বিধাতা গ্যারান্টিড সুখঃ
বিধাতা আমাদেরকে নিজ হাতে এই উপন্যাসের জগতে নিয়ে এসেছেন, সব কিছু সাজিয়ে রেখেছেন শুধু আমাদের কথা ভেবেই। আমাদের আনন্দের যেন কোন কমতি না-হয় সে জন্যে প্রতিটি দেবদূতকে কড়া নির্দেশ দেয়া ছিল সেইরাতে।
....
মাধবপুর। একপাশে চা বাগান, একপাশে এ্কটি সৌখিন কুড়ে ঘর আর ঘাট। বাকি দুইদিকেই ঘন জঙ্গল আর মাঝ খানে বিশাল লেইক। আমাদের ক্যাম্প সাইট যেটা ঠিক করলাম সেই যায়গাটার তিনদিক ঘন জঙ্গল দিয়ে ঘেরা আর ঢালুমত একটা বাড়তি অংশ নেমে গিয়েছে পানি পর্যন্ত। এইখানেই ক্যাম্প হবে।
বলে রাখি সেদিন ছিল পূর্নিমা।
...
জানিনা কল্পনা করা সম্ভব কি-না, নয় গ্রহের সমবয়সি নয়টা ছেলে, চারদিকে জঙ্গল, তাবু। যদি মশালের আলোকে বলি কিশোরীর ছোট্ট ডায়রীর মত রহস্যময়ী, লেইক-এর উপরের বিশাল চাদের আলোটাকে কিসের সাথে তুলনা করবো?
ডি-ডেঃ ৩১-১২-১৯৯৩
ক্যাম্পিং-এর দিন ভোর বেলা রাজিবের কোন খবর নেই! কেমন লাগে? রাজিব কই? রাজিব কই? বাথরুমে!!! বাইরে থেকে আমাদের চাপা চিতকার, রাজিব তাড়াতাড়ি আয়। উচ্চস্বরে বাথরুম থেকে ওর উত্তরঃ আসছি বন্ধু, আমার আবার বাইরে ঠিকমত টয়লেট হয় না!
!
যে ছেলে নিজের বাসার বাথরুম ছাড়া ঠিকমত ‘ইয়ে’ করতে পারে না, সে কিভাবে প্রকৃতির মাঝে গিয়ে (ইয়ে….. মানে…. জঙ্গলে আর কি) ‘ইয়ে’ করবে সেই চিন্তা আমাদের কারো মাথায় আসলো না। আমাদের চিন্তা হল এমনিতেই মানুষ কমতে-কমতে আটজন, রাজিব না এলে মানুষ আরো কমে গেল আর মানুষ কমে যাওয়া মানেই জনপ্রতি খরচ বেড়ে যাওয়া! এদিকে জাকির এখনও টাকা দেয়নি! মাথা মোটামোটি ঘুরছে। (রাজিব পরবর্তি ৫-৬ বছর প্রত্যেকবার এই একই কারনে দেরি করেছে। কারো মনে থাকার কথা না, তা-ও বলি ১৯৯৩ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর সিলেট থেকে ঢাকাগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ১৫ মিনিট লেইট ছিল; যেটা আমরা ছাড়া কেউ জানেন না সেটা হল জোড় করে ট্রেইন লেইট করানো হয়েছিল যাতে ‘দোস্ত-রাজিব’ আরম করে তার বাথরুম সেরে আসতে পারে বাসায়।)
যাইহোক, ট্রেন ষ্টেশনে এসে পৌছানোর পর জাকিরের একটা নিষ্ঠুর খেলা দেখতে পেলাম। ‘’সেই অপরাধে জাকিরকে আমি কোনদিন ক্ষমা করব না’’-এই ছিল আমার দৃঢ় সংকল্প!
বিপদঃ
আরিফ ক্যাম্পিং-এ যাবে না! আরিফ গেলে আমি যাব না, আর এটা আমাদের ক্যাম্পিং, আমি যাব না কেন?’’ এই ছিল একগুয়ের মত জাকিরের ক্রমাগত বক্তব্য। আমাদের সামনে তখন দুইটা সমস্যা, এক জাকিরকে বোঝাবে কে? আর শেষ পর্যন্ত আরিফ যদি না-ই যেতে পারে, তবে ওকে কে ইনফর্ম করবে তুই আমাদের সাথে আসতে পারবি না?
কিন্তু এই ছেলেমানুষির কারন কি? আর কিছুই না-রাজনীতি। জাকিরের হাত ধরেই না-কি আরিফের রাজনীতিতে আগমন, সেখান থেকেই না-কি মারপ্যাচ শেখা। কিন্তু জাকির এমনই গুরু মারা বিদ্যা শিখিয়েছে যে আরিফ কিছুদিনের ভেতরেই জাকিরকে প্যাচিয়ে মেরে উপড়ে উঠে এসেছে। আজ জাকিরের সুজোগ এসেছে সেই প্রতিশোধ নেয়ার!!!
কতটাকায় ১৫০ টাকা হয়?
তবে ক্যাম্পিং-এর আসল ঝামেলা ছিল টাকা! এতগুলো ছেলে সিলেট থেকে যাবে ভানুগাছ, সেখান থেকে জীপে করে মাধবপুর চা বাগান, দুইদিন এক-রাত খাওয়া, আবার ভানুগাছ হয়ে সিলেটে ফেরা-টোটাল খরচছিল জনপ্রতি ১০০টাকা, মানুষ কমে যাওয়ায় সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ১৫০ টাকায়! একশ পঞ্চাশ টাকা? আমাদের প্রায় সবার কাছেই লটারী পাওয়া ছাড়া হুট করে এই টাকা জোগাড় করা অসম্ভব! কিন্তু সবচেয়ে কিপ্টার মত বাজেট করেও এর থেকে কমানো সম্ভব না চাদা। কত টাকায় ১৫০ টাকা হয়?
লাপাত্তা আরিফঃ
ক্যাম্পিং-এ আসার তিন-চারদিন আগে থেকেই আরিফ লাপাত্তা! কোন শালা হয়ত আরিফকে বলে দিয়েছে ও এখানে ইনভাইটেড না! মনে হয় সেকারনেই ও ডুব দিয়েছে আর ডুব দেয়া আরিফকে খুজে পাওয়া অলমোষ্ট ইম্পসিবল!
বহুদিন পর আরিফ জেনেছিল ও যে অনাহূত ক্যাম্পিং-এ। তারও বহুদিন পর আমি জেনেছিলাম ১৫০ টাকা যোগার করতে পারেনি বলে ওর ঘুম হয়নি ১৫০ রাত!
আরো বহুদিন পর ২০০৭-সালে আরিফের এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়িতে সিলেট যাওয়ার পথে আমার বউ বার-বার জানতে চাইছিলো, সব কিছু ঠিক আছে? Are you ok? তুমি ঠিক আছ? না সব কিছু ঠিক নেই! আরিফের এই গাড়িতে চড়ার যে কি আনন্দ, সেটা কিভাবে বোঝাবো? আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ গাড়ি চড়া সেটা।
=-=-=-=-=-
পুনঃশ্চ লেখার এই পর্যন্ত পড়ে দয়া করে কেউ জাকিরকে ভুল বুঝবেন না। আমার দেখা সবচেয়ে ইমোশনাল, ভাল মানুষদের একজন এই জাকির। ইমোশনালি চলে বলে এখনও ও ছেলেমানুষ। তবে ওর গানের গলা আর মন-দুটোই চাদের আলোর মত, সর্বব্যাপি এবং জানান দিয়ে যায় ‘আছি’
রাজিবকে কেউ কখনও মন খারাপ দেখেছে বলে মনে হয়না। কোন বিপদে পড়ে যদি কেউ ওর কাছে যায়, কখনো ও কাউকে ফিরিয়ে দেয় না। ভাবাই যায় না একজিরিয়াস ব্যাঙ্কার এত আমুদে হতে পারে, এখনো!
মন্তব্য
মাতামুতা আওলাইয়া গেলু কিনা বুঝপারতাছিনা। গল্পের আগা(গু না)মাতা ঠিক নাই। তয় বুজা জাছেছ লেখার হাত জুস।
জ্বি, মাথা আউলানী লেখাটা ইচ্ছা করেই এভাবে রেখে দিয়েছি, সম্পাদনা করতে চাইছি না। শুধু বলি উল্টো দিক থেকে শুরু করেছি বলতে পারেন
তোমাদের ওই গ্রুপটা ছিল একেবারেই চোখে পড়ার মতো
একেকটা একেক রকম চিজ
আছিলেন বটে আপনেরা কয়েক জন!
রাজুকে দেয়া উত্তরটা আপনার জন্যেও প্রযোজ্য প্রিয় হাদারাম।
তোদের জন্যে শান্তিতে একটু ফাড়াও মারতে পারবো না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নজমূল আপনি এগিয়ে চলুন।
আমরা আছি আপনার সাথে।।
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
'''''''''''
তৃপ্তি আমার অতৃপ্তি মোর
মুক্তি আমার বন্ধনডোর
এইরকম একটা গ্রুপে থাকতে খুব ইচ্ছে করে।
জীবনকে এইভাবে পাওয়া!
-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
আপনাদের গ্রুপের নাম ভাঙ্গাইয়া কলেজে কি কম তাফালিং মারলাম?
এই বেটা তোরে এই কমেন্ট মারতে কে বলছেরে গিদড়? আগের পর্বে আমার কমেন্ট পড়ে আয়রে মাখাল। তোর মাথা এতো ডাল হলো ক্যামনেরে রাজু!
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
এজন্যই তো অপু আমি কিছু বলছিনা
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বহু সন্ন্যাসীতে নজমূলীয় গাঁজন নষ্ট।
আরে দোস্ত, তুই ফাড়া মারলি কই? তুই তো আর জাকির (এইটা অন্য জাকির-ফাজা) না।
আমি শুধু বড়ভাইরে একটু সাইড দিলাম
তারও বহুদিন পর আমি জেনেছিলাম ১৫০ টাকা যোগার করতে পারেনি বলে ওর ঘুম হয়নি ১৫০ রাত!
ছুঁয়ে গেলো।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
ভাবিয়ে তোলে
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি
------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !
আমার খুব প্রিয় একটা ছবির কথা মনে পড়ে গেলো...'দিল চাহতা হ্যায় '।
এইসব জীবন যাপনে অসীম সুখ...
-------------------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
আমাদের বাসা ছিল আম্বরখানা ইলেকটট্রিক সাপ্লাই এলাকায়। বিকালে কলেজ থেকে এসে আবার যেতে হতো শিবগঞ্জে আড্ডা দিতে। কিন্তু রিক্সা ভাড়াতো নেই যেতে হতো বাই সাইকেল চালিয়ে। একদিন রনিকে বলে ছিলাম । সেই সব দিনের সাইকেল চালানোর কথা মনে হলে এখনো আমার পায়ে ব্যাথা করে। হায়রে জীবন।
কামরুল আহবাব এর সৌজন্যে তিনখানা ফটুক যোগ করা হইলো।
ক্যাম্প ০১
টিপু ০২
টিপু ০৩
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন