন না মোগল বংশে পুলা হলেই গোলাপজলের নহর ও জাফরানের বস্তাঘাড়ে গাধার বহর। হিসেব করে দেখতে হবে বংশে নবজাতকের পিতার বর্তমান অবস্থান কী। পিতা বিদ্রোহী, ফেরারী কিম্বা হাজতে বন্দী হলে নহরও নাই বহরও নাই। ১৬১৬ সালে বন্দী খসরু মির্জার যখন ছেলে হয়, জাহাঙ্গীরনামায় সেইটার বর্ণনা এক লাইনেঃ “আল্লাপাক খসরুকে একটা ছেলে প্রদান করলেন মেহতার ফজিল রিকাবদারের পুত্র মুকিমের কন্যা মারফত।” ফিনিশ। নাই কোন বাদ্য নাইকো নহর। খস্রু তখন পিতা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধে বন্দী।

তবু তো খসরুর পুলাটি জাহাঙ্গীরনামায় পেয়েছিলেন একছত্র। আওরঙ্গজেবের বিদ্রোহী সন্তান মুহম্মদ সুলতান যখন খসরুর মতই পিতার কারাগারে বন্দী, তার ছেলে হলে পরে দাদুমণি আওরঙ্গজেব নাতিকে দেখতে পর্যন্ত যাননি। এক বচ্ছর পরে দাদুর ভালোবাসা বিহনে সেই নবজাতকটি মরেই যায়।

সুতরাং নানান গীতবাদ্য, উৎসব, কোষ্ঠীতৈয়ার, পাথর ও আতর চালাচালি, হ্যাশট্যাগ জশনে জুলুছ মানে হচ্ছে আপনার পিতা যেন তেন লোক নন। স্বয়ং বাদশার সন্তান আপনি, বুক ভরে বাতাস নেন। আপনার জীবন স্পাইডারম্যানের মতন। গ্রেট পাওয়ার গ্রেট রেস্পন্সিবিলিটি। রিস্কও গ্রেট বটে, আপনাকে হত্যা করার লোকের অভাব নাই। বাঁচতে হলে জানতে হবে। পড়ে চলুন পপি গাইড।

জন্ম তো নিলেন। এইবার আপনাকে চালান করা হবে মহলের একটি প্রশস্ত কামরায়, আপনার মাতাজানের প্রাসাদে। কাছেই দাদিজানের প্রাসাদ। আপনার মাতার জীবন সহজ নয়। সারাক্ষণ তাকে মাথায় রাখতে হবে পাছে কেউ আপনার খাদ্যে বিষ না মিশিয়ে দেয়। আপনার শত্রু সবখানে। ঘাটে, মাঠে ও গাছে। আপনার কিছু চাচা, চাচাত ভাই, আপন ভাই (ভিন্ন মাতা), সৎ তথাপি অসৎ মাতা, দুশমন কোন রাজা। শত্রুর অভাব কি। ছয় বছর বয়েসি আকবর যখন দাঁতের ব্যথায় কেঁদে ওঠেন তখন তার সৎমা হাজি বেগম কোথা থেকে ওষুধ ঢুঁড়ে আনেন। মাতাজান মরিয়ম মাকানি শংকিত হয়ে ভেবেছিলেন ওষুধ না বিষ খোদাই মালুম। শেষটায় হাজি বেগম নিজে ওষুধ খেয়ে পরীক্ষা করে প্রমাণ করেন তিনি পাজি বেগম নন হাজি বেগম।

মোগল রাজকুমার যে পিতার মহলেই বড় হবেন নিজ মাতার অধীনে তা অবশ্য সবসময় সত্য নয়। ব্যতিক্রম আছে। আকবর তার চাচা কামরানের জিম্মায় কাবুল ছিলেন জীবনের প্রথম তিন বছর। খুররম তার দাদিজান রুকাইয়া সুলতান বেগমের কাছে বড় হয়েছিলেন। আকবরের বড় বেগম রুকাইয়া ছিলেন নিঃসন্তান। তেরো বছর বয়েসে খুররম পিতা জাহাঙ্গীরের মহলে ফেরত যান। তবে মোটের উপর আপনি নিজ পিতার মহলে বড় হবেন তার সম্ভাবনাই বেশি।

মাতাজানের কাছে বড় হচ্ছেন তো বুঝলাম, কিন্তু আপনি যে চামে পুচুৎ পুচুৎ হাগুমুতু করছেন সেসব পরিষ্কার করছে কে? হাঁ সে মাতা নয়, সে আপনার দুধমাতা বিবি আঙ্গা। পূর্বেই বলেছি এই আঙ্গাবিবিকে বাছাই করা হয়েছে প্রচুর হিসেব করে। তার একটি তিনমাসের ছেলেসন্তান আছে, সুতরাং বুকে দুধ রয়েছে। এইটে আঙ্গা হবার প্রথম শর্ত। দ্বিতীয় শর্ত ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট। তার বংশ হতে হবে আপনার পিতার সমর্থক, কোন প্রমাণ থাকতে পারবে না যে সেই বংশের কেউ আপনার বা আপনার পিতার ক্ষতি চায়। এই দুধমাতার সাথে আপনার সম্পর্ক হবে অতি গভীর। আকবর বাদশা শোনা যায় কেবল দুইবার গোঁফ মুড়িয়েছিলেন শোকে। একবার যখন তার মাতা মারা যান, আরেকবার যখন মারা যান তার দুধমাতা জিজি আঙ্গা।

আচ্ছা ঠিক আছে। জন্ম তো নিলেন। মাতার প্রাসাদে বড় হচ্ছেন আরামে। এখন দুইটি বড় পুলসিরাত পার হতে হবে, শৈশব পার করে কৈশোরে উত্তীর্ণ হতে। পয়লা পুলসিরাত খৎনা, দুই নম্বর রাজশিক্ষা। এরপর আপনারে আর পায় কিডা।

খৎনা মোগল সমাজে ব্যাপক ধুমধামের বিষয়। চার বছর দুই মাস পাঁচ দিন বয়েসে আকবরের যখন খৎনা হয়, সে খবরে কাবুলের তাবৎ বাজার ফুলপাতালতা দিয়ে ঢাকা পড়ে যায়। হামিদা বানু বেগমকে কান্দাহার হতে কাবুল নিয়ে আসা হয়, মোগল রমণিরা বেগ বেগমের বাগানে বাকবাকুমে মুখরিত হন। আকবরের দুধমাতা মোহম আঙ্গা ব্যাপক খানাপিনার আয়োজন তদারক করেন, সতেরোদিন ধরে চলে উৎসব। বাজারে আনন্দের ঢল পড়ে যায়, ছেলেবুড়ো ধনীগরীব সকলে সবুজ জামা পরে লাইন দিয়ে সরকারী খানা আর মোহর পেয়ে আনন্দে বলে ওঠে জিন্দাবাদ বাদশা মোবারক হো।

মুসলমান সমাজে পুত্রের খৎনায় নানবিধ নানাবানার আয়োজন পুরাতন। ওসমানি সুলতান তিন নং মুরাদ তার ছেলের খৎনায় চরম উৎসবের হুকুম দেন। খানা পিনা আখড়া গানবাজনা হৈহুল্লোড় ধামাকিবাজি চলে ৫৫ দিন ধরে!


