খুবই খারাপ এক স্বভাব হয়েছে রইস উদ্দিনের, কিভাবে-কিভাবে যে এই স্বভাব গেথে গিয়েছে সে নিজেও জানে না। তবে নিজের বদ স্বভাব নিয়ে নিজের ভেতরই এক ধরনের আত্ন তৃপ্তিমূলক অপরাধ বোধ আছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও দুবেলা খাবার যোগারের চিন্তায় রইস রাতে ঘুমাতে পারত না। ছেলে-মেয়েগুলোর জন্যে একমাত্র ভবিষ্যত বলতে ছিল ভাল একজন মানুষের বাসায় বা ক্ষেতে কাজের ব্যবস্থা।
রইসের বাচ্চারা এখন স্কুলে যায়! আর রইসের হয়েছে বাজে এই স্বভাব, সকালে ঘুম থেকে উঠে তার এক কাপ চা লাগেই-লাগে। তবে আজকে তার সকাল থেকেই মনে পড়ছে ইদ্রিসের কথা। ইদ্রিস চা খুব ভাল বাসতো, প্রায়ই বলত আমি যেদিন বড়লুক হমু, তহন প্রেত্যেকদিন চা খামু!
ইদ্রিসের হাতে চারা গাছ খুব ভাল হত। প্রতিদিন সকালে ইদ্রিস যেভাবে চারা গাছগুলোর গায়ে হাত বুলাতো, মনে হত সে কোন মানব শিশুকে বুঝি আদর করছে! ইদ্রিসের একই কথা, গাসগুলানরে ছাইরা আমি থাকতে পারতাম না।
রইসরা নদী ভাঙ্গায় যেদিন সবাই শহরে চলে আসল সেইদিনও ইদ্রিসের একই কথা, আমি জাইতাম না শহরে, আরেক গেরামে যামু যেইখানে ভাংগন নাই কিন্তু জমি আছে, আমি এরারে ছাইরা থাকতে পারতাম না।
ইদ্রিস ভাঙ্গনে বিতারিত হয়ে পরেছে বন্যায়, বন্যা থেকে অনাবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি থেকে সাইক্লোন, সাইক্লোন থেকে সে হারিয়ে গিয়েছে। বার-বার কেউ না কেউ তাকে আশ্বস দিয়েছে- এইবার ইদ্রিস তোমার একটা ব্যবাস্থা হবে। ইদ্রিসের সাথে-সাথে সেই আশ্বাসগুলো আজ কোথায় আছে কে জানে!
রইসদের সাথে অনেকেই শহরে এসে টিকতে পারেনি, অনেকেই কোথায় ভেসে গিয়েছে কেউ যানে না, প্রত্যেকেই জীবনের তাগিদে বেছে নিয়েছে ভিন্ন-ভিন্ন পেশা।
রইসের এখন নিজের স্বাধিন ব্যবসা, চুল কাটার একটা সেলুন দিয়েছে সে বাজারে। ভাগ্যিস ইদ্রিসের মত বোকামি সে করেনি! তার নিজের দোকান, বাচ্চাগুলো স্কুলে যায়, বউকে কারো বাসায় কাজ করতে হয় না। অথচ ইদ্রিস গাধাটা......কিন্তু এখনো কেন জানি ইদ্রিসের কথা মনে হলে, ভোরবেলার সূর্যের আলোয় চারা গাছের চিক-চিক শিশিরের কথা মনে হলে, দুপুর বেলায় গাছের নীচে বসে পান্তা খাওয়ার কথা মনে হলে সেই আধপেটা খেয়ে থাকা গ্রামে ফিরে যেতে ইচ্ছে হয়; ইচ্ছেটা হয় মাঝে-মাঝেই!
‘’ধুর, সুখে থাকতে ভুতে কিলায়’’ এই বলে কাপের বাকি চাটুকু ছুড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায় রইস, তার দোকান খোলার সময় হয়েছে।
দেশে আমার অনেক পরিচিত এবং না-পরিচিত বন্ধু আছে যারা রইস আর ইদ্রিসের মত গাছ আর গ্রাম ভালবাসে।তাদের চারা গাছের নাম ‘সংবাদ পত্র’! তারাও এক ভাঙ্গন থেকে আরেক ভাঙ্গনে যায়; এক পেশা থেকে যায় আরেক পেশায় ; বিশ্বাস করে লাভ নেই জেনেও প্রকাশকদের আশ্বাসে নতুন চারা লাগায়। কেউ কেউ সুখে থাকে, কেউ আর অ-সুখ টানতে না পেরে ছুড়ে ফেলতে চায় সবকিছু............ আবার কোন এক সকালে কিংবা সন্ধ্যায় যখন ডাক আসে, আশ্বাস পায়, এরা এক কথায় না করে দিতে পারে না!
মন্তব্য
ভালো লাগলো। -রু
ভালো লাগলো।
ভালো লেগেছে। গ্রামে কিছু জমি কিনেছি, একটা ঘর তুলবো। বৃষ্টির রাতে বারান্দায় বসে হারিকেনের আলোতে বিড়ি টানবো আর স্ত্রীর সাথে গল্প করবো।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
নতুন মন্তব্য করুন