বিজ্ঞানী সফদর আলীর মহা মহা আবিষ্কার বইয়ে একটা গল্পের নাম জং বাহাদুর। সেই গল্পে বানর খুঁজে পাবার জন্য সফদর আলী একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পত্রিকায়। বিজ্ঞাপনের উত্তরে নানান চিঠিচাপাতির সাথে একটা পোস্টকার্ডও এসেছিল। পোস্টকার্ডে চার ছত্রের একটা ছড়াঃ “সফদর আলী মিয়া, সদরঘাটে গিয়া, বান্দরের গেঞ্জি কিনে চাইর টাকা দিয়া”।
এরকম আশ্চর্য কবিতা সুকুমার রায়ের বই ছাড়া পাওয়া মুশকিল। পনেরো বছর বয়েসে ছড়াটি প্রথম পড়ার পরে হাসতে হাসতে আমার খাট থেকে পড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। মধ্য তিরিশে সেই কথা স্মরণ করে এই এখন লিখতে লিখতেও আমি দাঁত বের করে হেসে চলেছি। সফদর আলী মিয়া, সদরঘাটে গিয়া, বান্দরের গেঞ্জি কিনে চাইর টাকা... হা হা হা হা।
সফদর আলীর বইটি আমি উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম টেনে থাকতে। ফুলার রোডে থাকতাম তখন। বাসায় পরম পরাক্রমশালী পিতার কঠোর হুকুম ছিল “গল্পের বই” না পড়ার। পিতা ছিলেন উচ্চ শিক্ষিত লোক, গ্রাম থেকে উঠে আসা। তিনি সবসময় একটা উদাহরণ দিতেন যে তার ক্লাসে যারা দস্যু বাহরাম পড়ত তারা নাকি জীবনে কিছু করে উঠতে পারেনি। গল্পের বই পড়ে কেবল খারাপ ছাত্রেরা। কথা সত্য, পড়াশোনা আমার কোনকালেই আসেনি। নীলক্ষেত ছিল পনেরো মিনিট হাঁটা দূরত্বে, সমানে বই কিনতাম পুরাতন। স্কুলের আর বিকেলে মাঠে খেলাধূলার সময়টুকু ছাড়া পুরোটা সময়ই আমি মোটামুটি বই পড়তাম।
আমি পড়ুয়া হিসেবে খাদক প্রকৃতির, বিশেষতঃ কৈশোরে। যা পেতাম তাই পড়তাম। এমনকি দেখা গেল আম্মা কি আব্বার পরিচিত কেউ বই বের করেছে, চরম অখাদ্য বই। সৌজন্য কপি হয়তো দিয়ে গেছে। আমি সেটাও শেলফ থেকে নিয়ে পড়তাম। একদিন শরৎচন্দ্রের একটা ভল্যুম নামিয়ে দিলাম, পরদিন শীর্ষেন্দু, তারপরদিন হুমায়ূন, জাফর ইকবাল, বা শাহরিয়ার কবীর। সমরেশ। শংকর। মুজতবা আলী। কোন আগামাথা নাই। সবই চলে। আমার পুরানো অভ্যাস একেকজন লেখক ধরে ধরে পড়া, যদিও জাফর ইকবালের বই আমি মেলা থেকেই কিনতাম তাই নীলক্ষেতে ধরে ধরে কেনার প্রয়োজন হয়নি।
আরেকটু বড় হয়ে যখন ভার্সিটিতে ঢুকি ততদিনে মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রতিষ্ঠিত লেখক। আমিও আরেকটু পরিণত পাঠক। হাবিজাবি যাই পাই পড়িনা। হিসাব করে পড়ি। এমনকি জাফর ইকবালের সব লেখাও ভালো লাগে না, কিন্তু তিনি ততদিনে সাদাসিধে কথা নামে পত্রিকায় কলাম লেখা আরম্ভ করে দিয়েছেন। বিকেলবেলা পত্রিকা হাতে নিয়েই আমি সেই কলাম গিলতাম। একাত্তর, মুক্তিযুদ্ধ, শিবির যে কেবল বইয়ের জিনিস নয়, এগুলি যে আমার আশপাশেই বিদ্যমান তিরিশ বছর পরেও, সেই সত্য ততদিনে ধরে ফেলেছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেকেই লেখে। মানুষের কষ্ট, সমস্যা নিয়ে অনেকেই লেখে। কিন্তু আমি সাদাসিধে কথা পড়তে পড়তে ঠং করে বুঝতে পারি এই ভাষা আমার পূর্বপরিচিত! এই লোকটিই যে আমাকে জংবাহাদুরের ছড়া শুনিয়ে হাসিয়েছিলেন। অনুরণ গোলক, ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম কিম্বা নয় নয় শুণ্য তিন বইয়ে হাত ধরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর জগতে নিয়ে গিয়েছিলেন। এখন সেই একই লোক একই ভাষায় লিখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কষ্টের কথা, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা, বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কথা, পিরোজপুরে বলেশ্বরী নদীর ঘাটে পাকিস্তান মিলিটারির হাতে তার পিতার মৃত্যুর কথা। আমি কান পেতে শুনি। এই লোকটি আমার কৈশোরের দুপুর কেড়ে নিয়েছিলেন রাজু ও আগুনালির ভূত, দীপু নাম্বার টু নিয়ে। পরদিন পরীক্ষা, তবু রাত জেগে শেষ করেছি জারুল চৌধুরীর মানিকজোড়। মুহম্মদ জাফর ইকবালের ভাষা আমার পরিচিত। তিনি লিখে চলেন কলাম। তাকে টিভিতে দেখি সাংবাদিকের সাথে। কাঁচাপাকা চুলের শান্ত এক মানুষ ঠাণ্ডা মাথায় বাংলাদেশের সমস্ত জঞ্জাল সরানোর কাজে একলা হাত দিয়েছেন। আমি টের পাই আমার রক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে সাথে, যখন দেখি টিভিতে তিনি দিগন্ত টিভির সাংবাদিককে মুখের উপরে বলছেন আপনি একজন ইয়ং ম্যান, আপনার লজ্জা করে না জামাতের হয়ে কাজ করতে?
