রবীন্দ্রনাথ আমার ধুতি খুলে ফেলছে......

মির্জা এর ছবি
লিখেছেন মির্জা (তারিখ: শুক্র, ০৯/০৫/২০০৮ - ৪:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

শিরোনাম ১০০% সত্য!
২০০০ সাল।
বাংলাদেশের এক অতি নাম করা রবিন্দ্রবোদ্ধা প্রোডাকশন হাউজকে তাদের বিখ্যাত পরিচালক শেষ মুহূর্তে রবীন্দ্রজয়ন্তির নাটক বানাতে পারবে না জানিয়ে দেন। হাতে সময় নেই, কেউ এত হুট-হাট করে নাটক বানাতে রাজি না (বোধ সম্পন্ন কোন মানুষই রাজি হওয়ার কথা না)
সে যাই হোক, সঞ্জিব চট্টপাধ্যায়ের ‘’ভয় কে তুমি না চিনলে ভয়ও তোমাকে ভিনবে না’’ এই আদর্শে উদবুদ্ধ হয়ে দেশের মিডিয়া জগতের ভগবান তুল্য এক ব্যাক্তি তখন এক রাতের (ও এক সকালের) ভেতর রবিঠাকুরের নাটক বানানোর দায়িত্ব তুলে দিলেন এমন একজনের কাধে, যাকে আমি নিজের কানে বলতে শুনেছি ‘’অপর্না সেন ৩৬ চৌরঙ্গি লেন করতে পারলে ময়ুরি-মুনমুন একটু ইয়ে ছবি করলে অসুবিধা কোথায়!!!’’ যার দৃষ্টিতে হুমায়ুন আহম্মেদ-ইমদাদুল হক মিলন ‘’সেক্সপিয়ারের’’ মতই কালজয়ী উপ ন্যাসিক-নাট্যকার!!! (সেক্সপিয়ারের উপন্যাস?...বোধ মনে করেছে এ্যাডাল্ট উপন্যাসগুলো সেক্সপিয়ারই লেখে...)
যা হোক শুটিং শুরুর পরপরই বিপত্তি শুরু হল।......পর-পর কয়েকবার লোডশেডিং! কি যে অবস্থা! এদিকে এডিটার বারবার তাড়া দিচ্ছে টেইপ কই!
ইলেক্ট্রিসিটি আসলো ...শুটিং শুরু হল.........এক মনে উপ্ন্যাসের নায়ক* নায়ক লিখে যাচ্ছে......এই দৃশ্যটা হলেই একটা টেইপ পাঠানো যায় প্যানেলে! হঠাত আবার লোডশেডিং!
আমাদের পরিচালক আর মাথা ঠিক রাখতে পারে না রাগে বাইরে গিয়ে দুই ইউনিট বয়কে দ্রুত কিছু ‘’হুকুম’’ দিয়ে সে ফিরে আসে। ‘’সবাই ষ্ট্যান্ডবাই, আমি শুটিং শুরু করতাসি কিছুক্ষনের মধ্যেই! সবাই ধ্রে নিয়েছে সে জেনারেটরের ব্যাবস্থা করছে বোধহয়।
রাগে গজ-গজ করতে পরিচালক সাহেব স্ক্রীপ্ট টেনে নিলেন। খ্যাচ-খ্যাচ করে কাটাকুটি করে কিছু কারেকশন করে বললেন, ‘’ ওকে সব ঠিক’’
কিভাবে? রবীন্দ্রনাথের নাটকের স্ক্রীপ্টে তিনি লিখেছেন ......বসে বসে একমনে লিখিয়া যাইতেছিল......এমন সময় হঠাত করিয়া কারেন্ট চলিয়া গেল!!!!!!!!!! সো ইমারজেন্সি লাইট আর মোম্বাতি-হ্যাজাক যা আছে এইসব দিয়ে শুটিং করা হবে।
প্রত্যেকের আপত্তি স্বত্তেও তার কারেকশনের ব্যাপারে সে অনঢ়! কেন? স্ক্রীপ্ট একটু চেইঞ্জ করলে ক্ষতি কোথায়? হুমায়ুন স্যার-মিলন ভাইর নাটকে কি আমরা একটু চেইঞ্জ করিনা (যার কাছে কবির সন্মান নেই তাকে কিভাবে বোঝাবেন ক্ষতি কোথায়?) শেষ পর্যন্ত এই বলে ক্ষান্ত করা হল যে গ্রামের কথা এখানে বলা হয়েছে সেই গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটিই ছিল না!

রাত দুটো বাজে, রাগে দুঃখে অপমানে কাপতে-কাপতে একজন প্রবীন অভিনেতা ফোন করলেন মিডিয়ার সেই ভগবানকে!
অভিনেতাঃ তুমি কি আমাদের আরো অপমান করাবা?
ভগবানঃ ধীরস্থির ভাবে, কেন?
অভিনেতাঃ তোমার ...মারানীর পরিচালক আমার ধুতি খুলে ফেলছে!
এইবার ভগবানও চমকে গেলেনঃ কেন? শুটিং শেষ?
অভিনেতাঃ না শুটিং শেষ না।
ভগবানঃ তাহলে?
অভিনেতাঃ তাহলে আমাকে না প্রশ্ন করে তোমার রবীন্দ্রনাথকে প্রশ্ন কর। ও আমার ধুতি ধরে টানা টানি করছে।
ভগবান পরিচালককেঃ কি? হয়েছে? তুমি ‘‘ ’’ মত একজন অভিনেতার সাথে কি অভদ্র আচরণ করছো?
পরিচালকঃ আরে আমার কি দোষ, স্ক্রীপ্ট পাইয়াই জিনিস কিনতে গেসি, আধা জিনিস কিনতে কিনতেই সময় শেষ, ধুতি কিনতে গিয়া দেখে ঐ দোকানে একটাই ধুতি আছে, আমি ভাবলাম একটা ধুতি দিয়াই কাম চলবো, তাই অন্যদোকানে যাই নাই। তখন বুঝিনাই একই শটে দুজনের ধুতি লাগবো তাই ওনারে কইলাম শুধু OS (OS= Over the shoulder, camera’য় একটি চরিত্রের কাধের উপরদিয়ে নেয়া অন্য কোন চরিত্রের শট) নেওয়ার সময় আপনে হাপপেনটা পইরা দাড়ান আমি আরেকজনের ধুতি পরা শটটা নেই আবার হের OS-নেওয়ার সময় আপনে ধুতি পরবেন হ্যায় হাপপেন পইড়া দাড়াইবো!!!

যদি কেউ এই পর্যন্ত লেখাটি ধৈর্য ধরে পড়ে থাকেন তাহলে অন্তত একবার হলেও নিঃশ্চই ভেবেছেন, যাহ্ এও সম্ভব না-কি!
বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন পুরো ঘটনাটি সত্যি। এক সময় আরিফ-আমি-আর টিপু (ব্লগার অপুর বড়ভাই) আমাদের ভান্ডারের অন্যতম আশ্চর্য ঘটনা ছিল এটি। নাটকের নাম বা পাত্র-পাত্রীর নাম বললে সরাসরি অনেককে আক্রমন করা হয় তাই চেপে গেলাম।
গতবারের আগেরবার দেশে গিয়ে এই বিখ্যাত পরিচালকের সাথে দেখা হল তিনি আরো ‘’বড়’’ হয়েছেন। সত্যজিত রায়ের সম্পর্কে তার কথা বার্তা শুনে মনে হল সৃষ্টি কর্তার অশেষ দয়া সত্যজিত রায় বেচে নেই!
তবে আমার ক্ষোভ শুধু একজনের উপর-মিডিয়া সেই বিধাতা যিনি জেনেশুনে ঐরকম একটা গাধা টাইপের রামছাগলকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন রবি ঠাকুরের একটি নাটকে ধর্ষণ করতে!


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এখনো তো খেইল শুরুই হয় নাই। বাংলাদেশের সেলফোন কোম্পানিগুলা বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে বিজ্ঞাপন বানাইলেও ২৫ বৈশাখ বা ২২ শ্রাবণ উপলক্ষ্যে এখনও বানায় নাই। ভাবতেছি আইডিয়াটা দিমু কি না তাগোরে... শুরু করে তাইলে দেখবেন রবীবাবুর কি খেইল... তাঁরই ধূতি ধইরা টানাটানি শুরু হইতে পারে... অপেক্ষায় থাকুন... আসিতেছে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি
মির্জা এর ছবি

ঠিকই বলেছেন......তবে এরা কিন্তু খুব ভাল ভাল কিছু এ্যাডও বানায়

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হা : হা : হা : !!

মনে পড়েছে !!

তবে " অনেক কষ্টের দামে জেনেছি " মিডিয়ায় তেলাপোকারাই পাখি আজকাল ।
এই সব রবীন্দ্রবোদ্ধা ছাগল শুধু চ্যানেল আই'তে নয় ইদানিং সবজায়গায় করে খাচ্ছে ।

ক্ষমতাশালী মালিকপক্ষ তাদের পাশে স্তাবকদেরকেই দেখতে চান ।

হায় , এই সব স্তাবকরা আগেরকালের গোপাল ভাড় হতে পারেন না , অবশ্য ইনারাও লোক হাসান বটে ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার লেখার বিষয়বস্তু ও ঘটনা বেশ মজাদার। কিছু কিছু টাইপিং সংক্রান্ত ভুলের কারণে পড়তে খানিকটা হোঁচট লাগে। ধুতি খোলার ব্যাপারটা মজা লেগেছে। আর শিরোনামটা আকর্যণীয়।

মির্জা এর ছবি

.........রপ্ত করতে চেষ্টা করছি তার আগ পর্যন্ত অভিযোগ মাথা পেতে নিলাম

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

:হোহো:

তানবীরা এর ছবি

সেক্সপীয়ার এর জায়গাটা অসাধারন দিয়েছেন । হাহাহাহা

তানবীরা

চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

ধ্রুব হাসান এর ছবি

তবে রনি ভাই যাই কন ঘটনাটা কিন্তু অত্যন্ত উপাদেয় ছিলো মনে হচ্ছে... চিন্তিত

মির্জা এর ছবি

অবশ্যই উপাদেয় আঙ্গুরের মত একটা মজার জিনিসকে পচিয়ে কি উপাদেয় মদ তৈরি হয়না?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ধুতিটা খুলেছে নাটকের অভিনেতার
তারটা যে খোলেনি সেটাই রবীন্দ্রনাথের সৌভাগ্য

মির্জা এর ছবি

চান্স পায় নাই......

অনিকেত এর ছবি

ভী-ষ-ন ভী-ষ-ন মন খারাপ হয়ে ছিল।

আপনার লেখাটা পড়ে এত জোরে হেসেছি যে পাশের টেবিলের মেয়েটা চমকে উঠে তাকিয়েছে।

আমার মনটা ভালো করে দেবার জন্য মির্জা ভাইকে ধন্যবাদ।

রবীন্দ্রনাথের কাছে কিঞ্চিত দুঃখিত---তার নাটকের এহেন হেনস্থা দশাই আমার মন ভালো করেছে। কিন্তু কি আর করা।

জয় ধুতি............

দ্রোহী এর ছবি

হুম। এই হইলো ঘটনা।

জয় বাবা ধুতিনাথ!


কি মাঝি? ডরাইলা?

মামুন-উর-রশীদ এর ছবি

কোন একদিন দেখবেন ঐ পরিচালক জাতীয় পুরস্কার হাতে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে পত্রিকায় পোজ দিচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।