(এই কাহিনী সম্পূর্ণ সত্য; ছাগলামি অবিশ্বাস্য মনে হইলে নিজ দায়িত্বে ঔষধ খাইয়া লইবেন)
আজকাল হ্যাপাযত-আস্তিক-নাস্তিক, বাংলাদেশ হুজুরের দেশ, কোন ভাল মানুষ, মুক্ত চিন্তার মানুষের পক্ষে দেশে থাকা সম্ভব না (এইটা অবশ্য প্রবাসী বাঙ্গালিদের একটা আত্ম তৃপ্তি পাওয়ার চেষ্টা) এইসব শুনছি। আজকে এক নব্য ‘প্রফেটের’ ফেইসবুক উক্তি ছিল এইরকমঃ ‘‘ আমাদের নবিজী (সাঃ) সারাজীবন তারাবীর নামাজ পড়েছেন, রোজার সময় তাহাজ্জুদের নামজকেই তারাবীর নামাজ বলা হয়’’!!! ছৈদি-আরব বা পাকিস্তান হলে ব্লাসফেমি আইনে এই ছেলেরতো ফাঁসি হয়ে যেত! কিন্তু মূল পয়েন্ট হল সম্পূর্ণ না জেনে-না শুনে না বুঝে এই ছেলে ধরে নিয়েছে ধর্ম বাঁচানো তার ফরজ কর্তব্য সুতরাং হুর পাওয়ার আশাতেই হোক কিংবা সত্যিকারের ধর্ম বিশ্বাস থেকেই হোক সে এই ফতোয়াটা জারি করে দিয়েছে (আজকাল অবশ্য আরেক শ্রেণীর এ্যালার্জির প্রাধান্য দেখা যায় এরা হল ‘Facebook only’ ফ্যাশনবল নাস্তিক, এদের ফতোয়াগুলো আরও ভয়াবহ!) যাইহোক এই তারাবির ফতোয়া শুনে আমার বিলাতিস্তানের একটা অভিজ্ঞতা মনে পরল, সেই অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যেই এত লম্বা ভূমিকা:
ফুটবল খেলা দেখাচ্ছে টিভিতে, আমরা কয়েকজন এক কাবাবের দোকানে কাবাব খাচ্ছি আর আরবি কমেন্ট্রিওয়ালা এই খেলা শুনে কিছু বুঝতে না পেরে অনেকের মধ্যে আমরা দুইজন খুব বিরক্তি হচ্ছি। আমাদের মধ্যে এক নিতান্তই ছাপোষা বাঙালি, ধর্ম-কর্মের সাথে যার যোগাযোগ আকিকায় মোসলমান নাম আর ঈদের দিনের পাঞ্জাবী পরাতেই সীমাবদ্ধ, সে খুব বিজ্ঞের সাথে বলল, ‘‘আসলেই এরা সত্যি মোসলমান’’! হাফপ্যান্ট পইড়া উরু দেখাইয়া খেলার কারনে যে খেলা আফগানিস্তানে ব্যান্ড করা হয়েছিল সেই খেলার সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক বুঝতে পারি নাই কিছুতেই। জানতে চেয়েছিলাম কিভাবে বুঝলেন এরা খাটি মোসোলমান? উত্তর ছিলঃ আরে শুনো না, পুরাটা খেলা কমেন্টেটর পর্যন্ত আল্লার নাম জিকির করল’’ কথা সত্য, কমেন্টেটর এবং দোকানের কিছু আরব কাষ্টমার ইয়াল্লা-ইয়াল্লা করছে ননস্টপ, (আরও দুটো শব্দ মনে আছে মনে আছে ‘যারবা’ ইয়াল্লা-ইয়াল্ল...ও যারবা’ ‘আরি-ফিক); সাথে আরও কিছু দুর্বোধ্য আরবি শব্দ! হু কেয়ার্স, আমি আমার খাবার খাই তোমরা মোসোলমান খাটি কি-না সেইটা ঘাটা-ঘাটি কর এই ছিল আমার হিসাব। যদিও আমার ঐ পরিচিত ব্যাক্তি ‘যারবা’ কিংবা আরি-ফিক (বাংলায় এরচেয়ে কাছাকাছি উচ্চারণ লিখতে পারছি না)শব্দটা কি বোঝেন নাই, তিনি ধরেই নিয়েছিলেন ঐটাও পবিত্র জিকিরেরই অংশ।
এর পরে আমি সেই মানুষটিকে বেশ কয়েক যায়গায় এই ‘খাটি মোসোলমানির গল্প’ বলতে শুনেছি আর বাঙ্গালীদের মাশাল্লাহ-আলহামদুলিল্লাহ বলতে-বলতে অজ্ঞান হতে দেখেছি।
যাইহোক, বিলেত ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস শুরু করেছি; কথ্য আরবি শেখার চেষ্টা করছি অল্প-অল্প। প্রথমেই যেই চমকপ্রদ জিনিশটা শিখলাম সেটা হলঃ ফুটবলের ‘ইয়াল্লা-ইয়াল্লার’ সাথে ধর্ম বা সৃষ্টি কর্তার কোন সম্পর্ক নেই! এখানে ‘ইয়াল্লা-ইয়াল্লা’ মানে হল জোরে-জোরে (দৌড়াও) কিংবা তাড়াতাড়ি কর আর ইয়াল্লা-ইয়াল্লার পরে ‘যারবা/জিফত’-এর সোজা অনুবাদ হল- Run, run....oh "shit" (he missed the pass/lost the ball) আরি-ফিক? F**k off!!!
এই বাঙালি চান্দে ছ্যাদাইর পশ্চাৎ-দেশ দেখা গিয়েছে শুনে পশু হয়ে উঠবে সেটাইতো স্বাভাবিক!
মন্তব্য
ছ্যাদাইর! টাইপো নাকি ইচ্ছা করে লিখেছেন? ছ্যাদাইর!
Jaader chehara chande dekha jaay tader naam mukhe nei naa------- tai chheda- e daaki eke
ইয়াল্লাহ্ ইয়াল্লাহ্ ইয়া হাবিবি
পরিচিত এক বাঙ্গালি ভাবী একবার আমাদের পাশের বাড়ির ফলন্ত বাগান দেখে সেকি উত্তেজিত।
বললেন, দেখছো কারবার! ওদের বাগান ভেঙ্গে পড়ছে জুকিনি হাবিজাবিতে,,,কথায় কথায় মাশাল্লাহ বলা
ঐ ভাবী পাশের বাড়ির বাগান দেখে কেন মাশাল্লাহ বললেন না জিজ্ঞেস করায় উত্তরে বলেন, 'নাসারাদের জন্য এসব বলার নিয়ম নাই' আজব না হয়ে পারিনি সেদিন। আলহামদুলিল্লাহ, মাশাল্লাহ প্রয়োজন মত বলা যেতেই পারে। কিন্তু তার অপব্যবহার আর অপব্যাখ্যা খুব পীড়া দায়ক।
আমিও এরকম প্রচুর মানুষ দেখেছি, বাংগালী মোছল্মান কাফের-মুশরেক-ইয়াহুদি-নাসারা এইসব ইস্যুতে খুবই স্পর্ষকাতর, কিন্তু কাফের-মুশরিক-ইয়াহুদি-নাসারা সাম্রাজ্যে নাগরিকত্ব নিয়ে বছরের পর বছর মাটি কামড়ায়ে থাকবে, সেইটা কিন্তু আবার ধর্মে দস্তুর আছে, বড়ই আজীব দুনিয়া...
-- রামগরুড়
বাঙ্গালীর ধর্মধারণা? নাকি বাংলাদেশী মুসলমানদের ধর্ম ধারণা? বাংলাদেশে তো আরো অন্যান্য ধর্মাবলম্বী থাকে। ঢালাও জেনারেলাইজেশন হয়ে গেলো না?
এস এম মাহবুব মুর্শেদঃ Valid point. Kintu amader desher aunnano dharmalombi mansuherao ki naa bujhe dharmo palone kom jaan?
ইয়ে, সচলে না বাংরেজি কমেন্ট নিষিদ্ধ ছিল জানতুম?
- একলহমা
মজা পাইছি, আমিও এই ইয়াল্লা ইয়াল্লা শুইনা ভাবতাম কাহিনী কি! আমার ধারণা ছিল, ইয়াল্লা ইয়াল্লা মানে আল্লা বলা আরবের লোকদের কথোপকথনের একটা অংশ। আমরা বাঙ্গালিরাও যেমন অনেক কথায়ই ইয়াল্লা বা হায় আল্লা বলে ফেলি, আস্তিক নাস্তিক নির্বিশেষে। ফিক!
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
তাই তো কই, পিডানি খায়া জামাতি রা 'ইয়াল্লা ইয়াল্লা ' কইয়া দৌড়ায় ক্যান??
-----------------
সুবোধ অবোধ
----------+++--------
শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি কেন এত বোকা হয়?!!
"তাই তো কই, পিডানি খায়া জামাতি রা 'ইয়াল্লা ইয়াল্লা ' কইয়া দৌড়ায় ক্যান??"
যেমন জটিল লেখা, তেমনি জটিলতর মন্তব্য। এ যেন যেমনি বুনো ওল, তেমনি বাঘা তেঁতুল।
ঐ রে আবার তেঁতুল চলে এলো। আবার জিভেও রস এলো। যাই, হিমু ভাইয়ের লালা-কাহিনী আবার পড়ি।
--------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
ওহ ফিক!
নাহ! আরি-ফিক
খিকজ
প্রবাসী বাঙ্গালী মুসলমান পারলে নিজেকে মুহম্মদ সঃ এর চেয়ে বড় মুসলমান প্রমাণ করতে চায়। ইহুদী নাসারার দেশে ধর্মরক্ষা করলে মনে হয় বোনাস পয়েন্ট আছে। এখন রোযা শুরু হইছে, নিজে কত কড়া ধার্মিক সেইটা শো অফের সুবর্ণ সময় এখন। রোযার মাসে ক্রেডিট কার্ড দিয়া হাজার ডলার যাকাত দিবে, অথচ সাভারের দূর্ঘটনার ভিক্টিমদের জন্য দুই-দশ টাকাও তখন দিতে হাত খুলে নাই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শিশিরকণা, আপনার ব্যক্তিগত মতামতের প্রতি সন্মান রেখেই বলছি আপনার মন্তব্যটি, যেভাবে আপনি প্রবাসী বাঙ্গালিদের ‘জেনারালাইজ’ করেছেন সেটা সঠিক নয়। প্রবাসে কোন দেশে আপনি থাকেন আমার কোন ধারনা নেই তবে এইধরনের কথা আমি ইংলন্ডের বাঙালি পাড়া, বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনে যারা থাকেন, যারা দেশ থেকে এসে ‘নিজেদের গণ্ডিতে বসে থেকে পুরো’ কমিউনিটিকে বিচার করেন এরকম কিছু-কিছু মানুষের মুখে অনেক শুনেছি। হয়ত এই ধরনের কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করেছে?
বাংলাদেশের প্রতিটি বিপদে, প্রতিটি দুর্যোগে শিক্ষিত-অশিক্ষিত (?) ধনি-গরীব সব শ্রেণির মানুষকে আমি সরাসরি দেখেছি হাত বাড়িয়ে দিতে। সাইক্লোন সিডর-এর সময় যে ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাকে স্টুডিওতে নামিয়ে দিয়েছিল সে তার ভাড়ার টাকা আমাকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিল আমার সামর্থ্য খুব কম, এই টাকাটা আপনি রিলিফ ফান্ডে দিয়ে দিয়েন। কভেন্ট্রিতে থাকা এক তরুণী তার চাকরী জীবনের পুরো একবছরের জমানো টাকা বাংলাদেশের দুইজন এ্যাসিড ভিক-টিমের চিকিৎসার জন্যে দিয়ে দিয়েছিল।(এক অসভ্য ব্যক্তি চ্যালেঞ্জ করায় ঐ তরুণীর বাবা আমাদেরকে লয়েডস ব্যাঙ্কের পুরো এক বছরের অরিজিনাল স্টেইটমেন্ট পাঠিয়েছিলেন তাই এত জোর দিয়ে বলতে পারছি)। এরকম শত-শত উদাহরণ দিতে পারবেন অনেকেই। সাভার ভিক্টিমদের জন্যে হাজার-হাজার পাউন্ড দিয়েছেন প্রবাসীরা এইটাও কিন্তু অনেকেই জানেন। কিছু-কিছু মানুষ সাভার ভিক্টিমদের ফান্ড নিয়ে বিতর্কের সৃস্টি করায় হয়ত ডোনেশনের চেয়ে বাজে খবর উঠে এসেছে বেশি কিন্তু গণহারে এরা হাত গুটিয়ে বসে থাকেনি। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বোকার মত এরা হজে যায় সত্যি কিন্তু দেশের প্রয়োজনের সময় এরা ‘সবাই’ হাত গুটিয়ে বসে থাকে এইটা বললে এই মানুষগুলোর উপর অবিচার হয়।
আসলে জেনারালাইজড ভাবে বলতে চাইনি। হয়ত ওরকম লেগেছে শুনতে। আমি নিজেও ফান্ড রেইজিং করেছি এবং ভালো মানুষদের দেখা পেয়েছি। এদেরকে নিয়ে কোন কথা নেই। এবং সাধারণত এরা নিজেদের মুসলমান পরিচয়ের ঝান্ডা উড়াতেও ব্যাতিব্যাস্ত থাকে না। যেমন মানুষদের কথা বলছি, তাদের চিনতে পারছেন নিশ্চয়ই এবং এরাই সামাজিকভাবে অন্যান্যদের উপরও চাপ সৃষ্টি করে তাদের ফলো করতে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আরবিতে ফুটবল কমেন্ট্রি শুনতে মজা লাগে, সারাক্ষণই মনে হয় যুদ্ধ লেগে গেছে
facebook
আরে রনি ভাইয়া, আপনি কবে লিখলেন?
এই পবিত্র রমজান মাসে ব্লগ লেখার মতো গুনাহের কাজ না করে তারাবি (মতান্তরে তাহাজ্জুদের নামাজে মন দিন)
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
সইদারব গিয়া তিনটা শব্দ শিখছিলাম,- ইয়াল্লা, কারিব আর মাফি মুশকিলা
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন