সুবিনয় মুস্তফির লেখার সুত্র ধরে...

মির্জা এর ছবি
লিখেছেন মির্জা (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/০২/২০০৮ - ৭:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অসাধারন একটা লেখার জন্যে সুবিনয়কে অসংখ্য ধন্যবাদ। প্রথমে তার লেখার শেষে শুধু একটা ছোট্ট মন্তব্য করবো ভেবেছিলাম লিখতে লিখতে এই অবস্থা!
প্রথমত, খুবই দুঃখের কথা এই পোলিশরাই কিন্তু এখন অনেক বেশি বর্নবাদি! যদিও তারা নিজেরা এই বিলেতে আসছে ইমিগ্র্যানট হয়ে, কিন্তু এরা আফ্রিকান কালো মানুষ এবং আমাদের গায়ের রঙ্গের এশিয়ানদেরকে খুবই অপছন্দ করে। পোলিসদের সাথে আমার ব্যাক্তিগত অভিগ্যতা খুবই ভাল এবং কর্মসূত্রে বেশ কিছু পোলিশদের সাথে ঘনিষ্টতা হওয়ার পর ওরাই ব্যাপারটি অকপটে স্বীকার করলো। মাত্র কয়েক মাস আগে আমার এক সহকর্মি পোল্যান্ড যাওয়ার সময় তাকে বিশেষভাবে বুঝিয়ে বলল সাবধানে থাকতে।
দ্বিতীয়ত, গত ইসরাইল এবং লেবানন যুদ্ধের সময় খুব কাছ থেকে এই দু দেশের মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হয় আর তখনই প্রথম জানতে পারলাম অনেক অনেক ইহুদি এবং ইসরাইলি ইহুদি আছেন যারা দির্ঘদিন ধরে ইসরাইলের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন। (অবশ্যই আমাদের জামাত তাইপ ইসরাইলি গ্রুপ গুলোও হাত পা গুটিয়ে বসে নেই) তারা সবসময়ই বলছেন ধর্মের নামে আমরা নিজেরাই অত্যাচারিত হয়েছি আর আজ সেই একই অপরাধ আমরাই করছি অন্যদের উপর। ইজরাইলে এবং সরকার পন্থি গ্রুপগুলোর কাছে এরা অনাহুত পীড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
২০০৫ সালের গ্রীস্মে লন্ডনের ওয়েম্বলীতে একটি বিশাল কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছিল এবং পারস্পারিক ধর্মের প্রতি understanding সহমর্মিতা বাড়ানোও ছিল এই কনফারেন্স-এর মূল লক্ষ্য। সেখানে ইহুদি ধর্মযাজকেরা সরাসরি ইসরাইলি সরকারের সকল অপকর্ম বিশেষত প্যালেষ্টাইনিদের জমি দখল ও তাদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখে এবং বার বার তারা স্পষ্ট করে আহবান জানায় ইসরাইল সরকার যেন তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে ধর্মের দোহাই দিয়ে justify করার চেষ্টা না করে।
২০০৬ সালের জুলাই মাসের ২৭ তারিখে ওয়াশিংটনে ইসরাইলি এ্যাম্বেসির সামনে যে বিশাল র্যাযলী হয়েছিল যেখানে ইসরাইলি সরকার, তাদের অপকর্ম, লেবানন আর প্যালেষ্টাইনে ইসরাইলিদের বর্বরচিত অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ মিছিলটি হয় তার আয়োজক এবং উদ্দোক্তারা সকলেই হচ্ছেন ইহুদি ধর্মজাযক (Jewish Rabbis)
সবশেষে ছোট্ট একটা উদাহরন দেই কি পরিমান দেশ প্রেমিক হয় এই ইসরালিরা।
টেলিভিশনের জন্যে আমি একটা প্রামান্যচিত্র তৈরি করার সময় আমি এমন প্রচুর ইহুদি এবং ইসরাইলিদের পেলাম যারা ইসরাইলের সকল অত্যাচার আর নীপিড়নের বিরুদ্ধে, বিশেষত ধর্মেরর নামে এই অবিচার তারা বর্বরতা বলেই মনে করেন।
আমার প্রামান্যচিত্রটি বানানোর খবরটি এক কান দুকান করে লেবানন পন্থি, ইসরাইল পন্থি অনেকের কাছেই পৌছে যায় এবং ইসরাইলিরা জানতে পারে আমি ওদের বিপক্ষে কথা বলতে পারে এমন অনেক ইহুদিদের সাথে দেখা করেছি। ব্যাস শুরু হল ভুত থেকে ভুতে! একজন মাত্র তরুন যুবক এক বিকেলে ফোন করে বলল মির্জা আমি কি তোমার ওয়ার্ক ইমেইল এ্যাড্রেসটা এই প্রোগ্রামে পার্টিসিপেট করতে চায় এমন কিছু মানুষ কে দিতে পারি? আমি স্বঃতস্ফুর্ত ভাবে হ্যা বলে দেই।
সে তরুন তার পরিচিত ৫০ জনের মত (পরে অর কাছ থেকেই জেনেছি) মানুষকে আমার ডকুমেন্টারী আর অনুষ্ঠানের কথা বলে। এদের মধ্যে ছিল ১৪ থেকে ১৫ টি ইউনিভার্সিটির ষ্টুডেন্ট গ্রুপের কর্মি, প্রোফেশনাল ইসরাইলিদের সংগঠনের দুই-তিনজন পরিচালক, রিটায়ার্ড ইসরাইলিদের একটি সংস্থার কর্মিসহ এইরকম আরো বেশ কিছু সংঠনের মানুষজন। এদেরকে না-কি আর কিছু বলতে হয়না, যেখানেই ইসরাইলের ‘’সন্মানের হানিকর’’ কিছু হতে পারে বলে এরা মনে করে সেখানেই নীরবে, নিঃশব্দে এবং অতি ভদ্রতার সাথে এরা ঝাপিয়ে পড়ে। ঐ ৫০ জন মানুষ কিছুক্ষনের মধ্যেই নি-নিজ ক্ষেত্রের আরো ২০ থেকে ৩০ জনকে সাথে সাথে খবরটা পাস করে দেয়; তারা খবরটি পৌছে দেয় আরো ......... সেই রাতের মধ্যেই আমার অফিস ইমেইলের এ্যালোকেটেড স্পেস বাড়াতে হয়। একদিন পর অনুষ্ঠানের সময় টের পেলাম গোটা ইয়োরোপ থেকে ইসরাইলের সাপোর্টাররা তাদের যুক্তি ভালবাসা (!) এবং দাবি নিয়ে তৈরি হয়ে আছে।

ইসরাইলের আজ এত ক্ষমতা, এত শক্তি, কারন বোধ হয় এদের দেশ প্রেম। প্রবল দেষ প্রেম। ছোট্ট একটি বাঙ্গালি টিভি ষ্টেশনেও যেন তাদের প্রিয় দেশটির (!!) নামে বলা একটি নেগেটিভ কথাও বিনা প্রতিবাদে যেতে না পারে তার জন্যে সে কি চেষ্টা!

১৯৭১ সালে আমাদের দেশ প্রেমও বোধকরি এমনই ছিল (তফাত এরা নিজেরাই অত্যাচারীর দখলদার হানাদারের দল) ............ আমরা যদি এভাবে এক হয়ে ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী আর বিরধিদলের নেতার কাছে এই দেশে অবস্থানকারী যুদ্ধাপরাধিদের বিচারের আবেদন করতে পারতাম.........আমার দৃঢ় বিশ্বাস একটা সাফল্য আমাদের আসতোই!


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

ভালো লাগল।

প্রামাণ্যচিত্রটি কি কোনভাবে দেখা যেতে পারে?

=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"

দিগন্ত এর ছবি

ভাল লেখা, আরো কমেন্ট লিখব পরে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

থ্যাংক্স, মির্জা ভাই। সুপোস্ট। বর্ণবাদের বিষয়টা খুব বেশী বড় করে দেখতে চাই না এই মুহুর্তে। এক দিক দিয়ে বিচার করলে আমরাও অনেক বর্ণবাদী। আমরা কি কালোদের খুব বেশী ভালোবাসি? একটা বাঙ্গালি মেয়ে যদি একটা কালো ছেলের সাথে প্রেম করে, সেটার প্রতি বাঙ্গালি কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া খুব একটা পজিটিভ হওয়ার সম্ভাবনা দেখি না। এটা একটা লিটমাস টেস্ট হিসেবে দেখতে পারেন।

মনে মনে অনেক ভদ্রলোকই বর্ণ-সচেতন। সেটা সমস্যা না। এটা মানব চরিত্রের একটা অংশ, ভালো হোক বা মন্দ হোক। সমস্যা হলো প্রকাশ্য বর্ণবিদ্বেষ (explicit বা overt racism)। এটা একটা সমাজে কতখানি গ্রহণযোগ্য, তার পিছনে বড় ফ্যাক্টর হলো বিদেশীদের প্রতি এক্সপোজার কতোখানি, কতোদিনের। বিশেষ করে একটা mono-culture থেকে উঠে আসা মানুষের পক্ষে ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতিকে তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা অনেকের পক্ষেই সহজ নয়। সময় লাগে। আজকের লন্ডন বা বৃটেনই তার বড় উদাহরণ। আজকে যেই শহর মাল্টিকালচারালিজমের বেহেশত, ২০-৩০ বছর আগে এই শহরেই উগ্র রেসিস্টরা সংখ্যালঘুদের গালি দিতো, পিটাইতো, মাঝে মাঝে খুনও করতো। এই সমাজের মূল্যবোধ চেঞ্জ হতেও টাইম লাগছে।

ইসরাইল নিয়ে কথাগুলা যথার্থ বলেছেন। অসম্ভব দেশপ্রেমিক হয় ওরা। অবশ্য ইসরাইলের পীস মুভমেন্ট অনেকদিন ধরেই ফিলিস্তিনীদের অধিকারের পক্ষে কথা বলে আসছে।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

ঠিক এ কারণেই আমি ইসরায়েলি আর ইহুদীদের এক চোখে দেখি না। ইসরায়েল সরকারকে প্যালেস্টাইন দখলকারী বলা যায়, কিন্তু ইহুদীদের নয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

অনেক নতুন নতুন বিষয়ে আলোকপাত করার জন্য মির্জা ও সুবিনয় দাকে ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সুবিনয়ের সাথে একমত। আমরা সকলেই কমবেশি বর্ণবাদী। আমাদের দেশে, যেমন, বিয়ের প্রসঙ্গে প্রায় অনিবার্য প্রশ্নটি ("মেয়ের গায়ের রং কেমন?") কি বর্ণবাদেরই রকমফের নয়? ক'জন বাঙালির আছে বিদেশী কালো বউ?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মির্জা এর ছবি

আমরা যে নিজেরাই ভয়াভয় বর্ণবাদি হয়ে যাই কখনো কখনো এই বিষয়ে আমার কোন দ্বিমত নেই। আমাদের বর্ণবাদিতার প্রিধি বরং আরো বড়, জেলা ভিত্তিক, এলাকা ভিত্তিক এবং বলা বাহুল্য চামড়া ভিত্তিক। তবে বোধকরি আমরাও কখনও শধুমাত্র চামড়ার রং কাল বলে কাউকে ঘিন্নাই না ( কোন একটা ghetto এলাকায় থাকলে সেই এলাকাবাসিদেরকে আমরা অপছন্দ করি সেটা এখানে ধরছি না)
উত্ত্র খোজার চেষ্টা করেছি ওদের কাছেই এবং বহুলাংশে সবিনয় মুস্তফির কথাই ঠিক (''তার পিছনে বড় ফ্যাক্টর হলো বিদেশীদের প্রতি এক্সপোজার কতোখানি, কতোদিনের। বিশেষ করে একটা mono-culture থেকে উঠে আসা মানুষের পক্ষে ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতিকে তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা অনেকের পক্ষেই সহজ নয়'')
সেই সাথে একটা ব্যাপার অত্ত্যন্ত গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করতেই হবে আর সেটা হল নব্য নাতসিদের (Neo Nazi) উত্থান এবং প্রকাশ্য বর্নবাদিতার প্রতি তাদের সমর্থন!!! যে সকল দেশ সরাসরি নাতসি বা নাতসি পন্থিদের দারা ক্ষতিগ্রস্থ তারা কিভাবে বর্নবাদকে সাপোর্ট করতে পারে! আমি আসলে এই ব্যাপারটিকেই হাইলাইট করতে চেয়েছি।
‘’ ক'জন বাঙালির আছে বিদেশী কালো বউ? ‘’ হা হা হা......প্রশ্নটা যদি একজন কাল বা সাদা লোককে করি? ক’জনের আছে বাঙ্গালি চামড়ার জামাই বা বৌ?

হঠাত মনে হল আরেকটা জিনিস সবার সাথে শেয়ার করতে পারি এই উসিলায় (যদিও খানিকটা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে......) দাস ব্যাবসা নিয়ে কিছু লিংক দিচ্ছি চাইলে দেখতে পারেন

Ken Livingstone: http://www.guardian.co.uk/commentisfree/story/0,,2038858,00.html

Church of England:
http://news.bbc.co.uk/1/hi/uk/4694896.stm

Andrew Hawkins:
http://www.timesonline.co.uk/article/0,,3-2236871.html
(ইচ্ছে আছে পরবর্তিতে এই বিষয়টি নিয়ে লেখার)

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‘’ ক'জন বাঙালির আছে বিদেশী কালো বউ? ‘’ হা হা হা......প্রশ্নটা যদি একজন কাল বা সাদা লোককে করি? ক’জনের আছে বাঙ্গালি চামড়ার জামাই বা বৌ?

অন্য কেউ বর্ণবাদী বলেই আমার বর্ণবাদিত্ব পার পেয়ে যাবে?

ইয়োরোপের অনেক দেশেই দেখেছি শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ নারী-পুরুষের অজস্র জুটি। কিন্তু বাঙালি বা উপমহাদেশীয় পুরুষ বা নারীর সঙ্গে কৃষ্ণতর জাতির প্রতিনিধির জুটি চোখে পড়েছে খুবই কদাচিৎ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রানা মেহের এর ছবি

সুবিনয় এবং মিরজা (ভাই) এর সাথে সহমত।
কিন্ত বিয়ের সাথে বরণবাদের মেলানো টা
আমি বুঝতে পারিনা।

বিয়েতো আমি তাকেই করবো
যার সাথে আমার সংস্কৃতি মেলে।
সংস্কৃতি বলতে বোঝাতে চাইছি
চিন্তার কাঠামো মেলার কথা।

বাঙালির কালো অংশীদার না বা কম থাকার পেছনে
যেমন এই বোধটা কাজ করে
ঠিক একই ভাবে কোন শ্বেতাঙ্গেরো
অধিকার আছে সাধারণ ভাবে যে তাকে বুঝতে পারবে
এরকম কাউকে জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার।

এই ব্যাপারে বরণবাদকে বাইরে রাখাটাই
বোধহয় উচিত

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

মির্জা এর ছবি

রানা ভাইয়া আমি তোর কথার সাথে ১০০ ভাগ একমত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।