আমার খুব কাছের বন্ধু, যার সাথে আমার প্রথম গাড়ি চালানো, ব্যাডমিন্টন খেলা, রবিন্দ্র সংগীত বুঝতে শেখা এমনকি জুয়া টাইপ তাস খেলা শুরু, আজ থেকে অনেক বছর আগে যে আমাকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলে, আমিই আমার বিচারক। ভাল না মন্দ দোষ না গুন, করা উচিত কি উচিত না এই কঠিন উপাত্ত্বগুলোর সহজ সমাধান বাতলে দিল-তিনি আমার বাবা।
আমার পুরো কলেজ, অনার্স এবং মাষ্টার্স কেটেছে সাদা শার্ট, জিন্স আর স্যান্ডেল পরে। সেই সময় কোনদিন ভুল ক্রমেও কোন শার্ট ইস্ত্রি করে ফেললে বাবার কাছ থেকে অবধারিত ভাবে খোচা খেতে হত ...''এমন কোন সে বিশেষ মানুষ (অবশ্যই এমন কোন মেয়ে সেটা বোঝাতে) যে আমার ছেলেকে দিয়ে একটা শার্ট ইস্ত্রী করাতে পারলো? একবার দেখা উচিত!!''
নিজের মৃত্যু সম্পর্কিত বাবার তিনটি ইচ্ছে। তার ভাষায়ঃ
১) আমি যেন হাসতে হাসতে মারা যাই
২) আমি যেন বৃদ্ধ হয়ে বা বিছানায় ধুকে না মরি
৩) আমার ছেলে-মেয়ের সাথে আমার এত চমতকার সম্পর্ক আমি যেন তদের মুখাপেক্ষি বা বোঝা হয়ে থাকার আগে মারা যাই
আমার বড় ভাইর বিয়ে এবং খালাতো ভাইর ওয়ালিমা প্রায় একই সাথে হয়েছিল ১৯৯৪ সালে।
সেই রাতে রাত আড়াইটা পর্যন্ত বাবা খুব হাসাহাসি করলেন সবাইকে নিয়ে।
ভোর চারটা, বাবার বুকে ব্যাথা। আমরা সবাই বলছি হাসপাতালে নিয়ে যাই, বাবা বললেন ''আমার হার্ট এ্যাটাক হয়েছে, আমি আর নেই''
সব শেষ!
ব্যাপারটা আমি, আমার মা আর বোন কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি।
ওঁরা ব্যাপারটা কিভাবে কাটিয়ে উঠলো জানিনা তবে আমি আমার স্মৃতি থেকে পুরো ঘটনাটা ব্লক করে দিলাম আস্তে আস্তে। তারিখ মাস দিন সব এড়িয়ে চলা শুরু করলাম. . . . . . .আস্তে আস্তে পুরো ব্যাপারটি সত্যি সত্যিই মাথায় চাপা পড়ে গেল।
বাবার মৃত্যুদিন আজ-কাল-পরশু বা এর মধ্যেই যে কোন একদিন। কোন দিন, মনে করতে পারছি না, কিছুতেই না। কাউকে জিগ্যেস করতেও ইচ্ছে করছে না. . . . . . . . . .
মন্তব্য
আপনাকে আমার ঈর্ষা হয়, আমি কোন কিছুই স্মৃতি থেকে নির্বাসিত করতে পারি না, যতই না কেন চেষ্টা করি।
আপনার বাবার জন্য শুভকামনা। হ্যা, ইচ্ছা করেই এটা বললাম। 'মৃত্যু' মানেই 'চলে যাওয়া' কেন হবে? আপনার বাবাও নিশ্চয়ই আপনার এবং তাঁর আরো অনেক প্রিয়জনদের ভালবাসায় এখনো আছেন.........
এ মাসে আমারো সবচাইতে প্রিয়জনদের একজন - আমার মা'র - জন্ম এবং মৃত্য দুটার'ই তারিখ। আমি দুটাই একইভাবে পালন করবো ।
বাবা সম্পর্কিত পুরো লেখাটিতেই আমি past tense ব্যাবহার করতে চাইনি 'মৃত্যু' মানেই 'চলে যাওয়া' এটা এখনো মেনে নেইনি বলেই।
আমার মায়ের মৃত্যু তারিখও আমার মনে নেই......
বোধ করি আমার মত যাদের বাবা মা এখনো বেচে আছেন
তাদের কখনই বাবা মা হারানোর ব্যাথা বোঝা সম্ভব কিনা?
শুধু এটুকু বলতে পারি যে, স্মৃতি থেকে পুরো ঘটনাটা ব্লক করার ব্যাপারটা যদি না থাকতো তাহলে হয়ত অনেকেরেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব হতো না।
রাতুল
অংগহানির আগে আমরা কেউ কি বুঝি অংগটির প্রয়োজনীয়তার কথা......? লেখাটি পড়ার পর ভাবলাম ঐ সময়ের মানুষগুলোর চিত্ত এতটা শক্ত হয় কি করে? আমার বাবার মৃত্যু বার্ষিকী জানুয়ারিতে...আমি এতটাই অভাগা যে তার পাশে থাকতে পারিনি ঐ সময়ে! মৃত্যুর আগে আমার বোনকে বলে যাওয়া কথাগুলো আমি ভুলতে পারিনা কিছুতেই, '...তোরা এ্যাম্বুল্যান্স আনতে বড্ড দেরী করে ফেলসিছ্ (ও দিকে ঢাকা শহরের জ্যামে আটকে পড়েছে এ্যাম্বুল্যান্স!) আর আধা ঘন্টার মধ্যে না এলে আর লাভ নাই......(এতটুকু বলে নাকি বসে যান চেয়ারে)...বড্ড তারাতারি হয়ে গেল আমার, আরো কিছু কাজ শেষ করে যাওয়া উচিত ছিলো, (আমার প্রিয় সেজ'পা বাবাকে ধরতে গেলে আব্বা তার হাতটা সড়িয়ে নিয়ে বলেন) আমার মঈন(আমাকে এই নামে ডাকেন তিনি) থাকলে এরকম হতোনা!...নিজেই উঠে দাড়াঁন, নামতে থাকেন সিড়িঁ বেয়ে, সেজ'পা প্রানপনে চেষ্টা করছেন ধরে রাখতে কিন্তু যা ঘটার তাতো ঘটেই গেছে...বাবা আমার বসে পড়লেন সিড়িঁর ধাপে, শেষ কথা...পারলাম নারে মা, আমার মঈনকে বলিস আমার কাজগুলো...শেষ করতে পারেননি নাকি বাক্যগুলো...পাথর হয়ে গেলেন তিনি।'সেই থেকে আমি সেজ'পার সামনে বসতে পারিনা বেশীক্ষন, ফোনেও কথা বলতে পারিনা......। যাইহোক....তবে আমার এখনো প্রিয় মুহুর্ত হলো, ঘুমুতে ঘুমুতে বা আদো ঘুম আদো জাগরণে আমার এই পরম বন্ধুটির (আমার বাবা) সাথে কথা বলা আর অকারনে অভিমান করা! যাইহোক ভালো থাকুক আমার বা আপনার বাবা......শ্রদ্বা জানাই তাদের এই প্রয়ান দিবসে।পিতার প্রয়াণে শ্রদ্ধা।
ভেতরের সবকিছু একসাথে নাড়া দেওয়া কথা।
ধ্রুব'র বাবা যখন মারা গেলেন......হঠাত করেই ওকে দেশে যেতে হয়...... কিছু বর্বর পিশাচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক বৈপরিত্বের কারনে ধ্রুব'র দেশে যাওয়ার সুযোগে ওকে চাকরী থেকে বের করে দেয়!
এই অসম্ভব অভিমানি ছেলেটি কি করে যেন তার মধ্যেও হেসেছিল......হয়তো ওর বাবার কথাই ঠিক, ও থাকলে হয়তো .........
কাকতালীয় কিনা ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা, আজ সকালেরই ঘটনা,সকাল সাড়ে ছয়টার মত হবে বোধহয়।হঠাৎকরে স্বপ্নে বাবার অনুপ্রবেশ, বাবা শুধুই কাদছেন, কেদেই চলেছেন, আমি বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরেও রোধ করতে পারছিনা তার দুচোখের অশ্রুকে। কি কারনে জানি ঘুম ভেঙে গেল, তারপর কি অদৃশ্য কারনে আমিও কেদে চললাম একনাগারে, আমিও থামতে পারছিনা। সকাল থেকেই মনটা এই কারনে বিষন্ন, ভাবছি বাবাকে ফোন করব একটা, কিন্তু মন কেন জানি সায় দিলনা, অবশ্য ফোনকার্ড না থাকাও একটা কারন।
মোবাইল ফোনে বাবার কিছু ছবি সেভ করা ছিল, শুধু সেগুলোই দেখে চলেছি......সবকিছুই কেন জানি ভুতুড়ে মনে হচ্ছে। বাবা বিষয়ক লেখাটি পড়ে মনে হল আমার বোধহয় আজ কিছু লিখা দরকার।
নতুন মন্তব্য করুন