টিভিতে তখনো ‘প্রায় নেই’ কাপড় পড়া হিন্দি নায়িকাদের আনাগোনা শুরু হয়নি। হঠাত করে প্রিয় তরূনীকে কিছু বলতে হলে এসএমএস নয়, বলতে হত সরাসরি নয়ত প্রাক-আধুনিক চিঠিই একমাত্র (যদিও বিপদ জনক) ভরসা।
সামাজিক বিনোদন মানে বাবা-মায়ের সাথে বিয়ে বাড়িতে যাওয়া আর স্বপ্ন মানে নাটক করে সমাজ বদলে দেয়া।
সেই সময়ে মন খারাপ করে দেয়া এক সন্ধ্যায়, এম সি কলেজের রুপবতী দিঘির সামনে বসে এক তরুন ‘পচানো’ হতে পারে সেই ভয় বুকে নিয়ে ১৪জন তরুন-তরুনীর কাছে একটা প্রায় পরা-বাস্তব প্রস্তাব দিয়ে বসলো। ছবিতে যে যায়গাটা দেখছেন সেই যায়গায়, জ্যোৎস্না রাতে মশালের আলোয় তাবু টানিয়ে একরাত থাকা!
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ইমোশনাল জাকির, লাফ দিয়ে উঠে বলল, চল সব এ্যারেঞ্জ করে ফেলি।
সবচেয়ে ধীর-স্থীর আর প্র্যাক্টিকাল (যার আরেক নাম ছিল Deeper-এতই Deep চিন্তা করতো) সেই লাহীন বলল, তাহলে একটা বাজেট করতে হবে সবার আগে।
আরো দুজন, মাধবপুর চা বাগানে চোলাই বা বাংলা পাওয়া যায় কি যায়না, না পাওয়া গেলে নিয়ারেষ্ট কোন বাগানে যেতে, মালশাতে চলবে কি-না, আনবো কিভাবে, তা নিয়ে সিরিয়াস তর্ক জুড়ে দিল(১)।
জয়ী, যে কি-না কোন সুন্দর মেয়ে দেখলেই বলে বসতো ‘মাল একটা’ সেও লাফিয়ে উঠলো প্রস্তাবে, সে-তো যাবেই(২)। শুধু স্বপ্না ব্যাজার মুখে বসা।
ফুজি আগ্নেওগিরিকে পেছনে রেখে আপেল সেদিন ছবি পাঠালো। ফুজি, তুমি পিছনেই থাক। উচ্ছ্বাস আর কঠিন পোংটামির যে আগ্নেওগিরি আছে এই ছেলেটার মধ্যে তার কাছে ফুজি তুমি উইয়ের ঢিবি! আপেল তখন চিন্তিত, সে মাধবপুর চা বাগানে কোন ওভার কোট পড়ে যাবে? না-কি ‘টাল’ মার্কেট থেকে আরেকটা ওভারকোট কিনে নেবে?
সুমু, যে কি-না ‘কোন এক মেয়েকে’ সরাসরি কিংবা চিঠিতে, কোন ভাবেই মনের কথা বলতে না পেরে হঠাত রেগে গিয়ে আমার গলা টিপে ধরেছিল (৩) সে ব্যাস্ত বাবা-মা রাজি হবেনতো? থাকার ব্যাবস্থা কি হবে? বাথরুম? মাটিতে কি বিছানো হবে-এইসব নিয়ে।
ডেড সোহেলের ডেড চেহারার থেকেও চরম অলস আরিফের চেহারা ভেসে উঠছিল বারবার, ওকে নড়াবো কিভাবে?
কম কথার টিপু, অতি উচ্ছাসে কি একটা বলতে গিয়েও, যদি উল্টা-পাল্টা বলে ফেলে, সেই ভয়েই হয়ত কথাটা গিলে নিল।টিপু অবশ্য তখন আমাদেরকে খুব ভয় পেত। আমাকে আর আরিফকে কলেজ়ে আসলেই সালাম দিত(৪)
সবার অলক্ষেই প্রস্তাবকারী বুঝে গেল, অসম্ভব রোমান্টিক আর এ্যাডভেঞ্চারপূর্ন একটা ‘ক্যাম্পিং’-এর স্বপ্ন, ‘হয়ত’র গন্ডি পেরিয়ে এখন ‘প্ল্যানিং’-এর সীমানায় ঢুকে পরেছে।
পরবর্তি আট বছর এই ক্যাম্পিং ছিল আমাদের প্রেম, রাগ, হিংসা, প্রতিশোধ আর আবেগের অংশ।
কেউ তখনো ভাবতেই পারেনি কিভাবে এই ‘’ক্যাম্পিংটা’’ এদের সারা জীবনের অংশ হয়ে থাকবে।
=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-=-
১। এই দুজনের নাম বলতে পারলে ভাল হত, কিন্তু সবদিক বিবেচনা করে চেপে গেলাম।
২। জয়ীঃ আমি ধরেই নিয়েছি তোর পিচ্চিরা এখনো ব্লগ পড়ার মত বড় হয়নি, যখন হবে, তখন তোর নামও এখানে চেপে যাব।
৩। সুমুঃ ওর সব রাগ, ক্ষোভ, ভালবাসার প্রথম স্বীকার (এবং শিকার) আমি। জাকির আজো ভাবে এটা অন্য কিছু। অন্য কিছু না-রে, এইটাও বন্ধুত্য
৪।আরিফের ভাষায়, এম সি কলেজে আমাদের ব্যাপারে মতবাদ ছিল-
গ্রুপ একঃ এরা বিরাট এক ক্যাডার গ্রুপ, সবগুলা আর্মস ক্যারী করে, মদ-গাজা খায়, রাফ, ইত্যাদি, ইত্যাদি। (সিলেটের মোষ্ট ওয়ান্টেড লোকটার ভাগ্নিদের ফ্রেন্ডদের বিনা উষ্কানিতে, এবং আইডেন্টিটি ভুল করে পেটানো আমাদের এই সুনাম ছড়াতে আরো সাহায্য করেছে )
গ্রুপ দুইঃ ওরে বাবা, এরা চরম ব্রিলিয়ান্ট ছেলে-মেয়ে, জিনিয়াস (!!) তাই একটু পাগল-ছাগল। (এই ক্রেইজ ভাঙ্গিয়ে অনেকে আবার ইয়ে করার চেষ্টা করেছেন,বিপদেও পড়েছেন)
গ্রুপ তিনঃ কনফিউসড গ্রুপ! মূলত পলিটিকাল লীডার আর টীচাররা এই গ্রুপে আজিবন সদস্য ছিলেন। এদের প্রশ্ন, ৩০-৪০টা ছেলে খোদার ৩০ দিন কলেজ়ে আসে, দল বেধে ঘুরে, শিবিররের পোলাপাইনের ব্রেইন ওয়াস করে নাটক করায়, আবার ছাত্র ইউনিয়নও এদেরকে পছন্দ করে না, লীগ-দল দুটার থেকেই এরা চা-বিষ্কিট খায়, কি চায় এরা?
(লেখার বিষয়টা আমার কাছে-প্রিয় কবিতার চেয়েও বড় সত্য। তাই এর পাত্র-পাত্রীর অনেকেই আমার বক্তব্যের সাথে, লেখার ধারাবাহিকতার সাথে সহমত না-ও প্রকাশ করতে পারে। প্রথম সন্তানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে লিখছি, প্লিজ, এটাকে কেই ইতিহাস হিসেবে দেখিস না)
মন্তব্য
কিভাবে মানুষ বুড়িয়ে যায় তার স্মৃতিকাতরতার চাপে, তারপরও আমি নিজের দিকে তাকিয়ে বুঝি রক্তগরম থাকা কত আবেশময় আনন্দের। রুপবতী দিঘিতে ক্যাম্প করে থাকা আপনার সোনালী স্মৃতিকে ঈর্ষায় আর ভালোবাসায় একটি টু থাম্বস আপ।
এম সি কলেজের দিঘীটা আসলেই অনেক রূপবতী
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ঐ রুপবতী দীঘির কাছে আমাদের অনেক নিঃশ্বাস জমা আছে রনি । ঐটা ঐরকমই থাক । তার চারনে এখন কষ্ট ছাড়া আর কিছু নেই ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
সে জন্যেই বেহেশ্তে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে......৭০ হুর কিংবা মদ চাইব না, ঐ দিনগুলো ফেরত চাইবো
তোমাদের এইসব কাণ্ডকারখানায় আমি এবঙ আমরা হিংসিতো থাকতাম সারাক্ষণ।
আরেকটা কথা, তোমাদেরকে অনেক পোলাপাইনেই ভয়-ডর-ইজ্জত প্রয়োগ করতো, কারণ তোমরা কেউ ছিলে রাজুর বড়ো ভাই, কেউ ছিলে রুমেলের বড়ভাই, কেউ ছিলে অপুর বড়ো ভাই... আর কতো বলবো?
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
জ্বি বড় ভাই......
ঐ রুপবতি দীঘির কাছে আমারো আছে এক হাটু জল।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
আপনাকে, আপনাদেরকে একরাশ হিংসা।
জায়গাটাকে রূপবতী বললে বোধহয় কম বলা হয়।
আপনার পিচ্চিটাকে অনেক অনেক আদর।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হিংসায়ী ভাল্বাসার জন্যে ধন্যবাদ-আমার পিচ্চিটার পক্ষ থেকেও
ঝাঁপিয়ে এল অমল শৈশব আর তুমুল যৌবনের হাজার স্মৃতি। লেখাটা পড়তে পড়তে মনে হল, আমিও বুঝি ছিলাম ওই দলে।
.......................................................................................
আমি অপার হয়ে বসে আছি...
.......................................................................................
Simply joking around...
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
রনি আমি তোরে আর আরিফরে কবে ডরাইছি, তুই সারা জীবন খালি আমার সাথে এমন করেই গেলি। তারপরও ভাল কলেজ পুকুরে আমাদের মূর্শেদের (উপশহর ) ঝাপ দেয়ার কথাটা লিখিসনি। হায়রে আরিফের ২০টাকা। আজো আরিফ কান্দে তার টাকার জন্য।
নতুন মন্তব্য করুন