মজবুত পিঞ্জিরা ভাঙ্গিতে না পারে

দীনহিন এর ছবি
লিখেছেন দীনহিন [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ২৫/০৪/২০১৪ - ১০:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ও এসেছিল আমাদের বাড়িতে হাফপ্যান্ট পরে। ওর গায়ে ফ্রকের বদলে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি। বাবার গেঞ্জিটাই গায়ে চাপিয়েছিল কিনা কে জানে, নইলে পাঞ্জাবির মত ঝুল ছিল কেন গেঞ্জিটার?

ওদের আসা-যাওয়া এত ঘন ঘন ঘটত আমাদের বাড়িতে যে নতুন কারো আমদানি হলে তা আর আলাদা করে চোখে পড়ত না বা পড়লেও ঘটাত না কোন ভাবান্তর! একটা হাড়-জিরজিরে মেয়ে, বয়স দশ-বারো, পিতা বা চাচার হাত ধরে প্রবেশ করবে আমাদের গৃহে, ভয়ার্ত শাবকের দৃষ্টিতে নিরীক্ষা করবে ঘরের চার দেয়াল, একসময় ত্রস্ত পায়ে চলে যাবে জানালার কাছে, কার্নিশ ধরে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকবে খানিক আকাশে, খানিক জমিনে! অবশ্য প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠবে এক সময়। এমনকি মাস ছয় বা বছর-খানেক কাজও করে ফেলবে, এরপর একদিন ফিরে যাবে গ্রামে, শহরের আমিষ, চর্বি ও পাউডারে তেলতেলে আর জ্যালজ্যালে হয়ে, পিতা বা চাচা যাওয়ার সময় মুখ কাঁচুমাচু করে বসবে আমার মা-বাবার সামনে, আর লজ্জার মাথা খেয়ে বলবে, “ নেওনের তো কোন ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মাইয়ার মা কইল, এমন পোলা আর পাওন যাইব না।” আর মেয়েটি পুঁচকে হলে থাকবে অন্য গল্প: “মাইয়ার দাদীর যায় যায় অবস্থা, নাতনি-ডারে দেখতে চায় এক নজর।”

এইসব নাটক আমার বরাবরই পানসে লাগত। কিন্তু এই মেয়েটি অন্যদের মত ছিল না।

মেয়েটি আমাকে ‘মামা’ ডাকত। ওকে তেমনটাই শেখানো হয়েছিল। আগের মেয়েগুলিকেও শেখানো হয়েছিল। যেমন আমাকে শেখানো হয়েছিল সেই ছোটবেলাতেই মনিবের মত আচরণ করতে, কখনো যেন লাই না দেই, তাহলেই ‘ছোট জাত’ একেবারে মাথায় চড়ে বসবে! আমরা যে যার প্রশিক্ষিত ভূমিকাগুলি সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলতাম, কোন গোল বাঁধত না পৃথিবীর বাঁধা আবর্তনে।

তবে কাজটি কঠিন ছিল, ‘ছোট মনিবের’ ব্যূহ নিশ্ছিদ্র রাখতে অষ্টপ্রহর সজাগ থাকতে হত। যেমন, বাসার মেয়েগুলোকে যখন কোন অর্ডার করতাম, যেমন, এই চা বানা তো, বা ওমলেট করে দে বা কাপড়গুলি কেঁচে দে ইত্যাদি ইত্যাদি, তখন তারা সঙ্গে সঙ্গে হুকুম তামিল করত বটে, তবে রেখে যেত এক টুকরো হাসির প্রায় অবধারিত অনুসর্গ । ওদের চোখের পাতা জুড়ে থাকত অতি আনুগত্য, কখনো অভাবনীয় স্বেচ্ছাচারিতা। বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করতাম না আমি। চরিত্র চিত্রণে বরাবরই ছিলাম বিশ্বস্ত এবং অনুগত।

কিন্তু আমার আশৈশব শিক্ষণ ও মহড়া প্রথমবারের মত ব্যর্থ হল নতুন মেয়েটির ক্ষেত্রে।

বলতে কি, মেয়েটি এসেছিল অন্য গ্রহ থেকে, আর মেয়েটির কোন বৈশিষ্ট্য ছিল না, সে হাসতে পারত না, তার চোখ-মুখে কোন নৈমিত্তিক ভাব বা দৈনন্দিন রাগ ক্রীড়া করতে দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। তবে ওরও কিছু ক্ষমতা ছিল, যেমন, আর কেউ কি ওর মত সারাটা দিন একনাগাড়ে অমন করে চক্ষুবর্ষন করতে পারত? ওকে ধমকালেও কাঁদবে, হিতোপদেশ দিলেও কাঁদবে, সমবেদনা জানালেও কাঁদবে। সব মিলিয়ে বিরক্তিকর, খুবই দুরূহ এক পাঠ! মজার ব্যাপার হল, সেই ওর প্রতিই ফেনিয়ে উঠল ভয়ানক স্নেহ, প্রায়ই করে তুললে অন্ধ, মধ্য-দিনের আলোর মত ঝাপসা করে দিলে সব! বলতে কি, ও বা ওর মত যারা, তারাও মানুষ, - এই আবিষ্কার আমাকে পুরোই দখল করে নিল; যাপিত জীবনের প্রতি ধরিয়ে দিল তীব্র অরুচি! এই কি জীবন? কোন উদ্দেশ্য নেই, নেই বৃহৎ পরিকল্পনা, নেই সাধনা! একঘেয়ে আর একটানা পথ চলা শুধু, সামনের পানে না তাকিয়ে !

শুরু হল সংসারে অশান্তি। খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে। প্রথম লাগল মায়ের সঙ্গে। মেয়েটি রীতি অনুযায়ী খেতে বসত পারত কেবল বাড়ির সকলের খাওয়া শেষ হলেই, আর প্রায়ই খাবারে টান পড়ত, মেয়েটিকে তখন বাধ্য হয়ে আগের দিনের উচ্ছিষ্ট গিলতে হত। আমি মাকে বলি, “মা, এইটা খুবই অমানবিক, তুমি ওর জন্য আলাদা করে খাবার রাখতে পার না? যে খাবারটা ও নিজের হাতে রাঁধে, তা একটু মুখে দিতে পারবে না ? তোমার একটুও খারাপ লাগে না এত ছোট একটি মেয়েকে এঁটো- বাসি খাওয়াতে?”
মা ভয়ানক রেগে যান, “ছিঃ ছিঃ, কোন ছেলেমানুষ রান্নাঘরের বিষয় নিয়ে কথা বলে! ”
কিন্তু মায়ের সাথে আমার “মেয়ে সুলভ” বিতর্ক এখানেই শেষ হয় না। পৌরুষের উপর আঘাত হেনেই আমি একের পর এক মায়ের সাথে ঝগড়া করি। একদিন মাকে বলি: “মা, মেয়েটিকে স্কুলে দাও। ও যদি বাবামায়ের কাছে থাকত, তাহলে কি স্কুলে যেত না? তোমাদের কাছে থাকে, তোমরাই তো ওর অভিভাবক, দাও না মা, ওকে স্কুলে ভর্তি করে!”
“ওকে স্কুলে ভর্তি করলে কাজগুলি কে করবে শুনি?”- মা চরম বিরক্ত হয়ে বলেন।
“একজন ছুটা বুয়া রাখ।”
“তোর বাপের কি টাকার গাছ আছে যে, গণ্ডায় গণ্ডায় কাজের লোক রাখবে? নিজে আয় রোজগার করা শুরু কর, তারপর মনের আশ মিটিয়ে কাজের মেয়েদের স্কুলে পড়াস। ”

শুধু মা না, বাড়ির অন্য সবার সাথেও আমার খিটমিট লাগতে শুরু করে। যেমন, কাজের মেয়েরা রাতের বেলা ডাইনিং রুমের এক কোনায় এক চিলতে জায়গায় কোন রকমে মাথাটা গুঁজে দিতে পারবে কেবল, এটাই ছিল আমাদের বাসার অনেক পুরনো একটি ঐতিহ্য। আমি তুলকালাম করলাম এটি নিয়েও। আমার বোনদের বললাম, “এতটুকু একটি মেয়ে একা একা ফ্লোরে শোয়, তোদের খারাপ লাগে না? ওকে তোদের সাথে শোয়া!”
আমার এক বোন মুখ ঝামটা মেরে বলল: “দেখি দরদ উথলে উঠছে। এতই যখন মহব্বত, তোর সাথে শোয়া!”
আর এক বোন যে অপেক্ষাকৃত উদার, সে বললে: “শোয়ানো তো যেতই, কিন্তু ওর শরীরে রাজ্যের ময়লা থাকে, ওরা জীবানুতে অভ্যস্ত, ওদের কোন সমস্যা হবে না, অসুখে পড়ব আমরা!”

তখনো বাবার হোটেলে থাকি। তবু নির্ভীক কণ্ঠে বাবাকে জানালাম, “বাবা, ওকে একটা খাট বা অন্তত একটা চৌকি কিনে দাও। মেয়েটাকে এভাবে নীচে শোয়ানো খুব খারাপ দেখায়। ”
বাবার নির্লিপ্ত উত্তর: “তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে। এই বাসায় আর খাট রাখার জায়গা আছে? একদিন যখন অনেক টাকাপয়সার মালিক হবে, সার্ভেন্টস রুম সহ বাসা নিয়ো, তখন দেখবে আর এ রকম সমস্যা হবে না, খারাপও দেখাবে না।”

এভাবে অনেক চেষ্টা করি আমি, কিন্তু কোনভাবেই মেয়েটির কোন ভাল করতে পারি না। তবে আমি হাল ছাড়ি না, আর কিছু না পেরে এক সময় 'অ' , 'আ' শেখাতে শুরু করি ওকে। কিন্তু এ বিষয়টিতেও আপত্তি আসে মায়ের কাছ থেকে:
“ওকে বাংলা শিখিয়ে কি হবে, গরীবের মেয়ে, কোরান শরীফ ধরিয়ে দিলেই যথেষ্ট।“
কিন্তু আমি গা করি না, ওকে শিখিয়ে চলি স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জন বর্ণ, আ কার, উ কার..। এখন না পারি, একদিন তো স্কুলে ভর্তি করাতে পারব, আমার টাকা হলে সত্যি ওর জন্য আলাদা রুমসহ ফ্লাট কিনব , ওর জন্য একখানা খাটও কিনব! দেখে নিও মা!

চাষ-বাস-ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুর জন্যই দরকার হয় একটি পরিপূর্ণ মৌসুম, প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত; কিন্তু মেয়েটির বাবা মনে হয় মৌসুমের ধার ধারে না, সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে দুমাসের মধ্যেই পা রাখল আমাদের বাড়িতে, আর শুরু করল সেই পুরনো গল্প, মেয়ের মা অসুস্থ, মেয়ের মুখটা দেখার জন্য মন ছটফট করছে! সবাই বুঝতে পারে, ওর বিদায় ক্ষণ সমাগত, আমাদের বাড়িতে ওর অধ্যায় প্রায় সমাপ্ত। ছোট থেকেই শুনে আসছি, আমার পরিবেশ-পরিস্থিতি জ্ঞান নাকি শূন্যের কোঠায়, হয়ত সে কারণেই বাবার হাত ধরে ও যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল, হাবলার মত প্রশ্ন করে বসি: “তুই চলে যাচ্ছিস? আর আসবি না?” ও কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, হয়ত কি বলবে ভেবে পায় না, প্রশ্নটি নিশ্চয়ই খুব আচমকা, অপ্রত্যাশিত, আর অত্যাশ্চর্য ঠেকে ওর কাছে, শেষমেশ কোনমতে মুখ ফুটে বেরোয়, “আসব, মামা।” সবাই বোঝে, এ শুধু কথার কথা, পাখি খাঁচা ছেড়ে গেলে আর কখনো আসে? কিন্তু গুণে গুণে এগার দিন, বাবার হাত ধরে দরজা দিয়ে আবার ঢুকে ও আমাদের বাড়িতে, দৃষ্টি লজ্জাবনত ।

এ যাবত শুধু একটি কাজই করতে পেরেছি ওর জন্য, অক্ষর চেনানোর কাজ, একদিন দেখি নিজে থেকে বানান করে একটা ছড়া পাঠের চেষ্টা করছে, আমাকে দেখে অবশ্য লজ্জা পেয়ে থামিয়ে দেয়, আমি বলি, “উহু, থামলে চলবে ন, পুরোটা শোনাতে হবে”, ভয় নাকি অভয় পেয়ে ও শুরু করলে, “আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে, পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি.....’, ওর ভাঙ্গা ভাঙ্গা উচ্চারণগুলি ভাঙতে থাকে আশেপাশের আকাশ-বাতাস, বিশাল শূন্যে ছুটে চলে দিগব্দিক, চোখের পলকে বদলে যায় সবকিছু, বিশ্বচরাচর, ঘন বৃক্ষরাজি, শান্ত নদী, একটি অসম্ভব সুন্দর অট্টালিকা, অনিন্দ্যসুন্দর পালংক, পাশেই একটি মসৃণ পড়ার টেবিল, পড়তে পড়তে তার উপর মাথা রেখেই কখন ঘুমিয়ে পড়ে ও .....

এরপর একদিন সত্যি সত্যি অনেক ভাল মাইনে হয় আমার, জমাট বাঁধা স্বপ্নগুলো একে একে গলতে শুরু করে, কতদিনের ইচ্ছে আমার, মায়ের হাত গড়িয়ে দেব সোনার চুরিতে, বাবার জন্য কিনব রেমন্ডের কোট, এমনকি বাসায় একটি টিভি ছিল, বাবা-মার মধ্যে রিমোট টানাটানি হত, তাই একটি সনি ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি কিনি, বোনদের দেখতে আসবে, ঘরের শ্রীছাঁদ না বদলালে চলে?

প্রায় সব হয়, কিন্তু ওকে আর স্কুলে দেওয়া হয় না। এমন না যে, আমি ভুলেই গেছি ওর কথা, ওর একটি আলাদা খাট দরকার ছিল, আলাদা একটা রুম। কিন্তু লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে সংসারের খরচ, কুলিয়ে উঠতে কুলকুল করে ঘাম ঝরে! বোনের বিয়ের জন্য বিশাল খরচ হয়ে যায়, ধুমধাম করে বিয়ে না দিলে মা-বাবার মন কষ্ট পাবে যে! বাবা-মায়ের জন্য আধুনিক ও বিলাসবহুল ফ্লাট কিনি, কিন্তু ফ্লাটটি সাইজে খুবই ছোট, মেয়েটির জন্য আলাদা রুম সেখানে সত্যি সম্ভব হয় না। ওর জন্য একটা আলাদা খাট আর হয় না। ও এখনো নীচেই শোয়।

এদিকে মেয়ে ডাঙ্গর হওয়ায় ভীষণ সক্রিয় হয়ে উঠে ওর বাবা-মা। অনেক হয়েছে, দায়িত্ব পালনে আর এক মুহূর্তও অবহেলা করতে রাজী নন। একের পর প্রস্তাব নিয়ে আসেন যদিও আমি শক্ত দেয়াল গড়ে তুলি, মাকে বলি, “মা, ও ছোট থেকে বড় হয়েছে আমাদের কাছে, ওকে ওর বাবা-মায়ের খেয়াল খুশী মত বিয়ে দিতে পারি না আমরা। ও কি গ্রামের গৃহস্ত ঘরে মানিয়ে নিতে পারবে নিজেকে?” কিন্তু মা-ও আর অন্যের মেয়ের বিয়ের পথে বাঁধা হয়ে থাকতে চান না, ওর বাবা-মা গরীব হয়েছে বলে কি মেয়ে বিয়ে দেওয়ার অধিকারটুকুও হারিয়েছেন? স্বয়ং আল্লাহ্‌ নারাজ হবেন, মা আমাকে গুনাহগার হতে নিষেধ করেন। এই জীবনে অনেক পাপ কামাই করেছি, ভাল করেই জানি, মাত্র এইটুকু পাপমোচনে আমার মুক্তি মিলবে না! আর কোন পথ না দেখে, শেষমেশ মোটা অংকের টাকা তুলে দেই ওর বাবার হাতে, বলি, আর একটু বড় হোক, ওর জন্য খুব ভাল একটি ছেলে দেখে আমরাই ওকে...

এভাবে ওর বিয়েকে বারবার শিকেয় তুলে রাখি বটে, তবে দুশ্চিন্তাকে পারি না। চোখে অনবরত ভাসে, ওর দ্বিগুণ বয়সী এক লোক, বসন্তের দাগ সারা মুখে, কোটরে ঢুকানো চোখ, লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে! কখনো দেখি চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে, উঠোনে দলা-মুচড়া করে ফেলে চলছে এলোপাথাড়ি লাথি! আমার গা শিউরে উঠে! আতঙ্কে হিম হই অহর্নিশি!

ওর জন্য হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকি একটা ভাল ছেলে। পরিচিত যে কোন নিম্নবিত্ত ছেলেকেই দেখলেই আমি তাকে প্রবল নিরীক্ষা করি, ওর বরের ভূমিকায় বসিয়ে বিশ্লেষণ করি, কিন্তু কোনটাই মন মত হয় না, কোনটাই ঝুঁকি থেকে সর্বাঙ্গ মুক্ত হয় না। সফিক গাড়ি চালায়, ছেলে ভাল, কিন্তু একটু রগচটা, মেয়েটি যেই অভিমানী, সফিকের সাথে ওর হবে না। সাইফুল এমনকি রগচটাও নয়, কিন্তু সাইফুলের সামান্য চালচুলোও নেই, গ্রামে সর্বস্ব হারিয়ে এখন এঁটো বস্তিতে মাথা গুঁজে থাকে, একটা দশতলা অফিসের লিফটম্যানের কাজ করে, মেয়েটিকে তো না খেয়ে থাকতে হবে। আর জামালের মত সৎ ও পরিশ্রমী ছেলে কমই দেখা যায়, সারা সপ্তাহ অফিসের কাগজপত্র বিলি করার জন্য চকরির মত ঘোরে, আবার সপ্তাহান্তে শৈশবে শেখা সেলাইবিদ্যেটাকেও কাজে লাগায়, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মরিয়া; কিন্তু ছেলেটি এত খাটো, মন সায় দেয় না আমার, মেয়েটির প্রতি অন্যায় করা হবে!

আমি অনেক খুঁজি, তবু পাই না। মাঝে মাঝেই দেখি ভয়ানক সব দুঃস্বপ্ন –সারা দেহ মেরে রক্তাক্ত করে ফেলেছে ওর পাষন্ড স্বামী, নিঃসাড় নিথর পড়ে আছে মাটিতে...

এমনি একদিন হয়ত বা দুঃস্বপ্ন দেখার সময়ই হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল, ঘর ভরা চিৎকার চেঁচামেচি!

রনির উচ্চতা বড়জোর পাঁচ ফিট হবে, মুখটা ভাঙ্গা, কদাকার না হলেও খুব যে সুশ্রী, তাও নয়। আর কোন কাজ টাজও করে না। স্বভাব-চরিত্র নাকি সুবিধের নয় তেমন! তবু। রনি আমাদের বাসার সাথের মুদি দোকানটিতে কিছুদিনের জন্য ছিল, কাজ কামাইয়ের কারণে বেশীদিন স্থায়ী হতে পারেনি! এন্ডু কিশোরের ‘ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে’ গানটি গাইতে শুনেছিলাম একদিন, ভালই সুর লাগিয়েছিল যতদূর মনে পড়ে!

“মা-বাবার মন, আগেই বলছিলাম, আল্লাহ্‌ নারাজ হবেন”- মায়ের আহাজারি চলছেই, আমার বৃদ্ধ পিতা বাকরুদ্ধ, বোনদের খবর দেয়া হয়েছে, প্রতিবেশী-আত্মীয়-স্বজন সান্ত্বনা দেয়ার জন্য দলে দলে জড় হচ্ছেন, অনেক উৎসুক লোকও আসছেন, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও উপভোগের জন্য।

তবে এসবে আমার রেখাপাত হয় না, কেন জানি, বিছানা ছেড়ে উঠতেও মন চায় না! এক সময় আবার ডুবে যাই আমার মধ্যে, এক অজানা-অচেনা দেশে হাঁটতে থাকি মনের আনন্দে... এক সময় হঠাৎ থমকে দাঁড়াই, ভুত দেখার মত চমকে উঠি, মেয়েটিকে বিক্রি করে দিচ্ছে রনি! কোন ভিনদেশী সওদাগর জোর খাটাচ্ছে ওর শরীরের উপর! শিউরে উঠি! আতঙ্কে হিম হয়ে যায় শরীর!

মেয়েটা নির্ঘাত মারা পড়বে! না হয়, আত্মহত্যা করবে! ও বাঁচবে না!


মন্তব্য

তিথীডোর এর ছবি

শেষটা ঠিক ধরতে পারিনি। কী হলো আসলে? রনির সঙ্গে পালিয়ে গেল মেয়েটা?
মোটা অংকের টাকা তুলে দিয়ে বিয়ে পেছানোর/ঠেকানোর মতো অতি ভাল মানুষ হয় না আমাদের মধ্যে এখন আর আসলে, যতটুকু দেখেছি। সেজন্য একটু আরোপিত লাগে এরকম পড়তে গিয়ে।

চক্ষুবর্ষন মানে কী? অশ্রুবর্ষণ বোঝাতে চেয়েছিলেন বোধহয়। হাসি
লেখা চলুক।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

দীনহিন এর ছবি

কী হলো আসলে? রনির সঙ্গে পালিয়ে গেল মেয়েটা?

সেটা তো ঠিক জানি না, তিথী! গল্পের উত্তম পুরুষ চরিত্রটি খুব স্পষ্ট করে কিছু বলে নি, আসলেই সে-ই ঠিক করে বলতে পারবে, আসলে কি হয়েছিল, সত্যি মেয়েটি পালিয়ে গিয়েছিল, নাকি রনি ভুলিয়ে ভালিয়ে, ফুসলে ফাঁসলে নিয়ে গিয়েছিল! অথবা, মেয়েটি যে রনির সাথেই গিয়েছিল, তা-ই বা সে জানল কি করে? কেউ কি দেখেছিল রনির সাথে যেতে? আসলে গল্পের উত্তম পুরুষ চরিত্রটি অনেক কিছুই পরিষ্কার করেনি!!! সে মনে হয় ঘোরের মধ্যে বসবাস করে!!

সেজন্য একটু আরোপিত লাগে এরকম পড়তে গিয়ে।

আরোপিত তো লাগবেই, কারণ মোটেও স্বাভাবিক নয় ব্যাপারটি! দেখুন, এ গল্পের মূল চরিত্র কিন্তু মেয়েটি নয়, মূল চরিত্র গল্পের উত্তম পুরুষ, সে একটি ফ্যান্টাসির জগতে বসবাস করে, সে কারণেই দেখুন না, এমনকি মেয়েটি যেখানে পিঞ্জিরা ভেঙ্গে বেরিয়ে গেছে, উত্তম পুরুষ পারছে না, সংসার নামক পিঞ্জিরার মধ্যে সে শুধু ছটফট করে মরছে, কিছুতেই ভাঙতে পারছে না!!!

চক্ষুবর্ষন মানে কী?

অশ্রুবর্ষণ বোঝাতে চেয়েছিলাম বোধহয়! শব্দ নিয়ে পাকনামি করার ইচ্ছাতেই হয়ত চক্ষুবর্ষন লিখেছিলাম! আচ্ছা, চক্ষুবর্ষন চলে কি? মানে, অশ্রুবর্ষণ অর্থে চালানো যায় কি??

মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ তিথী!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমাদের বাড়িতেও এমন একটা মেয়ে আছে ১১ বছর ধরে। আমার সন্তানদের আগ্রহে তার অক্ষরজ্ঞান হয়েেছে বটে তবে স্কুলে ভর্তি করার চিন্তা করতে পারিনি।
হ্যাঁ, মেয়েটাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি বটে।
চলুক

দীনহিন এর ছবি

হ্যাঁ, মেয়েটাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছি বটে।

হুম, আপনি তো চিন্তা-ভাবনাতেই থাকবেন, নইলে এমনি এমনি প্রৌঢ় ভাবনা! হাসি
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, প্রৌঢ় ভাই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

শেষটায় গিয়ে বুঝতে পারিনি।
বাকী সব ঠিক আছে। লেখা চলুক।

ভালো থাকবেন দীনহিন।
শুভেচ্ছা।
---------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

দীনহিন এর ছবি

শেষটায় গিয়ে বুঝতে পারিনি।

গল্পের উত্তম পুরুষ নিজেই আসলে খুব কনফিউজ্‌ড, কিছু বুঝতে টুজতে পারে না, খালি ফ্যান্টাসির জগতে সাঁতার কাটে, তো আপনার তো বুঝতে পারার কথা না!

পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ, প্রিয় পলাশ!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মেঘলা মানুষ এর ছবি

উপরে গিয়ে ট্যাগ দেখে আসলাম, 'গল্প' দেখে স্বস্তি পেলাম খানিকটা।

"কিন্তু ছেলেটি এত খাটো, " - এই স্টিরিওটাইপটা থেকে বের হয়ে আসা দরকার আমাদের, কেউ চোর, মদ্যপ, রগচটা, চালচুলো হীন হবার জন্য নিজে দায়ী হতে পারে, খাটো হবার জন্য না।

শুভেচ্ছা হাসি

দীনহিন এর ছবি

উপরে গিয়ে ট্যাগ দেখে আসলাম, 'গল্প' দেখে স্বস্তি পেলাম খানিকটা।

ভাগ্যিস উপরে ট্যাগে ছিল, নইলে আমাকে রেসিস্ট/ফ্যাসিস্ট ভেবে বসতেন আমাকে!

এই স্টিরিওটাইপটা থেকে বের হয়ে আসা দরকার আমাদের

গল্পের প্রধান চরিত্র, মানে, গল্পের উত্তম পুরুষ স্টিরিওটাইপ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করে, কিন্তু স্টিরিওটাইপ ভাঙ্গা এত্ত সহজ নয়, শেষমেষ সে ফ্যান্টাসির আশ্রয় নেয়, হয়ত সে দুনিয়াতেই এমন স্টিরিওটাইপকে ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করা সম্ভব!!!

গল্পটা মেয়েটিকে নিয়ে নয়, ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় বাস করা এক সাইকোর কাহিনি, ঠোকাঠুকি করেও পিঞ্জিরা ভাঙ্গিতে না পারার কাহিনি!!!!

যাই হোক, আপনাকে, মেঘলা, সত্যি আশা করিনি, এক দীনহিনের ব্লগে! তাই বুঝতেই পারছেন খুশীর মাত্রাটা??

ভাল থাকুন আর শুভেচ্ছা অনাদিকালের জন্য!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

মেঘলা মানুষ এর ছবি

বাহ! আমি আবার 'মহার্ঘ্য' ব্লগার হলা কবে থেকে? আমি তো 'ধূলিকণা', আর সময় পেলেই প্রায় সব পোস্টেই আমার একখানা কমেন্ট লটকে দিয়ে আসাটা আমার অভ্যাস (নাকি বদঅভ্যাস চিন্তিত ) হয়ে গিয়েছে।

লিখতে থাকুন আরও, শুভেচ্ছা হাসি

তাও, খুশি হয়েছেন শুনে ভালো লাগলো।

আয়নামতি এর ছবি

মেঘলা মানুষ এই অভ্যাসটিকে হারিয়ে ফেলবেন না প্লিজ!

রিক্তা এর ছবি

লেখা ভালো লেগেছে। ১৫ বছর আগে আমাদের বাসায় লালজান বলে একটা মেয়ে থাক্তো। খুব ভদ্র ছিলো মেয়েটা। কাজ চালানোর মত লেখাপড়া শিখাতে পেরেছিলাম। এরপর যথারীতি বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেয়। বাচ্চা হতে গিয়ে মেয়েটা মারা যায়।

নিপা বলে ছুটা বুয়ার মেয়েটাকে পড়াশোনা শিখানোয় অনেক মজা পেয়েছিলাম। সে আসলেই বেশ ভালো ছিল লেখাপড়ায়। কিন্তু যা হয় আর কিঃ গারমেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয়, অল্প বয়সে বিয়ে, বাচ্চা স্বামির অত্যাচার।

দোলনা নামের মেয়েটাকে আমরা অনেকদিন পর্যন্ত মিস করেছি। এতো চটপটে মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। সে পড়ালেখা শেখার ব্যপারে কোন আগ্রহ দেখায় নি কোনদিন। কিন্তু পেপারের ছবি দেখে খবর আন্দাজ করে ফেলতে পারতো, এমন আজব। এখন সে মোটামুটি ভালোই আছে যতটুকু জানি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় ওর অনেক পটেনশিয়াল ছিল। সুযোগের অভাবে কত কিছু হয় না মন খারাপ

--------------------------------
হে প্রগাঢ় পিতামহী, আজো চমৎকার?
আমিও তোমার মত বুড়ো হব – বুড়ি চাঁদটারে আমি করে দেব বেনোজলে পার
আমরা দুজনে মিলে শূন্য করে চলে যাব জীবনের প্রচুর ভাঁড়ার ।

দীনহিন এর ছবি

কিন্তু কেন যেন মনে হয় ওর অনেক পটেনশিয়াল ছিল।

গল্পে আরও একটি ডায়ালগ যুক্ত করা যেত, যেমন-
গল্পের উত্তম পুরুষঃ দেখ, বাবা, মেয়েটিকে যদি লেখাপড়া শেখাই আমরা, ভবিষ্যতে ওকে আর ঠকতে হবে না, দুনিয়াভর্তি তো খালি ঠগ্‌।
গল্পের বাবাঃ তুমি না হয়, একজনকে শেখালে, অন্যদের কি হবে? তুমি বরং ওর স্বভাব নষ্ট করে দিচ্ছ! তুমি তো আর চিরকাল ওকে কাছে রাখতে পারবে না, তখন কি হবে মেয়েটির? ও কি আর নিজের সমাজের সাথে স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারবে?? তুমি বরং মেয়েটিকে ভয়ানক বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছ, ও না পারবে ওর সমাজের সাথে মিশতে, না পারবে আমাদের সমাজের সাথে মিশতে!!

আর দেখুন, রিক্তা, এভাবেই কিন্তু আমরা একে একে ঝরে দিতে দিচ্ছি ওদের পটেনটিয়ালিটি, আমাদের চোখের সামনেই, হয়ত আমরা ওদেরকে শ্রেণীচ্যুত করতে চাইনা বলেই!!!

যাইহোক, আপনার স্মৃতিচারণ মন্তব্যের মাঠকে ভীষন সমৃদ্ধ করেছে! এবং এই অধ্ম দীনহিনকেও আবদ্ধ করেছেন কৃতজ্ঞতাপাশে!

ভাল থাকুন, রিক্তা। ভাল থাকুক আপনার মন্তব্যে উঠে আসে মেয়েগুলিও!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

এক লহমা এর ছবি

শিশু-শ্রমের অমানবিক ব্যবহারের অংশটা ঠিক লেগেছে। বাকি গল্প, আলগা বুননের খেই-হারানো লেখা বলে মনে হয়েছে। আপনার লেখার স্টাইল ঝরঝরে, সেইটা বেশ ভাল লেগেছে। আশা করি "বাঃ" বলার মত গল্প আপনার কাছ থেকে পেয়ে যাব একদিন। পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম। হাসি

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

দীনহিন এর ছবি

আপনার সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, লহমা!

আলগা বুননের খেই-হারানো লেখা বলে মনে হয়েছে।

গল্পের নায়ক নিজেই খেই-হারানো পাব্লিক, সেজন্যই হয়ত গল্পটির কোন খেই নেই, বেইল নেই!

আশা করি "বাঃ" বলার মত গল্প আপনার কাছ থেকে পেয়ে যাব একদিন।

আশা করি, "বাঃ" বলার মত গল্প আমার কাছ থেকে পেয়ে যাবেন একদিন। হাসি

ভাল থাকুন, প্রিয় লহমা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অপূর্ব!

দীনহিন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, আখতারুজ্জামান ভাই!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

গল্প বলার স্টাইল ভালো। কিন্তু গল্পের অনেক জায়গা মনে হয়েছে জোর করে বসিয়ে দেয়া। আর শেষে এসে খেই হারিয়ে ফেলেছি, বুঝতে পারলাম কী হলো।

তবে আপনার লেখার হাত যে চমৎকার তা বলতেই হবে। ভাষার ব্যবহারও ভালো লেগেছে।

____________________________

দীনহিন এর ছবি

উত্তম কমেন্ট করার জন্য কাউকে যদি অনুসরণ হয়, তবে আমি নিশ্চিতভাবেই প্রোফেসর সাহেবকে করব। আমরা প্রায়ই নির্মোহ থাকতে পারি না, যে লেখককে ভাল লাগে, তার অপেক্ষাকৃত দুর্বল লেখার দিকেও মুগ্ধ পলকে তাকিয়ে থাকি! হিজিবিজবিজের যে বিষয়টা সবচেয়ে ভাল লাগে, তা হল, যে কোন লেখার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যবচ্ছেদ! যেমন, তার মত আমারও মনে হয়েছে, "গল্পের অনেক জায়গা -- জোর করে বসিয়ে দেয়া", যেমন, মেয়েটির ছড়া আবৃত্তির জায়গাটুকু নিশ্চয়ই প্রফেসর সাহেবের দৃষ্টি এড়ায়নি!

অনেক অনেক ধন্যবাদ, হিজিবিজবিজ!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লেগেছে আপনার লেখা। উপরের কোন এক মন্তব্যে দেখলাম আপনি মূল চরিত্রকে সাইকো বলছেন। আমার অবশ্য মনে হয়েছিল যে কোন স্বাভাবিক, সুশিক্ষিত এবং সংবেদনশীল মানুষ মাত্রই এইভাবে চিন্তা করবে। বাস্তবতা হয়ত তাকে অন্যভাবে কাজ করতে বাধ্য করাবে। তাই বলে তার জগত ফ্যান্টাসির জগত এবং সে নিজে যে সাইকো হয়ে যাবে এটা মনে হলে কেমন কেমন যেন লাগে। আপনার আরো লেখার প্রতীক্ষায় থাকলাম।

গোঁসাইবাবু

দীনহিন এর ছবি

তাই বলে তার জগত ফ্যান্টাসির জগত এবং সে নিজে যে সাইকো হয়ে যাবে এটা মনে হলে কেমন কেমন যেন লাগে।

সাইকো মানেই খারাপ নয় রে ভাই, সাইকো রা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, সমাজের ভন্ডামি ও দ্বিচারিতাগুলির সাথে যারা মানিয়ে চলতে পারে না, পারে না অ্যাডজাস্ট করে চলতে, তারাই সাইকো হয়ে থাকে, আধুনিক সাইকো গবেষনাগুলি তেমনই বলে!

মন্তব্য ও উৎসাহদানের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, গোঁসাইদা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

আয়নামতি এর ছবি

এমন মানুষ দেখেই বড় হয়েছি আমি। তাই এধরণের চরিত্রকে সাইকো বলায় প্রবল আপত্তি আছে।
লেখক কী লিখছেন কেন লিখছেন ইত্যাদি নিয়ে পাঠকের অহেতুক খবরদারির অধিকার নেই বলে ভাবেন কী আপনি?
পাঠকের চিন্তার সাথে লেখকেরটা মিশালে তেমন সমস্যা তো হয় না নাকি হয়? আপনি কি এ ব্যাপারে কিছুটা রিজিট্?
চক্ষুবর্ষণ দিয়ে কান্না বোঝানোর চেয়ে আমি যদি বলি অগ্নিদৃষ্টি বোঝায় অতিমাত্রায়? কইছে তোরে! বলে আমাকে তোয়াক্কা করতে নাই পারেন। তবে গল্পটা আমার ভালো লেগেছে। তিনটে টাইপো চোখে পড়েছিল। এখন ২টা মনে করতে পারছি খাইছে
বর্ষণ-বর্ষন, পাষণ্ড-পাষন্ড ।
লেখালেখি চলুক।

দীনহিন এর ছবি

লেখক কী লিখছেন কেন লিখছেন ইত্যাদি নিয়ে পাঠকের অহেতুক খবরদারির অধিকার নেই বলে ভাবেন কী আপনি?

না তো, কেন, সেরকম বলেছি কোথাও? বরং, উল্টোটাই ভাবি, যখনই লেখাটা প্রকাশের জন্য সচল মডুদের কাছে অনুরোধ ঠুকে দিয়েছি, তখন থেকেই পাঠকের অংশীদারিত্ব আপনাআপনি তৈরি হয়েছে!

পাঠকের চিন্তার সাথে লেখকেরটা মিশালে তেমন সমস্যা তো হয় না নাকি হয়?

না তো।

আপনি কি এ ব্যাপারে কিছুটা রিজিট্?

আমার কিন্তু কান্না পাচ্ছে, আর আমার কাছের লোকেরা শুনলে মুচকি হাসবে! 'রিজিট্‌' হওয়ার যোগ্যতা আমার নেই, আয়না, এমন হওয়ার জন্য কিছুটা হলেও এনার্জি দরকার হয়!

চক্ষুবর্ষণ দিয়ে কান্না বোঝানোর চেয়ে আমি যদি বলি অগ্নিদৃষ্টি বোঝায় অতিমাত্রায়?

শব্দ নিয়ে পাকনামি করার ফল হাতেনাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ, আয়না! হাসি

কইছে তোরে!

মাপ করে দিন, আয়না! এখন থেকে তোয়াক্কা চলবে নিরন্তর! হাসি

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

আয়নামতি এর ছবি

কি বোকা ছেলে রে বাবা!
আরে আমি তো এট্টু দিদিগিরি করেছিলুম।
আপনি মনে কষ্ট পেয়েছেন দেখে বিব্রত হচ্ছি ভাই ইয়ে, মানে...
রিজিট্ কেন বলেছি? শব্দটা থেকেই গেছে সেজন্যে।
আমরা চুঁনোপুটিরাই তো নিজেদের মধ্যে বলাবলি করবো নাকি?
একবার সাহস করে সেইরাম এক বাঘা এবং আমার মতে তিনজন শ্রেষ্ঠ সচল লেখিয়েদের একজনকে
বলে বসেছিলাম, এটা এরকম হলো ভালো। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি বদলে দিয়েছিলেন সেটা।
সেই অভিজ্ঞতাটা আমি ভুলিনা। এখন আপনি যদি এসবে খারাপ করেন তাইলে কমু কেম্নে!
মাপসাপ কি র‍্যা? মারবো ছুঁড়ে কিল রেগে টং

দীনহিন এর ছবি

নিজে নিজেই যদি সম্পাদনা করতে পারতাম, তাহলে এতক্ষনে পোড়ামুখো শব্দগুলিকে আর চোখ দিয়ে দেখতে হত না আপনায়!
কিন্তু এই ব্যাপারে আর মডু ভাইদের আর বিরক্ত করতে মন চাইছে না, এমন মূল্যবান লেখা তো নয়, থাক না অশুদ্ধগুলি, এমন নয় যে অনেক অনেক দিন বাদেও পঠিত হবে এমন দীনহিন লেখা!

.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল

আয়নামতি এর ছবি

হাচলদের সম্পাদনা করবার সুযোগ আছে কিন্তু!
আপনি আপনার পোস্টের উপরে সম্পাদনা, অনুবাদ এমন কিছু অপশন দেখতে পাবেন।
সম্পাদনায় ক্লিক করেই যা করতে চান করে ফেলবেন- ছো ছিম্পল!
কেউ না পড়বে না (আপনি কেম্নে জানেন কেউ পড়বে কি পড়বে না?) বলে
অশুদ্ধ রেখে দেয়া কোন কাজের কথা নয়।
লেগে পড়ুন কাজে...

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ... আর কিছু বলতে গেলে ঠিক ভাবে বলতে পারব না হয়ত। নিশাচর জীব

অতিথি লেখক এর ছবি

গল্পটা মেয়েটিকে নিয়ে নয়, ফ্যান্টাসির দুনিয়ায় বাস করা এক সাইকোর কাহিনি, ঠোকাঠুকি করেও পিঞ্জিরা ভাঙ্গিতে না পারার কাহিনি!!!!

সাইকো মানেই খারাপ নয় রে ভাই, সাইকো রা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, সমাজের ভন্ডামি ও দ্বিচারিতাগুলির সাথে যারা মানিয়ে চলতে পারে না, পারে না অ্যাডজাস্ট করে চলতে, তারাই সাইকো হয়ে থাকে, আধুনিক সাইকো গবেষনাগুলি তেমনই বলে!

সহমত।

উত্তম পুরুষের সাইকোটিক চিন্তাভাবনা যে মজবুত পিঞ্জিরা ভেঙ্গে বের হতে পারে না, সেটা জেনে একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। এরকম খেই হারানো মানুষদের খেই খুঁজে পাওয়ার নজির কম। খেই হারানো মানুষটি পথ খুঁজে পাবে, তা আশা করি না, কিন্তু তার হারানো পথে আরো কিছু মানুষের পথ খুঁজে দেবার যে সদিচ্ছা সে পোষণ করেছে তার জন্য সাধুবাদ।

লেখা দ্বিধান্বিত মনের ভাবনা রিফ্লেক্ট করেছে, ভালো লেগেছে, সব সময়ই যে লেখককে উপসংহারে যেতেই হবে, এমনটা তো নয়, দিনশেষে আমরা সবাই দ্বিধায় বসবাস করি।
শুভেচ্ছা। ভাল থাকুন।

_______________________________
আলসেবুড়ি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।