ছবিঃ আকবরের পুত্রের খৎনা উৎসব। শিল্পী ধর্ম দাস।

সেলিম (জাহাঙ্গীর) এর খৎনা হয় চার বছর বয়েসে, তার একভাই মুরাদের তিন বছর আর আরেক ভাই দানিয়েলের এক বছর বয়েসে।

এস্থলে খৎনার আনন্দ উৎসবের মাঝে দুইটি কথা। আপনার মাতা রাজস্থানি, খেয়াল আছে? সুতরাং আপনার মামার দিক হিন্দু। তারা আপনার খৎনা উৎসবে উদ্বেল নয়। তারা কিঞ্চিৎ রেগে কদবেল। আকবরের হিন্দু কানেকশন ছিল শক্ত। রাজপুত নারী বিবাহ করার আগে আকবরের কোন কোন শ্বশুরবাড়ি শর্ত দিয়েছিল পুত্রসন্তান হলে খৎনা দেয়া যাবেনা। মোগল সাম্রাজ্যের সকল রাজপুত্রের খৎনা হয়নি।

মোগল সাম্রাজ্যে খৎনা মহলের গোপন বিষয় নয়, ধুমধাড়াক্কায় গীতবাদ্য সহকারে খৎনা পালন করা হয়। সেই তথ্য লিপিবদ্ধ করেন দরবারের লেখকবৃন্দ। বাবুর হুমায়ূন আকবর জাহাঙ্গীর সকলেরই খৎনার উৎসবের খবর লিখে রাখা আছে, কিন্তু জাহাঙ্গীরের পরে কারো কারো ক্ষেত্রে পিনপতন নীরবতা। জাহাঙ্গীরের পুত্র খসরু বা খুররমের খৎনার কথা উল্লেখ নাই। আবুল ফযল, বাদাউনি বা জাহাঙ্গীর স্বয়ং কেউই তাদের খৎনার কথা উল্লেখ করেননি। জন্মদিন, নওরোজ, তুলাদান হাবিজাবি সমস্ত রেকর্ড আছে, কেবল খৎনা বাদ যাবার কারণ কী? সম্ভবত খসরু খুররমের খৎনা হয়নি, তাই কেউ লিখেও যাননি। দারা কিম্বা আওরঙ্গজেবেরও খৎনার কথা কোথাও লেখা নাই। আওরঙ্গজেবের ছেলের খৎনার উল্লেখ আছে অবশ্য।

মামাবাড়ি হিন্দু হলেই ছেলের খৎনা হবেনা সে কথাও ঠিক নয়। খৎনা না করানোর অন্যান্য কারণ থাকতে পারে। সে যাই হোক, আপনার খৎনা কমপ্লিট। গানা বাজনা তো অনেক হল, এইবার পড়াশোনায় মন দেওয়া যাক।

আপনার ইস্কুল শুরুর পয়লা দিনে যথারীতি গীতবাদ্য, আতর ও মোহর চালাচালি, হ্যাশট্যাগ জশনে জুলুছ। আপনি এখন বালক। জন্মেছেন কুতুব ঘরে। সুন্নতে খৎনা কমপ্লিট। মাতা দাদিজান চাচিআম্মা প্রভৃতি বড়ঘরের নারী আপনাকে আদব লেহাজ শিখিয়ে চলেছেন। একজন আতালিক আছে আপনার (আতালিক এক ধরনের মুরুব্বি/অভিভাবক বলতে পারেন, তিন চার বছর পর পর আতালিক বদলি হত)। এইবার ঘরে নানাবিধ বুড়া শিক্ষক এনে হাজির করা হবে আপনার শিক্ষাদানের জন্য।

আপনাকে শিখানো হবে আল কুরান, বিবিধ এলেম (যেমন অলঙ্কার শাস্ত্র, ছন্দ, শুদ্ধ উচ্চারণ), তুর্কী ভাষা ইত্যাদি। এছাড়া আরেক গুরু (বা একাধিক) থাকবে যিনি আপনাকে যুদ্ধবিদ্যা শিখাবেন। ছোরা, তলোয়ার, বল্লম, বন্দুক চালনা শিখবেন। রাজপুত্র হিসাবে রণবিদ্যা শেখা আপনার জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত কাস্তেতে দাও শান রে, আরেকটু বড় হলে আপনাকে যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে হাতে কলমে শিখতে হবে সব। মোগল সাম্রাজ্য দাঁড়িয়ে আছে শক্তির উপরে, আপনি আজ মন দিয়ে ফৌজ বুঝতে না পারলে কালকে ফৌজ চালাবেন কিভাবে?

কড়া মুসলমান আওরঙ্গজেবের ছেলেরা উপরোক্ত বিষয়গুলো তো শিখতই, তদুপরি তারা মন দিয়ে পড়েছিল আরবি ভাষা, ইসলামিক ইতিহাস, রসূলের জীবনী ইত্যাদি। পরের দিকে (১৬৭০ বা তার পরে) সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত হয় দেবনাগরী লিপি, ভারতীয় কলা ও বিজ্ঞান বিষয়।

আপনার শিক্ষকেরা মোটামুটি সকলেই হবেন বৃদ্ধ, বিশেষতঃ কলা/সঙ্গীত/ভাষা ইত্যাদি বেসামরিক বিষয়ে। এবং এই বৃদ্ধেরা একেকটি বিদ্যাসাগর। স্মরণ আছে আঙ্গা (বা আতালিক) নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাবধানে দেখা হত তাদের পারিবারিক ইতিহাস বা রাজনৈতিক অবস্থান? এই কথা শিক্ষক নির্বাচনের ক্ষেত্রে সত্য নয়। সাধারণত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হত নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফল ব্যক্তি তা সে যে ধর্ম বা বংশ থেকে আসুক না কেন। মেধাভিত্তিক নির্বাচন। খুররমের আটজন শিক্ষক ছিলেন, আওরঙ্গজেবের নয়জন। কখনও কখনও একই শিক্ষক একাধিক ছাত্র নিতেন, যেমন জনৈক মোল্লা আব্দুল লতিফ সুলতানপুরি আওরঙ্গজেব আর দারা দুইজনকেই কুরান শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইসলামিক আইন শিক্ষা দিয়েছিলেন দারা আর মুরাদকে শিক্ষক মোল্লা মিরাক হারভি।

মোগল শিক্ষা যে কেবল আপনার বা আপনার ভাইদের জন্য তা নয়। আপনার বোনদেরও শিক্ষার ব্যবস্থা আছে। তারা পর্দার জন্য মাদ্রাসায় না গেলেও মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা পায়। তারা অবশ্য যুদ্ধমুদ্ধ শেখেনা, তারা শেখে পড়া, লেখা আর সাহিত্য। কিছু মোগল নারী এই শিক্ষা ছাড়িয়ে স্বীয় প্রতিভায় আরও এগিয়ে নিয়ে যায় তাদের শিক্ষা, তারা আপনার মত পড়া দেখলেই হাই তুলেনা। বাবুরের কন্যা গুল বদন ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত, যেমন ছিলেন নূর জাহান। শাজাহানের কন্যা জাহানারা, আওরঙ্গজেবের কন্যা জেবুন্নিসা ছিলেন এরকম উচ্চ শিক্ষিত, তাদের কেউ কেউ কবিতাও লিখে গেছেন।

যাক ফিরে যাই আপনার পড়াশুনায়। শিক্ষা দীক্ষা হবে অত্যাধিক শুষ্কং কাষ্ঠং, পিঠে ছালা বেঁধে নিন। বুড়া শিক্ষকের টানা বকবক শুনে ঘুমিয়ে পড়বেন না যেন। আপনার পিতা শিক্ষার ব্যাপারে অত্যাধিক সচেতন, যেমন ছিলেন অন্যান্য মোগল বাদশা। ছেলে কাম বখশ আপনার মত পড়াশোনায় বিরক্ত হয়ে ক্লাস বাং মারছে শুনে পিতা আওরঙ্গজেব কড়া চিঠি ভেজেছিলেনঃ “শিক্ষাহীন (বে-এলেম) মানুষ পশু বই তো নয়। রাজপুত্রকে অবশ্যই হতে হবে শিক্ষিত ও মার্জিত।” এই বলেটলে কাম বখশকে দেড় মাস ঘরে বন্দী করার নির্দেশ দেন পিতা। আওরঙ্গজেবের নাতি বুলন্দ আখতার রাজপুতদের কাছে বড় হয় (বুলন্দের পিতা ছিল বিদ্রোহী), সে পরে আওরঙ্গজেবের দরবারে কিশোর বয়েসে হাজির হলে সবাই নাকি তার আদবলেহাজের অভাব দেখে ছ্যা ছ্যা করে ওঠে। সুতরাং মন দিয়ে পড়াশুনা করুন, আদবলেহাজ শিখুন। বুলন্দ আখতার টু পয়েন্ট ও হলে ছলবে না।

বুঝলেন তো সব? বেশ। এই পর্বে মোগল বংশে জন্মালেন। আদর সোহাগে বড় হলেন মাতাজান দুধমাতাজান দাদিজান চাচিআম্মার কাছে। আপনার খৎনায় আলোকিত হল বাজার, ময়দান ও ইমারত। বুইড়া শিক্ষক এসে ভীড় করল সাত আটজন আপনার শিক্ষার উদ্দেশ্যে। কী চমৎকার। সকলে টের পাচ্ছে এসেছে নতুন শিশু তাকে ইত্যাদি।

আজ তাহলে এ পর্যন্তই। ভালো থাকুন। আগামী পর্বে আপনি আরেকটু বড় হবেন। মনসব পাবেন। শাদী করবেন। চাচাতো বোন নার্গিস বেগম নার্গিসি কোপ্তা হবার জন্য প্রস্তুত শুনতে পাই। নাচো হেলিয়া, নাচো গো দুলিয়া। রাখো নয়নে নয়ন।

ইয়া হাবিবি।

(চলবে)


সূত্রঃ
সোমা মুখার্জি, রয়্যাল মুঘল লেডিজ অ্যান্ড দেয়ার কন্ট্রিবিউশন্স
মুনিস ডি ফারুকি, দ্য প্রিন্সেস অফ দ্য মুঘল এম্পায়ার
অ্যানমেরি শিমেল, দ্য এম্পায়ার অফ দ্য গ্রেট মুঘলসঃ হিস্ট্রি, আর্ট অ্যান্ড কালচার
সৈয়দ মুহম্মদ লতিফ, আগ্রা, হিস্টরিকাল অ্যান্ড ডেস্ক্রিপ্তিভঃ উইথ অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ আকবর অ্যান্ড হিস কোর্ট
আর নাথ, প্রাইভেট লাইফ অফ থে মুঘলস ইন ইন্ডিয়া
রাম নাথ শর্মা, রাজেন্দ্র কুমার শর্মা, হিস্ট্রি অফ এজুকেশন ইন ইন্ডিয়া
http://vmis.in/ArchiveCategories/collection_gallery_zoom?id=491&search=1&index=37114&searchstring=india
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/78/Bishan_Das._The_Birth_of_Prince%2C_ca_1610-15%2C_Page_from_Jahangirnama%2C_Museum_of_Fine_Arts%2C_Boston.jpg


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক-----এক সময় এই সব পড়তে বসলে কান্না পাইতো। আজকে বেশ লাগছে।
এ্যানি মাসুদ

সত্যপীর এর ছবি

কান্না পাইত, বলেন কি? কী কারণে?

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

ইতিহাস তো "ইতি " সহজে আসতো না। লিখতে গেলে তো অবস্থা আরো খারাপ ! সাল আর নাম মুখস্থ করতে গেলে মনে হইত মাটি ফাঁক করে ঢুকে যাই।
এ্যানি মাসুদ

সত্যপীর এর ছবি

কথা সত্য। বদমাইশের দল বাচ্চাদের বই কিভাবে লিখতে হয় শিখেনাই।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

সুপাঠ্য। এতো সাবলীল যে পেছনের পরিশ্রমটা বোঝাই যায় না। সচলে এই মানের লেখা কমে আসছে।

----মোখলেস হোসেন

সত্যপীর এর ছবি

সচলে লিখতে হলে কিঞ্চিৎ খাটতে হয়। পরের পর্বে মোগল বিবাহের আঞ্জাম করব, সেই খাটনির কথা ভেবে এখনই হলাম কাতর ও পেরেশান।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আকবরের মায়ের নাম কি হামিদা বানু বেগম না মরিয়ম মাকানি?

জাহাঙ্গীরের আগে আকবরের যে দুই পুত্রের জন্ম হয়েছিল (হাসান মির্জা, হোসেন মির্জা), তাদের সম্পর্কে ইতিহাস কী বলে?

Emran

সত্যপীর এর ছবি

হামিদা বানু বেগমের টাইটেল মরিয়ম মাকানি। একই মহিলা।

জাহাঙ্গীরের ভাইদের সম্পর্কে কোন এক বইতে কিছু একটা বিশদ দেখছিলাম, কোন বই বা কী বিশদ এই মুহুর্তে স্মরণ নাই। একটু ধৈজ্জ ধরেন মিয়াভাই। আরেকটু খুঁজে এসে জানাচ্ছি।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

জাহাঙ্গীরের আগে আকবরের যে দুই পুত্রের জন্ম হয়েছিল (হাসান মির্জা, হোসেন মির্জা), তাদের সম্পর্কে ইতিহাস কী বলে?

বেশীরভাগ বইয়ে খালি লেখা দুই জমজ ভাই জন্মের মাসখানেক পরেই মারা যায়। অন্য তেমন কিছু নাই। একটা বইতে আরেকটু কি যেন লেখা ছিল কিন্তু এখন আর খুঁজে পেলাম না। কিন্তু, খুঁজতে গিয়ে অন্য একটা জিনিস পেলাম। দুই জমজ ছেলে সহ আকবরের পয়লা তিন বাচ্চা যখন মারা যায়, একটা ছেলের আশায় আকবর চিশতী তরিকার সুফি সেলিম চিশতির কাছে যান। আমি চিশতি নকশবন্দী ইত্যাদি সুফি তরিকা নিয়ে বেশি পড়ি নাই, কিন্তু এগুলা ঘেঁটে দেখা আকবরের জীবন বোঝার জন্য জরুরী। আকবর ছেলে চেয়ে চিশতী সুফির কাছে গেছিলেন সত্য, কিন্তু এইটার পিছনে অন্য রাজনৈতিক কারণও থাকা সম্ভব। মুইনুদ্দিন চিশতী তৎকালীন ভারতীয় মুসলমানদের কাছে হেভিওয়েট ধর্মীয় গুরু, আকবরের গায়ে (বিশেষতঃ তার জোয়ান বয়েসে) বহিরাগত বহিরাগত গন্ধ ছিল যে আকবরের ঝেড়ে ফেলা খুব দরকার ছিল। তিনি হিন্দুস্তানের মন জয় করতে হিন্দুস্তানি মুসলমানদের প্রিয় চিশতী সুফির কাছে যাইতেন সেটাও হতে পারে।

চিশতীদের গন্ধ জামায় ঘষা আকবরের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তার উদাহরণ দেই। তিনি ছেলে চাইতে সেলিম চিশতীর কাছে গেলেন। ছেলে হল, তার নাম দিলে সেলিম। সেই সেলিমের দুধমাতা আঙ্গা আনা হল চিশতি সেলিমের পরিবার থেকে। সেলিমের পরের দুই ছেলে দানিয়াল আর মুরাদের দুধমাতাও চিশতী ফ্যামিলি। সারাগায়ে চিশতী গন্ধমাখা আকবর হেসে হিন্দুস্তানকে কইলেন মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক। আমি তোমাদের লোক।

(এক প্রশ্নের উত্তরে আরেক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়ায় দুঃখিত। পরে যদি হাসান হুসেন নিয়ে কিছু দেখি এসে জানাবো)

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

আহ! এইজন্যই গুরু গেয়েছিলেন

কেউ ফিরে না খালি হাতে গেলে খাজার দরবারে

আকবরের মত কৌশলী এবং দূরদর্শী শাসক অরাজনৈতিক বিবেচনা থেকে কোন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে হয় না। আকবরের রাজনৈতিক দক্ষতার কারণেই বোধ করি ভারতে মুঘল শাসন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী (খিলজী/তুঘলক/লোদী শাসনের তুলনায়) হয়েছিল।

Emran

সত্যপীর এর ছবি

আহা কি গানটাই না দিলেন।

আকবর অতি চালু ছেলে, কাঁচা বয়েসে কিছু কাহিনী করলেও পরিণত বয়েসে সকলের মন পেতে তিনি ভিতরের নৃশংসতা লুকিয়ে ফেলেন।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আকবরের রাজনৈতিক দক্ষতার কারণেই বোধ করি ভারতে মুঘল শাসন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী (খিলজী/তুঘলক/লোদী শাসনের তুলনায়) হয়েছিল

- মুঘল শাসন দীর্ঘস্থায়ী হবার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটা হচ্ছে বহিরাগত শক্তির সাথে লোকাল শক্তিগুলোর সিন্ডিকেট গড়ে তোলা। এই কাজটা অবশ্যই আকবরের আমলে সবচে' ভালোভাবে হয়েছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

বহিরাগত শক্তির সাথে লোকাল শক্তিগুলোর সিন্ডিকেট গড়ে তোলা।

১। এটাই

আকবরের রাজনৈতিক দক্ষতা

২। বহিরাগত কে ও/বা কাহারা এবং কেন?

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মুঘলদের দলবল শুধুমাত্র চাঘতাইদের নিয়ে গঠিত ছিল না। বৃহত্তর তুর্কীস্তানের ছোট-বড় অনেকেই সেখানে কালে কালে জুটেছিল। তার সাথে তুর্কী, আফঘান, পারসী অনেক গ্রুপ যুক্ত হয়েছিল। আমার হিসাবে ঐ সময়কালটাতে তারা বহিরাগত শক্তি। এদের মধ্যে কিছু গ্রুপ মালকড়ি লুটে আপন আলয়ে ফেরার চেষ্টা করেছে, কিছু গ্রুপ ভবিষ্যতে নিজেরাই মুঘলদের জায়গা দখল করার স্বপ্নে লেগেছিল, কিছু উলুখাগড়া গ্রুপ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। খোদ মুঘলরা বহু বছর ধরে ফরগানা পর্যন্ত সাম্রাজ্য বিস্তারের চেষ্টা করেছিল। সেটা সম্ভব হলে ভারত আক্ষরিক অর্থে তুর্কীস্তানের উপনিবেশ হতো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

সেটা সম্ভব হলে ভারত আক্ষরিক অর্থে তুর্কীস্তানের উপনিবেশ হতো।

ম্যান ইন দ্য হাই ক্যাসল নামে একটা টিভিসিরিজ আছে, সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপ-জার্মান বাহিনি জিতে যায়। অল্টার্নেট রিয়্যালিটি। জাহাঙ্গীর শাজাহান মধ্য এশিয়া জয় করলে তুর্কিস্তানের উপনিবেশ ভারত কেমন হইত তা নিয়ে অল্টার্নেট রিয়্যালিটি নামানো যাইতে পারে।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

উলটোটা যে হতো না, তার গ্যারান্টি কি? অর্থাৎ মুঘলরা ফরগনা ইত্যাদি জয় করলে ভারত তুর্কীস্তানের উপনিবেশ না হয়ে তুর্কীস্তানই যে ভারতের উপনিবেশ হতো না, সেটা কি নিশ্চিত-ভাবে বলা যায়? হাসি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

নিশ্চিতভাবে কিছুই বলা যায় না। যেমন বলা কঠিন ফরগনাজয়ী শাজাহানের সাথে সমসাময়িক হেভিওয়েট চীন ও রাশিয়ার গেন্জাম লাগত না আঁতাত হইত। না দোনোটাই। তিন পাগলে হল মেলা ফরগনাতে। ভারত, চীন, রাশিয়া। কেউ যাসনা ও পাগলের কাছে মন খারাপ

অল্টার্নেট রিয়্যালিটি নিয়া লেখা খুব কঠিন। তাই আমি এই জঁনরা লাইক্করি।

সম্পূর্ণ ভিন্ন টপিক: শাহিন আখতারের ময়ূর সিংহাসন কি আপনি আমাকে পড়তে কইছিলেন? না স্পর্শ ভাই। মনে নাই। এনিওয়ে, গতকাল পর্যন্ত কষ্টেমষ্টে অর্ধেক পড়ে বই বন্ধ করে দিলাম। ভালো লাগে নাই মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

না, আমি বলি নাই। নিজেও পড়ি নাই। তবে আমার রেকমেন্ড করা বইর ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। আমি আপনারে যেইটা পড়তে কমু - সেটা পড়া তো পড়া, চাইটা-পুইটা-চাবায়া-চুবায়া খায়া ফেলার পরও বলবেন - আরও চাই, আরও দ্যান! হাসি

যাজ্ঞে, নতুন একটা রেকমেন্ডেশন দেই। ডরোথি ডানেটের বই পড়েন। আমি ছাত্রজীবনে ইনার "নিকোলো" সিরিজের একটা বই পইড়াই ফিদা হয়ে গেছিলাম। পরে আর যোগাড় করতে পারি নাই বলে পড়তে পারি নাই। ইতিহাসের কুটিল গোলকধাঁধা বা ঘুর্ণাবর্তে লো-প্রোফাইল নায়করে ফালায়া দিয়া ঘুর্ণাবর্তের উত্থান-পতন বা গোলকধাঁধার গলি-কানাগলি সব জায়গা থেকেই নানারকম অনাস্বাদিতপূর্ব এক্সটিক রস নিংড়ে বের করে আনার একটা দারুন দক্ষতা আছে ডরোথি ডানেটের। অন্তত যতদূর মনে পড়ে। ডানেটের "The House of Niccolò"-র ব্লার্বটা পড়ে দেখেন - এইটা পড়েই তো আমার জিহ্‌বা দিয়ে পানি পড়তেসে!

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

ইতিহাসের কুটিল গোলকধাঁধা বা ঘুর্ণাবর্তে লো-প্রোফাইল নায়করে ফালায়া দিয়া ঘুর্ণাবর্তের উত্থান-পতন বা গোলকধাঁধার গলি-কানাগলি সব জায়গা

সত্য নাকি? আচ্ছা বেশক বড়েয়া বাত। এই টেকনিক আমিও কিন্চিৎ ফলো করি। একটু ঘুঁটে দেখতে হচ্ছে।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

এই বিষয়ে আমার থিয়োরি ভিন্ন।

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই বিষয়ে আমার থিয়োরি ভিন্ন

- শুধু এইটুকু বলে ছেড়ে দিলে হবে! আপনার থিয়োরিটা বলতে হবে না!


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মন মাঝি এর ছবি

-ঘ্যাচাং-

****************************************

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অটঃ ধর্মচর্চ্চা নিয়ে আকবর (আসলে তার পারিষদবৃন্দ) যে সব এক্সপেরিমেন্ট আর স্টান্টবাজী শুরু করেছিল, নতুন ধর্ম চালানোর চেষ্টা শুরু করেছিল তাতে তৎকালীন ইসলামী নেতৃবৃন্দ যথেষ্ট নাখোশ হয়েছিলেন। সময়টা মুজাদ্দেদিয়া ত্বরিকার প্রতিষ্ঠাতা আহ্‌মাদ আল ফারুকী আল শিরহিন্দী ওরফে মুজাদ্দিদ আলফ্‌ সানী (রহঃ)-এর যিনি ছিলেন আবার নক্‌শবন্দীয়া ত্বরিকার অনুসারী। তখন রাজধানী দিল্লীসহ উত্তর ভারতে নক্‌শবন্দীয়া-মুজাদ্দেদিয়া ত্বরিকা শক্তিশালী হচ্ছিল এবং আকবরের ইসলামের মৌলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার চেষ্টা করছিল। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার আশায় আকবর বারো না চৌদ্দ বার চিশ্‌তিয়া ত্বরিকার তীর্থস্থান আজমীর শরীফে গিয়ে মুজাদ্দেদীদের বিরুদ্ধে চিশ্‌তীদের দাঁড় করানোর এবং নিজের জন্য চিশ্‌তিয়া এনওসি বাগানোর চেষ্টা করেছিল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার আশায় আকবর বারো না চৌদ্দ বার চিশ্‌তিয়া ত্বরিকার তীর্থস্থান আজমীর শরীফে গিয়ে মুজাদ্দেদীদের বিরুদ্ধে চিশ্‌তীদের দাঁড় করানোর এবং নিজের জন্য চিশ্‌তিয়া এনওসি বাগানোর চেষ্টা করেছিল।

কেমন চালু মাল। এক ঢিলে কয়েক পাখি। আমার পপি গাইড বাদশা হবার ঠিক আগ মুহুর্ত পর্যন্ত চালাব, তারপর ফিনিশ। দূর ভবিষ্যতে যদি আরেকখান পপি গাইড নামাই কিভাবে বাদশা হবেন শীর্ষক, এইরকম ধর্ম ও ধর্মীয় গুরুদের কিভাবে হাতে রাখতে হয় তার উপর এক কিস্তি রাখব। গেম অফ থ্রোনস এগুলির কাছে লবণ ছাড়া পান্তাভাত।

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

বাদশা হওয়া সংক্রান্ত পপি গাইড বাইর হইলে আমারে এক কপি দিয়েন। এডাভান্স বুকিং দিয়া রাখলাম। বাদশা হওয়ার শখ পোষন করি! হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ইয়ে, ওটা পাদ শা হবে মন মাঝি।

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

ইয়ে, বাদ-শারাই পাদ-শা আর পাদ-শারাই বাদ-শা। একটা হতে হলে অন্যটাও হতে হয় - একে অপরের যোগ্যতা আরকি। চিন্তার কিছু নাই! দেঁতো হাসি

****************************************

আলতাইর এর ছবি

ইয়ে... পাদশা অথবা পাদী -শা মানে পৃথিবীর অধীশ্বর অথবা এই টাইপের কিসু মে বি। জানায় ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বিষেন দাসের আঁকা ছবি দেখে বেশখ নারাজ হইলাম। আমার জন্ম উৎসবের ছবি, অথচ পুরা ছবিতে আমার অস্তিত্ব ১% এর চেয়েও কম! সাজায়ে মউত দিয়া যায়ে!

সত্যপীর এর ছবি

সাজায়ে মউত তো না ই, বিষেন দাস কে এই মাস্টারপীসের জন্য যোধপুরের অদূরে আস্ত সাতটি গ্রাম ইনাম জায়গির দিয়া যায়ে। এই ছবি একশোতে একশো।

লেখার নিচে সূত্রে ছবির উইকিমিডিয়া হাই রেজোল্যুশন লিঙ্ক দেয়া আছে। ওইটা অন্য ট্যাবে খুলেন। উপরে মাঝামাঝি এলাকায় জুম করেন। দেখেন আপনার সম্মুখ দেখানোর জন্য আঙ্গা বিবিকে পাশ ফিরে দেখানো হয়েছে। তার শরীরের কিছু অংশ পিলারের পিছনে, যেন সম্পূর্ণ ফোকাস যায় তার হাতে থাকা আপনার উপর। স্টার অফ দ্য শো। আচ্ছা। এইবার আপনার মাতার দিকে তাকান। আশপাশের সকলে (কেদারায় বসা আপনার দাদিসহ) হাল্কা রঙের পোষাক আর কন্ট্রাস্টে আপনার মাতা রাজস্থানের রাজকুমারী ঝলমলে সোনার কাজ করা জামা পরিহিত ছবির এক্কেবারে মাঝখানে। তিনি মাতা, আপনার পরে আজকে তার গুরুত্ব সর্বাধিক। ছবিতে সেই ভারও দিয়েছেন বিষেনদাস। এইবার কেদারায় বসা দাদির দিকে তাকান। ওয়ান অ্যান্ড ওনলি হামিদা বানু বেগম। মোগল সাম্রাজ্য যখন চ্যাটের বাল ছিল হুমায়ূনের আমলে সেই তখন থেকে তিনি মোগল জেনানামহলের দাঁড় ধরা মাঝি। শেষ বয়েসে তাই তিনি সোনার কেদারায় বসে, মুখে মিঠে হাসি, পায়ে মখমলের পা-বালিশ। আরও জুম করেন হামিদা বানুর পায়ে। এই মিনিয়েচার ছবিতেও বুঝতে পারবেন দাদির পায়ে সোনার বিছা। ছবিতে আর কারও পা দেখতে পাবেন না। তাদের সকলের পা গুটানো যেন দাদির পায়ে ফোকাস যায়।

ওকে। বামে এবং ডানে গুচ্ছ গুচ্ছ নারী ও খোজাবালকের মুখ, জামা, অলঙ্কার খুঁটিয়ে দেখেন। প্রত্যেকের কাজ আলাদা। প্রত্যেকের মুখের প্রকাশভঙ্গী আলাদা। আর মুখের প্রকাশভঙ্গীর কথাই যদি হয়, সর্বনীচে বামে লাল ভারী পর্দার আড়াল থেকে মুখ বের করা দুষ্ট বালিকাটির মুখ দেখুন। পাজির পাঝাড়া, তাকে বাইরে কি কি ঘটছে সব দেখতে হবে। বাইরে মহলের সামনে মহিলা গম্ভীর মুখে জ্যোতিষদের আপনার জন্ম তিথি লগ্ন হাবিজাবি বলে চলেছেন, সেই জ্যোতিষীদের জামা মুখ হাবভাব খেয়াল করেন। কে ভারতীয় জ্যোতিষ আর কে ইসলামিক জ্যোতিষ একবারে বলে দেয়া যায়।

এরকম আরও আছে। আস্ত পোস্ট নামানো যায় বিষেন দাসের ছবি নিয়ে। যোধপুরের গ্রাম ইনাম জায়গির কি আর এমনি এমনি দিলাম?

একশোতে একশো।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

এই একটা মিনিয়েচার ছবিতে এতো কিছু ঢুকিয়েছেন বিষেন দাস!!! আমি বাদশা হলে বিষেনজীকে যোধপুরটাই ইনাম দিয়ে দিতাম (তাতে অবশ্য মাড়ওয়ারি রাজপুতরা বেজার হইত)!!!

তবে একটা ব্যাপার বলতে বাধ্য হচ্ছি - মুঘল/রাজপুত/ইরানী/ওস্মানিয়া মিনিয়েচার পেইন্টিং দেখে এসব ছবির লোকদের আসল চেহারা কেমন ছিল, সেটা বোঝা একটু কঠিন!

Emran

সত্যপীর এর ছবি

এই একটা মিনিয়েচার ছবিতে এতো কিছু ঢুকিয়েছেন বিষেন দাস!!!

মাইলো ক্লীভল্যান্ড বীচ নামে একজন আর্ট হিস্টোরিয়ান আছেন। তার ফোকাস মোগল রাজপুত ইত্যাদি ভারতীয় পেইন্টিং। তার বই বা আর্টিকেল (জেস্টরে পাবেন) পেলে পইড়েন। আমি মাঝে মধ্যে ছবির গল্প সিরিজ লিখি, মূল রেফারেন্স বই মাইলো বীচের। এই লোক একটা মাল। আমি দেখেছি (বীচের সব বই জোগাড় করতে পারি নাই এখনো) তিনি আকবরনামা জাহাঙ্গীরনামার মিনিয়েচার পেইন্টিং বছরের পর বছর স্টাডি করে জনসমাগমের ছবিতে (যেমন সিংহাসন আরোহন, বা বড় উৎসব ইত্যাদি) থাকা ৫০/৬০ মানুষের সকলের নাম বের করে ফেলেছেন। যেমনঃ আপনি আমি জাহাঙ্গীরনামার ছবি দেখে আন্দাজ করতে পারব কে জাহাঙ্গীর, কে খুররম, কে দারা ইত্যাদি। কিন্তু এই লোক শয়ে শয়ে মিনিয়েচার স্টাডি করে বের করে ফেলেছে ভিড়ের মাঝে কোনটা শায়েস্তা খাঁ, কোনটা আসফ খাঁ, কোনটা তার বাপ ইতামাতুদ্দৌলা, কোনটা তার ভাই আজম খাঁ আর কোনটা বইন-জামাই সাদিক খাঁ, কোনটা অর্থমন্ত্রী আফজল খাঁ, কোনটা জাফর খাঁ...কোন চিপায় সুফি সাধকের মেটাফর কোন দেয়ালে ছোট্ট যিশু কি মাতা মেরি সবই সেই লোক বের করে ফেলছে। প্রয়াগ বিষেন দাস মনোহর ইত্যাদি আঁকিয়েরা ওইটুক ইন্দুরের বাচ্চা ক্যানভাসে যে কি দুর্দান্ত কাজ দেখিয়ে গেছেন সেইটা বোঝানোর সাধ্য আমার নাই।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

এইরকম মিনিয়েচার আর সেইখানের বিভিন্নজনরে নিয়া পুষ্টান পিলিজ!

সত্যপীর এর ছবি

ছবির গল্প একটা সিরিজ নামাই মাঝে মাঝে। ভবিষ্যতেও নিশ্চয়ই দিব।

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

অাঁ হাঁ হাঁ! আব সামঝা! বহুত খুব! বহুত খুব! মাফ কিয়া যায়! আওর, বহুত সারে ইনাম দিয়া যায়।

সত্যপীর এর ছবি

আলবাৎ!

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

পায়ে কি 'বিছা' পরে? বিছা পরে কোমরে ('ও আমার রসিয়া বন্ধু রে, তুমি কেন কোমরের বিছা হইলা না!' স্মর্তব্য)। পায়ে পরে 'খাড়ু', 'মল্‌', 'নুপুর', 'ঘুঙুর'।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

কথা সত্য। ভেম হইয়া গেছে।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরু গুরু
এ্যানি মাসুদ

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

পপি সিদ্দিকী গাইড হৌক। শুধু পপি যথেষ্ট অ্যারিস্টোক্র্যাট না।

সত্যপীর এর ছবি

একথা সত্য। ইরাদ ভাইয়ার সাথে কথা বইলে দেখি যৌথ প্রযোজনায় লেখা নামানো যায় কিনা। পপি সিদ্দিকি গাইড, লিখনে চৌধুরী ইরাদ ও অন্যান্য (আমিই অন্যান্য মনে করেন মন খারাপ )

..................................................................
#Banshibir.

মন মাঝি এর ছবি

খবর্দার, ভুলেও এই কাজ কইরেন না!!! ইরাদ ভাইয়া যেখানে সেখানে - প্রাসঙ্গিক হোক বা না হোক - বাবা আদম থিকা ইয়োরস ট্রুলি (অর্থাৎ নিজে) পর্যন্ত তার বংশলতিকা যেমনে হোক হাতুড়ি, দুরমুজ বা হামানদিস্তা মাইরা হান্দায়ে দিতে চান। আপনাদের পপি গাইডেও দেখবেন - তার আদম-টু-ইরাদ আস্ত বংশলতিকা পাতায় পাতায় ঢুকায়ে দিছে। আর আপনি যদি একটুও ট্যাঁ-ফো করছেন তো সাথে সাথে নীচের ডায়ালগটা আসমানী বজ্রপাতের মতো আছড়ে পড়বে আপনার উপরঃ--

That means you have a political agenda that you want to enforce using your power to control the Joutho Projojona..‌্You lack objectivity and you are highly unprofessional and immature. I can also guess from the tone of your conversation, your nationality, your caste status, your class status and your educational background. With all due respect to the work that you are doing, I do not believe authoring Poppy Siddiky Guide with a private political agenda such as yours, serve the great Poppy Siddiky Guide well. I will take up this matter to the higher authorities who have jurisdiction over your capacity. I will still not get into an Authoring war with you based on what I can surmise about your humble class, caste and educational background in the ladder of social mobility.

হা হা হা - বিশ্বাস হইতেছে না? ভাবতেছেন বানায়ে বলতেসি? তাহলে উইকিপিডিয়ায় তার উপ্রেই (সম্ভবত ইনিশিয়ালি তারই লেখা) বায়োগ্রাফিকাল এন্ট্রির "টক" পেইজে দেখেন - কেন সেই গার্ডেন অফ ইডেন থেকে শুরু করে তার সুমহান বংশের চৌদ্দশ'গুষ্ঠির ফ্যামিলি-ট্রি তার উপর লেখা এন্ট্রির মধ্যে ঢুকায়ে দেওয়া হবে না - তা নিয়ে উইকির এ্যাডমিন / এডিটরদের সাথে ইরাদ ভাইয়া কি বিপুল বিক্রমে কাজিয়া-ওয়ার চালিয়ে গেছেন বেনামী নিকে ("Westcott001") অন্য লোক সেজে। "টক" পেইজের পুরো তক্কটা পড়ে দেখেন এখানে - এমন মজার জিনিস সহজে পাবেন না! ইরাদ ভাইয়া মানুষকে বিনে পয়সায় আমোদিত ও বিনোদিত করতে কখনই ব্যর্থ হন না। উপরের ডায়ালগটা ওখান থেকেই নেওয়া - এডিটর "NeilN"-এর উদ্দেশ্যে ছোড়া তার এই বজ্রবাণ। Joutho Projojona বা Poppy Siddiky Guide-এর মত দুয়েকটা জায়গায় wikipedia বসিয়ে নিলেই হবে। ।"Westcott001" ছদ্ম-নিকে লিখলেও উপরের ডায়ালগের লাল ফন্টে লেখা লাইনগুলিতে ইরাদ ভাইয়ার অব্যর্থ কণ্ঠস্বর সন্দেহাতীত ভাবে ধরা পড়ে যায়। এই কণ্ঠস্বর আমরা সচলায়তনে আগেও শুনেছি, তাই চিনতে কোনো অসুবিধা হয়নি। তারপর অন্য লোক হয়েও যখন উনি ইরাদ সিদ্দিকির ব্যক্তিগত নথিপত্র আপলোড করা শুরু করলেন, তখন উইকির এডিটরদেরও সম্ভবত ধরে ফেলতে অসুবিধা হয়নি।
মোদ্দা কথা হইলো - ২৪ ঘন্টায় ২৪০০০ বার তার আদম-টু-ইরাদ বংশ-ইতিহাসের ভাঙা রেকর্ড অনবরত শুনতে শুনতে বা "I can also guess from the tone of your conversation, your nationality, your caste status, your class status and your educational background."-টাইপের মন্তব্য শুনতে শুনতে মাথামুথায় পেচকি লাগিয়ে হেমায়েতপুরে তার জন্য নির্ধারিত বেডে তাকেই রিপ্লেস করার ইচ্ছা না থাকলে, এইসব "যৌথ প্রযোজনা"-র খায়েশ অবিলম্বে ত্যাগ করুন। হাসি

****************************************

সত্যপীর এর ছবি

আমার ক্লাস কাস্ট এজুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড অত্যন্ত তৃতীয় শ্রেণীর। আমার বাপ প্রফেসর হইলেও তার বাপ আছিলেন কুলাউড়ার মাদ্রাসার মৌলানা। সেকারণেই নিজের নাম অন্যান্য দিলাম নিজেকে জাতে তুলার জন্য। বুঝেনই তো।

ইরাদ ভাইয়াকে খুব ভালু পাই। সে যেকোন দিন তার হ্যাটভাই শাফিনের মত ঘোষণা দিয়া বসবে আই অ্যাম মোগল। অপেক্ষায় আছি।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

মোগল বাদশারা দুধভাই নিয়েই তালুক সামলাতে হিমশিম খেতেন। আমাদের হাইকাস্টহাইক্লাস মেয়রপ্রার্থীরা কি এ বিপদসংকুল নগরকে দুধভাই বিনে সামলাতে পারবেন?

সত্যপীর এর ছবি

বিপদসংকুল ঢাকা নগরকি দুধভাইয়ের বংশধর ইরাদের জন্য প্রস্তুত? বুকে হাত দিয়ে বলুন আগার মা কী দুধ পিয়ে তো। আমারতো মনে হয় ঢাকা শহরের কাস্টই ঠিক নাই দুধইরাদের জন্য। তাকে তার পূর্বপুরুষের মাজার-এ-নগর ফতেপুর সিক্রির নগরপাল বানানো হউক। ফতেপুর সিক্রির কাস্ট ঠিক আছে।

..................................................................
#Banshibir.

সত্যপীর এর ছবি

কাইট্টালা।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এক হিসেবে দেখা যায় জাফরান তলব করা হয়েছে ১৮৫০ কেজি, হাজার দুই বোতল মিশরী আতর আর দশ হাজার বোতল কুয়ালিটি গোলাপজল। ব্যাপক ধুমধাম।

- বর্তমান বাজার মূল্যে মোট দামটা হিসাব করা যাক।

জাফরানঃ ১,৮৫০ কেজি X ১,০০০ গ্রাম/কেজি X ১৩ ডলার/গ্রাম X ৮২ টাকা/ডলার = ১৯৭,২১,০০,০০০ টাকা

মিশরী আতরঃ ২,০০০ বোতল (১ লিটারের বোতল) X ১,০০০ মিলি/লিটার X ১ ডলার/মিলি X ৮২ টাকা/ডলার = ১৬,৪০,০০,০০০ টাকা

গোলাপজলঃ ১০,০০০ বোতল (১ লিটারের বোতল) X ৬ ডলার/লিটার X ৮২ টাকা/ডলার = ৪৯,২০,০০০ টাকা

একুনে ২১৪,১০,২০,০০০ টাকা। এই দুশ' চৌদ্দ কোটি টাকা কামাতে কত অযুত-নিযুত কৃষকের হাড়মাস এক করা হয়েছে? পয়দা হতে না হতে যার জন্য দুশ' চৌদ্দ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছিল বড় হয়ে সে হয়েছিল ড্রাগ অ্যাডিক্ট। ৩৩ বছর বয়সে যে ভাইয়ের জন্য সে মরণপণ লড়াই করে বড় ভাইকে কতল করার ব্যবস্থা করেছিল, বছর না ঘুরতে সেই ভাইই তাকে বিষ খাইয়ে জেলে পোরে। তিন বছর জেলে পঁচানোর পর একটা 'জিয়াউল হক - জুলফিকার আলী ভুট্টো' টাইপ বিচার করে তার কল্লা ঘ্যাঁচাং করা হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সত্যপীর এর ছবি

হ্যাশট্যাগ জশনে জুলুছ কি দশ বোতল দিয়া হবে? হতাশ করলেন আপনের বিস্তারিত হিসাবে। অবশ্যই দুই হাজার বুতল আতর আর দশ হাজার বুতল গোলাপজল হবে। আরেকটু খুঁজে বিস্তারিত লিস্ট পাইলাম মীর্জা নাথানের। আমি যা যা বলছি তার সাথে যোগ করেন ৩০ কেজি সুবাসিত অম্বরী (Ambergris), ৭৪ কেজি আফিমবীজ (poppy seed), দুইহাজার কস্তূরী আর অজানা সংখ্যক কমলা ইত্যাদি ফলের আতর।

সাধে কি হ্যাশট্যাগ দিছি। হেরোইঞ্চি মুরাদের জন্ম উপলক্ষ্যে আপনার হিসাব দুইশ চৌদ্দ কুঠি ছাড়ায় হাজার কুঠিতে ঠেকার উপক্রম মন খারাপ

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই ব্যাপারটা আমাকে প্রায়ই তাড়িত করে। মুঘল বা অন্য যে কোন ভারতীয় রাজবংশের শাসনামলে দেশের মোট জিডিপি বর্তমান ভারতের জিডিপি'র এক-আধলাও ছিল না। অথচ প্রতিটি রাজবংশ বা তাদের অধীনস্থ পারিষদ এবং সামন্তপ্রভুদের পরিবারগুলো কী বিপুল পরিমাণ অর্থ বিলাস-ব্যসনে ব্যয় করে গেছে! অর্থাৎ জাতীয় উৎপাদনের সিংহভাগ তাদের আরাম-আয়েশে ব্যয়িত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সীমাহীন শোষণ ও ব্যাপক লুটপাট ছাড়া এটা সম্ভব না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, গবেষণা, জননিরাপত্তা, শিল্প, কৃষি ইত্যাদি খাতে এদের অবদান ছিল শূন্যের কোঠায়। জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র গঠনের কোন ধারণা এদের মধ্যে ছিল না। দেশ আসলে ছোট-বড় নানা ডাকাত চক্রের হাতে ছিল।

"গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ, গলাভরা গান"- এই ইউটোপিয়ার গল্প এবং গর্ব যারা করেন তাদের জন্য খোলা চ্যালেঞ্জ থাকলো - পারলে প্রমাণ করে দেখান, কোন্‌ আমলে ভারতবর্ষে এমন অবস্থা ছিল।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অতিথি লেখক এর ছবি

আণ্ডার-ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের উপনিবেশ-পূর্ববর্তী দেশীয় শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা নিয়ে কি কোন গভীর এবং ব্যাপক গবেষণা হয়েছে? না হয়ে থাকলে সেটা আমাদের গবেষকদের আলস্যের আরেকটা লক্ষণ। আত্মপক্ষ সমর্থনে গবেষকরা একটা সম্ভাব্য (খোঁড়া) যুক্তি দিতে পারেনঃ যেহেতু এসব শাসকেরা দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেননি, সেহেতু আণ্ডার-ডেভেলপমেন্টে এদের অবদান অত্যন্ত সীমিত।

Emran

সত্যপীর এর ছবি

মোগল আমলের আয়ব্যয় খুঁটিনাটি নিয়ে বিস্তর পুঁথি আছে। গবেষকেরা যদি ব্যালেন্স শীট মিলায়ে বুঝতে চান টাকা কিভাবে কোথা থেকে আসল আর কোন চিপা দিয়ে চলে গেল, মাস ছয়েকের খাটনি দিলেই তা সম্ভব। অন্যান্য ইন্টারেস্টিং প্রজেক্ট হাতে না থাকলে আমি নিজেই চেষ্টা করতাম।

..................................................................
#Banshibir.

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বিস্তর টাকা বিদেশে গেছে অদরকারী বিলাসদ্রব্য আমদানী করতে, আরও টাকা খরচ হয়েছে অনুৎপাদনশীল, বিশাল সেনাবাহিনী পুষতে, বিদেশী সমর ও প্রশাসন-রাজস্ব বিশেষজ্ঞ পুষতেও বিস্তর টাকা খরচ হয়েছে। এই তালিকা অনেক লম্বা। গণউন্নয়নের ধারণা এদের মধ্যে ছিল না। আয়ের বড় অংশ যাদের কাছ থেকে লুটপাট করা হতো স্বাভাবিকভাবে তাদের জন্য কোন কিছু করার চিন্তা এদের হতো না। দারিদ্রকে জিইয়ে রেখে শোষণ অব্যাহত রাখার বর্তমান কনসেপ্ট তখন ছিল না বলে প্রতি বছর দলে দলে মানুষ দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অপুষ্টি আর দুর্যোগে মারা গেছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

এক লহমা এর ছবি

পুরোপুরি সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সত্যপীর এর ছবি

জাতীয় উৎপাদনের সিংহভাগ তাদের আরাম-আয়েশে ব্যয়িত হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে সীমাহীন শোষণ ও ব্যাপক লুটপাট ছাড়া এটা সম্ভব না।

একশোবার। কিভাবে মোগল হবেন এর মত কিভাবে মোগল আমলে চাষা হবেন সেইটা নিয়েও লেখা যায়। বছরের পর বছর করের বোঝা চাপায় কিভাবে আপনার হাগা ছুটায় দেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করা হয়েছে সেইটা আসতে পারে।

পরের কিস্তিতে শাজাহানের ফেভারিট পুলা দারা শুকোর বিবাহের খরচের হিসাবকিতাব দেখা হবে। লুঙ্গিতে গিঁট দিয়া বসেন। খৎনার খরচ দুইশো চৌদ্দ কুঠি রূপি কোঞ্চিপা দিয়া ফুৎকারে উইড়া যায় দেখেন খালি।

..................................................................
#Banshibir.

এক লহমা এর ছবি

গুরু গুরু লেখা এবং মন্তব্যসূত্রে পাওয়া আলোচনায়।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সত্যপীর এর ছবি

..................................................................
#Banshibir.

তানিম এর ছবি

মীনা বাজারের কোন সাক্ষী যদি একটা ছোট নোটও লিখে যেত তাহলে শাহজাহানের খৎনা সম্পর্কে আমাদের সংশয় থাকতো না। তরুনীরা না হয় এতটা বঝে উঠতে পারে নাই, বিবাহিতরাতো লিখে রেখে শোধ তুলতে পরতো।
আওরঙ্গজেবের খৎনা হয় নাই অ্যাঁ কি শুনাইলেন এটা পীর ছাহেব।

সত্যপীর এর ছবি

ট্রুথ ইজ স্ট্রঙ্গার দ্যান ফিকশন।

..................................................................
#Banshibir.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।