হোটেল থেকে বের হতেই হেমন্তের নীল আকাশের প্রখর রোদ এসে চোখ ঝলসে দিল। আলো সয়ে আসতেই দেখলাম দূরে কালো পাথুরে পর্বতের সারি। কোথাও কোন গাছ নেই। ঘাস নেই। আছে শুধু অফুরান্ত মরুভূমি। জানি সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আপেক্ষিক। কিন্তু এখানে তিনশ ষাট ডিগ্রী জুড়ে ছড়িয়ে আছে সার্বজনীন সৌন্দর্যের সুতীব্র বহিঃপ্রকাশ। মানব দেহের ইন্দ্রীয় যন্ত্রের গ্রহণ ক্ষমতা এত সীমত যে সে সৌন্দর্য মুহূর্তের ভেতর ভোতা করে দেয় সমস্ত অনুভূতি। অথর্বের মত হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। পৃথিবীর কোন ক্যামেরার পক্ষে সম্ভব নয় ফুটিয়ে তোলে ব্যাখ্যাতীত সে সৌন্দর্য। মিনিট পাঁচেক ওভাবেই দূরের দিকে তাকিয়ে থেকে এক সময় আমাদের সম্বিত ফিরে এল। আমরা গাড়িতে চড়ে বসলাম।
পাহাড় এবং মরভূমির ভেতর গাড়ি ছুটিয়ে দিলাম। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই রাস্তার পাশে সুপরিচিত এক প্রানী দেখে ব্রেকে পা দাবিয়ে দিয়ে গাড়ি থামাতে হল। অরে এ যে দেখি অমাদের অতি প্রিয় গর্দভ! পৃথিবীতে ইনাদের সমতুল্য মানুষের অভাব নেই। দুজন সম্মানিত গর্দভ হেলে দুলে অপন মনে খাবারের সন্ধানে যাচ্ছিলেন। পাপারাজিদের মত সালিনা পটাপট গর্দভ যুগলের কিছু ছবি তুলে নিল। আর উচ্ছ্বসিত হয়ে বলল,"ঐ যে তোমার স্বজাতিরা যাচ্ছেন"।
২
স্বভাবের দিক থেকে ইনারা বন্য প্রকৃতির। কঠোর পরিশ্রমী এবং মরু এলাকায় সহজে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন বলে পনের শতকের দিকে স্প্যানিয়ার্ডগণ উনা দিগকে আফ্রিকা হতে হিজরত করতে বাধ্য করেছিলেন। আমেরিকায় সেকালে মাটি খুড়ে স্বর্ণ সন্ধানের বেশ হিড়িক পড়েছিল। এ কাজের জন্য গর্দভগণের বেশ কদর ছিল। সময়ের ফেরে এক সময় স্বর্ণ শিকারের খায়েশ মিটে যায় মানুষের। গর্দভগণের দায়িত্ব কর্তব্যও বেশ কমে আসে। কিছু গর্দভের মুক্তি মেলে। আবার প্রতিকূল মরুভূমি অতিক্রম করতে গিয়ে মালিক পটল তুললে সঙ্গী গর্দভগণ স্বাধীনভাবে নিজেরাই চড়ে বেড়াতে লাগলেন এবং বংশ বৃদ্ধি করতে লাগলেন। বংশ পরম্পরায় তারা এখন গৃহপালিত জীবনের মায়া ত্যাগ করে বন্য রুপ ধারণ করেছেন। ছবি তোলার পর্ব শেষ হতে আমরা পরবর্তী রোমাঞ্চের সন্ধানে ছুটলাম।
গতকাল রাতে টানেলের ভেতর দিয়ে আমরা যে হোটেলে উঠেছিলাম সেখানে এসে থামলাম। জায়গাটার নাম চুল্লী জলধারা, ইংরেজীতে ফার্নেস ক্রিক। গাড়ি থেকে বের হতেই মনে হল হাবিয়া দোযখ থেকে আগুনের ছোট খাট একটা স্যাম্পল হল্কা এসে আমাদের মুখ পুড়িয়ে দিয়ে গেল। সাথে সাথে এই জায়গার নামকরণের সার্থকতা অনুধাবন করলাম। শীত কাল আসি আসি করছে। এখন যদি এত গরম হয় গ্রীষ্মে কি ধরণের গরম পড়তে পারে তা সহজেই অনুমেয়। ডেথ ভ্যালি আসার আগেই আমি এইজায়গাটির নাম শুনেছিলাম। এখানে পৃথবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড আছে। ১৯১০ সালের জুলাইয়ের ১০ তারিখে এখানকার তাপমাত্রা হয়েছিল ১৩৪° ফারেনহাইট (৫৭° সেলসিয়াস)। কথিত আছে সেদিনের প্রচন্ড দাবদাহ সইতে না পেরে উড়ন্ত অবস্থায় আকাশ থেকে মুখ থুবড়ে পড়েছিল পাখির দল। ২০০১ সালে ডেথ ভ্যালি এলাকায় একটানা পাঁচ মাস দৈনিক তাপমাত্রা ছিল ১০০° ফারেনহাইট (৩৮° সেলসিয়াস) কিংবা তার উপর।
জায়গাটি সমুদ্র সমতল থেকে ১৯০ ফুট নীচে। আমরা অবশ্য ডেথ ভ্যালিরই অন্য একটি জায়গায় এর থেকেও নীচে গিয়েছিলাম। আমাদের সাথের জিপিএস দেখিয়েছে জায়গাটি সমুদ্র সমতল থেকে ২৫২ ফুট নীচে। তবে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে নীচু স্থানটি ডেথ ভ্যালিতেই ব্যাড ওয়াটার বেসিন বলে একটি জায়গা, যা সমুদ্র সমতল থেকে ২৮২ ফুট নীচে।
কেন এখানে হাবিয়া দোযখসম গরম? তাহলে খানিকটা ডেথ ভ্যালির ইতিহাস কপচাতে হয়। প্যালিওযোয়িক যুগে (৫৪২ থেকে ২৫১ মিলিয়ন বছর আগে) এই অঞ্চলটি ছিল এক উষ্ণ স্বল্প গভীর সমুদ্র। কালের ফেরে সমুদ্র শুকিয়ে পশ্চিম দিকে সরে গেল। যেখানে এক সময় সমুদ্র ছিল সেখানকার মাটি আস্তে আস্তে উঁচু হতে লাগল। টারশিয়ারি যুগে (৬৫ থেকে ২ মিলিয়ন বছর আগে) শুরু হল আগ্ন্যেয়গিরির উৎপাত। নানা কিসিমের পাহাড় পর্বত পয়দা হল। তারপর তিন মিলিয়ন বছর আগে ভূত্বক যে খন্ডিত থালার (প্লেট) উপর বসানো থাকে সেগুলোর মধ্যে শুরু হল দড়ি টানাটানি। ফল স্বরুপ বিশাল একটা এলাকা দেবে গিয়ে তৈরী হল ডেথ ভ্যালী।
চারদিকে সুউচ্চ পর্বত আর তার মাঝে নীচু প্রায় সমতল একটি জায়গা। সূর্যের তাপ খটখটে পাথুরে মাটিতে প্রতিসরিত হয়ে যেই উপরে উঠতে নেয় ওমনি ঘন বাতাস (সমুদ্র সমতলের নীচে হওয়ায় এখানকার বাতাস ঘন) চেপে একে নীচে নামিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া এবং চারপাশের উঁচু পর্বতের কারণে বন্দী হয়ে বাড়তে থাকে তাপমাত্রা। সেই তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এক সময় রুপ নেয় পৃথিবীর বুকে জ্বলজ্যান্ত এক হাবিয়া দোযখের।
(চলবে)
মন্তব্য
এবারের ছবিগুলো অনেক ঝকঝকে, কম্পোজিশনগুলো চমৎকার।
ছবি দেখে মনে হচ্ছে আপনি সার্কুলার পোলারাইজার ব্যবহার করেন না এবং সময় লাগবে বলে (অথবা প্রয়োজন নেই মনে করে) পোস্ট প্রসেস করেন না। ভুল বললাম?
পোস্ট প্রসেসিং খারাপ কিছু না। এইখানে নমুনা দেখেন।
আমি নিজে পারি না, হুদাই জ্ঞান দিলাম
(তবে শুরু করার ইচ্ছা আছে)
ভাই, অমি ফটোগ্রাফির "ফ" ও জানিনা। ক্যামেরার বোতাম টেপাটেপি করা পর্যন্ত অমার দৌড়। অর পোস্ট প্রসেস করার টাইম কই? কোন মতে লেখা অর ছবি জোড়াতালি দিয়ে পোস্ট করেছি এতেই অমার জন্য অনেক
ছবি ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম। নিন।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আহা! বুকের মাঝে আঁকা সব ছবি।
----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony
আমাদের সবার ভেতর প্রায় একই জিনিশ আঁকা থাকে- পাহাড়, বন, এবং সমুদ্র
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ছবিগুলো দারুন। চালিয়ে জান লেখা।
। চলবে।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পাপ্পনের বস্তা নিয়া বসতে হবে। কমপক্ষে আরো ১০ পর্ব আসতেছে
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
লেখা পড়ে আর ছবি দেখে গলা শুকিয়ে আসল। এনিমেশন রেঙ্গোর রিয়েল স্পট নয় তো!
রংতুলি, এক গ্লাস ঠান্ডা পানি খেয়ে নিন। আপনার ধারণা ঠিক। 'রেংগো' এনিমেশনটির ঘটনাগুলো মোহাভে ডেজার্টে ঘটেছিল। ডেথ ভ্যালি এ মরুভূমির ভেতরেই অবস্থিত।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চলুক ।।। চলুক ।।।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !
। চলবে।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চোখ জুড়োলো।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ছবিগুলো সত্যি দারুণ সুন্দর!
আর গাধা বললে মন খারাপ করার তো কিছু নাই। গাধা একটি অতি উপকারী প্রাণী। ইস সব ছেলেগুলো যদি গাধা হত
হাত, ল্যাপটপ আর মন খুলে লিখুন
ফাহিমা দিলশাদ
পৃথিবীর সকল ছেলেগুলো গাধা হলে বংশ বৃদ্ধি করার জন্যতো কিছু গাধীর প্রয়োজন হবে তাই না? সেই দায়িত্ব কে নেবে?
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
আহা! "বুনো পশ্চিম" শুনেই তো সেবা প্রকাশনীর ওয়েস্টার্নগুলো মনে পড়ে যায়!
ছবি যেমন তুলেছেন তেমনই সুন্দর। অপ্রস্তুত ছবি ভ্রমণের ফিল এনে দেয়
আমার বন্ধু রাশেদ
ধন্যবাদ ভাই।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
২০ নম্বর ছবিটা অসাধারণ।
আমি ছাড়াও যে আর কেউ মটোরোলা মটোন্যাভ ৭৬৫ ব্যবহার করে সেটা জেনে খুশি হলাম। এত চমৎকার একটা জিপিএস মার্কেটে টিকতে পারল না । মটোরোলাও জিপিএস ব্যবসা ছেড়ে দিল, এরও আর কোন আপডেট বের হল না। বাজারের যে কোন গার্মিন/ টম টম জিপিএসের চেয়ে কয়েকগুণ ভালো ডিভাইস ছিল এটা। যেমন চমৎকার দেখতে, তেমন চমৎকার ইন্টারফেস!
[আমারটার প্রথমে মাউন্ট হারায়, তারপর চার্জার (রেন্টের গাড়িতে রেখে আসা)। বাজারের অন্য চার্জারে ঝামেলা করত। তাই, এখন গার্মিনের গোলাপি রংয়ের রাস্তা ধরে চলতে হয়। ]
শুভেচ্ছা
হা হা হা। ২০০৯ সালে কিনেছিলাম। যদিও একটু স্লো কিন্তু ভালই কাজে দেয়। তবে হ্যা, জিনিসটা কিন্তু দেখতে সুন্দর। মটোরোলা বোধ হয় জিপিএস এর মার্কেটে বেইল পায় নাই। তাই চলে গেছে। আমি বেশকিছুদিন এর ম্যাপ আপডেট করা যায় কিনা খুজতেছিলাম। কিন্তু পাই নাই । দেখি যতদিন কাজ চলে চলুক। এত সুন্দর জিনিস ফেলতে মঞ্চায় না।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
চালু থাকুক। এত গরম না গেলে বিশ্বাস করা কঠিন। ছবি দেখেও বিশ্বাস হলো না
সামনের বছর জুলাই/আগস্টের দিকে একবার ডেথ ভ্যালি ঘুরে আসুন না। তারপর না হয় বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। কি বলেন
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
নতুন মন্তব্য করুন