এই প্রশ্নটা করবার মানুষ পৃথিবীতে বছর বছর পয়দা হয়না। অর্ধেক জীবনে ঠেকে আমি এই শিখেছি। মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজনই। তিনি আমাকে জংবাহাদুরের ছড়া শোনাবেন বান্দরের গেঞ্জি কিনে চাইর টাকা দিয়া। তিনিই আমাকে আশ্চর্য সব কল্পকাহিনী শোনাবেন আমার মায়ের ভাষায়। আবার তিনিই আমাকে টিভিতে দেখাবেন কিভাবে সকলের সামনে জামাত শিবিরকে চ্যালেঞ্জ করতে হয়। তিনিই সাদাসিধে কথা কলামে লিখবেন তোমরা যারা শিবির করো। খাঁটি অলরাউন্ডার। তার বদলে খাবেন কোটি কোটি মানুষের গালি। কোপ। ফেসবুকে শুয়োরের বাচ্চাদের ম্যাৎকারধ্বনি। সকল জঞ্জাল তিনি একহাতে সরিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে তিনি বলবেন ছেলেটাকে মারধোর কোরনা।
আমি দেখেছিলাম খেলায় নড়াইল এক্সপ্রেস মাশরাফিকে এক ভক্ত দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছে আর পুলিশ দেহরক্ষী ছুটে এসেছে তাকে টেনে বের করে দেয়ার জন্যে। বাংলাদেশের ক্যাপ্টেন এক হাত দিয়ে তাকে ধরে রেখে অন্য দীর্ঘ বাহু দিয়ে বাকি সকলকে সরিয়ে বলছেন ছেড়ে দেন ছেড়ে দেন বুঝতে পারেনি। ছেড়ে দেন। বাংলাদেশের আরেক ক্যাপ্টেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল সেরকম অর্ধেক বাংলাদেশের ছোঁড়া ময়লা গা থেকে সরিয়ে বলে চলেছেন কিছু হয়নি ছেড়ে দাও। বুঝতে পারেনি। ভালো আছি।
প্রিয় মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমি জানি আপনি ব্লগ পড়েননা। তাই আমার এই লেখা আপনার দেখা হবেনা। জানবেন আমি চোখ রেখে যাই আপনার খবর জানতে। আমি একা নই, আমার সাথে কোটি মানুষ। আমরা শুনতে পাই আপনি এখন সেরে উঠছেন। নিশ্চয়ই আরও কদিন পরে নতুন কোন জঞ্জাল সাফ করা নিয়ে আপনার লেখা পাবো। অপেক্ষায় রইলাম। মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আপনিই নিঃসঙ্গ গ্রহচারীর সুহান। অর্ধেক বাংলাদেশের লোক আপনাকে ধ্বংস করার স্বপ্নে মাতোয়ারা, আর আপনি সযত্নে লালিত সাদাসিধে মুখের ভাষায় তাদের মোকাবিলা করে চলেছেন। যে সাদাসিধে ভাষায় গল্প উপন্যাস কলাম পড়ে আস্ত একটি জেনারেশন বড় হয়েছে। নিঃসঙ্গ গ্রহচারীর সুহানের বুলেট ঘুরতে ঘুরতে অন্ধ বিস্ফোরকের মত যেরকম সুচতুর রবোটের খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল, আপনার মুখের উপর ছুঁড়ে দেয়া সরাসরি প্রশ্ন “আপনি জামাত করেন আপনার লজ্জা করেনা ইয়ং ম্যান?” সেইরকম মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির খুলি নড়িয়ে দেয়।
ভালো থাকুন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সেরে উঠুন। আপনি দেশের মস্তিষ্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুধু সেইজন্যে নয়, কৈশোরের প্রিয় সাহিত্যিক সেরে উঠে জং বাহাদুরের মত আরও দুইটা গল্প শোনাবেন সেজন্যও বটে। আমার মেয়েটা আরেকটু বড় হলে শোনাবো সেই গল্প। আপাতত এইটা শোনাচ্ছি তাকে। সফদর আলী মিয়া, সদরঘাটে গিয়া, বান্দরের গেঞ্জি কিনে … আমার বাচ্চাটা আমাকে জিজ্ঞেস করবে সদরঘাট কী। সফদর আলী কে। আমি তাকে বসে গম্ভীর গলায় শোনাব সফদর আলীর টেলিগ্রাম। চার হাতের প্রয়োজন নাই। দুই হাত এবং দুই হাতই যথেষ্ট। সহজ সমাধান। কাওরান বাজার। সন্ধ্যা ছয়টা...
সেই কথাই রইল।
মন্তব্য
এই শেষ বাতিঘরের টিকে থাকা সবার দরকার,আমরা পশ্চিমবাংলার মানুষেরা ও অনেক আশায় বসে আছি তার দ্রুত সুস্থতার খবর পেতে। আপনাদের জন্যই রোজ সচলে নজর রাখি।সত্যপীরের জয় হোক !
হ্যাঁ, দ্রুত তিনি সুস্থ হয়ে উঠুন। আমরা অপেক্ষায় আছি সকলে।
..................................................................
#Banshibir.
এতোকিছুর পরেও হাসপাতালের বেডে শুয়ে গোঁফওলা লোকটা যে হাসিটা দিলো, ঐ ছবিটা দ্যাখসেন?
আপনি মানুষটা বড় ভালা ল্যাখেন মিয়া!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
দেখসি তো! মানুষটা খুবই আজব কিসিমের...
(ধইন্যবাদ। লিখতে বড় ভালা লাগে গো আফা)
..................................................................
#Banshibir.
এই সাদাসিদে মানুষটি এমনই অসাধারণ যে তাঁর উপস্থিতির চারপাশ জুড়ে একটা আলো জ্বলে থাকে। এই আলোটাই আমাদের ভরসা দেয়। আমরা যারা চট করে হতাশ হয়ে পড়ি, তাঁর হাসিটা আমাদের বলে দেয়, এখনো অনেক আশা আছে। সেই আলোটা হাসপাতালের বেডেও ছড়ানো। কোটি কোটি শিশু কিশোরের মনে তিনি সেই আলো ছড়িয়েছেন। তিনি আবারো আলোর মশাল হাতে এসে দাঁড়াবেন তাঁর যাদুকরী হাসি নিয়ে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
অবশ্যই।
..................................................................
#Banshibir.
ভালো থাকুন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
একশোবার।
..................................................................
#Banshibir.
দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন স্যর। আমি অনেক দূরের মানুষ, কোনোদিন সামনাসামনি দেখি নি তাঁকে, কিন্তু মনে মনে তাঁর ছাত্রী। জীবনের অন্ধকার, হতাশাময় সময়ে ওঁর লেখাগুলো ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা করে তরিয়ে দিয়েছে আমাকে, চোখ মেলে আলো দেখেছি। সায়রা সায়েন্টিস্ট, বকুল, নীতু, পথচারী স্কুলের স্পোর্টস টিচার, রাশেদ, তপু, টুনটুনি ইত্যাদি আরো আরো অসংখ্য সাহসী সতেজ চরিত্রের চোখের ভিতর দিয়ে ঝকঝক করে জ্বলে উঠতে দেখেছি তাঁদের স্রষ্টাকে। দেখামাত্র মনে হয়েছে হতাশ হবার কিছু নেই, এখনও অনেক আলো আছে, অনেক আশা আছে, অনেক সুন্দর আছে দুনিয়ায়।
প্রতিটা লেখায় সতেজ আশাবাদ পাই। সমগ্র মনুষ্যসমাজের জন্য।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
ঠিক কথা। হতাশ হবার কিছু নেই।
..................................................................
#Banshibir.
এসেছে নতুন লেখাঃ
"ঘুমিয়ে আছি না জেগে আছি আমি জানি না। আবছা অন্ধকারে অনেকে চুপচাপ বসে আছে। তার মাঝে শুধু ইঞ্জিনের গর্জন। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। মনে হয় বুঝি যোজন যোজন পার হয়ে গেছে।
একসময় ইঞ্জিনের শব্দ থেমে গেলো। নিশ্চয়ই ঢাকা পৌঁছে গেছি। মানুষজন ছোটাছুটি করছে। আমাকে নামানো হয়েছে হেলিকপ্টার থেকে,নামিয়ে আমাকে একটা ট্রলি বা স্ট্রেচারে শোয়ানো হয়েছে। ওপরে খোলা আকাশ সেই আকাশে একটা ভরা চাঁদ। কী অপূর্ব একটি দৃশ্য! আমি সেই চাঁদটির দিকে বুভুক্ষের মতো তাকিয়ে রইলাম! পৃথিবী এতো অবিশ্বাস্য সুন্দর?"
অবশ্যই পৃথিবী এতো অবিশ্বাস্য সুন্দর। ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া। পৃথিবী অবিশ্বাস্য সুন্দর তার অন্যতম একটি কারণ বাংলাদেশের খোলা আকাশে ভরা চাঁদের নিচে আহত একজন মানুষ কোটি কোটি মানুষের জন্য দুই ছত্র লিখে ছাপাতে পাঠিয়ে দেন।
..................................................................
#Banshibir.
বাংলাদেশের শিশু কিশোরদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক, এরচেয়ে স্বস্তির আর কিছু নেই। এই শিশু কিশোররা একদিন বড় হবে, তাঁদের মানসিকতা আর আচরণ ভিন্ন হবে বর্তমান বাংলাদেশ থেকে। এটুকু নিশ্চিত জানি... খুব ধীরে ধীরে তিনি একটি বিরাট প্রজন্মকে লাইনে নিয়ে এসেছেন এবং আসছেন।
আরো অনেক বছর তাঁর বেঁচে থাকাটা তাই জরুরী।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমাদের শিশুকিশোরেরা নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে মানসিকতায় এগিয়ে থাকবে।
..................................................................
#Banshibir.
এই কথাটি মনে প্রানে বিশ্বাস করি।
তিনি খুবই অসাধারণ একটা মানুষ । একবার বইমেলায় তাঁকে দেখে ,তার কথা শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমার মত বাচ্চারা আবেগ, উৎসাহ নিয়ে তার সাথে কথা বলছিল, অটোগ্রাফ নিচ্ছিল, কেউ আবার ফোটোগ্রাফ। তিনি এতটাই মুগ্ধ করেছিলেন যে দিন শেষে বাসায় এসে মনে পড়ল , আরে আমি তো অটোগ্রাফ নেই নাই!
মনে আছে ক্লাস থ্রীতে থাকতে চারপাশে নোংরা হিন্দি গান আর তার মেয়েমানুষ দেখে, বড়দের দেশ-জাতি নিয়ে হা-হুতাশ শুনে নিজ মাতৃভূমির প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা আর ক্ষোভ জন্মে ছিল। তখন বড়ভাইয়ের "আদেশে" "আমার বন্ধু রাশেদ" চলচিত্রটা দেখে প্রচন্ড আগ্রহ জাগে উপন্যাস্টা পড়ার । আপনার বাবার মতো আমার মা হওয়ায় অনেক কষ্টে চুরি করে তার "কিশোর উপন্যাস সমগ্র" টা কিনেছিলাম। আজো মনে আছে, রাশেদ শুধু গল্পের চরিত্র না আমার কাছে ছিল সত্য-বাস্তব এবং ধ্রুব চরিত্র। সেই রাশেদ আজো আমার সকল ব্যর্থতাতে অণুপ্রেরণা দেয়।
-বৃদ্ধ কিশোর
মুহম্মদ জাফর ইকবাল এর বিজ্ঞানী সফদর আলী চরিত্রটির মতো মজার চরিত্র বাংলা সাহিত্যে কম-ই আছে। কিন্তু সফদর আলীকে নিয়ে লেখা তিনি ছেড়ে দিলেন কেন কে জানে। সফদর আলীর জিলিপি খাওয়ার কাহিনীটা যেন চোখে ভাসে এখনও। বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা চরিত্রটি যেন সফদর আলীর ছায়া। এযাত্রা মুহম্মদ জাফর ইকবাল সুস্থ হয়ে উঠবেন বলেই আশা রাখছি, ফিরে আসুন তিনি আবার তার অদ্ভুত সব কিশোর কাহিনী নিয়ে, ভূত আর সায়েন্স ফিকশান নিয়ে তার কঠিন তীক্ষ্ণ সাদাসিধে কথাগুলো নিয়ে। বেঁচে থাকুন আরও অনেক দিন, সচল থাকুক তার কলম আর কম্পিউটারের কিবোর্ড যা দিয়েই তিনি লিখুন না কেন। সত্যপীর আপনার লেখাটা বড় নস্টালজিক করে দিলো। (অলস মানুষ)
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই লেখাটির জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন