সু ডেভিস। বয়স- ৮১ বছর। এই বয়সেও প্রচন্ড কর্মঠ এই ভদ্র মহিলা কোন এনজিও, সরকারি কাজ, চার্চ বা কোন সংগঠন থেকে নয় শুধু মাত্র বাংলাদেশের মানুষ আর প্রকৃতির টানে বার বার এই মহিলা ছুটে গিয়েছেন বাংলাদেশে!
যাইহোক, বেশ আগের কথা, একদিন রাজনৈক এক আলোচনায় উত্তেজিত হয়ে আমি বলে ফেলি বাংলাদেশের মত একটি গরীব দেশের রাজনিতিতে এর চেয়ে বেশি আর কি আশা করতে পারি............ সু হঠাৎ করে একদম চুপ করে গেল। এটা ওর স্বভাব বিরুদ্ধ! আমি বুঝলাম না কি হয়েছে। বেশ কিছুক্ষন চুপ থেকে ও বলল, ‘‘আমি তোমার কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করিনি!’’ আমিতো আকাশ থেকে পড়লাম! কি জানি কি অ-বৃটিশ, অভদ্র ব্যাবহার করে ফেলেছি......... এই সব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে বললাম, কি আশা করনি?
অত্যন্ত সিরিয়াস হয়ে আমাকে বলল, ‘‘একমাত্র অর্থনীতি ছাড়া আর একটা দিক আমকে বল যেদিক দিয়ে বাংলাদেশ গরীব? না-তুমি বল আমাকে?’’
এর পর থেকে আজ এত বছর হয়ে গিয়েছে ‘বাংলাদেশ গরিব দেশ’ আর কোনদিন এটা বলিনি। কাজের কারনে মাঝে মাঝে আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাই, দু-এক যায়গায় স্পীচ-ঠীচ দিতে হয় (যখন কেউ থাকেনা হয়তো তখনই আমাকে ডাকে...) যাই হোক যখনই বলতে হয়, আমি একই কথা বলি, ‘‘economically Bangladesh may be a poor country but ………’’ আমার বক্তব্য শেষ হলে সাদা লোকজন আমার পিঠ চাপড়ে দেয়, কেউ বা আমার ইমেইল রাখে, কেউবা লোকাল পত্রিকায় আমার উদ্ধৃতি দেয়। আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে সু’র কথা বলি।
পরিশিষ্টঃ বছর খানেক আগে সু আবারো বাংলাদেশে যায়। সিলেট এয়ারপোর্টে লাগেজের কনভেয়ার বেল্ট থেকে স্যুটকেস আনার হুরাহুরিতে মানুষের ধাক্কায় এই আশি বছরের উপর বয়সের মানুষটি যখন সবার পায়ের নীচে পড়ে কাৎরাতে থাকে, চিৎকার করতে থাকে ব্যাথায়, তখন নীরবে কে যেন এক বিকট অট্টহাসি হাসে! সু এতই ভয় পেয়ে যায় এই ঘটনায় যে নানা ভাবে ও অসুস্থ্যই থেকে যায় দেশের পুরোটা সময়। আঘাতটা কি শারীরিক না এই মানুষগুলোর ব্যাবহার সু মেনে নিতে পারেনি?
পরিশিষ্টের পরিশিষ্টঃ সেই দিন একজন তথাকথিত শিক্ষিত মানুষকে ঘটনাটা বলায় তিনি বললেন ব্রিটিশরা আমাদের অনেক অত্যাচার করেছে এইটুকু না-কি এই মহিলার প্রাপ্য!!!
কে বেশি জংলি, এয়ারপোর্টের ঐ মানুষগুলো (!!!) না-কি এই শিক্ষিত মানুষটি? না-কি আসলেই সু’র প্রাপ্য ছিল এটা?
(এই লেখাটি আমি আজ রাতে একবার আপলোড করেছিলাম, কিছু ভুল থেকে যাওয়ায় এডিট করতে গিয়ে ‘ঘ্যাচাং’ করে ফেলি! আবারো দিলাম,যারা পড়ে ফেলেছেন তারা ক্ষমা করবেন)
মন্তব্য
সু কেমন আছে আজকাল ?
ওর একটা ছবি পোস্টের সাথে দিলে ভালো লাগতো ।
দুপাশে একটু চ্যাপ্টা থাকলে ও দুনিয়াটা আদতেই গোল
----------------------------------------
সঙ্গ প্রিয় করি,সংঘে অবিশ্বাস
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আছে ভালই আছে। এখনও বিশ্বাস করে সব ভাল জিনিসে।
ওর একটা ছবি এ্যাড করে দিলাম
সু-র জন্য ভালোবাসা। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এমন করেছে তা আমার পক্ষে বিশ্বাস করা একটু কঠিন।
সত্যিকারের মানুষ তো মানুষই; চামড়ার রঙে কী আসে যায়!
নতুন মন্তব্য করুন